বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ প্রান্তে অবস্থিত শান্তিনগর শহর। সবুজে ঘেরা এই শহর তার নির্জনতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য পরিচিত। এখানকার মানুষজন সহজ-সরল, দিন কাটে কৃষিকাজ আর ছোটখাটো ব্যবসার মাধ্যমে। কিন্তু সেই সকালে শহরের গুমোট বাতাসে এক অজানা শঙ্কার সুর বাজতে শুরু করে।
সকাল সাড়ে ন’টার দিকে সুরেন্দ্রনগর থানার পরিদর্শক সোমনাথ বসু ও কনস্টেবল প্রদীপ বিশ্বাস একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন পান। অপর প্রান্তে এক অচেনা কণ্ঠ বলে ওঠে, “শান্তিনগরের ‘নীল রাত্রি’ হোটেলে একটি মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে। দয়া করে দ্রুত সেখানে যান।”
ফোনের সুরটি ভয় ও আতঙ্কে মোড়া ছিল। সোমনাথ এক ঝলকে প্রদীপের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তাড়াতাড়ি গাড়ি তৈরি কর। শান্তিনগর চল।”
নীল রাত্রি হোটেল শান্তিনগরের একটি পুরোনো হোটেল। শহরের নতুন প্রজন্মের দাবি মেনে কিছুদিন আগেই এর নাম বদলে রাখা হয়েছে ব্লু হেভেন। কিন্তু পুরোনো বাসিন্দারা এখনও সেটিকে নীল রাত্রি বলেই ডাকে। হোটেলটি মূলত ব্যবসায়ীদের জন্যই ব্যবহৃত হয়, যারা বড় শহর থেকে আসেন পণ্য কেনা-বেচার কাজে।
সন্ধ্যার কিছু আগেই সোমনাথ ও প্রদীপ শান্তিনগরে পৌঁছান। তাদের আগমনে শহরের বাসিন্দারা গুজগুজ ফিসফিস শুরু করে। স্থানীয় দোকানদার নিত্যানন্দ, যিনি এলাকায় ‘সবজান্তা’ নামে পরিচিত, এগিয়ে এসে বলেন, “কিছু হয়েছে স্যার? কেস?”
সোমনাথ কোনো জবাব না দিয়ে সোজা হোটেলের দিকে এগিয়ে যান। সেখানে হোটেলের ম্যানেজার হরিহর সাহার সঙ্গে আলাপ করেন। হরিহর অত্যন্ত আতঙ্কিত অবস্থায় জানান, “স্যার, কিছু বুঝতে পারছি না। সবই তো ঠিকঠাক। কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেনি।”
হোটেলের ঘরগুলোর মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সোমনাথ ও প্রদীপ অদ্ভুত কিছু টের পান। প্রতিটি ঘরেই যেন একটা অস্বস্তি ছড়িয়ে রয়েছে। হলঘরের এক কোনায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখার ঘর রয়েছে। ফুটেজ খতিয়ে দেখে কিছু পাওয়া যায় না।
হোটেল স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেও তারা কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর পান না। একজন কর্মচারী, রাজু, জানান, “স্যার, গত কয়েকদিন ধরেই যেন অদ্ভুত কিছু ঘটছে। রাতের দিকে অজানা আওয়াজ শোনা যায়। আর আগের মালিক, ভেলুভাই বাবু, হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছেন।”
তদন্তে কোনো সুরাহা না পেয়ে সোমনাথ ও প্রদীপ হোটেলে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। রাতের খাবার পরিবেশনের সময় একজন অতিথি, বিমল সেনগুপ্ত, তাদের সঙ্গে আলাপ করেন। তিনি বলেন, “এই হোটেলটা একসময় খুবই বিখ্যাত ছিল। কিন্তু ভেলুভাই বাবুর পরিণতির পর থেকে এখানে যেন কিছুর অভিশাপ নেমে এসেছে।”
সন্ধ্যার পর অন্ধকারে শহরের নিস্তব্ধতা আরও রহস্যময় হয়ে ওঠে। প্রদীপ লক্ষ্য করেন, কেউ যেন তাদের অনুসরণ করছে। সোমনাথ এই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান না। তিনি প্রদীপকে নির্দেশ দেন সেই ব্যক্তিকে ধরা জন্য।
অবশেষে তারা অনুসরণকারীকে ধরে ফেলেন। লোকটির নাম রমেশ। তিনি হোটেলের এক পুরোনো কর্মচারী। রমেশ আতঙ্কিত কণ্ঠে বলেন, “স্যার, আপনাদের সতর্ক করতেই এসেছি। ভেলুভাই বাবুর অদৃশ্য হওয়ার পেছনে একটা বড় রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। আপনারা এখান থেকে বেরিয়ে যান। এই হোটেল নিরাপদ নয়!”
রমেশের এই কথা শুনে সোমনাথ তাকে নিয়ে বসেন এবং বিস্তারিত জানতে চান। কিন্তু রমেশ কথা বলতে রাজি হয় না। শেষমেশ তিনি জানান, “আপনাদের যদি সত্যিটা জানতে হয়, কাল রাতে সেই গুদামঘরে যান, যেখানে ভেলুভাই বাবু শেষবার গিয়েছিলেন। কিন্তু সাবধান, কেউ যেন আপনাদের দেখতে না পায়।”
এই কথার পরেই রমেশ অন্ধকারে মিলিয়ে যান।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - ভালোবাসার গলি: "ভালোবাসার গলি" একটি হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে কলকাতার রঙিন সড়কে প্রেমের এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়, যা শহরের ঐতিহ্য এবং সম্পর্কের মধুরতা তুলে ধরে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
আতঙ্কের শুরু
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
শান্তিনগরের রাত যেন আরও গভীর রহস্যে আচ্ছন্ন। পরিদর্শক সোমনাথ বসু ও কনস্টেবল প্রদীপ বিশ্বাস হোটেল নীল রাত্রি তে তাদের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। আগের দিন থেকে কোনো স্পষ্ট সূত্র না পাওয়ায় সোমনাথ কিছুটা হতাশ। হোটেলের অলিগলি, খালি ঘর, আর কর্মচারীদের বক্তব্য যেন এক গোলকধাঁধার মতো। কিন্তু সোমনাথ জানেন, প্রতিটি রহস্যের একটি না একটি ছিদ্র থাকবেই।
রাত গভীর হতে থাকলে প্রদীপ খেয়াল করেন, তারা যেখানে হাঁটছেন, পেছনে অদ্ভুত এক আওয়াজ। তিনি থেমে যান। সোমনাথ চোখের ইশারায় তাকে সতর্ক করেন। পেছনে ফিরে তাকালে একটি ম্লান ছায়া দ্রুত অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। প্রদীপ ফিসফিস করে বলেন, “স্যার, কেউ আমাদের অনুসরণ করছে।”
সোমনাথ নির্দেশ দেন, “ধীরে এগো। পেছনে চমকে দিলে সে পালিয়ে যাবে।” প্রদীপ সাবধানে অন্ধকারে ছায়াটিকে অনুসরণ করেন। কয়েক মিনিট পরেই তিনি লোকটিকে পাকড়াও করেন। ভয়ে কাঁপতে থাকা লোকটি তার পরিচয় দেয়—“আমার নাম বিজয়। আমি এই হোটেলের রান্নাঘরের কর্মচারী।”
সোমনাথ বিজয়কে একটি খালি ঘরে নিয়ে যান এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। বিজয় শুরুতে কথা বলতে অস্বীকার করে। তার চোখে এক গভীর আতঙ্ক। তবে প্রদীপ তাকে বোঝান, “তুমি যা জানো সব খুলে বললে আমরা তোমাকে সুরক্ষা দেব।”
বিজয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “স্যার, এই হোটেলের আগের মালিক ভেলুভাই ছিলেন একজন সৎ মানুষ। তিনি এই হোটেলটি তার শ্রম দিয়ে দাঁড় করিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস আগেই তিনি হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যান। তার পরে চরন দাস, তার ব্যবসায়িক পার্টনার, হোটেলের দায়িত্ব নেন।”
“তারপর?” সোমনাথ প্রশ্ন করেন।
বিজয় বলেন, “ভেলুভাই আর চরন দাসের সম্পর্ক প্রথম থেকেই তেমন ভালো ছিল না। চরন দাস সবসময় তার নিজের নিয়মে ব্যবসা চালাতে চাইতেন। ভেলুভাই বাধা দিতেন। শেষবারের মতো ভেলুভাইকে এই হোটেলের পেছনের গুদামঘরে দেখা গিয়েছিল। এরপর থেকে আর কেউ তাকে দেখেনি।”
বিজয়ের বক্তব্য শুনে সোমনাথের মাথায় সন্দেহের জাল তৈরি হয়। তিনি বিজয়কে আরও চাপ দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি কি নিশ্চিত যে চরন দাস এর সঙ্গে জড়িত?”
বিজয় মাথা নিচু করে বলেন, “আমি নিশ্চিত না, স্যার। কিন্তু চরন দাসের গতিবিধি সন্দেহজনক। আর ভেলুভাইয়ের গায়েব হওয়ার দিন রাতেই হোটেলের গুদামঘরে অনেক অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল। আমি নিজে সেখানে যাওয়ার সাহস পাইনি। স্যার, গুদামঘরটি এখন প্রায় বন্ধই থাকে।”
সোমনাথ বিজয়ের কথা শুনে গম্ভীর মুখে প্রদীপের দিকে তাকান। প্রদীপ ইশারায় বুঝিয়ে দেন, তদন্তের পরবর্তী ধাপ হিসেবে গুদামঘর খতিয়ে দেখা দরকার।
রাত গভীর হলেও সোমনাথ আর প্রদীপ হোটেল ছাড়েননি। তারা বিজয়কে নির্দেশ দেন গুদামঘরের একটি অতিরিক্ত চাবি এনে দিতে। বিজয় ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে রাজি হয়।
হোটেলের পেছনের গুদামঘরটি একসময় ব্যবহার হত পণ্য রাখার জন্য। এখন সেটি ধুলো জমা জায়গায় পরিণত হয়েছে। বিজয় বলে, “স্যার, আমি আপনার সঙ্গে যাব না। ওই জায়গাটায় যেন অভিশাপ লেগে আছে।”
সোমনাথ আর প্রদীপ গুদামঘরের সামনে দাঁড়িয়ে একে অপরের দিকে তাকান। দরজার চাবি ঘোরানোর সময় প্রদীপ চাপা গলায় বলেন, “স্যার, মনে হচ্ছে বড় কিছু লুকিয়ে আছে এখানে।”
দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে এক প্রচণ্ড সর্দ্ধি বাতাস বেরিয়ে আসে। ভেতর থেকে ভাঙা বাক্স, ছেঁড়া কাগজ আর জং ধরা লোহালক্কড় দেখা যায়। কিন্তু একটি কোণ থেকে হঠাৎ একটি আওয়াজ শোনা যায়। প্রদীপ দ্রুত তার টর্চ জ্বালান। অন্ধকার কোণায় কিছু যেন নড়ছে।
সোমনাথ নির্দেশ দেন, “সাবধানে এগিয়ে যাও। এটা হয়তো আমাদের খুঁজতে থাকা সূত্র হতে পারে।”
ভেলুভাইয়ের শেষ দিনগুলি
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সন্ধ্যার অন্ধকার ধীরে ধীরে নেমে আসছে শান্তিনগরের উপর। পরিদর্শক সোমনাথ বসু আর কনস্টেবল প্রদীপ বিশ্বাস হোটেলের কর্মচারী বিজয়ের কাছ থেকে ভেলুভাইয়ের বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন। বিজয়ের কণ্ঠে স্পষ্ট আতঙ্ক। তার কথাগুলি যেন সময়ের একটি অংশবিশেষ তুলে ধরছে, যা হোটেলের ইতিহাসের গভীরে লুকিয়ে রয়েছে।
“স্যার,” বিজয় বলতে শুরু করল, “ভেলুভাই ছিলেন একজন খুব সৎ মানুষ। এই হোটেলকে তার নিজের সন্তান হিসেবে দেখতেন। স্থানীয়রা তাকে খুব পছন্দ করত। কিন্তু সব বদলে যায় যখন চরন দাস এই ব্যবসায় যোগ দেন। প্রথমে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল, কিন্তু তারপর…”
“তারপর কী?” সোমনাথ ধৈর্য ধরে প্রশ্ন করলেন।
বিজয় গলা নিচু করে বলল, “তারপর চরন দাস ক্রমশ দখল নিতে শুরু করেন। তিনি ভেলুভাইয়ের নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছামতো ব্যবসা চালাতে চাইতেন। ভেলুভাই আপত্তি করতেন, আর সেখান থেকেই তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। একদিন তাদের মধ্যে এক ভয়ঙ্কর ঝগড়া হয়। সেদিন রাতেই ভেলুভাইকে শেষবারের মতো জীবিত দেখা যায়।”
বিজয় আরও জানাল, “স্যার, হোটেলের মালিকানা বদলের পর থেকেই অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটতে শুরু করে। কখনও গভীর রাতে দরজা নিজের থেকেই খোলা-বন্দি হয়, কখনও আবার হোটেলের করিডোরে অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যায়। কর্মচারীদের মধ্যে অনেকেই মনে করে, ভেলুভাইয়ের আত্মা এখানে ঘুরে বেড়ায়।”
প্রদীপ কিছুটা বিরক্তির সুরে বলল, “এইসব ভূতপ্রেতের গল্প বিশ্বাস করলে কি হবে? বাস্তব সমস্যাগুলোর দিকে নজর দিন।”
কিন্তু সোমনাথ বিজয়ের কথায় গভীর মনোযোগ দিচ্ছিলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন, বিজয় যা বলছে তার মধ্যে কিছু না কিছু সত্য লুকিয়ে রয়েছে।
“চরন দাস এখন কোথায়?” সোমনাথ প্রশ্ন করলেন।
“স্যার, তিনি প্রায়ই গভীর রাতে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যান,” বিজয় উত্তর দিল। “কোথায় যান, কেউ জানে না। তবে ভোরবেলায় ফিরে আসেন। তার মুখে সবসময় অদ্ভুত এক চাপা উত্তেজনা থাকে, যেন তিনি কিছু লুকোচ্ছেন।”
“তুমি কী মনে করো, তিনি এই রহস্যে জড়িত?” প্রদীপ জানতে চাইল।
বিজয় মাথা নাড়ল। “আমি নিশ্চিত না, স্যার। তবে চরন দাসের আচরণ অনেকটা পাল্টে গেছে। তিনি আগের মতো বন্ধুসুলভ নন। আর হোটেলের কর্মচারীদের সঙ্গে তার ব্যবহারও খুব খারাপ হয়ে গেছে।”
সোমনাথ আর প্রদীপ এই নতুন তথ্য শুনে চিন্তায় পড়ে গেলেন। বিজয়ের কথাগুলি তদন্তের মোড়কে সম্পূর্ণ বদলে দিল। চরন দাসের অস্বাভাবিক গতিবিধি আর তার হোটেলের দখল নেওয়ার পদ্ধতি সন্দেহজনক।
“গুদামঘর থেকে আমরা যা পেয়েছি, তা যদি চরন দাসের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মেলে, তাহলে আমাদের কাছে শক্ত প্রমাণ থাকবে,” সোমনাথ বললেন। “আগামীকাল সকালে চরন দাসকে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।”
রাত গভীর হতে থাকে। বিজয় তার থাকার ঘরে ফিরে যায়, কিন্তু তার চোখে ভয়। সোমনাথ আর প্রদীপ হোটেলের করিডোরে পাহারা দেন। তাদের মাথায় একটাই প্রশ্ন—ভেলুভাই কোথায় গেলেন? আর চরন দাস কেন এই রহস্যের কেন্দ্রে রয়েছেন?
হঠাৎ করিডোরের এক কোণ থেকে এক চাপা আওয়াজ শোনা যায়। প্রদীপ দ্রুত তার টর্চ জ্বালিয়ে আলো ফেলেন। কিন্তু কিছু দেখা যায় না। সোমনাথ সাবধানতার সঙ্গে বলেন, “প্রদীপ, আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। এই হোটেলটি কেবল একটা ভবন নয়, এটি একটি রহস্যের কারাগার।”
গোপন দরজা ও নিষিদ্ধ অঞ্চল
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রাতের অন্ধকার কাটতে না কাটতেই, সোমনাথ বসু তার দল নিয়ে হোটেলের পেছনে পৌঁছে গেলেন। বিজয়ের কথামতো, সেই রহস্যময় দরজার সন্ধান শুরু হলো। দরজাটি হোটেলের পেছনের পুরোনো গুদামের সাথে সংযুক্ত। বাইরে থেকে একে একটি সাধারণ দরজা বলেই মনে হয়, কিন্তু বিজয় জানায়, এটি একটি গোপন পথ যা চরন দাস প্রায়ই ব্যবহার করতেন।
“এটা খোলার চাবি তোমার কাছে আছে?” প্রদীপ জিজ্ঞেস করল।
“না স্যার, চাবি কেবল চরন দাসের কাছে থাকে। তবে…” বিজয় কিছুক্ষণ থেমে বলল, “দরজার লকটি ভাঙা যায়। আমরা চেষ্টা করতে পারি।”
দরজাটি ভাঙতে বেশি সময় লাগল না। সোমনাথ আলো ফেলে গুদামের ভেতর প্রবেশ করলেন। সেখানে প্রচণ্ড গন্ধ, যেন অনেকদিন ধরে কিছু পচে রয়েছে। গুদামের এক কোণে ধুলো-মলিন বাক্সের স্তূপ দেখা গেল। বিজয় এগিয়ে এসে একটি নির্দিষ্ট বাক্সের দিকে ইশারা করল।
“স্যার, এই বাক্সটি আমি আগেও দেখেছি। চরন দাস এটাকে খুব যত্নে লুকিয়ে রাখতেন। কিন্তু কখনো খুলতে দেখিনি।”
সোমনাথ বাক্সটির দিকে তাকালেন। বাক্সটি পুরোনো কাঠের তৈরি, তার ওপর অদ্ভুত কিছু চিহ্ন খোদাই করা। প্রদীপের সাহায্যে বাক্সটি খোলা হলো।
বাক্স খুলতেই ভেতরে পাওয়া গেল একগুচ্ছ পুরোনো দলিল এবং একটি রক্তমাখা কোট। বিজয় কোটটি দেখেই আতঙ্কিত হয়ে বলল, “স্যার, এটা ভেলুভাইয়ের কোট! আমি নিশ্চিত!”
সোমনাথ দলিলগুলি হাতে তুলে নিলেন। দলিলগুলিতে কিছু জমি বিক্রির কথা লেখা, যার একদিকে স্বাক্ষর করেছেন ভেলুভাই, কিন্তু অন্যদিকে চরন দাসের স্বাক্ষর নেই। যেন লেনদেন সম্পূর্ণ হয়নি।
“এগুলো কী বোঝায়?” প্রদীপ কিছুটা ধন্দে পড়ে প্রশ্ন করল।
“এখানে কোনো বেআইনি লেনদেনের চিহ্ন স্পষ্ট,” সোমনাথ বললেন। “ভেলুভাই এই জমি বিক্রির চুক্তি করতে চাননি। চরন দাস হয়তো তাকে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিল। আর তারপর… এই কোটে রক্তের দাগ দেখেই বোঝা যায়, এখানে কিছু মারাত্মক হয়েছে।”
গুদামের ভেতর আরও কিছু খুঁজতে লাগলেন সবাই। একটি গোপন মেঝের দরজা খুঁজে পাওয়া গেল। দরজাটি একটি সিঁড়িতে নিয়ে গেল, যা নীচে একটি ছোট কুঠুরিতে শেষ হলো। কুঠুরিটি ছোট, কিন্তু সেখানে মাটির নিচে কিছু যেন চাপা দেওয়া হয়েছে।
“এখানে কিছু একটা চাপা দেওয়া হয়েছে,” বিজয় ফিসফিস করে বলল।
সোমনাথ প্রদীপকে নির্দেশ দিলেন মাটি খুঁড়তে। প্রদীপ শাবল দিয়ে খোঁড়া শুরু করল। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল একটি প্যাকেট। প্যাকেটটি খুলতেই ভেতরে পাওয়া গেল কিছু পুরোনো নথি, চরন দাসের ছবিসহ একটি চিঠি, এবং একটি হাতঘড়ি। বিজয় বলল, “ঘড়িটাও ভেলুভাইয়ের। আমি তাকে এটা পরতে দেখেছি।”
সোমনাথ বললেন, “চরন দাসকে এখনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনতে হবে। এই প্রমাণগুলোর ভিত্তিতে আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারি।”
“কিন্তু স্যার, চরন দাস তো আজ সকালে হোটেল ছেড়ে কোথাও চলে গেছেন,” বিজয় উদ্বিগ্নভাবে বলল।
“তাহলে তাকে খুঁজে বের করতেই হবে,” সোমনাথ দৃঢ় কণ্ঠে বললেন।
গুদামের ভেতরে পাওয়া প্রমাণগুলি শুধু রহস্যকে আরও ঘনীভূত করল। ভেলুভাইয়ের অন্তর্ধান ও চরন দাসের অদ্ভুত আচরণের মধ্যে স্পষ্ট যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু চরন দাস কি সত্যিই এই ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারী, নাকি এর পেছনে আরও গভীর কিছু লুকিয়ে আছে?
সোমনাথ জানেন, এই তদন্ত সহজ হবে না। চরন দাসের সন্ধান পেতে হলে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
ছোটদের রূপকথার গল্প - বন্ধুত্বের জাদু: "বন্ধুত্বের জাদু" একটি মনোমুগ্ধকর ছোটদের গল্প। এই রূপকথার গল্পে স্নেহা ও তার বন্ধুরা জাদুকরি উপত্যকাকে বাঁচাতে সাহস, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের মাধ্যমে এক অনন্য অভিযানে পা বাড়ায়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
চরন দাসের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
সন্ধ্যার আলো ম্লান হয়ে আসছিল। থানার ছোট কক্ষটিতে বসে ছিলেন চরন দাস। তার মুখে সেই স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাসী ভাব, কিন্তু চোখে একটা চাপা অস্থিরতা। অরিন্দম রায় এবং গনেশ পাল টেবিলের অপর পাশে বসে তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন।
“চরনবাবু,” অরিন্দম ধীর কণ্ঠে শুরু করলেন, “আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পেয়েছি। আশা করি, আপনি আমাদের সাহায্য করবেন।”
চরন একটু হাসলেন। “অবশ্যই, আমি তো কিছু লুকাইনি। আপনারা যা জানতে চান, জিজ্ঞাসা করুন।”
অরিন্দম প্রথমে নরম স্বরে কথা শুরু করলেন। “ভেলুভাইয়ের সঙ্গে আপনার শেষবার কখন কথা হয়েছিল?”
“আমার মনে হয় প্রায় এক মাস আগে,” চরন নির্বিকারভাবে বললেন। “ও নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শহর ছেড়ে চলে যাবে। আমি শুধু তাকে সাহায্য করেছিলাম।”
গনেশ, যিনি এতক্ষণ নীরবে বসেছিলেন, এবার বললেন, “আপনার এই সাহায্য করার প্রমাণ কী? আপনার কি মনে নেই, আমরা গুদাম থেকে কিছু দলিল এবং একটি রক্তমাখা কোট পেয়েছি?”
চরনের মুখের রঙ হালকা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তিনি নড়েচড়ে বসলেন। “কোটের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। আর দলিল তো ব্যবসার নিয়মে তৈরি হয়েছিল। তাতে অন্য কিছু নেই।”
ঠিক তখনই দরজার সামনে দেখা গেল বিজয়কে। তার হাতে একটি ছোট ডিভাইস। তিনি ঘরে ঢুকে বললেন, “স্যার, আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে এসেছি।”
অরিন্দম বললেন, “বিজয়, তুমি কী পেয়েছ?”
বিজয় ডিভাইসটি চালু করলেন। ভেলুভাইয়ের স্পষ্ট কণ্ঠ ভেসে এল।
“চরন, আমি জমি বিক্রি করব না। এটা আমার শেষ কথা। তুমি যত চাপই দাও, আমি রাজি হব না!”
তারপর শোনা গেল চরনের গম্ভীর কণ্ঠ, “তাহলে এর ফল কিন্তু ভালো হবে না, ভেলুভাই। তুমি জানো না আমি কী করতে পারি।”
এই রেকর্ডিং শোনার পর চরনের মুখে ঘামের দাগ দেখা গেল। তার আগের আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়তে লাগল। তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, “এটা ভুয়া রেকর্ডিং! আমাকে ফাঁসানোর জন্য বানানো হয়েছে।”
গনেশ এবার ঠান্ডা গলায় বললেন, “চরনবাবু, আপনি খুবই নার্ভাস দেখাচ্ছেন। সত্যটা বলুন। কী হয়েছিল সেই রাতে?”
চরন অসংলগ্ন কথা বলতে লাগলেন। “ভেলুভাই নিজেই… হ্যাঁ, নিজেই চলে গেছেন। আমি কিছু করিনি! ওর ওপর কোনো চাপ ছিল না।”
অরিন্দম টেবিলে ধীরে ধীরে ঘুষি মেরে বললেন, “আমাদের ভুল পথে চালানোর চেষ্টা করবেন না। এই রেকর্ডিং এবং প্রমাণ আপনার বিপক্ষে যায়। সত্যিটা না বললে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।”
চরন তখন বললেন, “আমি কিছু বলতে চাই না। আমার উকিল ছাড়া আর কিছু বলব না!”
অরিন্দম এবং গনেশ বুঝলেন, চরন দাস সত্য লুকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিল, ভেলুভাইয়ের অন্তর্ধানে তার ভূমিকা রয়েছে।
বিজয় তখন বললেন, “স্যার, আমি শুনেছি চরনবাবু রাতে প্রায়ই হোটেল ছেড়ে কোথাও যেতেন। হয়তো সেখানে কিছু প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে।”
অরিন্দম বললেন, “আমাদের সেই জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। চরনের চালচলন আমাদের বড়ো সূত্র দিতে পারে।”
মৃত্যুর সন্ধান
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রাতের ঘন অন্ধকারে, শহরের বাইরে পুরনো পরিত্যক্ত একটি কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ দল। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল, আর দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল ঝিঁঝিঁ পোকার কোলাহল। অরিন্দম রায় এবং গনেশ পাল সতর্ক পায়ে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করলেন। তাদের সাথে ছিল বিজয়, যার তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ইতিমধ্যেই তদন্তকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
কারখানার ভাঙাচোরা কাঁচের জানালা আর সিঁড়ির জং ধরা ধাতব আওয়াজ গোটা পরিবেশকে আরও ভয়ানক করে তুলছিল। বিজয় একটি বিশেষ কক্ষে নিয়ে গেল তাদের। “স্যার, অডিও রেকর্ডিংয়ে ভেলুভাইয়ের গলা শোনা গিয়েছিল এই এলাকায়। সম্ভবত এখানে কিছু প্রমাণ পাওয়া যাবে,” সে বলল।
একটি বন্ধ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই ভয়ানক দৃশ্য তাদের সামনে উদ্ভাসিত হল। কারখানার মেঝেতে পড়ে ছিল একটি শরীর, অর্ধেক ঢাকা ময়লার স্তূপে। শার্টটি ময়লা ও রক্তে ভেজা, মুখটি বিকৃত। বিজয় শ্বাসরুদ্ধ করে ফিসফিস করে বলল, “স্যার, এই ভেলুভাই!”
গনেশ ধীর গলায় বললেন, “মৃতদেহটি পরীক্ষা করতে হবে। স্পষ্টতই এটি হত্যাকাণ্ড।”
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দ্রুত প্রস্তুত করা হল। রিপোর্টে জানা গেল, ভেলুভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধে। তার ঘাড়ে গভীর চিহ্ন ছিল, যা স্পষ্ট করে দিল তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এই প্রমাণ পাওয়ার পর, অরিন্দম আর দেরি না করে চরন দাসকে আবারও থানায় ডেকে পাঠালেন। এবার চরনের মুখে আর সেই আত্মবিশ্বাস দেখা গেল না। তার চোখে ছিল আতঙ্ক, আর ঠোঁট কাঁপছিল।
“চরনবাবু,” অরিন্দম বললেন, “ভেলুভাইয়ের মৃতদেহ আমরা পেয়েছি। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা জানি আপনি কী লুকোচ্ছেন। এবার সত্যি বলার সময় এসেছে।”
চরন মাথা নিচু করে নীরব হয়ে রইলেন। কয়েক সেকেন্ডের নিস্তব্ধতা ভেঙে তিনি অসংলগ্ন স্বরে বললেন, “আমি কিছু জানি না। আমি ওকে হত্যা করিনি।”
অরিন্দম শান্ত গলায় বললেন, “আমাদের কাছে অডিও রেকর্ডিং আছে। সেখানে আপনি ভেলুভাইকে হুমকি দিচ্ছেন। আপনার আচরণ, আপনার গোপন দরজা, এবং এখন এই মৃতদেহ—সব প্রমাণ আপনার দিকে নির্দেশ করছে। সত্যি বলুন, চরনবাবু। সত্যটা লুকিয়ে আপনার পক্ষে কোনো সুবিধা হবে না।”
চরন ভেঙে পড়লেন। তার কণ্ঠ কাঁপতে লাগল। “হ্যাঁ, আমি করেছি। আমি করেছি! ব্যবসায়িক লোভ আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল। ভেলুভাই তার জমি বিক্রি করতে চাইছিল না, আর আমি হোটেলটাকে নিজের সম্পত্তি বানাতে চেয়েছিলাম। তাই ওকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হলাম।”
চরনের স্বীকারোক্তি শুনে ঘরটিতে এক মুহূর্তের জন্য পিনপতন নীরবতা নেমে এল। কিন্তু অরিন্দম এবং গনেশের মনে এখনও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেল। ভেলুভাইয়ের হত্যাকাণ্ড কি শুধুই চরনের ব্যবসায়িক লোভের ফল, নাকি এর পেছনে আরও গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে?
বিজয় ধীরে ধীরে বলল, “স্যার, চরন দাস যদি সত্যিই একা এই কাজ করে থাকেন, তবে তার পরিকল্পনা এত নিখুঁত হতে পারত না। আমি নিশ্চিত এর পেছনে আরও কেউ জড়িত। আমাদের তদন্ত এখানেই থামানো উচিত নয়।”
অরিন্দম মাথা নেড়ে বললেন, “ঠিক বলেছ, বিজয়। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে সেই অজানা ষড়যন্ত্রকারীকে। কারণ গল্প এখানেই শেষ নয়। চরন দাসকে কেউ সাহায্য করেছিল, অথবা তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল।”
কারখানার অন্ধকারে খুনের রহস্য উন্মোচিত হলেও, প্রকৃত সত্যের আলো এখনও অস্পষ্ট। চরন দাসের স্বীকারোক্তি কি পুরোপুরি সত্য, নাকি এটি শুধুই মূল ষড়যন্ত্র থেকে মনোযোগ সরানোর একটি চাল?
ভুতের বাংলা ছোট গল্প - হাভেলির রহস্য: "‘হাভেলির রহস্য’ একটি ভুতের গল্প, যেখানে অর্ণব ও রিয়া একটি পুরনো হাভেলিতে ভয়াবহ রহস্য উদঘাটন করে। এক চাঞ্চল্যকর বাংলা ছোট গল্প যা আপনার মনে গভীর প্রভাব ফেলবে।" সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অন্ধকার থেকে আলোর পথে
বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
চরন দাসের স্বীকারোক্তি শহরের উপর বজ্রাঘাতের মতো আঘাত হানে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় শহরবাসীরা হতবাক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ধোলেশ্বরী, এক সময়ের শান্ত শহর, যেন এই ঘটনার পর হঠাৎ করেই গভীর ক্ষতের মুখোমুখি হয়।
চরনের গ্রেফতারের পর বিজয় বুঝতে পারল, শহরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে তার কাছে আরও দায়িত্ব রয়েছে। ভেলুভাইয়ের হত্যার পর হোটেলের কর্মচারীরা অস্থির হয়ে পড়েছিল। তারা কেউই জানত না, এখন তাদের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে।
“ভয় পাওয়ার কিছু নেই,” বিজয় সকলকে বলল, “এই হোটেল আবার নতুন করে শুরু হবে। ভেলুভাইয়ের স্মৃতিকে আমরা সম্মান জানাব। কেউ চাকরি হারাবে না।”
বিজয় হোটেলের নতুন দায়িত্ব নিল। প্রথমেই সে ভেলুভাইয়ের স্মৃতিকে চিরস্থায়ী করার জন্য একটি সিদ্ধান্ত নিল—হোটেলের নাম পুনরুদ্ধার। হোটেলের মূল নাম ছিল ‘শান্তি নিবাস,’ যা ভেলুভাইয়ের পছন্দের নাম ছিল। বিজয়ের এই সিদ্ধান্ত শহরবাসীর মনে একটা আশার আলো জাগিয়ে তুলল।
“শান্তি নিবাস নামটাই ঠিক আছে,” বলল শহরের প্রবীণ বাসিন্দা হরিলাল। “ভেলুভাইও চেয়েছিলেন, এই হোটেল শুধু একটি ব্যবসা না হয়ে, মানুষের শান্তি ও আনন্দের জায়গা হয়ে উঠুক। বিজয় সেই কাজটা করছে।”
হোটেলের পুরনো জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়ার সময় বিজয় একটি পুরনো চিঠি পেল। চিঠিটি ভেলুভাইয়ের হাতে লেখা, যেখানে তিনি লিখেছিলেন তার স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
“আমি চাই, এই হোটেল শুধু একটা জায়গা না, মানুষের মিলনক্ষেত্র হোক। আমি জানি, আমার অনুপস্থিতিতে বিজয় একদিন এই দায়িত্ব নিতে পারবে। সে আমার ছেলের মতো। তাকে বিশ্বাস করা যায়।”
চিঠি পড়ে বিজয়ের চোখে জল চলে এল। সে বুঝতে পারল, ভেলুভাই তাকে কতটা বিশ্বাস করেছিলেন। এই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখাই এখন তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
অপরাধী চরন দাস জেলে গেলেও বিজয়ের মনে একটা প্রশ্ন রয়ে গিয়েছিল—চরন কি একাই এই কাজ করেছিল?
পুলিশি তদন্তে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এল আরও চমকপ্রদ তথ্য। চরনের পিছনে ছিল এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, যার লক্ষ্য ছিল ধোলেশ্বরীর জমিগুলি দখল করে বড়সড় প্রকল্প তৈরি করা। কিন্তু বিজয়ের সাহস এবং শহরবাসীর ঐক্য এই ষড়যন্ত্রকে ভেস্তে দেয়।
ধোলেশ্বরী ধীরে ধীরে তার পুরনো শান্তি ফিরে পেল। শহরের মানুষ বিজয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। হোটেল ‘শান্তি নিবাস’ আবার নতুন রূপে শুরু হল। ভেলুভাইয়ের স্মৃতি রক্ষার জন্য হোটেলের প্রবেশদ্বারে একটি ফলক স্থাপন করা হল, যেখানে লেখা ছিল—“শান্তি ও মিলনের প্রতীক।”
বিজয়ের জন্য এটি শুধু হোটেল চালানো নয়; এটি তার জীবনের একটি মিশন। শহরবাসীর সুখ, শান্তি, এবং নিরাপত্তার জন্য সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ভেলুভাইয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে সে নিজের জীবনের নতুন মানে খুঁজে পেল।
অন্ধকার থেকে আলোয় আসার এই যাত্রা শুধু বিজয়ের নয়, পুরো ধোলেশ্বরীর। শহরের প্রতিটি মানুষ যেন বুঝতে পারল, ঐক্য আর সাহস দিয়ে যেকোনো অন্ধকারকেই পরাজিত করা সম্ভব।