"আকাশের অতিথি" একটি মজার এবং রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে ভিনগ্রহের অতিথিরা দুর্গাপূজার আবহে শান্তিপুরে নেমে আসে। বাংলা ছোট গল্পের অনন্য স্বাদ নিয়ে রচিত এই উপাখ্যান পাঠককে মুগ্ধ করবে।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » আকাশের অতিথি

আকাশের অতিথি

"আকাশের অতিথি" একটি মজার এবং রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে ভিনগ্রহের অতিথিরা দুর্গাপূজার আবহে শান্তিপুরে নেমে আসে। বাংলা ছোট গল্পের অনন্য স্বাদ নিয়ে রচিত এই উপাখ্যান পাঠককে মুগ্ধ করবে।

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা ভুতের ছোট গল্প, পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – ঝড়ের রাত

রচনা - সুরজিৎ রায়। গল্প পাঠে - স্মৃতি বিশ্বাস 

প্রথম অধ্যায়: অপ্রত্যাশিত অবতরণ এবং বিশৃঙ্খলা

বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

শান্তিপুরের দুর্গাপূজার উচ্ছ্বাস তখন তুঙ্গে। ঢাকের তালে, আলোয় ভরা আকাশে আকস্মিকভাবে এক অজানা ধাতব জাহাজ ভেসে ওঠে। জাহাজটি অদ্ভুত আকারের—একটি বিশাল কচ্ছপের খোলের মতো, যা স্বচ্ছ, অথচ এর ভেতরের প্রাণীগুলোর ছায়া দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয়রা প্রথমে এটিকে আলোর খেলা বা বড়সড় আতসবাজি বলে ভেবে ভুল করেছিল। কিন্তু হঠাৎ জাহাজ থেকে নির্গত একধরনের ম্যাটার-মোডুলেশন রশ্মি মন্ডপের প্রতিমার উপর পড়তেই, প্রতিমার মাটি স্বচ্ছ কাচে রূপান্তরিত হয় এবং টুকরো টুকরো হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।  

ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন জোরিপ এবং তার সঙ্গী জোলাক। তাদের শরীরের পৃষ্ঠে ছিল আয়নার মতো ঝকঝকে আবরণ, যা স্থানীয়দের নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখায়, তবে তাদের মুখমণ্ডলের স্থানগুলো বারবার অদ্ভুত আকার ধারণ করছিল—কখনো চোখ, কখনো পুরো মুখ, আবার কখনো একধরনের অজানা প্রতীক। এই প্রতীকগুলি দেখে উপস্থিত বিজ্ঞানী অনিমেষ চ্যাটার্জি মনে করেন এটি কোনো অজানা কোড বা বার্তা হতে পারে।  

জাহাজ থেকে বেরিয়ে আসা ছোট ছোট এলিয়েন বাচ্চাগুলো দেখতে সজারুর মতো, তবে তাদের প্রতিটি কাঁটায় ছিল নীলাভ আলো। তারা মাটির উপর নেমেই শান্তিপুরের মাটির রসায়ন বদলাতে শুরু করল। স্থানীয় গাছপালার রং ধীরে ধীরে নীলচে হয়ে উঠল, আর গাছের পাতা থেকে শোনা গেল একধরনের মৃদু গুঞ্জন—যেন গাছগুলো কথা বলছে।  

এদিকে, জোলাক নিজের একটি ছোট যন্ত্র বের করে স্থানীয়দের দিকে তাক করলেন। এটি কোনো অস্ত্র নয়, বরং একটি ডাইমেনশনাল অ্যানালাইজার, যা স্থানীয়দের মধ্যে কারা বহির্বিশ্বের জীবনের জন্য “সুবিধাজনক হোস্ট” হতে পারে তা শনাক্ত করে। এটি নিয়ে আরও রহস্য জমে উঠল, কারণ কিছু মানুষ হঠাৎ অদ্ভুতভাবে আলোতে ঝলমল করতে শুরু করল। তাদের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ল অজানা ভয় আর জল্পনা।  

শান্তিপুরের মন্ডপে তখন চারদিকে শুধু ধোঁয়া আর চিৎকার। দুর্গা প্রতিমার টুকরোগুলো মাটিতে ছড়িয়ে পড়েছে, আর স্থানীয়রা আতঙ্কে এদিক-সেদিক দৌড়াচ্ছে। এরই মধ্যে জোলাকের মুখ থেকে ভেসে এল এক কঠিন, রোবোটিক কণ্ঠস্বর, “সতর্ক থাকো, এই ধরণীর বুদ্ধিমান প্রজাতির প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের আক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়।” 

জোরিপ হস্তক্ষেপ করে বলে, “জোলাক, শান্ত হও। এরা আক্রমণাত্মক নয়, বরং এরা নিজেদের সংস্কৃতিকে উদযাপন করছে।” তার কণ্ঠস্বর ছিল শান্ত কিন্তু দৃঢ়। 

ততক্ষণে জাহাজ থেকে নির্গত একটি কসমিক স্ক্যানার স্থানীয় মন্ডপের চারপাশে একটি অদৃশ্য ঢাল তৈরি করেছে। ঢালটির মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসা প্রতিটি মানুষ ধীরে ধীরে অন্যরকম আচরণ করতে শুরু করে। কেউ কেউ মনে করতে থাকে তারা অন্য সময়ে আছে—একজন বলল, “আমি ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আছি।” আরেকজন চিৎকার করে বলল, “এটি কি কল্পনা? আমি ভবিষ্যতের শান্তিপুরকে দেখতে পাচ্ছি!”  

স্থানীয় বিজ্ঞানী অনিমেষ চ্যাটার্জি, যিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, চিৎকার করে বললেন, “তাদের যন্ত্রপাতি আমাদের মস্তিষ্কের নিউরোনাল প্যাটার্নকে বিকৃত করছে। আমরা সময় এবং বাস্তবতার সংযোগ হারাচ্ছি!”  

জোলাক জোরিপকে একটি ডিভাইস দেখিয়ে বলল, “এই পৃথিবীর লোকদের মস্তিষ্কের একটি বিশেষ কম্পাংক আমাদের প্রযুক্তির সঙ্গে হস্তক্ষেপ করছে। এটিই তাদের স্মৃতি ও সময় অনুভূতিতে প্রভাব ফেলছে।”  

জোরিপ হঠাৎ স্থানীয়দের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমাদের প্রযুক্তির এই ভুল আপনারা ক্ষমা করবেন। আমরা বুঝতে পারিনি আপনারা এত জটিল এবং সংবেদনশীল প্রাণী। আমরা অবিলম্বে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ করছি।” 

কিন্তু ততক্ষণে রহস্য আরও গভীর হয়। স্থানীয়দের মধ্যে কয়েকজনের শরীরে হঠাৎই সবুজাভ আলো জ্বলে ওঠে। জোলাক উদ্বেগ নিয়ে বলল, “এটা সম্ভব নয়! এটি আমাদের জিনগত ছড়িয়ে পড়ার প্রভাব।”  

জোরিপ হতবাক হয়ে বলল, “আমাদের উপস্থিতি এখানে একটি অপ্রত্যাশিত বিবর্তনের সূচনা করতে চলেছে। আমরা যা ভেবেছিলাম, এই পৃথিবী তার থেকেও বেশি জটিল।”

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - আষাঢ়ের সন্ধ্যে: "আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

দ্বিতীয় অধ্যায়: অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া এবং ভয়াবহ ফলাফল

বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

শান্তিপুরে নেমে আসে এক অভূতপূর্ব বিপর্যয়। জোলাকের তীব্র প্রতিরক্ষামূলক প্রবৃত্তি তাকে অর্গানিক লিকুইডেটর অরবিটালস (ওএলও) নামক বিধ্বংসী অস্ত্র সক্রিয় করতে বাধ্য করে। আকাশে আরও এক অদ্ভুত উজ্জ্বল আলো দেখা যায়, যা মুহূর্তের মধ্যে গঙ্গা নদীর দিকে ধাবিত হয়। নদীর জল হঠাৎই একটি গভীর সবুজ রঙে রূপান্তরিত হয়ে জ্বলজ্বল করতে শুরু করে। স্থানীয়রা ভীত হয়ে চিৎকার করে বলে উঠল, “এটি কি পৃথিবীর শেষ দিন? আমাদের পবিত্র গঙ্গা নদীকে কী করেছে ওরা?”  

জোরিপ সঙ্গে সঙ্গে জোলাকের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে বলল, “তুমি কি করেছ, জোলাক? আমি তোমাকে সাবধান করেছিলাম! এই অস্ত্রটি শুধুমাত্র প্রাণঘাতী পরিস্থিতিতে ব্যবহার করার জন্য। এটি আমাদের নৈতিক নীতির বিরোধী।” 

জোলাক মাথা নিচু করে বলল, “আমার অভিজ্ঞতা আমাকে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। কিন্তু এই পৃথিবীর প্রাণীরা আমাদের বিরোধিতা করবে, এমনটাই মনে হয়েছিল।”  

জোরিপ শান্তিপুরবাসীর দিকে মুখ করে ক্ষমা চেয়ে বলল, “আপনাদের জন্য এটি একটি বিরাট ক্ষতি। আমাদের সমাজে এমন প্রযুক্তি আছে যা রেডিয়েশন দূর করতে পারে। তবে এটি আপনাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”  

এদিকে নদীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিজ্ঞানী অনিমেষ চ্যাটার্জি আতঙ্কে এবং কৌতূহলে মগ্ন হয়ে নদীর পানিতে একটি যন্ত্র ডুবিয়ে পরীক্ষা করলেন। তিনি চমকে উঠলেন এবং বললেন, “এই রেডিয়েশন কেবলমাত্র পরিবেশকে নয়, মানবজীবনের জিনগত কোষগুলোতেও পরিবর্তন আনতে পারে। এটি একটি বিপর্যয়।” 

স্থানীয় একজন প্রবীণ পণ্ডিত উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “গঙ্গা আমাদের জন্য দেবীর রূপ। যদি এই সবুজ জলে কোনও পরিবর্তন আসে, তা আমাদের ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলবে।”  

জোরিপ ধীরে ধীরে একটি গোলাকার ডিভাইস বের করলেন এবং তা সক্রিয় করলেন। একটি নীলাভ আলো নদীর উপর দিয়ে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু নদীর রঙ পরিবর্তন হয়নি। জোরিপ বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল, “আমাদের প্রযুক্তি এই রেডিয়েশনের প্রভাব কমাতে পারে, তবে পুরোপুরি মুছে দিতে পারবে না। আপনারা এই সবুজ জলকে নতুনভাবে গ্রহণ করতে শিখবেন। এটি আপনাদের জন্য একটি নতুন অধ্যায়।”  

কিন্তু এর মধ্যেই আরেকটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। গঙ্গার পাশে থাকা কিছু গাছ হঠাৎ দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং তাদের পাতাগুলো এক অদ্ভুত সবুজ আভা ছড়াতে থাকে। অনিমেষ বিস্ময়ে বললেন, “এটি একটি নতুন বায়ো-ইভোলিউশন! নদীর রেডিয়েশন পরিবেশের প্রতিটি জীবকে পরিবর্তন করছে।”  

জোলাক হতভম্ব হয়ে জোরিপকে বলল, “এটা সম্ভব নয়! আমাদের অস্ত্র এমন কিছু করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি। এটি কি পৃথিবীর প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা?”  

জোরিপ উত্তরে বলল, “এই পৃথিবী গ্রহ আমাদের চেয়ে বেশি রহস্যময়। আমরা যা বুঝেছি, এটি তার চেয়ে অনেক বড়।” 

গঙ্গা নদীর জলের রঙ সবুজ হওয়ার পর থেকেই স্থানীয়রা লক্ষ্য করতে শুরু করেছিল, নদীর মাছগুলো অস্বাভাবিক আচরণ করছে। স্থানীয় জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে দেখতে পায়, কিছু মাছের শরীর থেকে ঝলমলে নীল আভা ছড়াচ্ছে। এমনকি কয়েকটি মাছের পাখনা যেন হালকা বিদ্যুৎ ঝলকানি সৃষ্টি করছে। কেউ কেউ দাবি করে, তারা মাছেদের মাথায় চোখের মতো অতিরিক্ত অঙ্গ দেখতে পেয়েছে। 

মন্দিরের কাছে বসে থাকা বৃদ্ধ রামশরণ মণ্ডল উদ্বিগ্ন মুখে বললেন, “এগুলো আর আমাদের গঙ্গার মাছ নেই। এগুলো কোনো অভিশাপের ফল!”  

জোলাক সেই সময় তার বহনযোগ্য প্রযুক্তি বায়ো-স্ক্যানার অটোমেটন চালু করল। যন্ত্রটি নদীর দিকে তাকাতেই সিগন্যাল বিকৃত হয়ে গেল এবং জোলাক হতচকিত হয়ে জোরিপের দিকে চিৎকার করে বলল, “এটা অসম্ভব! এই মাছগুলো দ্রুত বিবর্তিত হচ্ছে। তারা আমাদের জিনেটিক প্লাজমা লিকের সঙ্গে মিউটেট করছে।”  

জোরিপ স্থানীয়দের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করল, “আমাদের উপস্থিতির কারণে আপনারা পরিবেশগত পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন। তবে ভয় পাবেন না। এসব মাছ আপনাদের ক্ষতি করবে না। বরং এগুলো এখন পরিবেশের একটি নতুন অংশ হয়ে উঠেছে।” 

এদিকে, একজন কিশোর, নাম রোহিত, সাহস করে একটি ঝলমলে নীল মাছ ধরে আনে। মাছটি হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়, যেন কেউ দূর থেকে কথা বলছে। রোহিত আতঙ্কিত হয়ে বলল, “মাছটি কথা বলছে! এটি আমাকে বলল, ‘আমরা এখানে নতুন পৃথিবী তৈরি করতে এসেছি।’” 

জোলাক এবার নিজের আতঙ্ক লুকাতে পারল না। সে জোরিপের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমাদের প্রযুক্তির সাথে মিলে পৃথিবীর জীবজগত এখন এমন কিছু তৈরি করছে যা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হতে পারে। আমাদের দ্রুত সবকিছু নিষ্ক্রিয় করতে হবে।” 

জোরিপ তার কণ্ঠ শান্ত রেখে উত্তর দিল, “নিষ্ক্রিয় করা এখন আর সম্ভব নয়, জোলাক। আমরা এখানে যা করেছি, তা পৃথিবীর প্রাকৃতিক গতিপথে এক গভীর ছাপ ফেলেছে। আমাদের এখন এর ফলাফল গ্রহণ করতেই হবে।” 

এই ঘটনার পর থেকেই গঙ্গার আশেপাশের অঞ্চল অদ্ভুতভাবে বদলে যেতে থাকে, যা স্থানীয় মানুষকে আতঙ্ক এবং কৌতূহলে একসঙ্গে আবদ্ধ করে।

ছোটদের রূপকথার গল্প - শীতের রাজ্যের জাদু: শীতের রাজ্যের জাদু: একটি মজাদার ছোটদের গল্প, যেখানে রাজা শীতল রূপকথার গল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য শীতের রাজ্যে গরমের অনুভূতি এনে দেন। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

তৃতীয় অধ্যায়: এলিয়েন লার্ভার মর্মান্তিক ঘটনা

বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

জোরিপের কথায় শান্তিপুরের মানুষের মধ্যে এক অদ্ভুত সুনসান নীরবতা নেমে এলো। কারও শরীরে এলিয়েন লার্ভা ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা শুনে আতঙ্ক যেন তীব্র হয়ে উঠল। স্থানীয় ডাক্তার অরিন্দম দাস সাহস করে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলেন, “আপনারা কেমন করে নিশ্চিত হলেন যে মানুষের শরীরে লার্ভাগুলি জীবিত অবস্থায় আছে? এবং এগুলোর প্রভাব কী হতে পারে?”  

জোলাক একটি ছোট, উজ্জ্বল নীল ডিভাইস বের করল। সেটি জলের মতো তরল দিয়ে পূর্ণ, যা তার হাতের স্পর্শে একটি স্বচ্ছ, তিন-মাত্রিক হলোগ্রামে রূপান্তরিত হলো। হলোগ্রামের মধ্যে একটি মানবদেহের অবয়ব ভেসে উঠল, যার ভেতরে ছোট ছোট আলোক বিন্দু নড়াচড়া করছে। “এগুলো আমাদের লার্ভার ক্রমবর্ধমান অবস্থান দেখাচ্ছে। এরা বর্তমানে হোস্টের সাথে সহাবস্থান করছে, কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে তারা তাদের পূর্ণ আকার ধারণ করবে।”  

“এর মানে কী?” অরিন্দমের কণ্ঠে উত্তেজনা আর আতঙ্ক মিশে গেল।  

জোরিপ শান্ত গলায় উত্তর দিল, “আমাদের লার্ভাগুলি স্বাভাবিক অবস্থায় হোস্টের ক্ষতি করে না। তবে মানবদেহ এদের জন্য একেবারেই অপ্রাকৃতিক পরিবেশ। কিছু ক্ষেত্রে এই লার্ভাগুলি হোস্টের স্নায়ু ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত হয়ে যেতে পারে, যা হোস্টকে অদ্ভুত অনুভূতি বা বিভ্রম তৈরি করতে বাধ্য করে। তবে ভয় পাবেন না, কয়েক দিনের মধ্যেই এরা হোস্ট ছেড়ে নিজেদের স্বতন্ত্র জীবন শুরু করবে।”  

ডিভাইসটির মাধ্যমে জোলাক আরও একটি স্ক্যান চালিয়ে বলল, “দেখুন, লার্ভাগুলি ইতিমধ্যেই কয়েকজন মানুষের মধ্যে বিশেষ প্রভাব তৈরি করেছে। তাদের চিন্তাধারা পরিবর্তিত হচ্ছে, তারা বিভিন্ন ভাষা বোঝা শুরু করেছে। এমনকি তাদের মস্তিষ্কে নতুন জ্ঞান জমা হচ্ছে, যা মানবজাতির পক্ষে আশীর্বাদ হতে পারে।”  

কিন্তু জোরিপের কণ্ঠ বিষণ্ণ হয়ে গেল। সে বলল, “আমাদের প্রজাতির এই প্রক্রিয়াটি অনেক ক্ষেত্রে হোস্টের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। আমরা চাইনি এই ঘটনা ঘটুক। এটি একটি দুর্ঘটনা। আমরা বুঝতে পারি, এর জন্য আমাদের বড় মূল্য দিতে হবে।”  

স্থানীয় মানুষজন বিভ্রান্ত এবং ভীত। কেউ কেউ নিজেদের শরীরে লার্ভার অস্তিত্ব পরীক্ষা করার জন্য জোলাকের ডিভাইস ব্যবহার করতে চায়। অন্যদিকে, কিছু মানুষ ইতিমধ্যে অনুভব করতে শুরু করেছে, তাদের মনের মধ্যে নতুন শক্তি এবং জ্ঞানের সঞ্চার ঘটছে।  

এই অবস্থায়, রামশরণ মণ্ডল বয়স্ক কণ্ঠে বললেন, “তোমরা হয়তো আমাদের ধ্বংস করতে আসোনি, কিন্তু তোমাদের উপস্থিতি আমাদের জীবনে চিরস্থায়ী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আমরা এখন এই পরিবর্তনের সাথে কীভাবে মানিয়ে নেব, সেটাই দেখার বিষয়।”

শান্তিপুরে উত্তেজনার আবহ যেন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। স্থানীয় মানুষের মুখে ক্ষোভের ছায়া স্পষ্ট, কিন্তু এক অদ্ভুত কৌতূহলও দেখা যাচ্ছে। কিছু মানুষ ঘটনাগুলোকে হাসি-তামাশার বিষয় বানিয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগই ভয়ে আর হতাশায় বাকরুদ্ধ।  

এক বৃদ্ধা, কনকলতা দেবী, যিনি সদ্য নিজের শরীরে এক অদ্ভুত কম্পন অনুভব করেছিলেন, বললেন, “দেখো, এরা আসলেই খারাপ নয়। আমার মনে হয় এরা আমাদের জীবন নিয়ে খেলা করতে আসেনি। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে, আমি জীবনে এমন কিছু কখনো দেখিনি।”  

জোরিপ এবার মাইক্রোফোনের মতো দেখতে একটি ডিভাইস হাতে নিয়ে বলল, “মানুষের এই প্রতিক্রিয়া আমাদের কাছে নতুন নয়। আমরা জানি, আমাদের উপস্থিতি তোমাদের সমাজে অশান্তি এনেছে। কিন্তু আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমাদের লার্ভাগুলি তোমাদের দেহ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কোনো ক্ষতি হবে না। বরং তারা তোমাদের মধ্যে এমন কিছু পরিবর্তন রেখে যাবে যা তোমাদের উন্নতিতে সাহায্য করবে।”  

কথাটা শেষ করার পরেই, শান্তিপুরের আকাশে একটি অদ্ভুত রঙিন আলোর ঝলকানি দেখা দিল। জোলাক ব্যস্তভাবে তার ডিভাইসটি স্ক্যান করতে শুরু করল। “জোরিপ, আমরা বিপদে পড়তে যাচ্ছি। এই এলাকায় আরেকটি শক্তি সক্রিয় হচ্ছে, যা আমাদের লার্ভাগুলির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।”  

জোরিপ এবার সতর্ক দৃষ্টিতে চারপাশ দেখল। “কী শক্তি? এটি কি মানুষের সৃষ্টি, নাকি আরও বড় কিছু?”  

জোলাক ডিভাইসের স্ক্রিনে জটিল গাণিতিক সমীকরণ দেখিয়ে বলল, “আমার ধারণা, এটি তোমাদেরই জায়গার কোনও প্রাচীন শক্তি। সম্ভবত এমন কিছু যা এই পৃথিবীর অনেক আগে থেকেই সক্রিয় ছিল। আমাদের লার্ভাগুলি এই শক্তির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে এবং তাদের আচরণ পরিবর্তিত হচ্ছে।”  

এদিকে, স্থানীয়দের শরীরে থাকা লার্ভাগুলির আচরণ সত্যিই অদ্ভুত হয়ে উঠল। তারা হঠাৎ নিজেদের হোস্টদের শরীর থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করল। কেউ কারো হাতে, কারো কাঁধে, কারো পায়ে এসে বসে রইল। কিন্তু এর চেয়ে অদ্ভুত ছিল তাদের আচরণ। প্রতিটি লার্ভা যেন কোনো সংকেত গ্রহণ করছিল।  

“দেখুন! ওরা একত্রিত হচ্ছে!” একজন স্থানীয় চিৎকার করে উঠল।  

সব লার্ভা একত্রিত হয়ে মাটিতে বসে একটি জ্যামিতিক আকার তৈরি করল। সেই আকার থেকে বেরিয়ে আসতে লাগল একধরনের কম্পন, যা শুধু অনুভব করা যাচ্ছিল, শোনা যাচ্ছিল না।  

জোলাক উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, “আমাদের তৎক্ষণাৎ এখান থেকে চলে যেতে হবে। এই শক্তি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এটি হয়তো আমাদের জন্যও বিপজ্জনক।”  

জোরিপ মানুষের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমরা জানি, আমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে। কিন্তু তোমাদের জন্য একটি বার্তা রেখে যেতে চাই। এই শক্তি, যা তোমাদের মাটিতে গভীরে লুকিয়ে আছে, তা তোমাদের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে, আবার অভিশাপও হতে পারে। আমাদের প্রযুক্তি এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তবে তোমরা যদি এটি বুঝতে পারো, তবে এটি তোমাদের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে।”  

সেই মুহূর্তে সমস্ত লার্ভা ধীরে ধীরে মাটি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল এবং সেখানে একধরনের আলো জ্বলে উঠল। আকাশের ঝলকানিও ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

“আমাদের বিদায় নিতে হবে। তোমাদের এই অভিজ্ঞতা, তোমাদের জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। আমরা ক্ষমাপ্রার্থী এবং কৃতজ্ঞ। তোমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখলাম।”  

এলিয়েনদের জাহাজ থেকে একটি সাদা আলোর রশ্মি বেরিয়ে এল। জোরিপ এবং জোলাক ধীরে ধীরে সেই আলোয় অদৃশ্য হয়ে গেল। শান্তিপুরের মানুষজন হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।  

আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল। নদীর জল সবুজ রঙে জ্বলজ্বল করছে। আর মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা শক্তি এক অজানা রহস্যের ইঙ্গিত দিল। শান্তিপুরের রাত আরও গভীর হলো, কিন্তু মানুষের মনে রয়ে গেল অসংখ্য প্রশ্ন আর এক নতুন ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।

অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - স্নেহের আশ্রয়: "স্নেহের আশ্রয়" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে ভালোবাসা ও যত্নের শক্তি দুটি বিপন্ন শিশুর জীবন বদলে দেয়। এটি অতীতের স্মৃতি ও মানবতার এক হৃদয়স্পর্শী উপাখ্যান। সম্পুর্ন বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

চতুর্থ অধ্যায়: সংস্কৃতির সংঘর্ষ এবং বিনিময়

বাংলা কল্পবিজ্ঞানের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

জোরিপ এবং জোলাকের কথাগুলি শান্তিপুরের মানুষের মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। যদিও ভয় এবং ক্ষোভ এখনও পুরোপুরি মিটেনি, তবু তাদের মধ্যে কৌতূহল আর গর্বের অনুভূতিও কাজ করছিল। স্থানীয় লোকেরা অবাক হয়ে দেখছিল, কীভাবে এই দূরগামী গ্রহের এলিয়েনরা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি এত মুগ্ধ হয়ে পড়েছে।  

জোরিপ এগিয়ে এসে শান্তিপুরের এক প্রবীণ পুরোহিত মদন মহারাজের দিকে মাথা নত করল। “আপনারা আপনারা যে ঢাকের শব্দে, প্রতিমার গড়নে আর মাটির আলোয় আপনার সংস্কৃতিকে জীবন্ত রাখেন, তা আমাদের কাছে এক অনুপ্রেরণা। আমাদের সন্তানরা আজ শিখেছে কীভাবে নিজেদের শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হয়।”  

জোলাক একটু সংকোচের সঙ্গে বলল, “তবে আমাদের সন্তানদের শিক্ষা এখানেই শেষ নয়। আমরা বুঝতে পেরেছি, আপনারা শুধু ঐতিহ্য নয়, প্রকৃতির সঙ্গেও গভীর সম্পর্ক রাখেন। গঙ্গার এই অদ্ভুত সবুজ রং আমাদের প্রযুক্তির কারণে হলেও এটি যেন আরও গভীর কোনো রহস্য বহন করছে। এই জল শুধু রঙ বদলায়নি, এটি নিজের মধ্যেও পরিবর্তন এনেছে।”  

এদিকে, নদীর জল থেকে একটি মৃদু শিসের মতো শব্দ উঠতে লাগল। স্থানীয় বাসিন্দারা চমকে গেলেন। নদীর উপরে যেন একধরনের আলোর ঢেউ খেলা করছে। মদন মহারাজ চোখ বন্ধ করে জপ করতে লাগলেন, “এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ, অথবা তাদের ক্রোধ। আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা করতে তারা নিজেদের শক্তি প্রকাশ করছে।”  

জোলাক তার ডিভাইসে কিছু হিসাব নিকাশ করে বলল, “না, এটি কিছু প্রাচীন শক্তি। তবে এটি কোনও সাধারণ শক্তি নয়। এটি জীবন্ত এবং সম্ভবত আপনাদেরই পূর্বপুরুষদের তৈরি।”  

“তাহলে আমাদের কী করতে হবে?” একজন স্থানীয় যুবক, নাম গৌতম, জিজ্ঞেস করল।  

জোরিপ উত্তর দিল, “তোমাদের কিছু করতে হবে না। এই শক্তি তোমাদেরই। এটি তোমাদের পূর্বপুরুষদের তৈরি একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা, যা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের আগমনের কারণে এটি সক্রিয় হয়ে গেছে।”  

এদিকে, নদীর জল থেকে একধরনের আলোকরশ্মি আকাশের দিকে উঠতে শুরু করল। সেই আলো যেন কোনও সংকেত দিচ্ছে। জোলাক উদ্বেগ নিয়ে বলল, “আমাদের যেতে হবে। এই শক্তি এখন পুরোপুরি জেগে উঠেছে। এটি আমাদের জন্য বিপদজনক। তবে তোমাদের জন্য এটি হতে পারে এক নতুন যুগের সূচনা।”  

জোরিপ মাথা নত করে বলল, “আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আমাদের সন্তানরা এখানে এসে অনেক কিছু শিখেছে। আমরা যখন ফিরে যাব, তখন এই শিক্ষা আমাদের সমাজে ছড়িয়ে দেব।”  

তারা তাদের জাহাজের দিকে ফিরে গেল। স্থানীয় লোকেরা ভয়ে আর বিস্ময়ে স্থির হয়ে রইল। জাহাজটি ধীরে ধীরে আকাশে উঠে গেল। কিন্তু যাওয়ার সময় জাহাজ থেকে একটি ছোট ডিভাইস নদীর ধারে ফেলে গেল।  

গৌতম ডিভাইসটির দিকে এগিয়ে গেল। সেটি একধরনের গোলাকার বস্তু, যার ভেতরে ঘুরছে এক অদ্ভুত আলোর বৃত্ত। মদন মহারাজ জপ বন্ধ করে বলল, “এটি হয়তো আমাদের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। কিন্তু এটি আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করতে হবে।”

এলিয়েনরা চলে যাওয়ার পরেও শান্তিপুরের আকাশে কিছুক্ষণ রঙিন আলো খেলা করে গেল। নদীর জল ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গেল, কিন্তু তার সবুজ রং থেকে একধরনের জ্যোতি যেন মুছে যায়নি।

শান্তিপুর আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেও এই ঘটনা মানুষের মনে গভীর এক রহস্যের দাগ কেটে গেল। তারা জানত, এই রহস্য শুধু তাদের নয়, তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও এক অমূল্য উপহার।

শান্তিপুরের আকাশে এলিয়েনদের জাহাজের শেষ আলোর ঝলকানি মিলিয়ে যেতে না যেতেই, গ্রামবাসীরা বিস্ময়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ভাঙা দুর্গা প্রতিমার কাঁচের টুকরোগুলি আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রতিমার ধ্বংসাবশেষ যেন পুরো ঘটনার এক নীরব সাক্ষী। কিন্তু তারপর ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা।  

কাঁচের টুকরোগুলোর উপর একধরনের নীলাভ আলো খেলা করতে থাকে। সেটি যেন এলিয়েনদের রেখে যাওয়া সেই গোলাকার ডিভাইস থেকে উদ্ভাসিত হচ্ছিল। মদন মহারাজ ধীর পায়ে এগিয়ে যান এবং ডিভাইসটির দিকে তাকিয়ে জপ করতে শুরু করেন। ডিভাইস থেকে ভেসে আসা আলোর স্পন্দন যেন তার মন্ত্রের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে।  

এমন সময় হঠাৎ ডিভাইস থেকে একটি স্বচ্ছ, থ্রিডি হোলোগ্রাফিক ছবি ভেসে ওঠে। তাতে দেখা যায় জোরিপ এবং জোলাক। জোরিপ তার শান্ত কণ্ঠে বলে, “আমাদের দায়িত্ব ছিল ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষতিপূরণ করা। আমরা জানি, আপনাদের কাছে এই দুর্গা প্রতিমা শুধু মাটির মূর্তি নয়, এটি আপনাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতীক। আমরা সেই ভাঙা কাঁচের টুকরো থেকে নতুন কিছু তৈরি করার চেষ্টা করেছি। এটি হয়তো যথেষ্ট নয়, কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে বন্ধুত্বের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস।” 

গ্রামবাসীদের বিস্ময়ের শেষ নেই। ডিভাইসের আলোর স্পন্দন ধীরে ধীরে কাঁচের টুকরোগুলিকে একত্রিত করতে শুরু করে। প্রতিটি টুকরো যেন কোনও অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে নিজের অবস্থান খুঁজে নিচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি নতুন দুর্গা প্রতিমার অবয়ব তৈরি হয়। তবে এটি সাধারণ প্রতিমার মতো নয়। এর পৃষ্ঠে একধরনের স্বচ্ছ গ্লাসের মতো আবরণ রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে প্রতিমার অন্তর্গত প্রতিটি রঙ এবং বিন্যাস আলোর ঝলকানির মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।  

জোলাকের কণ্ঠ ভেসে আসে, “এই প্রতিমাটি শুধু এক শিল্পকর্ম নয়। এটি এমন উপাদানে তৈরি, যা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হবে। পূজার শেষ দিনে এটি ধীরে ধীরে পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাবে, কোনও দূষণ ছাড়াই। আমরা বিশ্বাস করি, এটি প্রকৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা প্রকাশ করবে।” 

গ্রামবাসীরা প্রতিমাটির দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে যায়। মদন মহারাজ হাত জোড় করে বলেন, “আপনারা হয়তো আমাদের সংস্কৃতি পুরোপুরি বুঝতে পারেননি, কিন্তু আপনারা যে চেষ্টা করেছেন, তা আমাদের জন্য অনেক বড় কথা। এই প্রতিমা আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রযুক্তির এক অদ্ভুত মেলবন্ধনের প্রতীক হয়ে থাকবে।”

এদিকে, ছোটো শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই নতুন প্রতিমাকে ঘিরে আনন্দে মেতে ওঠে। কেউ কেউ বলে উঠল, “এটি হয়তো মা দুর্গারই আশীর্বাদ। তিনি নিজেই আমাদের রক্ষা করেছেন এবং এই নতুন রূপে ফিরে এসেছেন।” 

জোরিপ শেষবারের মতো বলে, “আমরা ফিরে গিয়ে আমাদের প্রজাতিকে বলব, কীভাবে সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তি একসঙ্গে মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পারে। আপনারা আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছেন, তা আমরা কখনোই ভুলব না। আমাদের সন্তানরা এখানে এসে যা শিখেছে, তা আমাদের সভ্যতার জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।”  

ডিভাইসটি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রতিমাটি এক উজ্জ্বল আলোয় জ্বলে ওঠে। সেই আলো শান্তিপুরের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ে, যেন এক নতুন সূচনা ঘোষণা করে।  

গ্রামবাসীরা প্রতিমার সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করতে থাকে। এই প্রতিমা তাদের কাছে কেবল দুর্গা মা-র নতুন রূপ নয়, এটি এক নতুন বন্ধুত্ব, এক নতুন অধ্যায়ের প্রতীক। শান্তিপুর যেন এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এক নতুন ইতিহাস তৈরি করে, যা স্থানীয় লোকগাথায় চিরকাল বেঁচে থাকবে।


এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

রক্ষক

রহস্য, রোমাঞ্চ ও দেব-দানবের যুদ্ধ নিয়ে লেখা "রক্ষক" এক অনবদ্য বাংলা ছোট গল্প। রাক্ষসের অভিশাপ, দেবীশক্তি ও মানবতার রক্ষার গল্প আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এক মহাকাব্যিক জগতে!

রহস্য, রোমাঞ্চ ও দেব-দানবের যুদ্ধ নিয়ে লেখা "রক্ষক" এক অনবদ্য বাংলা ছোট গল্প। রাক্ষসের অভিশাপ, দেবীশক্তি ও মানবতার রক্ষার গল্প আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এক মহাকাব্যিক জগতে!

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: রক্ষক

আকাশের অতিথি

"আকাশের অতিথি" একটি মজার এবং রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে ভিনগ্রহের অতিথিরা দুর্গাপূজার আবহে শান্তিপুরে নেমে আসে। বাংলা ছোট গল্পের অনন্য স্বাদ নিয়ে রচিত এই উপাখ্যান পাঠককে মুগ্ধ করবে।

"আকাশের অতিথি" একটি মজার এবং রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে ভিনগ্রহের অতিথিরা দুর্গাপূজার আবহে শান্তিপুরে নেমে আসে। বাংলা ছোট গল্পের অনন্য স্বাদ নিয়ে রচিত এই উপাখ্যান পাঠককে মুগ্ধ করবে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আকাশের অতিথি

আষাঢ়ের সন্ধ্যে

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

"আষাঢ়ের সন্ধ্যে" - রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প যেখানে ১০ বছর পর বর্ষার সন্ধ্যায় রাহুল আর মোনালিসা-র পুনর্মিলন ঘটে। বৃষ্টিভেজা আবেগের মাঝে তাদের ভালোবাসার গল্প নতুন মোড় নেয়।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: আষাঢ়ের সন্ধ্যে

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!