বাংলা ভুতের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি টিপুন।
শান্তিনিকেতনের পাশে বিরাট একটা বটগাছের ছায়ায় লুকিয়ে আছে শতাব্দীপ্রাচীন এক হাভেলি। যতবারই কেউ এই বাড়ির পাশ দিয়ে গিয়েছে, একটা অদ্ভুত অনুভূতি তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে—যেন বাড়ির দেয়ালগুলোতে কেউ চুপিসারে চোখ রাখছে, ফিসফিস করে কিছু বলছে, হয়তোবা কাউকে ডাকছে। তবে এই বাড়ি নিয়ে কেউ বেশি মাথা ঘামায়নি। তার উপর কয়েক দশক ধরে বাড়িটি ফাঁকা পড়ে ছিল; লোকমুখে রটেছিল, এখানে রাতের বেলায় আলো জ্বলে, মাঝরাতে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। কিন্তু এগুলো স্রেফ গল্প বলে উড়িয়ে দেওয়া হতো।
এই বাড়িটিই উত্তরাধিকার সূত্রে পেল অর্ণব আর রিয়া, এক তরুণ দম্পতি। অর্ণব সদ্য কলকাতার একটা কর্পোরেট অফিসে চাকরি পেয়েছে, আর রিয়া তার শিল্পকর্ম নিয়ে ব্যস্ত। বিয়ের কিছুদিন পরই তারা শান্তিনিকেতনে চলে আসে এই নতুন বাড়িটিকে সাজিয়ে তুলতে। যদিও রিয়ার মনের মধ্যে একটা ভয়ের অনুভূতি ছিল, অর্ণব-এর এই বাড়িটিকে নিয়ে দারুণ উৎসাহ। পুরনো দালান, বড় বড় জানালা, কারুকার্যময় খোদাই করা দরজা—সেই সবকিছুই যেন তাকে একটা রহস্যময় আকর্ষণে বাঁধতে শুরু করল।
যখন তারা বাড়িটা দেখার জন্য প্রথমবার প্রবেশ করল, ঘরের ভেতরের একটা নিস্তব্ধতা তাদের চমকে দিল। মনে হচ্ছিল, যেন বাতাসেও একটা চাপা গুমোট ভাব ছড়িয়ে আছে। ঘরগুলি যেন শতাব্দীর পর শতাব্দীর পরিত্যক্ততা নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। অর্ণব মুগ্ধ হলেও রিয়া প্রথম থেকেই একটু অস্বস্তি অনুভব করতে থাকে। বাড়ির দেয়ালগুলির উপর স্যাতস্যাতে দাগ, ছাদ থেকে ঝুলে পড়া মাকড়সার জাল আর বদ্ধ ঘ্রাণ যেন তার শ্বাস নেওয়া পর্যন্ত কঠিন করে তুলল। কিন্তু অর্ণবর মুখের হাসি দেখে রিয়া তার আশঙ্কাগুলো লুকিয়ে রাখল।
সেদিন রাতেই, তাদের নতুন জীবনের প্রথম রাত শুরু হলো এই পুরনো হাভেলিতে। সন্ধ্যের পর রিয়ার মনে হল যেন বাড়ির বাইরে একটা মৃদু ফিসফিসানি শোনা যাচ্ছে। সে বারান্দার দিকে গিয়ে শুনতে পেল এক অদ্ভুত সুর। কিছুক্ষণ শুনে মনে হল যেন কেউ তাদের নাম ধরে ডাকছে, আবার সঙ্গে সঙ্গে আওয়াজটা মিলিয়ে গেল।
রিয়া অবাক হয়ে ভেতরে গিয়ে অর্ণবকে বলল, “শোনো, তুমি কি কিছু শুনছ?”
অর্ণব হেসে বলল, “বই পড়ে পড়ে, তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে! এসব তোমারই কল্পনা, কিছু না।”
রিয়া মুখে হাসি আনতে চাইল, কিন্তু অদ্ভুত একটা ঠাণ্ডা হাওয়া তার শরীর বেয়ে বয়ে গেল।
সকালের আলোতে হাভেলি অনেকটা সাধারণ মনে হচ্ছিল, যেন সব ভয়ের কথা স্রেফ রাতের কল্পনা। কিন্তু পরদিন রাতে, রিয়া বাড়ির দেয়ালের একটা ইটে খেয়াল করে যে, সেটা একটু ঢিলা। কৌতূহলবশত সে ইটটা সরিয়ে ফেলল এবং সেখানে একটা পুরানো চামড়ার বাঁধাই করা ডায়েরি দেখতে পেল।
ডায়েরিটা ছিল মীরা নামে এক মহিলার, যিনি একসময় এই বাড়ির গৃহকর্ত্রী ছিলেন। ডায়েরির পাতায় পাতায় লেখা ছিল তার জীবনের কিছু গল্প, কিছু দুঃখ, আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কিছু অভিজ্ঞতার কথা। মীরা লিখেছিল কেমন করে তাকে এই বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, কেমন করে সে দিনের পর দিন এই বাড়ির অন্ধকারে কাঁদত, প্রহর গুনত তার মুক্তির।
ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা ছিল, “তোমরা যারা আমার বাড়িতে এসেছ, সতর্ক থেকো। আমার কষ্ট আর শাপ তোমাদের শান্তিতে থাকতে দেবে না। যাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম প্রতিশোধের আগুনে পুড়বে সে, তবে তার রেশ রয়ে গেছে এই বাড়ির প্রতিটি ইটে ইটে।”
রিয়া ভয়ে জমে গেল, কিন্তু সেই ভয়ের কথা সে অর্ণবকে জানাল না। কৌতূহল থেকে ডায়েরির শেষের দিকের কিছু পাতা পড়ে সে অনুভব করল, মীরার সেই প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষা আজও যেন বাতাসে মিশে আছে, তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির পরিবেশ আরও ভারী হয়ে উঠতে লাগল। কাঁচের জানালা গুলোতে হঠাৎ করেই ঠকঠক আওয়াজ শুরু হল, রিয়া দরজা খুলে দেখল বাইরের দিকে ঝড় শুরু হয়েছে। সে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিল, কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে আবার দরজার পেছনে মৃদু চাপা শব্দ শোনা গেল।
রিয়া ভয়ে অর্ণবকে ডাকার চেষ্টা করল, কিন্তু তার গলাটা যেন আটকে গেল। দরজার দিকে তাকাতেই একটা ছায়ামূর্তির আভাস দেখতে পেল সে। মনে হল যেন কেউ ওখানে দাঁড়িয়ে আছেই, তাকিয়ে আছে তার দিকে।
সে শক্তি সঞ্চয় করে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল, কিন্তু ততক্ষণে ছায়াটা মিলিয়ে গেছে। ঘরে ঢুকে এসে দেখে অর্ণব মাটিতে পড়ে আছে, যেন জ্ঞান হারিয়েছে। তার মুখে একটা ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
সকালে অর্ণব জ্ঞান ফিরে পেয়ে জানাল যে, রাতে তার চোখের সামনে একটা মুখোশধারী মূর্তি দেখেছিল, যা তাকে দেখতে দেখতে কাছে চলে আসে। মূর্তিটা কেমন একটা শ্বাসরুদ্ধকর আওয়াজে কথা বলছিল, যা সে বোঝার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছিল।
অর্ণব-এর চোখে সেই ভয়ের স্মৃতি স্পষ্ট ছিল, কিন্তু তবুও সে বাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি নয়। রিয়ার মনে হল, এই বাড়ি হয়তো একটা অভিশাপের নিচে, যেখানে কেউ আসার সাহস করে না।
তারা ঠিক করে যে, মীরার সেই ডায়েরির কথা জানতে ইতিহাসের আরও গভীরে খোঁজ নিতে হবে। এই বাড়ির পিছনের রহস্য উদঘাটন না করা পর্যন্ত তারা এখান থেকে যাবেনা।
ছোটদের রূপকথার গল্প - রহস্যের মুকুট: "রহস্যের মুকুট" একটি মনোমুগ্ধকর ছোটদের গল্প। সাহস, বন্ধুত্ব, এবং আলো-অন্ধকারের লড়াই নিয়ে লেখা এই রূপকথার গল্প ছোটদের মন্ত্রমুগ্ধ করবে এবং আনন্দের জগতে ভ্রমণ করাবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
প্রাচীন ডায়েরি
বাংলা ভুতের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি টিপুন।
বৃষ্টির ধারা যেন থামতেই চাইছে না। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া জানালায় আছড়ে পড়ছে আর পুরো বাড়িটা যেন কাঁপছে। অন্ধকার চারিদিকে ঘন হয়ে আছে, আর তারই মাঝে বসে আছে রিয়া, হঠাৎ খুঁজে পাওয়া সেই পুরনো ডায়েরিটা হাতে নিয়ে। ডায়েরির পাতাগুলোতে একটা পুরনো গন্ধ লেগে আছে, যেন বহুদিন ধরে সেগুলো অন্ধকারে লুকিয়ে ছিল। প্রত্যেকটা পাতার গায়ে প্রাচীন হাতের লেখা—লিখেছেন মীরা নামে এক নারী, যিনি এক শতাব্দী আগে এই বাড়িতে থাকতেন।
ডায়েরি খুলতেই প্রথম পাতাতেই একটা চিরকুট: “যে সত্য আমি রেখে গেলাম, তা তোমার জন্য নয়। এই সত্যে পৌঁছোতে চাইলে, ভালোবাসা আর প্রলয়ের ভয়কে পাশ কাটিয়ে যাও।” রিয়ার বুকের মধ্যে যেন একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। মনে হল এই চিরকুট শুধু তার জন্যই লেখা।
প্রথম পৃষ্ঠাগুলো পড়তে পড়তে বুঝল, মীরা ছিলেন এক সাধারণ নারী, যার জীবনটা ছিল প্রেম আর বিশ্বাসের মোহে ভরা। মীরা তার ভালোবাসার মানুষের জন্যই এই হাভেলিতে এসেছিলেন। কিন্তু পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে ছিল মীরার অভিজ্ঞতা, তার জীবন বদলে যাওয়ার গল্প।
এক সন্ধ্যায় মীরা জানতে পারেন, তার স্বামী তাকে ঠকাচ্ছেন। কেবল ভালোবাসা নয়, সম্পত্তির লোভও ছিল তার স্বামীর। সম্পত্তি হাতানোর জন্যই তাকে বিয়ে করেছিলেন। বিশ্বাসঘাতকতায় ভেঙে পড়া মীরার জীবন তখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। তাকে একরকম বন্দি করে রাখা হয় এই হাভেলির নির্জন ঘরে। বাইরে থেকে দেখা গেলেও, মীরা ছিলেন ওই চার দেওয়ালের মধ্যে এক বন্দিনী।
ডায়েরির মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় দাগ পড়ে আছে—মনে হয় মীরার কান্না আর দুঃখ মিশে গিয়েছিল সেই পাতাগুলোর মধ্যে। যতটা পড়তে লাগল, রিয়ার মনে হচ্ছিল যেন সেই কান্না, সেই যন্ত্রণা ওর সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
রাতে বাড়ির নীরবতা যেন আরও গভীর হয়ে উঠল। একসময় রিয়ার মনে হল, ডায়েরির প্রতিটা শব্দ যেন তাকে মীরার অতীতের সেই কষ্টের ভেতরে টেনে নিচ্ছে। তার চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠল এক অসহায় নারীর গল্প, যে প্রতারণার শিকার হয়ে ধ্বংস হয়েছিল। আর সেই ধ্বংসের গল্প এতটাই জীবন্ত ছিল যে, রিয়া তার অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না।
ডায়েরির শেষ দিকে লেখা ছিল: “প্রতিশোধ আমার রক্তে মিশে আছে। এই বাড়ির প্রতিটি ইটে আমার অভিশাপ লেগে আছে। একদিন, আমি আবার ফিরে আসব। আমি প্রতিশোধ নেব।” এই লাইনগুলো পড়ে রিয়া কেঁপে উঠল। এই ডায়েরির পৃষ্ঠাগুলো যেন তাকে কোনো অদৃশ্য জালে বন্দি করে ফেলেছে।
সকালে অর্ণবকে ডায়েরির কথা বলতেই সে বেশ অবাক হল। কিন্তু ডায়েরির ভেতরের ভয়ংকর কথাগুলো শুনে অর্ণব প্রথমে হেসে ফেলল। “এগুলো সব পুরনো কল্পকাহিনি, তাছাড়া এত প্রাচীন লেখার উপর ভিত্তি করে ভয় পাওয়ার কিছু নেই,” বলল অর্ণব।
কিন্তু রিয়ার মনের ভিতরে যেন সেই প্রতিশোধের গল্প এক নতুন কৌতূহলের জন্ম দিল। মনে হল মীরার সেই প্রতিশোধের আগুন এখনও নিভে যায়নি। বাড়িটা যেন তাদের অপেক্ষায় আছে।
অর্ণব বলল, “আমরা তাহলে একটু আশেপাশের লোকেদের কাছ থেকে বাড়ির ইতিহাস জেনে নিতে পারি। শুনেছি, গ্রামের মন্দিরের পুরোহিত বাড়ির ব্যাপারে অনেক কিছু জানেন। হয়তো ওনাদের কাছ থেকে কিছু গল্প শুনতে পারব।”
দুপুরে পুরোহিতের সঙ্গে দেখা করতে গেল তারা। পুরোহিত তাদের বাড়ির নাম শুনেই চমকে উঠলেন। “তোমরা সত্যি ও বাড়িতে থাকো? ওখানে অনেকেরই যাওয়ার সাহস নেই।”
পুরোহিত জানালেন, “মীরাদেবী ছিলেন এক বিশাল হৃদয়ের মানুষ। কিন্তু তার জীবনটা অত্যন্ত দুঃখের ছিল। তার মৃত্যু রহস্যজনক ছিল এবং সেই থেকে তার আত্মার কষ্ট এই বাড়ির চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। কেউ বলে, তাকে হত্যা করা হয়েছিল, আবার কেউ বলে, তার আত্মাই অভিশপ্ত হয়ে গেছে।”
রিয়ার মনে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হল। পুরোহিতের কথা শুনে তাদের মন আরও ভয়াবহতায় ভরে গেল। মনে হল যেন এই বাড়ি আসলেই একটা অভিশপ্ত স্থান, যেখানে মীরার আত্মা এখনও বন্দি হয়ে আছে প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষায়।
সেই রাতে আবার বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে উঠল। রিয়া অদ্ভুত একটা শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল, কিন্তু চোখ বন্ধ করতে পারল না। হঠাৎ বাইরে ঝড় উঠল, আর জানালায় তীব্র আওয়াজ শুরু হল। এক সময় মনে হল যেন কেউ জানালা খটখট করছে, যেন ভেতরে ঢোকার জন্য কোনো অশুভ শক্তি তাড়াহুড়ো করছে।
কিছুক্ষণ পর রিয়া দেখল, তার ঘরের দরজার বাইরে একটা ছায়া দাঁড়িয়ে আছে। ছায়াটা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে, যেন ঘরের ভেতরেই ঢুকে আসতে চায়। ভয়ে তার শ্বাস আটকে এল। মনে হল যেন মীরার আত্মা প্রতিশোধের জন্য ফিরে এসেছে।
কাঁপতে কাঁপতে সে বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে দেখল, কেউ নেই। কিন্তু মেঝের উপর কাদা মাখানো পায়ের দাগ দেখা যাচ্ছে, যা ঘরের মাঝখানে এসে থেমে গেছে। সে শিউরে উঠল। মনে হচ্ছিল, যেন কেউ তার পাশে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে তাকিয়ে আছে।
ঘড়ির কাঁটা তখন মধ্যরাত পার হয়ে গেছে। হঠাৎ রিয়ার মনে হল যেন বাতাসে একটা কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। গভীর রাতের সেই কান্না যেন তার কানে ধাক্কা মারল। ভয়ে সে দরজা বন্ধ করে বসে রইল।
সকালে অর্ণব যখন তাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, “কাল রাতে কি কিছু ঘটেছিল?”
রিয়া কোনোমতে বলল, “আমাদের এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। আমি মনে করি, এখানে কোনো অভিশাপ আছে। মীরার আত্মা এখানেই রয়েছে।”
কিন্তু অর্ণব তার কথা বিশ্বাস করতে চাইল না। বরং সে আরও গভীরে খোঁজ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগল।
কিন্তু রিয়া জানত, কিছু একটা আসন্ন, কিছু একটা ভয়ংকর যা তাদের এই বাড়িতে টেনে নিয়ে এসেছে। এবং সেই কিছুই তাদের সাথে আরও খেলা করতে চায়।
অশুভ উপস্থিতি
বাংলা ভুতের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি টিপুন।
মীরার ডায়েরির রহস্যময় কাহিনী জানার পর থেকেই অর্ণব আর রিয়া হাভেলির অন্ধকারাচ্ছন্ন ইতিহাস খুঁজে বের করতে বদ্ধপরিকর। মীরার কথাগুলো যেন অর্ণবকে কোথাও টেনে নিয়ে যাচ্ছে, আর তার মনে হচ্ছে, এই বাড়ির গোপন সত্য প্রকাশ করতেই হবে। রিয়া ভেতরে ভেতরে আতঙ্কিত, কিন্তু অর্ণবের দৃঢ় সংকল্প তাকে সাহস যোগায়।
দিনের বেলা হাভেলি দেখতে নির্দোষ মনে হলেও রাতের বেলা পুরো বাড়িটাই যেন ভিন্ন রূপ নেয়। প্রতিটি কোণ অন্ধকারের চাদরে ঢেকে যায়, বাতাসে যেন কোনও অশুভ শীতলতার গন্ধ পাওয়া যায়।
এক রাতে, ডায়েরির আরেকটি পাতা খুলে পড়তে গিয়ে অর্ণব অনুভব করল যেন মীরার স্মৃতিগুলো তার সামনে জীবন্ত হয়ে উঠছে। ডায়েরির পরবর্তী পাতাগুলোতে মীরা তার স্বামীর প্রতারণার কথা বিস্তারিত লিখেছেন—কীভাবে তিনি মীরার ভালোবাসার সুযোগ নিয়েছিলেন, কীভাবে সম্পত্তির লোভে তাকে ধীরে ধীরে দম বন্ধ করে রেখেছিলেন। মীরার কষ্ট যেন অর্ণবকে গভীরভাবে আঘাত করল।
রিয়া ডায়েরির এসব কথা শুনে কেঁপে উঠল। সে বলল, “অর্ণব, আমরা কেন এ সব পড়ছি? এ বাড়িটা ভীষণ ভয়ঙ্কর, আমাদের এটা ছেড়ে যাওয়াই উচিত।”
কিন্তু অর্ণব বলল, “রিয়া, এই বাড়িতে যা কিছু ঘটেছে তা মীরার সাথে ছিল অন্যায়। সে শান্তি পায়নি, আর তার আত্মা এখনও আমাদের কাছে ন্যায় চাচ্ছে।”
তাদের কথার মধ্যে রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছিল। হঠাৎ করেই একটা ঠাণ্ডা হাওয়া জানালার ভেতর দিয়ে ভেসে এলো। সেই শীতল হাওয়াতে যেন একটা তীক্ষ্ণ গন্ধ ছিল—বিলিয়ে যাওয়া ধূপের গন্ধ, কিন্তু তার মধ্যে মিশে ছিল এক অদ্ভুত তীব্রতা।
রিয়া টের পেল, তার ঘাড়ের পেছনে কেউ খুব ধীরে ফিসফিস করছে। সেই ফিসফিসানি তার কানে স্পষ্ট শোনা গেল: “তোমরা এসেছো আমার গল্প শুনতে, তাই না?”
রিয়া হঠাৎ চমকে উঠে পিছনে তাকাল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না।
“অর্ণব!” সে কাঁপা গলায় ডাক দিল। অর্ণব দ্রুত রিয়ার পাশে এসে দাঁড়াল। তারও মনে হচ্ছে যেন অন্ধকার তাদের দিকে ধেয়ে আসছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অর্ণব আর রিয়া অনুভব করল, তাদের চারপাশে আরও কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। ঘরের এক কোণে ছায়ামূর্তির মতো কিছু দেখতে পেল, কিন্তু কাছে গেলেই সেটা মিলিয়ে যায়। মাঝে মাঝে ঘরের বিভিন্ন জায়গা থেকে চাপা হাসির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সেই হাসিতে যেন কোনও হিংস্রতা মিশে ছিল, আর সেটা তাদের রক্ত হিম করে দিচ্ছিল।
অর্ণবের মনে হলো, এই পরিস্থিতির গভীরে গিয়ে জানতে হবে মীরার শেষ দিনের কথা। তাই পরের দিন সকালেই তারা গ্রামের পুরোহিতের সঙ্গে আবার দেখা করতে গেল। পুরোহিত তাদের বললেন, “বাবা, এই বাড়ি অভিশপ্ত। এখানে অমঙ্গল ঘটেছে, যার প্রতিক্রিয়ায় মীরার আত্মা শান্তি পায়নি। শুনেছি, সে মারা যাওয়ার দিন রাতেও ঝড়ো হাওয়া বইছিল, আর সেই সময় সে কিছু একটা খুঁজে পেয়েছিল।”
পুরোহিতের কথা শুনে রিয়া আর অর্ণব যেন নতুন এক কৌতূহলের মধ্যে পড়ল। তারা ঠিক করল, আরও খোঁজ নিতে হবে।
রাতে বাড়ি ফিরে তারা মীরার ডায়েরির শেষের পাতাগুলো পড়তে বসল। এইবার তারা দেখল, শেষের দিকে লেখা রয়েছে, “কেউ আমাকে বিশ্বাস করেনি। আমি যা জানি, তা প্রমাণ করার জন্য আরও গভীরে যেতে হবে। আমার প্রতিশোধ নিতে চাই। যে অন্ধকার আমাকে গিলে নিয়েছে, আমি তার মধ্য দিয়ে আবার ফিরে আসব।”
রিয়া কাঁপা গলায় বলল, “অর্ণব, আমি আর থাকতে পারছি না। এ বাড়ি আমাদের মারার জন্যই তৈরি হয়েছে।”
কিন্তু অর্ণবের মন যেন শক্ত হয়ে উঠল। সে বুঝতে পারল, মীরার আত্মা এই বাড়ির প্রতিটি ইটে মিশে আছে, আর সেই প্রতিশোধের আগুন এখনও নিভে যায়নি।
রাতে অর্ণব আর রিয়া যখন ঘুমাতে গেল, তখন হঠাৎ করেই তাদের ঘরের বাতি নিভে গেল। পুরো ঘরটা অন্ধকারে ডুবে গেল, শুধু জানালার বাইরের ঝড়ো বাতাসের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। আর তখনই তারা দেখল, ঘরের মাঝখানে এক ছায়া মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। সেই ছায়াটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিল তাদের দিকে, আর তার চোখের জ্বলজ্বলে আলোয় মীরার মুখটা যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
রিয়া ভয়ে চিৎকার করল, “কে তুমি? আমাদের থেকে কী চাও?”
সেই ছায়া মূর্তি ধীরে ধীরে বলল, “আমি শান্তি চাই। আমি আমার ন্যায় চাই। আমার প্রতিশোধ চাই।”
অর্ণব সাহস নিয়ে ছায়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, “তুমি কীভাবে শান্তি পাবে? আমরা তোমাকে সাহায্য করতে চাই।”
সেই ছায়া মূর্তি একটু থেমে বলল, “আমার সব সত্য তোমাদের জানার প্রয়োজন। আমি যা কিছু দেখেছি, যা কিছু সহ্য করেছি, সব কিছু তোমাদের জানতে হবে। তোমরা সত্যের পথে এসেছো। কিন্তু মনে রেখো, এই পথ খুব সহজ হবে না।”
এই কথাগুলো বলে ছায়ামূর্তিটি মিলিয়ে গেল, আর ঘরে আবার আলো জ্বলে উঠল।
রিয়া আর অর্ণব বুঝল, তাদের সামনে এক ভয়ংকর সত্যের রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব রয়েছে। মীরার আত্মা যেন তাদেরকে সেই পথে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে।
তারা দুজনেই ঠিক করল, ডায়েরির বাকি পৃষ্ঠাগুলো থেকে আরও কিছু খুঁজে বের করতে হবে। হয়তো সেখানেই মীরার প্রতিশোধের পেছনের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে।
মন্দিরের সন্ধান
বাংলা ভুতের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি টিপুন।
রাত্রি গভীর হয়েছে। হাভেলির চারপাশে অদ্ভুত নীরবতা নেমে এসেছে। অর্ণব আর রিয়া সেই নির্জনতায় ডুবে যেতে যেতে ভাবছে মীরার কথা। ডায়েরির প্রতিটি বাক্য যেন তাদের মনে গভীর দাগ কেটে গেছে। এই বাড়িতে থাকা প্রতিটি ইট, প্রতিটি কোণ যেন মীরার দুঃখের সাক্ষী।
এক রাত, হঠাৎ করেই অর্ণব সিদ্ধান্ত নেয়, ডায়েরির ইঙ্গিত অনুসারে মন্দিরের পেছনের ধ্বংসাবশেষে খোঁজ করতে হবে। রিয়া প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত হয়, কিন্তু অর্ণবের দৃঢ় সংকল্প দেখে সে রাজি হয়। সেই রাতে, হাতে শুধু টর্চ আর ডায়েরির পাতাগুলি নিয়ে তারা বাড়ির পেছনের দিকে পা বাড়ায়।
হাভেলির পেছনে যে মন্দিরটা ছিল, সেটা বহু বছর আগেই ভেঙে পড়েছে। বড় বড় পাথরগুলো সব ঝোপঝাড়ের ভেতরে ঢেকে গেছে, চারপাশে যেন এক ভয়ানক শূন্যতা। তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়, আর প্রতি পদক্ষেপে তাদের মনে হয় যেন কেউ তাদের ওপর নজর রাখছে।
হঠাৎ করে অর্ণব কুয়াশার মধ্যে এক ছায়ামূর্তি দেখতে পায়। সে রিয়ার হাত ধরে বলে, “ওই দিকটা দেখো! কিছু একটা আছে।”
রিয়া ঘাড় ফিরিয়ে দেখে, কুয়াশার মধ্যেই যেন এক নারী মূর্তি ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তার চোখে এক অদ্ভুত আলো, যা তাদের দিকে চেয়ে রয়েছে। তার চোখে যেন দুঃখ আর ক্রোধের মিশ্রণ।
অর্ণব কাঁপা গলায় বলে, “তুমি মীরা, তাই তো?”
মূর্তিটা কিছুক্ষণ নীরব থাকে, তারপর ফিসফিস করে বলে, “আমাকে শান্তি দাও। আমার প্রতিশোধ নাও। আমি শান্তি চাই।”
রিয়ার শরীর কেঁপে ওঠে। সে বুঝতে পারে, মীরার আত্মা তাদের সাহায্য চাইছে। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, “আমরা কীভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি?”
মীরার আত্মা বলে, “আমার জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার আগুনে আমি পুড়ে মরে গেছি। আমার প্রতিশোধ চাই, আমার ন্যায় চাই।”
অর্ণব আর রিয়া একে অপরের দিকে তাকায়। তারা বুঝতে পারে, এই আত্মা যতদিন না প্রতিশোধ পায়, ততদিন তার শান্তি মিলবে না। তারা প্রতিজ্ঞা করে যে, মীরার প্রতিশোধ তাদেরই পূর্ণ করতে হবে।
অর্ণব বলে, “আমরা কি সেই মানুষটার সন্ধান করব, যে তোমার সঙ্গে এই অন্যায় করেছিল?”
মীরা হালকা মাথা নাড়ে, আর তার চোখে এক ঝলক কৃতজ্ঞতার আভাস দেখা যায়। কিন্তু তারপরই সে যেন কেমন অস্থির হয়ে ওঠে। চারপাশের হাওয়া ভারি হয়ে যায়, কুয়াশার মধ্য থেকে এক শীতল হাওয়া তাদেরকে ঘিরে ধরে।
“শুধু তাকে খুঁজে বের করা নয়,” মীরা ধীরে ধীরে বলে, “তোমাদের আমার শেষ কথাগুলোও শুনতে হবে। আমি যা লিখে যেতে পারিনি, সেই সব কথা তোমাদের বলতে হবে।”
এই কথা বলেই মীরার ছায়ামূর্তি মিলিয়ে যায়, আর তাদের সামনে শুধু ছায়ার আঁচড় পড়ে থাকে। অর্ণব আর রিয়া স্তব্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তারা জানে, তাদের এই অনুসন্ধান এখানেই শেষ নয়।
পরের দিন সকালে, তারা আবার সেই পুরোহিতের কাছে যায়, যে তাদের আগে মীরার বিষয়ে কিছু বলেছিল। পুরোহিত তাদের দেখে হালকা মাথা নাড়ে আর বলে, “তোমরা যা জানতে চাও, তার জন্য শক্ত মন নিয়ে এসো। এই পথে শুধু অন্ধকার আর শূন্যতা।”
অর্ণব পুরোহিতকে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষে দেখা মূর্তির কথা জানায়। পুরোহিত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “ওটা মীরার আত্মা। সে এখানেই মারা গিয়েছিল, আর মৃত্যুর পরও সে এই স্থান ছেড়ে যেতে পারেনি। তার জীবনে এত কষ্ট ছিল যে সেই কষ্টের প্রতিধ্বনি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে।”
রিয়া জিজ্ঞাসা করে, “আমরা কীভাবে মীরাকে শান্তি দিতে পারি? আমাদের কি করতে হবে?”
পুরোহিত তাদেরকে বলেন যে, মীরার সমস্ত কষ্টের মূল সেই মানুষটি, যে তাকে ধোঁকা দিয়েছিল। মীরার আত্মা শান্তি পাবে যদি সেই মানুষটির অন্যায়ের শাস্তি হয়। কিন্তু তিনি আরও সতর্ক করে দেন যে, এই পথে তাদের জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।
রাতের বেলা, তারা আবার ডায়েরির শেষ পাতাগুলোতে চোখ বোলায়। অর্ণব অনুভব করে, প্রতিটি শব্দে মীরার কষ্ট তাদের দিকে পৌঁছে যাচ্ছে। সে অনুভব করে, তারাই একমাত্র আশা যারা মীরার আত্মাকে মুক্তি দিতে পারে।
ডায়েরির একদম শেষে লেখা রয়েছে, “যে আমার প্রাণ নিয়েছে, সে কখনো সুখী হতে পারবে না। আমার অভিশাপ তার জীবনকে অন্ধকারে ঢেকে রাখবে।”
এই লাইনগুলো পড়ে রিয়ার গা শিরশির করে ওঠে। সে ফিসফিস করে বলে, “অর্ণব, আমরা কি সত্যিই এই পথেই চলব?”
অর্ণব গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “হ্যাঁ, মীরার আত্মার শান্তির জন্য আমাদের এই পথেই যেতে হবে। আমাদের সত্যটা উদঘাটন করতে হবে।”
সেই রাতে, হঠাৎ করেই তাদের ঘরে অদ্ভুত সব আওয়াজ শোনা যায়। দরজা নিজে নিজেই খোলা আর বন্ধ হচ্ছে, মেঝের ওপর ভারী পায়ের শব্দ, আর জানালার বাইরে একটা ছায়ামূর্তি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।
রিয়া চিৎকার করতে গিয়ে অর্ণবের হাত চেপে ধরে, “ওটা কে?”
অর্ণব জানালার দিকে তাকায়, আর দেখতে পায় সেই একই ছায়ামূর্তি, যার মুখে বিষণ্ণতার ছাপ। সে এবার আরও পরিষ্কারভাবে শোনা যায়, “আমাকে মুক্তি দাও। আমাকে শান্তি দাও।”
তারা দুজনেই বুঝতে পারে, মীরার আত্মা আরও অস্থির হয়ে উঠছে। যত দিন যাচ্ছে, ততই তার কষ্ট তাদের চারপাশে ঘিরে ধরছে।
অর্ণব দৃঢ়ভাবে বলে, “আমরা মীরার প্রতিশোধের পথেই যাব। সত্যটা সামনে আসবেই।”
রহস্য-রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প - ভয়ঙ্কর গোপনীয়তা: "ভয়ঙ্কর গোপনীয়তা" একটি চিত্তাকর্ষক রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প, যেখানে অদ্ভুত ঘটনার মাঝ দিয়ে নায়ক থমাস এভেলিনের আত্মাকে মুক্তি দিতে লড়াই করে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
প্রায়শ্চিত্তের আয়োজন
বাংলা ভুতের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি টিপুন।
রাতের অন্ধকারে, নীলপুর হাভেলির চারপাশটা যেন আরও বেশি রহস্যময় আর শীতল হয়ে উঠেছে। চারদিকে এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে এসেছে। অর্ণব আর রিয়া মোমবাতি নিয়ে পুরনো মন্দিরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হাভেলির পেছনে থাকা এই মন্দিরটার বয়স কয়েকশো বছর, আর তার দেয়ালে থাকা ফাটলগুলো যেন অনেকদিনের শোকের সাক্ষী।
মোমবাতি গুলি একে একে মন্দিরের পাথরের মেঝেতে সাজিয়ে রেখে, তারা দুজনেই বসে পড়ে। সেই মোমবাতির আলোয় তাদের মুখে এক গম্ভীর ভাব ফুটে ওঠে। অর্ণব গভীর দৃষ্টিতে মোমবাতির শিখাগুলির দিকে চেয়ে থাকে, আর রিয়া তার পাশে বসে নিচু গলায় বলে, “আমাদের সত্যিই কি মীরার আত্মার জন্য এটা করা উচিত? যদি এর ফলে কিছু বিপদ হয়?”
অর্ণব আস্তে করে বলে, “মীরা যে কষ্ট পেয়েছে, তার মুক্তির জন্য এটাই একমাত্র উপায়। আমাদের এখানে তার স্মৃতির জন্য প্রার্থনা করতে হবে, যেন সে শান্তি পেতে পারে।”
রিয়া মন্দিরের চারপাশে মোমবাতি সাজিয়ে ধীরে ধীরে প্রার্থনা শুরু করে। “মীরা, যদি আমাদের কথায় তোমার কোনো শান্তি মেলে, তবে দয়া করে আমাদের সাড়া দাও। আমরা তোমার কষ্ট বুঝি, আর আমরা চাই তুমি শান্তি পাও।”
মোমবাতির শিখাগুলি আচমকা কেঁপে ওঠে। চারদিকে যেন এক অজানা শীতলতা ছড়িয়ে পড়ে, আর অর্ণব আর রিয়া অনুভব করে যেন তাদের চারপাশে কোনো অদৃশ্য উপস্থিতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। মীরার আত্মার বিষণ্ণতা আর কষ্ট যেন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হঠাৎ করেই, তাদের সামনে একটি ছায়া ফুটে ওঠে। মীরার অবয়বটা যেন আরও স্পষ্ট, তার চোখে গভীর দুঃখ আর দীর্ঘশ্বাসের ছাপ। সে যেন কিছু বলতে চায়, কিন্তু শব্দগুলো যেন তার কণ্ঠে আটকে আছে।
অর্ণব কাঁপা গলায় বলে, “মীরা, আমরা জানি তোমার ওপর অনেক অন্যায় হয়েছে। আমরা তোমার প্রতিশোধ নিতে এসেছি। তোমার সেই কষ্টের কথা আমাদের বলো, যাতে আমরা তোমার জন্য কিছু করতে পারি।”
মীরা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে, তার মুখে এক রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠে। তারপর সে ফিসফিস করে বলে, “আমার কষ্ট, আমার যন্ত্রণা তো এই মন্দিরের দেয়ালের মধ্যেই বন্দী হয়ে রয়েছে। এই মন্দিরের পেছনে লুকিয়ে থাকা সেই অন্ধকারেই আমার মৃত্যুর কারণ।”
রিয়া চমকে ওঠে, “তুমি কি বলতে চাইছো, তোমার মৃত্যুর রহস্য এখানেই লুকিয়ে আছে?”
মীরার আত্মা মাথা নাড়ে। তারপর এক অদ্ভুত কন্ঠে বলে, “প্রত্যেকটা পাথর, প্রত্যেকটা ফাটল যেন আমার কষ্টের সাক্ষী। আমার শান্তির জন্য তোমাদের আরও গভীরে যেতে হবে, এই মন্দিরের নীচে। সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে সেই প্রমাণ, যা আমার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করবে।”
অর্ণব আর রিয়া একে অপরের দিকে তাকায়। মীরার আত্মার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে, তারা মন্দিরের মেঝেতে থাকা ফাটলগুলোর দিকে মনোযোগী হয়। তারা খুঁজতে শুরু করে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি বড় পাথরের স্ল্যাব খুঁজে পায়, যেটার নিচে মাটি কিছুটা আলগা হয়ে রয়েছে। অর্ণব পাথরটা সরিয়ে মাটিতে হাত দেয় আর অনুভব করে, সেখানে নিচে কিছু একটা রয়েছে।
রিয়া কৌতূহলী গলায় বলে, “এখানে নিশ্চয়ই কিছু লুকিয়ে আছে। হয়তো এটাই সেই প্রমাণ, যার খোঁজ মীরা চাইছিল।”
অর্ণব সাবধানে মাটি সরাতে থাকে আর একটু পরেই একটা পুরানো বাক্সের দেখা পায়। বাক্সটা খুবই পুরনো আর জংধরা তালা দিয়ে আটকানো। তারা দুজনেই বুঝতে পারে, এই বাক্সের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সেই গোপন সত্য, যা মীরার মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
অর্ণব বাক্সটা খুলতে চেষ্টা করে, কিন্তু তালাটা খুবই শক্ত। শেষমেশ রিয়া তার ব্যাগ থেকে ছোট্ট একটা ধারালো সরঞ্জাম বের করে তালাটা খুলে দেয়। বাক্সের ভেতর থেকে পুরনো কিছু চিঠি, একজোড়া কঙ্কাল হাতের চুড়ি আর একটা ছবি বের হয়।
চিঠিগুলি পড়তে শুরু করলে তাদের সামনে মীরার জীবনের একটি করুণ চিত্র ফুটে ওঠে। মীরার মৃত্যুর কারণ আসলে তার ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার চক্রান্ত ছিল। সেই চিঠিতে লেখা ছিল, মীরার বিশ্বাস করা মানুষটি তাকে ধোঁকা দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল।
ছবিতে একজন তরুণকে দেখা যাচ্ছে, যার চোখে এক ধরনের নিষ্ঠুরতা ফুটে উঠেছে। ছবির নিচে লেখা আছে, “প্রেমের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিশ্বাসঘাতকতা।” এই কথা পড়ে অর্ণব বুঝতে পারে, মীরার কষ্টের কারণ ওই মানুষটাই, যে তাকে ঠকিয়েছিল আর এই মন্দিরেই তার প্রাণ নিয়েছিল।
রিয়া ধীরে ধীরে বলে, “মীরার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এখন আমাদের সেই মানুষটার মুখোমুখি হতে হবে। তাকে তার অপরাধের শাস্তি পেতে হবে।”
হঠাৎ, তাদের চারপাশে বাতাস ভারী হয়ে আসে, মোমবাতিগুলি একে একে নিভে যেতে শুরু করে। মীরার ছায়ামূর্তি তাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আর তার মুখে এক গভীর শান্তির অভিব্যক্তি। সে ধীরে ধীরে বলে, “তোমরা আমার কষ্টের কারণকে খুঁজে পেয়েছ। এবার আমাকে শান্তি দাও।”
এই কথা বলেই মীরার ছায়ামূর্তি মিলিয়ে যায়, আর চারপাশের বাতাস আবারও শান্ত হয়ে আসে। অর্ণব আর রিয়া বুঝতে পারে, মীরার প্রতিশোধের পথ এখন শুরু হয়েছে। তাদের সামনে রয়েছে একটি কঠিন পথ, যেখানে তাদের মীরার মৃত্যুর কারণকে শাস্তি দিতে হবে।
রাতের অন্ধকারে তারা মন্দিরের পেছনের পথে ফিরে আসে। রিয়া চুপ করে থাকলেও তার মনের ভেতর ভয়ের ছায়া স্পষ্ট। সে জানে, এই পথে বিপদের সম্ভাবনা অনেক বেশি। অর্ণবও জানে, যে পথে তারা পা বাড়িয়েছে, সেটি ভয় আর অশান্তির পথে তাদের নিয়ে যাবে।
তবে তারা দুজনেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, মীরার আত্মাকে মুক্তি দিতে তারা শেষ পর্যন্ত এই রহস্যের গভীরে যাবেই।
আত্মার মুক্তি
বাংলা ভুতের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি টিপুন।
রাতের গভীর নীরবতায় নীলপুর হাভেলির প্রতিটি কোণ যেন একটি নিঃশব্দ আতঙ্কের কথকতা বলে চলেছে। অর্ণব আর রিয়া এখন মীরার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে অনেকটাই বুঝেছে। মন্দিরের মধ্যে সেই ভৌতিক অভিজ্ঞতার পর, তারা উন্মোচিত করেছিল মীরার জীবনের করুণ কাহিনি। এখন তাদের একটাই লক্ষ্য – মীরার আত্মাকে চিরতরে মুক্তি দেওয়া।
মন্দির থেকে বেরিয়ে হাভেলির পাথুরে পথ ধরে হেঁটে চলেছে তারা। অন্ধকারে তাদের পায়ের শব্দ যেন নীরবতার সঙ্গে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। রিয়ার মনে হালকা ভয়ের স্পর্শ, যদিও সে দৃঢ়ভাবে অর্ণবের পাশে রয়েছে। হঠাৎ করেই অর্ণব বলে উঠল, “তোমার কি মনে হয়, আমরা এই কাজটা শেষ করতে পারব?”
রিয়া আস্তে করে বলল, “মীরার কষ্টের মুক্তির জন্য এটা আমাদেরই করতে হবে। হয়তো আমরা না পারলে, তার আত্মা চিরকাল এই হাভেলির মধ্যে বন্দী হয়ে থাকবে।”
অর্ণব চুপচাপ সম্মতি জানায়। তারা ঠিক করে আজ রাতেই, হাভেলির সেই পুরনো কক্ষে ফিরে যাবে যেখানে তারা প্রথম মীরার উপস্থিতি অনুভব করেছিল।
হাভেলির সেই পুরনো কক্ষটা, যেটা অন্ধকারে ঢেকে ছিল, এক ভৌতিক আতঙ্কের আবহ সৃষ্টি করে। কক্ষটিতে ঢুকে রিয়া বুঝতে পারে, এখানে একটি অদ্ভুত ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে, যেন মৃত ফুলের গন্ধ। মোমবাতি জ্বালিয়ে তারা ঘরের মেঝেতে বসে। অন্ধকারে মোমবাতির আলোয় তাদের মুখ ভেসে ওঠে।
হঠাৎই ঘরের শীতল বাতাস ভারী হয়ে আসে, আর তারা দুজনেই অনুভব করে, যেন তাদের চারপাশে কেউ আছে। ঘরের দরজার পাশ থেকে একটা ছায়া ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মীরার অবয়বটা যেন আবারও তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে আবারও সেই চিরচেনা বিষণ্ণতা।
অর্ণব কাঁপা গলায় বলে, “মীরা, আমরা জানি তোমার কষ্টের কারণ। আমরা জানি, তোমার সঙ্গে কি ঘটেছিল। আমরা তোমার জন্য কি করতে পারি?”
মীরা ধীরে ধীরে তাদের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার মৃত্যুর কারণ খুঁজে পেয়েছ, কিন্তু আমার মুক্তি এখনও আসেনি। আমার এই শেকলের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তোমাদের আরও একটি কাজ করতে হবে।”
রিয়া জিজ্ঞেস করে, “আর কি কাজ? আমরা যা পারি করব।”
মীরার ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে ঘরের এক কোণে সরে যায়। সে হাতের ইশারায় মেঝের এক অংশের দিকে ইঙ্গিত করে। তারা দুজনেই সেই জায়গায় গিয়ে খুঁজতে শুরু করে। কিছুক্ষণ খুঁজতে খুঁজতে তারা দেখতে পায় একটি কাঠের বাক্স মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে।
বাক্সটা খুলে দেখে তার মধ্যে কিছু পুরনো নথি আর কিছু মোমবাতির গায়ে লেখা আছে। নথিগুলি পড়ে তারা জানতে পারে মীরার মৃত্যু আসলে একটা পরিকল্পিত খুন ছিল। সেই মানুষ, যাকে মীরা বিশ্বাস করেছিল, তার হাতেই তার মৃত্যু হয়েছিল।
মীরার কণ্ঠ শুনে অর্ণব আর রিয়া চমকে ওঠে। সে ধীরে ধীরে বলে, “আমার মৃত্যুর প্রতিশোধ এখনো নেওয়া হয়নি। তোমরা এই সত্যিটা প্রকাশ করো, যাতে সবাই জানতে পারে আমার সাথে কি ঘটেছে। তবে আমি মুক্তি পাব।”
রিয়া আর অর্ণব মীরার কথা মেনে নেয়। তারা প্রতিজ্ঞা করে এই সত্যি সামনে এনে, মীরার আত্মাকে মুক্তি দেবে। হাভেলির ভেতরে, চারপাশের প্রতিটি ছায়া যেন এই প্রতিজ্ঞার সাক্ষী হয়ে থাকে।
রাত ক্রমশ গভীর হয়ে আসে। মীরার ছায়ামূর্তির ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়, কিন্তু ঘরের শীতলতায় একটা আশ্চর্য প্রশান্তির অনুভূতি আসে। তারা বুঝতে পারে, মীরার আত্মা হয়তো তাদের কাছে স্বস্তি পেয়েছে, কিন্তু পুরোপুরি মুক্তি পেতে হলে তাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে।
এখনও অন্ধকারে হাভেলির পুরনো দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে, তারা দুজনেই জানে যে এই রহস্যের পরবর্তী ধাপটি আরও ভয়ঙ্কর হতে চলেছে। মীরার জন্য, তারা শেষ পর্যন্ত লড়বে।
ছোটদের রূপকথার গল্প - কুকিজের খুশি: "কুকিজের খুশি" – ছোটদের রূপকথার গল্প যেখানে ছোট্ট লীলা তার হৃদয় দিয়ে কুকিজ বানিয়ে অনাথ শিশুদের মুখে হাসি ফোটায়। ছোটদের গল্প যা ভালোবাসা ও আনন্দ ছড়িয়ে দেয় প্রতিটি পৃষ্ঠায়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
উত্তরাধিকার সম্পূর্ণ
বাংলা ভুতের ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি টিপুন।
নিভে আসা সন্ধ্যার আলোয়, পুরনো হাভেলির চারপাশে যেন এক ধোঁয়াটে আবছায়া ঢেকে রয়েছে। অর্ণব আর রিয়া হাভেলির মূল প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে শেষবারের মতো সেই পুরনো পাথরের বাড়িটিকে ভালো করে দেখল। একসময় এই বাড়িটিই ছিল এক আতঙ্কের উৎস, আজ সেখানে রয়েছে শুধু এক গভীর শান্তির অনুভূতি। মীরার আত্মা যে মুক্তি পেয়েছে, তা তারা অনুভব করতে পারছে, কিন্তু তাদের মনে কোনো শান্তি আসেনি। মনে হচ্ছে, হাভেলির সাথে তাদের এই সংযোগ চিরকাল অমলিন থাকবে।
তারা ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে, যেখানে অনেক স্মৃতি আর আতঙ্কের রাত কেটেছে। মীরার গল্প জানার পর থেকে হাভেলির প্রতিটি কোণ যেন আরও রহস্যময় হয়ে উঠেছে তাদের কাছে। রিয়া ধীরে ধীরে বলে উঠল, “অর্ণব, তুমি কি মনে করো আমরা সত্যিই মীরাকে মুক্তি দিয়েছি?”
অর্ণব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, “আমার মনে হয়, মীরার জন্য আমরা যা করার ছিল, তা করেছি। কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে কিছু বাকি আছে। হয়তো এই বাড়িটা শুধু আমাদের জন্য না, তার স্মৃতিরও একটা অংশ।”
তারা দুজনেই জানত, মীরার আত্মা তাদের কাছ থেকে কিছুই গোপন করেনি। তার অভিশাপ আর কষ্টের মুক্তি হলেও, তার শেষ ইচ্ছাটাও তাদের মনে গভীর ছাপ রেখে গেছে। সেই ইচ্ছার মর্মার্থ ছিল তার মৃত আত্মার শান্তি।
হঠাৎ, বাড়ির ভেতরের বাতাসে একটা অদ্ভুত কাঁপুনি অনুভূত হয়। তাদের চারপাশের দেয়াল থেকে একটা ধোঁয়াটে অবয়ব ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হল যেন মীরার অবয়ব আবারও ফিরে এসেছে। রিয়া কাঁপা গলায় বলে উঠল, “মীরা… তুমি কি কিছু বলতে চাও?”
মীরার অবয়বটা এবার তাদের দিকে তাকায়, কিন্তু তার চোখে আর সেই কষ্টের ছাপ নেই। বরং যেন এক শান্তির আভা। সে তাদের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল, “তোমরা আমার জন্য অনেক কিছু করেছ। তবে একটাই শেষ ইচ্ছা রয়ে গেছে আমার। তোমরা যদি তা পূরণ করতে পারো, তাহলে চিরতরে মুক্তি পাব।”
অর্ণব বিস্মিত হয়ে বলে, “কিন্তু তোমার আর কি প্রয়োজন মীরা? আমরা তো সব কিছুই করেছি।”
মীরার অবয়ব আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে যেতে যেতে বলে, “আমার স্মৃতি এই হাভেলির মধ্যে আবদ্ধ রয়েছে। এটা তোমাদের কাছে রেখে যাচ্ছি, যেন আমার এই কাহিনি তোমাদের হৃদয়ে চিরকাল রয়ে যায়। আমার স্মৃতি এই হাভেলির সাথে মিশে আছে, এই সম্পর্কের সেতু তোমরাই রক্ষা করবে।”
তারপর, মীরার অবয়বটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়, যেন বাতাসের সঙ্গে বিলীন হয়ে গেল। ঘরের ভিতর এক নিস্তব্ধতা নেমে আসে, যেন সময়ও থেমে গেছে।
হাভেলির বাইরে দাঁড়িয়ে তারা দুজনেই অনুভব করে, তাদের জীবনে একটা নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। সেই পুরনো ভয় আর আতঙ্ক এখন আর নেই, বরং মীরার স্মৃতির সাথে এক অদ্ভুত সংযোগ অনুভব করে তারা। হাভেলি যেন এক স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, যা তাদের হৃদয়ে মীরার গল্পকে চিরকালের জন্য গেঁথে রাখে।
তারা ধীরে ধীরে হাভেলি ছেড়ে নিজেদের নতুন জীবনের পথে পা বাড়ায়, তবে জানে এই স্মৃতি আর এই অভিজ্ঞতা চিরকাল তাদের সাথে থাকবে। হাভেলি থেকে তারা দূরে চলে যায়, কিন্তু সেই অতীতের অভিশাপ আর স্মৃতির কাহিনি তাদের জীবনে একটা নতুন অর্থ নিয়ে আসে।
মীরার আত্মার মুক্তি হয়েছে, আর তাদের জীবনে নেমে এসেছে নতুন এক শান্তির অধ্যায়।