মহাকাশের বুকে কলকাতার রাতের আলোর মতো ঝিলমিল করছে অসংখ্য তারা। তাদের দিকে চেয়ে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম আমি, অবন্তী, আর আমার স্বামী, সোম। আজ আমাদের বিয়ের পরের দিন। আর আমাদের হনিমুনের জাহাজ, আকাশযাত্রী ১৭, সেই তারাময় আকাশের বুকেই বিরাজ করছে।
আকাশযাত্রী ১৭, পৃথিবীর সবচেয়ে অত্যাধুনিক মহাকাশযান। শুধু মহাকাশ ভ্রমণই নয়, এখানে রয়েছে সব ধরনের সুবিধা। মাইকেলিন তারকা খ্যাত রোবট রাঁধুনি আমাদের সারাক্ষণ পছন্দসই খাবার বানিয়ে দিচ্ছে। আর প্যানোরামিক ভিউ রুম থেকে পুরো মহাকাশটা যেন হাতের নাগালে। কিন্তু, আমাদের এই রোম্যান্টিক ছুটি কতক্ষণের জন্য, তা আমরা জানতাম না। কয়েক ঘণ্টা পরেই আমার জীবন বদলে গেল।
কী ছিল না সেই রাতে! চাঁদের আলোয় ছেয়ে থাকা গ্রহ, দূরের কোনো নীহারিকার রহস্যময় আলো, সবকিছুই মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু, হঠাৎ আমার চোখ আটকে গেল। প্যানোরামিক ভিউ রুমের এক কোণে, ছায়ায় লুকিয়ে থাকা একটি চেহারা। তিনটি চোখ, মাথায় তিনটা শিং, মানুষ্য নয় এমন এক কাঠিন্য দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ। ত্রিক্ষণদর্শী! মহাকাশের কিংবদন্তি, যে সম্পর্কে শুধু গল্প শোনা যেত, সে এখানে, আমাদের জাহাজে!
আমি সোমকে সব জানালাম। প্রথমে সে বিশ্বাস করতে পারল না। কিন্তু, যখন আমি তাকে সেই ত্রিক্ষণদর্শীকে দেখালাম, তখন তার মুখের রক্ত শুকিয়ে গেল। আমরা দু’জনেই জানতাম, এটা ভালো লক্ষণ নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জাহাজ বলা হতো আকাশযাত্রী ১৭ কে। কিন্তু, এখন ত্রিক্ষণদর্শীরা এখানে, তাহলে কিছু একটা ভুল হয়েছে।
ভুতের বাংলা ছোট গল্প - ভয়ঙ্কর অতিথি : ভয়ের রাত, অন্ধকারের ডাক, অজানা ভয়ের কাছে ছুটে যাওয়া - "ভয়ঙ্কর অতিথি" এক ভুতুড়ে বাংলা ছোট গল্প যা আপনার হৃদস্পন্দন ত্বরান্বিত করবে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই স্পিকারে জাহাজের ক্যাপ্টেনের কণ্ঠ শোনা গেল। একটা গম্ভীর কণ্ঠ। তিনি জানালেন, জাহাজে ত্রিক্ষণদর্শী ঢুকে পড়েছে। আর তাদের নিরস্ত্র করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে তিনি জাহাজের স্ব-ধ্বংস কার্যক্রম শুরু করছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই জাহাজটা আকাশের বুকে ক্ষণ্ড,বি-ক্ষণ্ড হয়ে যাবে।
কথাটা শুনে আমার পা কেঁপে উঠল। সোম আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমরা দু’জনেই চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। এত স্বপ্ন নিয়ে এই যাত্রা, আর এমন পরিণতি? শেষ মুহূর্তগুলো কাটছিল যন্ত্রণার অতলে। রোবট রাঁধুনি, প্যানোরামিক ভিউ রুম, সবকিছুই ছোঁট লাগছিল মৃত্যুর এই ভয়ে। ক্যাপ্টেন বারবার জানাচ্ছিলেন জাহাজের অবস্থা। বিস্ফোরণের কয়েক সেকেন্ড আগে জাহাজের কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণ কাজ করা বন্ধ করে দেবে, সেই সময়টুকুই আমাদের বাকি।
সোম আমার হাত ধরে টান দিল। “চল, লাইফবোটে যেতে হবে।” কিন্তু, কথাটা শেষ হবার আগেই জাহাজের কম্প শুরু হল। ক্যাপ্টেনের কণ্ঠে আরো ভীতি ধরা পড়ল, “লাইফবোটের সিস্টেমে ত্রুটি। আমরা আটকে গেছি।”
আমাদের পৃথিবীটা কেবল কয়েকটা সেকেন্ডের মধ্যেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। চারপাশের সবকিছু কাঁপছিল। আমি সোমের বুকে মাথা গুঁজে দিলাম। মৃত্যুর আগের সেই মুহূর্তটা কীভাবে কাটাল, তা আর মনে নেই। শুধু মনে আছে একটা ঝলকানি, তারপর অন্ধকার।
পুন: চেতনা ফিরলে চারপাশটা অচেন। আমি একটা ধাতব কামরায় শুয়ে আছি। গায়ে জ্বালা। চোখ খুলতেই দেখি সোম পাশেই শুয়ে আছে। সেও চোখ খুলল। আমরা দু’জনেই একে অপরের দিকে চেয়ে অবাক হয়ে গেলাম। আমরা বেঁচে আছি! কিন্তু, কোথায়?
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - প্রতিচ্ছবি : রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প: শ্রীনিবাসের জীবনে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত ঘটনাগুলি নিয়ে লেখা এই গল্পে পড়ুন কিভাবে সে তার জীবন ফিরে পায় এবং এক নতুন অধ্যায় শুরু করে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
এর আগে দেখা না হওয়া কিছু যন্ত্রপাতি ঘেরাও করে রয়েছে আমাদের। ঠিক তখনই দরজা খুলে একটা চেহারা দেখা গেল। মানুষ্য না, ত্রিক্ষণদর্শীও না। লম্বা, দেহ, বড় বড় কালো চোখ। কিন্তু, তার চোখে কোনো রকম শত্রুতা নেই। বরং, একটা সাহায্যের ভাবনা ফুটে উঠছে। সে আমাদের দিকে হাত বাড়িয়ে ইশারা করল, “এসো।”
আমরা দু’জনেই সন্দিহান। কিন্তু, আর কোনো উপায় ছিল না। আমরা উঠে দাঁড়িয়ে তার পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলাম। সে আমাদের নিয়ে গেল একটা বড় ঘরে। সেখানে আরো অনেক অচেন জাতির মানুষ ছিল। সবার চেহারাতেই অবাকের ছাপ। তখনো আমরা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
একটু পরে সেই প্রাণী আমাদের সামনে একটা পর্দা দেখাল। পর্দায় পৃথিবীর ছবি। কিন্তু, পৃথিবীটা আর আগের মতো নেই। সম্পূর্ণ জনশূন্য। আমরা হতবাক হয়ে গেলাম।
“কী হল?” সোম গলা চড়িয়ে বলল।
সেই প্রাণী কিছু একটা বলল, কিন্তু আমরা বুঝতে পারলাম না। কিন্তু, তার হাতের একটা যন্ত্রের সাহায্যে সে আমাদের জানালো, ত্রিক্ষণদর্শীরা পৃথিবী আক্রমণ করেছে। এবং, তারাই আমাদের বা
সেই প্রাণীটির কথা শুনে আমাদের মাথা ঘুরে গেল। পৃথিবী? আক্রমণ? এত কিছু কি করে সম্ভব! আমরা তখনো মৃত্যুর ভয় কাটিয়ে উঠতে পারিনি, তার উপর এই নতুন বিপদ। সোম জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু, আমরা এখানে কেন? তোমরা আমাদের কী করবে?”
সেই প্রাণীটি আবারো কিছু একটা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করল। তার হাতের যন্ত্র অনুবাদ করে জানাল, “আমরা আকাশের একাধিক গ্রহের বাসিন্দা। ত্রিক্ষণদর্শীরা আমাদেরও শত্রু। তারা মহাকাশ জুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। তোমাদের জাহাজের সিস্টেমে ঢুকে পড়ার পর ত্রিক্ষণদর্শীদের জাহাজ আমাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সেই যুদ্ধের ফলে তোমাদের জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা তোমাদের উদ্ধার করেছি।”
আমরা সব ঠিকঠিক বুঝতে পারছিলাম না ঠিকই, কিন্তু একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গেল – আমরা পৃথিবীতে ফিরতে পারব না। আমাদের একমাত্র আশ্রয় এই অচেন গ্রহের অচেন জাতিগুলি।
এই গ্রহের নাম জানালাে তারা – জিওন। এখানকার পরিবেশ পৃথিবীর চেয়ে অনেকটাই আলাদা। দুটো সূর্যের আলোয় স্নান করা জিওন। মাঝে মাঝে তীব্র গরম, মাঝে মাঝে অসহ্য ঠান্ডা। আমাদের শরীর এই পরিবেশে মানিয়ে নিতে অনেকটা সময় লাগল।
জিওনের মানুষ্যরা আমাদের সাহায্য করল। তারা আমাদের শিখিয়ে দিল তাদের ভাষা, তাদের সংস্কৃতি। আমরাও তাদের জানালাম পৃথিবীর গল্প। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা জিওনের সমাজের একটা অংশ হয়ে উঠলাম।
কিন্তু, পৃথিবীর কথা মনে না করা যায় না। আমরা জানতে চাইলাম, ত্রিক্ষণদর্শীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কি কোনো অগ্রগতি হয়েছে? জিওনেরা আমাদের জানাল, যুদ্ধ চলছে। তবে, ত্রিক্ষণদর্শীরা খুবই শক্তিশালী। তাদের পরাস্ত করা সহজ নয়।
একদিন, জিওনের প্রধান বিজ্ঞানী আমাদের কাছে এলেন। তিনি জানালেন, তিনি পৃথিবীতে ফেরত যাওয়ার একটা উপায় খুঁজে পেয়েছেন। তবে, সেটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একটি ওয়ার্ম-হোল খুঁজে পাওয়া গেছে, যা সরাসরি পৃথিবীতে যেতে পারে। কিন্তু, এই ওয়ার্ম-হোল টি খুবই অস্তির। এটি যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সোম এবং আমার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে গেল। জিওনে আমাদের নতুন জীবন, নতুন পরিচিতি। কিন্তু, পৃথিবী আমাদের নিজের গ্রহ, আমাদের আত্মীয়স্বজন সেখানে। অনেক চিন্তার পর, আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়ালাম পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার।
জিওন ছেড়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন হলেও, পৃথিবীর টান আমাদের আর সহ্য করা যাচ্ছিল না। আমরা জানতাম, পৃথিবীতে ফিরে আমরা হয়তো আর আমাদের পরিচিত জগতটা পাব না। কিন্তু, সেখানে গিয়ে লড়াই করার, আমাদের গৃহকে উদ্ধার করার একটা তীব্র ইচ্ছে জাগে আমাদের মধ্যে।
জিওনের প্রধান বিজ্ঞানীরা আমাদেরকে এক বিশেষ ক্ষুদ্র মহাকাশযান দিলেন। সেই যানটি ওয়ার্ম-হোল’টি পার হয়ে পৃথিবীতে যেতে সক্ষম। বিদায়ের সময় জিওনের মানুষেরা আমাদেরকে আলিঙ্গন করল। তাদের চোখে ছিল বিষণ্নতা, কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্তকে তারা সম্মান জানাল।
যাত্রা শুরু হল। ছোট্ট মহাকাশযানটি মহাকাশের অসীম বিস্তৃতিতে ছেঁকে গেল একটা ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো। চারপাশে শুধু নক্ষত্রের ঝিলমিলানি। কিন্তু, আমাদের মন ছিল অস্থির। ওয়ার্ম-হোল’টির কথা ভাবতেই গা শিউরে উঠছিল।
কয়েক ঘণ্টা পর, জিওনের বিজ্ঞানীরা আমাদের জানালো ওয়ার্ম-হোল’টির কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। একটা বিশাল, কালো গর্তের মতো জিনিস দেখা গেল সামনে। তার মধ্যেই ক্ষীণ আলোর একটা সূক্ষ্ম রেখা। সেটাই ওয়ার্ম-হোল।
“যাত্রা শুরু করছি,” জিওনের বিজ্ঞানীদের কণ্ঠ শোনা গেল। আমরা দু’জনেই হাত ধরে বসে রইলাম। চোখ বন্ধ করে মনে মনে শুভেচ্ছা করলাম। যাত্রাটা মসৃণ ছিল না। যানটা কখনো বামে, কখনো ডানে দুলছিল। মনে হচ্ছিল, যে কোনো সময়ই ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু, আমরা সাহস হারালাম না। পৃথিবীর কথা ভাবতেই আমাদের শক্তি ফিরে আসত।
একটা অনন্তকালের মতো সময়কাল পার হল। হঠাৎ, চারপাশটা আলোয় ছেয়ে গেল। চোখ খুলে দেখি, আমরা একটা নীল গ্রহের কাছে। পৃথিবী! আমরা ফিরে এসেছি!
কিন্তু, খুশি হওয়ার আগেই মনটা ভারী হয়ে গেল। পৃথিবীটা আর আগের মতো নয়। ধ্বংসস্তুপে পরিণত শহর, ধুমোয় ঢাকা আকাশ। ত্রিক্ষণদর্শীদের আক্রমণের চিহ্ন স্পষ্ট। আমাদের হৃদয় কেঁপে উঠল। জিওনেরা ঠিকই বলেছিল, যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - ভাঙা মন, নতুন দিগন্ত : এই রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্পটি ১৯৩০-এর দশকের কলকাতায় এক চিত্রশিল্পী ও সাংবাদিকের প্রেম, প্রতারণা, এবং সমাজের দ্বন্দ্ব নিয়ে। স্নিগ্ধা ও অনিরুদ্ধের জীবনের সংকট ও পরিবর্তনের এক হৃদয়স্পর্শী কাহিনী। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
যানটা চালু করে আমরা নেমে এলাম পৃথিবীতে। আমাদের জানা পৃথিবীটা আর নেই, কিন্তু আশা এখনো মৃত হয়নি। আমরা জানতাম, জিওনের প্রযুক্তি এবং আমাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে ত্রিক্ষণদর্শীদের মোকাবিলা করা সম্ভব। পৃথিবীকে উদ্ধার করার লড়াই এখনো শেষ হয়নি।
জ্বালাপরা মরুভূমিতে পা রাখতেই ঝলসানো লেগেছিল। পৃথিবী, আমাদের স্বপ্নের আকাশ, এখন অন্য জগতের মতো মনে হচ্ছিল। ধ্বংসাবশেষের পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম। পথে কিছু মানুষের দেখা পেলাম। তারা ক্ষীণদেহী, চোখে হতাশার ছায়া। তাদের কাছ থেকে জানালাম, ত্রিক্ষণদর্শীরা পৃথিবীর বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নিয়েছে। মানুষেরা এখন ছোট ছোট গোষ্ঠীতে লুকিয়ে থাকছে।
এই খবরে আমাদের মন আরও কষ্টে ভরে উঠল। তবে, হাল ছেড়ে দেওয়ার সময় ছিল না। আমরা জিওনের প্রধান বিজ্ઞানীদের দেওয়া যোগাযোগ ডিভাইসটি চালু করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই জিওনের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হল। আমরা তাদের পৃথিবীর পরিস্থিতি জানালাম। তারা আমাদের জানাল, তারাও ত্রিক্ষণদর্শীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কিন্তু, তাদের প্রযুক্তি এখনো ততটা উন্নত নয়।
এই পরিস্থিতিতে আমাদের দুই গ্রহের প্রযুক্তি একত্রিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। জিওনেরা আমাদের পৃথিবীর বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করল। বিভিন্ন গোপন আশ্রয়স্থলে থাকা বিজ্ঞানীরা একত্রিত হলেন। সবার মিলিত প্রচেষ্টায় ত্রিক্ষণদর্শীদের অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো প্রতিষেধক তৈরি করা হল।
এরপর শুরু হলো মূল লড়াই। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করা হল। আমরা জিওনের প্রযুক্তি দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিলাম। ত্রিক্ষণদর্শীদের বিরুদ্ধে গরিলা যুদ্ধের কৌশল চালানো হল। ধীরে ধীরে পৃথিবী জুড়ে ত্রিক্ষণদর্শীদের আধিপত্য কমতে শুরু করল।
এই যুদ্ধে আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে কাজে লাগল। আমরা ত্রিক্ষণদর্শীদের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে সাহায্য করলাম। অনেক লড়াই, অনেক ত্যাগের পর, অবশেষে একদিন পৃথিবীকে মুক্ত করতে সক্ষম হলো মানবজাতি।
যুদ্ধের পর পৃথিবীকে গড়ে তোলার কাজে জুড়ে পড়ল সবাই। জিওনের প্রযুক্তির সাহায্যে ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে দাঁড়াল শহরগুলি। পুনরায় সবুজ হয়ে উঠল মাঠ, ফিরে এল মানুষের হাসি।
আমরা, অবন্তী ও সোম, পৃথিবীতেই থেকে গেলাম। জিওনের সাথে আমাদের যোগাযোগ বজায় রইল। দুই গ্রহের মধ্যে একটা অসম্ভব বন্ধন গড়ে উঠল। মাঝে মাঝে জিওন থেকে এসে আমাদের সাথে দেখা করতো তাদের প্রতিনিধিরা। আমরাও জিওনে যাওয়ার সুযোগ পেতাম।
একদিন, জিওন থেকে একটা আহ্বান এলো। ত্রিক্ষণদর্শীদের আরেকটা দল অন্য এক গ্রহে আক্রমণ চালিয়েছে। জিওন একাই তাদের মোকাবিলা করতে পারছে না। আমাদের সাহায্য দরকার।
পৃথিবী এখন অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। তাই, আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়ালে জিওনের পাশে দাঁড়াব। আমাদের সাথে অন্য দেশের বিজ্ঞানীরাও যোগ দিলেন।
আমরা আবার মহাকাশযাত্রায় বেরিয়ে পড়লাম। এবারের গন্তব্য, অন্য একটা গ্রহ।
যাত্রাপথটা দীর্ঘ ছিল। কিন্তু, এবার আমাদের মনে ভয় ছিল না। আমরা জানতাম, আমরা একা নেই। আমাদের সাথে আছে পৃথিবী এবং জিওন, দুই মিলিত শক্তি।
গন্তব্য গ্রহে পৌঁছনোর পর, আমরা দেখতে পেলাম, সেখানকার অবস্থাও পৃথিবীর মতোই। ত্রিক্ষণদর্শীরা সেখানেও তাণ্ডব চালাচ্ছে।
কিন্তু, এবার আমরা প্রস্তুত ছিলাম। আমাদের কাছে ছিল জিওনের উন্নত প্রযুক্তি এবং পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের অভিজ্ঞতা। আমরা একযোগে ত্রিক্ষণদর্শীদের আক্রমণ প্রতিহত করলাম।
লড়াইটা কঠিন ছিল। তবে, ঐক্যবদ্ধতায় আমরা জিতলাম। ত্রিক্ষণদর্শীরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করল।
এই জয় মহাকাশের ইতিহাসে একটা মোড় হয়ে রইল। এই জয় জানাল, মিলিত হলে যে কোনো শত্রুকেই পরাস্ত করা সম্ভব।
আমরা, অবন্তী ও সোম, হয়তো শুরু করেছিলাম একটা রোম্যান্টিক হনিমুনের স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু, পরিস্থিতি আমাদেরকে নিয়ে গেল এক অবিশ্বাস্য যাত্রায়। এই যাত্রায় আমরা হারিয়েছিলাম নিজের গ্রহকে, খুঁজে পেয়েছি নতুন বন্ধু, নতুন পরিচয়। শেষে দাঁড়িয়েছি মহাকাশের শান্তির রক্ষাকর্তা হিসেবে। আমাদের অসমাপ্ত যাত্রা এখন সম্পূর্ণ, কিন্তু মহাকাশের রহস্যের অন্বেষণ চলবেই।