হস্য, ষড়যন্ত্র, এবং বীরত্বের এক অসাধারণ মিশেল! পলাশির যুদ্ধের পর, রাণী বিদ্যামতি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যান। কিন্তু কোম্পানির ভেতরেই আছে বিশ্বাসঘাতক! রাণী কি বাংলাকে রক্ষা করতে পারবেন? এই ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্পে জানুন রাণী বিদ্যামতির সাহস ও দৃঢ়তার কাহিনী।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » বিশ্বাসঘাতক

বিশ্বাসঘাতক

হস্য, ষড়যন্ত্র, এবং বীরত্বের এক অসাধারণ মিশেল! পলাশির যুদ্ধের পর, রাণী বিদ্যামতি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যান। কিন্তু কোম্পানির ভেতরেই আছে বিশ্বাসঘাতক! রাণী কি বাংলাকে রক্ষা করতে পারবেন? এই ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্পে জানুন রাণী বিদ্যামতির সাহস ও দৃঢ়তার কাহিনী।

কলকাতার বুকে, আলিপুরের নিশীথ রাতে, রাণী বিদ্যামতির কোঠায় এক অস্থির চাঞ্চল্য বিরাজ করছিল। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে পলাশির যুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস। চারপাশে ঝলমলে দেওয়ালগুলোয় ঝুলছে ক্লাইভের জয়যাত্রা আর মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার চিত্র। কিন্তু রাণী বিদ্যামতির দৃষ্টি ছিল জানলার বাইরে, অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের দিকে।

বিদ্যামতি কোনো সাধারণ রানী ছিলেন না। তিনি ছিলেন বীর মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের বিধবা পত্নী, বাংলার মর্যাদার রক্ষাকর্তা। পলাশির যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের বাংলায় ঔরস্য বিস্তারে বাঁধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

রাতের সেই অসময়ে রাণীর কাছে এসে হাজির হলেন তাঁর বিশ্বস্ত সহচরী লক্ষ্মী। রাণীকে চিন্তাগ্রস্ত দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “রাজমাতা, কী হয়েছে?”

“লক্ষ্মী,” বিদ্যামতি রুদ্ধকন্ঠে বললেন, “আজ রাতে গোপন সংবাদ এসেছে। কলকাতায় এসেছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মিস্টার হেনরি উইলিয়ামস।”

“উইলিয়ামস!” লক্ষ্মী চমকে উঠলেন, “কিন্তু কেন? আমাদের সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ তো নেই!”

“সেইটাই তো রহস্য,” বিদ্যামতি চিন্তিত চোখে তাকালেন লক্ষ্মীর দিকে, “মিঃ উইলিয়ামস রাতের বেলায় গোপনে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ চাইছেন। কী আছে তাঁর মনের মধ্যে, তা বুঝতে পারছি না।”

পূর্বনির্ধারিত সময়ে বড় জোড় দু’জন চোখরা নিয়ে বিদ্যামতি নিজের বাগানের এক নির্জনে স্থানে গেলেন। সেখানে দেখা হলো মিস্টার উইলিয়ামসের সাথে। উঁচু, চোখে চশমা পরা সাহেবটির মুখে একটা অস্থিরতা ফুটছিল

“রাণী বিদ্যামতি,” উইলিয়ামস বাংলা ভাষায় শ্রদ্ধার সঙ্গে মাথা নীচু করলেন, “আপনাকে গোপনে সাক্ষাৎ করতে হলো, এর জন্য ক্ষমা চাই।”

“কী কারণে এই গোপন সাক্ষাৎ, মিঃ উইলিয়ামস?” বিদ্যামতি কড়া গলায় জিজ্ঞাসা করলেন।

উইলিয়ামস চারপাশে একবার নজর বুলিয়ে নিয়ে বললেন, “রাণী বিদ্যামতি, কোম্পানির ভেতরে একটা চক্রান্ত চলছে।”

বিদ্যামতির কপালে ভাঁজ পড়ল, “কী চক্রান্ত, মিঃ উইলিয়ামস?” রাণী বিদ্যামতি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।

উইলিয়ামস চারপাশে একবার নজর দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন, “বাংলাকে আরো দুর্বল করে দেওয়ার, আরো জমি দখল করে নেওয়ার এক গোপন পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার নেতৃত্বে আছেন লর্ড ক্লাইভের ভাইজন, জন ক্লাইভ।”

বিদ্যামতির রক্ত গরম হয়ে উঠল, “আবার ক্লাইভের নাম! বাংলার রক্ত শুষে নেওয়া শেষ হলো না এখনো?”

“না, রাণী বিদ্যামতি,” উইলিয়ামস মাথা নাড়লেন, “জন ক্লাইভ আরো লোভী আর নিষ্ঠুর। তিনি বাংলার নবাব, মীর জাফরকে আরো ক্ষমতা দিয়ে, তাঁকে আপনার বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিতে চান।”

বিদ্যামতি চমকে উঠলেন, “মীর জাফর? কিন্তু তিনি তো কোম্পানির পক্ষে আছেন!”

“তা ঠিক,” উইলিয়ামস সায় দিলেন, “কিন্তু জন ক্লাইভ মনে করেন, মীর জাফর দুর্বল। তিনি তাঁকে আরো ক্ষমতা দিয়ে, বাংলাকে আরো ভেতর থেকে ভাঙতে চান।”

বিদ্যামতি চিন্তাভাবনা করতে লাগলেন। জন ক্লাইভের কথা শুনলে মনে হচ্ছে, ব্রিটিশদের কুৎমন্ত্র আবার বাংলাকে গ্রাস করতে চলেছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত?

এর মধ্যে উইলিয়ামস আবার বললেন, “রাণী বিদ্যামতি, আমি বাংলার প্রতি সহানুভূতিশীল। আমি চাই না এই সুন্দর রাজ্যটি আরো দুঃখ ভোগ করুক।”

“কিন্তু আপনি কী করতে পারবেন, মিঃ উইলিয়ামস?” বিদ্যামতি সন্দিহের চোখে তাকালেন।

উইলিয়ামস একটা গোপনীয় নথি রাণীর হাতে তুলে দিলেন, “এই নথিতে জন ক্লাইভের পরিকল্পনার সব বিবরণ আছে। আপনি এটা নিয়ে কোম্পানির কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন।”

বিদ্যামতি নথিটা হাতে নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে লাগলেন। উইলিয়ামসের কথা বিশ্বাস করা যায় কিনা, তা ঠিক বুঝতে পারছিলেন না তিনি। কিন্তু যদি এটা সত্যি হয়, তাহলে বাংলাকে এক বিরাট বিপদ থেকে রক্ষা করা যাবে

“আপনাকে বিশ্বাস করব, মিঃ উইলিয়ামস?” রাণী সন্দিহের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন।

উইলিয়ামস রাণীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “রাণী বিদ্যামতি, আমি জানি, আমার কথা বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু বাংলাকে বাঁচানোর এই একমাত্র সুযোগ। আপনার সাহস আর কৌশলই বাংলাকে রক্ষা করতে পারে।”

বিদ্যামতি চুপ করে কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর দৃঢ় গলায় বললেন, “ঠিক আছে, মিঃ উইলিয়ামস। 

“ঠিক আছে, মিস্টার উইলিয়ামস,” রাণী বিদ্যামতি দৃঢ় গলায় বললেন, “আমি এই বিষয়টি নিয়ে কোম্পানির কাছে অভিযোগ জানাবো। কিন্তু এই গোপন নথিটি নিয়ে কীভাবে কোম্পানির কাছে যাব, সেটা একটা সমস্যা।”

“আমি আপনাকে সাহায্য করব, রাণী বিদ্যামতি,” উইলিয়ামস উৎসাহের সাথে বললেন, “আমার একজন বিশ্বস্ত ভৃত্য আছেন, সে আপনাকে ফোর্ট উইলিয়ামে পৌঁছে দেবে। কিন্তু সাবধান থাকুন, এই বিষয়টি কারো কাছে প্রকাশ করবেন না।”

“চিন্তা করবেন না, মিঃ উইলিয়ামস,” বিদ্যামতি আশ্বস্ত করলেন, “এই বিষয়টি আমার বিশ্বস্ত সহচরী লক্ষ্মী ছাড়া আর কেউ জানবে না।”

কথামতো, পরের রাতে উইলিয়ামসের ভৃত্য রাণী বিদ্যামতিকে গোপনে ফোর্ট উইলিয়ামের কাছে পৌঁছে দিলেন। সেখানে গিয়ে রাণী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ চাইলেন।

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর রাণীকে গভর্নর জেনারেলের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে বসে ছিলেন লম্বা চেহারার এক সাহেব, যাঁর চোখে ক্ষমতার ঝলক।

“আপনিই কি গভর্নর জেনারেল?” রাণী বিদ্যামতি জিজ্ঞাসা করলেন।

“হ্যাঁ,” সাহেবটি মাথা নাড়লেন, “আমি লর্ড কর্নওয়ালিস। আপনি কে, এবং আমার সাথে সাক্ষাৎ চাওয়ার কী কারণ?”

বিদ্যামতি লম্বা শ্বাস নিয়ে বললেন, “লর্ড কর্নওয়ালিস, আমি বাংলার রাজমাতা বিদ্যামতি। আমার কাছে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে, যা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ।”

লর্ড কর্নওয়ালিস কৌতূহলী হয়ে তাকালেন, “কী ধরনের তথ্য?”

বিদ্যামতি উইলিয়ামসের দেওয়া গোপন নথিটি লর্ড কর্নওয়ালিসের সামনে টেবিলে রাখলেন, “এই নথিতে লেখা আছে, কোম্পানির মধ্যেই বাংলাকে আরো দুর্বল করার একটা চক্রান্ত চলছে।”

লর্ড কর্নওয়ালিস নথিটি খুলে পড়তে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পড়ার পর তাঁর কপালে ভাঁজ পড়ে গেল।

নথি পড়া শেষ করে লর্ড কর্নওয়ালিস মাথা গরম হয়ে উঠলো। চোখে জ্বলে উঠল ক্ষোভের আগুন। “এটা কী, রাণী বিদ্যামতি?” গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলেন তিনি।

“লর্ড কর্নওয়ালিস,” রাণী বিদ্যামতি দৃঢ় গলায় বললেন, “এই নথিটি সত্যি কি না, তা আপনারা নিশ্চয়ই খতিয়ে নেবেন। কিন্তু যদি এটা সত্যি হয়, তাহলে বাংলা আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, দু’পক্ষের জন্যই বিপদ।”

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে লর্ড কর্নওয়ালিস বললেন, “রাণী বিদ্যামতি, আপনি একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের সামনে উপস্থাপিত করেছেন। এই বিষয়টি আমরা অবশ্যই খতিয়ে নেব।”

“আমি কি আশা করতে পারি, লর্ড কর্নওয়ালিস?” রাণী জিজ্ঞাসা করলেন।

“আপনি আশ্বস্ত থাকতে পারেন,” লর্ড কর্নওয়ালিস আশ্বাস দিলেন, “যদি এই নথিটি সত্যি হয়, তাহলে জন ক্লাইভের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বাংলার শান্তি বজায় রাখার জন্যেও কোম্পানি সব কিছু করবে।”

কথামতো, লর্ড কর্নওয়ালিস এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিলেন। কয়েক সপ্তাহের তদন্তের পর, নথিতে লেখা তথ্য সত্যি বলে প্রমাণিত হয়। জন ক্লাইভকে কোম্পানির কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, এবং বাংলায় তাঁর আর কোনো ক্ষমতা থাকে না।

এই ঘটনায় রাণী বিদ্যামতির সাহস ও কৌশল সকলকে মুগ্ধ করে। তিনি বাংলাকে আরও একবার বিপদ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হলেন। কিন্তু গোপনীয় তথ্য ফাঁস করার জন্য রাণীর উপর নজরদারি বাড়িয়ে দিল কোম্পানি। তবে, রাণী বিদ্যামতি কখনোই সাহস হারালেন না। তিনি মীর জাফরের ক্ষমতা বাড়ার চেষ্টাকেও নীরবে প্রতিহত করতে লাগলেন। বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই তাঁর মনের মধ্যে জ্বলে উঠল নতুন করে।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

About The Author

নতুন বাংলা ছোট গল্প

আত্মার মুক্তি

এক ভুতের গল্পে সোহিনী আত্মার মুক্তির সন্ধানে অন্ধকার শক্তির সাথে লড়াই করে। এই বাংলা ছোট গল্পটি ভয়ের ছায়া এবং সাহসিকতার একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।

এক ভুতের গল্পে সোহিনী আত্মার মুক্তির সন্ধানে অন্ধকার শক্তির সাথে লড়াই করে। এই বাংলা ছোট গল্পটি ভয়ের ছায়া এবং সাহসিকতার একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আত্মার মুক্তি

অমীমাংসিত রহস্য

অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে এক অনন্য বাংলা ছোট গল্প, যেখানে অতীতের গোপন সত্য উন্মোচনে শ্রেয়ার যাত্রা রহস্য ও রোমাঞ্চে ভরা। রহস্য রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্য আদর্শ পাঠ।

অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে এক অনন্য বাংলা ছোট গল্প, যেখানে অতীতের গোপন সত্য উন্মোচনে শ্রেয়ার যাত্রা রহস্য ও রোমাঞ্চে ভরা। রহস্য রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্য আদর্শ পাঠ।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অমীমাংসিত রহস্য

অনুভূতির ঢেউ

"অনুভূতির ঢেউ" একটি হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে নন্দিনী ও জয়ন্তের স্বপ্ন, সম্পর্ক এবং দূরত্বের মধ্যে গড়ে ওঠা ভালোবাসা সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের জীবন।

"অনুভূতির ঢেউ" একটি হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে নন্দিনী ও জয়ন্তের স্বপ্ন, সম্পর্ক এবং দূরত্বের মধ্যে গড়ে ওঠা ভালোবাসা সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের জীবন।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অনুভূতির ঢেউ

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!