বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
কলকাতার সল্টলেক এলাকা। শীতের এক সন্ধ্যায় অনন্যা আর জয় একটা নামকরা ক্লাবের পাশে লেকের ধারে হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটছিল। অনন্যা ক্রিমিনাল সাইকোলজি নিয়ে রিসার্চ করছিল। জয় একটা কোম্পানিতে কাজ করতো। ওরা একে অপরকে খুব ভালোবাসত। নিজেদের মধ্যে কোনো কথা না বলে চুপচাপ হাঁটছিল। লেকের ধারে রাতের নিস্তব্ধতায় শুধু তাদের নিজেদের শ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল। সোনালি রঙের পাতাগুলি অচেনা হাওয়ায় অস্থিরভাবে নড়ছিল, আর নক্ষত্রগুলো আকাশে তাদের জ্বলজ্বলে দীপ্তি ছড়িয়ে দিচ্ছিল। একটা মৃদু বাতাস এসে অনন্যার চুলগুলোকে ছড়িয়ে দিয়েছিল। জয় তার পাশে হাঁটছিল, তার মুখের একদিকে আলাদা ধরনের চিন্তা। ওরা হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এসেছিল। জয় বলল, “এইভাবে ফাঁকা জায়গায় এতদূর চলে আসা ঠিক নয়, অনন্যা। ফিরে চল, সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে,” তার চোখের ভাষা ছিল স্পষ্ট—এক ধরনের অজানা ভয়।
অনন্যা হাসল, “জয়, তুমি কি ভয় পাচ্ছো?” জয়কে একটু হালকা করে তোলার জন্য, সে চোখের পলকে জয়ের দিকে তাকাল। রাতের গভীরতা তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছিল, যেন অন্ধকারের এক অংশ সে নিজেই। অনন্যা দাঁড়িয়ে পড়লো। সে জয়ের মুখখানা নিজের মুখের কাছে টেনে নিয়ে ওর ঠোঁটে একটা কিস করলো। ওরা দুজনে এইভাবে লেকের ধারে একে অপরকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিস করতে লাগলো; তারা নিজেরাই জানতো না এটা তাদের শেষ মিলন।
দূরে ক্লাবে ওদের পার্টি চলছিল। কিছুক্ষণ পর জয় ও অনন্যা পার্টিতে ফিরে এলো। পার্টি রাত ১২ টা পর্যন্ত চলছিল। পার্টি শেষ করে ক্লাব থেকে সবাই বাড়ি ফিরে গেল। অনন্যাকে নিয়ে জয় পার্টি থেকে বাইকে উঠে বেরিয়ে গেল। জয়ের সাথে অনন্যাকে সবাই সেই শেষ দেখেছিল। তবে অনন্যার বন্ধুরা কল্পনাও করতে পারেনি যে, সেই রাতে অনন্যার শেষ দেখা হবে।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - স্বপ্নের সাথী: "স্বপ্নের সাথী" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে প্রেমের জটিলতা, বিচ্ছেদ ও পুনর্মিলন খুঁজে পাওয়া যায়। হৃদয়স্পর্শী সম্পর্কের গভীরতা ও নতুন সূচনার গল্প। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
আবিষ্কার
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সকাল বেলা সূর্য আকাশকে সোনালী এবং কমলা রঙে রাঙাচ্ছিল, কিন্তু শান্ত লেকের উপর একটি অন্ধকার মেঘ ঝুলছিল। প্রকৃতির এই অদ্ভুত পরিবেশে, এক মৎস্যজীবী তার নৌকায় বসে মাছ ধরছিল। হঠাৎ, তার চোখে পড়ল কিছু অস্বাভাবিক। লেকের কিনারার দিকে, জলজ লতাপাতায় জড়িয়ে থাকা অস্বাভাবিক কিছু। তার মুখে বিস্ময়ের রেখা ছড়িয়ে পড়ল, সে একটু কাছে গিয়ে যা দেখলো তাতে তার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। সে চিৎকার করতে লাগল, “এখানে একটা ডেডবডি পড়ে আছে। সবাই এদিকে এসো।” ওর চিৎকার শুনে বাকি যারা ওই লেকে মাছ ধরছিল তারা ওখানে চলে এলো। মৎস্যজীবীদের চিৎকার শুনে স্থানীয় কিছু লোক লেকের কাছে এল। ডেডবডিটি একজন তরুণীর। তবে ডেডবডি দেখে মনে হচ্ছে ৬-৭ ঘন্টা আগে এখানে ফেলা হয়েছে। ওই ভিড়ের মাঝে একজন পুলিশকে ফোন করল। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাল।
ঘটনাটি দ্রুত শহরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। কলকাতা শহরের বাতাসে শোকের ছায়া পড়ল। মানুষের ভিড় লেকের কাছে এসে জড়ো হয়ে গিয়েছিল, ঘটনাস্থলের দিকে তাকিয়ে। পুলিশের অফিসার চন্দন মণ্ডল, যিনি এই এলাকায় অনেকদিন ধরে কর্মরত ছিলেন, তিনি মৃতদেহ টি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিল। পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত শুরু করল। এলাকা থেকে ভিড় সরিয়ে দিয়ে অফিসার চন্দন মণ্ডল ২ জন কনস্টবল কে নিয়ে এরিয়াটি পর্যবেক্ষণ শুরু করতে লাগলো। তার কিছুক্ষণের পর ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের অফিসাররা ঘটনাস্থলে পৌছালো।
ফরেনসিক অফিসার ও পুলিশ কিছুক্ষনের মধ্যে লেকের একটু দূরে ঝোপের আড়ালে একটা লেডিস পার্স পায়। ওর মধ্যে একটা আধার কার্ড, একটা প্যান কার্ড, ২ টা ক্রেডিট কার্ড, ১ টা ডেবিট কার্ড, কিছু মেকাপের সামগ্রী ও একটা মোবাইল ফোন পায়। মোবাইল ফোনটি সুইচ অন ছিল। ফরেনসিক টিমে একজন টেকনোলজি এক্সপার্ট ছিল সে মোবিলিটি আনলক করে দেখে ওতে ১৫-২০ টা মিস কল। বেশিরভাগ মিসেড কল “বাবা” ও “মা” নাম সেভ করা ছিল। আইডি দেখে পুলিশ ও ফরেনসিক টিম বুঝতে পারে। এগুলো ওই মৃতদেহের এবং ওর নাম অনন্যা মুখার্জী, বাড়ি পুরুলিয়ায়। অনন্যার মোবাইল থেকে নম্বর নিয়ে একজন কনস্টবল অনন্যার বাবাকে ফোন করে ওর মেয়ের ব্যাপারে জানাল।
সন্ধ্যের দিকে অনন্যার পরিবার সল্টলেক থানায় পোঁছাল। জয় ও তার একজন বন্ধু থানায় বসে ছিল। গভীর দুঃখ্যে সে নিঃচুপ হয়ে গিয়েছিল। তার পরিবারের লোকজন প্রায় পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল। মা-বাবার চোখে অশ্রুর স্রোত ছিল, ভাইয়ের মুখে বিমূঢ়তা আর শোকের ছাপ। ততক্ষনে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চলে এসেছে। প্রাথমিক রিপোর্ট ও তদন্তে বোঝা গেল এটা একটা হত্যাকাণ্ড। পুলিশ অফিসিয়াল অনন্যার ডেডবডি ওর পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে ঘটনার তদন্তের পারে স্টেপএর প্রস্তুতি নিল। কারন পুলিশ কর্মকর্তারা জানত, এই ঘটনা আরও গভীর। অনন্যার মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি বড় রহস্যের সূচনা। তার মৃত্যু এমন এক স্থান থেকে ঘটেছিল যেখানে অনেকেই যেতে সাহস করত না। এটা নিশ্চিত ছিল যে, এই ঘটনার পিছনে কিছু অস্বাভাবিক ব্যাপার লুকানো ছিল। পুলিশের তদন্তের একেবারে প্রথম দিকেই সেই প্রশ্নই উঠেছিল, “কারা ছিল ওই রাতের সাক্ষী, আর কী সত্যিই ঘটেছিল?”
তদন্ত
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
কলকাতা লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের অভিজ্ঞ তদন্তকারী অরিজিৎ রায় এই মামলার দায়িত্ব নেন। ঘটনাস্হলটি আগে থেকেই পুলিশের দ্বারা গিরে ফেলা হয়েছিল। মি: রায় ঘটনাস্থলে গেলেন। তিনি একাগ্রচিত্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, মৃতদেহের অবস্থান, তার আশেপাশের জলজ লতাপাতা, এবং রাতের অন্ধকারে ঘটে যাওয়া ঘটনার পেছনের চিত্রগুলো একে একে সজ্জিত করতে শুরু করল। অনন্যার শেষ রাতের মোবাইলের কল রেকর্ড গুলি পরীক্ষা করতে লাগলেন এবং সেগুলোকে যুক্ত করতে লাগলেন মৃত্যু রহস্য সমাধান করার জন্য।
তদন্তের প্রথম ধাপে, অনন্যার প্রেমিক জয়, যে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে আসে। অরিজিৎ রায় জয়কে ক্যাস্টিডিতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। প্রথম কয়েকটা প্রশ্নের পর জয়ের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ, কথা বলার ধরন সন্দেহজনক মনে হয়। জয়কে সেদিন রাতে পার্টির শেষে কি হয়েছিল জিজ্ঞেস করার পর জয় বলতে শুরু করে, “আমরা যখন পার্টি শেষ করে বাইকে উঠলাম তখন অনন্যা আমাকে আবার একবার লেকের ধারে ঘুরতে যাওয়ার জন্য জোর করে। আমি বারণ করলে সে রেগে যায়। তারপর সে পুরো রাস্তা আমার সাথে কথা বলেনি। আমি আর কোনো কথা না বলে ওকে ওর ফ্ল্যাটের নিচে ছেড়ে দিয়ে আসি। তারপর বাড়ি এসে ঘুমিয়ে যাই। খুব কাল্ন্ত ছিলাম বলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি। তারপর সকালে এই দুর্ঘটনার খবর পাই।” কথাটা শেষ করে জয় কাঁদতে শুরু করল।
জয়ের সাথে কথা বলে জানতে পারে জয়ের একজন জমজ ভাই আছে তার নাম বিজয়। বিজয় সন্দেহের আওতায় আসে। সেদিনকার মত জয়কে ছেড়ে দেয় এবং তাকে শহরেই থাকতে বলে। তদন্তের জন্য অরিজিৎ জয়ের কাছে থেকে তার মোবাইল টা নিয়ে নেয়, জয়কে জানায় পরের দিন এসে তার কাছে থেকে মোবাইলটা নিয়ে যেতে। জয়ের মোবাইলটা অরিজিৎ ফরেনসিক ল্যাবে পাঠায়। পরের দিন যখন জয় তার মোবাইল নিতে এলো তখন অরিজিৎ জয়ের ভাইকে থানায় আসার জন্য বলে, আর জয়ের মোবাইলটা দিয়ে দেয়।
২ দিন পরে বিজয়ের সঙ্গে তদন্তের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। বিজয় পুরো জয়ের মত দেখতে ছিল। অরিজিৎ প্রথমে বিজয়কে দেখতে অবাক হয়ে গিয়েছিল। বিজয় একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা সঞ্জয় বিশ্বাসের কাছে কাজ করতো। অরিজিৎ বিজয়কে জিজ্ঞেস করল, “তুমি অনন্যাকে চিনতে?” বিজয় বলল, “হ্যা!” অরিজিৎ বলল, “সম্প্রতি জয়ের সাথে অনন্যার কোনো ঝগড়া হয়েছিল?” বিজয় বলল, “এমনি সেই রকম কোনো ঝগড়া হয়েছে বলে আমি জানি না। তবে সেদিন পার্টির রাতে দাদা যখন বাড়ি ফিরেছিল তখন বলছিল, সে অনন্যাকে রাতে লেকের ধারে ঘোরাতে নিয়ে যায়নি বলে রেগে আছে। দাদার একটু নেশা হয়েগিয়েছিল। আমি আর সেদিন রাতে দাদাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। দাদা এতটাই ক্লান্ত ছিল ঘুমোনোর আগে বেডরুমের দরজা লাগাতে ভুলে গিয়েছিল। নিজের মোবাইলটা ও বাইরে টেবিলের ওপর রেখে দিয়েছিল।” অরিজিৎ আর কোন প্রশ্ন না করে সেদিনকার মত বিজয়কে ছেড়ে দিল।
জটিল জাল
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
তদন্তটি দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছিল। অরিজিৎ রায় ও তার টিম জয়ের বাড়ির আসে পাশের সব সি সি টিভির লাস্ট ২-৩ মাসের ফুটেজ সংগ্রহ করতে থাকে। এদিকে পুলিশ অফিসার চন্দন মন্ডল অনন্যার বিল্ডিং এর সি সি টিভির লাস্ট ২-৩ মাসের ফুটেজ সংগ্রহ করে। ততদিনে ফরেনসিক ল্যাব থেকে জয়ের মোবাইল এর রিপোর্ট ও হাতে পায় অরিজিৎ। অরিজিৎ তার কেবিনে বসে জয়ের মোবাইল এর কল রিপোর্ট দেখে অবাক হয়ে যায়। সেদিন রাতে ১:৩০ এর দিকে জয়ের মোবাইল থেকে অনন্যাকে একটা ফোন করা হয়েছিল। সেই কলের ২৫ মিনিট পর আরেকবার কল করা হয়। প্রথম কলটা ছিল ১০ মিনিটের, দ্বিতীয় কলটি ছিল ৪৫ সেকেন্ডের মত। সেদিন তদন্ত রুমে সবাইকে যেটা অবাক করে সেটা হল সেদিনকার রাতের সি সি টিভি ফুটেজ।
জয়ের বাড়ির সামনের সি সি টিভি ফুটেজে দেখা যায় সেদিন রাত ১ টার নাগাদ জয় বাইক নিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢোকে কিন্তু ১:৩৫ এর নাগাদ জয় বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে যায়। তবে জয় ঢোকার সময় যে জামা প্যান্ট পড়েছিল বেরোনোর সময় সেটা পরে নি। এরপর অনন্যার ফ্ল্যাটের ফুটেজ চালানো হয়। যেখানে সবাই দেখতে পায়, রাত ১২:৪৫ এর দিকে অনন্যা জয়ের বাইক থেকে নেমে সোজা ফ্ল্যাটের মধ্যে চলে যায়। অনন্যা ফ্ল্যাটের ভেতরে যাওয়া পর্যন্ত্য জয় বাইক নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। অনন্যা ফ্ল্যাটে ঢোকার পর সে ওখান থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ২ টার দিকে জয় আবার অনন্যার ফ্ল্যাটের নিচে আসে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে একটা কল করে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে অনন্যা নিচে আসে। অনন্যা নিচে এসে জয়কে জড়িয়ে ধরে। তারপর জয় অনন্যাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
ভিডিওটি বন্ধ করে অরিজিৎ এবার সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “তোমাদের কি মনে হয়? জয় মার্ডারটা করেছে?” ওদের মধ্যে একজন বলে উঠলো, “হ্যা স্যার, এতো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমাদের এক্ষুনি জয়কে এরেস্ট করা উচিত।” অরিজিৎ একটু মুচকি হেঁসে বলল, “ভিডিওতে যেটা দেখা যাচ্ছে, সেটা আসলে আমাদের দেখানো হচ্ছে। তদন্তকে অন্যদিকে ঘোরানো হচ্ছে। আপনারা একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন কিনা জানি না। আমি লক্ষ্য করেছি, জয় যখন প্রথমবার অনন্যাকে ছেড়ে বাইরে দাঁড়িয়েছিল তখন সে বার বার বাইকে বসে নিজেকে ব্যালান্স করার চেষ্টা করছিল। মানে সে একটু নেশাগ্রস্ত ছিল। কিন্তু পরে যখন ফিরে আসে তখন সে স্বাভাবিক ছিল। মদ খেয়ে বাইক চালালে, শরীরে বাতাস লাগলে মানুষের নেশা বাড়তে থাকে। এখানে উল্টো। আমার যতদূর মনে হয় এটা বিজয়ের কাজ। “
অরিজিৎ একটা সিগারেট ধরিয়ে আবার বলতে শুরু করে, “আমাদের এখন তাড়াহুড়ো করে স্টেপ নেওয়া ঠিক হবে না। ২-৩ মাসের সব সি সি টিভি ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে আমাদের প্রথমে জয় ও বিজয়ের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করতে হবে। আর জয় বা বিজয় যেই খুন করুক না কেন তার মোটিভ কি ছিল? অনন্যাকে খুন করার আগে ধর্ষণ করা হয়নি। ওকে শ্বাস রোধ করে খুন করা হয়েছে। কিন্তু কিভাবে কোন দড়ি বা ওই জাতীয় কিছু ব্যবহার করা হয়নি। অনন্যার শরীরে কোন ইন্টারনাল বা এক্সটার্নাল ইনজুরি পাওয়া যায়নি। বিষ জাতীয় কিছু দেওয়া হয়নি। শরীরে কোন ফিঙ্গার প্রিন্ট নেই।”
অফিসার চন্দন মণ্ডল একটু হতাশ সুরে বলল, “তাহলে স্যার আমরা কি এই তদন্তের কোন কিনারা করতে পারবো?” চন্দনের কথা শুনে অরিজিৎ বলল, “আশা ছাড়বেন না। আমি এই তদন্তের শেষ দেখে ছাড়বো। আপনারা শুধু আমার সঙ্গে থাকুন।” সবাই এক একস্বরে “হ্যা” বলে উঠলো।
ছোটদের রূপকথার গল্প - ইঁদুরের রাজত্ব: "ইঁদুরের রাজত্ব" একটি মজার ও শিক্ষামূলক ছোটদের গল্প। পনির ও ইঁদুরের চাহিদার মজার রূপকথার গল্প যা শিশুদের কল্পনার জগতে ভ্রমণ করাবে ও জীবনের ছোট ছোট শিক্ষা দেবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
জীবন-সঙ্গী
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সেদিনের পর থেকে অরিজিৎের মধ্যে খুব অস্থিরতা কাজ করছিল। এতো ব্যস্ততার মাঝে তার হটাৎ রিতিকার কথা মনে পড়লো। রিতিকা তার প্রেমিকা, অরিজিৎ আর রিতিকার সম্পর্ক সেই কলেজ জীবন থেকে। তদন্তের চাপে ৩-৪ দিন ওকে ফোন করা হয়নি, অবশ্য রিতিকা আর অরিজিৎ খুব বেশি ফোনে কথা বলতো না। রিতিকা একটা কলেজে মনোবিজ্ঞানের প্রফেসর। একদিন রাতে অরিজিৎ রিতিকাকে ফোন করলো, “হ্যালো! আমি না খুব সমস্যায় আছি। তোমার হেল্প দরকার।” রিতিকা হেঁসে বললো, “কেন! ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা পরে গেছো নাকি?” অরিজিৎ বলল, “প্লিজ মজা করো না। আমি সত্যি খুব সমস্যায় আছি। তুমি আজ একবার আসতে পারবে?” অরিজিৎের কথা শুনে রিতিকা বুঝতে পারলো, অরিজিৎ সত্যিই সমস্যার মধ্যে আছে। সে আর কথা না বাড়িয়ে, “ঠিক আছে। আমি কলেজ শেষ করে যাচ্ছি। আমার কাছে ফ্ল্যাটের চাবি আছে। তুমি রাতে তাড়াতাড়ি অফিস করে এসো। আমি রান্না করে রাখবো।” কথাটা শেষ হতেই ওরা কল ডিসকানেক্ট করল।
সন্ধ্যে হওয়ার একটু আগে রিতিকা অরিজিৎের ফ্ল্যাটে এসে পোঁছালো। ফ্ল্যাটের চাবি খুলে রিতিকা যা দেখলো তাতে সে একটু বিরক্তই হল। জিনিস-পত্র অগোছালো ভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। বসার ঘরে টেবিলের ওপর ২-৩ পুরোনো বিয়ারের ক্যান পোড়া সিগারেট ভর্তি অ্যাশ-ট্রে। ওই সময় রিতিকার চোখ পড়লো দেওয়ালে একটা হোয়াইট বোর্ডের ওপর। ওখানে যা লেখা এবং আঁকা ছিল সেটা দেখে রিতিকা বুঝতে পারল অরিজিৎের সমস্যার কারণ। সে ব্যাগটা রেখে সোফায় বসলো। টেবিলে থাকা সিগারেটের পেকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে খুব মন দিয়ে বোর্ডটি দেখতে লাগলো। বোর্ডটিতে যা আঁকা ও লেখা ছিল সেটা এইরকম,
ওপরের দিকে লেখা আছে আছে, “অনন্যা মুখার্জী – ভিকটিম। একজন ক্রিমিনাল সাইকোলজি’র রিসার্চ স্কলার” তার নিচে দাগ দিয়ে লেখা আছে “জয় – অনন্যার প্রেমিক” জয়ের নামের নিচে দাগ দিয়ে লেখা আছে, “বিজয় – জয়ের জমজ ভাই – রাজনৈতিক কর্মী – সঞ্জয় বিশ্বাস’এর কাছের লোক।” ওই লেখা গুলির নিচে একটা লাইন লেখা, “সেই রাতে দ্বিতীয়বার জয় না বিজয় এসেছিল?”
রিকিতা পরিস্থিতটা একটু আন্দাজ করতে পারল। সে সিগারেটটা শেষ করে ব্যাগটা নিয়ে বেডরুমে চলে গেল। বেডরুমের ও সেই একই অবস্থা। পরের এক ঘন্টায় রিতিকা পুরো ঘর পরিষ্কার করে গুছিয়ে স্নান করতে চলে গেলো। স্নান করে সে রান্না ঘরে চলে গেল, তখন সন্ধে ৮ টা বাজে। রান্না শেষ করে উঠতে তার প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগলো। সে সবকিছু শেষ করে নিজের ব্যাগ থেকে একটা নোটবুক ও পেন বের করে বসার ঘরে টেবিলের ওপরে রাখল, আর অরিজিৎের আসার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। রিতিকা এর আগে কয়েকবার অরিজিৎ্কে কেস সল্ভ করার কেসে সাহায্য করেছে, তাই সে জানতো অরিজিৎের ইনভেস্টিগেশনের প্যার্টান। রাত ৯:৩০ টার দিকে অরিজিৎ ফ্ল্যাটে এলো।
যৌথ তদন্ত
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
অরিজিৎ স্নান করে সোফায় এসে বসলো। রিতিকা বোর্ডের দিকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞেস করল, “এই কেসটা নিয়ে সমস্যায় আছো?” অরিজিৎ বলল, “হুমম!” রিতিকা বলল, “আমাকে প্রথম থেকে সবকিছু ঘটনা খুলে বল।” অরিজিৎ ফ্রিজ থেকে একটা হুস্কির বোতল ও রান্না ঘর থেকে একটা গ্লাস বের করে বসার ঘরে ফিরে এলো। একটা পেগ বানিয়ে তাতে চুমুক দিয়ে পুরো ঘটনাটা বলতে শুরু করল। রিতিকা তার নোটবুকে ঘটনার সারাংশ নোট করতে লাগলো। অরিজিৎ ঘটনাস্হলের বর্ণনা, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, সি সি টিভি ফুটেজ সবকিছু খুব ডিটেল্সে বলতে লাগলো। প্রায় ৪৫ মিনিট পরে অরিজিৎ সবকিছু রিতিকাকে বোঝাতে পারলো। রিতিকা ওই সময় কোনো কথা বলেনি। শুধু মন দিয়ে সব শুনছিল। সে সবকিছু শোনার পর বলল, “রাত হয়ে গেছে ডিনারটা করে নিই। না হলে খাবার গুলো ঠান্ডা হয়ে যাবে।” তারপর ওরা ডিনার করতে বসল। ডিনার শেষ হতে দুজনে ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে চলে এলো।
অরিজিৎ রিতিকা কে প্রশ্ন করলো, “আচ্ছা দুজন জমজ ভাইয়ের মধ্যে পার্থ্যক্য কি করে বোঝা যায়। বিশেষ করে দুজনের ব্যবহারের।” রিতিকা বলল, “দুজন মানুষ জমজ হলেও ব্যবহারের কিছু পার্থ্যক্য থাকে। তার জন্য দুজন মানুষকে খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। আমাদের মত সাইকোলজিস্ট দের কাছে সেটা বের করা একটু সহজ। তোমার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তাহলে জয় ও বিজয়কে আমার সামনে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ কর। আমার বিশ্বাস আমি তোমাদের কিছুটা হলেও এই তদন্তে সাহায্য করতে পারবো।” কথাটা শুনে অরিজিৎ যেন একটু আশার এল দেখলো। সে “থ্যাংক-ইউ” বলে রিতিকাকে জড়িয়ে ধরল। তারপর বলল, “ঠিক আছে! তুমি আমাদের সাথে জয়েন করবে, আমি ব্যবস্থা করে দেব। বল আর কি করতে হবে? মানে তোমার কি রিকোয়ারমেন্ট আছে?” রিতিকা বলে, “পরশু ওদের দুজনকে থানায় ডাকো। জয়কে লাল রঙের জামা বা টি শার্ট পড়তে বলবে, আর বিজয়কে নীল রঙের।” রিতিকার কথা মত অরিজিৎ তক্ষনি জয়কে ফোন করে পরশুদিন দুজনকে ওই ভাবে থানায় আসতে বলল।
একদিন পর সকাল ৯ টার দিকে অরিজিৎ ও রিতিকা থানায় পৌঁছাল। অরিজিৎ সবার সাথে রিতিকার পরিচয় করিয়ে দিল। রিতিকা সবার সাথে পরিচয় করে এককাপ চা হাতে নিতে ওই দিন রাতের সি সি টিভির ফুটেজগুলো দেখতে লাগলো এবং অভ্যাসমত নোটবুকে লিখতে লাগল। বেলা ১১ টার দিকে নিৰ্দেশমত জয় ও বিজয় দুজনে থানায় এসে পৌঁছাল। জয় একটা লাল রঙের ও বিজয় একটা নীল রঙের টি-শার্ট পরেছিল। থানায় ঢোকা থেকে ইনভেস্টিগেশন রুমে গিয়ে চেয়ারে বসা পর্যন্ত রিতিকা অর্ডার দুনজনকে খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করছিল। পরিকল্পনা মত রিতিকা জয় ও বিজয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করল। একজন কনস্টবল পুরো সেশনের ভিডিও রেকর্ডিং করতে শুরু করলো।
ঋতিকা পুলিশ স্টেশনের মেঝেতে পাতা কাঠের টেবিলের পেছনে চুপচাপ বসে আছে। তাঁর চোখের সামনে দু’জন ব্যক্তি—যমজ ভাই জয় আর বিজয়। দু’জনের মুখ, গঠন, এমনকি অভিব্যক্তিও এতটাই মিল যে কাউকে আলাদা করা কঠিন। কিন্তু ঋতিকা জানেন, চেহারার মিল মানসিক গঠন বা আচার-আচরণের সঙ্গে সব সময় সামঞ্জস্য রাখে না। তিনি চেয়ার পিছিয়ে বসে একবার জয়কে, আরেকবার বিজয়কে পর্যবেক্ষণ করলেন।
“জয়,” ঋতিকা শুরু করল, “অনন্যার সঙ্গে তোমার শেষ কথোপকথনটা কেমন ছিল?” জয় খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল, “আমি আর অনন্যার মধ্যে বিশেষ কিছুই হয়নি। ওর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা খুব স্বাভাবিক ছিল।” ঋতিকা একমুহূর্ত থেমে বিজয়ের দিকে তাকালেন। “বিজয়, তুমি কী বলবে? অনন্যার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন ছিল?” বিজয়ের মুখ শুকনো। সে বলল, “আমি আর অনন্যা খুব বেশি চিনতাম না। আমি যতদূর শুনেছি দাদার কাছে থেকে শুনেছি, দাদার সাথে ঝগড়া হয়েছিল, এর বেশি কিছু আমি জানি না।” বিজয়ের কথার মধ্যে একটু অসঙ্গতি ছিল। সেটা রিতিকা খুব বুঝতে পারছিল। ঋতিকা লক্ষ্য করলেন, জয়ের কণ্ঠে একটা প্রতিরোধের সুর, আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা। কিন্তু বিজয়ের কণ্ঠে অপরাধবোধ আর ভয়ের ছাপ। রিতিকা টেবিলে রাখা পেনটা তুলে নিয়ে একটা ছোট্ট নোট লিখল।
কিছুক্ষন জিজ্ঞাসাবাদের পর রিতিকা ও অরিজিৎ একান্তে কথা বললো, তারপর জয় ও বিজয় কে চলে যেতে বললো। আরেকজন পুলিশ অফিসার ঋতিকার দিকে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললেন, “আপনি কি নিশ্চিত?” রিতিকা “হুমম” বলল দিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে সামনের একটা দোকানে গিয়ে এককাপ চা নিল ও একটা সিগারেট ধারালো। তার মাথায় রহস্যের জট ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করল, তাকে খুব আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল, কিন্তু সত্যের পথ তখনও অন্ধকারে ঢাকা।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - নতুন দৃষ্টি: "নতুন দৃষ্টি" একটি অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প, যা সংগ্রাম, আত্মবিশ্বাস এবং শান্তির সন্ধানে একজন মহিলার যাত্রা তুলে ধরে। একটি শক্তিশালী মোটিভেশনাল গল্প, যা পাঠকদের অনুপ্রাণিত করবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
নীরব চিৎকার
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
থানার বাইরের দোকানে চা ও সিগারেটের দামটা দিয়ে সে আবার থানায় ফিরে এলো। জয় ও বিজয়ের জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিওটি চালাতে বললো। ভিডিওটা চলতে লাগলো। একটা জায়গায় ভিডিও টা থামিয়ে ওটাকে রউইন্ড করতে বলল। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আপনারা দেখুন বিজয় কথা বোল্টেড বলতে বার বার বাম হাতটা কাঁধের কাছে নিয়ে যাচ্ছিল যেটা জয়ের মধ্যে দেখা যাছিল না।” কথাটা শেষ করে সেই দিন রাতের সি সি টিভি ফুটেজ টা আবার চালাতে বলল। সেখানে সবাই যা দেখলো, তাতে সবার মাথা ঘুরে গেল। সেখানে দেখা গেল, বিজয় (কারণ ও বিজয় ছিল) রাত দুটোর দিকে যখন অনন্যার ফ্ল্যাটের নিচে আসে তখন বাইক বন্ধ করে বাইকটাকে স্ট্যান্ড করে। তারপর নিজের বাম হাতটা নিজের কাঁধে বোলাতে থাকে ও ডান হাতে জয়ের মোবাইলটা বের করে কল করতে থাকে।
সবাই কাছে তখন পুরো ব্যাপারটা খুব স্পষ্ট হয়ে গেল। সবাই এক সাথে হাততালি দিয়ে রিতিকাকে অভিনন্দন জানালো। অরিজিৎের চোখ আনন্দে জ্বল-জ্বল করে উঠলো। সে প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলো, “চন্দনবাবু গাড়ি বের করুন। বিজয়কে এরেস্ট করতে হবে।” তারপর অরিজিৎ রিতিকাকে “থ্যাংক ইউ” বলে তাহাহুরো করে বিজয়কে এরেস্ট করতে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা বিজয়কে নিয়ে থানায় আসে। জয়’ও পেছনে বাইক নিয়ে এসেছিল। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। অরিজিৎ বিজয়কে আরেকটা রুমে বসিয়ে স্বীকারোক্তির জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো। বিজয় প্রথমে কিছুই স্বীকার করতে চাইছিল না। তারপর অরিজিৎ ও আরেকজন পুলিশ অফিসার নিজেদের পুলিশ রূপে আসার পর বিজয় বলতে শুরু করল,
“সেদিন রাতে যখন দাদা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরে আমি দাদাকে দেখে বুঝতে পারছিলাম দাদা সকালের আগে ঘুম থেকে উঠবে না। তারপর দাদার কাছে শুনেছিলাম অনন্যাকে লেকের ধরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা এবং অনন্যার রেগে যাওয়ার কথা। তারপর আমি প্ল্যান বানালাম, আমি দাদার রুমে গিয়ে দেখি দাদা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি দাদার মোবাইলটা নিয়ে আনলক করলাম। পাসওয়ার্ড আমার জানা ছিল। তারপর নিজে ‘জয়’ সেজে অনন্যাকে কল করি। সে বুঝতে পারে নি। তারপর তাকে নিয়ে লেকের ধরে নিয়ে যাই।” এতদূর বলে বিজয় থেমে গেল। অরিজিৎ চিৎকার করে উঠলো, “বল তার পর তাকে মারলি কেন। কিভাকে খুন করলি?” বিজয় আবার বলতে শুরু করলো,
“অনন্যা ক্রিমিনাল সাইকোলোজি নিয়ে রিসার্চ করছিল। ওই রিসার্চ এর সময় অনন্যার হাতে কিছু ভিডিও আসে আমার বস সঞ্জীব বিশ্বাসের। সেই কথা বস যেকোনো ভাবে জানতে পারে। ভিডিও গুলো অনন্যার মোবাইলএ ছিল। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সেই পেনড্রাইভটা অনন্যার কাছ থেকে নেওয়া। তাই সেদিন রাত ছিল আমার কাছে সবচেয়ে বড় সুযোগ। লেকের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অনন্যা সামনে হাঁটছিল আমি পেছনে, তারপর সুযোগ বুঝে একটা মোটা প্লাষ্টিক ব্যাগ এ কিছুটা ক্লোরোফর্ম স্প্র্যে করে পেছন থেকে ওর মুখের ওপর চেপে ধরি। আমি হাতে গ্লাভস পরে ছিলাম অনন্যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে যায়। সেই অবস্থায় আমি তার মুখে জোর করে ব্যাগটা চেপে ধরি শেষে সে মারা যায়। সে মরার ঠিক পরে আমি তার ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে মোবাইল আনলক করি ও ভিডিও গুলো ডিলিট করি। তারপর মোবাইলটা ওর বাগে রেখে ওকে জলে ফেলে দেই।”
পরের দিন বিজয়কে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয় তার বিচার শুরু হয়। ৫-৭ দিন পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ সঞ্জীব বিশ্বাসকে এরেস্ট করে। অরিজিৎ তার তদন্ত এখানেই শেষ করে। সেদিন রাত ডিনারের পর অরিজিৎ ও রিতিকা দুজনে ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েছিল। দুজনের হাতে দুটো হুস্কির গ্লাস ছিল। ওরা নিজেদের সাকসেস-কে সেলিব্রেট করছিল। অরিজিৎ রিতিকাকে হটাৎ করে প্রশ্ন করল, “তুমি সেদিন যখন জানতে যে বিজয় দ্বিতীয়বার অনন্যাকে নিতে এসেছিল তাহলে তুমি কেন ওকে তখন থানা থেকে চলে যেতে বলেছিলে?” রিতিকা একটু হেঁসে বললো, “ঘুড়ি অনেক ওপরে ওড়াতে গেলে, সুতো একটু লুজ করতে হয়!”