কোলকাতার কোलाহল ছেড়ে একটু দূরে, ঝাড়গ্রামের নিবিড় জঙ্গলে ঢাকা একটা পুরনো বাড়ি। বাইরে থেকে দেখতে মন্দ ছিল না, কিন্তু ভিতরে? ভিতরটা ছিল এক অজান রহস্যের গহ্বর। এই বাড়িতেই থাকত সোহিনী, একা, তার ঠাকুমার রেখে যাওয়া বিরাট সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারিণী।
বাড়িটা কেন যেন একটা অদ্ভুত শীতলতা বহন করতো। রাতের অন্ধকারে কখনও কখনও আসবাবপত্রের খট খট শব্দ, দূর থেকে আসা অস্পষ্ট ফিসফাস, এমনকি কখনও বা কারো একঘরে পা ফেলা শব্দ শোনা যেত। প্রথমে সোহিনী এগুলোকে মনের ভুল বলে মনে করতে চেষ্টা করত, কিন্তু ঘটনাগুলো যত বেশি ঘটতে থাকল, ততই তার মনে একটা অজান ভয় ঢুকে গেল।
এক রাতে, ঝড়ের রোষে বাতাস কীচির মিছির করে গর্জন করছিল। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বাড়িটা চারপাশে অন্ধকারে ঢেকে গেল। সোহিনী একা একা বসেছিল, হঠাৎ মনে হলো, বাড়ির পেছনের উঠোনে কেউ যেন হাঁটছে। সে জানালার কাছে গিয়ে দেখল, উঠোনে কোনো আলো নেই, তবুও মনে হচ্ছে, কেউ একটা কালো ছায়া হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভয় পেলেও, একটা অদ্ভুত কৌতূহল জাগল সোহিনীর মনে। সে সাহস করে দরজা খুলে বাইরে এল।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - মিঠির মিষ্টি : একজন তরুণী উদ্যোক্তার মোটিভেশনাল গল্প: "মিঠির মিষ্টি" বাংলা ছোট গল্প; এই গল্পে আমরা দেখব কিভাবে ধৈর্য, সাহস আর আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে একজন তরুণী উদ্যোক্তা তার স্বপ্ন পূরণ করেন। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বাতাসে গাছের পাতা ঝমঝম করে কাঁপছিল, কিন্তু সেই কালো ছায়াটা আর দেখা যাচ্ছিল না। তবে, উঠোনের এক কোণায় ঘন জঙ্গলে ঢাকা একটা সরু পথ চোখে পড়ল। সেই পথটা কোথায় যায়, কেউ জানে না। কিন্তু জানি না কেন, একটা অদৃশ্য টান অনুভব করল সোহিনী। সেই পথ ধরে সে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ল।
জঙ্গলের ভিতরটা ছিল অন্ধকার আর নিস্তব্ধতায় পরিপূর্ণ। শুধু মাঝে মাঝে শেয়ালের ডাক আর শাপের ফণা ফুসফুসানি শোনা যেত। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের খুব ক্ষীণ আলো মাঝেমধ্যে একটুখানি আলোক ফেলে দিচ্ছিল। হঠাৎ, সোহিনীর চোখে পড়ল একটা সাদা জলোছায়া, দূরে একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছে। সে এগিয়ে যেতেই, ছায়াটা মিলিয়ে গেল।
এমনকি, এক জায়গায় হঠাৎ তার পা চলে গেল, সে নিচে পড়ে গেল। উঠে দাঁড়িয়ে সে চারপাশে তাকাল। কিন্তু চারপাশে শুধু গাছ আর গাছ। সে আর এগিয়ে যেতে সাহস করল না। ফিরে যেতে চাইল সোহিনী, কিন্তু মনে হলো পথটা হারিয়ে ফেলেছে সে। চারপাশে দেখল, সব গাছপালা এক রকম লাগছে। একটু জোরে ডাকল, “কে আছে? আমাকে সাহায্য করুন!” কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। শুধু বাতাসের দমকা আর পাতার খস খসানি।
হঠাৎ, একটা ঠান্ডা হাত তার কাঁধে স্পর্শ করল। সোহিনী চমকে উঠে চিৎকার করে উঠল। সে পেছনে ফিরল কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। তবে, একটা কर्कশ কণ্ঠস্বর শুনতে পেল, “কে ডেকেছিল?”
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - অন্ধকারের খেলা : "অন্ধকারের খেলা" - একটি রহস্য রোমাঞ্চকর বাংলা ছোট গল্প যেখানে একজন মনোবিজ্ঞানী ডাক্তারের অতীতের ভুল তার বর্তমানকে হুমকির মুখে ফেলে। দার্জিলিংয়ের একটি আলোচনা সভা -এ অংশগ্রহণকারীদের অদ্ভুত অভিজ্ঞতা ও মিস্টার ভট্টাচার্যের গোপন রহস্যের জাল জুড়ে উঠে এক উত্তেজনাপূর্ণ কাহিনী। অতীতের ভয় কি বর্তমানকে নিয়ন্ত্রণ করবে? সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
কণ্ঠটা ছিল অদ্ভুত, যেন কবরে থেকে আসছে। সোহিনী আর সহ্য করতে পারল না। সে পাগলের মতো ছুটতে শুরু করল, জানে না কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু যত ছুটছে, ততই মনে হচ্ছে, জঙ্গলের গভীরের দিকে ঢুকে যাচ্ছে সে।
একসময়, সে হাঁপিয়ে-টলে একটা জায়গায় এসে পড়ল। সেখানে একটা পুরনো, ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির। মন্দিরের চারপাশে গুল্ম ঝোপ জড়িয়ে গেছে। ভেতরে ঢুঁকতে সাহস হলো না সোহিনীর। কিন্তু আর কোনো উপায় ছিল না। সে সাবধানে মন্দিরের ভিতরে ঢুকল।
মন্দিরের ভিতরটা ছিল আরও অন্ধকার। শুধু এক কোণায় একটা ফাটা দরজা দিয়ে একটু আলো ঢুকেছিল। সোহিনী সেই দিকে এগিয়ে গেল। দরজাটা ঠেলে খুলতেই, সে চমকে উঠল।
ভিতরে একটা খাটের উপর শুয়ে আছে একটা কালো কাপড়ে ঢাকা বস্তু। সোহিনীর গা শিউরে উঠল। কী জিনিসটা এটা? সে একটু একটু করে কাপড়টা সরিয়ে দিল।
এমন জিনিস সে জীবনে কখনো দেখেনি। একটা শরীর, কিন্তু মানুষের মতো না। লম্বা লম্বা আঙুল, বাঁকা নখ, আর চোখের জায়গায় দুটো কালো গর্ত। সেই মূর্তি হঠাთ্ করে একটা চিৎকার করল। এমন ভয়ঙ্কর চিৎকার সোহিনী পড়ে গেল।
চেতন ফিরল সোহিনীর কিন্তু সে কোথায় আছে, বুঝতে পারল না। চারপাশে অন্ধকার, শুধু একটু দূরে একটা মশালের আলো জ্বলজ্বল করছে। সে সেই আলোর দিকে সাবধানে এগিয়ে গেল। দেখল, একটা বুড়ো মানুষ, মশাল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
“কে আপনি?” সোহিনী জিজ্ঞাসা করল, কণ্থটা শুকিয়ে গিয়েছে।
“আমি এই জঙ্গলের রক্ষক,” বুড়োটি শাঁসালো গলায় বলল।
“আমি…আমি কি করে এখানে এলাম?” সোহিনী স্বাভাবিক কণ্ঠ ফিরে পেতে পারছিল না।
“তুমি অন্ধকারের ডাকে এসেছিলে,” বুড়োটি বলল, “এই জঙ্গলে অন্ধকারের একটা রহস্য আছে, যেটা মানুষকে ডাকে।”
“কী রহস্য?” সোহিনীর কৌতূহল আরও বেড়ে গেল।
“এটা তোমাকে বলা যাবে না,” বুড়োটি মাথা নাড়ল, “কিন্তু তোমাকে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। নাহলে…” সে কথাটা শেষ করল না। কিন্তু তার আরষ্ট কথার ভঙ্গীতেই একটা অভাবনীয় ভয় ঢুকে গেল সোহিনীর মনে।
“আচ্ছা, ঠিক আছে,” সোহিনী বলল, “আমাকে এখান থেকে কি করে বেরোতে হবে?”
“এই মশালটা নেও,” বুড়োটি একটা লাঠির মাথায় জ্বলন্ত আগুনটা সোহিনীর দিকে বাড়িয়ে দিল, “এই আলো তোমাকে পথ দেখাবে। কিন্তু পেছনে ফিরে দেখো না।”
সোহিনী মশালটা নিল। পেছনে না ফিরে সে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ল। মশালের আলোয় সে একটা সরু পথ দেখতে পেল। সে সেই পথ ধরে হাঁটতে শুরু করল। কিন্তু মনে মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল – সে কি সত্যিই পেছনে ফিরবে না?
একটা সময় মনে হলো, সে যেন আগেও এই পথ দিয়ে এসেছে। কিন্তু সে নিজেকে আশ্বাস দিল, এটা তার ভুল। সে আরও হাঁটল। হঠাৎ, সে শুনতে পেল একটা ফিসফাস।
“কোথায় যাচ্ছ?”
কণ্ঠটা ছিল ঠান্ডা, কर्कশ। সোহিনী সারা গায়ে কাঁটা দাঁড়িয়ে গেল। কিন্তু সে পেছনে ফিরল না। সে আরও জোরে হাঁটতে লাগল।
ফিসফাসটা আরও জোরে আসতে লাগল, “আমাকে দেখো না কেন?”
সোহিনী আর সহ্য করতে পারছিল না। তার মনে হচ্ছে, সে যদি পেছনে না ফিরে, তাহলে হয়তো বাঁচতে পারবে। কিন্তু কৌতূহল আর ভয়ের একটা যুদ্ধ চলছিল তার মধ্যে।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - সবুজের স্বপ্ন : মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প: শাওলির সবুজ স্বপ্ন; জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প। শাওলি কীভাবে একটা গাছ থেকে শুরু করে সারা শহরকে সবুজে ছেয়ে ফেলে? সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
ঠিক সেই সময়, একটা হাত তার কাঁধে স্পর্শ করল। সোহিনী আর সহ্য করতে পারল না। সে চিৎকার করে ঘুরে দাঁড়াল…
চমকে গেল সোহিনী। কিন্তু সেখানে কেউ ছিল না, শুধু গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো খুব ক্ষীণ আভা ফেলে দিচ্ছিল। সে বুঝতে পারল, সে ঠিক করেছে। সে পেছনে ফিরে দেখেনি।
একটু স্বস্তি লাগল সোহিনীর। সে আবার হাঁটতে শুরু করল। মনে হলো, জঙ্গলের ঘনত্ব কমে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর, সে দেখতে পেল, দূরে একটা আলো জ্বলজ্বল করছে। সে আলোর দিকে ছুটতে লাগল।
আলোটা কাছাকাছি আসতেই, সে দেখতে পেল, সে তার বাড়ির উঠোনে ফিরে এসেছে। বাড়ির জানালায় আলো জ্বলছে।
সোহিনী দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলল। ভিতরে ঢুকে সে দেখল, তার ঠাকুমা বসে আছেন।
“ঠাকুমা! আমি ফিরে এসেছি!” সোহিনী আঁকুল কান্না জড়িয়ে দিল।
ঠাকুমা চমকে উঠলেন, “কী হয়েছে সোহিনী? এত রাতে কোথায় ছিলি?”
সোহিনী সব ঠাকুমাকে খুলে বলল।
ঠাকুমা মন খারাপ করে শুনলেন। তারপর বললেন, “এই জঙ্গল নিয়ে অনেক কাহিনী আছে। কথিত আছে, এখানে একটা খুব পুরনো মন্দির ছিল, যেটা এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। সেই মন্দিরে একটা অসুরের পূজা হতো। কিন্তু একদিন সাধুরা এসে সেই অসুরকে বন্দী করে ফেলেন। কিন্তু লোকে বলে, অসুরটা এখনও মুক্তি পেতে চায়। সেইজন্যে এই জঙ্গলে এত অদ্ভুত ঘটনা ঘটে।”
সোহিনী ভয়ে কাপতে থাকল।
“কিন্তু চিন্তা করো না,” ঠাকুমা সান্ত্বনা দিলেন, “তুমি ঠিক পথে ফিরে এসেছো। মনে রেখো, কখনও অজান রास्तায় যেও না, আর অপরিচিত কারো ডাকে সাড় দিও না।”
সেই রাতের পর, সোহিনী আর কখনও সেই জঙ্গলে যায়নি। সে জানত, সেই অন্ধকারের ডাক আর তার কাছে আসবে না। কিন্তু মাঝে মাঝে, রাতের অন্ধকারে, সে মনে মনে ভাবত, সে যে মূর্তিটা দেখেছিল, সেটা ঠিক কী ছিল? আর সেই বুড়ো মানুষটা কে ছিল? সেই রহস্য হয়তো সবসময়ই রহস্যই থেকে যাবে।