শিউলি, একটা ছোট্ট মেয়ে, মাত্র পনেরো বছর বয়স। থাকে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ গ্রামে। শান্ত, স্বাভাবিক জীবন। কিন্তু শান্তির মাঝেও ছিল এক অশান্ত ঝঙ্কার – শিউলির গান। গান গাইতে ভালোবাসে সে। কাঁঠ তার মধুময়, সুরে সুরে মাতিয়ে দেয় গোটা গ্রামকে। কখনও একা একা গান গাইত শিউলি, কখনও বা গাছতলায় বসে পাখিদের সঙ্গে তাল মিলাত।
একদিন গ্রামের বড় মেলায় গানের প্রতিযোগিতা। শিউলির মা, রত্না, মেয়েকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। গান মানেই হৈ চৈ, তার মতে, মেয়েদের এসব নিয়ে কাজ নেই। কিন্তু শিউলির বন্ধু, রঞ্জন, জোর করে টেনে নিয়ে গেল মঞ্চের পেছনে। তারপর? মায়ের অগোচরে শিউলি মঞ্চে উঠে পড়ে!
মঞ্চে গান ধরল শিউলি। সবার আগে একটা চমক, তারপর মুগ্ধতা। ঝর্ণাধারার মতো ঝরে পড়ল তার গান। পুরো মেলা মंत्रমুগ্ধ হয়ে শুনল। প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা – প্রথম স্থান, শিউলি!
খবরটা গ্রামে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ল। শিউলির মা, রত্না, খুব রাগলেন। কিন্তু, গ্রামবাসীর প্রশংসা আর শিউলির খোলামেলা মুখ দেখে রাগি থাকতে পারলেন না। তারপর শুরু হলো শিউলির নতুন জীবন। গানের একটা পর এক অনুষ্ঠান, ছোট্ট ছোট্ট শহরে, গ্রামে। কিন্তু খ্যাতির মিষ্টি স্বাদের পাশাপাশি এলো কঠিন বাস্তব।
কল্পবিজ্ঞান-এর বাংলা ছোট গল্প - সবুজ স্বপ্ন : কল্পবিজ্ঞান গল্প: পারমাণবিক যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে রিয়া নামক এক যুবতী পৃথিবীকে পুনরুদ্ধারের আশা খুঁজে পায়। বাংকারে লুকিয়ে থাকা জ্ঞানের সাহায্যে সে লড়াই শুরু করে নতুন সবুজের জন্য। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
একদিন শিউলির গান শুনে একজন নামকরা সংগীত পরিচালক, অশোক মিত্র, খুবই মুগ্ধ হলেন। কলকাতায় নিয়ে গেলেন তাকে। অশোক বাবু খুব ভালো মানুষ, শিউলির গানের প্রতিভা খুঁটিয়ে দেখলেন। কিন্তু, শহরের জীবনে শিউলি হোঁচট খেল। প্রতিযোগিতা, সমালোচনা, অপমান – সব মিলে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে লাগল। একদিন কড়া সমালোচনা শুনে আর সহ্য না করতে পেরে পালিয়ে গেল শিউলি, ফিরে এলো নিজের গ্রামে।
মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁদতে থাকল শিউলি। “আমি পারব না মা, সব ছেড়ে দেব।”
রত্না, মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “কী যে বলছিস তুই? তোর গলায় যে ঈশ্বরের বর! এই গান তোর স্বপ্ন, তুই কি এত সহজে হার মানবি?”
শিউলির হাতে একটা পুরনো বাঁশি ধরিয়ে দিলেন রঞ্জন। “এই বাঁশিটা তোর সঙ্গী, মনে আছে? ছোটবেলায় গাছতলায় বসে এটা বাজাতে?”
বাঁশিটা হাতে নেওয়ার সঙ্গে স্মৃতির ঢেউ এলো শিউলির মনে। ছোটবেলা, গ্রামের সবুজ মাঠ, টিনের চালের বাড়ি, আর রাতের আঁধারে এই বাঁশির সুর। এটাই ছিল শিউলির সঙ্গী, স্বপ্নের সঙ্গী। বাঁশির স্বর শুনতে শুনতেই মনে হলো, কোথাও হারিয়ে যায়নি তার গানের আসল স্বর। খ্যাতি, প্রতিযোগিতা, এই সব কিছুতেই সে হারিয়ে ফেলেছিল গানের মূল সার – আনন্দ।
রাত গভীর। গ্রামের একांत কোণে, গাছের তলায় বসে শুরু করল শিউলি বাঁশি বাজাতে। মনে মনে গান গাইতে লাগল। প্রথমে আনমনে, তারপর আস্তে আস্তে ছেয়ে ফুটে উঠল তার কণ্ঠস্বর। গান যেন তার মনের ভাষা হয়ে উঠল, গানে ঢালল সে তার সব আশা, হতাশা, সব স্বপ্ন। গান গাইতে গাইতে সে আবার সেই শিউলি হয়ে উঠল, যে গ্রামের মাঠে, খোলা আকাশের নিচে গান গাইত।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - আধাঁরের আলো : মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প: 'আধাঁরের আলো', এক তরুণী উদ্যোক্তার 'আধাঁরের আলো' চা এর দোকান, স্বপ্ন, চ্যালেঞ্জ, আর সফলতার অনুপ্রেরণামূলক গল্প। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
পরের দিন, রঞ্জনকে সঙ্গে নিয়ে গেল শিউলি পুরনো সেই মন্দিরটার কাছে। সেখানে থাকতেন এক বয়স্ক সাধু, যাকে সবাই জানতেন গুরুদেব বলে। গানের জগতে পা রাখার পর আর যায়নি শিউলি, কিন্তু ছোটবেলায় গুরুদেবের কাছেই শিখতো সে স্তোত্র। গুরুদেব শুনলেন শিউলির গান, তার মুখে ফুটে উঠল আশার আলো।
“খুব সুন্দর গেয়েছিস, শিউলি,” বললেন গুরুদেব। “কিন্তু মনে রাখিস, গান শুধু খ্যাতির জন্য নয়, মনের সুর খুঁজে বের করার জন্য। খ্যাতি আসবে, আবার যাবে, কিন্তু তোর গানের ভেতরের আনন্দটা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।”
গুরুদেবের কথাগুলো শুনে শিউলির চোখে জল এলো। কত সহজে যে বুঝিয়ে দিলেন সবটা! ফিরতি পথে রঞ্জনকে বলল, “আবার চেষ্টা করব রঞ্জন, এবার নিজের গান গাইব।”
কয়েকদিনের মধ্যেই শিউলির গানের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেল। গ্রামের মাঠ থেকে গান গাইল সে, পুরনো বাঁশিটা হাতে। গানে ছিল তার নিজের সুর, তার নিজের গল্প। আর সেই গান মুগ্ধ করে দিল সারা দেশকে।
এবারের প্রশংসা আর আগের মতো নয়। এবার তার গানে সাড়া দিল মানুষের মন। কলকাতা থেকে আবার ডাক এলো শিউলির কাছে। কিন্তু এবার সে আর ভয় পেল না। গেল সে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। এবার গান গাইল নিজের মতো করে, বড় বড় গায়কদের সঙ্গে, আর জিতে নিল সবার মন।
শিউলি হয়ে উঠলো এক তারকা। কিন্তু তার মধ্যে কোনও বদল আসেনি। সেই গ্রামের মেয়েই রয়ে গেল
তারকা হওয়ার পরেও শিউলি মাঝে মাঝে পালিয়ে আসত গ্রামে। ঐ একই গাছের তলায় বসত, বাঁশি বাজাত। রাতের আকাশের নিচে, গ্রামের নিশিদ্ধ শব্দে ম ম, সে খুঁজে পেতো নিজের শান্তি। শহরের জাঁকজমকের মাঝেও তার মনে থাকত গুরুদেবের কথা – গান হলো মনের সুরের এক্সপ্রেশান।
ভুতের বাংলা ছোট গল্প - অন্ধকারের ডাক : ভুতের গল্প: অন্ধকারের ডাক - এক ভয়ঙ্কর রহস্যের গল্প। জঙ্গলের গভীরে হারিয়ে যাওয়া এক তরুণী, অজানা শক্তির ডাক, এবং ভয়াবহ মুখোমুখি - এই ছোট গল্পে আছে সব। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
একদিন শিউলির একটা বড়ো কনসার্ট ছিল। বিশাল স্টেজ, ঝাঁ চকচকে আলো, হাজার হাজার মানুষের ঢেউ। কিন্তু সেই পরিবেশেও কিছু একটা অস্বস্তি লাগছিল শিউলির। গান গাইতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেল সে। সবার চোখ তার দিকে। মনে হলো, এই সবকিছুই কেমন যেন অভিনয়।
ইমপ্রোভাইজ করলো শিউলি। সে গাইতে শুরু করল একটা নতুন গান। গানটা ছিল তার গ্রামের স্মৃতি নিয়ে, মাঠে খেলা, নদীতে সাঁতার, গ্রামের মানুষের সারল্য নিয়ে। সঙ্গীত পরিচালক চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু গান শেষ হতেই সারা স্টেডিয়াম কয়েক সেকেন্ডের নীরবতার পর সঙ্গীতধ্বনিতে ম ম শব্দে ভরে গেল। মানুষের চোখে জল।
শিউলি বুঝলেন, তার গানের আসল শক্তি কোথায়। ঐ রাতে শিউলি তার গানের নতুন অধ্যায় শুরু করলেন। গানে তিনি গল্প বললেন গ্রামের, মানুষের, জীবনের। আর তার গান হয়ে উঠল সবার হৃদয়ের কথা।