বাংলা ছোটদের রূপকথার ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
একটি ছোট্ট গ্রাম ছিল, যেখানে সবসময় শীতকাল বিরাজ করত। এই গ্রামের নাম ছিল শীতপুর, আর এখানে কোনো দিনই গরম পড়ত না। চারপাশে পাহাড়, হিমবাহ এবং বরফে ঢাকা বনাঞ্চল ছিল। গ্রামের মধ্যে ছিল একটি ছোট্ট, সুন্দর প্রাসাদ, যার রাজা ছিলেন রাজা শীতল। রাজা শীতল ছিলেন খুব ভালো মানুষ, কিন্তু একটাই সমস্যা ছিল—তার রাজ্যে কখনো গরম আসেনি।
রাজার দেহে ছিল এক ধরনের বিশেষ জাদু, যা তার রাজ্যে শীতকালের অবস্থা স্থায়ী করত। কিন্তু, রাজা শীতল একদিন খেয়াল করলেন, তার রাজ্যের শিশুরা শীতকাল থেকে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। তারা ঠিকমতো খেলতে পারত না, কাঁপতে কাঁপতে ঘরের মধ্যে বসে থাকত। রাজা শীতল একদিন ভাবলেন, “আমি যদি একটু গরমের অনুভূতি এনে দিতে পারি, তবে শিশুরা আরও আনন্দিত হবে।”
তবে, এমন শক্তি তার ছিল না। রাজা শীতল সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি জাদুর রাজ্যে যাবেন, যেখানে এমন শক্তি লুকিয়ে আছে, যা তাকে গরমের অনুভূতি আনতে সাহায্য করতে পারে।
একদিন সকালে, রাজা শীতল তার প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। তিনি পা বাড়ালেন সেই অদ্ভুত জাদুর জগতে, যেখানে অনেক রহস্য লুকিয়ে ছিল। হিমবাহের মধ্যে হেঁটে, রাজা শীতল পৌঁছালেন একটি সুন্দর, রঙিন বাগানে, যেখানে একটি বিশাল ফুলের গাছ ছিল।
ফুলের গাছটি হাসি দিয়ে বলল, “কী ব্যাপার, রাজা শীতল? তুমি তো কাঁপছো! কী চাও?”
রাজা শীতল বললেন, “আমি চাই, আমার রাজ্যে কিছু গরমের অনুভূতি নিয়ে আসতে। এখানে সব সময় শীতকাল থাকে, আর আমি চাই না শিশুদের কাঁপতে থাকতে।”
গাছটি একটু চিন্তা করল এবং তারপর বলল, “তবে এই কাজ সহজ নয়। তোমাকে যেতে হবে আগুনের পাহাড়ে, যেখানে এক জাদুকরী আগুন বাস করে। সে তোমাকে সাহায্য করতে পারে।”
ছোটদের রূপকথার গল্প - ইঁদুরের রাজত্ব: "ইঁদুরের রাজত্ব" একটি মজার ও শিক্ষামূলক ছোটদের গল্প। পনির ও ইঁদুরের চাহিদার মজার রূপকথার গল্প যা শিশুদের কল্পনার জগতে ভ্রমণ করাবে ও জীবনের ছোট ছোট শিক্ষা দেবে। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
রাজা শীতল ধন্যবাদ জানিয়ে, আগুনের পাহাড়ে যাওয়ার জন্য রওনা দিলেন। পথটি খুব কঠিন ছিল, কিন্তু রাজা শীতল অটল মনোবলে এগিয়ে চলল। অনেক দিন পরে, তিনি আগুনের পাহাড়ে পৌঁছালেন। সেখানে এক বিশাল আগুনের ডানাওয়ালা এক জাদুকরী বসে ছিল।
রাজা শীতল এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “জাদুকরী, তুমি কি আমাকে আমার রাজ্যে গরম এনে দিতে সাহায্য করবে?”
জাদুকরী হাসি দিয়ে বলল, “আমি তোমার জন্য সাহায্য করতে পারি, রাজা শীতল, কিন্তু তোমাকে আমার শর্ত মেনে চলতে হবে। তোমার রাজ্যে শীত থাকবে, তবে তোমার মানুষদের একটু গরমের অনুভূতি দরকার হলে, তুমি এখানে ফিরে আসবে এবং আমার কাছে সাহায্য চাইবে। ”
রাজা শীতল সম্মত হলেন। তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে, জাদুকরী থেকে একটি আগুনের স্ফটিক নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।
রাজ্যে ফিরে এসে, রাজা শীতল স্ফটিকটি একটি ছোট্ট পুকুরে রাখলেন। পুকুরের জল তপ্ত হতে শুরু করল, এবং রাজ্যের শিশুরা হঠাৎ এক বিস্ময়কর গরম অনুভব করল। তারা খুব খুশি হয়ে বাইরে খেলতে শুরু করল। রাজা শীতল দেখলেন, শিশুদের হাসি, খেলা এবং আনন্দে রাজ্যটি পূর্ণ হয়ে গেছে।
তবে, রাজা শীতল জানতেন, এই গরম অনুভূতি স্থায়ী হতে হবে না। সে প্রতিশ্রুতি রেখেছিল যে, যখনই তার রাজ্যে আবার শীত লাগবে, তখন তাকে আবার আগুনের পাহাড়ে যেতে হবে।
এদিন, শিশুরা তাকে দেখে বলল, “ধন্যবাদ, রাজা শীতল! তুমি আমাদের জন্য এক আশীর্বাদ!”
রাজা শীতল হেসে বললেন, “আমরা সবাই একসাথে যদি ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বে ভরা থাকি, তবে কোনো কিছুই আমাদের ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতিকে আটকাতে পারবে না।”
তারপর থেকে, রাজা শীতল মাঝে মাঝে আগুনের পাহাড়ে গিয়ে শিশুদের জন্য গরম অনুভূতি নিয়ে আসতেন। কিন্তু কখনো তিনি ভুলতেন না, শীত ও গরমের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রাখা।
এভাবে, শীতপুরের রাজ্য এক নতুন দিগন্তে পৌঁছাল, যেখানে শিশুদের হাসি আর আনন্দে শীতের রাতও উজ্জ্বল হয়ে উঠত।
রাতের আকাশে যখন চাঁদ উঠত, তখন রাজা শীতল তার রাজ্যে দাঁড়িয়ে, এক গভীর শান্তি অনুভব করতেন। আর সেই রাতে, প্রতিটি শিশুর মন শান্ত এবং নির্ভীক হয়ে থাকত।