একদিন সোনালি সকালবেলা, সূর্যের মিষ্টি আলো এসে পড়েছে ছোট্ট ওলফির ঘরের জানালার পাশে। সে তখন গভীর ঘুমে, নরম নরম বিছানার ওপর গুটিসুটি মেরে শুয়ে। হঠাৎ সূর্যের নরম আলো তার কপালে এসে পড়তেই সে ধীরে ধীরে চোখ মেলে। ঘুমের মধ্যেই সে এক বড় হাই তুলে মনে মনে ভাবে, “আজকের দিনটা নিশ্চয়ই বেশ মজার হবে!”
ওলফি আসলে খুব সাহসী একটা কুকুরছানা, আর তার ছোট্ট বোন গ্যাবি, যাকে সে প্রাণপণে ভালোবাসে। গ্যাবি ছোট্ট মানুষ, সারাদিন কেবল খেলে আর হাসে, আর ওলফি সারাদিন তার পাশে থাকে। যেকোনো বিপদ থেকে গ্যাবিকে রক্ষা করাই যেন ওলফির জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
ঘুম ভাঙতেই ওলফি কান খাড়া করল। কিছু একটা যেন অদ্ভুত আওয়াজ আসছে ঘরের ভেতর থেকে। ধীরে ধীরে আওয়াজটা স্পষ্ট হল, সে বুঝতে পারল আওয়াজটা গ্যাবির। কিন্তু, এই মিষ্টি মেয়েটা কাঁদছে কেন? ওলফি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। সে জানে, গ্যাবি যখন কাঁদে তখন নিশ্চয়ই কিছু না কিছু অঘটন ঘটেছে। সে এবার দ্রুত দরজার দিকে ছুটল, গ্যাবিকে দেখতে।
কিন্তু সেখানে এসে দেখে দরজাটা বন্ধ! ওলফি একবার ভীষণ হতাশ হল। গ্যাবি কাঁদছে, আর সে এখানে আটকে আছে! তবে সে হাল ছাড়ল না। প্রথমে সে দরজায় সামান্য আঁচড় দিল, তার পর একটু জোর দিয়ে ধাক্কা দিল। দরজাটা যেন একটু নড়ল, কিন্তু খোলার নামগন্ধ নেই। এবার সে ছোট্ট ছোট্ট গোঙানোর আওয়াজ করতে লাগল। তবুও কিছু হল না।
একটু পরে তার মা এসে দরজাটা খুললেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ওলফি ছুটে বাইরে বেরিয়ে গেল। বাইরে গিয়ে সে অবাক হয়ে দেখল, তার প্রিয় বোন গ্যাবি তার প্রিয় পুতুলটা ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। রান্নাঘরের মেঝেতে কিছু ভাঙাচোরা বাসনপত্র ছড়িয়ে রয়েছে, আর মা সেগুলো পরিষ্কার করতে ব্যস্ত।
ওলফির ছোট্ট বুকে একটা চিন্তার পাহাড় যেন জমে গেল। “কী হয়েছে? কেন গ্যাবি কাঁদছে?” সে কিছুই বুঝতে পারছে না। ওলফি গ্যাবির পাশে গিয়ে তার ঠান্ডা নাকটা গ্যাবির হাতে ঠেকিয়ে মিষ্টি করে ঘেউ ঘেউ করল। যেন বলতে চাইল, “আমি আছি, ভয় পেয়ো না!” গ্যাবি তার দিকে চেয়ে একটু হাসল বটে, কিন্তু চোখের জল যেন শুকোতে চাইছে না।
এই অবস্থায় ওলফি ঠিক করল যে সে উঠোনটা ভালো করে দেখে নেবে। গ্যাবির মন খারাপ আছে, মা ব্যস্ত রয়েছেন—কিছু না কিছু নিশ্চয়ই ঘটেছে। সে নিজের প্রিয় উঠোনে ছুটে গেল, যেন সে পুরো জায়গাটাকে ভালো করে দেখে নিতে পারে। একবার উঠোনটা পায়ে পায়ে হেঁটে ঘুরে নিয়ে নিজের জায়গাটায় চিহ্ন রেখে গেল—তার এই জায়গাটা তার অধিকার, এখানে কেউ আসতে পারবে না!
ওলফি তখন নিজের সাহসিকতায় মুগ্ধ, নিজের দায়িত্ব পালন করে আনন্দে মেতে উঠল। তখনই, গ্যাবি চিৎকার করে উঠল, “ওলফি! দেখ! ওখানে একটা ড্রাগন!” ওলফি প্রথমে কিছুই বুঝতে পারল না। ড্রাগন! সে কি সত্যি? সে সজাগ হয়ে গ্যাবির দেখানো দিকে চেয়ে দেখল, একটা বড় লম্বা টিকটিকি ফুলের টবের পাশে বসে রয়েছে।
ওলফির ভেতরের সাহসী মনটা তখনই জেগে উঠল। সে ভাবল, “ড্রাগন হোক আর টিকটিকি হোক, গ্যাবিকে রক্ষা করতে আমায় যা করতে হবে তাই করব!” সে গর্জে উঠল, যেন সত্যিকারের কোনো ড্রাগনের সামনেই সে দাঁড়িয়ে আছে।
টিকটিকিটা একটু হেসে ওলফির নাকে ছোট্ট একটা কামড় দিল। ওলফির নাক জ্বলে উঠল, তবুও সে পিছিয়ে গেল না। সোজা এক লাফে টিকটিকিটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। টিকটিকিটা ভয়ে পালিয়ে গেল।
গ্যাবি আনন্দে তালি বাজাতে শুরু করল, “ওলফি! তুমি তো খুব সাহসী! তুমি আমার নায়ক!”
মা তখন এসে ওলফির পিঠে আদর করে হাত বুলিয়ে দিলেন, বললেন, “আমার ছোট্ট ওলফি তো সত্যিকারের সাহসী, আজ তো তুই আমাদের সবাইকে রক্ষা করলি।”
ওলফি এই কথা শুনে গর্বে ফুলে উঠল। সে ভাবল, “আমার বোন আর মাকে রক্ষা করা আমার সবচেয়ে বড়ো কাজ, আর আমি সেটা সফলভাবে করতে পেরেছি।”
তবে এই গল্প এখানেই শেষ নয়। পরের অধ্যায়ে ওলফির সামনে আসবে আরও নতুন আরেকটা রহস্যময় দিন, যেখানে সে আরও বড় কোনো বিপদের মুখোমুখি দাঁড়াবে।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - আত্মবিশ্বাসের গল্প: "আত্মবিশ্বাসের গল্প" - একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে লিলির শিল্পপ্রীতি ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন পূরণের পথে আত্মবিশ্বাসের উত্থান দেখানো হয়েছে। আশা ও অদম্যতার গল্প। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
মায়ের ব্যস্ততা এবং গ্যাবির মন খারাপ
সকালে যখন ওলফি বীরত্ব দেখিয়ে সেই বড় টিকটিকিটাকে তাড়িয়ে দিল, তখন গ্যাবি খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু ওলফি লক্ষ্য করল, তার মা আর গ্যাবির মুখের আনন্দ যেন কিছুক্ষণ পরেই ম্লান হয়ে গেল। গ্যাবি মায়ের পাশে বসে তার প্রিয় খেলনাটা আঁকড়ে ধরে আছে, যেন কোনো এক দুঃখের ভার তার ছোট্ট মনে চেপে বসেছে। আর ওলফির মা, তিনি রান্নাঘরের কাজেই যেন গভীরভাবে মগ্ন, একটার পর একটা বাসন মাজছেন, মেঝে পরিষ্কার করছেন, অথচ তার চোখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
ওলফি বুঝল, এখানে কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। তার ছোট্ট মনেও অস্থিরতা বাড়তে লাগল। সে গ্যাবির পাশে গিয়ে তার ছোট্ট মুখে একবার ঘনিষ্ঠভাবে ঠোঁটটা লাগিয়ে মিষ্টি করে গুঙিয়ে উঠল। গ্যাবি ওলফির দিকে একবার চেয়ে একটু হাসল বটে, কিন্তু তাতেও তার মুখের চিন্তার রেখাটা মুছল না।
ওলফি ভাবল, “আমার গ্যাবি এমন মনমরা হয়ে বসে আছে, এটা তো ঠিক না! আমি কিছু একটা করতেই হবে যাতে ও হাসে।”
তাই সে ঠিক করল, বাইরে গিয়ে একটু নিজের প্রিয় উঠোনটা ঘুরে দেখে আসবে। উঠোনটা যেন গ্যাবির জন্য নিরাপদ থাকে, আর সেখানে যেন কোনো অদ্ভুত জিনিস লুকিয়ে না থাকে। এমন ভাবনা মনে নিয়ে ওলফি সোজা দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে গেল।
বাইরে এসে ওলফি তার পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াল। কোথাও যেন কিছু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, কেমন একটা মাটির মিষ্টি গন্ধ, যার সঙ্গে মেশানো একটা রহস্যময়তা। মনে হচ্ছে যেন কোনো নতুন কেউ এসে উপস্থিত হয়েছে তার রাজ্যে। এবার ওলফির মনটা আরও বেশি সতর্ক হয়ে উঠল।
সে আস্তে আস্তে তার পায়ে পায়ে চলতে লাগল আর দেখল, ছোট্ট একটা ঝোপের পাশে একটা ঘাসফড়িঙ বসে রয়েছে। ফড়িঙটা বেশ বড়সড় আর তার গায়ে চকচকে সবুজ রং। ওলফি একটু কাছে গিয়ে দেখল, ফড়িঙটা হাসছে।
“কী, তুমি এখানে কী করছ?” ওলফি অবাক হয়ে জানতে চাইল।
ফড়িঙটা মিষ্টি গলায় উত্তর দিল, “আমি এইখানে একটু বেড়াতে এসেছি। তুমি যে এত চিন্তিত লাগছ, ওলফি ভাই, তা কেন?”
ওলফি একটু গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, “আমার ছোট্ট বোন গ্যাবি আজ মনমরা। আর মাও অনেক চিন্তিত। আমি জানি না কেন, তবে আমি চাই ওরা দুজনেই আবার হাসুক।”
ঘাসফড়িঙটা এবার তার মাথা দুলিয়ে বলল, “তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। আমি জানি কোথায় এক রহস্য লুকিয়ে আছে যা গ্যাবিকে খুশি করে তুলতে পারে।”
ওলফি একটু অবাক হলেও ঘাসফড়িঙের কথা শুনে তার মনে একটা আগ্রহ জন্মাল। সে ভাবল, “এটা হয়তো আমার মিশনের একটা অংশ। গ্যাবিকে খুশি করার জন্য আমি সবকিছু করতে রাজি।”
ঘাসফড়িঙের পেছনে পেছনে চলতে লাগল ওলফি। ঝোপঝাড়ের মধ্য দিয়ে অদ্ভুত এক পথ ধরে সে চলতে লাগল। পথটা কেমন গাছের পাতায় ঢাকা, আর বাতাসে একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে। একটু পরেই ঘাসফড়িঙটা থেমে দাঁড়াল। তার সামনে দেখা গেল একটা ছোট্ট পুকুর, আর পুকুরের জলে ছোট্ট ছোট্ট রঙিন মাছেরা খেলা করছে।
ঘাসফড়িঙটা বলল, “এখানে এক রাজকন্যার মতো মাছ থাকে, যার হাসির আওয়াজ অনেককে আনন্দ দেয়। তোমার গ্যাবি যদি এই মাছের সাথে পরিচিত হতে পারে, তবে সে হয়তো খুব খুশি হবে।”
ওলফি খুশি হয়ে ভাবল, “এটা তো খুবই ভালো হবে! আমার গ্যাবির মন যদি আনন্দে ভরে ওঠে, তবে আমার মিশনও সফল হবে।”
ওলফি এবার পুকুরের পাশে গিয়ে বসে পড়ল আর তার ছোট্ট কান দুটো নেড়ে নেড়ে পুকুরের জলে মাছেদের খেলা দেখতে লাগল। হঠাৎ করেই একটা ছোট্ট, চকচকে সোনালি রঙের মাছ জল থেকে লাফিয়ে উঠল, যেন সে নিজেই ওলফিকে দেখতে এসেছে।
“তুমি কে?” ওলফি জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কি সত্যিই এক রাজকন্যা মাছ?”
সোনালি মাছটি মিষ্টি করে হাসল আর বলল, “হ্যাঁ, আমি এই পুকুরের রাজকন্যা, আর আমার নাম লুনা। আমার হাসি যেকোনো মনমরা প্রাণকে খুশি করতে পারে। তুমি কেন এখানে এসেছ?”
ওলফি লুনাকে সব কথা বলল—গ্যাবির মন খারাপ, মায়ের ব্যস্ততা, আর ওলফির একটাই ইচ্ছা, যেন গ্যাবি আর মা দুজনেই আবার খুশি হয়ে ওঠে। লুনা সব কথা শুনে চিন্তায় মাথা নাড়ল আর বলল, “তাহলে তোমার গ্যাবিকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে আমার জলে খেলা দেখাবো, আর সে খুব খুশি হবে।”
ওলফি মনে মনে অনেক খুশি হল। সে ভাবল, “এবার গ্যাবিকে নিয়ে আসতে হবে এখানে। আর গ্যাবি যদি এখানে আসে, তবে তার মুখে হাসি ফিরে আসবেই।”
এই ভাবনা নিয়ে সে তড়িঘড়ি করে বাড়ির দিকে ফিরে গেল। তার ছোট্ট বোন গ্যাবিকে বলল, “চলো, গ্যাবি! আমি তোমার জন্য একটা আশ্চর্য দেখাতে নিয়ে যাবো।”
গ্যাবি প্রথমে একটু অবাক হলেও ওলফির কথায় বিশ্বাস করে, তার প্রিয় খেলনাটা হাতে নিয়ে ওলফির পেছনে পেছনে চলল। ওলফি তাকে নিয়ে গেল সেই পুকুরের কাছে, যেখানে লুনা অপেক্ষা করছিল।
কিন্তু গ্যাবি কি সত্যিই খুশি হবে? রাজকন্যা মাছ লুনা কি গ্যাবির মন থেকে সব দুঃখ দূর করতে পারবে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য, যেখানে আরও অনেক মজার ঘটনা ঘটবে।
অদ্ভুত এক প্রাণীর সাথে দেখা
সকালের নরম রোদ এসে পড়েছে উঠোন জুড়ে। ছোট্ট গ্যাবি আর ওলফি দুজনেই বেরিয়েছে সেই পুকুরের কাছে রাজকন্যা মাছ লুনাকে দেখতে। কিন্তু পুকুরে যাওয়ার পথে উঠোনের এক কোণে গ্যাবি হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে গেল। তার বড় বড় চোখগুলো বিস্ময়ে চকচক করছে। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “ওলফি! দেখো, একটা ড্রাগন!”
ওলফি গ্যাবির কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল—একটা টবের পাশে ছোট্ট এক টিকটিকি বসে আছে। কিন্তু গ্যাবির চোখে সেটাই বিশাল এক ড্রাগন মনে হল! ওলফি সাহস করে টিকটিকিটার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার সাহস তো কম নয়, ড্রাগনসাহেব! আমাদের উঠোনে এসে বসে আছো, কিন্তু জানো তো আমরা কিন্তু সাহসী!”
টিকটিকিটা ওলফির কথা শুনে একটু হাসল আর তার ছোট্ট লেজটা নাড়ল। টিকটিকি বলল, “আহা! আমি ড্রাগন না হলেও কিছুটা বিশেষ। আমার নাম টিঙ্কু, আর আমি তোমাদের এই সুন্দর উঠোনের রক্ষক। তোমরা যদি চাও, তবে আমি তোমাদের কিছু রহস্যময় জগৎ দেখাতে পারি, যেখানে মজার মজার জিনিস লুকিয়ে আছে।”
গ্যাবি উচ্ছ্বাসে হাততালি দিয়ে বলল, “আমরা তোমার সাথে যেতে চাই, টিঙ্কু!”
টিঙ্কু মাথা নাড়ল আর বলল, “ঠিক আছে, তোমরা আমার পেছনে পেছনে এসো। আমি তোমাদের এমন এক জায়গায় নিয়ে যাবো, যেখানে জাদু আর আনন্দ মিলেমিশে একাকার হয়েছে।”
ওলফি আর গ্যাবি টিঙ্কুর পেছনে পেছনে চলতে লাগল। টিঙ্কু তাদের নিয়ে গেল বাড়ির পিছনের দিকে, যেখানে একটা গাছের গোড়ায় ছোট্ট একটা দরজা দেখা গেল। দরজাটা অনেক পুরনো, আর তাতে ছোট ছোট ফুল আঁকা। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে টিঙ্কু বলল, “এই দরজাটা হল গোপন জগতে যাওয়ার পথ। কিন্তু মনে রেখো, তোমরা ভীত না হয়ে সাহস নিয়ে এগিয়ে যাবে।”
গ্যাবি আর ওলফি দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে মাথা নাড়ল। ওরা দুজনেই ভাবল, “আমরা তো সাহসী! আমাদের কোনো ভয় নেই।”
টিঙ্কু দরজাটা খোলার সাথে সাথেই একটা ঝলমলে আলো এসে পড়ল তাদের মুখে। দরজার ওপারে একটা রঙিন ফুলে ঢাকা জায়গা, যেখানে মজার মজার পোকামাকড়েরা খেলছে, আর বড় বড় গাছগুলো মাথা নাড়িয়ে হাসছে। গাছের পাতাগুলো রোদে চকচক করছে, আর বাতাসে মিষ্টি একটা ফুলের গন্ধ ভাসছে।
টিঙ্কু গর্বের সাথে বলল, “এটা আমার জাদুর বাগান। এখানে সবকিছুই কথা বলে, আর সবাই মিলে একসাথে খেলে।”
ওলফি আর গ্যাবি আনন্দে নাচতে লাগল। ওরা চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে একে একে সব বন্ধুদের সাথে আলাপ করল—একটা মজাদার তেলাপোকা, যে সবার জন্য গান গাইছিল, আর একটা হাসিখুশি মাকড়সা, যে গ্যাবির জন্য ফুল দিয়ে মুকুট বানিয়ে দিল।
হঠাৎ ওদের সামনে হাজির হল একটা বোলতা। তার গায়ে উজ্জ্বল হলুদ রঙের ডোরাকাটা, আর সে বড়সড় চোখে গ্যাবির দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি তো অনেক ছোট্ট, কিন্তু তোমার সাহস অনেক বড়!”
গ্যাবি একটু গম্ভীর হয়ে বলল, “আমি কিন্তু সত্যিই খুব সাহসী! আমার বড় ভাই ওলফি আমাকে সবসময় রক্ষা করে, আর আমি ওর সাথেই থাকি।”
ওলফি গর্বিত চোখে গ্যাবির দিকে তাকাল, আর ভাবল, “আমার ছোট্ট বোন যে এত সাহসী, এটা জানলে মা-বাবাও খুশি হবে!”
টিঙ্কু তখন তাদের নিয়ে আরও গভীর বাগানের দিকে চলল। হঠাৎ তারা দেখল, একটা ছোট্ট তেপান্তর মাঠের মাঝে একটা অদ্ভুত প্রাণী বসে আছে। ওটা দেখতে টিকটিকির মতো নয়, বরং অনেকটা যেন ফুল দিয়ে সাজানো এক গোলাপি বাঘের মতো! গ্যাবি চমকে উঠে বলল, “এইটা তো নিশ্চয়ই আরেকটা ড্রাগন!”
প্রাণীটা মিষ্টি গলায় বলল, “আমার নাম ডিলো। আমি জাদুর বাগানের অভিভাবক। তোমরা যদি সাহসী হও, তাহলে আমি তোমাদের একটা গোপন কাহিনি শোনাতে পারি।”
ওলফি আর গ্যাবি দুজনেই উত্তেজনায় ঢোক গিলল। ডিলো বলল, “এই জাদুর বাগানে একদিন এক রাজকুমারীর দেখা মিলেছিল। সে এক বিষণ্ন দিনে এখানে এসে হাসি খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু এখন সে হারিয়ে গেছে। তোমরা কি তাকে খুঁজতে চাও?”
গ্যাবি বলল, “অবশ্যই! আমরা রাজকুমারীকে খুঁজে এনে তাকে আবার হাসাতে চাই!”
ডিলো একটু হেসে বলল, “তাহলে আমার পেছনে এসো। রাজকুমারীকে খুঁজতে গেলে তোমাদের কয়েকটা বিশেষ উপহার দরকার হবে।”
ওলফি আর গ্যাবি যখন ডিলোর পেছনে হাঁটছিল, তখনই তারা ভাবল, এই অভিযানে হয়তো অনেক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হবে। কিন্তু তারা মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল যে তারা রাজকুমারীকে খুঁজে বের করবে এবং তাকে হাসাবে।
কিন্তু রাজকুমারী কি সত্যিই এই জাদুর বাগানে আছে? আর ওলফি ও গ্যাবি কি রাজকুমারীকে খুঁজে বের করতে পারবে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে চতুর্থ অধ্যায়ের জন্য, যেখানে আরও অজানা রহস্যের মধ্যে ঢুকে পড়বে ওলফি ও গ্যাবি।
বাংলা ছোট গল্প - পূর্বকথা: শ্রীজিৎ তার মধ্য-বয়সে শিখা আর নীহারিকার প্রেমের ত্রিকোণ বেড়াজালে তাকে পড়ে। শিখা তার কৌশরের প্রথম প্রেম; আর শিখা তার স্ত্রী। শ্রীজিৎ-কি নীহারিকার কাছে ফিরে যাবে? জানতে হলে পড়ুন বাংলা ছোট গল্প - "পূর্বকথা"। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
ড্রাগনের সাথে যুদ্ধে ওলফির সাহস
উঠোনের সেই ছোট্ট টবের পাশে দাঁড়িয়ে ওলফি আর গ্যাবি ঠিকঠাক দেখতেই পেল সেই ‘ড্রাগন’ আর কেউ নয়, আসলে একটা টিকটিকি, কিন্তু তাদের চোখে সেটাই যেন বিরাট এক দৈত্য। সাহসী ওলফির ভেতরে যেন বীরত্বের ঝড় বয়ে গেল। গ্যাবির হাতটা শক্ত করে ধরে সে বলল, “তুমি আমার পাশে থাকো, গ্যাবি। আমি দেখিয়ে দেব এই ড্রাগনকে কিভাবে যুদ্ধ করতে হয়!”
টিকটিকিটা ওদের কথা শুনে মুচকি হেসে নড়ে উঠল। ওর সরু, লম্বা লেজটা দুলিয়ে, ও চোখ বন্ধ করে যেন রাজকীয় গর্জনের মতো শব্দ করল। গ্যাবি ভয়ে একটু পিছিয়ে গেল, কিন্তু ওলফি সাহস করে এক পা এগিয়ে বলল, “এই ড্রাগনসাহেব, আপনি আমাদের উঠোনে এসে এভাবে ভয় দেখাচ্ছেন কেন? জানেন না, এই উঠোনের রাজা আমি?”
টিকটিকিটা হেসে ওলফির দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমরা তো বেশ সাহসী! তবে কি তোমরা আমার সাথে খেলা করতে চাও?”
ওলফি এক মুহূর্ত ভেবে নিয়ে বলল, “খেলাই যদি হয়, তবে আমি প্রস্তুত! আমি রাজা, আর এই রাজ্যের প্রতিটি প্রাণীকে রক্ষা করব!”
ওলফির কথা শুনে টিকটিকি একটু হাসল, তারপর সে হঠাৎ করে তার নাক দিয়ে সামান্য একটা ঠেলা মারল, আর বলল, “যদি তুমি সত্যিই সাহসী হও, তাহলে আমি তোমাকে এক পরীক্ষা দিতে বলছি। আমি তুমাকে একটু নাক কামড়ে দেব, তুমি যদি ভীত না হও, তবে তোমাকে আমি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু বলে মানতে পারি।”
গ্যাবি কাঁপতে কাঁপতে বলল, “ওলফি, তুমি কি এটা করতে পারবে?”
ওলফি তার ছোট্ট মুখে একটা দৃঢ়তার হাসি ফুটিয়ে তুলল। “আমি সাহসী, আর আমি এই ড্রাগনের পরীক্ষা অবশ্যই পাস করব!” এই বলে ওলফি একপা এগিয়ে গেল টিকটিকির দিকে। টিকটিকি তখন তার নাকটা হালকা করে কামড়ে দিল, আর সেই কামড়ের জ্বালা যেন ওলফির ভেতরে এক অদ্ভুত সাহসের সঞ্চার করল। গ্যাবি ভয়ে চোখ বুজে ফেলল, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে শুনল, “আমি জিতে গেছি, গ্যাবি! আমি জিতে গেছি!”
ওলফির এই কথা শুনে গ্যাবি চোখ খুলে দেখল, টিকটিকি আসলে তাকে একটুও আঘাত করেনি। বরং টিকটিকিটা খুশিতে লেজ দুলিয়ে হাসছিল। সে বলল, “তুমি সত্যিই সাহসী, ওলফি! আমি তোমার সাহসের প্রশংসা করি। আর এই দেখ, তোমার সাহসের উপহার হিসেবে আমি তোমাদের একটা রহস্যময় জাদু সোপান দেখাতে পারি।”
গ্যাবি ও ওলফির দুজনের চোখে নতুন একটা কৌতূহল জেগে উঠল। তারা টিকটিকির পেছন পেছন চলল, আর এইবার টিকটিকিটা তাদের নিয়ে গেল উঠোনের এক কোণায় যেখানে তারা আগে কখনও যায়নি। সেই কোণায় মাটির উপর ছোট ছোট ফুল আর পাতায় ঢাকা এক সরু পথ ছিল, যেটা একেবারে অন্য এক জায়গায় পৌঁছাতে পারে। টিকটিকি পথের দিকে ইশারা করে বলল, “এই পথটা ধরে গেলে তোমরা এমন এক জাদুর জগতে পৌঁছাতে পারবে, যেখানে সবাই সাহসী হয়, আর সবাই বন্ধুত্বে বাঁধা থাকে।”
ওলফি আর গ্যাবি সেই পথে হাঁটতে শুরু করল। পথের দুই ধারে ছোট ছোট লাল-নীল পাথর, আর গাছের ডালে ডালে বসে ছিল ছোট ছোট পাখিরা, যারা মিষ্টি সুরে গান গাইছিল। পথটা এত মসৃণ আর সুন্দর ছিল যে ওদের মনে হচ্ছিল তারা যেন কোনো রূপকথার দেশে চলে এসেছে।
হঠাৎ, তারা এক বিশাল গাছের সামনে পৌঁছাল। গাছের গায়ে খোদাই করে লেখা ছিল কিছু শব্দ—“সাহসীরা এই গাছের ছায়ায় পৌঁছাতে পারে, আর বন্ধুরা এর নিচে আশ্রয় পায়।”
ওলফি গাছের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা তুলে তাকিয়ে বলল, “তাহলে আমরা তো এখানে আসতেই পারি, কারণ আমরা তো সাহসী আর বন্ধু দুটোই!”
গাছটা তখন মিষ্টি গলায় বলে উঠল, “তুমি ঠিকই বলেছ, ছোট্ট বীর। আমার নিচে তোমরা সবসময়ই আশ্রয় পাবে। কিন্তু মনে রেখো, সাহসীরা কখনও কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করে না। তাদের হৃদয় বড়ো আর বন্ধুত্বপূর্ণ হয়। এই কথাটা তোমরা সবসময় মনে রাখবে, কারণ সাহস আর বন্ধুত্ব একে অপরের সঙ্গে জড়িত।”
গ্যাবি আর ওলফি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল, আর তারা আবার পথে হাঁটতে শুরু করল। ঠিক সেই সময় একটা মিষ্টি বাতাস বইল, আর ওদের মনে হলো যেন পথটা তাদের জন্য আরও উজ্জ্বল আর সুরম্য হয়ে উঠেছে।
তবে ওদের নতুন এই পথ কোথায় নিয়ে যাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে পঞ্চম অধ্যায়ের জন্য, যেখানে ওলফি আর গ্যাবি আরও রহস্যময়, সুন্দর আর সাহসিকতায় ভরা এক জগতে পা রাখবে।
গ্যাবির উল্লাস ও মায়ের প্রশংসা
ওলফির সাহসিকতা দেখে গ্যাবির মুখে উজ্জ্বল হাসি ফুটে উঠল। সে আনন্দে তার ছোট্ট হাত দুটি তুলে চিৎকার করে উঠল, “ওলফি! তুমি তো একদম বীরপুরুষ! তুমি আসলেই আমাদের উঠোনের রাজা!” গ্যাবির এই প্রশংসা শুনে ওলফির বুক যেন গর্বে ভরে উঠল, আর তার ছোট্ট লেজটা খুশিতে দুলতে লাগল।
এই সময় গ্যাবির মা, মিসেস মেয়ার্স, রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে পুরো ঘটনাটা দেখছিলেন। তিনি মিষ্টি হেসে বললেন, “ওলফি, তুমি তো সত্যি সাহসী! এমন একজন সাহসী ছোট্ট রাজার জন্য আমাদের উঠোন আরও সুন্দর আর নিরাপদ হয়ে উঠেছে। তুমিই তো আমাদের উঠোনের সবার রক্ষাকর্তা!”
ওলফি মিসেস মেয়ার্সের কথা শুনে লজ্জায় একটু মাথা নুইয়ে ফেলল। কিন্তু সে বোঝাতে চাইল যে সে এই কাজটা শুধুমাত্র তার বন্ধু গ্যাবির জন্য করেছে। সে ছোট্ট গলায় বলল, “আমি কিছুই করিনি, মিসেস মেয়ার্স। আমি শুধু আমার বন্ধু গ্যাবির পাশে দাঁড়িয়েছি, যাতে ও ভয় না পায়।”
মিসেস মেয়ার্স ওর কথা শুনে একটু আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন। তিনি ওলফির মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বললেন, “তুমিই তো আসল বন্ধু, ওলফি। এমন বন্ধু পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার।”
গ্যাবি তখন মায়ের কথা শুনে আরও খুশি হয়ে ওলফিকে জড়িয়ে ধরল। তারপর সে মাকে বলল, “মা, জানো, আমাদের এই সাহসী ওলফি একটা সত্যিকারের বীর! ওর মতো সাহস আমি এর আগে কখনও দেখিনি। আমি আজ থেকে ওকে ‘ড্রাগন বিজয়ী’ বলে ডাকব!”
মায়েরাও হাসলেন এবং বললেন, “হ্যাঁ, ড্রাগন বিজয়ী নামটা ওর জন্য একদম ঠিক আছে। এখন থেকে আমাদের বীর ওলফির নামই হবে ড্রাগন বিজয়ী।”
ওলফি একটু হেসে বলল, “তাহলে আমি কি সত্যিই একটা বীর? আমি কি সত্যিই সবাইকে ভয়মুক্ত করতে পারি?” তার এই কথায় গ্যাবি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “মা, ও তো শুধু ড্রাগনকেই নয়, যে কোনো বিপদেই আমাদের রক্ষা করবে, তাই না?”
মিসেস মেয়ার্স তখন মাথা নেড়ে সায় দিলেন। তিনি বললেন, “হ্যাঁ, গ্যাবি, তুমি একদম ঠিক বলেছ। তোমার এই ছোট্ট বন্ধু তোমার পাশে থাকলে তোমার আর কোনো কিছুতেই ভয় পাওয়ার দরকার নেই।”
এইভাবে সময়টা কাটতে লাগল, আর সন্ধ্যা হয়ে এলে মিসেস মেয়ার্স ওদের সবাইকে ডাকলেন বাড়ির ভেতরে আসতে। কিন্তু গ্যাবির মন তখনও উঠোনের সেই ছোট্ট ঘটনাটার স্মৃতিতে বিভোর। সে বলল, “মা, আজকের দিনটা আমার জীবনের সেরা দিন। আমার বন্ধু ওলফি যে এতটা সাহসী হতে পারে, তা আমি কোনোদিন ভাবিনি।”
মিসেস মেয়ার্স তখন গ্যাবিকে বললেন, “আমরা সবাই যদি সাহসী হতে পারি আর একে অপরকে সাহায্য করি, তাহলে জীবনের কোনো বাধাই আমাদের থামাতে পারবে না। আজ তুমি ওলফির সাহস থেকে অনেক কিছু শিখলে, গ্যাবি। এই কথাগুলো মনে রেখো।”
গ্যাবি মাথা নেড়ে বলল, “মা, আমি অবশ্যই মনে রাখব। আর আমি সবসময় ওলফির পাশে থাকব, যেমন ও আমার পাশে থেকেছে।”
রাতের খাবার খেয়ে, ঘুমের সময় যখন এল, তখন গ্যাবি আর ওলফি মায়ের কাছ থেকে রূপকথার গল্প শুনতে চাইল। মিসেস মেয়ার্স তাদেরকে এক গল্প বললেন এক সাহসী খরগোশ আর তার বন্ধুর গল্প, যারা একসাথে বিপদ কাটিয়ে একদিন সবাইকে রক্ষা করেছিল।
গ্যাবি আর ওলফি সেই গল্প শুনে যেন আবার সেই উঠোনের স্মৃতির মধ্যে ডুবে গেল।
এইভাবেই, ওদের নতুন বন্ধুত্বের পথে প্রথম অধ্যায় শেষ হলো। কিন্তু ওলফির মনটা একটা নতুন কৌতূহলে ভরে উঠল। সে ভাবতে লাগল, “আমাদের উঠোনের বাইরে কি আর কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে?”
তাহলে কি নতুন কোনো রহস্যের পথে পা বাড়াবে ওলফি আর গ্যাবি?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ষষ্ঠ অধ্যায়ের জন্য, যেখানে গ্যাবি আর ওলফি আরও নতুন আর রোমাঞ্চকর অভিযানে বেরোবে।
হাসি-খুশিতে দিনটি চলতে থাকল
সকালের আলো ফুটতেই গ্যাবি আর ওলফি আবারও উঠোনে খেলা শুরু করল। গ্যাবির হাতে তার প্রিয় লাল রঙের বল, আর ওলফি তার পেছনে পেছনে দৌড়াতে ব্যস্ত। গ্যাবির হাসি আর ওলফির খুশির চঞ্চলতা মিলেমিশে যেন উঠোনকে আরও বেশি রঙিন করে তুলল।
ওদের দুষ্টুমি আর খেলাধুলার শব্দে পাখিরাও সুর মেলাল। ওলফি যখন বলটা ধরতে যায়, তখন হঠাৎ একটি পাখি এসে বলটাকে ঠোঁট দিয়ে ঠেলে দূরে ফেলে দিল। গ্যাবি আর ওলফি একসাথে হেসে উঠল। যেন সেই পাখিটাও ওদের খেলার সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
“ওলফি, তুমি যদি আমাদের সঙ্গী সেই টিকটিকি ‘ড্রাগন’-কে ডাকতে পারো, তবে আমাদের দলটা আরও মজবুত হয়ে যাবে!” গ্যাবি হেসে বলল।
ওলফি কিছুটা দ্বিধায় ভরা মুখে চারপাশে তাকাল। ওর মনে পড়ে গেল সেই টিকটিকির সঙ্গে দেখা করার সাহসিক অভিজ্ঞতা। তখন সে আরেকবার সাহস করে সেই টিকটিকিকে খুঁজে বের করল এবং তার উদ্দেশ্যে ডেকে উঠল, “ওহে ‘ড্রাগন’ বন্ধু! এবার তো আমাদের সঙ্গে খেলো!”
কিছুক্ষণ পর, সেই ছোট্ট টিকটিকিটা সত্যিই হাজির হলো। গ্যাবি ও ওলফি বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। “আরে, তুমি তো সত্যিই আসলে!” গ্যাবি খুশিতে চিৎকার করে উঠল। “তাহলে এখন থেকে তুমিও আমাদের খেলার বন্ধু!”
টিকটিকি মৃদু হাসল এবং এক লাফে ওলফির পাশেই বসে পড়ল। ওদের তিনজনের হাসি-তামাশায় সেই উঠোন যেন নতুন করে বেঁচে উঠল। গ্যাবি বলটা ছুঁড়ে দিলে ওলফি তা ধরতে দৌড়ে যায়, আর টিকটিকি ওকে সাহায্য করে যেন বলটা ফেলে না যায়। গ্যাবির মনে হল আজকের দিনটা সত্যিই বিশেষ; ওর দুটো প্রিয় বন্ধু এখন ওর পাশে আছে।
সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ওদের খেলার ধারা ধীরে ধীরে থেমে এলো। গ্যাবি আর ওলফি বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, কিন্তু মুখে তৃপ্তির হাসি লেগে ছিল। “আজকের দিনটা অনেক সুন্দর কাটল, তাই না, ওলফি?” গ্যাবি ওর ছোট্ট বন্ধুকে জড়িয়ে ধরল। ওলফি তখন চোখ বন্ধ করে, গ্যাবির আলিঙ্গনে আরাম খুঁজে নিল।
ক্লান্তিতে ওলফি উঠোনের এক রোদেলা জায়গায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল। তার মনে পড়ল দিনের সব কাণ্ড, বিশেষ করে টিকটিকির সঙ্গে তার সেই ‘ড্রাগন’ যুদ্ধের মজার মুহূর্ত। মনে মনে সে হাসল এবং ভাবল, “আমি তো সত্যিই একটা সাহসী বীর হয়ে উঠেছি!”
এদিকে, গ্যাবি মায়ের কাছে ফিরে এসে দিনের গল্প বলতে শুরু করল। মিসেস মেয়ার্স তার এই খুশির গল্প শুনে মিষ্টি হাসলেন এবং বললেন, “ওলফি তোমার জীবনে একদম সঠিক বন্ধুই এসেছে। এমন একজন বন্ধুর সঙ্গে তোমার দিনগুলো যে কত সুন্দর কাটছে!”
গ্যাবি তখন আনন্দে চিৎকার করে বলল, “হ্যাঁ মা! ওলফি শুধু আমার বন্ধু না, ও আমার সাহসিকতার প্রতীক। আমরা দু’জন মিলে অনেক মজার অভিযান করেছি আজ!”
রাতের খাওয়া শেষে, গ্যাবি আর ওলফি ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিল। কিন্তু ওদের মন যেন আজও পরের দিনের রোমাঞ্চের দিকে ছুটছে। গ্যাবির চোখে স্বপ্নের ছোঁয়া, আর ওলফি গভীর ঘুমে হারিয়ে যেতে যেতে মনে মনে ভাবছে, “কাল নতুন কি রহস্যের মুখোমুখি হব আমরা?”
এইভাবে ওদের আনন্দময় দিনটি শেষ হলো। তবে, গ্যাবি আর ওলফি কি আরও কিছু রহস্যের পথে পা বাড়াবে?
ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য বাংলা ছোট গল্প - ভাঙা স্বপ্ন: "ভাঙা স্বপ্ন" একটি হৃদয়স্পর্শী ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্প, যেখানে যুদ্ধ, সাহস ও ত্যাগের মাধ্যমে মিরিয়ামের জীবন বদলে যায়। এই বাংলা ছোট গল্প পাঠককে অন্য সময় ও স্থানে নিয়ে যাবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
নতুন অভিযানের স্বপ্ন
গভীর রাতে, যখন চারপাশ নিস্তব্ধ আর আকাশে জ্বলজ্বল করছে অসংখ্য তারা, তখন গ্যাবি আর ওলফি মায়ের গল্প শুনে গভীর ঘুমে ঢলে পড়ল। মায়ের স্নিগ্ধ কণ্ঠে শোনা সেই প্রাচীন গল্পগুলো তাদের মনকে শান্তি দিয়েছে, এবং ওদের মনে যেন আশ্রয় নিয়েছে সাহস আর মায়াবী কল্পনার অজানা এক জগত।
ওলফি শুয়ে আছে গ্যাবির কোলের পাশে। তার ছোট্ট নাকটা গ্যাবির বাহুর উপর রেখে সে একদম নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। কিন্তু সেই ঘুমের মধ্যেই যেন ওর মনে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে শুরু করল।
ওলফি দেখল, সে আর গ্যাবি একসাথে চলে গেছে এক মায়াবী জঙ্গলে। সেই জঙ্গলে ছোট ছোট আগুন পোকা আকাশের মতো ঝলমলে আলো ছড়াচ্ছে। জঙ্গলের প্রতিটি গাছ যেন কথা বলে, আর তাদের মিষ্টি গলায় গান শুনিয়ে চলে। সেই গাছগুলোর নিচ দিয়ে গ্যাবি আর ওলফি একসাথে হেঁটে চলেছে, আর ওদের চারপাশে জড়ো হয়েছে বনের সব পাখি আর প্রাণী। তারা সবাই গ্যাবি আর ওলফিকে স্বাগত জানাচ্ছে, যেন তারা এই জঙ্গলের খুবই আপনজন।
হঠাৎ, গ্যাবি আর ওলফির সামনে হাজির হল এক বিশাল নদী। নদীর জল স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ, আর তার নিচে দেখা যাচ্ছে ছোট্ট ছোট্ট মাছেরা খেলা করছে। নদীর ওপারে এক রহস্যময়ী দুর্গ দেখা যায়, আর দুর্গ থেকে উড়ে আসছে রঙিন পতাকার ঝলক। সেই দুর্গে পৌঁছানোর জন্য গ্যাবি আর ওলফি ভেবেই পেল না কীভাবে তারা এই নদী পেরোবে। ঠিক তখনই নদীর মধ্যে থেকে এক বুদ্ধিমান কাছিম ভেসে উঠল।
“তোমরা নদী পেরোতে চাও?” কাছিম হাসিমুখে জানতে চাইল।
গ্যাবি উত্তরে বলল, “হ্যাঁ! আমরা ওই রহস্যময়ী দুর্গে যেতে চাই।”
কাছিম তাদের বলল, “তাহলে আমার পিঠে চেপে বসো। আমি তোমাদের সেখান পর্যন্ত পৌঁছে দেবো।”
ওলফি প্রথমে কিছুটা দ্বিধায় ছিল, কিন্তু গ্যাবির সাহসিক চাওয়ায় সে কাছিমের পিঠে চড়ে বসল। নদীর শীতল হাওয়া আর ঢেউয়ের নরম শব্দে তারা ধীরে ধীরে ওপারে পৌঁছল। কাছিম বিদায় জানিয়ে বলল, “সাহসী হও, কারণ দুর্গের ভেতরে অপেক্ষা করছে আরও একটি মজার অভিযান!”
গ্যাবি আর ওলফি ধন্যবাদ জানিয়ে দুর্গের দিকে পা বাড়াল। দুর্গের গেট খুলতেই তারা দেখল, এক ঝকঝকে হলঘরে বসে রয়েছে এক বুদ্ধিমান বাঘ। সেই বাঘটি তাদের দেখে হাসিমুখে বলল, “আমি এই দুর্গের রক্ষক, আর আমি তোমাদের সাহায্য করতে এসেছি।”
ওলফি কিছুটা ভয় পেয়ে গেল, কিন্তু গ্যাবি তার পিঠে হাত রেখে বলল, “ভয় পেও না, ওলফি! আমরা একসাথে আছি। আমাদের কিছুই হবে না।”
বাঘটি গ্যাবির কথা শুনে সন্তুষ্ট হল। “তোমাদের সাহস দেখে আমি খুশি। তাই আমি তোমাদের একটি বিশেষ উপহার দেবো। এই তো, আমার জাদুর শিঙ্গাটি নাও। এটি যখনই বাজাবে, তখনই তোমাদের বন্ধুদের সাহায্য পাবে। কিন্তু শিঙ্গা বাজিয়ে সাহায্য চাইতে হবে শুধুমাত্র যদি বড় বিপদে পড়ো।”
গ্যাবি ওলফির হাতে সেই জাদুর শিঙ্গা দিয়ে তাদের বিদায় জানাল। তারা একে অপরকে ধরে গাড়িতে উঠল, আর সেই জাদুর শিঙ্গা হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল।
সেই রাতে ওলফি আর গ্যাবি ঘুমের মধ্যে সেই অভিযানটির কথা ভাবতে ভাবতেই শান্তির ঘুমে ডুবে গেল। তারা মনে মনে ভাবল, “সত্যিকারের বন্ধুত্ব আর সাহসের জন্য আমরাও একদিন ঠিক ওদের মতোই হবো।”
এতেই গল্পের শেষ, কিন্তু সেই কল্পনাটি ওদের মধ্যে অমর হয়ে রইল, এবং এক নতুন অভিযানের স্বপ্ন দেখার পথ তৈরি করে দিল।