এই বাংলা গল্প রহস্যেপূর্ণ! অহনা তার ঠাকুরদার মৃত্যুর রহস্য খুঁজতে পাহাড়ের শিব মন্দিরে যাত্রা করেন। সেখানে অতীত দেখানো যন্ত্রের সাহায্যে নিমাই সেনের খুনের সূত্র পান। কিন্তু রহস্য আরও গভীরে যায় ‘পদ্মজা রিট্রিট’ এর সাথে যোগসূত্র পাওয়া গেলে। অহনা কি সফল হবেন?

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » অতীতের ছায়া

অতীতের ছায়া

এই বাংলা গল্প রহস্যেপূর্ণ! অহনা তার ঠাকুরদার মৃত্যুর রহস্য খুঁজতে পাহাড়ের শিব মন্দিরে যাত্রা করেন। সেখানে অতীত দেখানো যন্ত্রের সাহায্যে নিমাই সেনের খুনের সূত্র পান। কিন্তু রহস্য আরও গভীরে যায় ‘পদ্মজা রিট্রিট’ এর সাথে যোগসূত্র পাওয়া গেলে। অহনা কি সফল হবেন?

দার্জিলিং এর বিশাল চা বাগানের মাঝখানে অবস্থিত ‘পদ্মজা রিট্রিট’ নামের এক নিরালা অবকাশে। এখানে আসেন মানুষ্যের কোলাহল ছেড়ে নিজের মধ্যে ডুব দেওয়ার জন্য। এই রিট্রিটে এক রাতে পৌঁছালেন অহনা রায়। সাথে ছিল তার সদ্যমৃতঠাকুরদা-র মৃতদেহ, ঠাকুরদার নাম নিমাই সেন। এই অবাক করা আগমনে রিট্রিটের কর্মীরা হতবাক। কিন্তু, অহনার দৃঢ়তায় তারা তাকে একটি বিশেষ কামরায় রাখতে বাধ্য হলেন।

কামরাটা ছিল অস্বাভাবিক। দেওয়ালগুলো স্বচ্ছ কাচের, যার মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছে বাগানের সবুজ রোমাঞ্চ। কিন্তু, বাইরে থেকে কেউ আসেননি অহনার সঙ্গে দেখা করতে। নির্জনতায় ছেয়ে গেল কামরাটা। একটু পর দেখা গেল, কাচের দেওয়ালের ওপাশে এক অদ্ভুত নারী দাঁড়িয়ে। চোখ দুটি অস্বাভাবিক বড়, চেহারা মৃতের মতো শীর্ণ। নীরব দৃষ্টিতে সে অহনাকে দেখতে লাগল। অহনা ভয়ে চমকে উঠলেন, কিন্তু নারীটি কোনো সাড়া না দিয়ে মিলিয়ে গেল। এই ঘটনায় আরো বেড়ে গেল রহস্য।

পরের দিন, রিট্রিটের ম্যানেজার, মিস্টার সেন, অহনার সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি জানালেন, ‘পদ্মজা রিট্রিট’ কোনো সাধারণ জায়গা নয়। এখানে মানুষ্যের আত্মাকে শান্তি দেওয়ার এক বিশেষ পদ্ধতি অনুশীলন করা হয়। নিমাই সেনের মৃত্যু অস্বাভাবিক হওয়ায়, তার আত্মাকে শান্তি পেতেই এখানে আনা হয়েছে। কিন্তু, এই পদ্ধতি সম্পর্কে আর কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানালেন মিস্টার সেন।

এরপর অহনার প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা হয়ে উঠলো আরো অদ্ভুত। রাতে কাচের দেওয়ালের ওপাশ থেকে আসতো অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর, যেন কেউ তাকে ডাকছে। বাগানের মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ দেখা দিত অদ্ভুত আলোর খেলা। আর তখনই সেই মৃত্যুসদৃশ নারীটি আবার দেখা দিত। দিনের বেলায় রিট্রিটের কর্মীরা অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। কেউ কথা বলতেন না, শুধু নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। এই অস্বাভাবিক পরিবেশে অহনার মনে জাগলো সন্দেহ। অস্বস্তিতে আর সন্দেহ-র জালে জড়িয়ে গেলেন অহনা। ঠাকুরদার মৃতদেহের পাশেই যে থাকতে হচ্ছে, তা তো আরো মন খারাপের কারণ। কিন্তু, মিস্টার সেনের কথা মতো, নিমাই সেনের আত্মাকে শান্তি পেতে এখানে থাকাটাই জরুরি। একদিন রাতে, অস্বাভাবিক কণ্ঠস্বর আরো বেশি স্পষ্ট হলো। “অহনা…আয়…” ডান কাচের দেওয়ালের ওপাশ থেকে আসছিল এই আহ্বান। ভয়ে শিরশিরিয়ে উঠলো অহনা। কিন্তু, কৌতূহল আর রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়লেন তিনি। সাবধানে উঠে দাঁড়িয়ে কাচের দেওয়ালের কাছে গেলেন।

বাইরে, অর্থাৎ কাচের ওপাশের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, সেই মৃত্যুসদৃশ নারীটি দাঁড়িয়ে আছে। এবারেও সেই অস্বাভাবিক চাহনি। কিন্তু, এবারে তার হাতে ছিল একটা পুরোনো চিঠি। চিঠিটা কাচের ওপাশ দিয়ে অহনার দিকে এগিয়ে দিল সে। কী লিখা আছে, বুঝতে পারলেন না অহনা। কিন্তু, চিঠির কাগজটা দেখে মনে হলো, অনেক পুরোনো। সাহস করে হাত বাড়িয়ে চিঠিটা নিলেন অহনা।

পরের সকালে, মিস্টার সেনের সঙ্গে দেখা করলেন অহনা। চিঠিটা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা কী?” মিস্টার সেন চিঠিটা দেখে চমকে গেলেন। “এটা…এটা তো নিমাই সেনের লেখা!” কথায় অবাক হলেন অহনা। ঠাকুরদা কি লিখেছেন এই চিঠিতে? আর এই মৃত্যুসদৃশ নারীটির সঙ্গে তার কী সম্পর্ক? রহস্য আরো গভীর গেল।

মিস্টার সেন চিঠিটা পড়লেন। চোখে এক অদ্ভুত দৃষ্টি ভাসল। তারপর অহনাকে জানালেন, এই চিঠি লেখা অনেক বছর আগে। নিমাই সেন ‘পদ্মজা রিট্রিটে’ আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তখন তাকে নেওয়া হয়নি। কারণ, তখনো তার আত্মার মধ্যে কিছু অমীমাংসিত বিষয় ছিল। এখন মৃত্যুর পর, সেই অমীমাংসা করার জন্যই তাকে এখানে আনা হয়েছে। কিন্তু, সেই অমীমাংসা কী, তা চিঠিতে লেখা নেই।

এই কথায় আরো জটিল হয়ে উঠলো পরিস্থিতি। নিমাই সেনের অমীমাংসিত বিষয়টা কী? আর, কীভাবে তাকে সাহায্য করা যাবে? রাতের অদ্ভুত কণ্ঠস্বর আর সেই মৃত্যুসদৃশ নারীর সঙ্গে কি এই চিঠির কোনো সম্পর্ক আছে? প্রশ্নের জালে জড়িয়ে গেলেন অহনা। কিন্তু, ঠাকুরদার জন্য কিছু করতে হবে, এই দৃঢ়তা জাগলো তার মধ্যে।

পরের কয়েকটা দিন আরো অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। রাতে কাচের দেওয়ালের ওপাশ থেকে আসা অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর এবারে আরো স্পষ্ট হয়ে উঠলো। “অহনা… চিঠি পড়…” বার বার এই একই কথা শোনা যাচ্ছিল। নিজের ঠাকুরদার লেখা চিঠিটা বারবার পড়লেন অহনা। কিন্তু, চিঠিতে লেখা ছিল শুধু কিছু অসংলগ্ন শব্দ – পাহাড়, ঝর্ণা, চন্দ্র…. কোনো মানে বুঝতে পারলেন না। হতাশায় ভেঙে পড়তেই চাইলেন তিনি। কিন্তু, হঠাৎ করেই তার নজর পড়ল চিঠির এক কোণায় ছোট্ট করে আঁকা একটা নিশানার উপর। নিশানাটা দেখে মনে হলো, পাহাড়ের চূড়ায় থাকা কোনো মন্দিরের আকৃতি।

অহনার মনে জাগলো আশা। এই নিশানা কি সেই পাহাড় আর ঝর্ণার কোনো ইঙ্গিত দেয়? ঠাকুরদার অমীমাংসিত বিষয় কি এই জায়গাটির সঙ্গে জড়িত? পরের দিন, মিস্টার সেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন অহনা। নিজের সন্দে আর চিঠির নিশানাটি তাকে দেখালেন। মিস্টার সেন চিঠি দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর অবাক করা তথ্য জানালেন। “এই নিশানা, এটা তো দার্জিলিং এর কাছে অবস্থিত প্রাচীন শিব মন্দিরের আকৃতি!”

অহনা চমকে উঠলেন। “কিন্তু, ঠাকুরদার সঙ্গে এই মন্দিরের কী সম্পর্ক?” মিস্টার সেন আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানালেন। নিমাই সেন পুরাতত্ত্ববিদ ছিলেন। এই মন্দির নিয়ে তার বহুদিনের গবেষণা চলছিল। কিন্তু, কিছু একটা রহস্যের কারণে গবেষণা শেষ করতে পারেননি তিনি। মৃত্যুর আগে হয়তো ঐ অমীমাংসিত বিষয়টিই তাকে ‘পদ্মজা রিট্রিটে’ আসতে চেয়েছিল।

এই তথ্যে আরো দৃঢ় হলেন অহনা। ঠাকুরদার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতেই হবে তাকে। মিস্টার সেনের অনুমতি নিয়ে অবশেষে ঐ প্রাচীন শিব মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন তিনি। পাহাড়ের কঠিন পথ চলতে চলতে অতীতের স্মৃতি তার মনে জাগলো। ঠাকুরদার সঙ্গে কত জায়গায় ঘুরেছেন, কত রহস্যের সন্ধান করেছেন। চোখে জল এলো। কিন্তু, ঠাকুরদার জন্য কিছু করার দৃঢ়তা আরো জাগলো তার মধ্যে।

দুর্গম পথ পেরিয়ে অবশেষে পৌঁছলেন প্রাচীন শিব মন্দিরে। মন্দিরটা ছিল বেশ ছোট, কিন্তু খুবই প্রাচীন। ভেতরে গিয়ে দেখলেন, মন্দিরের দেওয়ালে অসংখ্য প্রাচীন চিত্র আঁকা। মনোযোগ সহকারে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন অহনা। হঠাৎ করেই তার নজর পড়ল একটি চিত্রের উপর। চিত্রে ছিল এক জটিল আঁকা যন্ত্রের ছবি। যন্ত্রের বিভিন্ন অংশে অঙ্কিত ছিল অদ্ভুত চিহ্ন। চিঠির নিশানার সঙ্গে এই চিহ্নের মিল খুঁজে পেলেন অহনা। বুঝতে পারলেন, ঠাকুরদার গবেষণা হয়তো এই যন্ত্রের রহস্যকে ঘিরেই ছিল। কিন্তু, যন্ত্রের কার্যকারিতা বা এই মন্দিরের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী, তা বুঝতে পারলেন না।

এই সময় মন্দিরের ভেতর থেকে এক ধীর, গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে এল। “কে আছেন?” চমকে উঠে পিছনে ফিরলেন অহনা। দেখলেন, এক বয়স্ক সন্ন্যাসী তার দিকে মৃদু হাসি দিয়ে এগিয়ে আসছেন। সন্ন্যাসীকে সব ঘটনা – ঠাকুরদার মৃত্যু, ‘পদ্মজা রিট্রিট’, চিঠি এবং এই মন্দিরে আসার কারণ – বিস্তারিত জানালেন অহনা।

সন্ন্যাসী মনযোগ সহকারে শুনলেন তার কথা। তারপর বললেন, “নিমাইবাবু খুবই মেধাবী গবেষক ছিলেন। এই মন্দিরের রহস্য উন্মোচন করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু, এই যন্ত্রের রহস্য সাধারণ মানুষের বোধের অতীত।”

“উন্মোচন” শব্দটা কানে লাগল অহনার। জিজ্ঞাসা করলেন, “উন্মোচন? মানে?” সন্ন্যাসী জানালেন, এই যন্ত্রের সাহায্যে অতীতের ঘটনা দেখা সম্ভব।

অবাক হয়ে গেলেন অহনা। অতীত দেখার যন্ত্র! এতদিন ধরে ঠাকুরদা কি এই রহস্যের সন্ধান করছিলেন? কিন্তু, যন্ত্রটি চালু করতে হলে কী করতে হবে? সন্ন্যাসী জানালেন, যন্ত্রটি চালু করার মন্ত্র নিমাইবাবু হয়তো কোনো গোপন জায়গায় লিখে রেখে গেছেন। মন্দিরের ভেতরেই খুঁজতে হবে সেটি।

উৎসাহ জাগলো অহনার মনে। ঠাকুরদার অসমাপ্ত গবেষণা শেষ করার সুযোগ এসেছে হয়তো। সন্ন্যাসীর সাহায্যে মন্দিরের প্রতিটি কোণ. খুঁজতে লালেন তিনি। দেওয়ালের ফাঁক, মূর্তির আড়াল, এমনকী মন্দিরের প্রাচীন পাথরেও খুঁজলেন। কিন্তু, মন্ত্রের কোনো অস্তিত্ত পেলেন না। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন অহনা।

এমন সময়, সন্ন্যাসী এগিয়ে এসে বললেন, ” হয়তো মন্ত্রটি কোনো গোপন কামরায় থাকতে পারে। এই মন্দিরের নিচে এমনই কয়েকটা কামরা আছে। কিন্তু, সেগুলো বহুকাল আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”

আশা জাগলো আবার অহনার মনে। সেই গোপন কামরা খুলতে পারলেই হয়তো মন্ত্র পাওয়া যাবে। কিন্তু, কীভাবে খুলবেন সেই কামরা? সন্ন্যাসী বললেন, “এই মন্দিরের রহস্য উন্মোচন করার চাবি হয়তো সেই প্রাচীন চিত্রগুলোতে লুকিয়ে আছে।” সন্ন্যাসী অহনাকে সেই চিত্রগুলো আরও মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করতে বললেন।

কয়েক ঘণ্টা ধরে চিত্রগুলো দেখার পর হঠাৎ অহনার চোখে পড়ল একটা জ্যামিতিক নকশা। নকশাটি দেখে মনে হলো কোনো তালার মানচিত্র। কিন্তু, এই নকশার সঙ্গে অন্য আর সব চিত্রের কোনো মিল নেই।

“এই নকশাটা আলাদা কেন?” জিজ্ঞাসা করলেন অহনা। সন্ন্যাসী বললেন, “এটা হয়তো কোনো গোপন দরজা খোলার নির্দেশিকা।”

অহনার মনে আশার আলো জ্বলে উঠল। তিনি চেষ্টা করলেন নকশা অনুযায়ী মন্দিরের দেওয়ালে হাত বুলিয়ে দেখতে। কিছুক্ষণ পর হটাৎ একটা শব্দ হলো। দেওয়ালের একটা অংশ সরে গিয়ে গোপন কক্ষটি প্রকাশ পেল।

সাহস নিয়ে সেই পথে ঢুকলেন অহনা। সন্ন্যাসী তাকে অনুসরণ করলেন। পথটা ছিল অন্ধকার এবং স্যাঁসে। হাতড়াতে হাঁটতে লাগলেন তারা। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা কামরায় পৌঁছালেন। কামরাটা ছোট ছিল, কিন্তু দেওয়ালে ঝলমলে জ্বলছিল একটি প্রদীপ। আলোয় দেখলেন, দেওয়ালে লেখা রয়েছে একটি মন্ত্র।

মন্ত্রটা মুখস্থ করে বাইরে এলেন অহনা। সন্ন্যাসীর সাহায্যে মন্দিরের প্রধান কামরায় ফিরে গেলেন। সবার আগে, ঠাকুরদার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাকে মাথায় নিবিড় করে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর সন্ন্যাসীর নির্দেশ মতো যন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে মন্ত্রটা জপ করতে শুরু করলেন।

মন্ত্র জপ করতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রটা জ্বলজ্বল করে জেগে উঠল। যন্ত্রের বিভিন্ন অংশে আলোর খেলা শুরু হলো। তারপর যন্ত্রের কেন্দ্রস্থলে অস্পষ্ট কিছু ছবি ফুটে উঠল। অতীতের কোনো ঘটনা দেখাচ্ছে যন্ত্রটি!

মনোযোগ সহকারে সেই ছবি পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন অহনা। ছবিতে দেখলেন, নিমাই সেন এই মন্দিরের ভেতরেই কিছু লোকের সঙ্গে গোপন কথোপকথন করছেন। কিন্তু, কারা এই লোকেরা, তা বুঝতে পারলেন না। তারপর দেখলেন, নিমাই সেন হঠাৎ করে মাটিতে পড়ে গেলেন। আর সেই লোকেরা দ্রুত পালিয়ে গেলেন।

ছবিটা মিলিয়ে গেল। কিন্তু, এতেই কিছুটা পরিষ্কার হলো। নিমাই সেনের মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, বরং খুন। কিন্তু, খুনেরা কারা এবং কেন তাকে খুন করল, তা জানা যায়নি।

যন্ত্রটি বন্ধ হয়ে গেল। মন্দিরের মধ্যে এক নিস্তব্ধতা নেমে এল। অহনা চোখ বন্ধ করে সেই ছবিগুলো মনে মনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেন। নিমাই সেনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল যে লোকেরা, তাদের চেহারা অস্পষ্ট ছিল ঠিকই, কিন্তু একজনের হাতে একটি বিশেষ আংটি দেখে মনে হলো। সেই আংটির ডিজাইন অহনার চেনা লাগল।

হঠাৎ করেই তার মাথায় আকাশটা ভেঙে পড়ল। সেই আংটি তিনি আগেও দেখেছেন! ‘পদ্মজা রিট্রিট’-এ, সেই মৃত্যুসদৃশ নারীর হাতেও ছিল ঠিক একই রকমের আংটি।

এই রহস্যের একটা সূত্র হয়তো পাওয়া গেল। ‘পদ্মজা রিট্রিট’-এর সঙ্গে এই খুনের কি সম্পর্ক আছে, তা জানতে হবে। সন্ন্যাসীকে সব বললেন অহনা। সন্ন্যাসী চিন্তা করে বললেন, “নিমাইবাবুর গবেষণা হয়তো ‘পদ্মজা রিট্রিট’-এর কর্তৃপক্ষদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। তাই, তারা তাকে খুন করে থাকতে পারে।”

নিজের ঠাকুরদার খুনের খোঁজে ফিরে যেতে হবে, এটা বুঝতে পারলেন অহনা। সন্ন্যাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি মন্দির থেকে বেরিয়ে পড়লেন। দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি পথ ধরে নামতে লাগলেন। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, ঠাকুরদার খুনের রহস্য উন্মোচন করবেনই, চাই যত কঠিন হোক না কেন।

‘পদ্মজা রিট্রিটে’ ফিরে এসে অহনা সোজাসাপ্টা মিস্টার সেনের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। তাকে সব খুলে বললেন – প্রাচীন মন্দির, যন্ত্র, অতীতের ঘটনা দেখা, এবং নিমাই সেনের খুনের সূত্র। মিস্টার সেন চুপ করে শুনলেন তার কথা। তার চোখে এক অস্বাভাবিক চাহনি ফুটে উঠল।

কিন্তু, অবাক করা ঘটনা ঘটলো পরের দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে অহনা দেখলেন, তার কামরা ফাঁকা। নিমাই সেনের মৃতদেহ নেই। অচেনা একটা চিঠি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। চিঠিতে লেখা ছিল, “আপনি খুব বেশি জানার চেষ্টা করছেন, অহনা। সাবধান!”

নিজের অসহায়ত্বে ভেঙে পড়তে চাইলেন অহনা। কিন্তু, ঠাকুরদার খুনের রহস্য উদঘাটন করার পথে এসে আর ফিরে যাওয়ার নয়। সাহস নিয়ে ‘পদ্মজা রিট্রিট’ থেকে পালিয়ে যেতে নিজের পরিকল্পনা শুরু করলেন তিনি।

এভাবেই রহস্য, রোমাঞ্চ আর খুনের এই গল্পটা অব্যাহত থাকে। অহনা নিজের ঠাকুরদার খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারবেন কি না, সেটাই এই গল্পের চূড়ান্ত উত্তরণ।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

About The Author

নতুন বাংলা ছোট গল্প

আত্মার মুক্তি

এক ভুতের গল্পে সোহিনী আত্মার মুক্তির সন্ধানে অন্ধকার শক্তির সাথে লড়াই করে। এই বাংলা ছোট গল্পটি ভয়ের ছায়া এবং সাহসিকতার একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।

এক ভুতের গল্পে সোহিনী আত্মার মুক্তির সন্ধানে অন্ধকার শক্তির সাথে লড়াই করে। এই বাংলা ছোট গল্পটি ভয়ের ছায়া এবং সাহসিকতার একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আত্মার মুক্তি

অমীমাংসিত রহস্য

অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে এক অনন্য বাংলা ছোট গল্প, যেখানে অতীতের গোপন সত্য উন্মোচনে শ্রেয়ার যাত্রা রহস্য ও রোমাঞ্চে ভরা। রহস্য রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্য আদর্শ পাঠ।

অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে এক অনন্য বাংলা ছোট গল্প, যেখানে অতীতের গোপন সত্য উন্মোচনে শ্রেয়ার যাত্রা রহস্য ও রোমাঞ্চে ভরা। রহস্য রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্য আদর্শ পাঠ।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অমীমাংসিত রহস্য

অনুভূতির ঢেউ

"অনুভূতির ঢেউ" একটি হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে নন্দিনী ও জয়ন্তের স্বপ্ন, সম্পর্ক এবং দূরত্বের মধ্যে গড়ে ওঠা ভালোবাসা সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের জীবন।

"অনুভূতির ঢেউ" একটি হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে নন্দিনী ও জয়ন্তের স্বপ্ন, সম্পর্ক এবং দূরত্বের মধ্যে গড়ে ওঠা ভালোবাসা সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের জীবন।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অনুভূতির ঢেউ

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!