বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
কলেজের ক্যাম্পাসে ঝলমলে একটা শীতের সকাল। রোদের আলতো তাপটা যেন ক্যাম্পাসের প্রাণ-প্রকৃতিতে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছে। সোহিনী, সদ্য ২৫ পেরোনো দর্শনের অধ্যাপক, বেশ কিছুদিন হল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। নিজের ক্লাস নেওয়া, পড়াশোনা আর পড়ানোর চাপের মাঝে তার দিনগুলি বেশ ব্যস্ততায় কাটে। তবে আজ একটু ভিন্ন। ক্লাসের ফাঁকে নিজেকে একটু সময় দেওয়ার ইচ্ছে নিয়ে তিনি চলে গেলেন ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়ায়।
এক কাপ গরম কফি হাতে নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার এক কোণে বসে নিজের চারপাশের মানুষজন আর পরিবেশটা উপভোগ করছিলেন তিনি। এমন সময় তার নজর পড়ল ক্যাফেটেরিয়ার এক পাশে বসে থাকা এক তরুণ দম্পতির দিকে। ছেলেটি বেশ রাগী স্বরে মেয়েটির সাথে তর্ক করছে। মেয়েটি নিজের বক্তব্য বোঝাতে গিয়ে কিছুটা অপ্রতিভ, যেন নিজের মনের কথা গুছিয়ে বলতে পারছে না।
সোহিনী বেশ আগ্রহ নিয়ে তাদের কথোপকথন লক্ষ্য করতে লাগলেন।
“তুমি কেন আমার মতামতকে সবসময় এড়িয়ে যাও?” মেয়েটি একসময় বলল, কণ্ঠে অসহায়তা মেশানো এক তীব্র অভিযোগ।
“কারণ সব সময় তুমি ভুল সিদ্ধান্ত নাও,” ছেলেটি কঠিন স্বরে উত্তর দিল।
তাদের কথোপকথন দেখে সোহিনীর মনে একটা চিন্তার ঢেউ খেলে গেল। সম্পর্কের এই জটিলতা, একে অপরের ওপর অধিকারবোধ, আর সেই অধিকারবোধ থেকে জন্ম নেওয়া টানাপোড়েন—এই বিষয়গুলি যেন তাকে ভাবিয়ে তুলল।
ক্যাফেটেরিয়া থেকে ফিরে এসে সোহিনী তার কাজকর্মে মন দিলেও সেই তরুণ দম্পতির ঝগড়ার দৃশ্য বারবার তার মনে ভেসে উঠতে লাগল। তিনি ভাবলেন, সম্পর্ক কি সত্যিই স্বাধীনতাকে বাঁধা দেয়? নাকি এটি একে অপরকে বোঝার একটি মাধ্যম?
এই চিন্তাভাবনার রেশ ধরে সোহিনী একটি নিবন্ধ লিখলেন। “সম্পর্ক এবং স্বাধীনতা” নামে সেই নিবন্ধটি খুব দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হল। তিনি তার লেখায় তুলে ধরলেন, কীভাবে সম্পর্ক কখনো কখনো ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে বাধা দেয়, আবার কখনো এটি একে অপরের বিকাশের সহায়ক হতে পারে। একটি সম্পর্ক তখনই সফল হয় যখন দু’জন ব্যক্তি একে অপরের স্বপ্ন, ইচ্ছা আর সীমাবদ্ধতাগুলি বুঝতে সক্ষম হয়।
নিবন্ধটি পড়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে হইচই পড়ে গেল। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অন্যান্য অধ্যাপক, সবাই সোহিনীর গভীর বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাভাবনার প্রশংসা করতে শুরু করলেন। তার লেখার প্রতিটি শব্দ যেন সম্পর্ক নিয়ে মানুষের মনোভাবকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে সাহায্য করল।
আড্ডায় ব্যক্তিগত প্রশ্ন
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
শীতের সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফরুমে এক অন্যরকম উষ্ণতা। জানলার বাইরে মৃদু রোদ ছড়িয়ে পড়েছে, আর ভেতরে অধ্যাপকদের আড্ডার কোলাহল। অদিত্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৩০ বছরের এক তরুণ অধ্যাপক, তার চেনা হাসিখুশি ভঙ্গিতে সহকর্মীদের সাথে গল্পে মশগুল। কাজের চাপ কম থাকায় আজকের আড্ডাটা যেন কিছুটা দীর্ঘায়িত হয়েছে।
“অদিত্যদা, তোমার বিয়ে কবে হচ্ছে?” রাজীবের হঠাৎ প্রশ্নে আড্ডার গতি যেন একটু থেমে গেল।
অদিত্য মুচকি হেসে চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে বললেন, “সম্পর্ক মানে তো স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া। আমার জীবনে সম্পর্কের কোনও প্রয়োজন নেই।”
তাঁর এই সহজ অথচ দৃঢ় উত্তর শুনে আড্ডার বাকি সদস্যরা চুপ করে গেল। রাজীব একটু হেসে বললেন, “তুমি খুব কঠিন কথা বলে দিলে, দাদা। তবে সব সম্পর্কই কি স্বাধীনতা কেড়ে নেয়?”
এবার তনুশ্রী, দর্শনের অধ্যাপক এবং সোহিনীর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী, কথার মধ্যে ঢুকে পড়লেন। “তোমার ধারণা তো বেশ একপেশে, অদিত্য। সম্পর্ক মানেই সবসময় স্বাধীনতার পরিপন্থী নয়। বরং সম্পর্ক মানে একে অপরকে বোঝা, সাহায্য করা, এবং নিজের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া। তোমার সোহিনীর ‘সম্পর্ক এবং স্বাধীনতা’ নিবন্ধটা পড়া উচিত। ওর লেখাটা পড়লে হয়তো তোমার চিন্তাধারায় কিছুটা বদল আসতে পারে।”
অদিত্য চুপ করে শুনলেন। যদিও তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বললেন না, তবু “সম্পর্ক এবং স্বাধীনতা” শিরোনামটি তার মনে গেঁথে গেল।
আড্ডা শেষ করে নিজের টেবিলে ফিরে এসে তিনি কিছুক্ষণ উদাস ভঙ্গিতে জানলার বাইরে তাকিয়ে থাকলেন। তার জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো যেন মনের পর্দায় ভেসে উঠতে লাগল। শৈশব থেকে শুরু করে তার প্রথম চাকরি, সমস্ত অভিজ্ঞতাই তার স্বাধীনতার প্রতি গভীর ভালোবাসা তৈরি করেছিল। সম্পর্কের কারণে তার একসময়ের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, যা তাকে সম্পর্ক নিয়ে একধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে বাধ্য করেছিল।
তবে সোহিনীর লেখাটির কথা ভাবতে ভাবতে তার মনে একটা অদ্ভুত কৌতূহল তৈরি হল। তিনি ভাবলেন, “দেখি তো, একজন দর্শনের অধ্যাপক সম্পর্ক আর স্বাধীনতা নিয়ে কীভাবে ভাবেন।”
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে তিনি ল্যাপটপ খুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সোহিনীর নিবন্ধটি খুঁজে বের করলেন। প্রবন্ধের শুরুতেই লেখিকার ভাষার সাবলীলতা এবং ভাবনার গভীরতা তাকে আকৃষ্ট করল। তিনি পড়তে পড়তে অনুভব করলেন, প্রতিটি শব্দ যেন তার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার সাথে কথোপকথনে জড়িয়ে যাচ্ছে। সোহিনীর বিশ্লেষণে তিনি একধরনের সততা খুঁজে পেলেন, যা তার নিজের ধারণাগুলোর উপর নতুন করে ভাবতে বাধ্য করল।
নিবন্ধটি পড়া শেষ করে অদিত্য একটুক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন। মনে হল যেন তার মধ্যে এক অদ্ভুত আলোড়ন শুরু হয়েছে। সোহিনীর বক্তব্য তাকে মনে করিয়ে দিল, সম্পর্ক শুধু দায়িত্ব নয়, বরং এটি একে অপরকে সমর্থন করার একটি পথ।
এক গভীর রাতের পাঠ
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রাত গভীর হয়েছে। জানলার বাইরে হিমেল হাওয়া দুলে উঠছে, আর দূরের কোনও কুকুরের ডাক মাঝে মাঝে রাতের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দিচ্ছে। অদিত্য তার খাবার শেষ করে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। হাতে মোবাইল, এবং স্ক্রিনে সোহিনীর লেখা সেই বহুল আলোচিত নিবন্ধ: সম্পর্ক এবং স্বাধীনতা।
আবার পড়তে শুরু করার আগে অদিত্যের মনে খানিকটা দ্বিধা ছিল। “দর্শনের অধ্যাপক হয়েও সম্পর্ক নিয়ে এত বড় ব্যাখ্যা কীভাবে দিলেন সোহিনী? এ তো নিছক তাত্ত্বিক লেখা মনে হচ্ছে,” নিজেকে এমন বলেই তিনি নিবন্ধটির প্রথম লাইন পড়া শুরু করলেন।
প্রথম কয়েকটি বাক্যে তার মধ্যে কোনও পরিবর্তন ঘটল না। বরং মনে হল, লেখাটা তাঁর নিজের ভাবনার বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। “সম্পর্ক কি কখনও স্বাধীনতার সঙ্গে সহাবস্থান করতে পারে?”— এই প্রশ্নই তাকে সারাজীবন তাড়িয়ে বেরিয়েছে। তবে যতই তিনি পড়তে লাগলেন, ততই নিবন্ধটির গভীরতায় ডুবে গেলেন।
সোহিনী তার লেখায় বলেছিলেন, “সম্পর্ক কখনও বন্ধন, আবার কখনও মুক্তির পথ। সবকিছু নির্ভর করে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং শ্রদ্ধার উপর। একজন মানুষ যদি অন্যজনের স্বাধীনতাকে সম্মান জানাতে পারে, তবে সেই সম্পর্ক বন্ধন নয়, বরং একে অপরকে সমৃদ্ধ করে।”
অদিত্য পড়তে পড়তে থমকে গেলেন। তাঁর নিজের জীবনের কিছু মুহূর্ত ভেসে উঠতে শুরু করল। কলেজ জীবনে তাঁর প্রিয় বন্ধু তৃষার কথা মনে পড়ল। তৃষা সবসময় চেয়েছিল, অদিত্য তার স্বপ্নগুলোকে সম্মান করুক। কিন্তু তখনকার অদিত্য এতটাই নিজস্ব চিন্তায় বন্দী ছিলেন যে তৃষার অনুভূতিগুলোকে বুঝতে পারেননি। তাদের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পেছনে এই একতরফা দৃষ্টিভঙ্গিই ছিল মূল কারণ।
নিবন্ধ পড়তে পড়তে রাত গভীর থেকে গভীরতর হল। অদিত্য টের পেলেন, তার ভিতরে এক অদ্ভুত লড়াই শুরু হয়েছে। একদিকে তার পুরনো বিশ্বাস, যা তাকে বলে এসেছে যে সম্পর্ক মানেই স্বাধীনতার ক্ষতি। আর অন্যদিকে সোহিনীর যুক্তি, যা প্রতিটি শব্দে যেন তার মনের গভীরে প্রবেশ করছে।
তিনি বারবার নিবন্ধটি পড়লেন। প্রতিবারই নতুন কোনও অর্থ খুঁজে পেলেন। শেষমেশ তিনি নিজের কাছে স্বীকার করলেন যে সোহিনীর যুক্তি বাস্তব এবং গভীর। সম্পর্ক মানেই যে স্বাধীনতার শত্রু, সেই ধারণা আজ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল।
রাত তিনটে নাগাদ অদিত্য ফোনটা বন্ধ করে উঠে বসলেন। তার চোখে ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু মনে যেন কোনও নতুন আলো জ্বলছে। তিনি নিজেকে প্রশ্ন করলেন, “তাহলে কি এতদিন আমি ভুল ছিলাম? সম্পর্ক কি সত্যিই আমার ভাবনার চেয়ে বেশি কিছু হতে পারে?”
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - কলকাতার শেষ ট্রেন: কলকাতার ব্যস্ত রেলস্টেশনে শুরু হয় রিয়া ও অমিতের অবিশ্বাস্য প্রেমের গল্প। শেষ ট্রেনের জার্নিতে ভাগ করে নেওয়া স্মৃতি, গোপন আকাঙ্ক্ষা আর অদম্য মিলনের টানে জড়িয়ে পড়ে তারা। এক বছর পর ফিরবে কি অমিত? জানতে পড়ুন এই রোমান্টিক বাংলা গল্প, “কলকাতার শেষ ট্রেন “। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
একটি ইমেল
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
অদিত্যর মাথায় সোহিনীর নিবন্ধটি এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে তিনি বারবার সেই কথাগুলো ভেবে দেখেছেন। একদিকে নিজের আদর্শ আর বিশ্বাস, অন্যদিকে সোহিনীর গভীর যুক্তি। এই দুইয়ের মধ্যে একটা ভারসাম্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে করতে তিনি অবশেষে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন।
“একটা ইমেল লিখি,” মনে মনে ভাবলেন তিনি।
ল্যাপটপ খুলে অদিত্য সোহিনীর নিবন্ধের শেষে দেওয়া ইমেল ঠিকানাটি খুঁজে বের করলেন। কিছুক্ষণ তার পর্দার দিকে তাকিয়ে থেকে কী লিখবেন তা ভেবে নিলেন। শুরু করলেন—
বিষয়: আপনার নিবন্ধ সম্পর্কে কিছু চিন্তা
প্রিয় সোহিনী,
আপনার ‘সম্পর্ক এবং স্বাধীনতা’ নিবন্ধটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। আপনার লেখা এতটাই গভীর যে এটি আমার পূর্বের অনেক ভাবনার সঙ্গে সংঘাত তৈরি করেছে। আমি বরাবরই মনে করেছি, সম্পর্ক মানে স্বাধীনতার ক্ষতি, কিন্তু আপনি এমন কিছু দৃষ্টিভঙ্গি সামনে এনেছেন যা আমাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।
তবুও, কিছু বিষয়ে আমার মত ভিন্ন। যেমন, আমার মনে হয় সম্পর্কের মধ্যে থাকা স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে পারস্পরিক বোঝাপড়ার উপর নির্ভর করে না, বরং ব্যক্তির নিজস্ব মানসিকতাও অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
আপনার সময় পেলে আমার এই চিন্তাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী।
শুভেচ্ছা সহ,
অদিত্য সেন
ইমেলটি একবার পড়ে নিয়ে তিনি ‘সেন্ড’ বোতামটি টিপলেন। একটি অদ্ভুত উত্তেজনা কাজ করছিল। তিনি জানতেন না, সোহিনী তাঁর ইমেল পড়বেন কিনা, কিংবা পড়লেও কোনও উত্তর দেবেন কিনা।
সেদিন দুপুরে সোহিনী দর্শনের ক্লাস নিচ্ছিলেন। ক্লাস শেষে মোবাইল খুলতেই ইমেল নোটিফিকেশনটি চোখে পড়ল। একটি অজানা নাম থেকে পাঠানো ইমেল। খুলে পড়তে শুরু করতেই তার মুখে এক হাসি ফুটে উঠল।
“মজার মানুষ তো,” মনে মনে বললেন তিনি। অদিত্যর বিনীত এবং সংবেদনশীল লেখার ধরন তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি ভাবলেন, এমন একজন মানুষ যিনি নিজের বিশ্বাস নিয়ে এত প্রশ্ন তুলতে পারেন, তাঁর সঙ্গে আলোচনা করাটা দারুণ হবে।
ফিরতি ইমেল লিখলেন—
বিষয়: ধন্যবাদ ও কিছু ভাবনা
প্রিয় অদিত্য,
আপনার ইমেলটি পড়ে খুব ভালো লাগল। আমার লেখার এমন গভীর পাঠক পাওয়া সত্যিই সম্মানের। আপনার ভাবনাগুলো যথেষ্ট মূল্যবান এবং বাস্তব। সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজস্ব মানসিকতার ভূমিকা নিয়ে আপনি যা বলেছেন, তা নিয়ে ভাবার অনেক সুযোগ আছে।
আলোচনা করতে আমি অবশ্যই আগ্রহী। আপনি যখনই সময় পান, জানান।
শুভেচ্ছান্তে,
সোহিনী ধর
এরপর শুরু হল নিয়মিত ইমেলের আদান-প্রদান। দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের কথোপকথন একটি গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হল। দুজনেই উপলব্ধি করলেন যে তাঁদের চিন্তাভাবনার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে, আবার ভিন্নতাগুলোও আলোচনা করার মতো যথেষ্ট আকর্ষণীয়।
একদিন অদিত্য ইমেলে প্রস্তাব দিলেন, “আমাদের কি ফোনে কথা বলা উচিত নয়? ইমেল অনেক ধীরগতির, এবং আমি মনে করি সরাসরি কথোপকথন আমাদের আলোচনাকে আরও প্রাণবন্ত করবে।”
সোহিনীও এতে সম্মত হলেন। ফোন নম্বর শেয়ার করার পর প্রথম ফোনকলটি রাতের দিকে হল। দীর্ঘ এক ঘণ্টার কথোপকথনে তাঁরা নিজেরা একে অপরকে আরও ভালো করে চিনতে পারলেন।
প্রথম সাক্ষাৎ
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সন্ধ্যার আকাশে একরাশ লালচে আভা। কলকাতার এক জনপ্রিয় ক্যাফে, যেখানে আলো-আঁধারির পরিবেশ যেন এক অদ্ভুত রোমান্টিক মায়া তৈরি করেছে। অদিত্য বসে রয়েছেন একটি কোণার টেবিলে। সামনে রাখা এক কাপ কফি, কিন্তু কফির দিকে তাঁর মন নেই। ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে আবার দরজার দিকে চোখ ফেরালেন।
ঠিক তখনই সোহিনী প্রবেশ করলেন। হালকা গোলাপি রঙের সালোয়ার-কামিজ, সাদা ওড়না, আর চোখে একরাশ আত্মবিশ্বাস। তাঁকে দেখে অদিত্য যেন সময়ের গতি ভুলে গেলেন। সোহিনীর প্রতিটি পদক্ষেপে যেন এক অদ্ভুত আকর্ষণ।
“অদিত্য সেন?” সোহিনীর গলায় এক পরিচ্ছন্ন উষ্ণতা।
“জি, সোহিনী ধর?” অদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে হাসলেন।
তাঁরা একে অপরের দিকে হাত বাড়িয়ে সৌজন্য বিনিময় করলেন। অদিত্য তাঁকে টেবিলের পাশে বসার আমন্ত্রণ জানালেন। ক্যাফের নরম আলোতে সোহিনীর মুখখানি যেন আরও মায়াবী লাগছিল।
“কফি পছন্দ করেন?” অদিত্য জিজ্ঞেস করলেন।
“অবশ্যই,” সোহিনী হেসে বললেন।
“তাহলে আপনাকে এখানে এসে একটা বিশেষ কফি ট্রাই করতে হবে।”
অদিত্য ওয়েটারকে ডেকে সোহিনীর জন্য একটি ক্যাপুচিনোর অর্ডার দিলেন। কথা শুরু হল হালকা বিষয় নিয়ে। প্রথমে সাধারণ পরিচয়, তারপর ধীরে ধীরে গভীরতর প্রসঙ্গ।
“আপনার নিবন্ধটা পড়ে অনেক প্রশ্ন জেগেছিল। তাই লিখলাম। কিন্তু সত্যি বলতে, আপনার উত্তরগুলো আরও বেশি প্রশ্ন তুলে দিল,” অদিত্য হেসে বললেন।
“এটাই তো ভালো, না?” সোহিনী বললেন। “যত বেশি প্রশ্ন করবেন, ততই নিজেকে ভালো করে বুঝতে পারবেন।”
সোহিনী তাঁর ছোটবেলার গল্প বললেন—কীভাবে তিনি লেখালিখি শুরু করলেন, দর্শনের প্রতি তাঁর টান, আর জীবনের নানা অভিজ্ঞতা। অদিত্য চুপ করে শুনছিলেন। তাঁর দৃষ্টি সোহিনীর চোখে। সেসব চোখে এক গভীরতা, যা মানুষকে আকর্ষণ করে, আবার ভাবিয়ে তোলে।
“আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আমি অনেক পিছিয়ে আছি। জীবনের এত কিছু শিখেছি, অথচ এখনও অনেক কিছুই জানা বাকি,” অদিত্য বললেন।
“জীবন মানেই শেখা, অদিত্য। আমাদের ত্রুটি, আমাদের ভুল, এগুলোই তো আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক,” সোহিনী উত্তর দিলেন।
কথা বলতে বলতে সময় কখন পেরিয়ে গেল, কেউ বুঝতেই পারল না। ক্যাফের চারপাশে লোকজন কমে এসেছে। অদিত্য কফির শেষ চুমুক দিয়ে বললেন, “আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সুযোগটা কি পাব?”
সোহিনী প্রথমে একটু ইতস্তত করলেন। “না, আমি নিজেই যেতে পারব,” তিনি বললেন।
“প্লিজ, আপনার জন্য চিন্তা হবে। একবার আসুন, আমি আপনাকে নিরাপদে পৌঁছে দেব।”
শেষে সোহিনী রাজি হলেন।
অদিত্যর গাড়ির ভিতরেও আলাপ চলল। কিন্তু এবার তাঁদের কথায় এক অদ্ভুত আরাম এবং বিশ্বাস ছিল। দুজনেই একে অপরকে জানার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু সেই জানার মধ্যে কোনও তাড়াহুড়ো ছিল না।
গাড়ি সোহিনীর বাড়ির সামনে থামল। “ধন্যবাদ, অদিত্য। আজকের সন্ধ্যাটার জন্য সত্যিই ভালো লাগল,” সোহিনী বললেন।
“আমিও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন,” অদিত্য হাসলেন।
সোহিনী গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন। কিন্তু দরজার কাছে পৌঁছে পিছন ফিরে অদিত্যর দিকে একবার তাকালেন। সেই মুহূর্তটা যেন সময়কে থামিয়ে দিল।
একটি গোলাপ এবং প্রেমের শুরু
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
নভেম্বরের এক উষ্ণ রবিবার। কলকাতার বোটানিক্যাল গার্ডেন, যেখানে প্রকৃতি আপন আলোয় উদ্ভাসিত। গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে রোদ ঝলমল করছে, আর বাতাসে গন্ধ মিশে আছে ফুটন্ত ফুলের। বাগানের এক কোণে, একটি কাঠের বেঞ্চে বসে আছেন সোহিনী। সবুজ শাড়ি, লাল ব্লাউজ, আর চুলে একটি ছোট্ট গোলাপি ক্লিপ। তাঁর চোখে একধরনের অপেক্ষা, যা শুধু হৃদয়ের গভীরতম অনুভূতি থেকেই আসে।
অদিত্য তাঁর হাতে রাখা গোলাপের তোড়াটি আরও শক্ত করে ধরলেন। দূর থেকে সোহিনীর দিকে তাকিয়ে তাঁর বুকের ভিতর এক অন্যরকম কাঁপুনি অনুভব করলেন। এতদিনের ইমেল আর ফোনে হওয়া কথোপকথনের পর এই মুহূর্তে তাঁকে সামনে থেকে দেখার উত্তেজনা তাঁকে আরও আবেগপ্রবণ করে তুলল।
“সোহিনী,” তিনি ধীরে ধীরে তাঁর দিকে এগিয়ে এসে ডাকলেন।
সোহিনী মুখ তুলে তাকালেন। অদিত্যর হাতে লাল গোলাপের তোড়া, আর চোখে এক অদ্ভুত উজ্জ্বলতা। তাঁকে দেখে সোহিনীর মুখে এক মৃদু হাসি ফুটে উঠল।
“আপনার জন্য,” অদিত্য তোড়াটি বাড়িয়ে দিলেন।
সোহিনী তোড়াটি হাতে নিলেন, কিন্তু কিছুক্ষণ কিছু বললেন না। তাঁর চোখে জল জমতে শুরু করল।
“সোহিনী,” অদিত্য গভীর গলায় বললেন, “আমি জানি, আমাদের পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যেই আমি বুঝতে পেরেছি, আপনি আমার জীবনের সেই বিশেষ মানুষ। আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
সোহিনী স্তব্ধ হয়ে গেলেন। তাঁর হাতের গোলাপের তোড়াটি শক্ত করে ধরে রইলেন। চোখ থেকে দুটি অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়ল।
“আপনার উত্তরটা শুনব?” অদিত্য জিজ্ঞাসা করলেন।
সোহিনী ধীরে ধীরে মাথা তুলে অদিত্যর দিকে তাকালেন। তাঁর ঠোঁটের কোণে একরাশ মিষ্টি হাসি। “অদিত্য, এতদিনে আমি বুঝেছি, আপনার মতো মানুষের সঙ্গেই আমি নিজের ভবিষ্যৎ ভাবতে পারি। আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
এই কথাগুলি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই অদিত্য যেন নিজের হৃদয়ের সমস্ত ভারমুক্ত হলেন। তিনি সোহিনীকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন। বাগানের চারপাশে পাখির কিচিরমিচির, গাছের পাতার ঝিরঝির শব্দ, সবকিছুই যেন এই ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রইল।
সোহিনী বললেন, “জীবনের এই নতুন অধ্যায়ের জন্য আমি প্রস্তুত।”
অদিত্যর চোখে একরাশ তৃপ্তি। “আমরা একসঙ্গে সবকিছু পার করব, সোহিনী।”
তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে বাগানে হাঁটলেন। বিভিন্ন গাছের নাম জানালেন একে অপরকে। প্রজাপতির মতো এই মুহূর্তগুলি তাঁদের হৃদয়ে গভীর আনন্দ বয়ে আনছিল। দিনটি শেষ হওয়ার সময়, সোহিনী বললেন, “আজকের দিনটা যেন কোনও গল্পের মতো মনে হচ্ছে।”
“এটি আমাদের গল্পের প্রথম অধ্যায়,” অদিত্য মৃদু হেসে বললেন।
বাগান থেকে বের হওয়ার সময় তাঁরা ঠিক করলেন, আগামী সপ্তাহে তাঁদের পরিবারকে সব জানানোর জন্য প্রস্তুতি নেবেন। ভবিষ্যৎ হয়তো চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা সেই সব চ্যালেঞ্জকে জয় করতে প্রস্তুত। এই মুহূর্তে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অদিত্য বললেন, “আজ থেকে প্রতিদিন তোমার জন্য একটি নতুন গোলাপ নিয়ে আসব।” সোহিনী মুচকি হেসে বললেন, “তাহলে আমিও প্রতিদিন তোমার জন্য একটি নতুন গল্প লিখব।”
এভাবেই তাঁদের জীবনের একটি সুন্দর অধ্যায় শুরু হল, যা ভবিষ্যতে আরও গভীর এবং শক্তিশালী হবে।