"স্নেহের আশ্রয়" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা ও যত্নের শক্তি দুটি বিপন্ন শিশুর জীবন বদলে দেয়। এটি অতীতের স্মৃতি ও মানবতার এক হৃদয়স্পর্শী উপাখ্যান।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » স্নেহের আশ্রয়

স্নেহের আশ্রয়

"স্নেহের আশ্রয়" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা ও যত্নের শক্তি দুটি বিপন্ন শিশুর জীবন বদলে দেয়। এটি অতীতের স্মৃতি ও মানবতার এক হৃদয়স্পর্শী উপাখ্যান।

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা ভুতের ছোট গল্প, পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – ঝড়ের রাত

বাংলা অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

১৯৬৫ সালের এক শীতের সকাল। পশ্চিমবঙ্গের এক প্রত্যন্ত গ্রামে ঘন কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল একটি পুরোনো বড় বাড়ি। বাড়িটির নাম ছিল সানরাইজ হোম। নামের আড়ালে এটি ছিল বিপদগ্রস্ত শিশুদের জন্য একটি সরকারি আশ্রম। উদ্দেশ্য ছিল নিরাপত্তা ও ভালোবাসার পরিবেশ তৈরি করা। কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।

আশ্রমের লম্বা করিডোরে দম বন্ধ করা নীরবতা। কোথাও এক ফোঁটা হাসির ছাপ নেই। কেবল শোনা যেত চিৎকার আর কান্নার শব্দ। ছোট ছোট শিশুদের জন্য এ জায়গাটি ছিল এক বিভীষিকার নামান্তর।

ছোট্ট চপল, দশ বছরের একটি ছেলেমানুষি ভরা ছেলে, নিজের এক কোণে বসে ছেঁড়া কাগজ দিয়ে কিসের যেন নৌকা বানানোর চেষ্টা করছিল। তার দুরন্ত চোখের দৃষ্টিতে মলিনতার ছাপ। পাশে বসে ছিল আট বছরের চন্দ্রিমা, চুপচাপ আর নির্লিপ্ত। তার চোখে এক গভীর বিষাদ।

চন্দ্রিমা নিচু গলায় জিজ্ঞাসা করল, “চপল, কি করছিস?”

চপল একটা বড় শ্বাস নিয়ে বলল, “দেখছিস না? পালাবার জন্য নৌকা বানাচ্ছি। যদি আসল নৌকা বানাতে পারি, আমরা এখান থেকে পালাব। নদী বেয়ে অনেক দূরে চলে যাব।”

চন্দ্রিমা কাঁপা গলায় বলল, “কোথাও যাওয়া যায় না। তারা ধরে ফেলবে। তুই জানিস না, দিদিমণিরা কত খারাপ!”

ঠিক তখনই করিডোরের শেষপ্রান্ত থেকে ভেসে এল কর্কশ গলা, “চুপ! কোনো আওয়াজ পেলে দেখবি কি করি!”

দুজনেই কুঁকড়ে গেল। চন্দ্রিমার চোখে জল, আর চপল চোখ নামিয়ে নৌকা ভাঁজ করতে লাগল।

সানরাইজ হোমে শিশুদের নিয়মিতভাবে ক্ষুধার্ত রাখা হতো। তাদের খাওয়ার সময় যদি কেউ একটু বেশি চাইত, সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি আসত। কোনোদিন খাবারের প্লেটে পচা ভাত, কোনোদিন শুধুই জল। শারীরিক শাস্তি তো ছিলই, মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করাও ছিল প্রতিদিনের ঘটনা।

একদিন চপল আর চন্দ্রিমার উপর দায়িত্ব পড়ল মেঝে পরিষ্কার করার। চপল বিক্ষুব্ধ গলায় বলল, “এরা আমাদের কি মনে করে? খেলনা?”

চন্দ্রিমা হেসে বলল, “তুই সবসময় এত রাগিস কেন?”

চপল মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “তুই বুঝিস না, চন্দ্রিমা। আমরা মানুষ, কোনো জানোয়ার নই। একদিন আমরা এখান থেকে বের হব।”

চন্দ্রিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি চাই তুই ঠিক থাকিস, চপল।”

কিন্তু সেদিন আশ্রমের দরজায় এক অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন এল। দুই সমাজকর্মী এসে হাজির। তাদের একজন, গাঙ্গুলি বাবু, কঠিন মুখে জানালেন, “চপল আর চন্দ্রিমা, তোমাদের জন্য ভালো খবর আছে। তোমরা এখানে আর থাকবে না।”

চন্দ্রিমা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “আমরা কোথায় যাব?”

গাঙ্গুলি বাবু নরম গলায় বললেন, “তোমাদের একটি ভালো পরিবারে নিয়ে যাওয়া হবে। কিছুদিনের জন্য। সেখানে তোমরা সুখে থাকবে।”

চপল চোখ সরু করে বলল, “তারা কি সত্যি ভালো হবে? না এখানকার মতো?”

গাঙ্গুলি বাবু চপলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “তোমাদের এই জীবন বদলাবে। বিশ্বাস করো।”

দুদিন পর, চপল আর চন্দ্রিমাকে নিয়ে যাওয়া হলো। গাড়িতে বসে তারা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “আমরা কি সত্যি সুখী হব?”

গাঙ্গুলি বাবু হাসলেন, “তোমরা এবার ভালোবাসা আর যত্ন কি জিনিস, সেটা শিখবে।”

গাড়ি এগিয়ে চলল। সামনে ছিল নতুন এক পৃথিবীর অপেক্ষা। কিন্তু তাদের মনের প্রশ্ন তখনও রয়ে গেল—এই নতুন জায়গা কি সত্যিই তাদের জন্য আশ্রয় হবে, নাকি অন্য এক বিভীষিকার মুখোমুখি হতে হবে?

বাংলা ছোট গল্প - পিতা-পুত্র সংবাদ: এক হৃদয়স্পর্শী বাংলা ছোট গল্প, "পিতা - পুত্র সংবাদ," যেখানে বাবা-ছেলের গভীর সংলাপে উঠে আসে দায়িত্ব, ভালোবাসা ও নতুন জীবনের পথে এগিয়ে চলার এক অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

নতুন জীবনের শুরু

বাংলা অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

গাড়ি থেকে নামার পর, চপল আর চন্দ্রিমা প্রথমবারের মতো দেখল রুমার বাড়ি। একতলা ছোট্ট, ছিমছাম বাড়ি, সামনের বাগানে কিছু রঙিন ফুল ফুটে আছে। দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল ষোলো বছরের এক মিষ্টি মেয়ে—রুমা। তার চোখে উষ্ণতা আর মুখে হাসি। কিন্তু চপল আর চন্দ্রিমার চোখে ভয় আর অবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট ছিল।

রুমা নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল, “তোমরা চপল আর চন্দ্রিমা, তাই তো?”
চপল চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল, আর চন্দ্রিমা তার হাত শক্ত করে ধরে রইল।

রুমার মা সামনে এসে বললেন, “এসো, ভেতরে চলো। তোমাদের জন্য নাস্তা তৈরি আছে।”

বাড়ির ভেতরটা ছিল উষ্ণ আর আরামদায়ক। দেয়ালে কিছু ছবি ঝুলছিল, আর কোণায় একটা বড় বইয়ের আলমারি। কিন্তু সানরাইজ হোমের অভিজ্ঞতা তাদের মনের গভীরে যে অবিশ্বাস বপন করেছিল, তা সহজে কাটছিল না।

রুমা তাদের হাতে কিছু বিস্কুট আর দুধ দিল। কিন্তু চপল প্লেটের বিস্কুটগুলো চট করে তুলে নিল আর নিজের শার্টের পকেটে লুকিয়ে ফেলল। রুমা সেটা দেখে অবাক হলো।

রুমা মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল, “তুমি এটা রেখে দিচ্ছো কেন?”
চপল সোজাসুজি তার চোখে তাকাল না। চন্দ্রিমা নিচু স্বরে বলল, “ও সবসময় এমন করে। ভয় পায়, যদি খাবার ফুরিয়ে যায়?”

রুমা চুপ করে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। তার হৃদয় ভারী হয়ে উঠল।

রাতে, রুমা তাদের নিজের ঘরে নিয়ে গেল। সে বিছানার পাশে মাটিতে বসে বলল, “তোমাদের একটা গল্প শোনাব?”
চন্দ্রিমা একটু দ্বিধায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। চপল তখনো কোণের দিকে মুখ করে বসে ছিল।

রুমা একটু হেসে বলল, “একটা রাজকুমার আর রাজকুমারীর গল্প। তারা এক অন্ধকার রাজ্যের বন্দি ছিল, কিন্তু একদিন তারা সাহস করে পালাল। নতুন রাজ্যে গিয়ে তারা সুখী হলো।”

চন্দ্রিমা মুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগল। সে ধীরে ধীরে বলল, “তারপর কী হলো?”
রুমা বলল, “তারপর? তারপর তারা শিখল যে পৃথিবীতে ভালো মানুষও আছে। যারা ভালোবাসতে জানে।”

চন্দ্রিমার চোখে জল চলে এল। সে নিচু গলায় বলল, “আমরা কি এমন কোনো রাজ্যে এসেছি?”
রুমা তার হাতে হাত রেখে বলল, “হ্যাঁ। এখানে কেউ তোমাদের আঘাত করবে না।”

কিছুদিন পর, ধীরে ধীরে তারা নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত হতে শুরু করল।

একদিন বিকেলে, রুমা চপলকে একটি ছোট্ট খেলনা ট্রেন দিল। চপল বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বলল, “এটা কি আমার জন্য?”
রুমা মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ। এটা তোমার। কিন্তু খেলনা দিয়ে খেলতে হয়, লুকিয়ে রাখতে নয়।”

চপল হাসল না, কিন্তু ট্রেনটা নিয়ে মেঝেতে বসে খেলা শুরু করল। রুমা তার পাশে বসে ট্রেন চালানোর নতুন উপায় শেখাচ্ছিল।

অন্যদিকে, চন্দ্রিমা ধীরে ধীরে রুমার কাছে মন খুলতে শুরু করল। একদিন সে বলল, “তুমি এত ভালো কেন? আমরা তো… আমরা তো…”
রুমা তার কথা শেষ হতে দিল না। বলল, “তোমরা আমাদের পরিবারের অংশ। আমরা একসঙ্গে থাকব, একে অপরকে ভালোবাসব।”

এক সন্ধ্যায়, রুমা গিটার বাজিয়ে একটি গান গেয়ে শোনাল। চন্দ্রিমা মুগ্ধ হয়ে বলল, “তুমি এত সুন্দর গান গাও!”
রুমা হেসে বলল, “তুমি শিখবে?”
চন্দ্রিমা আশ্চর্য হয়ে বলল, “আমি কি পারব?”
রুমা বলল, “অবশ্যই পারবে।”

সেদিন চন্দ্রিমা প্রথমবারের মতো প্রাণ খুলে হাসল। তার হাসি দেখে চপলও মৃদু হেসে ফেলল।

এই পরিবারে তারা প্রথমবারের মতো অনুভব করল যে, তারা সুরক্ষিত। আর সেই সুরক্ষা ধীরে ধীরে তাদের জীবনে নতুন আলো নিয়ে আসছিল।

বিয়োগান্ত বিদায়

বাংলা অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

সকালের মিষ্টি রোদ ঘরে উঁকি মারছিল। চন্দ্রিমা জানালার পাশে বসে নিজের হাতে আঁকা একটা ছবি দেখছিল—তিনটে পাখি, একটা বড় পাখি আর তার দুইটা ছোট পাখির ছায়া। চপল বারান্দায় খেলনা ট্রেন চালিয়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল তারা নতুন জীবনের সাথে একেবারে মিশে গেছে।

এমন সময় দরজায় কলিং বেলের শব্দ। রুমা দরজা খুলতেই সমাজকর্মীদের দেখে চমকে গেল। তারা ভিতরে এসে বলল, “চপল আর চন্দ্রিমার দাদিমা তাদের নিজের কাছে নিতে চেয়েছেন।”

রুমা যেন কিছুক্ষণ শব্দ শুনতে পেল না। কী বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। কয়েক মাসে এই দুই ছোট্ট শিশুর সাথে তার অদ্ভুত এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

রুমা অবশেষে জিজ্ঞেস করল, “কবে নিয়ে যাবেন?”
একজন সমাজকর্মী উত্তর দিল, “পরশু দিন।”

চন্দ্রিমা দরজার আড়াল থেকে সব শুনছিল। তার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সে ছুটে গিয়ে চপলকে খবরটা জানাল।
“আমাদের চলে যেতে হবে,” চন্দ্রিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল।
চপল কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর মাটিতে বসে মাথা নিচু করে বলল, “কেন? এখানে তো আমরা ভালো আছি।”

রুমা এসে তাদের পাশে বসে বলল, “তোমাদের দাদিমা তোমাদের কাছে পেতে চান। তিনি তোমাদের ভালোবাসেন।”
চন্দ্রিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “তুমি কি আমাদের ভালোবাস না?”
রুমার চোখ ভিজে উঠল। সে তাদের শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “তোমরা জানো না, তোমাদের কতটা ভালোবাসি। কিন্তু এটা তোমাদের জন্য ভালো হবে।”

বিদায়ের দিন সকালটা ছিল অদ্ভুত নিস্তব্ধ। চপল আর চন্দ্রিমা চুপচাপ বসেছিল। রুমা তাদের জন্য গুছিয়ে কিছু জামাকাপড় আর খেলনা রেখে দিয়েছিল।

সমাজকর্মীরা এসে বলল, “চল, দেরি হলে গাড়ি মিস হবে।”
চন্দ্রিমা জড়সড় হয়ে দাঁড়াল। তারপর ছুটে এসে রুমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুমি আমাদের মা-দিদি ছিলে। আমরা তোমাকে খুব ভালোবাসি।”
চপল চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল, “আমি তোমাকে ভুলব না, রুমাদি।”

রুমা জবাব দিতে পারল না। তার গলা যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। সে শুধু বলল, “তোমরা ভালো থেকো। আমি সবসময় তোমাদের জন্য প্রার্থনা করব।”

গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সময়, চন্দ্রিমা জানালা দিয়ে হাত নেড়ে বলল, “আমাদের ভুলে যেও না।”
রুমা তার জায়গায় দাঁড়িয়ে চোখে জল নিয়ে তাকিয়ে রইল, যতক্ষণ না গাড়ি চোখের আড়াল হয়ে যায়।

তাদের চলে যাওয়ার পর, রুমার ঘরে যেন নিস্তব্ধতা নেমে এল। চন্দ্রিমার আঁকা পাখিদের ছবিটা তার হাতের মধ্যে ছিল। সে বারান্দায় গিয়ে সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকল।

তার মা এসে বললেন, “তোমার খুব খারাপ লাগছে, তাই না?”
রুমা মাথা নিচু করে বলল, “তাদের জন্য কিছু করতে পেরে আমি খুশি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ঘরটা ফাঁকা হয়ে গেছে।”

তার মা মৃদু হেসে বললেন, “তুমি তাদের জীবনে যা দিয়েছ, সেটা কখনও মুছে যাবে না। তারা সবসময় মনে রাখবে যে কেউ একসময় তাদের সত্যিকারের ভালোবাসা দিয়েছিল।”

রুমা মাথা উঁচু করে বলল, “আমি আশা করি, তারা ভালো থাকবে। চপল আর চন্দ্রিমা এক নতুন জীবনের শুরু করুক, এটা চাই।”

এখনও সন্ধ্যাবেলায়, চপল আর চন্দ্রিমার কথা ভেবে রুমা বারান্দায় বসে থাকে। তাদের জন্য করা ছোট ছোট মুহূর্তগুলো তাকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়। যদিও শূন্যতা তাকে ঘিরে ধরে, তবুও সে জানে, তার ভালোবাসা তাদের জীবনের পথে আলো হয়ে থাকবে।

ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য বাংলা ছোট গল্প - প্রাচীরের ওপারে প্রেম: "প্রাচীরের ওপারে প্রেম" একটি হৃদয়স্পর্শী ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্প। বাংলা ছোট গল্পের এই প্রেমের আখ্যান বার্লিন প্রাচীরের পটভূমিতে সাহস, ত্যাগ ও ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

পঞ্চাশ বছর পর

বাংলা অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

সন্ধ্যের নিস্তব্ধতায় রুমা সেনগুপ্তা তার পুরোনো স্মৃতির মধ্যে ডুবে ছিলেন। কম্পিউটারের সামনে বসে তার কাঁপা আঙুলগুলো কী-বোর্ডের উপর থেমে ছিল। ইন্টারনেটে সার্চ বারে টাইপ করেছিলেন, “চন্দ্রিমা”। পঞ্চাশ বছর পরেও তার মনে আছে সেই মিষ্টি মেয়েটির ছোট্ট হাসি, বিদায়ের সময়ের কষ্টভরা চোখ।

কয়েক ঘণ্টার অনুসন্ধানের পর, হঠাৎ এক ঠিকানায় থেমে গেলেন। চন্দ্রিমা! কলকাতার উপকণ্ঠে একটি ছোট বাড়িতে থাকে সে। রুমার চোখে পানি চলে এল। এতদিন পর যদি তাকে আবার দেখা যায়?

রুমা মেয়েকে ডাকলেন, “তুলি, শোন। আমি চন্দ্রিমার ঠিকানা পেয়েছি।”
তুলি অবাক হয়ে বলল, “চন্দ্রিমা? সেই ছোট মেয়েটি, যাকে তুমি পঞ্চাশ বছর আগে দত্তক নিয়েছিলে?”
“হ্যাঁ,” রুমা ধীরে ধীরে বললেন, “আমার দেখা করতেই হবে তার সঙ্গে।”

তুলি মৃদু হেসে বলল, “তাহলে কালই চলো, মা। আমরা গাড়ি নিয়ে বের হবো। তোমার দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হোক।”

 পরদিন সকালে রুমা আর তুলি কলকাতার উপকণ্ঠে পৌঁছাল। ছোট্ট একতলা বাড়ির সামনে গাড়ি থামল। দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এক বৃদ্ধা। তার চুল ধূসর হয়ে গেছে, শরীরে ছিল ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু তার চোখের চাহনি বলে দিচ্ছিল—সে এখনও বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে চলেছে।

“আপনি কি চন্দ্রিমা?” রুমা ধীরে ধীরে এগিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
চন্দ্রিমা প্রথমে কিছুই বলতে পারল না। কয়েক মুহূর্তের জন্য দুজনেই স্থির। তারপর চন্দ্রিমা চিৎকার করে বলল, “রুমা দিদি!”

চন্দ্রিমা ছুটে এসে রুমাকে জড়িয়ে ধরল। দুই বৃদ্ধা একই সময়ে কাঁদতে লাগলেন। যেন পঞ্চাশ বছরের সমস্ত আবেগ এই মুহূর্তে মুক্তি পেল।

 বসে বসে চন্দ্রিমা বলল, “আপনি কেমন আছেন, দিদি? এতদিন কীভাবে কাটিয়েছেন?”
রুমা হেসে বললেন, “আমার জীবন তো ভালোই কেটেছে। কিন্তু তোমাদের কথা ভুলিনি। সবসময় মনে হতো, কোথায় আছো, কেমন আছো।”

চন্দ্রিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমার জীবন সহজ ছিল না, দিদি। দাদিমা মারা যাওয়ার পর, আমি একা হয়ে পড়ি। পড়াশোনার খরচ চালাতে চাকরি করতাম। অনেক লড়াই করেছি। এখনও বাঁচতে শিখছি।”

রুমা তার হাত চেপে ধরে বললেন, “তুমি এত লড়াই করে টিকে আছো, এটা আমার জন্য খুব বড় ব্যাপার।”

একটু থেমে চন্দ্রিমা বলল, “কিন্তু চপল… চপল পারল না। সানরাইজ হোমের সেই দুঃস্বপ্ন তাকে কোনোদিন ছাড়েনি। তরুণ বয়সে একদিন সে নিজেকে শেষ করে দিল। আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি, দিদি।”

এই কথায় রুমা নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলেন। “ওর মুখটা এখনো আমার চোখে ভাসে। আমি জানি, ও কীভাবে কষ্ট পেয়েছে। আমি যদি কিছু করতে পারতাম…”

চন্দ্রিমা সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “আপনার কোনো দোষ নেই, দিদি। আপনি আমাদের জীবনে আলো এনেছিলেন। সেই কয়েকটা মাস আমি আর চপল সত্যিকারের সুখ অনুভব করেছিলাম। আমি কখনও ভুলব না। আপনি আমাদের ভালোবাসা কী তা শিখিয়েছিলেন।”

রুমা বললেন, “আমার আর একবার তোমার জন্য কিছু করতে ইচ্ছা করছে, চন্দ্রিমা। তুমি আর একা থাকবে না। আমার বাড়িতে এসো। তোমার জায়গা এখনও খালি আছে।”
চন্দ্রিমা আবেগে আপ্লুত হয়ে বলল, “আপনার ভালোবাসা আমাকে সবসময় শক্তি দিয়েছে, দিদি। আমি জানি, আপনার আশীর্বাদেই আমি আজও লড়াই করতে পারছি।”

দুই বৃদ্ধা নতুন করে বন্ধনের জালে জড়িয়ে গেলেন। পঞ্চাশ বছরের অপেক্ষা যেন শেষ হল, কিন্তু সেই সময়ের স্মৃতি তাদের হৃদয়ে চিরকাল থাকবে।

কল্পবিজ্ঞান-এর বাংলা ছোট গল্প - মুক্তির দ্বার: "মুক্তির দ্বার" একটি হৃদয়স্পর্শী কল্পবিজ্ঞান গল্প। বন্ধুত্ব, অপরাধবোধ ও মুক্তির সন্ধানে ভ্যালেরিয়ানের যাত্রা নিয়ে এই বাংলা ছোট গল্প পাঠকদের ভিন্ন এক জগতে নিয়ে যাবে। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

ভালোবাসার শক্তি

বাংলা অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

সন্ধ্যা ক্রমশ ঘনিয়ে আসছিল। রুমা আর চন্দ্রিমা বসে বসে চায়ের কাপ হাতে অতীতের পাতা উল্টে চললেন। জানলার বাইরে পড়ন্ত রোদ শেষ আলো ছড়াচ্ছিল।

“দিদি, তোমার সেই গল্পগুলো মনে আছে?” চন্দ্রিমা হঠাৎ জিজ্ঞেস করল।
রুমা মৃদু হেসে বললেন, “কোনটা? রাজকন্যার গল্প, না কি বনের সেই ভয়ের গল্প?”
“সবই!” চন্দ্রিমা হাসল। “তুমি জানো না, সেগুলো আমাকে কতটা সাহস দিত। সানরাইজ হোমে যখন দিনগুলো অসহ্য লাগত, তোমার বলা গল্পগুলো আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিল।”

রুমার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠল। “আমি সেসময় কী করতাম জানো? তোমাদের মুখে হাসি দেখতে চাইতাম। চপলের দুরন্তপনা আর তোমার নির্জীব চোখের ভেতর একটু আশা জাগাতে চেয়েছিলাম।”

চন্দ্রিমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “তুমি যদি সেদিন আমাদের আশ্রয় না দিতে, দিদি, আমি হয়তো বেঁচে থাকতাম না। সানরাইজ হোমে আমরা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও হারিয়ে গিয়েছিলাম। তোমার ভালোবাসা আর যত্ন আমাকে টেনে তুলেছিল।”

রুমা ধীরে ধীরে বললেন, “তুমি জানো, আমি সবসময় ভাবতাম, আমার করা ওই সামান্য কাজ তোমাদের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলতে পেরেছে। কিন্তু আজ তোমার কথা শুনে বুঝতে পারছি, ভালোবাসা দিয়ে করা যেকোনো ছোট কাজই আসলে বিশাল কিছু হতে পারে।”

চন্দ্রিমা হঠাৎই গম্ভীর হয়ে গেল। “কিন্তু চপল…” তার গলায় বেদনার ছাপ। “আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি, দিদি। তার শৈশবের দুঃস্বপ্ন তাকে পিছু ছাড়েনি। আমি চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু…”

রুমা চন্দ্রিমার হাত ধরলেন। “সবাই সেই শক্তি নিয়ে জন্মায় না, চন্দ্রিমা। চপল হয়তো নিজের লড়াইয়ে হেরে গেছে, কিন্তু সে তোমার মতো একজন দিদির ভালোবাসা পেয়েছিল। সেটা তার জন্যও অনেক বড় প্রাপ্তি ছিল।”

চন্দ্রিমা মাথা নাড়ল। “তুমি ঠিক বলছ, দিদি। তার মুখে শেষ হাসিটা তুমি এনেছিলে।”

তারা আরও কিছুক্ষণ নীরবে বসে থাকল, যেন দুজনেই অতীতের এক গভীর মুহূর্তে ডুবে গিয়েছেন।

“জানো, চন্দ্রিমা,” রুমা আবার বললেন, “চপল না থাকলেও তুমি আজ আমার সামনে বসে আছো। তোমার মুখের এই হাসি দেখে আমার মনে হচ্ছে, আমি জীবনে কিছু একটা ঠিক করেছি। তোমার জীবনে যে ছোট্ট পরিবর্তনটা আনতে পেরেছিলাম, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।”

চন্দ্রিমার চোখ আবার অশ্রুভরা হয়ে উঠল। “তোমার সেই ভালোবাসা আজও আমার ভিতরে বেঁচে আছে, দিদি। আমি অনেক সংগ্রাম করেছি, কিন্তু তোমার শেখানো সেই ভালোবাসার শক্তি আমাকে ভেঙে পড়তে দেয়নি।”

রুমা মৃদু হাসলেন। “জীবনের আসল সৌন্দর্য বুঝেছ কি, চন্দ্রিমা? আমরা যা কিছু ভালোবাসা দিয়ে করি, তা শুধু আমাদের জন্য নয়, অন্যের জীবনেও আলো ছড়ায়। সেদিন তোমাদের সেই ছোট্ট গল্পগুলো বলা, গান গাওয়া, এগুলো আমি করেছিলাম ভালোবেসে। আর সেগুলোই তোমার মনে আজও রয়ে গেছে।”

চন্দ্রিমা বলল, “তাই তো বলি, দিদি, তুমি শুধু আমাদের দিদি ছিলে না, তুমি ছিলে মা। চপল তো তোমাকে মা বলেই ডাকত।”

রুমার চোখে জল জমে গেল। “জীবনের এই একটাই শিক্ষা, চন্দ্রিমা। ভালো কাজ করতে এবং যা কিছু আমাদের আছে তা ভাগ করে নিতে ভুল করো না। কারণ এমন ত্যাগ ঈশ্বরের কাছে আনন্দের।”

চন্দ্রিমা মাথা নাড়ল। “তুমি ঠিক বলেছ, দিদি। এই কথাটা আমি জীবনের বাকি দিনগুলোয় মনে রাখব।”

পুনর্মিলনের এই মুহূর্ত যেন দুজনের জন্যই একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। রুমা চন্দ্রিমার জীবনের অংশ হয়েছিলেন, আর চন্দ্রিমা রুমার। অতীতের কষ্টগুলোকে পিছনে ফেলে, তারা দুজনে একসাথে নতুন আলোয় জীবনকে দেখার প্রতিজ্ঞা করলেন।

দূরের আকাশে সূর্য ডুবে গিয়েছিল, কিন্তু তাদের হৃদয়ে আলো জ্বলছিল। ভালোবাসা দিয়ে তৈরি এই আলোকবর্তিকা তাদের নতুন করে বাঁচার প্রেরণা দিল।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

আষাঢ়ের সন্ধ্যে

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আষাঢ়ের সন্ধ্যে

শীতের রাজ্যের জাদু

"শীতের রাজ্যের জাদু: একটি মজাদার ছোটদের গল্প, যেখানে রাজা শীতল রূপকথার গল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য শীতের রাজ্যে গরমের অনুভূতি এনে দেন।"

"শীতের রাজ্যের জাদু: একটি মজাদার ছোটদের গল্প, যেখানে রাজা শীতল রূপকথার গল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য শীতের রাজ্যে গরমের অনুভূতি এনে দেন।"

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: শীতের রাজ্যের জাদু

স্নেহের আশ্রয়

"স্নেহের আশ্রয়" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা ও যত্নের শক্তি দুটি বিপন্ন শিশুর জীবন বদলে দেয়। এটি অতীতের স্মৃতি ও মানবতার এক হৃদয়স্পর্শী উপাখ্যান।

"স্নেহের আশ্রয়" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা ও যত্নের শক্তি দুটি বিপন্ন শিশুর জীবন বদলে দেয়। এটি অতীতের স্মৃতি ও মানবতার এক হৃদয়স্পর্শী উপাখ্যান।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: স্নেহের আশ্রয়

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!