"কুকিজের খুশি" – ছোটদের রূপকথার গল্প যেখানে ছোট্ট লীলা তার হৃদয় দিয়ে কুকিজ বানিয়ে অনাথ শিশুদের মুখে হাসি ফোটায়। ছোটদের গল্প যা ভালোবাসা ও আনন্দ ছড়িয়ে দেয় প্রতিটি পৃষ্ঠায়।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » কুকিজের খুশি

কুকিজের খুশি

"কুকিজের খুশি" – ছোটদের রূপকথার গল্প যেখানে ছোট্ট লীলা তার হৃদয় দিয়ে কুকিজ বানিয়ে অনাথ শিশুদের মুখে হাসি ফোটায়। ছোটদের গল্প যা ভালোবাসা ও আনন্দ ছড়িয়ে দেয় প্রতিটি পৃষ্ঠায়।

এক ছিল এক রাজ্য, যেখানকার মানুষের জীবন ছিল হাসিখুশি আর আনন্দে ভরা। সেই রাজ্যের এক ছোট্ট গ্রাম ছিল, আর সেই গ্রামে থাকত দশ বছরের একটি মেয়ে – লীলা। লীলা দেখতে যেমন মিষ্টি, তার মনও ছিল তেমন মধুর। সবার ভালোবাসায় ঘেরা লীলা, যার মধ্যে লুকিয়ে ছিল এক আশ্চর্য ক্ষমতা। লীলার সেই ক্ষমতা ছিল – জাদুকরি কুকিজ বানানোর। 

প্রতিদিন সকালে লীলা তার স্কুলে চলে যেত, আর বিকেলে বাড়ি ফিরে সে ছুটে যেত তার ছোট্ট রান্নাঘরে। ওখানেই তার জাদুকরি দুনিয়া। রান্নাঘর ছিল লীলার নিজের রাজ্য, যেখানে সে রাজকন্যার মতো কুকিজ বানিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করত। ছোট্ট রান্নাঘরের এক কোণায় ছিল লীলার প্রিয় ময়দার ডিব্বা, চিনি, মাখন আর চকোলেট চিপস। একবার ময়দা আর চিনি মেশানো শুরু করলেই লীলার মুখে হাসি ফুটে উঠত।

“আজ আমি বানাব চকোলেট চিপ কুকিজ!” বলল লীলা নিজের সঙ্গেই কথা বলতে বলতে। রান্নাঘরের প্রতিটি জিনিস যেন লীলার বন্ধু হয়ে উঠেছিল। গামলায় ময়দা ঢেলে সে মাখন আর চিনি মেশানো শুরু করল। যেন সে কোন গান গাইছে – চিনি আর ময়দা মেশানোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে তার মন যেন এক ছন্দে চলছিল। 

এক সময় সেই মিশ্রণে যোগ করল চকোলেট চিপস। চকোলেট চিপসগুলোকে সে খুব যত্ন করে মিশাতে লাগল, যেন প্রতিটি কুকিজে সমানভাবে চকলেটের স্বাদ ছড়িয়ে যায়। লীলা বলল, “এই কুকিজগুলো আমার গ্রামের মানুষের জন্য, তাদের মুখে হাসি ফোটানোই আমার কাজ।” লীলা তার কুকিজের প্রতি ভালোবাসা মেশাতে মিশাতে বুঝত, এই কুকিজ কেবল সাধারণ মিষ্টি নয় – এটি ভালোবাসার একেকটি টুকরো।

কুকিজ বানানো শেষ হলে, সে একে একে সবগুলো ট্রেতে সাজিয়ে ওভেনে দিল। কিছুক্ষণ পর রান্নাঘর থেকে এমন সুগন্ধ বের হল যে, সেই গন্ধে সারা গ্রাম মাতোয়ারা হয়ে উঠল। পাশের বাড়ির মা-মাসিরা লীলার বাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, “আবার লীলা কুকিজ বানাচ্ছে! তার কুকিজের গন্ধে মন আনন্দে ভরে ওঠে।”

এদিকে লীলা ওভেন থেকে কুকিজ বের করে, তার মুখে তৃপ্তির হাসি। কুকিজগুলোকে সে একবার খুব যত্ন করে দেখে নিল, যেন কোথাও কিছু কমতি নেই। প্রতিটি কুকিজ গোলগাল আর মচমচে – একদম নিখুঁত। লীলা জানত, তার বানানো কুকিজগুলো গ্রামে সবাই খেয়ে খুশি হবে। সে কুকিজগুলো ঠান্ডা হতে দিল, আর তখনই তার ছোট্ট ভাই টুকু এসে হাজির। 

“দিদি, একটুকু কুকিজ খাওয়াবে না?” টুকু কাতর স্বরে বলল। লীলা হেসে বলল, “অবশ্যই, এটা তোমার জন্যই তো বানিয়েছি!” সে একগাল হেসে টুকুকে একটা কুকিজ দিল। টুকু কুকিজ খেয়ে চমৎকৃত হয়ে গেল। মুখে কুকিজের স্বাদ পেয়ে সে চোখ বড় বড় করে বলল, “দিদি, তোমার কুকিজে আসলেই যেন একটা জাদু আছে!”

লীলা টুকুকে আদর করে বলল, “এই কুকিজগুলো সবাইকে খুশি করার জন্য, টুকু। যদি মানুষ খুশি থাকে, তবে আমাদের জীবনও আনন্দে ভরে ওঠে।” 

এইভাবেই লীলার প্রতিদিনের জীবন চলছিল। সে কুকিজ বানিয়ে সবাইকে খুশি করত, আর মানুষের মনের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে দিত। তবে লীলার মনে একটি গোপন ইচ্ছে ছিল, যা সে কখনও কাউকে বলেনি। সে চেয়েছিল, তার কুকিজ দিয়ে কেবল তার গ্রাম নয়, চারপাশের আরও মানুষকে আনন্দ দিতে। সে ভেবে দেখেছিল, তার কুকিজ যদি দূরের কোনো শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে পারে, তবে সেটাই হবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। 

একদিন সন্ধ্যায়, মা তাকে আদর করে বলল, “লীলা, তোর কুকিজে সবাই এত খুশি হয়। তুই যদি কোনোদিন অনাথাশ্রমে গিয়ে সেই ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের খাওয়াস, তবে কত ভালো হবে, বল তো!” মায়ের কথায় লীলার মন খুশিতে ভরে উঠল। সে ভাবল, হ্যাঁ, এটিই তো তার মনের গোপন ইচ্ছা।

রাতটা সে এই ভাবনায় কাটিয়ে দিল – কীভাবে সে তার কুকিজ বানিয়ে সেই অনাথাশ্রমের শিশুদের মুখে হাসি ফোটাবে। তার ছোট্ট মনের মধ্যে যেন এক বড় স্বপ্ন জেগে উঠল। 

এইভাবেই লীলার গল্পের প্রথম অধ্যায় শেষ হল। কিন্তু পরের দিন সকালে লীলার মনে আরও বড় একটি সিদ্ধান্ত জেগে উঠল। তার এই স্বপ্ন পূরণের জন্য কি কোনো বাধা আসবে? কীভাবে সে এই পথ পাড়ি দেবে?

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - ভালবাসার পুনর্জন্ম: "ভালবাসার পুনর্জন্ম" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে মায়া ও ঋষির সম্পর্ক নতুন করে গড়ে ওঠে, এবং দেব নতুন জীবনের পথে পা বাড়ান। অনুভূতি ও ক্ষমতার কাহিনী। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

লীলার মিষ্টি স্বপ্ন

একদিন বিকেলে, সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে, তখন লীলা তার ছোট্ট বাড়ির জানালায় বসে বাইরে তাকিয়ে ছিল। বাতাসে মৃদু শীতলতা, আর পাখিরা কিচিরমিচির করে ফিরছিল তাদের নীড়ে। তার চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছিল সেই ছোট্ট ছোট্ট অনাথ শিশুদের হাসিমুখ। মনে মনে সে ভাবল, “আমি যদি আমার কুকিজগুলো তাদের খাওয়াতে পারি, তাহলে তাদের মুখেও হাসি ফুটবে।” এই চিন্তাতেই লীলার মন আনন্দে ভরে উঠল। 

রাত্তিরে খাওয়াদাওয়ার পর, সে তার মাকে বলল, “মা, আমি ভাবছি আমাদের গ্রামের বাইরে যে অনাথাশ্রম আছে, সেখানে গিয়ে আমি আমার কুকিজগুলো নিয়ে যাব। সেই ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের মুখে হাসি দেখতে ইচ্ছে করছে।” 

মা মৃদু হেসে বললেন, “তুই তো মনের দিক দিয়ে একদম বড় হয়ে গেছিস রে, লীলা। এত ভালো মনের মেয়ে আমার। তবে, তোর যা ভাবনা, সেটাকে সফল করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।”

মায়ের কথায় লীলার মন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে বলল, “তাহলে আমি কাল সকালেই বড় ব্যাচ কুকিজ বানাতে শুরু করব, মা। তুমি আমাকে সাহায্য করবে তো?” মা হাসতে হাসতে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “অবশ্যই করব। তোকে সাহায্য করাই তো আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ।”

পরদিন ভোরেই লীলা জেগে উঠল। প্রথম আলো ঠিকরে আসছিল তার ঘরে। সে জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখে, যেন প্রকৃতি তার এই মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে সে রান্নাঘরে গেল। মা সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। ময়দা, চিনি, মাখন, চকোলেট চিপস সবকিছু এক জায়গায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

লীলা আনন্দে বলল, “আজকের কুকিজগুলো একটু বেশি ভালো করে বানাব মা। যাতে খাওয়ার পর ছোট্টদের মুখে চওড়া হাসি ফুটে ওঠে।” মা হাসলেন, আর বললেন, “তাহলে শিগগির শুরু কর। আমি ময়দা ছাঁকা শুরু করছি।”

লীলা আর তার মা মিলে কুকিজ বানাতে লাগল। তারা দুইজনে এত মগ্ন হয়ে গেল যে, রান্নাঘরটা যেন এক মজার জগৎ হয়ে উঠল। কুকিজ বানাতে বানাতে মা লীলাকে নানা গল্প শুনাচ্ছিলেন – রূপকথার গল্প, নীতির গল্প, আর ছোটবেলার আনন্দের গল্প। 

একসময়, কুকিজগুলো ওভেনে দিয়ে বসিয়ে তারা অপেক্ষা করতে লাগল। রান্নাঘরটা মিষ্টি গন্ধে ভরে গেল। সেই সময়ে পাশের বাড়ির কাকিমা এসে বললেন, “আরে, লীলা আজও আবার কুকিজ বানাচ্ছে?” মা মৃদু হেসে বললেন, “হ্যাঁ, তবে আজ অন্যরকম একটি পরিকল্পনা আছে। লীলা আজ কুকিজগুলো নিয়ে অনাথাশ্রমে যাবে।” কাকিমা অবাক হয়ে বললেন, “তুই আসলেই এক বড় মনের মেয়ে রে, লীলা। তোর কুকিজ খেয়ে সবাই খুশি হয়ে যায়। অনাথ শিশুদের মুখেও হাসি ফুটে উঠবে।”

কিছুক্ষণ পরে, কুকিজগুলো ঠান্ডা হয়ে গেলে লীলা খুব যত্ন করে সেগুলোকে একটি বড় বাক্সে সাজিয়ে রাখল। মাকে বলল, “আমার মনে হচ্ছে আজকের দিনটা খুবই বিশেষ হবে। আমি খুব খুশি, মা। আমি কি এখনই যেতে পারি?” 

মা মাথা নেড়ে বললেন, “অবশ্যই। তবে একটু সাবধানে যাস। আর তোর ইচ্ছাশক্তিতে ভরসা রাখ, তুই সফল হবিই।” 

লীলা তার কুকিজের বাক্স হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। পথে যেতে যেতে সে গুনগুন করে গান গাইতে লাগল। রাস্তার মানুষজন তাকে দেখছিল আর তার মুখের খুশি দেখে তারাও আনন্দ পাচ্ছিল। পাখিরা তার চারপাশে উড়ছিল, গাছেরা যেন মৃদু বাতাসে তাকে আশীর্বাদ করছিল। 

অনাথাশ্রমের সামনে পৌঁছালে, দরজার বাইরে কয়েকজন শিশু দাঁড়িয়ে ছিল। তারা লীলাকে দেখে হাসল, আর কৌতূহল নিয়ে তার কুকিজের বাক্সের দিকে তাকাল। লীলা তাদের মিষ্টি করে বলল, “আমি লীলা, তোমাদের জন্যই কিছু নিয়ে এসেছি।” শিশুরা খুব খুশি হয়ে ভেতরে দৌড়ে গেল। 

অবশেষে, লীলা ভেতরে প্রবেশ করল। সেখানকার দিদিমণি তাকে সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন। তিনি বললেন, “তুমি এতদূর থেকে আমাদের ছোট্ট শিশুদের জন্য এসেছ, আমরা কৃতজ্ঞ।” লীলা লাজুক হাসি দিয়ে বলল, “এটা আমার দায়িত্ব। আমি শুধু চাই, এই কুকিজগুলো খেয়ে সবাই একটু হাসুক।” 

এক এক করে সে তার কুকিজগুলো শিশুদের হাতে দিতে লাগল। শিশুরা সেই কুকিজ খেয়েই এক এক করে মিষ্টি হাসিতে মুগ্ধ হয়ে উঠল। সবার মুখে ছিল একরাশ খুশির ঝিলিক। তাদের মনের আনন্দ দেখে লীলার হৃদয় ভরে উঠল। তার মনে হচ্ছিল, আজ সে জীবনের সবচেয়ে মিষ্টি মুহূর্ত পার করছে।

এইভাবে আনন্দে ভরে উঠল সেই ছোট্ট ঘর। শিশুদের খুশি দেখে লীলার মনে হল, এই কাজটা করে সে শুধু তাদের নয়, বরং নিজের জীবনকেই আরও সুন্দর করে তুলেছে। কিন্তু, ঠিক তখনই এক শিশুর কথা তাকে এক নতুন ভাবনার পথে নিয়ে গেল। সেই শিশু বলল, “দিদি, তুমি আমাদের জন্য কুকিজ বানিয়ে খাওয়ালে, কিন্তু আমরা কি তোমার মতো কুকিজ বানানো শিখতে পারব?”

এই প্রশ্নে লীলা একটু থমকে গেল। তারপর সে ভাবতে লাগল, “হয়ত এই শিশুদের যদি আমি কুকিজ বানানো শেখাতে পারি, তবে ওরাও নিজেদের মধ্যে খুশির ভাগ করে নিতে পারবে।” 

সেই রাতেই লীলা মনে মনে ভাবল, “কুকিজ বানানোর এই মজার জগত যদি আমি শিশুদের শেখাতে পারি, তবে হয়ত তাদের মুখে আরো বেশি হাসি ফুটে উঠবে।” 

এই ভাবনায় তার মন আবার উচ্ছ্বাসে ভরে উঠল। সে নিজেই মনে মনে ঠিক করল, পরের সপ্তাহে সে আবার এই শিশুদের কাছে ফিরে আসবে, আর তাদের শেখাবে তার সেই জাদুকরি কুকিজ বানানোর রহস্য। 

পরের দিন সকালে, সে তার মাকে বলল তার এই নতুন পরিকল্পনার কথা। মা তার সাহসিকতার প্রশংসা করলেন, আর বললেন, “তুই যদি সত্যিই শিশুদের এই আনন্দ শেখাতে পারিস, তবে তোর জীবন আরও বেশি সার্থক হবে।” 

এই ভাবনায় মুগ্ধ লীলা আবার নতুন করে তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। তাকে যেন আর থামানো যায় না। 

বড় ব্যাচ কুকিজ বানানোর প্রস্তুতি

এক সকালে রোদ ঝলমলে আলোয় ঘুম থেকে উঠে লীলা যেন নতুন শক্তি পেয়ে গেল। আজ তার বিশেষ দিন। সে আজ বড় ব্যাচ কুকিজ বানাবে, আর সেই কুকিজগুলো খেয়ে ছোট ছোট শিশুরা হাসবে – এই ভাবনাতেই তার মন আনন্দে ভরে উঠল। 

তাড়াতাড়ি উঠে সে তার রান্নাঘরে গেল। রান্নাঘরের টেবিলে সে সব উপকরণ সাজিয়ে রাখল – ময়দা, চিনি, মাখন আর চকোলেট চিপস। এইসব দেখেই লীলার মুখে বড়সড় এক হাসি ফুটে উঠল। সে ভাবল, “আজকের কুকিজগুলোতে একটু বেশি মিষ্টি আর ভালোবাসা মেশাবো, যাতে ছোট্টদের মুখে মিষ্টি হাসি ফোটে।” 

লীলা কুকিজের ময়দা মাখতে শুরু করল। তার ছোট্ট হাতগুলোয় ময়দা, মাখন আর চিনির মিশ্রণ যেন এক মজার খেলায় পরিণত হল। মাখতে মাখতে সে গুনগুন করে গান গাইছিল – “কুকিজ বানাই, খুশির রঙ মাখাই, ছোট্টদের মুখে হাসি ফুটুক এই আশায়।” 

হঠাৎ, রান্নাঘরের জানালার পাশে একটা কিচিরমিচির শব্দ শোনা গেল। লীলা তাকিয়ে দেখে, জানালার ধারে বসে আছে তার প্রিয় বন্ধু ছোট্ট পাখি টুটু। টুটু বলল, “লীলা, এত মজা করে কুকিজ বানাচ্ছ কেন?” 

লীলা মিষ্টি হেসে বলল, “তুমি জানো না, টুটু? আমি এই কুকিজগুলো অনাথ শিশুদের জন্য বানাচ্ছি। তারা খাবে আর আনন্দে হাসবে। এই কুকিজগুলোতে আমি আমার ভালোবাসা মিশিয়ে দিচ্ছি।” 

টুটু আনন্দে ডানা ঝাপটিয়ে বলল, “ওয়াও! আমি তোমার কুকিজ বানানো দেখতে চাই। আর তোমার যদি দরকার হয়, আমি সাহায্য করতে পারি।” 

লীলা হেসে বলল, “তাহলে থাকো আমার সঙ্গে। আজ তোমার আর আমার মিলে তৈরি করব সবচেয়ে মজার কুকিজ!” 

এবার লীলা আরও মনোযোগ দিয়ে ময়দা মাখতে লাগল। টুটু তাকে পাশে থেকে উৎসাহ দিচ্ছিল। সে মাঝে মাঝে লীলাকে বলছিল, “আরও একটু মাখন দাও, আরও একটু চিনি দাও।” লীলার রান্নাঘরটা যেন একটা ছোট্ট কারখানা হয়ে উঠল, যেখানে ভালোবাসা আর আনন্দের কুকিজ তৈরি হচ্ছিল।

একটু পর, পাশের বাড়ির বিড়ালছানা মিনি এসে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়াল। তার ছোট্ট নাকটা শুঁকছিল, আর সে বলল, “লীলা, এত মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ কীসের?” 

লীলা হেসে বলল, “আমি কুকিজ বানাচ্ছি, মিনি! তুমি যদি চাও, তাহলে আমায় একটু সাহায্য করতে পারো।” 

মিনি আনন্দে লাফিয়ে উঠল। সে লীলার কাছে এসে কুকিজের ময়দা মাখাতে সাহায্য করতে লাগল। তারা তিনজন মিলে এক মজার দলের মতো কুকিজ বানাচ্ছিল। 

কিছুক্ষণ পর, কুকিজের ময়দা সব তৈরি হয়ে গেল। লীলা তার ছোট্ট ওভেনে কুকিজগুলো বসিয়ে দিল। এবার অপেক্ষার পালা। মিনি আর টুটু রান্নাঘরের পাশে বসে কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে ছিল। ওভেন থেকে মিষ্টি গন্ধ বের হচ্ছিল, আর তারা অপেক্ষা করছিল কুকিজগুলো বের করার জন্য। 

টুটু বলল, “লীলা, কুকিজ বানানো তো মজার কাজ! কিন্তু এটা শিশুদের মুখে হাসি ফোটাবে, এটা ভাবলেই আমার মনটা আরও আনন্দে ভরে যাচ্ছে।” 

লীলা মৃদু হেসে বলল, “তাই তো! কুকিজ বানানো শুধু আমার কাজ নয়, এটা আমার ভালোবাসার একটুকরো। আর সেই ভালোবাসা আমি ওদের মুখে হাসি দেখার জন্যই মিশিয়েছি।” 

ঠিক তখনই, মিনি হঠাৎ বলল, “তুমি কী জানো, লীলা? আমাদের কাছে একটা জাদুর গাছ আছে। সেই গাছের একটা পাতায় যদি মনের কথা বলো, তবে তা সত্যি হয়ে যায়।” 

লীলা অবাক হয়ে বলল, “তোমরা মজা করছো না তো, মিনি?” 

মিনি বলল, “না, এটা একেবারে সত্যি। যদি তুমি সত্যি মন থেকে কিছু চাও, আর সেই গাছের পাতায় বলো, তবে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়ে যায়।” 

এই কথা শুনে লীলার মন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। সে ভাবল, “আমি যদি সেই গাছের কাছে যাই আর বলি, আমি যেন সবসময় শিশুদের মুখে হাসি দেখতে পারি, তাহলে সেটা সত্যিই পূরণ হবে?” 

মিনি আর টুটু একসঙ্গে বলল, “হ্যাঁ, লীলা! এটা একেবারে সত্যি। আজ রাতেই তুমি গাছটার কাছে গিয়ে ইচ্ছা জানিয়ে দাও।” 

সন্ধ্যায়, লীলা একা একা সেই জাদুর গাছটার কাছে গেল। চারপাশে হালকা বাতাস বইছিল, আর গাছের পাতা মৃদু সুরে দুলছিল। লীলা গাছের একটা ছোট্ট পাতার কাছে মুখ নিয়ে বলল, “আমি চাই, আমার কুকিজগুলো যেন সবসময় ছোট্টদের মুখে হাসি ফোটায়। আমি চাই, তারা যেন কখনও মনখারাপ না করে।” 

পাতাটা হঠাৎ ঝলমল করে উঠল, আর লীলার মনে হল যেন গাছটা তার ইচ্ছা মেনে নিয়েছে। সে ফিরে এসে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়ল। তার মন ছিল খুশিতে ভরে থাকা, কারণ সে জানত যে তার ভালোবাসা আর ইচ্ছাশক্তি তাকে সবসময় এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ছোটদের রূপকথার গল্প - বন্ধুর বীরত্ব: "বন্ধুর বীরত্ব" একটি হৃদয়গ্রাহী ছোটদের গল্প, যেখানে চিকু ও মীরা একসাথে বিপদ মোকাবিলা করে। এই রূপকথার গল্প বন্ধুত্বের শক্তি ও সাহসিকতা তুলে ধরে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অনাথাশ্রমে লীলার আগমন

সূর্য তখনো ঠিক মাথার উপর ওঠেনি, আর সকালের হালকা রোদে চারপাশটা সোনালি আলোয় ভেসে যাচ্ছে। এই সময়েই লীলা তার কুকিজ ভর্তি ঝুড়ি হাতে নিয়ে হাঁটতে শুরু করল অনাথাশ্রমের দিকে। তার মন ছিল উত্তেজনায় ভরে থাকা – তার হাতের কুকিজগুলো খেয়ে অনাথাশ্রমের ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা যে খুশি হবে, এই ভাবনাতেই তার হৃদয় আনন্দে নেচে উঠছিল। 

রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে সে দেখতে পেল পাখিরা গান গাইছে, গাছের পাতা হালকা বাতাসে নাচছে, আর তার পাশে পাশে হেঁটে যাচ্ছে তার প্রিয় ছোট্ট পাখি টুটু। টুটু বলল, “লীলা, তোমার কুকিজের গন্ধে তো আমারও খেতে ইচ্ছে করছে। এত সুন্দর গন্ধ! ওখানকার বাচ্চারা কেমন খুশি হবে ভাবতে পারছ?” 

লীলা হেসে বলল, “হ্যাঁ, টুটু, এই কুকিজগুলো শুধু খাবার নয়, এতে আমার ভালোবাসা মিশে আছে। আমি চাই, সবাই যেন এই কুকিজ খেয়ে খুশি হয়।” 

এভাবে কথা বলতে বলতে লীলা অনাথাশ্রমের গেটের কাছে পৌঁছল। সে একটু ইতস্তত করে গেট খুলে ভেতরে পা রাখল। ভেতরে ঢুকতেই সে অনেক ছোট্ট ছোট্ট শিশুকে দেখতে পেল, যারা কৌতূহলী চোখে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। তাদের চোখে এক ধরনের অদ্ভুত আশা ছিল, আর তাদের মুখগুলো যেন লীলার হাতের ঝুড়ির দিকে তাকিয়ে কিছু খুঁজছিল।

হঠাৎ, এক ছোট্ট মেয়ে সামনে এসে বলল, “আপনি কি আমাদের জন্য কুকিজ এনেছেন?” মেয়েটার কচি কণ্ঠে আনন্দ আর উত্তেজনা স্পষ্ট ফুটে উঠছিল। 

লীলা হেসে বলল, “হ্যাঁ, অবশ্যই এনেছি! আমি তোমাদের জন্যই কুকিজ বানিয়ে এনেছি।” এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই চারপাশের শিশুরা উল্লাসে ভরে উঠল। তাদের ছোট ছোট হাতগুলো উত্তেজিতভাবে এগিয়ে এল, আর লীলা একে একে তাদের সবার হাতে কুকিজ তুলে দিতে লাগল। 

কুকিজের স্বাদ পেয়ে শিশুরা যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। তাদের মুখে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল, আর কেউ কেউ বলল, “এত মজার কুকিজ আমরা আগে কখনো খাইনি!” 

একটা ছোট্ট ছেলে, যার নাম রাজু, খুশিতে লাফিয়ে বলল, “দিদি, আপনার কুকিজ তো জাদুর মতো! এটা খেয়ে আমার মন খারাপ সব গায়েব হয়ে গেল।” 

রাজুর এই কথা শুনে লীলা মিষ্টি হেসে বলল, “আমার কুকিজের আসল জাদু হলো ভালোবাসা। আমি যখন কুকিজ বানাই, তখন তাতে আমার ভালোবাসা মিশিয়ে দিই। তাই তোমাদের খেতে এত ভালো লাগে।” 

এরপর বাচ্চারা সবাই লীলাকে ঘিরে বসে গল্প শুনতে চাইল। লীলা ভাবল, “আচ্ছা, এই শিশুদের আনন্দ দিতে হলে আজ একটা মজার গল্প বলা যাক।” সে বাচ্চাদের নিয়ে গোল করে বসে এক মজার গল্প বলতে শুরু করল। তার গল্পে ছিল এক ছোট্ট কাঠবিড়ালী, যে সাহস করে বনের সবথেকে বড় নদী পাড়ি দেয় বন্ধুদের সাহায্য করার জন্য। 

গল্প শুনতে শুনতে বাচ্চারা সবাই একদম মনোযোগ দিয়ে বসে রইল। তাদের চোখগুলো কৌতূহলে বড় বড় হয়ে উঠল, আর কেউ কেউ তো গল্পের মজার অংশে খিলখিল করে হাসতে লাগল। 

গল্প শেষে এক ছোট্ট মেয়ে বলল, “দিদি, আপনি আবার আসবেন তো আমাদের কাছে?” তার কচি কণ্ঠে এক ধরনের আশা আর ভালোলাগার আভাস ছিল। 

লীলা হাসি মুখে বলল, “অবশ্যই, আমি আবার আসব। আর তখন তোমাদের জন্য আরও কুকিজ নিয়ে আসব।” 

বাচ্চাদের মুখে খুশি দেখে লীলার মনটা ভরে গেল। সে অনুভব করল, তার ভালোবাসা ও যত্ন এই শিশুদের জীবনে ছোট্ট একটা আনন্দের ঝলক এনে দিয়েছে। 

এইভাবেই লীলা তার প্রথম যাত্রার সমাপ্তি করল। কিন্তু তার মনে একটা নতুন ইচ্ছার সঞ্চার হল – সে ভাবল, “আমি শুধু এখানেই নয়, আরও অনেক জায়গায় গিয়ে এই শিশুদের হাসি এনে দেব।” 

নতুন একটি বন্ধন

সেই বিশেষ দিনটি লীলার জীবনে যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। অনাথাশ্রমে ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে মিষ্টি হাসি দেখে তার হৃদয় আনন্দে ভরে উঠেছিল। সে বুঝতে পারল, তার হাতে তৈরি কুকিজগুলো কেবল শিশুর ক্ষুধা মেটাচ্ছে না, বরং তাদের মনে এক অব্যক্ত আনন্দ এনে দিচ্ছে। এই চিন্তা তাকে গভীরভাবে স্পর্শ করল, আর সে সিদ্ধান্ত নিল যে তার এই কাজটি সে নিয়মিতই করবে।

পরের দিন সকালে, লীলা যখন তার ছোট্ট কুকিজের দোকানে বসে ছিল, তখন তার মনের মধ্যে একটি নতুন ভাবনা উঁকি দিল। সে ভাবল, “আমি কেন শুধু একদিনই অনাথাশ্রমে কুকিজ দেব? আমি যদি সপ্তাহে একদিন নিয়মিতভাবে এই কাজ করি, তাহলে তো এই শিশুগুলোর সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে পারব, তাদের গল্প শুনতে পারব, আর তাদের আরও আনন্দ দিতে পারব।”

এই ভাবনা মনে আসতেই লীলা উত্তেজিত হয়ে উঠল। সে একরকম দৌড়েই গিয়ে টুটুর সঙ্গে তার ইচ্ছেটা ভাগ করল। টুটু ছিল লীলার প্রিয় ছোট্ট পাখি বন্ধু, যে সব সময় তার পাশে থাকত। টুটু আনন্দে ডানা ঝাঁপটে বলল, “তুমি যদি প্রতি সপ্তাহে যাও, তবে আমি তোমার সঙ্গে যাব! বাচ্চাদের হাসিমুখ দেখা আমারও অনেক ভালো লাগে!”

লীলা খুশি হয়ে বলল, “ঠিক বলেছ, টুটু! তাহলে ঠিক আছে, আমরা প্রতিটি শনিবারে এই ছোট্ট আনন্দের মিছিল নিয়ে অনাথাশ্রমে যাব। সেখানে গিয়ে আমি বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করব, তাদের মুখে কুকিজের আনন্দ তুলে দেব।”

তারপর থেকেই প্রতি শনিবার সকালে লীলা তার কুকিজ বানানো শুরু করল। ময়দা, চিনি, মাখন আর চকোলেট চিপসে তার ছোট্ট রান্নাঘর ভরে উঠত। আর সে মনের আনন্দে গান গাইতে গাইতে কুকিজ বানাত। তার মনে তখন কেবলই অনাথাশ্রমের ছোট্ট ছোট্ট মুখগুলো ভেসে উঠত – তাদের হাসিমাখা মুখ, তাদের উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ, আর তাদের খুশির ঝিলিক।

প্রথম শনিবারে, লীলা আর টুটু তাদের কুকিজের ঝুড়ি নিয়ে আবারও অনাথাশ্রমের পথে বেরিয়ে পড়ল। রাস্তায় যেতে যেতে টুটু বলল, “লীলা, জানো, আমি মনে করি তুমি একদিন গ্রামের সবার প্রিয় হয়ে উঠবে! তোমার কুকিজ শুধু খাবার নয়, এতে জাদু আছে!”

লীলা হেসে বলল, “ওহ, টুটু, তুমি খুব মজার কথা বল! জাদু নয়, এটা কেবল আমার ভালোবাসা।” 

অনাথাশ্রমে পৌঁছানোর পর, বাচ্চারা সবাই আনন্দে ছুটে এল লীলার দিকে। তাদের চোখে আবার সেই উচ্ছ্বাস আর কৃতজ্ঞতার ঝিলিক দেখা যাচ্ছিল। তারা সবাই একসঙ্গে বলল, “লীলা দিদি এসেছে! আবার আমাদের জন্য কুকিজ নিয়ে এসেছে!”

সেইদিন বিকেলে লীলা বাচ্চাদের নিয়ে একসঙ্গে বসে গল্প শোনাল, আর কুকিজের ঝুড়ি থেকে একে একে সবার হাতে কুকিজ তুলে দিল। বাচ্চারা মনের আনন্দে কুকিজ খেতে লাগল, আর তাদের হাসির শব্দে আশ্রমের চারপাশ যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠল। 

সেই দিন থেকেই লীলা আর বাচ্চাদের মধ্যে একটি মধুর বন্ধন গড়ে উঠল। বাচ্চারা প্রত্যেক শনিবার লীলার জন্য অপেক্ষা করত। তার কুকিজ খাওয়ার জন্য তো বটেই, তার গল্প শোনার জন্যও। লীলা কখনো বনের এক সাহসী রাজকুমারের গল্প বলত, কখনো বলত এক ছোট্ট কাঠবিড়ালীর কথা যে তার বন্ধুকে বিপদ থেকে রক্ষা করে। প্রতিটি গল্পের শেষে বাচ্চাদের মুখে যে আনন্দের হাসি ফুটে উঠত, তা লীলার হৃদয়কে তৃপ্ত করত।

এভাবে সময় কেটে যেতে লাগল, আর লীলার কুকিজের গল্প গ্রামের অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে গেল। একদিন লীলার কাছে গ্রামপ্রধান এলেন এবং বললেন, “লীলা, তোমার এই উদ্যোগটা সত্যিই প্রশংসনীয়। তোমার কুকিজের মাধ্যমে তুমি যে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছ, তা আমাদের গ্রামকে আরও সুন্দর করে তুলছে।”

লীলা লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল, “প্রধান দাদু, আমি কিছুই করছি না। এটা তো কেবল আমার ভালোবাসা।” 

গ্রামপ্রধান মৃদু হেসে বললেন, “ভালোবাসাই তো আসল জাদু, মা। তোমার এই ছোট্ট উদ্যোগেই বড় সুখের গল্প লুকিয়ে আছে।”

তারপর থেকে লীলা শুধু অনাথাশ্রমেই নয়, গ্রামের আরও কিছু ছোট ছোট শিশুর কাছে কুকিজ পৌঁছে দিতে শুরু করল। তার মিষ্টি মিষ্টি কুকিজ যেন একটি ভালোবাসার সেতু তৈরি করল গ্রামের মানুষের মধ্যে। 

কিন্তু একদিন হঠাৎই লীলার মনে এক নতুন পরিকল্পনা জন্ম নিল। সে ভাবল, “আমি যদি আরও অনেক দূরে গিয়ে কুকিজের মিষ্টি স্বাদ পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে তো আরও অনেক শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে পারব।” 

এই নতুন ভাবনা নিয়ে লীলা ও টুটু ঠিক করল, তারা একদিন দূরের অন্য এক গ্রামে যাবে এবং সেখানে কিছু বাচ্চাদের জন্য কুকিজের আনন্দ নিয়ে আসবে। 

লীলার মিষ্টি উদ্যোগে গ্রামের সংযোগ

লীলা যখন প্রথমে একাই অনাথাশ্রমে কুকিজ নিয়ে গিয়েছিল, তখন সে কেবল নিজের ইচ্ছা ও ভালোবাসার মাধ্যমেই এই ছোট উদ্যোগ শুরু করেছিল। কিন্তু এখন সেই ছোট উদ্যোগটি যেন ধীরে ধীরে এক বড় উৎসবে পরিণত হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে শনিবার সকাল হতেই গ্রামবাসীদের মাঝে এক অন্যরকম উত্তেজনা দেখা দিত। সবাই জানত, আজ লীলা আবার তার মিষ্টি কুকিজ নিয়ে আসবে এবং শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলবে। 

এই ভালোবাসার উদ্যোগে গ্রামের অন্যান্য মানুষও একে একে যোগ দিতে শুরু করল। কেউ কেউ ছোট ছোট খেলনা কিনে নিয়ে আসত, কেউ পুরনো কিন্তু ভালো অবস্থার জামাকাপড় এনে বাচ্চাদের মধ্যে বিতরণ করত। প্রতিবার লীলা যখন কুকিজের ঝুড়ি নিয়ে অনাথাশ্রমে যেত, তখন তার সঙ্গে ছোট্ট এক মিছিল চলত—গ্রামের বিভিন্ন মানুষ, যারা তার এই আনন্দের কাজে সামিল হত।

গ্রামের এক বৃদ্ধা, কমলা মাসি, যার চোখে ঝাপসা দৃষ্টি কিন্তু মন ভরা ভালোবাসা, একদিন লীলার হাত ধরে বললেন, “মা, তুই আমাদের গ্রামে নতুন আলো এনে দিয়েছিস। তোর এই কুকিজের উদ্যোগ শুধু বাচ্চাদের নয়, আমাদের সবার মনকে আনন্দে ভরে তুলেছে। তুই এ কাজটা চালিয়ে যা, মা। তোকে দেখে আমাদেরও ইচ্ছে হয় কিছু করতে।”

লীলা মৃদু হেসে বলল, “ওহ, কমলা মাসি, এটা তো আমার ছোট্ট প্রয়াস মাত্র। আমি কখনো ভাবিনি এটা এত বড় উৎসবে পরিণত হবে।” 

সেইদিন বিকেলে লীলা যখন টুটুর সঙ্গে বসে গল্প করছিল, তখন টুটু বলল, “লীলা, তুমি জানো কি? তোমার এই মিষ্টি উদ্যোগে যে শুধু শিশুরা খুশি হচ্ছে তা নয়, বরং পুরো গ্রামটাই যেন এক পরিবারে পরিণত হয়েছে। তুমি আমাদের সবার মধ্যে এক নতুন বন্ধনের সৃষ্টি করেছ।”

লীলা মাথা নাড়ল। তার হৃদয়ে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি ভর করল। সে অনুভব করল, তার ছোট্ট কুকিজের উদ্যোগ কেবল শিশুদের মুখে হাসি আনছে না, বরং তার গ্রামকে আরও ঐক্যবদ্ধ করছে। তার এই উদ্যোগ যেন সকলের হৃদয়ে ভালোবাসা ও সাহায্যের বীজ বপন করছে। 

কিছুদিন পর, গ্রামের যুবকরা একটি পরিকল্পনা করল। তারা ঠিক করল যে তারা প্রতি মাসে একদিন সবাই মিলে বড় করে উৎসবের আয়োজন করবে। এই উৎসবে শুধু অনাথাশ্রমের শিশুরাই নয়, গ্রামের সব শিশু আর বয়স্ক মানুষও অংশগ্রহণ করবে। লীলার এই ছোট্ট উদ্যোগটি আস্তে আস্তে একটি বৃহৎ সেবার রূপ নিল। 

একদিন সকালে লীলা তার দোকানে বসে কুকিজ বানাচ্ছিল, তখন গ্রামের প্রধান, শম্ভু কাকু, এসে বললেন, “লীলা মা, আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছি, এবার থেকে তোমার কুকিজ উৎসব আরও বড় আকারে করা হবে। আমরা গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় একটি ছোট মেলা করব, যেখানে খেলার জিনিস, খাবার, আর নাচ-গান সবকিছু থাকবে। আর এই মেলাটি তোমার নামেই করা হবে।”

লীলা বিস্মিত হয়ে বলল, “শম্ভু কাকু, এত বড় আয়োজন! আমি তো কেবল কয়েকটা কুকিজ নিয়ে যেতাম। এটা কি সত্যিই সম্ভব?”

শম্ভু কাকু বললেন, “হ্যাঁ মা, তুমি আমাদের সবাইকে একত্রিত করার কাজ করেছ। তাই এ কাজটা তুমিই করবে।” 

এরপর থেকে প্রতি মাসের শেষ শনিবারে গ্রামে এই ছোট মেলার আয়োজন শুরু হল। সব বাচ্চা, বয়স্ক এবং তরুণরা মেলায় আসত। সবাই হাসিমুখে আনন্দে সময় কাটাত। লীলা দেখল, তার এই উদ্যোগটি সত্যিই এক মধুর বন্ধনে গ্রামবাসীদের বাঁধতে সক্ষম হয়েছে।

কিন্তু লীলার মন তখনও শান্ত ছিল না। তার মধ্যে একটি নতুন ইচ্ছা জন্ম নিচ্ছিল। সে ভাবল, “আমি কি আরও দূরে গিয়ে অন্য গ্রামগুলোতেও এই আনন্দের উদ্যোগ নিয়ে যেতে পারি না? যদি আরও অনেক শিশুর মুখে হাসি আনতে পারি?”

এমন ভাবনা আসতেই লীলা আর টুটু ঠিক করল যে তারা এবার অন্য গ্রামগুলোতেও এই মিষ্টি আনন্দের বার্তা নিয়ে যাবে। লীলা মনে মনে জানত, এ কাজ সহজ হবে না। কিন্তু তার মনে এক দৃঢ় ইচ্ছা ছিল, আর সেই ইচ্ছার উপর ভরসা করে সে ঠিক করল যে তার এই ভালোবাসার যাত্রা এবার আরও দূরে যাবে। 

অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - পরিবর্তনের যাত্রা: "পরিবর্তনের যাত্রা" একটি অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প, যা শিক্ষার গুরুত্ব এবং সংকল্পের শক্তি নিয়ে আলোচনা করে, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

হৃদয় থেকে দেওয়া উপহার

নীলাকাশের নিচে শান্ত গ্রামের মাঝে যখন লীলা তার কুকিজের ঝুড়ি নিয়ে হাঁটত, তখন শিশুরা ছোট ছোট পায়ে দৌড়ে এসে তার চারপাশে জড়ো হত। তাদের কচি মুখে আনন্দের হাসি আর উজ্জ্বল চোখ দেখে লীলার হৃদয় প্রতিবার ভরে উঠত। এই শিশুদের মুখে আনন্দ দেখেই লীলা অনুভব করল, এই খুশিই তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

একদিন সন্ধ্যায়, যখন লীলা নিজের দোকানে বসে কুকিজ বানাচ্ছিল, তখন টুটু তার পাশে এসে দাঁড়াল। টুটু বলল, “লীলা, তুমি কি জানো? তোমার এই ছোট্ট কুকিজের মাধ্যমে তুমি অনেক বড় একটা উপহার দিয়েছ আমাদের গ্রামকে। শুধু খুশি নয়, তুমি আমাদের সবাইকে একত্রে নিয়ে এসেছ।”

লীলা মৃদু হাসল। “জানি টুটু, তবে আমি তো কেবল একটু ভালোবাসার সঙ্গেই কুকিজ দিয়েছি। কখনো ভাবিনি, এটা এত প্রভাব ফেলবে।”

এরপর থেকে লীলার কুকিজের গল্প ধীরে ধীরে গ্রামের সীমানা ছাড়িয়ে আশপাশের গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ল। অনেক দূর দূরান্তের মানুষ তার দোকানে আসত, শুধু তার হাতের তৈরি কুকিজ কেনার জন্য নয়, বরং তার সেই স্নেহের কুকিজের গল্প শোনার জন্য। তারা জানত, এই কুকিজ শুধু একটা মিষ্টি খাবার নয়; এর মধ্যে রয়েছে লীলার ভালোবাসা, যা সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

কিছুদিন পর, রাজ্যের রাজা, যিনি সাধারণত গ্রামবাসীদের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নিতেন, লীলার এই উদ্যোগের কথা শুনলেন। তিনি ঠিক করলেন যে তিনি নিজে গ্রামে এসে লীলার কুকিজের স্বাদ নিবেন এবং তার উদ্যোগ সম্পর্কে জানবেন।

রাজার আগমনের সংবাদে গ্রামের সবাই আনন্দে মেতে উঠল। সবাই মিলে প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। লীলা কিছু বিশেষ কুকিজ বানানোর পরিকল্পনা করল যা হবে আরও সুস্বাদু আর রঙিন। এদিকে, গ্রামের মানুষজন ফুল, পাতা, আর আলো দিয়ে পুরো গ্রামটাকে সাজিয়ে তুলল যেন রাজার আগমন এক বড় উৎসবে পরিণত হয়।

অবশেষে সেই দিনটি এল। রাজা তার সৈন্যসামন্ত নিয়ে গ্রামে এসে উপস্থিত হলেন। গ্রামের ছোট্ট দোকানে দাঁড়িয়ে তিনি লীলার কুকিজের এক টুকরো মুখে দিলেন এবং মুগ্ধ হয়ে বললেন, “এ শুধু কুকিজ নয়, এ যেন এক খুশির টুকরো। লীলা, তুমি আমাদের রাজ্যে খুশির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছ।”

রাজা তার মুগ্ধতা প্রকাশ করে বললেন, “তোমার এই ছোট্ট উদ্যোগ আমাদের সকলকে শেখাল যে সত্যিকারের উপহার সেটাই, যা হৃদয় থেকে আসে। তুমি শুধু এই কুকিজের মাধ্যমে শিশুদের মুখে হাসি আনোনি, বরং তাদের হৃদয়ে আনন্দও দিয়েছ।”

এরপর রাজা লীলাকে রাজ্যের সম্মানে ভূষিত করলেন এবং বললেন, “তুমি যদি রাজ্যের সব গ্রামে এই কুকিজের আনন্দ পৌঁছে দাও, তবে সেটা হবে আমাদের সবার জন্য আরও বড় উপহার।”

লীলা অবাক হয়ে শুনল। সে ভাবল, “এ কি করে সম্ভব? আমি তো একাই এই কাজ করি। এত বড় উদ্যোগ আমি কি করে চালিয়ে যেতে পারব?” কিন্তু টুটু তখন তার পাশে এসে বলল, “লীলা, তুমি একাই এ কাজ শুরু করেছিলে, কিন্তু আজ তোমার সঙ্গে পুরো গ্রাম আছে। আমরা সবাই মিলে তোমার সঙ্গে কাজ করব।”

এভাবে গ্রামের সবাই মিলে লীলার এই উদ্যোগকে বড় করে তুলল। প্রতি সপ্তাহে লীলা আর তার সাথীরা কুকিজ বানাত আর রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছে দিত। যেখানে যেখানে তারা যেত, সেখানেই শিশুরা আনন্দে মেতে উঠত। আর এই কুকিজের আনন্দ সবার মনে এক গভীর ভালোবাসার ছাপ রেখে যেত।

দিনের শেষে, লীলা বুঝতে পারল যে তার ছোট্ট কুকিজের উদ্যোগ কত বড় পরিণতিতে পৌঁছেছে। সে শুধু বাচ্চাদের মুখে হাসি আনেনি; সে তাদের মনে আনন্দের বীজ বপন করেছে, যা তাদের সারাজীবন সুখী রাখবে। 

কিছুদিন পর, লীলা রাজ্যের সব শিশুদের মধ্যে এক নায়িকার মত হয়ে উঠল। সবাই তাকে ভালোবাসত এবং তাকে দেখলেই তার কাছে দৌড়ে যেত। লীলা তখন তাদের বলত, “দেখো বাচ্চারা, খুশি হওয়ার জন্য বড় কিছু প্রয়োজন হয় না। আমাদের মনে ভালোবাসা থাকলেই ছোট ছোট উপহারও অনেক বড় হয়ে যায়।”

এইভাবে লীলার গল্পটি ধীরে ধীরে শেষ হল। কিন্তু তার এই ভালোবাসা আর স্নেহের কুকিজের গল্পটি আজও মানুষের মনে জীবন্ত হয়ে রয়েছে। লীলা আমাদের শিখিয়ে গেল যে সেরা উপহার সেটাই, যা হৃদয় থেকে দেওয়া হয়, আর সেটা কখনো মলিন হয় না। 

এভাবেই এক মিষ্টি ও আনন্দময় গল্পের মাধ্যমে শিশুদের মনে সুন্দর স্মৃতি তৈরি করে শেষ হল লীলার গল্প।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

মৃত্যুর হাসি

"মৃত্যুর হাসি" একটি রহস্যময় ভুতের গল্প যেখানে দুই ভাইবোনের সাহস, মায়ের আত্মার আশীর্বাদ, ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই আপনাকে টানবে। পড়ুন এই বাংলা ছোট গল্প, যা ভয় ও আবেগে ভরা।

"মৃত্যুর হাসি" একটি রহস্যময় ভুতের গল্প যেখানে দুই ভাইবোনের সাহস, মায়ের আত্মার আশীর্বাদ, ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই আপনাকে টানবে। পড়ুন এই বাংলা ছোট গল্প, যা ভয় ও আবেগে ভরা।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: মৃত্যুর হাসি

অন্তিম সন্ধ্যা

"অন্তিম সন্ধ্যা" একটি রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প, যেখানে এক তরুণীর মৃত্যু, তার পরিবার, এবং শহরের অন্ধকারে লুকানো সত্যের খোঁজে উত্তেজনা ও মর্মস্পর্শী মুহূর্তের বুনন।

"অন্তিম সন্ধ্যা" একটি রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প, যেখানে এক তরুণীর মৃত্যু, তার পরিবার, এবং শহরের অন্ধকারে লুকানো সত্যের খোঁজে উত্তেজনা ও মর্মস্পর্শী মুহূর্তের বুনন।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অন্তিম সন্ধ্যা

স্বপ্নের সাথী

"স্বপ্নের সাথী" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে প্রেমের জটিলতা, বিচ্ছেদ ও পুনর্মিলন খুঁজে পাওয়া যায়। হৃদয়স্পর্শী সম্পর্কের গভীরতা ও নতুন সূচনার গল্প।

"স্বপ্নের সাথী" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে প্রেমের জটিলতা, বিচ্ছেদ ও পুনর্মিলন খুঁজে পাওয়া যায়। হৃদয়স্পর্শী সম্পর্কের গভীরতা ও নতুন সূচনার গল্প।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: স্বপ্নের সাথী

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!