সুন্দরবনের গভীর সবুজ জঙ্গলে এক সরু নদীর ধারে জন্মেছিল এক ছোট্ট বাঘের ছানা, নাম চিকু। সে দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই কৌতূহলী। চিকুর বড় বড় গোল চোখে সবকিছু নতুন, সবকিছুই যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকে টেনে নিয়ে যায়। সে প্রতিদিন সূর্যের প্রথম আলোতে উঠে দেখে সবুজ গাছপালা, ছোট ছোট নদী, পাখিদের কলকাকলি আর বনের নানান জীব-জন্তুর অদ্ভুত আওয়াজ। তার মনে সবসময়ই একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, “জঙ্গলের বাইরে কী আছে?”
চিকুর মা, যাকে সে ভালোবেসে “মা-মা” বলে ডাকে, খুব যত্নে তাকে বড় করছে। মা-মা বলেছে, “চিকু, জঙ্গল ছেড়ে দূরে যেও না। বাইরের পৃথিবী বড়োই বিপজ্জনক।”
তবু চিকুর মনে শান্তি নেই। সে ভাবতেই থাকে, বাইরের পৃথিবী দেখতে কেমন, সেখানে কী কী আছে। কোনোদিন হয়তো সে একা একাই বেরিয়ে যাবে। একদিন সকালে, সূর্য তখন সবে উঠেছে, চিকু সবে ঘুম থেকে উঠে ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলো। সে জানে, মা-মা তাকে কোনোদিনও দূরে যেতে দেবে না, তাই সে আস্তে আস্তে জঙ্গলের কিনারে এসে দাঁড়ালো। চারিদিকে তাকিয়ে দেখে, সামনে অনেকটা ফাঁকা মাঠ, তারও পরেই যেন আলাদা কোনো পৃথিবী।
চিকুর মনের কৌতূহল তখন আর বাঁধ মানে না। সে ভাবলো, “যাই দেখি, জঙ্গলের বাইরে কী আছে!” আর এই ভাবতে ভাবতে সে পা বাড়াল। জঙ্গলের ছায়া ছেড়ে সে ফাঁকা মাঠ পেরিয়ে আস্তে আস্তে এক গ্রামের দিকে এগোলো। হাঁটতে হাঁটতে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়, আর মনের মধ্যে ভয় মিশ্রিত উত্তেজনা কাজ করতে থাকে। প্রথমে চারপাশে ফুলের মিষ্টি গন্ধ পায়, যা জঙ্গলের গন্ধের থেকে একদম আলাদা। সে মাটিতে নানান রঙের ফুল পড়ে থাকতে দেখে, এবং তার মনটা খুশিতে ভরে ওঠে।
এদিকে গ্রামের দিকে এগোতে এগোতে চিকু এক অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পায়। মানুষের কোলাহল, কুকুরের ঘেউ ঘেউ, আর হাঁস-মুরগির ডাক – এমন সব শব্দ যা সে আগে কোনোদিন শোনেনি। তার প্রথমে একটু ভয় পেলেও সে ভাবলো, “কেমন অদ্ভুত জায়গা, কিন্তু খুবই মজার!”
গ্রামে ঢুকে চিকু দেখলো, একজন ছোট মেয়ে মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে ফুল কুড়োচ্ছে। মেয়েটির নাম মীরা। চিকুর পায়ের আওয়াজ শুনে মীরা ঘুরে দাঁড়ালো, আর তাকে দেখে প্রথমে একটু চমকে উঠলো। সে তো কোনোদিনও এমন ছোট্ট বাঘের ছানা দেখেনি, এবং তার আগে প্রথমে একটু ভয় পেলেও সে বুঝতে পারলো, চিকুর চোখে কোনো বিপদের ছাপ নেই।
মীরার সাহস হলো, আর সে চিকুর কাছে গিয়ে বললো, “তুমি কি এখানে হারিয়ে গেছ?” চিকু তখন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, কারণ এও তো সে কোনোদিন ভাবেনি যে মানুষ কথা বলে! চিকু একটু সাহস করে হালকা গলায় বললো, “না, আমি হারাইনি। আমি সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে এসেছি। আমার নাম চিকু।”
মীরা খুব খুশি হয়ে বললো, “আমি মীরা। তুমি কি আমার বন্ধু হবে? আমাদের গ্রাম দেখবে?” চিকু এক মুহূর্ত ভেবে নিয়ে মাথা নাড়লো। সে জানে, মায়ের বারণ সত্ত্বেও সে এখানে এসেছে, কিন্তু মীরার মুখে এত বড় হাসি দেখে তার মনে হল, বন্ধু বানানো বোধহয় খুবই মজার হবে।
মীরা তখন তার হাত ধরে বললো, “তাহলে চলো! আমি তোমাকে আমাদের গ্রাম দেখাই।” চিকু আস্তে আস্তে গ্রামে হাঁটতে শুরু করলো মীরার সাথে। গ্রামের মানুষজন তাকে দেখে একবার চমকে উঠলেও মীরার সাথে দেখে অনেকেই মুচকি হাসলো। চিকুর মনে হলো, এখানকার মানুষজন বেশ মজার, তারা তাকে দেখে কোনো ভয় পেল না, বরং আনন্দেই তাকালো।
গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে মীরা তাকে নানান কথা শোনালো। সে বললো, “চিকু, আমাদের গ্রামে বড় বড় উৎসব হয়। আমরা সবাই মিলে নাচ-গান করি। আর এই ফুলগুলো, এগুলো আমরা মায়ের জন্য নিয়ে যাই। মা রান্না করেন, পুজো করেন, খুবই আনন্দের সময় কাটে।”
চিকু মুগ্ধ হয়ে শোনে। সে তো কখনো মানুষের উৎসব দেখেনি, এমন আনন্দের সময় কাটাতে দেখেনি। সে ভাবলো, “মানুষেরা এত মজার কাজ করে! এরা খেলে, গান গায়, একসাথে নাচে!” তার মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। সে মীরাকে বলে, “আমার জঙ্গলেও অনেক মজা আছে। আমরা অনেকেই একসাথে থাকি, খেলাধুলো করি, গাছে গাছে লাফাই। আমাদের একটা নদী আছে, যেখানে আমরা পানি খাই, আর গাছপালার ছায়ায় বিশ্রাম নেই।”
মীরা শুনে হেসে ফেলে। সে বললো, “তুমি যে কত মজার, চিকু! তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে পেরে আমি খুব খুশি। তুমি আমার জীবনে প্রথম বাঘের বন্ধু!”
চিকু হেসে বলে, “তাহলে আমিও তোমার জীবনে প্রথম বাঘের বন্ধু!” দুজনেই হেসে ওঠে।
এইভাবে সেদিন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। চিকুর মন কিছুটা খুশি, আবার কিছুটা চিন্তিত। কারণ সে জানে, মা-মা চিন্তা করবে। কিন্তু মীরা তাকে বুঝিয়ে বললো, “তুমি আবার আসবে, আমরা একসাথে আরো মজা করবো।”
সেদিনের পরে চিকু আর মীরার বন্ধুত্ব গভীর হতে থাকে। তারা প্রায়ই একসাথে গ্রাম আর জঙ্গল ঘুরে বেড়ায়, নানান গল্প করে। তবে একদিন হঠাৎ করেই তারা শুনলো, জঙ্গলের ধারে কিছু অচেনা মানুষের আওয়াজ। মীরা কান পাতলো, আর চিকুও তাকিয়ে রইলো। লোকগুলো গম্ভীর গলায় কথা বলছে, আর তাদের কথায় বারবার শিকার বা পশুদের কথা উঠছে। চিকুর মনটা কেঁপে উঠলো। সে বুঝতে পারলো, এরা হয়তো শিকারী।
চিকু চমকে উঠলো, তার মনে তখন ভয় মিশ্রিত কৌতূহল। সে ভাবলো, “এরা আমার পরিবার আর বন্ধুরা কি বিপদে ফেলবে?” তার মনে এক অদ্ভুত চিন্তা খেলে গেল।
মীরা চিন্তিত হয়ে বললো, “চিকু, এরা নিশ্চয়ই শিকার করতে এসেছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।” চিকুর মুখে তখন দৃঢ়তার ছাপ। সে বললো, “মীরা, আমাদের দ্রুত কিছু করতে হবে। আমার মা-মাকে বলবো, আর সবাইকে সাবধান করবো।”
মীরা বললো, “হ্যাঁ, চলো। আমরা সবাই মিলে জঙ্গলের সবাইকে এই বিপদের কথা জানাই।”
এতক্ষণে সন্ধ্যার ছায়া গাঢ় হয়েছে, চাঁদের আলো জ্বলজ্বল করছে আকাশে। চিকু আর মীরা দ্রুত জঙ্গলের দিকে ছুটে গেল। তাদের সামনে যে বিপদ, তার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - পরিবর্তনের যাত্রা: "পরিবর্তনের যাত্রা" একটি অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প, যা শিক্ষার গুরুত্ব এবং সংকল্পের শক্তি নিয়ে আলোচনা করে, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
মীরার সাথে বন্ধুত্ব
চিকু যখন গ্রামে এসে পৌঁছলো, তখন সকাল গড়িয়ে বিকেলের দিকে যাচ্ছিল। রোদ্দুর ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে, আর সেই আলোয় চিকুর চারপাশটা যেন আরো নতুন লাগছে। চারিদিকে মানুষের কোলাহল, মাটির ঘরবাড়ি, নানান গাছের নিচে বসে গল্প করা মানুষজন – এসব দেখে চিকুর মনটা খুশিতে ভরে উঠছে।
কিছুটা সামনে গিয়েই চিকুর নজর পড়লো একটি ছোট মেয়ের দিকে, যার বয়স হয়তো আট কিংবা নয় বছর হবে। মেয়েটির গায়ে গোলাপি রঙের ফ্রক, আর সে মাটিতে নেমে ফুল কুড়োচ্ছে। চিকু কিছুটা ভয়ে ভয়ে মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু মেয়েটি হঠাৎ চিকুকে দেখে থমকে দাঁড়ালো। প্রথমে তার মনে ভয় ঢুকে গেল, কারণ সে তো এমন একটি ছোট্ট বাঘের ছানা আগে কখনও দেখেনি।
কিন্তু চিকুর বড় বড় গোল চোখ আর মিষ্টি মুখ দেখে মেয়েটির ভয় একটু কমলো। সে বুঝতে পারলো, এই ছোট্ট বাঘটা কোনো বিপদ আনার জন্য আসেনি। সে আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে চিকুর কাছে দাঁড়িয়ে বললো, “তুমি কে? তুমি তো আমাদের গ্রামের কেউ নও!”
চিকু মৃদু হেসে বললো, “আমার নাম চিকু। আমি সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে এসেছি। আমি আসলে এখানে ঘুরতে এসেছি, বাইরের পৃথিবী দেখতে। তোমার নাম কী?”
মেয়েটি হেসে বললো, “আমার নাম মীরা। আমি প্রতিদিন এই সময়ে ফুল কুড়োই, মা-মার জন্য। মা এই ফুলগুলো দিয়ে পুজো করেন।” মীরা চিকুর মিষ্টি চেহারা দেখে একটু সাহস পেল। সে বললো, “তুমি কি আমার বন্ধু হবে?”
চিকুর মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। এতদিন ধরে সে জঙ্গলের বাইরে এসে এমন একটা বন্ধুত্বের খোঁজে ছিল। সে সঙ্গে সঙ্গে মাথা নেড়ে বললো, “অবশ্যই! আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই।”
মীরা খুশিতে চিকুর পায়ে হাত রাখলো এবং তাকে তার সাথে গ্রাম দেখাতে নিয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে মীরা বললো, “আমাদের গ্রামটা খুব সুন্দর। এখানে আমরা সবাই খুব মজা করে থাকি। প্রত্যেক ঋতুতে আমরা নানা উৎসব করি। সব সময় নাচ, গান আর আনন্দে দিন কাটাই।”
চিকু মুগ্ধ হয়ে মীরার কথা শুনতে লাগলো। সে কখনও মানুষের গ্রামে আসেনি, আর মানুষদের জীবন সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। সে মীরাকে তার জঙ্গলের গল্প শোনালো, “আমাদের জঙ্গলে অনেক বড় বড় গাছ আছে, যেখানে আমি আর আমার বন্ধুরা খেলি। নদীর ধারে বসে আমরা পানি খাই, আর আমার মা-মা আমাদের দেখাশোনা করেন। জঙ্গলে খুব শান্তি।”
মীরাও বেশ উৎসাহ নিয়ে শুনতে লাগলো। সে মনের মধ্যে জঙ্গল দেখার ইচ্ছা নিয়ে বললো, “তুমি তো খুব মজার জায়গা থেকে এসেছো! তোমার সাথে যদি কোনোদিন তোমার জঙ্গলে যেতে পারতাম!”
চিকু মৃদু হাসলো, আর বললো, “কেন নয়? তুমি ইচ্ছে করলেই একদিন আসতে পারো আমার জঙ্গলে। আমি তোমাকে সবকিছু দেখাবো।” এইভাবে কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। মীরার হাসি আর চিকুর কৌতূহল একসাথে মিলিয়ে যেন একটা নতুন দুনিয়া তৈরি হলো।
এমন সময় চিকু হঠাৎ করে এক অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেল। সে থেমে গেল এবং মীরার দিকে তাকিয়ে বললো, “এই শব্দটা কিসের?”
মীরা একটু চিন্তায় পড়ে বললো, “ওটা হয়তো গ্রামের বড় মেলার আওয়াজ। আমরা প্রতি বছর এই সময়ে একটা বড় মেলা করি। সেখানে অনেক খাবার, খেলনা আর নাচ-গান হয়। তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবো?”
চিকু আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি দেখতে চাই! আমি কখনো মেলা দেখিনি।”
তারা দুজনে একসাথে গ্রামের মেলার দিকে রওনা দিলো। মেলার মধ্যে ঢুকতেই চিকুর চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সে এত রঙ, এত আলো আর এত মানুষের ভিড় আগে কখনও দেখেনি। মেলার ভেতরে বড় বড় প্যান্ডেল সাজানো, আর তার মধ্যে নানা রকমের খাবারের দোকান, খেলনা বিক্রির দোকান, আর লোকজনের কোলাহল। মেলার এক কোণে একটা ছোট্ট কুমির মাটিতে শুয়ে আছে, আর বাচ্চারা তার সাথে খেলছে।
চিকু অবাক হয়ে বললো, “কুমিরও এখানে আসে?”
মীরা হেসে বললো, “ওটা সত্যিকারের কুমির নয়, ওটা খেলনা। কিন্তু দেখতে অনেকটা আসল কুমিরের মতো।”
চিকুর মনের মধ্যে নতুন নতুন প্রশ্ন জাগতে থাকলো। সে ভাবলো, মানুষের দুনিয়ায় এমন সব মজার জিনিস আছে, যা সে আগে কোনোদিন ভাবেনি। সে মীরার সাথে মেলার নানা জায়গায় ঘুরতে লাগলো, নানা রকমের খেলনা দেখতে লাগলো। এক সময় তাদের দেখা হলো গ্রামের একজন বয়স্ক দাদুর সাথে, যার নাম ছিল ধনেশ্বর কাকু। তিনি গ্রামে সবাইকে গল্প শোনান, আর বাচ্চারা তাকে খুব ভালোবাসে।
ধনেশ্বর কাকু চিকুকে দেখে বললেন, “বাবা, তুমি কোথা থেকে এসেছো? আগে তো তোমাকে দেখি নাই!”
মীরা বললো, “ধনেশ্বর কাকু, ও আমার নতুন বন্ধু চিকু। ও সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে এসেছে, ও আমার সাথে মেলা দেখতে এসেছে।”
ধনেশ্বর কাকু হাসিমুখে বললেন, “বাহ! এই তো খুব ভালো খবর। তুমি তো আমাদের মেলার আনন্দ আরো বাড়িয়ে দিলে। কিন্তু দেখো, সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, সময়মতো বাড়ি ফিরে যেও।”
চিকু কাকুর কথা শুনে একটু চিন্তিত হয়ে গেল। সে জানে, মা-মা তাকে নিয়ে নিশ্চয়ই চিন্তা করবে। মীরার হাত ধরে সে বললো, “আমাকে এখন ফিরে যেতে হবে। আমার মা-মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
মীরা বললো, “ঠিক আছে, চিকু। তুমি আরেকদিন আবার এসো। আমরা আবার মেলা ঘুরবো আর অনেক মজা করবো।”
চিকু বিদায় নিলো, আর তার মনে এখন মেলার স্মৃতি, মীরার বন্ধুত্ব আর ধনেশ্বর কাকুর গল্পের কথা ভাসছে। জঙ্গলের দিকে ফিরে যেতে যেতে তার মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। সে ভাবলো, এই গ্রামে সে এমন একজন বন্ধু পেয়েছে, যাকে সে সবসময় মনে রাখবে।
চিকু জঙ্গলের ভেতরে এসে মৃদু আলোয় গাছপালার নিচে বিশ্রাম নিলো, আর মনে মনে ভাবলো, “আজকের দিনটা সত্যিই খুব সুন্দর ছিল! আবার মীরার সাথে দেখা হবে।”
কিন্তু তার মনেই ছিল না, পরের দিন আরেকটি নতুন রহস্য অপেক্ষা করছে তার জন্য, যেটা তাকে নিয়ে যাবে এক নতুন অভিযানে।
বিপদের আগমনী বার্তা
বৃষ্টি নামার আগের সন্ধ্যার মতো চারিদিকে একটা থমথমে ভাব। চিকু আর মীরা আজ একসাথে গ্রামের বাইরে, জঙ্গলের ধারে খেলা করছিল। চিকু বেশ আনন্দে ছিল, কারণ মীরার সাথে এই কয়েকদিনে সে অনেক কিছু শিখেছে গ্রামের জীবন নিয়ে। মীরাও জঙ্গলের নানা রহস্যের কথা শুনে মুগ্ধ। তাদের বন্ধুত্ব যেন আরো গভীর হয়েছে।
তাদের খেলা চলছিল হেসে-খেলে, গল্পের পর গল্পে। এমন সময় হঠাৎ করে দু’জনেই দূরে কিছু গলা শুনতে পেল। প্রথমে তারা ভাবলো এটা হয়তো মেলার লোকজনের আওয়াজ। কিন্তু শব্দগুলো একটু খেয়াল করে শুনতেই চিকুর মনটা আশঙ্কায় ভরে উঠলো।
“এই জায়গাটাই ঠিক আছে। সন্ধ্যার পর জঙ্গলে ঢুকে পড়ব,” একজন গম্ভীর গলা বললো।
“হ্যাঁ, ওরা এখানে অনেক বাঘ আছে বলে শোনা যায়। কিছু শিকার করতে পারলে তো মস্ত লাভ,” আরেকজন বললো হেসে।
এই কথা শুনে চিকুর সারা গায়ে যেন কাঁটা দিয়ে উঠলো। সে বুঝতে পারলো, এরা আসলে শিকারী। তারা জঙ্গলে ঢোকার পরিকল্পনা করছে, আর এদের উদ্দেশ্য কিছুতেই ভালো নয়। এই শিকারিরা তার পরিবারের জন্য ভয়ানক হুমকি।
চিকু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, “মীরা, এই লোকগুলো তো শিকারী! তারা আমাদের জঙ্গলে ঢুকে আমার পরিবারকে ধরতে আসছে! আমি তো মাকে কথা দিয়েছি, আমি সবসময় আমাদের সুরক্ষার জন্য পাশে থাকবো।”
মীরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল প্রথমে, কিন্তু দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, “তুমি ঠিক বলেছো, চিকু। আমাদের সবাইকে সতর্ক করতে হবে। কিন্তু কিভাবে?”
চিকু তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিলো, “আমাদের এখনই জঙ্গলের দিকে ছুটে যেতে হবে। মাকে খবর দিতে হবে, যাতে সবাই সাবধান হয়ে যায়।”
মীরা বললো, “ঠিক আছে, আমিও তোমার সাথে যাবো। তুমি একা এটা করতে পারবে না।”
তারা একসাথে ছুটে চললো জঙ্গলের দিকে। মীরার পায়ে জঙ্গল পেরোতে একটু কষ্ট হচ্ছিল, কারণ পথটা খুবই আঁকাবাঁকা। কিন্তু সে সাহস হারালো না। চিকু তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চললো। সন্ধ্যা নেমে আসছে, আর জঙ্গলের ছায়াগুলো ক্রমশ গভীর হচ্ছে।
তারা পৌঁছাল এক বিশাল পুরোনো বটগাছের নিচে, যেটা ছিল তাদের মিলনের স্থল। সেখান থেকেই শুরু হলো চিকুর মিশন। সে তার মা-মাকে ডাকতে শুরু করলো, “মা-মা! তোমাকে একটা খুব জরুরি কথা বলতে হবে।”
তার ডাকে কিছুক্ষণের মধ্যেই চিকুর মা চলে এলেন। তিনি তার ছোট্ট ছানার চেহারা দেখে একটু চিন্তিত হয়ে বললেন, “চিকু, কী হয়েছে? তুমি এত ব্যস্ত কেন?”
চিকু শ্বাস নিতেই বললো, “মা, গ্রাম থেকে কিছু লোক আমাদের জঙ্গলে ঢোকার পরিকল্পনা করছে। তারা শিকারী, আর তারা আমাদের ক্ষতি করতে চাইছে।”
তার মায়ের চোখে ভয় দেখা দিল, কিন্তু তিনি শান্ত গলায় বললেন, “তুমি ঠিক বলেছো, আমাদের সবাইকে সাবধান করতে হবে। আমি এখনই বাকিদের খবর দেবো।”
এরপর, চিকুর মা একে একে সবার কাছে খবর পৌঁছে দিলেন। জঙ্গলের সমস্ত প্রাণী শিকারীদের থেকে সাবধান হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো। পুরোনো বটগাছের নিচে বসে সবাই মিলে একটা পরিকল্পনা করলো, যাতে শিকারীরা তাদের ধোঁকা দিতে পারে না।
চিকুর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো তার বন্ধু মীরা, যার মুখেও চিন্তার ছাপ। কিন্তু সে সাহস জুগিয়ে চিকুকে বললো, “তুমি খুব সাহসী, চিকু। যদি তুমি এত তাড়াতাড়ি খবর না দিতে, হয়তো বড় বিপদ ঘটত।”
চিকুর মন কিছুটা শান্ত হলো, কিন্তু সে জানে যে, শিকারীরা সহজে ফিরে যাবে না। তারা আবার আসবে, আর তাই তাদের সবাইকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।
তখনই চিকুর মায়ের ডাকে সবাই চুপ হয়ে গেল। তিনি বললেন, “শোনো সবাই, আজ রাতে আমাদের পাহারার দায়িত্ব বেশি কঠিন হবে। শিকারীরা যেন কোনোভাবেই আমাদের কাছে পৌঁছতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”
এই কথায় সবাই সম্মতি জানালো। বটগাছের পাশে বড় বড় পাথরের আড়ালে জঙ্গলের প্রাণীরা নিজেদের লুকানোর জায়গা ঠিক করে নিলো। তাদের মধ্যে অনেকেই জানতো না যে, শিকারী কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, কিন্তু আজকের রাত যেন তাদের প্রথম পরীক্ষা।
এদিকে মীরাও পাশে দাঁড়িয়ে বললো, “আমিও আজকে তোমাদের পাহারায় সাহায্য করবো, চিকু। তোমার পাশে আমি আছি।”
চিকুর চোখে আনন্দের ঝিলিক ফুটে উঠলো। সে বললো, “ধন্যবাদ, মীরা। আমরা একসাথে আছি, আর তাই কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না।”
এইভাবে তারা দুজনে মিলে পুরো রাত জেগে পাহারায় বসে থাকলো। চারিদিকে নিশব্দতা, মাঝে মাঝে শুধুই ঝিঁঝি পোকার ডাক। রাতের আঁধারে চিকু আর মীরা একে অপরকে সাহস যোগাতে লাগলো।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করলো, আর চিকুর মনে হলো, আজকের এই রাত যেন একটা বড় যুদ্ধের মতো ছিল। কিন্তু তারা সফল হয়েছে, কারণ শিকারীরা কোনো সুযোগ পায়নি জঙ্গলে ঢোকার। সূর্যের আলো চারিদিক উজ্জ্বল করে তুলতেই চিকু আর মীরা গভীর শ্বাস নিয়ে একে অপরের দিকে তাকালো।
মীরার চোখে খুশির ঝিলিক, সে বললো, “চিকু, আমরা পারলাম! তুমি খুব সাহসী, তোমার জন্যই আজ জঙ্গল রক্ষা পেল।”
চিকু মাথা নত করে বললো, “না, মীরা। এটা আমাদের সবার মিলিত প্রচেষ্টার ফল। তুমি যদি আমার পাশে না থাকতে, আমি হয়তো এত সাহস করতে পারতাম না।”
তারপর তারা একসাথে বটগাছের নিচে বিশ্রাম নিতে বসল। কিন্তু তখনই তাদের চোখে পড়লো, জঙ্গলের একটা পথ কিছুটা ভাঙা, যেটা দেখে চিকুর মনে হলো, শিকারীরা আবারও আসতে পারে। তার মনে হলো, এই বিপদ এখনো পুরোপুরি কেটে যায়নি।
চিকু মীরার দিকে তাকিয়ে বললো, “মীরা, আমাদের এখনো সাবধান থাকতে হবে। শিকারীরা হয়তো আবার আসবে। আমাদের একটা স্থায়ী পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে এই বিপদ পুরোপুরি কেটে যায়।”
মীরা মাথা নাড়লো, “তুমি ঠিক বলেছো, চিকু। আমরা সবাই মিলে শিকারীদের থেকে জঙ্গলের প্রাণীদের সুরক্ষা করার জন্য একটা ভালো ব্যবস্থা করবো। এবার আমাদের নতুন এক অভিযান শুরু করতে হবে।”
চিকু আর মীরার মধ্যে আবারও এক নতুন আশা জাগলো, আর তাদের সামনে খুলে গেল এক নতুন পথের সন্ধান, যা তাদের নিয়ে যাবে আরো বড় আর রহস্যময় এক অভিযানে।
ছোটদের রূপকথার গল্প - মিরার মায়া: "মিরার মায়া" এক হৃদয়ছোঁয়া ছোটদের গল্প যেখানে মিরা নামের এক মেয়ে তার জাদুকরী ক্ষমতা দিয়ে প্রাণীদের সাহায্য করে। এই রূপকথার গল্প ভালোবাসা, দয়া ও প্রকৃত সুখের সন্ধানে রচিত। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
আগুনের আতঙ্ক
সকালের প্রথম আলো যখন চিকু আর মীরা জঙ্গলের খোলা মাঠের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন তারা দূর থেকেই দেখতে পেল যে কোনো এক অজানা বিপদ তাদের অপেক্ষায় আছে। বাতাসে ধোঁয়ার গন্ধ মিশে ছিল, আর দূরে কোথাও মৃদু লাল-কমলা আলো দেখা যাচ্ছিল। যতই এগোলো, চিকুর মনটা যেন একটা ভারী পাথর দিয়ে চেপে ধরেছে।
খোলা মাঠে পৌঁছাতেই তারা দেখতে পেল আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। জঙ্গলের ঘাস আর শুকনো পাতা ততক্ষণে দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে। ধোঁয়া আর আগুনের তাপে চারদিক যেন একটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। চিকুর মনের মধ্যে তখন শুধুই একটাই প্রশ্ন—“আমার পরিবার কি এই আগুন থেকে রক্ষা পাবে?”
চিকু থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বললো, “মীরা, কীভাবে এই আগুন নেভাবো? আমার পরিবার তো এই আগুনে শেষ হয়ে যাবে!”
মীরা অবশ্য খুব শান্ত। তার গ্রামের মানুষ অনেকবার এ ধরনের আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছে, আর সে নিজেও সেই কাজে সাহায্য করেছে। সে জানতো, এই পরিস্থিতিতে কীভাবে কাজ করতে হবে। মীরা দ্রুত বললো, “চিকু, ভয় পাস না। আমরা সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি, তবে অবশ্যই এই আগুন নিভিয়ে ফেলতে পারবো।”
মীরা চারদিকে তাকিয়ে বললো, “প্রথমে আমাদের দরকার কিছু বড় পাতা, যেগুলো দিয়ে আগুনের শিখা চাপা দিতে পারি। এছাড়া, নদী থেকে জল আনতে হবে। আমাদের সবাইকে সাহায্য করতে হবে, অন্য প্রাণীদেরও বল।”
চিকু মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো, আর চারিদিকে ডাকতে শুরু করলো, “সবাই শুনতে পাচ্ছো? তোমাদের সাহায্য প্রয়োজন! আমাদের জঙ্গল রক্ষা করতে হবে!”
চিকুর ডাক শুনে জঙ্গলের বিভিন্ন প্রাণীরা একে একে সেখানে এসে হাজির হলো। খরগোশ, শেয়াল, কাঠবিড়ালি, এমনকি কাছের হ্রদের কাছ থেকে হাঁসেরাও চলে এলো। মীরার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী তারা কাজে নেমে পড়লো। হাঁসেরা তাদের ঠোঁটে করে হ্রদ থেকে জল এনে ঢালতে লাগলো, আর বাকি প্রাণীরা বড় বড় পাতা এনে আগুনের শিখাগুলো চাপা দিতে লাগলো।
চিকুও তার ছোট ছোট পা নিয়ে পাতা এনে আগুনের উপর ফেলে দিচ্ছিল। তার মনে সাহস ফিরে আসছিল মীরার পাশে থেকে। আগুনের তাপ অনেক বেশি ছিল, তবে সবার চেষ্টায় কিছুটা কমতে শুরু করলো।
তাদের মধ্যে একটা বড় গাছের নীচে একটা বুড়ো কচ্ছপ ছিল, যে চারিদিকের পরিস্থিতি দেখছিল। সে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বললো, “আগুনের নীচের দিকে পানি ফেলা উচিত। উপরের দিকে ফেলা খুব একটা কাজে আসে না। নিচ থেকে শিখা উঠতে থাকে, আর তাতেই জ্বলতে থাকে।”
মীরার মুখে হাসি ফুটলো। সে বললো, “বুড়ো কাকু, তুমি ঠিক বলেছো। আমাদের নিচ থেকে পানি ঢালা শুরু করতে হবে।”
এরপর প্রাণীরা মিলে ঠিক করে, ছোট্ট একটা দল নদী থেকে পানি নিয়ে এসে নিচের দিক থেকে আগুনের চারপাশে ঢালবে। সবাই মিলে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে শুরু করলো।
বিড়ালটি তার নরম লেজ দিয়ে আগুনের চারপাশে ছোটো ছোটো ঢিবি তৈরি করতে শুরু করলো, যাতে আগুন ছড়াতে না পারে। আবার ছোট্ট কাঠবিড়ালিটি দ্রুত দৌড়ে গিয়ে বড় বড় পাতা নিয়ে এসে আগুনের উপর চাপা দিতে লাগলো।
অনেকক্ষণ ধরে এভাবে পরিশ্রম করতে করতে সবারই যেন কণ্ঠ শুকিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তাদের চোখে ছিল একটাই লক্ষ্য—জঙ্গলকে বাঁচাতে হবে। ধীরে ধীরে আগুনের শিখা কমতে শুরু করলো। ততক্ষণে সূর্যের আলোও কিছুটা ম্লান হয়ে আসছে, আর আগুনের তীব্রতা কমে গিয়ে ধোঁয়ায় পরিণত হয়েছে।
অবশেষে, কিছু সময় পর আগুন পুরোপুরি নিভে গেল। ধোঁয়া ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল, আর সেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে সবার মনে একটা গভীর শান্তি নেমে এল। চিকু হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, “আমরা পারলাম! আমাদের জঙ্গল এখন নিরাপদ।”
মীরা গর্বিতভাবে হাসলো, আর বললো, “তুমি আর তোমার বন্ধুদের জন্যই আজ আমরা জঙ্গল রক্ষা করতে পারলাম, চিকু। সবাই মিলে চেষ্টা করলে কোনো সমস্যাই বড় নয়।”
বাকি প্রাণীরা একে একে চিকু আর মীরাকে অভিনন্দন জানাতে লাগলো। সব প্রাণীদের মধ্যে যেন এক নতুন বন্ধনের সৃষ্টি হলো এই বিপদের মুহূর্তে।
তবে তখনই বুড়ো কচ্ছপটি ধীরে ধীরে বললো, “এই আগুন তো নিভে গেল, কিন্তু শিকারীদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। তারা আবারও আসতে পারে। আমাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য আরও ভালো কিছু ব্যবস্থা করতে হবে।”
চিকু আর মীরার মুখে চিন্তার ছায়া পড়লো। শিকারীদের এই হুমকি যেন বারবার তাদের জীবনে ফিরে আসছে। চিকু বললো, “আমরা এবার কিছু শক্তিশালী রক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করবো, যাতে জঙ্গল আর আমাদের পরিবারের জন্য কোনো বিপদ না আসে।”
সবার মধ্যে এক নতুন সংকল্প জাগলো। মীরা বললো, “আমাদের এমন কিছু করতে হবে, যাতে শিকারীরা আর কখনো এখানে ফিরে আসার সাহস না পায়।”
এই কথাগুলি শোনার পর সবাই সম্মতি জানালো। তারা ঠিক করলো, পরবর্তী অধ্যায়ে তারা একসাথে মিলে শক্তিশালী এক রক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনা করবে, যাতে তাদের প্রিয় জঙ্গল আর পরিবারের কোনো ক্ষতি না হয়।
সাহসী চিকুর পদক্ষেপ
গভীর জঙ্গলের সবুজ ঘাসের উপর চিকু দাঁড়িয়ে ছিল, চোখে ছিল দৃঢ় সংকল্প আর মনে সাহসের ঢেউ। চারদিকে হালকা ধোঁয়া এখনো উড়ছিল আগুনের পরের পরিণামে, আর তার মাঝেই চিকু নিজেকে শক্ত করে ধরলো। সে জানতো, আজকের এই বিপদ শুধু আগুনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; শিকারীরাও যে কোনো মুহূর্তে ফিরে আসতে পারে।
মীরা তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো, “চিকু, তুমি একাই তো এই বিপদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছো। আমরা সবাই তোমার নির্দেশে কাজ করবো। বলো কী করবো আমরা?”
চিকু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। তার চোখে ছিল দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাস। সে বললো, “প্রথমে আমাদের সবাইকে নিরাপদ পথে নিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি সবাই মিলে জঙ্গলের এক প্রান্তে আশ্রয় নিই, তাহলে শিকারীদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পারবো।”
তার কথা শুনে জঙ্গলের ছোট ছোট প্রাণীগুলিও উৎসাহিত হয়ে উঠলো। খরগোশ, শেয়াল, কাঠবিড়ালি—সবাই চিকুর কথা শুনে তৈরি হলো। চিকু ধীরে ধীরে তাদের নিয়ে জঙ্গলের গভীরে সরে যেতে লাগলো। সে খুব ভালোভাবে জানতো কোন পথে গেলে শিকারীরা তাদের দেখতে পাবে না। চিকুর সাহসিকতা দেখে অন্য প্রাণীরাও সাহস পেলো, এবং একে একে সবাই নিরাপদে সরে যেতে লাগলো।
চিকু তাদের পথ নির্দেশ করছিল আর মাঝে মাঝে মীরার দিকে তাকিয়ে সাহায্য চাইছিল। মীরাও তার সবটুকু দিয়ে চিকুর পাশে দাঁড়ালো। ধীরে ধীরে তারা জঙ্গলের আরো গভীরে চলে গেল, যেখানে শিকারীদের পৌঁছানো মুশকিল।
তবে এরপরই একটা সংকেত পেলো মীরা। সে মৃদু কণ্ঠে বললো, “শিকারীরা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে, চিকু। এখন কী করবো?”
চিকু চিন্তায় পড়ে গেল, কিন্তু তার মনোবল কমলো না। সে জানতো, এখনই সময় তার সাহসিকতার পরিচয় দেওয়ার। সে বললো, “আমরা সবাই মিলে যদি বড় বড় গাছের পিছনে লুকিয়ে থাকি, তাহলে শিকারীরা আমাদের দেখতে পাবে না। আমরা আরো গভীরে যাওয়ার আগে এখানে একটু অপেক্ষা করবো।”
চিকুর কথামতো সবাই গাছের পিছনে আশ্রয় নিলো। শিকারীদের পদধ্বনি শুনে সবাই কাঁপছিল, কিন্তু চিকু ভীত না হয়ে মীরাকে চোখে চোখে রাখলো। সে জানতো, তার বন্ধুর উপর ভরসা রাখলেই এই বিপদ কেটে যাবে।
কিছুক্ষণ পরে শিকারীরা তাদের কাছাকাছি এসে পড়লো। তারা চারদিকে তাকিয়ে দেখতে শুরু করলো, কিন্তু কোনো প্রাণীর দেখা পেলো না। শিকারীদের মধ্যে একজন বলে উঠলো, “এখানে তো কেউ নেই। আমরা ফিরে যাই। সময় নষ্ট করার মানে নেই।”
চিকু আর মীরা গাছের আড়াল থেকে তা দেখে একটু স্বস্তি পেলো। তবে মীরা বুঝতে পারলো, এই বিপদ হয়তো এখন কেটে গেছে, কিন্তু আবারো যে তারা আসবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই মীরা বললো, “চিকু, আমাদের আরো শক্তভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে শিকারীরা আর কখনো আমাদের জঙ্গল আক্রমণ করতে না পারে।”
চিকু মাথা নেড়ে মীরার সাথে একমত হলো। সে বললো, “আমাদের একটা নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। যেখানে আমরা সবাই মিলে পাহারা দেবো, আর যদি কোনো বিপদ আসে, তাহলে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে পারবো।”
তারপর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো, তারা রাত জেগে পাহারা দেবে। বড় বড় গাছগুলোর চারপাশে তারা শিকড় আর লতাপাতা দিয়ে একটা বেষ্টনী তৈরি করলো। আর একে একে পালা করে সবাই পাহারার জন্য দাঁড়ালো।
এদিকে চিকু আর মীরা তাদের মধ্যে এক গভীর বন্ধন অনুভব করছিল। মীরা তার স্নেহময় কণ্ঠে বললো, “চিকু, তুমি আজ সত্যিই আমাদের সবাইকে বাঁচালে। তোমার এই সাহসিকতা আর বুদ্ধিমত্তা আমাদের জন্য এক বড় আশীর্বাদ।”
চিকু লজ্জা পেয়ে বললো, “না মীরা, তুমি যদি পাশে না থাকতে, তাহলে আমি একা কিছুই করতে পারতাম না।”
তারপর রাত গভীর হলো। আকাশে তারার মেলা বসেছে, আর সবাই পাহারা দিতে দিতে গল্প শুরু করলো। সবাই মিলে একসাথে থাকার অনুভূতি যেন তাদের শক্তি দ্বিগুণ করে তুললো।
তবে, এরই মাঝে দূরে হালকা একটা শব্দ ভেসে এলো। চিকু আর মীরা কান পেতে শুনলো, আর বুঝতে পারলো শিকারীদের একটা দল আবারো ফিরে আসছে। এবার তারা শুধু নিজেরাই নয়, নিজেদের সাথে কিছু ভয়ানক ফাঁদ নিয়ে এসেছে।
চিকু আর মীরা চিন্তায় পড়ে গেলো, কীভাবে এই ফাঁদ থেকে নিজেদের রক্ষা করবে।
বিজয় উদযাপন
সকালবেলা সূর্যের প্রথম কিরণ জঙ্গলের ঘাস আর গাছে পড়তেই চারদিকে যেন এক নতুন দিনের শুরু হলো। আগের দিনের ভয়, দুশ্চিন্তা এখন যেন সবকিছুই হারিয়ে গেছে। আজ জঙ্গলের পরিবেশ ছিল অন্যরকম—এক আনন্দের সুর, এক উৎসবের আমেজ।
চিকু আর মীরা জঙ্গলের প্রাণীদের সাথে মিলিত হয়ে তাদের রাতের বীরত্বগাঁথা নিয়ে গল্প করছিল। ওদের এই সাহসিকতার গল্প ক্রমশ গ্রামে পৌঁছে গেলো। গ্রামের মানুষজন জানতে পারলো কীভাবে এই ছোট্ট গিরগিটি আর গ্রামের মেয়েটা মিলে শিকারীদের তাড়িয়ে দিয়েছে আর জঙ্গলকে রক্ষা করেছে। শিকারীদের ভয়ঙ্কর ফাঁদ থেকে জঙ্গলকে বাঁচানোর জন্য সবাই মীরাকে ধন্যবাদ জানালো আর চিকুকে বীর হিসেবে স্বীকৃতি দিলো।
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা ভাবলেন, এমন সাহসিকতার জন্য একটা বড় উৎসবের আয়োজন করা উচিত। তারা সকলেই মিলে গ্রামের মাঝখানে একটা মঞ্চ তৈরি করলেন। জঙ্গল আর গ্রামের প্রাণী থেকে শুরু করে সকলেই সেখানে উপস্থিত হলো। আকাশে তখন পাখিরা উড়ছিল আর চারপাশে গাছের পাতা হাওয়ায় মৃদু নাচছিল, যেন সবাই এই উৎসবের অংশ হতে চাইছে।
চিকু একটু লজ্জায় পড়েছিল এত মানুষের সামনে আসতে। কিন্তু মীরা তাকে হাত ধরে নিয়ে মঞ্চে উঠলো। গ্রামের সবাই হাততালি দিয়ে ওদের বরণ করলো। চারিদিকে হাসির সুর আর আনন্দের শব্দে মঞ্চটা যেন একদম বেঁচে উঠলো। গ্রামের প্রধান এসে চিকুকে গলায় মালা পরিয়ে দিলেন। সেই মালাটা ছিল লতাপাতা দিয়ে বানানো, আর তার মাঝে কিছু বুনোফুল গাঁথা ছিল। চিকু তার গলায় সেই মালা পরে গর্ব অনুভব করলো।
গ্রামের বড়রা মীরার হাতেও উপহার হিসেবে একটি ছোট্ট কাঠের প্রতীক দিলেন, যার উপর একটি ছোট গিরগিটির মূর্তি খোদাই করা ছিল। এটি ছিল বন্ধুত্বের প্রতীক। মীরা সেই উপহার পেয়ে চিকুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো আর বললো, “চিকু, এটা আমাদের বন্ধুত্বের প্রতীক। যতদিন আমরা বন্ধু থাকবো, ততদিন এই জঙ্গলও নিরাপদ থাকবে।”
চিকু আনন্দে মাথা নেড়ে বললো, “আমিও তাই ভাবি, মীরা। তোমার সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে আমি গর্বিত।”
উৎসবে তখন নানা খাবারের আয়োজন হলো। গ্রামের মহিলারা মিষ্টি, ফল আর নানা সুস্বাদু খাবার তৈরি করে নিয়ে এসেছিল। চিকু, মীরা আর সব প্রাণীরা সেই খাবার খেয়ে আনন্দে মেতে উঠলো। বড় বড় গাছগুলো যেন বাতাসে নাচতে শুরু করেছিল, পাখিরা গান গাইছিল, আর চারদিকে আনন্দের হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছিল।
রাত হলেই আকাশে তারা ঝিকিমিকি করতে শুরু করলো। মীরা আর চিকু জঙ্গলের ছোট্ট এক নির্জন কোণে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। তারা ঠিক করলো যে তারা একে অপরের পাশে থাকবে সবসময়, যে কোনো বিপদে একে অপরকে রক্ষা করবে। মীরা চিকুর হাত ধরে বললো, “চিকু, তুমি শুধু আমার বন্ধু নও, তুমি আমার ভাইয়ের মতো। আমরা একসাথে অনেক কিছু করবো।”
চিকু একটু আবেগপ্রবণ হয়ে বললো, “মীরা, তুমিই আমার সেরা বন্ধু। এই জঙ্গল আর আমাদের বন্ধুত্ব, দুইটাই আমি সবসময় রক্ষা করবো।”
ওদের সেই রাতটা ছিল বিশেষ। আকাশে পূর্ণিমার আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, যেন পুরো প্রকৃতি তাদের বন্ধুত্বের সাক্ষী হতে চাচ্ছে। তারা আকাশের নিচে বসে বন্ধুত্বের প্রতিজ্ঞা করলো, আর জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে বললো, “এই জঙ্গল আমাদের সবার। আমরা একে ভালোবাসি, আর এই ভালোবাসার জন্য যে কোনো বিপদে আমরা দাঁড়াবো।”
এই আনন্দঘন রাতে তাদের বন্ধুত্বের গল্প যেন প্রকৃতির সাথেই মিশে গেলো। কিন্তু সেই রাতের নিরবতার মাঝে এক অজানা ছায়া নেমে এলো। দূরে কোথাও একটা অদ্ভুত শব্দ ভেসে এলো।
চিকু আর মীরা চমকে তাকালো। ওদের মনে হলো, এই আনন্দের মাঝেও কিছু একটা যেন তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য বাংলা ছোট গল্প - অন্তিম যাত্রা: "অন্তিম যাত্রা" একটি হৃদয়স্পর্শী ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্প, যেখানে যুদ্ধের অন্ধকার পেরিয়ে আশার খোঁজে এগিয়ে চলে। বাংলা ছোট গল্পের ভক্তদের জন্য অনুপ্রেরণায় ভরপুর এক অনন্য সৃষ্টি। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
প্রতিজ্ঞা রক্ষা
রাতের আকাশে পূর্ণিমার আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই আলোয় চিকু আর মীরা জঙ্গলের এক কোণে বসে ছিল। দূর থেকে জঙ্গলের পশুদের হালকা গুঞ্জন আর নদীর মৃদু কলকল ধ্বনি ভেসে আসছিল। মীরার হাত ধরে চিকু তাকিয়ে ছিল আকাশের দিকে, যেখানে হাজার হাজার তারা ঝিকিমিকি করছিল। ওদের চোখে এক অপূর্ব আলোর ঝিলিক—এক বন্ধুত্বের প্রতিজ্ঞা।
চিকু বলল, “মীরা, আজ আমরা অনেক কিছু শিখেছি। তুমি সাহসী, তুমি জানো কিভাবে বিপদের মুখোমুখি হতে হয়। আর আমি শিখেছি, মানুষের সাথে মিলে কাজ করতে পারলে, যে কোনো বিপদকে জয় করা যায়।”
মীরা হেসে বলল, “আর আমি শিখেছি, প্রকৃতি আর জঙ্গলকে যত্ন নিয়ে ভালোবাসা খুব জরুরি। তুমি যে কেবল একটা গিরগিটি নও, তুমি আমাদের জঙ্গলের রক্ষক। আর আমরা সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি, তাহলে কোনো শিকারী আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।”
সেই রাতে তারা দু’জনে এক প্রতিজ্ঞা করল। মীরা প্রতিজ্ঞা করল, সে জঙ্গলের প্রতি সবসময় যত্নশীল থাকবে, আর চিকুর সাথে মিলে জঙ্গলের প্রাণী ও গাছপালা রক্ষা করবে। আর চিকু প্রতিজ্ঞা করল, সে সবসময় মীরার পাশে থাকবে এবং সাহসিকতার সাথে সব বিপদে এগিয়ে আসবে।
সেই সময় হঠাৎ আকাশের মধ্য থেকে একটা উজ্জ্বল আলো চিকুর দিকে নেমে এল। সেই আলো ছিল একধরনের জাদুর আলো। চিকুর মনটা যেন এক অদ্ভুত শান্তি আর আনন্দে ভরে গেল। আলোর মধ্য থেকে এক মৃদু কণ্ঠস্বর ভেসে এল, “তোমরা আজ বন্ধুত্ব, ভালোবাসা আর সাহসিকতার এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছো যা চিরকাল মনে রাখা হবে।”
চিকু আর মীরা অবাক হয়ে সেই আলোর দিকে তাকালো। তারা বুঝলো, এই আলোর মধ্যে তাদের জন্য একটা আশীর্বাদ আছে। সেই কণ্ঠস্বর বলল, “আজ থেকে তোমাদের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য, আমি তোমাদের এই জঙ্গলে বিশেষ শক্তি দিচ্ছি। যখনই তোমাদের বা এই জঙ্গলের বিপদ আসবে, তোমাদের বন্ধুত্বের শক্তি সেই বিপদকে দূর করবে।”
আলো আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল, আর সেই সাথে জঙ্গলটা যেন আরও বেশি মায়াবী হয়ে উঠল। চিকু আর মীরা অনুভব করল, তাদের বন্ধুত্বের এই প্রতিজ্ঞা কেবল তাদের জন্য নয়, পুরো জঙ্গলকে রক্ষা করার জন্য। তারা দু’জনেই চোখে নতুন আশা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে একে অপরের দিকে তাকালো।
পরের দিন সকালে, মীরা গ্রামের সবাইকে ওদের রাতের প্রতিজ্ঞা আর আলোর আশীর্বাদের গল্প শোনালো। গ্রামবাসী অবাক হয়ে মীরার কথা শুনল। সবাই বলল, “এই গল্প শুধু আমাদের গ্রামের নয়, এই জঙ্গলের প্রতিটা প্রাণী আর গাছপালারও গল্প। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এই গল্প শিখবে আর জানবে বন্ধুত্ব আর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”
তারপর থেকে মীরা আর চিকু গ্রামের মানুষের সাথে মিলে জঙ্গলের পরিচর্যা শুরু করল। যখনই কোনো শিকারী বা দুষ্ট লোক জঙ্গলে আসার চেষ্টা করত, তখন চিকু আর মীরার বন্ধুত্বের শক্তি সেই বিপদকে সরিয়ে দিতো। আর গ্রামের মানুষরাও বুঝল, প্রকৃতিকে রক্ষা করাই তাদের বড় দায়িত্ব।
জঙ্গলের বাকি প্রাণীরাও বুঝল, বন্ধুত্বে যে শক্তি আছে তা দিয়ে যে কোনো বিপদকে দূরে ঠেলে দেওয়া যায়। চিকু ছোট্ট হলেও, সে জঙ্গলের সব প্রাণীর কাছে বীর হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠল। আর মীরার সাহস আর ভালোবাসা তাকে জঙ্গলের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলল।
চিকু আর মীরার এই গল্প সুন্দরবনের জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ল। তাদের সাহসিকতার গল্প, বন্ধুত্বের প্রতিজ্ঞা আর প্রকৃতির প্রতি তাদের ভালোবাসা জঙ্গল আর গ্রামের প্রতিটা প্রাণীর মনে এক নতুন আলো জ্বালিয়ে দিল।
যেদিনই আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠত, সেদিন গ্রাম আর জঙ্গলের সবাই মিলে উৎসব করত। সেই রাতগুলোতে গল্পগুলো আবার নতুন করে বলা হতো—এক ছোট্ট গিরগিটির আর এক সাহসী মেয়ের বন্ধুত্বের গল্প।