শেষ ট্রেন

কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে রাত প্রায় ১১টা। রিমা, সদ্য চাকরি ফেরা, শেষ ট্রেন ধরতে ছুটে এল। প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা, কুয়াশায় ঢাকা। হঠাৎ—একটা কর্কশ আওয়াজ! পিছনে কেউ হাঁটছে?

রিমা ঘুরে দেখে—কেউ নেই। তবু আওয়াজটা যেন ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। ট্রেনটা ঢুকল, “বারুইপুর লোকাল”, অথচ সময়ের আগেই! তবুও, কিছু না ভেবে উঠে পড়ল সে।

কামরায় ঢুকে দেখে—একজনও নেই। লাইট ঝিমঝিম করছে, জানলার কাচে ছায়া। বাইরে কিছুই দেখা যায় না—শুধু কালো অন্ধকার। একটা ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যায় গায়ে। ঠোঁট শুকিয়ে আসে।

"তুমি দেরি করেছ, রিমা..."—একটা কণ্ঠস্বর! তীব্র ঠান্ডায় গায়ে কাঁটা দেয়। রিমা দেখল, তার ঠিক সামনে বসে আছে মা! কিন্তু মা তো... পাঁচ বছর আগেই মারা গেছেন!

"তুমি তো কথা দিয়েছিলে, ফিরবে..."—মা বলল ফিসফিস করে। চোখে অদ্ভুত শূন্যতা। রিমা কাঁদতে কাঁদতে বলে, "আমি তো ফিরেছিলাম, মা!" হঠাৎ আলো নিভে গেল কামরার।

টিকটিক আওয়াজ থেমে যায়। ট্রেনটা চলছিল তো? না কি থেমে গেছে? জানলা দিয়ে রিমা দেখে—প্ল্যাটফর্মে তারই এক ছবি! নীচে লেখা: “দেহ উদ্ধার – ১১:৪৫ রাত”।

মা এবার উঠে দাঁড়াল। রিমার হাত ধরে বলল, "চলো, এবার একসঙ্গে থাকি..." ট্রেনের দরজা খুলে গেল নিজের থেকে। রিমা আর কিছু বলল না। অন্ধকারে মিলিয়ে গেল দুটো ছায়া।

চাঁদের নীল চাবি