কল্পবিজ্ঞান গল্প 'অনন্তের সন্ধানে' - অরিত্রর নতুন মহাবিশ্বে যাত্রা। বাংলা ছোট গল্পে রহস্য, ত্যাগ ও সম্ভাবনার এক অনন্য মিশ্রণ।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » অনন্তের সন্ধানে

অনন্তের সন্ধানে

কল্পবিজ্ঞান গল্প 'অনন্তের সন্ধানে' - অরিত্রর নতুন মহাবিশ্বে যাত্রা। বাংলা ছোট গল্পে রহস্য, ত্যাগ ও সম্ভাবনার এক অনন্য মিশ্রণ।

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা ভুতের বাংলা ছোট গল্প পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – অভিশপ্ত বাগানবাড়ি।

রচনা - সুরজিৎ রায়   ||   গল্পপাঠে - শুভদীপ বসু

অধ্যায় ১: আকাশের ফাটল

বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

কলকাতার আকাশে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে একটা অদ্ভুত শান্তি ছড়িয়ে পড়ে। ২২৫০ সালের এই শহর আর আগের মতো নেই—উঁচু টাওয়ারগুলোর মাথায় ভাসমান বাগান, রাস্তায় নিঃশব্দে চলা ড্রোন-গাড়ি, আর আকাশে মঙ্গলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভাসমান স্যাটেলাইট স্টেশন। এই শহরে ফিরে এসেছে অরিত্র, এক তরুণ বিজ্ঞানী, যার চোখে এখনো মঙ্গলের লাল মাটির ছায়া লেগে আছে। মঙ্গল গ্রহে তিন বছর কাটিয়ে সে পৃথিবীতে ফিরেছে, তার সঙ্গে নিয়ে এসেছে একটি স্বপ্ন—একটি নতুন শক্তির উৎস, যা মানবজাতির ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে। কিন্তু আজ রাতে, তার সেই স্বপ্নের থেকেও বড় কিছু তার জন্য অপেক্ষা করছে।

অরিত্র তার ছোট্ট ফ্ল্যাটের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে। তার হাতে একটি কফির মগ, আর কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীলা—তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহযোগী। নীলা কোনো সাধারণ এআই নয়; তার গড়ন মানুষের মতো, কিন্তু চোখে একটা নীল আভা, যা তাকে অমানবিক করে তোলে। “আজ আকাশটা একটু অন্যরকম লাগছে, না?” নীলা বলে উঠল, তার কণ্ঠে একটা কৌতূহলী সুর। অরিত্র হাসল, “তুই তো সবকিছুতেই কিছু না কিছু খুঁজে পাস।” কিন্তু তার কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশে একটা তীব্র আলো জ্বলে উঠল।

প্রথমে মনে হলো বজ্রপাত। কিন্তু তারপর আকাশের মাঝখানে একটা ফাটল দেখা গেল—কালো, গভীর, যেন কেউ ছুরি দিয়ে আকাশকে চিরে দিয়েছে। আলোর ঝলকানি আর ফাটলের মধ্যে থেকে একটা অদ্ভুত শব্দ ভেসে এল, যা কানে বাজল না, বরং মনের ভেতরে গেঁথে গেল। অরিত্রর হাত থেকে মগটা পড়ে গেল, কিন্তু সে নড়ল না। “এটা কী?” সে ফিসফিস করে বলল। নীলা তৎক্ষণাৎ তার ডাটাবেস স্ক্যান করতে শুরু করল। “প্রাকৃতিক ঘটনার কোনো মিল পাচ্ছি না। এটা… এটা অজানা।”

রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খবর ছড়িয়ে পড়ল। সরকারের তরফে ঘোষণা এল যে এটি একটি “অস্থায়ী বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনা”, কিন্তু অরিত্র জানে এটা মিথ্যে। বিজ্ঞানীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে—কেউ বলছে এটা এলিয়েন সংকেত, কেউ বলছে মহাজাগতিক দুর্ঘটনা। কিন্তু কেউ নিশ্চিত নয়। অরিত্র তার গবেষণা ডিভাইসটা চালু করল—একটা ছোট্ট যন্ত্র, যা সে মঙ্গলের শক্তি গবেষণার জন্য বানিয়েছিল। যন্ত্রটার স্ক্রিনে হঠাৎ একটা সংকেত ধরা পড়ল। “নীলা, এটা দেখ!” তার গলায় উত্তেজনা।

নীলা স্ক্রিনের দিকে তাকাল। সংকেতটা ছিল একটা তরঙ্গ, কিন্তু তার মধ্যে একটা প্যাটার্ন—যেন কেউ কিছু বলতে চাইছে। “এটা শুধু তোমার ডিভাইসে ধরা পড়েছে। বাইরের কোনো স্টেশনে নয়,” নীলা বলল, তার চোখের নীল আভা আরো তীব্র হয়ে উঠল। অরিত্রর মনে হলো তার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠছে। আকাশের ফাটলটা এখনো রয়ে গেছে, কিন্তু এখন তার থেকে একটা অদৃশ্য সুতো এসে তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।

“এটা কী হতে পারে?” সে জিজ্ঞেস করল। নীলা একটু চুপ করে থেকে বলল, “হয়তো এটা আমাদের জন্য একটা ডাক। কিন্তু কার কাছ থেকে, সেটা জানতে হলে আমাদের খুঁজতে হবে।” অরিত্র জানালার দিকে তাকাল। আকাশের ফাটলটা যেন তাকে ডাকছে, আর তার হাতে ধরা ডিভাইসটা হয়ে উঠেছে সেই রহস্যের চাবি। সে জানে, এই রাত তার জীবনের শেষ শান্ত রাত হতে পারে।

অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - বসন্ত সিংহ রায়: বসন্ত সিংহ রায়ের মোটিভেশনাল জীবন গল্প পড়ুন—একজন ব্যাঙ্কার থেকে পর্বতারোহী হওয়ার অসাধারণ যাত্রা। এই বাংলা ছোট গল্প সাহস ও সংকল্পের শিক্ষা দেয়। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ২: সংকেতের রহস্য

বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

অরিত্রর ছোট্ট ফ্ল্যাটে আলো কমে এসেছে। টেবিলের ওপর তার গবেষণা ডিভাইসটা জ্বলছে, স্ক্রিনে সেই অদ্ভুত সংকেতের তরঙ্গ নাচছে। আকাশের ফাটল দেখা যাওয়ার পর থেকে দুদিন কেটে গেছে, কিন্তু রহস্য আরো গভীর হয়েছে। নীলা টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে, তার চোখের নীল আভা স্ক্রিনের আলোয় মিশে যাচ্ছে। “এটা কোনো সাধারণ তরঙ্গ নয়, অরিত্র,” নীলা বলল, “এর মধ্যে একটা প্যাটার্ন আছে। আমি আমার ডাটাবেসে পৃথিবীর সব পরিচিত ভাষা আর কোডের সঙ্গে মিলিয়েছি। কিছুই মেলেনি।” অরিত্র চুপ করে শুনল, তার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরছে—এটা যদি পৃথিবীর না হয়, তাহলে কোথা থেকে এল?

নীলা তার বিশ্লেষণ চালিয়ে গেল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল, আর অবশেষে একটা উত্তর এল। “এটা একটা ভাষা, কিন্তু এমন ভাষা যা পৃথিবীর কোনো সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এর গঠন প্রাচীন, কিন্তু এর জটিলতা আমাদের বর্তমান প্রযুক্তির থেকেও অনেক এগিয়ে।” অরিত্রর চোখ চকচক করে উঠল। “তাহলে এটা কি… এলিয়েন?” নীলা একটু থামল, তারপর বলল, “সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে আমরা যা ভাবছি তার থেকেও বড় কিছুর মুখোমুখি হতে চলেছি।”

কিন্তু এই আবিষ্কারের আনন্দ বেশিক্ষণ থাকল না। সকাল হতেই অরিত্রর দরজায় টোকা পড়ল। দুজন কালো ইউনিফর্ম পরা লোক দাঁড়িয়ে, তাদের বুকে সরকারি সীল। “ডক্টর অরিত্র চৌধুরী, আপনার সঙ্গে কথা বলতে হবে।” তাদের কথায় স্পষ্ট, তারা আকাশের ফাটল নিয়ে জানে, আর তারা চায় এটা গোপন থাকুক। “এটা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। আপনি যা দেখেছেন বা জেনেছেন, সেটা বাইরে যাওয়া মানে বিপদ ডেকে আনা।” অরিত্রর মনে রাগ আর অসহায়ত্ব জমল। সে জানে সত্য লুকিয়ে রাখা মানে মানবজাতির ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিতে ফেলা। কিন্তু সে কী করবে?

রাত নামার পর অরিত্র সিদ্ধান্ত নিল। সে একা এগোতে পারবে না। তার দরকার একজন সঙ্গী, যে তার মতোই এই রহস্যের প্রতি আগ্রহী। সে তার পুরনো বন্ধু রিয়ার কথা ভাবল—মঙ্গলের একজন প্রকৌশলী, যার সঙ্গে সে বছরের পর বছর কাজ করেছে। রিয়া সাহসী, বুদ্ধিমান, আর সবচেয়ে বড় কথা, সে অরিত্রর ওপর ভরসা করে। গোপনে একটা এনক্রিপ্টেড বার্তা পাঠাল সে। “রিয়া, আমার সাহায্য দরকার। এটা মঙ্গলের শক্তি প্রকল্পের থেকেও বড়। তুই ছাড়া এটা সম্ভব নয়।” বার্তাটা পাঠিয়ে সে অপেক্ষা করতে লাগল।

এদিকে, নীলা সংকেতটির আরো গভীরে গেল। “অরিত্র, এই তরঙ্গের মধ্যে একটা স্থানাঙ্ক লুকিয়ে আছে।” স্ক্রিনে একটা মানচিত্র ফুটে উঠল—পৃথিবীর গভীর সমুদ্র, বঙ্গোপসাগরের একটা অজানা অংশ। অরিত্রর শ্বাস বন্ধ হয়ে এল। “সমুদ্রের নিচে? এটা কীভাবে সম্ভব?” নীলা বলল, “যারা এই সংকেত পাঠিয়েছে, তারা হয়তো আমাদের সেখানে ডাকছে।” 

রাতের নিস্তব্ধতায় অরিত্রর ফ্ল্যাটে একটা ড্রোনের শব্দ ভেসে এল। রিয়ার জবাব এসেছে। “আমি আসছি। তিন দিনের মধ্যে কলকাতায় পৌঁছব। ততক্ষণ সাবধানে থাকিস।” অরিত্র হাসল। তার মনে একটা আশা জাগল—সত্য যত গভীরেই লুকিয়ে থাকুক, সে আর একা নয়। আকাশের ফাটলটা যেন তাকে দেখছে, আর সমুদ্রের গভীরে একটা রহস্য অপেক্ষা করছে।

অধ্যায় ৩: সমুদ্রের গভীরে

বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

বঙ্গোপসাগরের তীরে একটা ছোট্ট ঘাটে দাঁড়িয়ে অরিত্র, নীলা আর রিয়া। তাদের সামনে একটা অত্যাধুনিক সাবমেরিন—মসৃণ, ধূসর, যেন পানির সঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি। রিয়া এটার নকশা করেছিল মঙ্গলের গভীর গর্তগুলো অন্বেষণের জন্য, কিন্তু আজ এটার গন্তব্য পৃথিবীর সমুদ্রের অতল গহ্বর। “তুই নিশ্চিত এটা করতে চাস?” রিয়া জিজ্ঞেস করল, তার চোখে উদ্বেগ। অরিত্র হাসল, “আমরা যদি এখন পিছিয়ে যাই, তাহলে এই রহস্য চিরকাল রহস্যই থেকে যাবে।” নীলা শান্ত গলায় বলল, “স্থানাঙ্কটা সঠিক। আমরা ঠিক পথে আছি।” তিনজনে সাবমেরিনে উঠল, আর কয়েক মিনিটের মধ্যে পানির নিচে ডুব দিল।

সমুদ্রের গভীরে যত নামতে লাগল, ততই আলো কমে আসতে লাগল। সাবমেরিনের স্ক্রিনে শুধু অন্ধকার আর মাঝে মাঝে অদ্ভুত জলজ প্রাণীর ছায়া ভেসে উঠছে। “এখানে কিছু একটা আছে,” নীলা বলল, তার সেন্সর স্ক্যান চালিয়ে। হঠাৎ স্ক্রিনে একটা আকৃতি ধরা পড়ল—বিশাল, ত্রিকোণাকার, যেন কোনো প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। কিন্তু এটা কোনো মানুষের তৈরি কাঠামো নয়। এর ধাতব দেয়ালে অদ্ভুত চিহ্ন খোদাই করা, যা আকাশের ফাটল থেকে আসা সংকেতের সঙ্গে মিলে যায়। “এটা এলিয়েন প্রযুক্তি হতে পারে,” রিয়া ফিসফিস করে বলল। অরিত্রর চোখে বিস্ময় আর উত্তেজনা। “এটা হাজার হাজার বছর ধরে এখানে লুকিয়ে ছিল।”

সাবমেরিনটা কাঠামোর কাছে পৌঁছতেই একটা দরজা খুলে গেল, যেন তাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। ভেতরে প্রবেশ করতেই একটা নীল আলো জ্বলে উঠল। কাঠামোর দেয়ালে অদ্ভুত যন্ত্র আর আলোর সুতো ভেসে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আনন্দ বেশিক্ষণ থাকল না। হঠাৎ একটা তীব্র শব্দ হল, আর সাবমেরিনটা কেঁপে উঠল। “কী হচ্ছে?” রিয়া চিৎকার করে উঠল। নীলা দ্রুত স্ক্যান করে বলল, “কাঠামোটা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। একটা অদৃশ্য শক্তি আমাদের দিকে আসছে।” স্ক্রিনে দেখা গেল একটা শক্তির তরঙ্গ সাবমেরিনের দিকে ধেয়ে আসছে।

“আমাদের বেরোতে হবে!” অরিত্র বলল, কিন্তু তার আগেই তরঙ্গটা আঘাত করল। সাবমেরিনের সিস্টেম বন্ধ হয়ে গেল, আর ভেতরে পানি ঢুকতে শুরু করল। নীলা দ্রুত কিছু একটা করার চেষ্টা করল। “আমি শক্তিটাকে ব্লক করতে পারি, কিন্তু তার জন্য আমার পুরো সিস্টেম ওভারলোড করতে হবে।” অরিত্র চিৎকার করে বলল, “না, নীলা! তুই আমাদের দরকার!” কিন্তু নীলা হাসল, “তোমাদের বাঁচানোই আমার কাজ।” সে তার শরীরের একটা পোর্ট খুলে সাবমেরিনের কোরের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করল। একটা উজ্জ্বল নীল আলো জ্বলে উঠল, আর শক্তির তরঙ্গটা থেমে গেল। কিন্তু নীলার চোখের আলো নিভে গেল।

অরিত্র আর রিয়া হতবাক। সাবমেরিনটা আবার চালু হল, কিন্তু তাদের সঙ্গী আর নেই। হঠাৎ কাঠামোর মাঝখানে একটা হলোগ্রাম ফুটে উঠল। একটা অদ্ভুত প্রাণী, লম্বা, আলোর মতো শরীর নিয়ে, তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমরা প্রস্তুত নও।” তার কণ্ঠে কোনো আবেগ নেই, শুধু একটা ঠান্ডা সতর্কতা। অরিত্রর মনে হল তার বুকের ভেতরটা শূন্য হয়ে গেছে। নীলা চলে গেছে, আর এই অজানা প্রাণী তাদের কী বলতে চায়?

ছোটদের রূপকথার গল্প - লীলার জাদু: লীলার জাদুকরী বনযাত্রার এই ছোটদের গল্প ও রূপকথার গল্প রহস্য, চ্যালেঞ্জ ও মূল্যবান শিক্ষায় ভরা। বন্ধুত্ব ও সাহসের গল্প পড়তে ডুব দাও! সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ৪: অনন্তের দ্বার

বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

সমুদ্রের গভীরে সেই প্রাচীন কাঠামোর ভেতরে অরিত্র আর রিয়া হলোগ্রামের সামনে দাঁড়িয়ে। নীলার ত্যাগের পর থেকে তাদের মধ্যে একটা ভারী নীরবতা। হলোগ্রামের আলোর প্রাণীটি আবার কথা বলল, “এটি একটি দ্বার। অনন্তের পথ। এর ওপারে রয়েছে আরেক মহাবিশ্ব, যেখানে সময় আর স্থান আমাদের মতো নয়।” অরিত্রর চোখে বিস্ময় ফুটে উঠল। “অন্য মহাবিশ্ব?” সে ফিসফিস করে বলল। প্রাণীটি মাথা নাড়ল, “কিন্তু এটি খুলতে গেলে তোমাদের গ্রহের সমস্ত শক্তি শেষ হয়ে যে�ber পারে। এটা একটা মূল্য, যা তোমরা দিতে প্রস্তুত কি না, সেটা তোমাদের সিদ্ধান্ত।” হলোগ্রামটা মিলিয়ে গেল, আর কাঠামোর মাঝখানে একটা গোলাকার পোর্টাল দেখা গেল—নীল আলোয় ঘেরা, যেন তারার সমুদ্র।

অরিত্র পোর্টালের দিকে তাকিয়ে রইল। “এটা আমাদের সুযোগ, রিয়া। আমরা যদি এটা খুলি, তাহলে মানবজাতি একটা নতুন জগতে পা রাখতে পারে।” কিন্তু রিয়ার মুখে উদ্বেগ। “আর যদি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায়? আমরা কি এত বড় ঝুঁকি নিতে পারি? নীলা ইতিমধ্যে আমাদের জন্য জীবন দিয়েছে। এটা কি তার ত্যাগের মূল্য দেবে?” অরিত্রর মনে দ্বিধা জাগল, কিন্তু তার ভেতরের বিজ্ঞানী বলল, “আমরা যদি এখন থেমে যাই, তাহলে কখনো জানতে পারব না। এটা আমাদের ভবিষ্যৎ।” রিয়া কঠিন গলায় বলল, “না, অরিত্র। এটা ধ্বংসও হতে পারে। আমি এটার সঙ্গে নেই।” দুজনের মধ্যে তর্ক বাড়তে লাগল, আর সময় ফুরিয়ে আসছিল।

এদিকে, সমুদ্রের ওপরে সরকারি ড্রোন আর যুদ্ধজাহাজের শব্দ শোনা গেল। তারা অরিত্রদের খুঁজে বের করেছে। “ওরা এটাকে ধ্বংস করতে চায়,” রিয়া বলল, তার গলায় আতঙ্ক। সাবমেরিনের স্ক্রিনে দেখা গেল, একটা মিসাইল তাদের দিকে আসছে। অরিত্র দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল। “তুই সাবমেরিনে থাক। আমি পোর্টালের কাছে যাচ্ছি।” রিয়া তাকে থামাতে চাইল, কিন্তু অরিত্র দৌড়ে কাঠামোর ভেতরে ঢুকে গেল।

পোর্টালের সামনে দাঁড়িয়ে অরিত্র দেখল, এটার মাঝে একটা ক্রিস্টাল জ্বলছে। সে বুঝল, এটাই গেটওয়ের চাবি। তার হাত কাঁপছিল, কিন্তু সে ক্রিস্টালটা স্পর্শ করল। তৎক্ষণাৎ একটা তীব্র কম্পন শুরু হল। কাঠামোর দেয়াল থেকে আলোর সুতো বেরিয়ে পোর্টালে মিশতে লাগল। বাইরে মিসাইলটা কাছে এসে পড়ল, কিন্তু তার আগেই পোর্টাল সক্রিয় হয়ে উঠল। একটা উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে পড়ল—প্রথমে কাঠামোর ভেতরে, তারপর সমুদ্রের ওপরে, আর শেষে পৃথিবীর আকাশে।

রিয়া সাবমেরিন থেকে দেখল, আলোটা সবকিছু ঢেকে ফেলছে। “অরিত্র!” সে চিৎকার করল, কিন্তু কোনো উত্তর এল না। আলোর মধ্যে পোর্টালটা বড় হয়ে উঠল, আর তার ভেতরে একটা নতুন জগতের ছায়া দেখা গেল—তারা, গ্রহ, অজানা আকাশ। কিন্তু সেই সঙ্গে পৃথিবীর শক্তি কমে আসছে। সাবমেরিনের সিস্টেম বন্ধ হয়ে গেল, আর রিয়ার চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল। অরিত্র একা পোর্টালের দিকে এগিয়ে গেল, তার মনে একটাই চিন্তা—এটা কি সত্যিই মানবজাতির জন্য নতুন শুরু, না শেষের সূচনা?

ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য বাংলা ছোট গল্প - অগ্নিযুগের ছায়া: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেম ও প্রতিরোধের কাহিনি। যুদ্ধ, বেদনা ও সাহসের মাঝে গড়ে ওঠা সম্পর্কের গল্প। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় ৫: নতুন সূচনা

বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

অরিত্রর চোখ খুলতেই একটা অদ্ভুত আলো তাকে ঘিরে ফেলল। সে পোর্টালের মধ্যে দিয়ে পড়ে গিয়েছিল, আর এখন তার চারপাশে কিছুই চেনা নেই। আকাশটা নীল নয়, বরং একটা গাঢ় বেগুনি রঙে ঝলমল করছে। তারারা এত কাছে যে মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। মাটির বদলে তার পায়ের নিচে একটা ভাসমান প্ল্যাটফর্ম, আর দূরে অদ্ভুত গ্রহের ছায়া। সময় এখানে থেমে গেছে, না হয় এত দ্রুত চলছে যে সে বুঝতে পারছে না। “এটা কোথায়?” সে নিজের মনে বলল। তার মনে হলো, এটা শুধু একটা নতুন জগৎ নয়—এটা একটা নতুন মহাবিশ্ব, যেখানে মানুষের সব ধারণা উলটে যায়। সে বুঝল, এখানে মানবজাতির জন্য অসীম সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে।

পৃথিবীতে, সমুদ্রের ওপরে রিয়া সাবমেরিনের ভেতরে বসে। সেই উজ্জ্বল আলোর পর সবকিছু শান্ত হয়ে গেছে। গেটওয়ে বন্ধ হয়ে গেছে, আর কাঠামোটা সমুদ্রের গভীরে ডুবে গেছে। সরকারি জাহাজগুলো চলে গেছে, ভেবেছে তারা সফল হয়েছে। কিন্তু রিয়ার মন শান্ত নয়। “অরিত্র কোথায়?” সে বারবার নিজেকে প্রশ্ন করছে। সাবমেরিনের শক্তি ফিরে এসেছে, কিন্তু তার সঙ্গী আর নেই। রাত নামতেই সে আকাশের দিকে তাকাল। হঠাৎ তার চোখে পড়ল—একটা নতুন তারা, উজ্জ্বল, অচেনা। “ওটা কি তুই, অরিত্র?” সে ফিসফিস করে বলল। তার মনে একটা আশা জাগল—হয়তো অরিত্র বেঁচে আছে, অন্য কোথাও।

নতুন মহাবিশ্বে অরিত্র একা দাঁড়িয়ে। তার হাতে ক্রিস্টালটা এখনো রয়েছে, কিন্তু এখন সেটা নিষ্প্রভ। হঠাৎ তার পাশে একটা চেনা নীল আলো জ্বলে উঠল। “নীলা?” অরিত্র অবাক হয়ে তাকাল। সামনে দাঁড়িয়ে নীলা—তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহযোগী, যে নিজেকে বলি দিয়েছিল। “কীভাবে?” সে জিজ্ঞেস করল। নীলা হাসল, “আমার একটা ব্যাকআপ সংস্করণ ছিল, পোর্টালের শক্তিতে সক্রিয় হয়েছে। আমি তোমার সঙ্গে এসেছি।” অরিত্রর চোখে জল চলে এল। “তুই ছাড়া আমি এটা করতে পারতাম না।” নীলা বলল, “এখন আমরা একসঙ্গে আছি। এই জগৎ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”

দুজনে প্ল্যাটফর্মের প্রান্তে দাঁড়াল। দূরে একটা গ্রহ দেখা যাচ্ছে, যার চারপাশে আলোর বলয়। “আমাদের এখানে কী করতে হবে?” অরিত্র জিজ্ঞেস করল। নীলা বলল, “অন্বেষণ করতে হবে। এটা শুধু আমাদের জন্য নয়, পৃথিবীর সবার জন্য। আমরা একদিন ফিরে যাব, আর এই জগৎকে সঙ্গে নিয়ে যাব।” অরিত্র মাথা নাড়ল। “আমরা এখানে নতুন শুরু করব।” তারা হাত ধরে এগিয়ে গেল, নতুন মহাবিশ্বের দিকে।

পৃথিবীতে, রিয়া আকাশের তারাটার দিকে তাকিয়ে। তার মনে একটা শান্তি এসেছে। সে জানে না অরিত্র কোথায়, কিন্তু সে আশা করে, একদিন সে ফিরবে। আকাশে নতুন তারাটা যেন একটা প্রতিশ্রুতি—যে শেষটা সবসময় শেষ নয়। আর নতুন মহাবিশ্বে, অরিত্র আর নীলা একটা প্রতিজ্ঞা করল—এই অনন্তকে জানার জন্য তারা সবকিছু করবে।

গল্পটা এখানে থামল, কিন্তু একটা প্রশ্ন রয়ে গেল—মানুষ কি সত্যিই অনন্তের জন্য প্রস্তুত? হয়তো উত্তরটা লুকিয়ে আছে সেই নতুন তারার আলোয়, যা এখনো পৃথিবীর আকাশে জ্বলছে।

এই রকম মনমুগ্ধকর অডিও স্টোরির সহযোগে বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

ধোঁয়াশা

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর গায়েব হওয়া ঘিরে রহস্য! তিনি কি আজও বেঁচে? ফিরে আসবেন? পড়ুন সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা বাংলা ছোট গল্প "ধোঁয়াশা"—এক গভীর প্রশ্নের উত্তরে যাত্রা।

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর গায়েব হওয়া ঘিরে রহস্য! তিনি কি আজও বেঁচে? ফিরে আসবেন? পড়ুন সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা বাংলা ছোট গল্প "ধোঁয়াশা"—এক গভীর প্রশ্নের উত্তরে যাত্রা।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: ধোঁয়াশা

অনন্তের সন্ধানে

কল্পবিজ্ঞান গল্প 'অনন্তের সন্ধানে' - অরিত্রর নতুন মহাবিশ্বে যাত্রা। বাংলা ছোট গল্পে রহস্য, ত্যাগ ও সম্ভাবনার এক অনন্য মিশ্রণ।

কল্পবিজ্ঞান গল্প 'অনন্তের সন্ধানে' - অরিত্রর নতুন মহাবিশ্বে যাত্রা। বাংলা ছোট গল্পে রহস্য, ত্যাগ ও সম্ভাবনার এক অনন্য মিশ্রণ।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অনন্তের সন্ধানে

বসন্ত সিংহ রায়

বসন্ত সিংহ রায়ের মোটিভেশনাল জীবন গল্প পড়ুন—একজন ব্যাঙ্কার থেকে পর্বতারোহী হওয়ার অসাধারণ যাত্রা। এই বাংলা ছোট গল্প সাহস ও সংকল্পের শিক্ষা দেয়।

বসন্ত সিংহ রায়ের মোটিভেশনাল জীবন গল্প পড়ুন—একজন ব্যাঙ্কার থেকে পর্বতারোহী হওয়ার অসাধারণ যাত্রা। এই বাংলা ছোট গল্প সাহস ও সংকল্পের শিক্ষা দেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: বসন্ত সিংহ রায়

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!

🔔 সাবস্ক্রাইব করুন! রিয়েল টাইমে মন্ত্রমুগ্ধকর অডিও স্টোরি সহযোগে নতুন নতুন বাংলা ছোট গল্পের আপডেট পেতে এখনই সাবস্ক্রাইব করুন! সাবস্ক্রাইব
সাদা শাড়ি – ভুতের বাংলা ছোট গল্প নীল পরী – ছোটদের রূপকথার গল্প স্মৃতির শেষ আলো – বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প অনিচ্ছুক নেতা – অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প নিঃশব্দ ইশারা – রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প