এই শহর, এই পুবের বাংলা, একসময় ছিল সবুজের সমারোহ। কিন্তু পরে, সেই পারমাণবিক যুদ্ধ। তারপরে পরিবেশ ধ্বংস। বেঁচে থাকাটাই হয়ে গেল লড়াই। এমনই একটা দল ছিল, কয়েকজন মানুষের। সবার নাম জানা যায় না, তবে একজন ছিল, রিয়া। দেখতে কচি মেয়ে, কিন্তু মনের জোরে বৃক্ষ। মনে মনে সব সময় একটাই স্বপ্ন – এই পুড়িয়ে যাওয়া পৃথিবীকে আবার সবুজ করার।
একদিন, খাবারের জোগাড়ের সময় জঙ্গলে ঢোঁকার মধ্যে রিয়া পেল একটা অদ্ভুত যন্ত্র। খুব সূক্ষ্ম একটা আলো ঝিলমিল করছে। কৌতূহলে সেই আলোর পথ ধরে সে চলতে লাগল। রাস্তাটা গেল নিচের দিকে, একেবারে মাটির গভীরে। একটা লুকোনো গর্তের মধ্যে ঢুকে দেখে, একটা বিশাল বাংকার! ভিতরে ঢুকে চমকে উঠল রিয়া। এতো আধুনিক যন্ত্রপাতি, কী জানি না কী লেখা! আর একটা হোলোগ্রামিক মূর্তি, কথা বলছে! সেই মূর্তি জানাল, এই বাংকারটা একটা গোপন নেটওয়ার্কের অংশ। পৃথিবীর ধ্বংসের আগে বিজ্ঞানীরা এইসব বাংকার বানিয়েছিলেন, মানুষকে বাঁচানোর জন্য। এই বাংকারগুলোতে এমন জ্ঞান আর প্রযুক্তি আছে, যা দিয়ে পৃথিবীকে আবার ঠিক করা যায়।
রিয়ার চোখ জ্বলে উঠল। এতদিনের স্বপ্নের মতো সুযোগ! সে দল বেঁধে ফেলল বাকি বেঁচে থাকা মানুষদের নিয়ে। সবার মিলে তারা অন্য বাংকারগুলো খোঁজার সিদ্ধান্ত নিল। সেইসব বাংকারে হয়তো সেই প্রযুক্তি আছে, যেটা দিয়ে পৃথিবীকে আবার সবুজ করা যাবে। কিন্তু পথটা সহজ ছিল না। অন্য দলও ছিল, যারা এই প্রযুক্তি নিজেদের কাজে লাগাতে চাইছিল। রিয়া আর তার দলকে তাদের মোকাবিলা করতে হল।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - আধাঁরের আলো : মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প: 'আধাঁরের আলো', এক তরুণী উদ্যোক্তার 'আধাঁরের আলো' চা এর দোকান, স্বপ্ন, চ্যালেঞ্জ, আর সফলতার অনুপ্রেরণামূলক গল্প। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
এই বাংকার থেকে ওই বাংকারে যেতে যেতে রিয়া আর তার দল এক একটা চাঞাছোড় কাটিয়ে গেল। জানতে পারল অতীতের গল্প, কীভাবে এই দশা হল পৃথিবীর। বুঝতে পারল, মানবজাতির ভবিষ্যৎ তাদের হাতে। ঝগড়া ভুলে, মতভেদ মিটিয়ে একসাথে কাজ করতে হবে নতুন পৃথিবী গড়ার জন্য।
রিয়ার গল্পটা শুধু বেঁচে থাকার গল্প না, আশার গল্প। এটা মানুষের বুদ্ধিমত্তার গল্প, কীভাবে বিপদের মুখেও মানুষ নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে। রাতে, বাংকারের ভিতরে জড়ো হয়েছিল সবাই। রিয়া একটা বড়ো মানচিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাখ্যা করছিল, “এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, অনেকগুলো বাংকারের অবস্থান। আমরা এখন যেখানে আছি, সেটা লাল দাগ দেওয়া। কিন্তু আরও কয়েকটা বাংকার আছে, যেগুলো খুঁজে বার করতে হবে।”
“কিন্তু কোনটা কোথায়?” জিজ্ঞাসা করল দলের সবচে ছোট ছেলে, অভি।
রিয়া হাত বাড়িয়ে ছবিতে আঁকা একটা ছোট্ট যন্ত্রের দিকে ইশারা করল, “এই যন্ত্রটা হলো একটা মানচিত্র। এটা চালু করতে পারলে, বাকি বাংকারগুলোর অবস্থানের সন্ধান পাওয়া যাবে।”
সবার চোখ জ্বলে উঠল। কিন্তু যন্ত্রটা একেবারেই অচেনা। তার কোনো বাটন বা সুইচ নেই। কীভাবে এটা চালু করা যায়, তা কেউ জানে না।
দিনের পর দিন চেষ্টা চলল। বিভিন্ন ধাতুর টুকরো, তারের টুকরো লাগিয়ে দেখা হলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। হতাশা নামছিল সবার মনে। একদিন রাতে, বাংকারের কোণে বসে মেরামতের কাজ করছিল সোম, দলের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য। হঠাৎ তার চোখ পড়ল যন্ত্রটার উপর। সে ধীরে ধীরে যন্ত্রটা হাতে নিল, আর তারপর নিজের কানের কাছে ধরল।
এক মুহূর্তের জন্যে সবাই চুপ করে গেল। তারপর সোমের চোখ জ্বলে উঠল। সে সবার দিকে তাকিয়ে বলল, “এটা যন্ত্র না, একটা জৈবিক সেন্সর! আমাদের শরীরের তাপ, গন্ধ – এসবের সাহায্যে এটা সক্রিয় হবে!”
সোমের কথা শুনে সবার চোখ ফেট হয়ে গেল। রিয়া এগিয়ে এসে যন্ত্রটা নিল। সে নিজের হাতের তালুটা যন্ত্রের উপর রাখল। অলৌকিক একটা আলো জ্বলে উঠল যন্ত্রটায়। তারপর, ছবিতে লাল আলোয় জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠল বাকি বাংকারগুলোর অবস্থান।
আনন্দে চিৎকার করে উঠল সবাই। এবার তাদের পথ স্পষ্ট। পরের দিন, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রিয়া আর তার দল। তাদের দীর্ঘ যাত্রা শুরু হলো, এক নতুন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন নিয়ে।
রিয়ার দলের যাত্রা ছিল কঠিন, বিপদজনা। বাইরের পৃথিবী ছিল নির্মম, তেজস্ক্রিয় রোদের তাপ, বিষাক্ত বাতাস – প্রতিটি পদক্ষেপে মৃত্যুর ঝুঁকি। কিন্তু তাদের মধ্যে ছিল এক অদম্য আশা, নতুন সূর্যোদয়ের স্বপ্ন। দিনের পর দিন তারা চলল, পাহাড়ের খাঁজ ধরে, জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। মাঝে মাঝে পতিত শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখে মনে পড়তো অতীতের সুন্দর পৃথিবী। কিন্তু হতাশ হওয়ার সময় ছিল না।
একদিন, তারা পৌঁছল এক বিশাল মরুভূমির মাঝে। মানচিত্র অনুযায়ী, সেখানেই থাকা উচিত ছিল দ্বিতীয় বাংকারটি। কিন্তু চারপাশে শুধুই তিলতিল করে ঝলসানো বালু আর দূরে দূরে কাঁটা গাছ। হতাশা আর সন্দে নেমে এলো দলের মধ্যে। হয়তো মানচিত্রটা ভুল, না হয় এই বাংকারটা বালির নিচে চাপা পড়ে গেছে।
ভুতের বাংলা ছোট গল্প - অন্ধকারের ডাক : ভুতের গল্প: অন্ধকারের ডাক - এক ভয়ঙ্কর রহস্যের গল্প। জঙ্গলের গভীরে হারিয়ে যাওয়া এক তরুণী, অজানা শক্তির ডাক, এবং ভয়াবহ মুখোমুখি - এই ছোট গল্পে আছে সব। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
ঠিক সেই সময়, দলের সবচেয়ে তীক্ষ্ণদৃষ্টি সম্পন্ন ঝিনুক চিৎকার করে উঠল, “ওপরে দেখো!” সবাই তার দিকে তাকাল। দূরে, আকাশে একটা ক্ষীণ, সূর্যালোকের মতো একটা আলো দেখা যাচ্ছে। রিয়া বুঝতে পারল, সেটাই হলো বাংকারের প্রবেশদ্বার। কিন্তু সেখানে পৌঁছানো কঠিন।
কয়েকদিন ধরে চেষ্টা চলল। অবশেষে তারা একটা পুরোনো গাড়ির জীর্ণশীর্ণ চাকা পেল। সেই চাকা দিয়ে বালুর উপর একটা রাস্তা তৈরি করলো। তারপর, সেই রাস্তা ধরে ঠেলে নিয়ে গেল ঝলমিল করা বস্তুটার কাছে।
সবাই পৌঁছে দেখল, এটা কোনো ঝিলমিল নয়, একটা বিশাল লোহার ফটক। সূর্যের মতো আলোয় স্নাত বাংকারের ভিতরে দাঁড়িয়ে রিয়া অনুভব করলেন এক অদ্ভুত শান্তি। এতদিনের খাটুনি, লড়াই, হতাশার পরে এটাই যেন এক মুহূর্তের বিশ্রাম। ঘুমন্ত মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে তিনি ভাবলেন, এরা কারা? এদের জীবন কেমন ছিল? পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগে কি জানতেন এরা এই দিন আসবে? এত প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ইচ্ছে হলেও, এখন সময় নেই। প্রথমে জাগাতে হবে এদের।
দলের বিজ্ঞানী, জয়া, বাংকারের প্রযুক্তি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলেন। কয়েক ঘণ্টা পরে উত্তেজিত চোখে এসে রিয়াকে জানালেন, “এই বাংকারে একটা বিশেষ ধরণের ঘুম পাড়ানো যন্ত্র আছে। এই যন্ত্রের সাহায্যে নিরাপদে জাগানো যাবে ওদের।”
আশা জাগল রিয়ার মনে। কিন্তু আর একটা সমস্যা দেখা দিল। যন্ত্রটা চালু করতে প্রয়োজন একটা বিশেষ কোডের। বাংকারের কোথাও সেই কোড খুঁজে পাওয়া গেল না। জয়া মত দিলেন, “কোডটা হয়তো এই ঘুমন্ত মানুষগুলোর কাছেই আছে। তাদের জাগানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।”
একটা দ্বন্দ্বে পড়ে গেল রিয়া। ঝুঁকিটা ছিল। এই অজানা মানুষগুলো জাগলে কী রকম আচরণ করবে, কে জানে? কিন্তু অন্য কোনো উপায় না দেখে রিয়া সিদ্ধান্ত নিলেন, ঝুঁকিটা নেওয়া হবে। তিনি নিজেই জয়া তৈরি করা যন্ত্রটা নিয়ে প্রথমে একজন মানুষের কাছে গেলেন। যন্ত্রটা চালু করলেন।
আলতো করে চোখ খুলল ঘুমন্ত মানুষটা। অবাক হয়ে চারপাশে তাকাল। রিয়া আর দলের সদস্যদের দিকে চোখ রাখল। তার মুখে প্রশ্নের ভাব। রিয়া, বাংলায়, সাবধানে নিজের পরিচয় দিলেন। পৃথিবীর অবস্থা, বাংকারের গল্প, সব জানালেন।
ঘুম থেকে ওঠা মানুষটা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর সে তার বুক থেকে একটা ছোট্ট ধাতুর পাত্র বের করল। পাত্রের ভিতরে খোদাই করা ছিল একটা জটিল কোড। সেই কোডটা যন্ত্রে ঢুকিয়ে দিল সে।
একটা আলোর ঝলকানি। আর তারপর, ধীরে ধীরে, চোখ খুললেন বাংকারের সব ঘুমন্ত মানুষ। তারা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রিয়ার দলের দিকে। বাংকারের প্রধান, একজন বয়স্ক মহিলা, এগিয়ে এলেন। তিনি রিয়াকে জানালেন, “আমরা জানতাম একদিন কেউ আসবে। পৃথিবীকে নতুন করে গড়ার দায়িত্ব নেবে।”
এই মহিলার কথায় আশার আলো জ্বলে উঠল রিয়ার মনে। তিনি জানালেন, এই বাংকারের মানুষেরাই জানে পৃথিবীকে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া। রিয়ার কথা শেষ হতে না হতেই বাংকারের প্রধান, মিসে সেন, তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন, “চিন্তা করবেন না, রিয়া। এই যাত্রায় আপনারা একা ছিলেন না। আমরা সবাই আপনাদের লড়াই দেখেছি।”
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - মিঠির মিষ্টি : একজন তরুণী উদ্যোক্তার মোটিভেশনাল গল্প: "মিঠির মিষ্টি" বাংলা ছোট গল্প; এই গল্পে আমরা দেখব কিভাবে ধৈর্য, সাহস আর আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে একজন তরুণী উদ্যোক্তা তার স্বপ্ন পূরণ করেন। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
কথাটা শুনে রিয়া অবাক হয়ে গেলেন। “কীভাবে?”
মিসে সেন হাসলেন, “এই বাংকারগুলোর মধ্যে একটা অদৃশ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। আপনারা প্রতিটা বাংকার খোঁজার সময়, আমরা সবাই সেটা দেখতে পেয়েছি। আপনাদের সাহস আর দৃঢ়তায় আমরা মুগ্ধ।”
রিয়া স্বস্তি পেলেন। এতদিনের একাকীত্বের বোঝা যেন একটু লাঘব হলো। এরপর মিসে সেন তাঁদের বাংকারে নিয়ে গেলেন। সেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, জিনগত পরিবर्तনের মাধ্যমে উদ্ভিদের দ্রুত বৃদ্ধি, এবং পরিবেশ শুদ্ধিকরণের নানা পদ্ধতি দেখিয়ে দিলেন। রিয়া আর তাঁর দলের সদস্যরা মুগ্ধ হয়ে গেলেন। এতদিনের চেষ্টা সার্থক হচ্ছে এটাই তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় আশ্বাস ছিল।
কয়েকটা দিন বাংকারে কাটিয়ে রিয়া জানতে পারলেন, পৃথিবী পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনাটা বেশ জটিল। প্রথমে নির্বাচিত কিছু জায়গায় ছোট ছোট জীববৈচিত্রের কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। বিশেষভাবে প্রস্তুত করা উদ্ভিদ লাগানো হবে, যেগুলো দূষিত বাতাস শোধন করতে এবং মাটিকে পুনর্জীবিত করতে সক্ষম। তারপর ধীরে ধীরে এই কেন্দ্রগুলোকে বিস্তৃত করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় কয়েক দশক, হয়তো শতাব্দ লেগে যেতে পারে।
রিয়া আর তাঁর দলের সদস্যরা আগ্রহের সাথে এই পরিকল্পনা শুনলেন। তাঁরা বুঝতে পারলেন, পৃথিবীকে আবার সবুজ করার জন্য কেবলমাত্র প্রযুক্তিই যথেষ্ট নয়, দরকার ধৈর্য্য, নিরলস পরিশ্রম, এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
এরপর রিয়া আর তাঁর দলের সদস্যদের বাংলায় ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। মিসে সেন তাঁদের হাতে তুলে দিলেন জিনগত পরিবर्तনের প্রক্রিয়া এবং পরিবেশ শুদ্ধিকরণের যন্ত্রপাতির নকশা। এই জ্ঞান নিয়েই রিয়া আর তাঁর সঙ্গীরা বাইরে বেরিয়ে এলেন। পুড়িয়ে যাওয়া পৃথিবীর বুকে নতুন সবুজের স্বপ্ন বুকে নিয়ে তাঁরা প্রতিজ্ঞা করলেন, এই ধ্বংসস্তূপের মাঝেও একদিন ফিরিয়ে আনা হবে হারিয়ে যাওয়া সেই সবুজের রাজ্য।