রূপসী অদিতি; ধনী পরিবারের একমাত্র মেয়ে সে, যার জীবন বিলাসিতার মধ্যে সাজানো। কিন্তু, মায়ের সাথে দার্জিলিং যাত্রার সময় তার জীবনে ঝড় এসে যায়।
হোটেলের বারান্দায় চায়ের চুমুক দিচ্ছিলেন অদিতি আর তার মা সোনালী। হঠাৎ, এক দল ছেলেবেলার বন্ধু তাদের টেবিলে এসে হাজির। পরিচয় হলো – রোহন, আদিত্য, আর জয়। সবাই আইআইটি পড়ুয়া, চোখ জোড়ানো ছেলে, স্বপ্ন আর আশা তাদের চোখে ঝলমলে। সেই সন্ধ্যায়, চায়ের কাপের পর কাপ শেষ হতে থাকলো, গল্পের রেশ বাড়তে থাকলো।
কলকাতায় ফিরেও অদিতির মনে সেই সন্ধ্যার কথা ঘুরপাক খায়। রোহনের সেই হাসি, আদিত্যের জ্ঞানী কথা, আর জয়ের আহ্লাদধ্বনি – সবকিছুই মনকে নাড়া দেয়। অদিতির জীবনে এতদিন শুধু বিলাসিতা আর নিয়ম ছিল, এবার সে চায় তার জীবনে একটু রঙ, একটু উত্তেজনা।
কিন্তু, পরিস্থিতি ছিল জটিল। অদিতির বাবা, অজিত মিত্র, ছেলের মতো জামাই চেয়েছিলেন। রোহনদের মতো ছেলেদের জীবনে এখনো স্থিতিশীলতা আসেনি, টাকা-পয়সা সব অস্থির। সোনালী মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করেই রোহনদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিতে বললেন অদিতিকে। কিন্তু, অদিতি মেনে নিতে পারলো না।
অন্যদিকে, রোহনদের জীবনও ছিল চ্যালেঞ্জের। চাকরির খোঁজে ছুটোছুটি, আর্থিক অস্বস্তি – সবকিছুই তাদের জীবনে একটা অস্থিরতা এনে দিয়েছিল। এরমধ্যে, অদিতির সাথে দেখা হওয়াটা তাদের জন্যে একটা আশার আলো জ্বালিয়ে দিল। মেয়েটির চোখে দেখলো সেই সমর্থন, সেই বিশ্বাস, যা তাদের এই কঠিন সময়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - ঊষাশ্রীর স্বপ্ন: এই অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্পটি ঊষাশ্রী নামে এক তরুণী লেখিকার লন্ডনে আসার পর লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের কাহিনী বর্ণনা করে। গল্পটি লেখালেখির পথে আসা বাধা, হতাশা এবং ঊষাশ্রীর অদম্য সাহস ও ধৈর্যের উপর আলোকপাত করে। ঊষাশ্রীর গল্প অন্য স্বপ্নবাজদের অনুপ্রেরণা জোগাবে এবং তাদের স্বপ্নের পিছনে ছুটতে উৎসাহিত করবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
এদিকে, অদিতি রোহনের সাথে চিঠিপত্রে মিলিত হতে শুরু করলো। চিঠিতে লিখে ফেলল নিজের মনের কথা, স্বপ্ন, আর ভালোবাসা। রোহনও অদিতিকে জানালো তার কষ্ট, তার লড়াই। চিঠির পাতায় পাতায় গড়িয়ে গেল তাদের সম্পর্ক।
কিন্তু, এই মধুর সম্পর্কে ফাটল ধরলো যখন অদিতি জানতে পারলো রোহনের অতীতের গল্প। রোহনের ছোটবেলার বন্ধু ছিল অর্জুন। অর্জুনের সাথে তার এতো গভীর একটা বন্ধুত্ব ছিল, যা প্রশ্ন জাগালো অদিতির মনে। সেই বন্ধুত্ব কি ছিল? ভালোবাসা ছিল কী? রোহনের চিঠিতে লেখা অর্জুনের গল্পে ছিল একটা গভীরতা, একটা বেদনা, যা অদিতিকে বুঝতে দিল, রোহনের জীবনে অর্জুনের ছাপ এখনো মছে নি। ঈর্ষা আর অস্বস্তিতে অদিতি রোহনকে চিঠি লিখলো, প্রশ্ন করলো অর্জুনের ব্যাপারে। চিঠির জবাব এলো দেরিতে। রোহন লিখলো, অর্জুন ছিল তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। কিন্তু, একটা দুর্ঘটনায় অর্জুন চলে গেছে। অর্জুনের মৃত্যু রোহনের জীবনে একটা গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে, কিন্তু সেই শূন্যতা ভালোবাসা দিয়ে পূরণ করা যায় না। অদিতির প্রতি তার ভালোবাসা সত্যি, অর্জুনের স্মৃতির সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
অদিতি রোহনের কথা বিশ্বাস করতে চাইল। কিন্তু, মনের একটা কোণে সন্দে থেকেই গেল। সেই সন্দে আর অস্বস্তি তার আর রোহনের সম্পর্কে একটা দূরত্ব তৈরি করলো। চিঠিপত্রেও কমতে লাগলো আগের মতো উচ্ছ্বাস।
এদিকে, রোহন একটা ভালো চাকরি পেল। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এলে, সে অদিতিকে দেখা করার ইচ্ছে জানালো চিঠিতে। অদিতিও রাজি হলো। কিন্তু, ঠিক দেখা হওয়ার কয়েকদিন আগে অজিত মিত্র মেয়ের জন্য একটা সম্বন্ধ ঠিক করে ফেললেন। ছেলেটি ধনী পরিবারের, সফল ব্যবসায়ী। অদিতিকে বাধ্য করা হলো এই সম্বন্ধ দেখার জন্য।
বাংলা ছোট গল্প - চাঁদের আলোয় পাগলামি: চাঁদের আলোয় বিচ্ছেদ ও নতুন সূচনার গল্প! দেশভাগের জেরে স্বপ্ন হারানো নায়িকা নতুন জীবন খুঁজে পায় গ্রামের সাদাসিধা ছেলের সাথে। এক পুরনো প্রেমের স্মৃতি আর নতুন বন্ধনের টানাকষিতে জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংগ্রাম। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অদিতির মনের অবস্থা খারাপ। একদিকে রোহনের সাথে দেখা হওয়ার অপেক্ষা, অন্যদিকে বাবার বাধ্যবাধকতা। সে সোনালীকে সব খুলে বললো। সোনালী মেয়ের মনের কথা বুঝলেন। তিনি জানতেন, অর্থ আর সামাজিক মর্যাদা সবকিছু নয়। তিনি অজিত মিত্রকে বোঝালেন, অদিতির সুখের মধ্যেই তাদের সুখ। অজিত মিত্র মেয়ের মতানুযায়ি চলতে বাধ্য হলেন।
অবশেষে, রোহন আর অদিতির দেখা হলো। বহুদিন পরে একে অপরের চোখে চোখ রাখতে অদিতির মনে পড়লো সেই দার্জিলিংয়ের সন্ধ্যা। কিন্তু, এবার তার মনে কোনো দ্বিধা নেই। সে রোহনকে সব খুলে বললো – তার বাবার বাধ্যবাধকতা, তার মনের দ্বন্দ্ব। রোহনও অদিতিকে জানালো তার পরিকল্পনা। সে চায় অদিতিকে নিয়ে একটা সুন্দর জীবন গড়ার। কিন্তু, তার জন্য কিছুদিন সময় লাগবে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চায় সে। এবার অদিতি আর অস্বস্তি বোধ করলো না। সে জানে, রোহনের ভালোবাসা সত্যি। সে অপেক্ষা করতে রাজি।
কয়েকটা বছর কেটে গেল। রোহন তার নিজের ব্যবসা শুরু করলো। ছোটদের একটা টিউশন সেন্টার। আয় ঠিক মন্দ ছিল না, কিন্তু অদিতির অভ্যস্ত জীবনযাত্রার সাথে তুলনা করলে অনেক কম। অবশ্য, অদিতি কোনো অভিযোগ করলো না। সে জানতো, স্বপ্ন পূরণের পথে কিছু ত্যাগ স্বাভাবিক। সে রোহনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো, ব্যবসা চালানোর পরামর্শ দিল, ছাত্রদের মন জয় করতে সাহায্য করলো।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - প্রতিদ্বন্দ্বী: মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প - প্রতিদ্বন্দ্বী, সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত জীবন যুদ্ধের দুই যোদ্ধার একদিনের জীবন সংগ্রামের ঘটনা। সম্পুর্ন্য বাংলা অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্পটি পড়ুন। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
এদিকে, সমাজের চাপও কমলো না। অদিতির বন্ধুরা, আত্মীয়রা কটাক্ষ করতো। ‘এতো টাকার মেয়ে এসব কেন করে?’ ‘এই ছেলে কি তোকে সুখী রাখতে পারবে?’ অদিতির মাঝে মাঝে মনে খচা লাগতো। কিন্তু, রোহনের চেষ্টা আর ভালোবাসা দেখে সেই সব কথা একেবারেই গুরুত্ব দিত না।
একদিন, রোহনের টিউশন সেন্টারে অগ্নিগর্ভ হলো। সবকিছু পুড়ে গেল। রোহন শোকে আর হতাশায় ভেঙে পড়লো। কিন্তু, অদিতি তখনই দেখালো তার শক্তি। সে ব্যাংক লোন নেওয়ার পরিকল্পনা করলো, নিজের গয়না বিক্রি করে টাকা জোগাড় করলো। রোহনের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে আবার সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করলো।
কয়েক বছরের কঠিন পরিশ্রমের পর, রোহনের ব্যবসা আবার সফল হলো। সে এবার আরও বড় জায়গায় টিউশন সেন্টার চালাতে শুরু করলো। অদিতি এখনো তার সঙ্গিনী, সহকারী, আর সবচেয়ে বড় ভালোবাসা। তাদের গল্প হয়ে উঠলো এক অন্যরকম প্রেমের কাহিনী। টাকা, সামাজিক মর্যাদা ছাপিয়ে যেখানে জয়ী হলো ভালোবাসা আর বিশ্বাস।
