বারান্দার শেষ চিঠি

কলকাতার বর্ষণমুখর বিকেল। কলেজ স্ট্রিট-এর পুরনো বারান্দায় আমি আর বইয়ের ভিড়ে সে। লাল পাড় সাদা শাড়িতে তাকে দেখে থমকে গিয়েছিলাম। আমার আনা কদম ফুলটা তার হাতে গুঁজে দিয়েছিলাম—সেদিন একটিও কথা হয়নি। শুধু দু'জনের চোখেই ছিল গভীর কোনো জিজ্ঞাসা।

তারপর টানা সাত দিন, ঠিক বিকেল চারটেয়, সেই একই বারান্দায় সে আসতো। আমি শুধু দূর থেকে দেখতাম। একদিন সাহস করে একটা নীল খামে চিঠি রেখে এলাম। উত্তর আসবে কি না, এই দুশ্চিন্তা নিয়ে রাত কাটে। আমার হৃদয়ে তখন এক নতুন প্রেমের আনাগোনা।

পরের দিন বারান্দা শূন্য। হতাশ হয়ে ফিরে আসছি, হঠাৎ পকেটে একটা হালকা স্পর্শ। তার হাতের লেখা! "নীল খামটা কিন্তু আমার কাছেই আছে। আগামী শনিবার প্রিন্সেপ ঘাটে দেখা হবে।" বুকের ভেতর হাজার ঘুঘু উড়ে গেল।

শনিবার বিকেলে প্রিন্সেপ ঘাটের গঙ্গাপাড়। ভিড়ের মধ্যে আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। চারটে বাজলো, পাঁচটা বাজলো। সে এলো না। চারিদিকে শুধু গঙ্গার ঢেউয়ের আওয়াজ আর সন্ধ্যা-আরতির আলো। তবে কি সে আমায় ভুল ঠিকানা দিলো?

হঠাৎ একটা ট্যাক্সি এসে থামল। দরজা খুলে নামলেন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক। হাতে সেই নীল খামটা! বললেন, "আপনার বান্ধবী আজ আসতে পারলেন না, কিন্তু এই চিঠিটা দিতে বললেন।" এর মধ্যে কী এমন আছে যা সে নিজে এসে বলতে পারল না?

খাম খুলতেই তার ছোট হাতের লেখা। "আমি জানি তুমি হতাশ। কিন্তু সেদিন তোমার দেওয়া কদম ফুলটাই আমার শেষ স্মৃতি। আজ তিন বছর হলো, আমি এই শহরের থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। তবুও তোমার অপেক্ষার দাম দিতে চেয়েছিলাম।" আমার চোখে তখন জল।

শেষ লাইনে লেখা, "তোমার দেওয়া ফুলটা আমার বইয়ের ভাঁজে আজও সযত্নে রাখা। ভালো থেকো। ইতি, তোমার 'বারান্দার শেষ চিঠি'।" একটা মুহূর্তের দেখায় জন্ম নেওয়া প্রেম আজীবন একটা মিষ্টি যন্ত্রণার মতো রয়ে গেল। আসলে ভালোবাসা কখনও শেষ হয় না, রূপ পাল্টে যায় শুধু।

অসম্ভব সম্ভব হলো