রচনা - সুরজিৎ রায় | গল্পপাঠে - সুমনা নাগ
অধ্যায় ১: টুকাইয়ের গাঁয়ের ছেলেটি
ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
টুকাইয়ের বয়স হয়তো সাত কিংবা আট। গায়ে গামছা, পরনে ছেঁড়া হাফপ্যান্ট, কাঁধে একটা পুরোনো কাপড়ের ব্যাগ। টুকাই থাকে নদীর ধারে একটা ছোট্ট গ্রামে, নাম কলারঘাট। চারিদিকে ধানক্ষেত, তাল-নারকেল গাছ, আর মাটির রাস্তা বেয়ে গরুর গাড়ি চলে। গ্রামের সবাই টুকাইকে চেনে – কারণ সে খুবই কৌতূহলী আর একটু দুষ্টু।
সকালে মা পানের জন্য একটাকা দিয়ে বললেন, “দোকানে গিয়ে আমার একটা পান আন তো।” টুকাই হ্যাঁ বলে দৌড় লাগাল। কিন্তু দোকানে গিয়ে তার চোখ পড়ল রঙিন কাঁচের বোতলে রাখা লজেন্সের দিকে। কমলা, লাল, হলুদ—মিষ্টি মিষ্টি ঘ্রাণে মন ভরে যায়। দোকানদার জিজ্ঞেস করল, “কি রে টুকাই, কী লাগবে?”
টুকাই একটু হোঁচট খেয়ে বলল, “লজেন্স দাও… একটা এক টাকার।”
লজেন্স মুখে দিয়ে সে যখন বাড়ি ফিরল, মা দরজায় দাঁড়িয়ে, মুখে হালকা হাসি।
মা জিজ্ঞেস করলেন, “পান কই?”
টুকাই চোখ নামিয়ে মিথ্যে বলল, “টাকা হারিয়ে ফেলেছি মা… ঝড়ের বাতাসে উড়ে গেল।”
মা কিছু বললেন না। কেবল একটুখানি মুচকি হাসলেন, যেন সব বুঝে গিয়েছেন। টুকাই একটু হকচকিয়ে গেল।
বিকেলে সে মাঠে খেলতে গেল। বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়ে, লুকোচুরি খেলে মজা করতে করতে সে অনেক দূরে চলে গেল। তখন হঠাৎ এক কোণায় চোখ পড়ল একটা বড় তালগাছের দিকে, যেটা আগে সে কখনও দেখেনি।
তালগাছটা একটু অদ্ভুত। ডালগুলো যেন মানুষের হাতের মতো, আর গায়ের গঠনও কিছুটা মানবসদৃশ। টুকাই কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেল। হঠাৎ গাছটা বলে উঠল—
“এই টুকাই… তুমি লজেন্স খেয়েছিলে আজ সকালে, তাই না?”
টুকাই চমকে উঠল। “কে? কে বলল?”
গাছটা আবার বলল, “আমি। আমি তালদাদু। আমি কথা বলতে পারি, তবে শুধু সৎ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি।”
টুকাই থতমত খেয়ে গেল। “তুমি জানো আমি মিথ্যে বলেছিলাম?”
তালদাদু গম্ভীর গলায় বললেন, “হ্যাঁ। তুমি মায়ের পানের টাকা দিয়ে লজেন্স কিনলে আর মিথ্যে বললে। এমন করলে আমি তোমার বন্ধু হব না।”
টুকাই চোখ নামিয়ে ফেলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। গাছটা আর কিছু বলল না। বাতাসে পাতাগুলো শুধু মৃদু শব্দ করছিল।
সেদিন রাতে বিছানায় শুয়ে টুকাই ঘুমোতে পারল না। তার মাথায় ঘুরছিল তালদাদুর কথা।
“আমি মিথ্যে বলেছিলাম… মা কিছু বলেনি, শুধু হাসলেন। আর গাছটা—তালদাদু—তিনি রাগ করলেন। সত্যি বলতে কি, আমি তো চাই ওর বন্ধু হতে।”
বালিশে মুখ গুঁজে টুকাই ফিসফিস করে বলল, “আগামীকাল আমি সব সত্যি বলব। দেখা যাক, সত্য বললে কি গাছটা আবার আমার সঙ্গে কথা বলে!”
বসন্ত সিংহ রায় - অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প: বসন্ত সিংহ রায়ের মোটিভেশনাল জীবন গল্প পড়ুন—একজন ব্যাঙ্কার থেকে পর্বতারোহী হওয়ার অসাধারণ যাত্রা। এই বাংলা ছোট গল্প সাহস ও সংকল্পের শিক্ষা দেয়। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ২: তালগাছের পরীক্ষার দিন
ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সকালের রোদ গায়ে মেখে আবার তালগাছটার কাছে হাজির হল টুকাই। হালকা কুয়াশা এখনও বাতাসে। গাছটা যেন আজ আরও উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল, পাতাগুলো হাওয়ায় দুলছে একটা সুরের মতো করে। টুকাই গিয়ে দাঁড়াতেই তালদাদুর গম্ভীর গলা শোনা গেল—
“এসেছো আবার, টুকাই?”
টুকাই বলল, “হ্যাঁ দাদু, তোমার বন্ধু হতে চাই আমি।”
তালদাদু একটু চুপ থেকে বলল, “তবে শোনো, তোমার জন্য একটা পরীক্ষা আছে। যদি এক সপ্তাহ ধরে তুমি কাউকে মিথ্যে না বলো, তবে আমি তোমাকে এক রাজ্যের গোপন গল্প বলব—একটা জাদুর রাজ্যের, যা মানুষ ভুলেই গেছে।”
টুকাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল, “সত্যি বলছো দাদু?”
“সত্যি,” গাছটা মাথা নাড়ল পাতাগুলো দুলিয়ে। “কিন্তু মনে রেখো, একটাও মিথ্যে বলা চলবে না।”
টুকাই অঙ্গুলিতে প্রতিজ্ঞা করার মতো করে বলল, “আমি পারব দাদু, আমি চেষ্টা করব।”
দিনটা শুরু হল অনেক উৎসাহ নিয়ে, কিন্তু সহজ ছিল না মোটেই। স্কুলে গিয়ে হুলোর আর শম্ভুর সঙ্গে খেলার সময় হুলো জিজ্ঞেস করল, “ওই টুকাই, কাল তোকে দোকানের সামনে দেখা গেছিল লজেন্স মুখে! মা বলেছিল তো পান আনতে?”
টুকাইর মুখ লাল হয়ে গেল। স্বভাবমতো সে প্রায় বলে ফেলছিল, “না রে, ওইটা তো অন্য কেউ ছিল।”
কিন্তু মনে পড়ল তালদাদুর কথা। বুক ঠেলে সত্যটা উঠে এল। সে গলা নামিয়ে বলল, “হ্যাঁ রে, টাকা দিয়ে লজেন্স কিনেছিলাম। ভুল করেছিলাম। এখন খুব লজ্জা করে।”
হুলো আর শম্ভু চমকে তাকাল। এমন খোলামেলা স্বীকারোক্তি টুকাইয়ের মুখে আগে শোনা যায়নি। কিন্তু তারা কিছু বলল না, কেবল হাসল।
স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে টুকাই চুপচাপ বসে ছিল। মা এসে জিজ্ঞেস করলেন, “আজ কি হয়েছে, এত চুপ কেন?”
টুকাই মাথা নিচু করে বলল, “মা, একটা কথা বলি?”
“বল বাপু।”
টুকাই কাঁধ ঝুলিয়ে স্বীকার করল, “কাল তোমার পানের টাকা দিয়ে আমি লজেন্স কিনেছিলাম। তারপর তোমায় মিথ্যে বলেছিলাম টাকা হারিয়েছি বলে।”
মা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন, তারপর হালকা করে হেসে বললেন, “আমি জানতাম, বাপ। মায়েরা অনেক কিছু বুঝে ফেলে। কিন্তু আজ তুমি যা করলে, সেটাই সবচেয়ে বড় কাজ। ধন্যি ছেলে আমার!”
টুকাই অবাক হয়ে তাকাল। মায়ের মুখে গর্বের ছাপ! বুকের মধ্যে গরম গরম একটা আনন্দের ঢেউ ছুটে গেল।
সেদিন রাতে সে ঘুমিয়ে পড়ার পর স্বপ্নে আবার তালদাদু এলেন। হেসে বললেন,
“তুমি পথেই আছো, টুকাই! পথটা কঠিন, কিন্তু তুমি পেরোবে। আর তারপরই খুলে যাবে সেই জাদুর রাজ্যের দরজা।”
টুকাই স্বপ্নে তাকিয়ে দেখল, চারদিকে ঝলমলে আলো, উড়ছে রঙিন পাখি, গাছেরা হাসছে, আর একটা দূরের শহর—যেটা আকাশে ভাসছে!
ঘুম ভেঙে যায়, কিন্তু মনটা আলোকিত। সত্য বললেই যেন দুনিয়াটা বদলে যায়—এই অনুভূতি নিয়ে টুকাই আবার নতুন দিনের জন্য তৈরি হয়ে ওঠে।
অধ্যায় ৩: বন্ধুত্বের বীজ
ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
টুকাইয়ের সত্য বলার শপথের তিনদিন কেটে গেছে। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা—সব সময় সে নিজেকে মনে করিয়ে দেয়, “মিথ্যে নয়, সত্য—এটাই আমার শক্তি হবে।”
তবে শুধু সত্য বললেই তো হয় না, মনটাও বদলাতে হয়। সেই বদলের এক নতুন শুরু হয়েছিল সেদিন সকালে।
রবিবার ছিল। স্কুল ছুটি। টুকাই তার দাদার সাইকেল নিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছিল। তখনই দেখতে পেল রাস্তার ধারে বুড়ি ঠাকুমা—গাঁয়ের এক বৃদ্ধা, যিনি চোখে ভালো দেখতে পান না, কাঁপা পায়ে রাস্তা পার হতে চাইছেন। চারদিক ফাঁকা, কিন্তু পথটা পাথুরে আর খাড়াই।
টুকাই সাইকেল থামিয়ে এগিয়ে গেল। “ঠাকুমা, আমি আপনাকে রাস্তা পার করে দিই?”
বৃদ্ধা একটু চমকে গিয়ে বললেন, “কে গো তুই?”
“আমি টুকাই,” বলে হাত ধরে তাকে ধীরে ধীরে রাস্তা পার করিয়ে দিল সে। বৃদ্ধা চোখে জল নিয়ে বললেন, “ভগবান তোমার মঙ্গল করুক, বাছা।”
টুকাই মাথা নিচু করে হেসে ফেলল, “আমি চলে যাই ঠাকুমা। আপনি সাবধানে থাকবেন।”
সে এই ঘটনাটা কাউকেই বলল না। কিন্তু তালদাদু তো জানতেন!
বিকেলে তালগাছটার নিচে বসতেই গাছটা পাতায় পাতায় সুর তুলে বলল,
“সত্য আর দয়া—এই দুইয়ে সত্যিকারের বন্ধু জন্মায়।”
টুকাই চমকে তাকাল। সে কিছু বলেনি, তবুও গাছটা জানে? তার মুখে একটুকরো অবাক হাসি খেলে গেল। মনে হল, তালগাছটা শুধু কথা নয়—মনও পড়তে পারে।
সন্ধ্যায় সে মাঠে গিয়েছিল খেলতে। ফুটবল চলছিল। হঠাৎ একটা ধাক্কায় ছোট্ট রাহুল পড়ে গেল। অন্য বাচ্চারা হেসে উঠল। কিন্তু টুকাই ছুটে গিয়ে রাহুলকে হাত ধরে তুলল।
“ব্যাথা পেয়েছিস?”
রাহুল মাথা নেড়ে কান্না চেপে রাখে। টুকাই ব্যাগ থেকে ছোট জলের বোতল বের করে বলল, “এটা খা, একটু ভালো লাগবে।”
রাহুল এক চুমুকে জল খেয়ে মৃদু হাসল। ওর মুখে সেই হাসি দেখে টুকাইর বুকটা কেমন হালকা হয়ে গেল। এমন একটা শান্তি যেন বইছে মনে, যা আগে কখনও টের পায়নি।
রাতের আকাশে শুয়ে শুয়ে সে তাকিয়ে থাকে। চাঁদের পাশে অনেকগুলো তারা।
তার মনে প্রশ্ন জাগে—
“তালদাদু কি সত্যিই জাদু জানে? নাকি আমি নিজেই বদলে যাচ্ছি?”
গাছটা কিছু বলে না, কিন্তু বাতাসে পাতাগুলোর ঝিরঝির শব্দে যেন এক গোপন উত্তর খেলে যায়—
“জাদু তো তোর মনেই ছিল, টুকাই। আমি শুধু সেটা জাগিয়ে তুলেছি।”
সেই রাতে টুকাই স্বপ্ন দেখল—এক বিশাল বাগান, যেখানকার প্রতিটা গাছে মানুষের মতো মুখ। তারা টুকাইকে দেখে বলে, “তুমি বীজ বুনেছো বন্ধুত্বের, খুব তাড়াতাড়ি তার ফল পাবে।”
টুকাই ঘুমের মধ্যে হেসে ফেলল। তার যাত্রা শুরু হয়েছে, আর সে জানে, এ যাত্রা শুধু তালগাছের গল্প জানার নয়—নিজেকে জানারও।
ধোঁয়াশা - সত্য ঘটনা: নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর গায়েব হওয়া ঘিরে রহস্য! তিনি কি আজও বেঁচে? ফিরে আসবেন? পড়ুন সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা বাংলা ছোট গল্প "ধোঁয়াশা"—এক গভীর প্রশ্নের উত্তরে যাত্রা। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ৪: গাছের রাজ্যের দরজা খোলে
ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। টুকাই একটাও মিথ্যে বলেনি। সে শুধু সত্য বলেই থেমে থাকেনি, বরং মানুষকে সাহায্য করতেও শিখেছে। তার মধ্যে যেন এক নতুন আলো জ্বলে উঠেছে—যেটা তালদাদুও লক্ষ্য করেছেন।
সকালবেলা, হালকা রোদে তালগাছের ছায়া পড়েছে মাঠের ওপরে। টুকাই চুপচাপ গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ গাছটা পাতায় পাতায় বাজনার মতো শব্দ তুলল। তারপর গম্ভীর গলায় বলল,
“টুকাই, তুমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছো। এখন আমি তোমাকে আমার জাদুর রাজ্যে নিয়ে যাব।”
টুকাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এমন কিছু সে কল্পনাও করেনি।
এই কথা বলার সাথে সাথেই গাছের গায়ে হঠাৎ করে একটা দরজা তৈরি হল—পুরোনো কাঠের তৈরি, কিন্তু তার গায়ে সোনালি ফুলের আঁকাবাঁকা নকশা। তালদাদু পাতাগুলি ফিসফিস করে বললেন, “ভয় পেও না। এগিয়ে এসো।”
টুকাই একটু থমকে গেলেও, সাহস করে দরজাটা ঠেলে দিল।
দরজা খুলতেই চোখ ধাঁধানো এক আলো! সে যেন ঢুকে পড়ল এক সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতে।
ভিতরে সে যা দেখল, তাতে তার মুখ হাঁ হয়ে গেল। চারদিকে বড় বড় গাছ—সবাই কথা বলছে, হাসছে, গল্প করছে। কেউ ইংরেজিতে, কেউ বাংলায়, কেউ গানে, কেউ কবিতায়। গাছে গাছে দুলছে রঙিন দোলনা, আর গাছের ডালে বসে রঙচঙে পাখিরা গান গাইছে—“সত্যের গান, মমতার সুর।”
একটা চকচকে সোনালি নদী বয়ে চলেছে মাঝখান দিয়ে। জলের মধ্যে তারার মতো আলো ঝিকিমিকি করছে।
আর সবচেয়ে বড় বিস্ময়—এই রাজ্যে মানুষও আছে, কিন্তু সবাই বাচ্চা। কেউ বই পড়ছে, কেউ গাছের পাতায় চিঠি লিখছে, কেউ একজনকে জলের কলসি তুলে দিতে সাহায্য করছে। সবাই এত হাসিখুশি যে টুকাইয়ের চোখ ভরে যায় আনন্দে।
তালগাছ বলল,
“এই রাজ্যের নাম সত্যলোক। এখানে তারাই আসে, যারা অন্যদের সাহায্য করে, আর মিথ্যে বলে না।”
টুকাই প্রশ্ন করল, “আমি তাহলে এখন এই রাজ্যের একজন?”
তালগাছ মাথা নাড়ল, “তুমি এখন আমাদের একজন। কিন্তু এখানেই থেকে গেলে চলবে না। তুমি যা শিখেছো, সেটা তোমার গ্রামে ফিরে গিয়ে অন্যদেরও শেখাতে হবে। সত্যের বীজ যত ছড়াবে, এই রাজ্য তত বড় হবে।”
টুকাই বুঝতে পারল—এ শুধু এক জাদুর জগৎ নয়, এটা বিশ্বাস আর ভালোবাসার এক পৃথিবী।
কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে, সে গাছের দরজা দিয়ে আবার নিজের গ্রামে ফিরে আসে। কিন্তু মন যেন রয়ে যায় সেই রাজ্যে।
তার মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। সে জানে, এখন তার একটা দায়িত্ব আছে। সত্য, দয়া, আর বন্ধুত্বের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া।
গাছটা পাতায় পাতায় বলল,
“এখন তুই একজন সত্যযোদ্ধা, টুকাই। সামনে আরও পথ আছে।”
কল্পবিজ্ঞান-এর বাংলা ছোট গল্প - অনন্তের সন্ধানে: কল্পবিজ্ঞান গল্প 'অনন্তের সন্ধানে' - অরিত্রর নতুন মহাবিশ্বে যাত্রা। বাংলা ছোট গল্পে রহস্য, ত্যাগ ও সম্ভাবনার এক অনন্য মিশ্রণ। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অধ্যায় ৫: টুকাইয়ের নতুন যাত্রা
ছোটদের রূপকথার বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
টুকাই ফিরে এসেছে। সত্যলোকের জাদু আর তালগাছের শিক্ষা তার মনে গভীরভাবে গেঁথে গেছে। সে জানে, তার জীবনে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা শুধু তার জন্য নয়, বরং তার চারপাশের সকল মানুষের জন্যই। এই নতুন জীবন শুরু করতে তার হৃদয়ে এক নতুন উচ্ছ্বাস ছিল।
প্রথম দিন থেকেই সে তার শিক্ষাগুলো প্রয়োগ করতে শুরু করে। গ্রামে তার বন্ধুরা, যারা সবসময় মজা করে তাকে পীড়িত করত, তারা টুকাইয়ের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পেয়েছিল। একদিন মাঠে খেলতে গিয়ে, টুকাই তার বন্ধু সোহমকে বলল, “তুমি জানো, একদিন আমি একটা গাছের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছি, যে কথা বলে।” সোহম অবাক হয়ে বলল, “কি? কথা বলা গাছ! তুমি ঠিক আছো তো?”
টুকাই হাসল এবং বলল, “হ্যাঁ, সেটা সম্ভব—যখন তুমি সত্য বলো এবং অন্যদের সাহায্য করো, তখন সবকিছুই সম্ভব।”
কিন্তু সোহম বা অন্যরা তো বিশ্বাস করতে পারেনি। তারা ভেবেছিল, টুকাই হয়তো কোনো কল্পনা করছে। তবুও, টুকাই কিছু বলল না। সে জানত, গাছের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সত্যিকারের শক্তি এইভাবে বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। এটা শুধু তাদের নিজের উপলব্ধি।
সেই দিন, টুকাই যখন বাড়ি ফিরল, তার মা রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিলেন। টুকাই মাকে এসে বলল, “আজ আমি কাউকে দুঃখ দিইনি।”
মা মুচকি হেসে বললেন, “তুমি সত্যিই বড় হচ্ছো, টুকাই। এমনটাই তো চাই—যতদিন সত্য আর দয়া নিয়ে চলবে, ততদিন এই পৃথিবীও সুন্দর হবে।”
সে রাতের আকাশের নিচে, টুকাই ঘুমোতে যাবার আগে মায়ের মুখে একটা চুমু দিল। এই মুহূর্তে, তাকে মনে হচ্ছিল যে তার জীবনে একটা নতুন সূচনা হচ্ছে। এমন সূচনা যা সত্যিই অবিশ্বাস্য, কিন্তু গভীরে মিশে থাকা কিছু শক্তি দিয়ে সে তা উপলব্ধি করতে শিখেছে।
তাদের বাড়ির পাশে মাঠে, তালগাছের পাতাগুলি ঝিরঝির করে বাতাসে দুলছিল। সেও যেন গান গাইছিল, এক নীরব সুর, যা শুধু সত্য আর ভালোবাসার ভাষায় অনুবাদ করা যায়। টুকাই জানত, যে শিক্ষা সে পেয়েছে, তা তার জীবনের অন্যতম বড় উপহার।
এখন টুকাই যে কোনো পরিস্থিতিতেই সত্য বলবে, কাউকে কষ্ট দেবে না, অন্যদের সাহায্য করবে—এটাই তার নতুন যাত্রা। এই যাত্রা শুধু নিজের জন্য নয়, বরং পৃথিবীটাকে একটু ভালো করার জন্য। সে জানত, একদিন তার এই গল্প অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে, এবং সত্য আর দয়ার মাধ্যমে পৃথিবীটা বদলে যাবে।
এই ছিল টুকাইয়ের নতুন জীবন—সত্যের পথের যাত্রা।