কলকাতার বুকে, রবীন্দ্র সরোবরের ঠিক পাশেই ছিল বিশাল বাড়িটা। গোলাপি রঙের বাড়িটা চারপাশে নীল সরোবর দিয়ে ঘেরা। আজ এখানে বিয়ে। আবির, তার ক্যামেরা হাতে প্রস্তুত, চারপাশে ছবি তুলছিল। বরযাত্রী, কনের বান্ধবীরা – সবারই হাসি, আনন্দ ক্যামেরায় বন্দী হচ্ছে।
কিন্তু হঠাৎ থমকে গেল আবির; একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়েছিল একজন মেয়েকে দেখে। হলুদ সাড়ি, গায়ের গয়না ঝলমল করছে দিনের আলোয়। কিন্তু আসল ঝলমলটা মেয়েটির হাসিতে। চোখেমুখে এমন এক আলো, যেন সকালবেলার সূর্যকিরণ। কয়েকটা ছবি তুলল আবির, মুগ্ধ হয়ে। মেয়েটির নাম রাধিকা।
এর মধ্যেই আরেকজন এসে দাঁড়াল রাধিকার পাশে। রাধিকা হাসতে হাসতে তার হাত ধরল। একটা মিষ্টি চুমু খেল ছেলেটির গালে। ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারে দেখে ফেলল আবির। জানে না কেন, হঠাৎ বুকটা কেমন করে উঠল। একটা চমক লাগলো।
বাংলা ছোট গল্প - ফাঁকা ঘরের গল্প : ছেলের ফাঁকা ঘরটা যেন জাদুঘর, অতীতের সাক্ষী। এই মা কিভাবে মেনে নেবেন ছেলের বিচ্ছেদ? আর ছেলের স্বপ্নের পথে তিনি কীভাবে হবেন তার সহায়? জানতে হলে পড়ুন বাংলা ছোট গল্প, "ফাঁকা ঘরের গল্প"। সম্পুর্ন্য এই বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
বিয়ের কোলাহল চলতে থাকল। কিন্তু আবিরের নজর রইল রাধিকার দিকে। দেখল রাধিকা হাসতে হাসতে কাজ করছে, বিয়ের আয়োজনে সাহায্য করছে সকলকে। একটু পর আবিরের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেল রাধিকা। আবিরের ক্যামেরার প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে কথা বলতে শুরু করলো।
কী সুন্দর ছবি তুলছেন! আমিও ফটোগ্রাফি খুব ভালোবাসি জানেন?
হ্যাঁ, বুঝতে পারছি, – হাসল আবির – আপনার মধ্যেই তো ফটোগ্রাফির ছোঁয়াটা আছে।
কথায় কথা মিলল দুজনের। জানতে পারল আবির, রাধিকা পেশায় একজন ট্রাভেল ব্লগার। আর ছেলেটি তার বয়ফ্রেন্ড রাজ, এই বিয়ের বরপক্ষের। আবির খুব একটা কিছু বলতে পারল না, কিন্তু মনের ভিতরে একটা অস্বস্তি কাজ করতে লাগল। রাধিকার প্রতি একটা অদ্ভুত টান অনুভব করছে সে।
দুপুরে খাওয়ার পর আবার দেখা হল তাদের। একটা নির্জন গাছতলায় দাঁড়িয়েছিল রাধিকা। হঠাৎ বৃষ্টি নামল। আবির তার ছাতাটি এগিয়ে দিল রাধিকা দিকে। দুজনের চোখাচোখি হল। সেই মুহূর্তে যেন থেমে গেল সময়।
আপনার ছবিগুলো দেখতে পারি? – জিজ্ঞাসা করল রাধিকা।
আবিরের মুখে হাসি ফুটল। দুজনে গেল আবিরের গাড়িতে। ল্যাপটপ খুলে দেখাল আবির তার ছবিগুলো। রাতের আঁধার নামার আগে পর্যন্ত কথা হল তাদের। জানতে পারল আবির, রাধিকার স্বপ্ন পুরো দুনিয়া ঘুরে বেড়ানোর। আর আবিরের ছবিগুলো দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল রাধিকা।
ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্প: "নিশীথের নিশান" - ১৮৭৫ সালের যশোরের বিদ্রোহের এক অমর কাহিনী। সম্পুর্ন্য এই বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
আপনার ছবিগুলোয় একটা গভীরতা আছে, আবির, – বলল রাধিকা – যেন প্রতিটা ছবিই একটা গল্প বলে।
হয়তো, – হাসল আবির – ঠিক যেমন আপনার লেখায় আছে।
কথার ফাঁকে ফাঁকে চোখে চোখ রাখার মুহূর্তগুলো ছিল বেশি। কিন্তু রাধিকার সাথে রাজের সম্পর্কটা একটা চাপের মতো কাজ করছিল আবিরের মনে।
বিদায় নেওয়ার সময় একটা চিরকুট রাধিকার হাতে দিল আবির। তার নাম্বার লিখেছিল সেখানে।
যদি কখনো কোনো ট্রাভেল ফটোগ্রাফির প্রয়োজন হয়, জানাবেন, – বলল আবির।
নিশ্চয়, – হাসল রাধিকা – কিন্তু আশা করি, শুধু কাজের বাইরেও কথা বলতে পারব।
এই কথায় একটা নতুন আশা জাগল আবিরের মনে। পরের কয়েকটা দিন কেটে গেল অসহ্য অপেক্ষায়। রাধিকার কোনো ফোন আসল না। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় রাধিকার পোস্টগুলো দেখে মনের দুঃখ গোপন করল আবির। রাধিকা একটা নতুন জায়গায় ছিল, আর তার হাসি ছিল ঠিক আগের মতোই ঝলমলে।
একদিন সন্ধ্যায়, হঠাৎ রাধিকার ফোন এল। রাজের সাথে ঝগড়া হয়েছে, মন খারাপ। বন্ধু হিসেবে দেখা করতে পারি কী? খুশি হয়ে রাজি হয়ে গেল আবির।
দেখা হল একটা কফি শপে। রাধিকা গল্প করল রাজের সাথে তার সম্পর্কের অমিলতাগুলো। আবির শুধু শুনল। কিন্তু রাধিকার চোখে একটা বিষণ্নতা দেখে বুঝল, সেও হয়তো এই সম্পর্ক নিয়ে খুশি না।
কথার ফাঁকে রাধিকা জিজ্ঞাসা করল, – আপনার কোনো বান্ধবী নেই, আবির?
ছিল, – উত্তর দিল আবির, কিন্তু ভালোবাসা টিকে নি তো।
এই কথার পর একটা অদ্ভুত চুপিসি নেমে এল দুজনের মাঝে। তারপর হঠাৎ, যেন কোনো ভাষা ছাড়াই দুজনে বুঝল, তাদের মনের গভীরে কী লুকিয়ে আছে।
কফি শপ ছেড়ে বেরোল তারা। রাতের আকাশটা ছিল তারা-জোনাকি খচিত। একটা পার্কে গিয়ে বসল দুজনে। রাধিকা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় মগ্ন ছিল। হঠাৎ, আবির তার হাত ধরে ফেলল।
রাধিকা, – বলল আবির – আমি জানি, হয়তো এটা ঠিক না, কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
রাধিকা চুপ করে থাকল। তার চোখে ছিল এক ধরনের দ্বিধা। একদিকে রাজের সঙ্গে বছরের পর বছরের সম্পর্ক, অন্যদিকে আবিরের সঙ্গে এই হঠাৎ টান। কিন্তু আবিরের কথাগুলো, তার চোখের স্নেহ – সবকিছুই যেন মনে একটা ঝড় তুলে দিল।
আমি… আমি একটু সময় চাই, আবির, – কণ্ঠটা কাঁপিয়ে বলল রাধিকা।
আবির মাথা নীচু করে বলল, – বুঝেছি। কিন্তু রাধিকা, প্লিজ, ভেবে দেখবেন। আমি হয়তো রাজের মতো আপনাকে বিলাসবহুল জীবন দিতে পারব না, কিন্তু আমি আপনাকে সারাজীবন ভালোবাসব। আপনার স্বপ্নগুলো পূরণে সাহায্য করব।
কল্পবিজ্ঞান-এর বাংলা ছোট গল্প - শব্দ তুফান : এই কল্পবিজ্ঞান গল্পে, ভাষাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, এবং 'মন্ত্রময়ী' নামক নিষিদ্ধ ভাষার মাধ্যমে মরকত অন্ধকারের রহস্য উন্মোচন করে অরিন্দম তার বোন ঐশীকে উদ্ধার করে। সম্পুর্ন্য এই বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
রাধিকা চুপ করে থাকল। আবিরের কথাগুলো তার মনে গিয়ে লাগল। রাজের সঙ্গে সম্পর্কটা সত্যিই আর আগের মতো ছিল না। ছিল অভ্যাস, আরাম, কিন্তু ভালোবাসা? সেটা হয়তো কোনো এক সময় হারিয়ে গিয়েছে।
কিন্তু আবিরের কাছে সে পেয়েছিল এক অন্য জগতের টান। তার ছবিতে যে গভীরতা সে খুঁজে পেয়েছিল, সেই গভীরতা কি আবিরের চোখেও ছিল? যে ভালোবাসার কথা সে বলেছে, সেটা কি সত্যি?
এই সব প্রশ্ন নিয়ে ফিরে গেল রাধিকা। কিছুদিন কোনো কথা হল না আবিরের সঙ্গে। সে এই সময়টা নিজের মনের সঙ্গে লড়াই করল। রাজের সঙ্গে সম্পর্কের অবশেষ কিছু বাঁচানোর চেষ্টা করল, কিন্তু ব্যর্থ হল।
একদিন সকালে, আবিরের ফোনে রাধিকার কল এল। কণ্ঠটা একটু কাঁপছিল।
আবির, – বলল রাধিকা – আমি রাজের সঙ্গে সম্পর্কটা শেষ করে দিয়েছি। কিন্তু… আবিরের বুকটা কেমন করে উঠল। কথা বলতে পারল না সে।
কিন্তু, – রাধিকা চালিয়ে গেল – আমাকে একটু সময় দিন। আমার নিজেকে বোঝা লাগছে। আপনার ভালোবাসা, আপনার স্বপ্ন… সবকিছু ঠিক মতো বুঝতে চাই।
আবিরের মুখে ফুটে উঠল একটা স্বস্তির হাসি।
অবশ্যই, রাধিকা, – বলল সে – আমি অপেক্ষা করব। আপনি যতটা সময় নিতে চান, নিন। কিন্তু জানবেন, আমার ভালোবাসা সবসময় আপনার জন্যেই থাকবে।
এরপর আর কিছু বলল না আবির। রাধিকাও বিদায় জানাল। কিন্তু এই কথাই যথেষ্ট ছিল। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা আবিরের মনে হল, যেন সে তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সূর্যোদয় দেখছে। হয়তো রাত কাটবে, কিন্তু সূর্য একদিন অবশ্যই উঠবে।
এরপরের কয়েক সপ্তাহ ধরে আবারও দেখা হল না আবির আর রাধিকার। কিন্তু নিয়মিত কথা হত ফো
নিয়মিত কথা হত ফোনে। আবির রাধিকাকে তার ছবির গল্প বলত, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা শোনাত। রাধিকা তার ব্লগ লেখার চ্যালেঞ্জগুলো, নতুন জায়গা ঘুরে দেখার ইচ্ছের কথা আবিরকে জানাত। কথার ফাঁকে ফাঁকে হাসি, মৃদু কথামালা – এই সবকিছু মিশে একটা অদ্ভুত বন্ধন তৈরি হচ্ছিল তাদের মধ্যে।
একদিন ফোনে রাধিকা বলল, “আবির, একটা ট্রিপ প্ল্যান করেছি। নেপাল যাব। তুমি কি আসতে পারবে?”
আবিরের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। “আসতে পারব কেন? এই তো সুযোগ!”
নেপালের পাহাড়ে, চারপাশে সবুজের সমুদ্র, দূরে চুম্বন দিচ্ছে হিমালয়। এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশেই রাধিকা আবিরকে জানাল তার সিদ্ধান্ত।
“আমি তোমাকে ভালোবাসি, আবির,” বলল রাধিকা, চোখ দুটি স্নেহে ভরা। “তোমার ছবিতে গভীরতা, তোমার কথায় সত্যি, আর তোমার চোখে যে ভালোবাসা দেখি – সেটাই আমার খুঁজছিলাম।”
আবির রাধিকাকে জড়িয়ে ধরল। দুটি হৃদয়ের মিলন, দুটি স্বপ্নের একত্রীকরণ। এই নেপালের পাহাড়ের সাক্ষী হল তাদের প্রেমের সূচনা।
নেপাল থেকে ফিরে এসে, সবার সামনে তাদের সম্পর্কের কথা জানাল আবির আর রাধিকা। রাজের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পর থেকেই রাধিকার পরিবার তার সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছিল। আবিরের পরিবারও খুশি হল।
এরপর একসাথে জীবনের নতুন পথ চলা শুরু করল আবির আর রাধিকা। আবির তার ছবির মাধ্যমে জগতের নানা জায়গা দেখাত, আর রাধিকা তার লেখায় সেই সব জায়গার গল্প বর্ণনা করত। তাদের জীবনটা হয়ে উঠল এক অবিরাম ভ্রমণ, এক অসমাপ্ত প্রেমের গল্প।
আর ঠিক যেমন রাধিকার হাসি আবিরের ক্যামেরায় বন্দী হয়েছিল, তেমনই রাধিকার ভালোবাসা আবিরের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিল চিরকালের জন্য।