এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রহস্য হল মানুষের মন। তার গভীরে লুকিয়ে থাকে এমন কিছু অন্ধকার, যা নিজেই জানে না। আমি এই গল্পে ঠিক তেমনই এক অন্ধকারের কথা বলব।
কলকাতার এক অন্ধকার রাত। বৃষ্টির পিটপিটে আওয়াজ শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজা বাজারের কাছেই একটি পুরনো বাড়ি। বাড়িটির নাম ‘অন্ধকারঘর’। কেউ জানে না কেন এমন নাম। শুধু জানা যায়, এখানে আসা মানুষ আর ফিরে যায় না।
আয়েশা। একজন যুবতী। তার জীবন যেন এক অন্ধকার সুড়ঙ্গ। পাঁচ বছর আগে তার বোন, রুপা, নিখোঁজ হয়ে যায়। সেই থেকে আয়েশার জীবন যেন থেমে গিয়েছে। কিন্তু আজ, কোনো এক অজানা কারণে সে ‘অন্ধকারঘর’-এর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।
বাড়িটির ভেতর প্রবেশ করতেই তার মনে এক অদ্ভুত শান্তি। কিন্তু সেই শান্তি ক্ষণস্থায়ী। বাড়ির ভেতরের পরিবেশ তাকে আঁতকে ওঠায়। প্রতিটি কক্ষের দেওয়ালে রক্তের দাগ। মাঝখানে একটি বড় টেবিল, তার উপর রাখা একটি ডায়েরি। ডায়েরিটি খুলে দেখতেই আয়েশার শরীর কাঁপতে শুরু করে। সেখানে তার বোনের ছবি, আর তার সাথে কিছু অদ্ভুত লেখা।
লেখাগুলো পড়তে পড়তে আয়েশার মনে হয়, সে যেন সময় সুড়ঙ্গে পড়ে গেছে। সে দেখতে পায় তার বোনের ভয়, তার যন্ত্রণা। আর সেই সাথে দেখতে পায় একজন রহস্যময় ব্যক্তিকে, যাকে ডায়েরিতে ‘অন্ধকার মানুষ’ বলা হয়েছে।
আয়েশা ধীরে ধীরে জানতে পারে, তার বোনকে এই বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে তার উপর নানা ধরনের অত্যাচার করা হতো। আর সেই অত্যাচারের পেছনে ছিল ‘অন্ধকার মানুষ’।
কিন্তু কে এই ‘অন্ধকার মানুষ’? সে কোথা থেকে এল? আর কেন তার বোনকেই লক্ষ্য করেছিল? প্রশ্নের পর প্রশ্ন আয়েশার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এই রহস্যের জট খুলতে গিয়ে আয়েশাকে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়। সে জানতে পারে, তার নিজের জীবনও এই রহস্যের সাথে জড়িয়ে আছে।
আর তখনই শুরু হয় আসল খেলা…
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - সপ্তম পত্র: দূরত্বের ভালোবাসা, স্বপ্নের সংগ্রাম, এবং জীবনের বাস্তবতার মধ্যে আটকে পড়া দুটি মন। এই রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্পে আবেগের ছোঁয়া, স্মৃতির সুর, এবং অনিশ্চয়তার মিশেল। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
আয়েশার জীবন এখন একটা ধাঁধলার মতো। প্রতিটি টুকরো জোড়াতে গেলেই নতুন একটা টুকরো উধাও হয়ে যায়। ‘অন্ধকার মানুষ’ কে? সে কেন এত বড় একটা জাল বুনেছিল? প্রশ্নগুলো তার মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রভাতের কুয়াশার মতো।
ডায়েরির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে আয়েশা একটা তারিখ খুঁজে পায় – পাঁচ বছর আগের আজকের দিন। সেদিন রুপা নিখোঁজ হয়েছিল। ডায়েরিতে লেখা, ‘আজ রাতেই সব শেষ হবে।’ এর পরের পাতা ফাঁকা। যেন কেউ ইচ্ছে করেই পাতাটি ছিঁড়ে নিয়েছে।
একটা অদ্ভুত স্বস্তি আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে। যেন সে কিছু জানতে পেরেছে। কিন্তু সেই স্বস্তি ক্ষণস্থায়ী। ডায়েরির শেষ পাতায় একটি নাম লেখা – অর্ণব সেন। নামটি দেখেই আয়েশার শরীর কাঁপতে শুরু করে। সে এই নাম শুনেছে। অনেক বছর আগে।
অর্ণব সেন। একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী। কলকাতার এক নামী পরিবারের সন্তান। কিন্তু তার সম্পর্কে গুজব রয়েছে অনেক। কেউ কেউ বলে, সে একজন অন্ধকার ব্যবসায়ী। কেউ কেউ আবার বলে, তার জীবনে একটা বড় রহস্য লুকিয়ে আছে।
আয়েশা বুঝতে পারছে, সে এবার এক বিপজ্নক পথে পা বাড়িয়েছে। অর্ণব সেনের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু কিভাবে? সে কি সাহস পাবে এই বিপজ্জনক পথে এগিয়ে যেতে?
এদিকে, ‘অন্ধকারঘর’-এর ভেতর কিছু অদ্ভুত ঘটতে শুরু করেছে। রাতের অন্ধকারে বাড়িটি যেন নিজেই প্রাণ পেয়ে উঠছে। আয়েশা একা একা ভয়ে কাঁপছে। তার মনে হয়, সে এখানে একা নয়। কেউ তাকে দেখছে, তার প্রতিটি কাজ লক্ষ্য করছে।
আয়েশার শরীর কাঁপছে ভয়ে। ‘অন্ধকারঘর’-এর প্রতিটি কোণে যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। তার নিঃশ্বাস তাল মিলিয়ে উঠছে বাড়ির পুরনো কাঠের গর্জনের সাথে। ঘড়ির টিকটিক শব্দ যেন মৃত্যুর ডাক।
হঠাৎই একটা আওয়াজ। দরজার কলক। আয়েশার হৃৎপিণ্ড যেন বুক থেকে বেরিয়ে আসবে। ধীরে ধীরে দরজা খুলতে শুরু করে। অন্ধকারের মধ্যে দুটি চোখ জ্বলে উঠল। আয়েশার শরীর জবরদস্ত একটা ধাক্কা খায়।
একজন মানুষ। কিন্তু সেই মানুষের চেহারা এতটাই ভয়াবহ যে আয়েশার চিৎকার বের হয়নি গলা থেকে। মানুষটির চোখ লাল, দাঁত ধারালো, আর শরীর গোটাটা কালো। সে হাসল, একটা ভয়ঙ্কর হাসি।
আয়েশা পিছু হটতে শুরু করে। কিন্তু পিছনেও কোনো পথ নেই। সে আটকে গেছে। মানুষটি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে। আয়েশার মনে মৃত্যুর ছায়া ঘিরে ধরেছে।
হঠাৎই বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্ধকার। পুরো বাড়িতে শুধু বাতাসের শব্দ। আয়েশা চোখ বুঁজে দিল। ভয়ের সাথে সাথে একটা অদ্ভুত শক্তি তার মধ্যে জেগে উঠল। সে জানে, এভাবে মরতে পারে না।
ধীরে ধীরে চোখ খুলে সে আশেপাশ দেখতে শুরু করে। অন্ধকারের মধ্যেও তার চোখ মানিয়ে নিতে শুরু করেছে। সে দেখতে পেল, মানুষটি তার থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়েশা একটা সিদ্ধান্ত নিল। সে লড়বে। তার বোনের প্রতি, নিজের প্রতি। সে এই অন্ধকারকে জয় করবে।
হাত বাড়িয়ে সে কিছু খুঁজতে শুরু করল। তার হাত কিছু ধরল। ধাতুর তীক্ষ্ণ কোনো জিনিস। সে তা শক্ত করে আঁকড়ে ধরল।
বিদ্যুৎ আবার ফিরল। আলোর সাথে সাথে আয়েশা দেখতে পেল, তার হাতে একটি পুরনো ছুরি। সে ছুরিটি শক্ত করে ধরে মানুষটির দিকে এগিয়ে গেল।
এবার তার চোখে ভয় নয়, শুধু একটা দৃঢ়তা। সে লড়বে, মরতে হলেও…
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - অনন্ত পথ: মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প: কীভাবে একজন মেয়ে তার স্বপ্নের আশ্রম গড়ে তুলে সমাজকে বদলে দিল? সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
আয়েশার হাতে ছুরি, চোখে অগ্নি। মানুষটির দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে সে। মানুষটি হাসছে, একটা বিজয়ী হাসি। কিন্তু তার চোখে ভয়ের ছায়া দেখা যাচ্ছে।
দুজনের মধ্যে দূরত্ব কমতে শুরু করেছে। হঠাৎই মানুষটি ছুটল আয়েশার দিকে। আয়েশাও ছুটল। দুজনের সংঘর্ষ। ছুরির আঘাত। মানুষটি চিৎকার করে পড়ে গেল।
আয়েশার শরীর কাঁপছে। সে কি করেছে? একজন মানুষকে জখম করেছে সে। কিন্তু তার মনে কোনো অনুতাপ নেই। শুধু একটা বিশাল ভয়।
মানুষটি ধীরে ধীরে উঠতে শুরু করল। তার হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু তার চোখে আগের ভয় নেই। এবার তার চোখে রাগ।
“তুমি ভুল করেছ মেয়ে,” মানুষটির কণ্ঠে একটা ভয়ঙ্কর শক্তি। “এই রাতের শেষ দেখতে পাবে তুমি।”
মানুষটি আবার ছুটল আয়েশার দিকে। আয়েশা পিছু হটল। কিন্তু পিছনে দেওয়াল। সে আটকে গেল। মানুষটি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
আয়েশার মনে মৃত্যুর ছায়া ঘিরে ধরল। সে চোখ বুঁজে নিল। কিন্তু মৃত্যু আসলো না। শুধু শুনল একটা জোরালো ধাক্কা।
চোখ খুলে দেখতে পেল, একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে মানুষটির উপর। সেই মানুষটির হাতেও একটি ছুরি। দুজনেই লড়াই করতে শুরু করল।
আয়েশা পিছু হটল। তার মাথা ঘুরছে। সে বসে পড়ল। দুজনের লড়াই দেখছে সে। কিন্তু কে এই মানুষ? সে কোথা থেকে এল?
লড়াই শেষ হল। মানুষটি জয়ী হল। সে মানুষটির উপর দাঁড়িয়ে হাসল। তারপর আয়েশার দিকে তাকাল।
“আমি তোমাকে বাঁচিয়েছি,” মানুষটি বলল। “কিন্তু কেন, সেটা পরে বলব। এখন তোমাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যেতে হবে।”
মানুষটির কথা শুনে আয়েশা অবাক হয়ে তাকাল। সে কি স্বপ্ন দেখছে? নাকি সত্যিই কেউ তাকে বাঁচাতে এসেছে?
আয়েশার মন অস্থির। কে এই মানুষ? সে কীভাবে জানল এখানে তার বিপদ? প্রশ্নের পর প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু এখন সেই সময় নয়। মানুষটির কথা মতো সে উঠে দাঁড়াল।
মানুষটির হাত ধরে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে এল। রাতের অন্ধকারে বাড়িটি আরও ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। আয়েশার পা কাঁপছে ভয়ে। কিন্তু মানুষটির পাশে থাকায় একটা নিরাপত্তার অনুভূতিও হচ্ছে।
বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছু দূরে গিয়ে মানুষটি থামল। তার মুখ আড়াল করে রেখেছিল সে। কিন্তু তার আওয়াজে একটা পরিচিত ভাব ছিল।
“তুমি কে?” আয়েশার কণ্ঠ কাঁপছে।
“আমি তোমার বন্ধু,” মানুষটির উত্তর। “আমি জানতাম তুমি বিপদে পড়বে। তাই এলাম।”
“কিন্তু তুমি কে?” আয়েশা আবার জিজ্ঞাসা করল।
মানুষটি হাসল। তার হাসি শুনে আয়েশার মনে কিছু মনে হল। সেই হাসি, সেই কণ্ঠস্বর। সে তাকে চিনতে পারছে।
“তুমি… রাজ?” আয়েশা অবিশ্বাসের সুরে বলল।
মানুষটি হেডলাইট জ্বালিয়ে নিজের মুখ দেখাল। আয়েশার চোখ বিস্ময়ের সাথে ফেটে গেল। সত্যিই সেই রাজ। তার শৈশবের বন্ধু।
“হ্যাঁ, আমিই রাজ,” রাজ হাসল। “আমি জানতাম তুমি একা এই রহস্যের জট খুলতে পারবে না। তাই এলাম তোমাকে সাহায্য করতে।”
আয়েশার মনে আনন্দ, বিস্ময়, আর ভয় একসাথে কাজ করছে। রাজের আগমনে সে নিরাপদ বোধ করছে, কিন্তু এই রহস্য এখন আরও জটিল হয়ে উঠল।
“কিন্তু রাজ, কী হয়েছে তোমার? তুমি কেমন দেখাচ্ছ?” আয়েশা জিজ্ঞাসা করল।
রাজের চেহারায় একটা ছায়া পড়ল। “সে কথা পরে বলব,” রাজ বলল। “এখন আমাদের এই জায়গা থেকে দূরে যেতে হবে।”
আয়েশা মাথা নাড়ল। সে রাজের উপর বিশ্বাস করে। তারা দুজনই অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। এই লড়াইয়ের শেষ কোথায়, তা কেউ জানে না। কিন্তু একটা জিনিস নিশ্চিত, আয়েশা আর একা নয়। তার পাশে রয়েছে তার শৈশবের বন্ধু রাজ।
রাজের গাড়িতে উঠে আয়েশা নিশ্বাস ফেলল। বাড়িটি থেকে দূরে আসতে আসতে তার ভয় কিছুটা কমেছে। কিন্তু মনটা এখনও অস্থির। এত কিছুর পরেও সে এখনও জানে না কী হচ্ছে তার সাথে।
“তুমি কি জানতে পেরেছ কে সে মানুষ?” রাজের কণ্ঠে উৎকণ্ঠা।
আয়েশা মাথা নাড়ল। “না, কোনো ধারণা নেই। শুধু জানি সে খুবই বিপজ্জনক।”
রাজ গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, “আমি ওকে চিনতাম। সে ‘অন্ধকার সংস্থা’র একজন সদস্য।”
‘অন্ধকার সংস্থা’? আয়েশার চোখ কপালে উঠল। সে এই নাম শুনেনি কখনো।
“এটা একটা গোপন সংস্থা,” রাজ ব্যাখ্যা করল। “এরা অনেক কিছু করে। মানুষ ধরি, মারে, অর্থ লোপাট করে। সবকিছু।”
আয়েশার শরীর কাঁপতে শুরু করল। সে ভয় পেয়ে গেল। সে তো এই সংস্থার ফাঁদে পড়ে গিয়েছিল।
“কিন্তু তুমি কীভাবে জানলে আমি বিপদে পড়ব?” আয়েশা জিজ্ঞাসা করল।
রাজের চেহারায় একটা বিষাদ। “আমি তোমাকে ভালোবাসি আয়েশা। তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ আমি লক্ষ্য রাখি। যখন জানলাম তুমি ‘অন্ধকারঘর’-এ যাচ্ছ, আমি বুঝতে পেরেছি বিপদ আছে।”
আয়েশার হৃদয় ধুকপুক করছে। রাজের ভালোবাসা তার জন্য নতুন কিছু নয়। শৈশব থেকেই তারা বন্ধু। কিন্তু এখন এই ভালোবাসা অন্য একটা রূপ নিয়েছে।
“তোমার কি হয়েছে রাজ? তুমি এত পরিবর্তন হয়ে গেছো কেন?” আয়েশা জিজ্ঞাসা করল সাহস করে।
রাজ গাড়ি থামাল। তার চোখে অন্ধকার। “সে কথা পরে বলব আয়েশা। এখন আমাদের এই রহস্যের জট খুলতে হবে। আমাদের ‘অন্ধকার সংস্থা’কে ধরতে হবে।”
আয়েশা মাথা নাড়ল। সে রাজের পাশে থাকবে। তারা একসাথে এই যুদ্ধে জয়ী হবে। কিন্তু তার মনে একটা ভয় কাজ করছে। এই যুদ্ধে তারা বাঁচতে পারবে কি?
রাজের অ্যাপার্টমেন্ট। আয়েশা এখানে প্রথমবার এসেছে। অ্যাপার্টমেন্টটি বেশ বড়, সাজানো গোছানো। কিন্তু এই সুন্দর পরিবেশও আয়েশার মনকে শান্ত করতে পারছে না। তার মন এখনও ‘অন্ধকারঘর’-এর ভয়াবহ পরিবেশে আটকে আছে।
“এখন আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে,” রাজ বলল। “‘অন্ধকার সংস্থা’র সম্পর্কে আমার কিছু তথ্য আছে। সেগুলো শেয়ার করব তোমার সাথে।”
রাজ একটা ল্যাপটপ খুলল। স্ক্রিনে কিছু ছবি ও তথ্য দেখা গেল। আয়েশার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সে যা দেখছে, তা তার কল্পনারও বাইরে।
“এরা অনেক বড়,” রাজ বলল। “শুধু দেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে তাদের নেটওয়ার্ক। তাদের ধরতে হলে আমাদের খুব সতর্ক হতে হবে।”
আয়েশা মাথা নাড়ল। সে বুঝতে পারছে, তারা এক বিশাল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু পিছু হটার কোনো অবস্থা নেই।
“আমাদের প্রথম কাজ হবে, ‘অন্ধকারঘর’-এ ফিরে যাওয়া,” রাজ বলল। “সেখানে হয়তো আরও কিছু তথ্য পাব।”
আয়েশার শরীর কাঁপতে শুরু করল। সে আবার সেই ভয়ঙ্কর বাড়িতে যেতে চায় না। কিন্তু রাজের দৃঢ়তা দেখে সে কিছু বলতে পারল না।
“আমি তোমার সাথে থাকব,” রাজ বুঝল আয়েশার ভয়। “আমি তোমাকে একা ছাড়ব না।”
আয়েশা রাজের দিকে তাকাল। তার চোখে একটা আশার সঞ্চার হল। হ্যাঁ, সে একা নয়। তার পাশে রাজ আছে।
তারা পরিকল্পনা করতে লাগল। কীভাবে বাড়িতে যাবে, কীভাবে নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখবে, সবকিছু নিয়ে আলোচনা হল। আয়েশার মনে ধীরে ধীরে একটা শক্তি জন্ম নিতে শুরু করল। সে ভয় পেলেও, লড়াই করার ইচ্ছে তার মধ্যে জেগে উঠছে।
রাত গভীর হয়ে এল। আয়েশা এখনও ঘুমাতে পারেনি। তার মনে নানা ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে। সে ভয় পাচ্ছে, কিন্তু একই সাথে উত্তেজিতও। তার জীবনে প্রথমবারের মতো সে একটা উদ্দেশ্য পেয়েছে। সে আর শুধু একজন ভীতু মেয়ে নয়। সে একজন যোদ্ধা।
অন্ধকার রাত। কলকাতার রাস্তাগুলো নিস্তব্ধ। রাজের গাড়ি ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। গন্তব্য ‘অন্ধকারঘর’। আয়েশার হৃৎপিণ্ড যেন বুক থেকে বেরিয়ে আসবে। সে জানে, এই রাত তার জীবনের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাত হতে চলেছে।
গাড়ি ‘অন্ধকারঘর’-এর সামনে এসে থামল। বাড়িটি আরও ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে রাতের অন্ধকারে। আয়েশার পা কাঁপছে ভয়ে। কিন্তু রাজের হাত তার হাতে। সেই সামান্য সাহসেই সে গাড়ি থেকে নামল।
বাড়ির দরজা খুব শক্ত। কিন্তু রাজের সাথে থাকায় আয়েশার একটু সাহস এসেছে। তারা দুজনে মিলে দরজা খুলতে সক্ষম হয়।
বাড়ির ভেতর এখনও সেই অন্ধকার। কিন্তু আগেরবারের মতো ভয় নেই আয়েশার মনে। তার হাতে একটি টর্চ। রাজের হাতে একটি পিস্তল। তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে শুরু করল।
প্রতিটি কক্ষ একই রকম ভয়ঙ্কর। রক্তের দাগ, ভাঙাচুর, সব কিছু আগের মতোই। কিন্তু আজকের রাতে আয়েশার নজর অন্য কিছুতে। সে ডায়েরির খোঁজ করছে।
একটি কক্ষে এসে পৌঁছে তার চোখ একটা লোহার তোড়ার উপর পড়ল। সেখানে একটি বাক্স রয়েছে। আয়েশা দ্রুত সেখানে গিয়ে বাক্সটি তুলে নিল।
বাক্সটি খুলতেই তার চোখ বিস্ময়ের সাথে ফেটে গেল। বাক্সের ভেতর একটি ডায়েরি। আরও একটি ডায়েরি। আয়েশার হাত কাঁপতে শুরু করল। এটা কি সম্ভব?
রাজ আয়েশার পাশে এসে দাঁড়াল। তার চোখেও একই বিস্ময়। “দেখি,” সে বলল।
আয়েশা ডায়েরিটি খুলল। প্রথম পাতা থেকেই তার চোখ কপালে উঠল। এই ডায়েরিতে ‘অন্ধকার সংস্থা’ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। কে এই সংস্থার প্রধান, কী কী তাদের কার্যকলাপ, সব কিছু লেখা আছে।
আরও একটা বিস্ময়কর তথ্য পেল আয়েশা। এই ডায়েরির লেখক তার বাবা। হ্যাঁ, তার বাবা এই ‘অন্ধকার সংস্থা’র সাথে জড়িত ছিল। আর তার মায়ের মৃত্যুর পেছনেও এই সংস্থার হাত রয়েছে।
আয়েশার পৃথিবী যেন কাঁপতে শুরু করল। সে এত কিছু জানত না। তার জীবনের সব কিছুই এখন প্রশ্নের সম্মুখীন।
বাংলা ছোট গল্প - সুখের সন্ধান: অর্কের জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তির গল্প, যেখানে একটি প্রাচীন প্রদীপ এবং দৈত্য তাকে শেখায় সত্যিকারের সুখের মানে। পড়ুন এই বাংলা ছোট গল্পে কিভাবে অর্ক ফিরে পায় জীবনের সহজ আনন্দ। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
আয়েশার মন কাঁপছে। সে যা পড়ছে, তা তার জীবনের সব ধারণাকে বদলে দিচ্ছে। তার বাবা, যাকে সে একজন ভালো মানুষ ভাবত, সে একজন অপরাধী। তার মা, যার মৃত্যুতে সে এত বছর কাঁদল, তার মৃত্যুর পেছনেও তার বাবার হাত রয়েছে।
রাজের মুখটাও শক্ত হয়ে গেছে। সেও এই তথ্যে অবাক। কিন্তু তার চোখে একটা দৃঢ়তাও আছে। “আমরা এখন আরও বেশি সতর্ক হতে হবে,” সে বলল। “এই সংস্থা যদি জানতে পারে আমরা তাদের রহস্য জেনে গিয়েছি, তাহলে আমাদের বিপদ।”
আয়েশা মাথা নাড়ল। সে বুঝতে পারছে, এখন থেকে তাদের জীবন আর আগের মতো থাকবে না। তারা দুজনেরই লক্ষ্য একটাই – ‘অন্ধকার সংস্থা’কে ধ্বংস করা।
ডায়েরি পড়তে পড়তে তারা জানতে পারল, সংস্থার প্রধানের নাম অভিষেক সেন। সে একজন রহস্যময় ব্যক্তি, কারো চোখে আসে না।
“আমাদের অভিষেক সেনকে খুঁজে বের করতে হবে,” রাজ বলল। “তার কাছ থেকেই জানতে পারব সবকিছু।”
কিন্তু অভিষেক সেনকে খুঁজে পাওয়া সহজ কাজ নয়। সে একজন ছায়ার মতো। কোথা থেকে আসে, কোথায় যায়, কেউ জানে না।
দিনের পর দিন কেটে গেল। আয়েশা আর রাজ দুজনেই এই রহস্যের জট খুলতে ব্যস্ত। তারা অনেক মানুষের সাথে কথা বলল, অনেক জায়গায় গেল, কিন্তু কোনো ফল পেল না।
একদিন, একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। আয়েশার ফোনে একটি অজানা নাম্বার থেকে ফোন এল। ফোনের ওপার থেকে একটা ভয়েস বলল, “আমি জানি তুমি কে খুঁজছ। আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।”
আয়েশা ভয় পেয়ে গেল। কে এই মানুষ? সে কি ‘অন্ধকার সংস্থা’ থেকে? নাকি সত্যিই সাহায্য করতে চায়?
আয়েশা দ্বিধায় পড়ল। সে ফোন নেবে কি না, সে নিশ্চিত নয়। কিন্তু রাজের পরামর্শ অনুযায়ী সে ফোনটি ধরল।
“আমি কে জানতে চাও?” ফোনের ওপার থেকে আবারও সেই ভয়েস।
“আপনি কে?” আয়েশা সাহস করে জিজ্ঞাসা করল।
“সময় আসলেই আমি নিজেকে পরিচয় দেব,” ভয়েসটি বলল। “এখন শুধু বলছি, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। কিন্তু শর্ত আছে।”
“কী শর্ত?” আয়েশা সতর্ক হয়ে বলল।
“তোমাকে আমার কথা মানতে হবে। কোনো প্রশ্ন করবে না।”
আয়েশা কিছুক্ষণ চিন্তা করল। তারপর বলল, “ঠিক আছে।”
ফোনের ওপার থেকে একটা হাসি শোনা গেল। “ভালো করেছ। আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করব।”
ফোন কেটে গেল। আয়েশা এখনও অবাক। সে কি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে? সে জানে না। কিন্তু একটা আশা তার মনে জন্ম নিয়েছে। হয়তো সে এই রহস্যের জট খুলতে পারবে।
দিন কয়েক পর আবার ফোন এল। ফোনের ওপার থেকে সেই ভয়েস। “সময় হয়েছে,” ভয়েসটি বলল। “আমি তোমাকে দেখতে চাই।”
আয়েশা রাজকে সব বলল। রাজও দ্বিধায় পড়ল। কিন্তু আয়েশার ইচ্ছে দেখে সে রাজি হল।
নির্ধারিত সময় ও স্থানে পৌঁছে আয়েশা দেখতে পেল একজন লোককে। লোকটির চেহারা সাধারণ, কিন্তু তার চোখে একটা অদ্ভুত জোশ।
লোকটি আয়েশার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি অনেক সাহসী। তোমার বাবাও তোমার মতোই ছিল।”
আয়েশা অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকাল। সে কিছু বুঝতে পারছে না।
লোকটি এগিয়ে এসে আয়েশার কানে কিছু বলল। আয়েশার শরীর কাঁপতে শুরু করল। সে যা শুনল, তা তার জীবন বদলে দেবে।
এরপর যা ঘটল, তা কোনো স্বপ্নের মতো। আয়েশা আর রাজ একসাথে ‘অন্ধকার সংস্থা’র বিরুদ্ধে লড়াই করল। তারা অনেক বাধা পেল, অনেক বিপদে পড়ল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা জয়ী হল।
অভিষেক সেনকে ধরা হল। ‘অন্ধকার সংস্থা’ ধ্বংস হল। আয়েশা তার মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পারল। আর রাজের সাথে তার প্রেমও সম্পূর্ণতা পেল।
জীবন নতুন করে শুরু হল আয়েশার জন্য। অন্ধকার কেটে গেল, আলো এল। সে এখন আর ভয় পায় না। তার মধ্যে একজন যোদ্ধা জন্ম নিয়েছে। একজন যোদ্ধা, যার জীবনের লক্ষ্য হবে সত্যের পথে চলা।