কলিকাতা, জমজমাট শহর; যা তার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও জীবন্ত সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত, সেখানেই লুকিয়ে আছে একটি গাঢ় রহস্য, অপেক্ষা করছে তার রহস্য উন্মোচনের। গল্পটি শুরু হয় অনন্যা সেনের হাত ধরে, যে একজন ধীরে ধীরে সত্য উদ্ঘাটনে পারদর্শী তদন্তকারী সাংবাদিক, কলকাতার একটি খ্যাতনামা স্থানীয় সংবাদপত্রের জন্য কাজ করে। একদিন অনন্যা একটি রহস্যময় খবর পান, শহরের পুরনো এলাকা থেকে কয়েকজন লোকের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে। নিখোঁজ হওয়া লোকজনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে হয়; তাঁদের মধ্যে রয়েছেন একজন ধনী ব্যবসায়ী, একজন রাস্তার ফেরিওয়ালা, একজন কলেজ ছাত্র এবং একজন সমাজসেবক। কৌতূহল জাগে অনন্যার মনে, তিনি আরো গভীরে খোঁজ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, এবং সে নিজের অজান্তেই একটি ছায়াময় বিপদের এগিয়ে যায়।
তদন্ত শুরু করার পর অনন্যা একটি নিদর্শন লক্ষ্য করে: প্রতিটি নিখোঁজ ব্যক্তি শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল কলকাতার ঐতিহাসিক স্থানগুলোর একটির কাছে। তার জিজ্ঞাসাবাদ তাকে উত্তর কলকাতার একটি পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির দিকে নিয়ে যায়, যেটি একসময় ব্রিটিশ রাজের সময়ে একজন একগুঁয়ে জমিদারের মালিকানাধীন ছিল। কিংবদন্তি আছে, জমিদার কর্তৃক নির্যাতিতদের আত্মারা এই বাড়িতে ভুত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। অনন্যার তদন্তে উঠে আসে যে এই বাড়িটি এখন “অতীতের রক্ষক” নামে পরিচিত একটি গোপন সংগঠনের মালিকানাধীন, যারা শহরের ভুলতে যাওয়া ঐতিহ্যকে সংরক্ষণের কাজে নিজেদের নিয়োজিত বলে দাবি করে। কিন্তু, এই সংগঠনের একটি গাঢ় দিক রয়েছে। অনন্যা জানতে পারেন যে সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের ছদ্মবেশে তারা অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত, যেমন মানব পাচার এবং জোর করে টাকা আদায়।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - ছবির গল্প, লেখার সুর : খুঁজছেন এক মন ছোঁয়া বাংলা গল্প? আবির, এক ফটোগ্রাফার, রাধিকার হাসিতে মুগ্ধ হয়, কিন্তু তার প্রেম জটিল। নেপালের পাহাড়ে কি তাদের প্রেম সফল হবে? জানতে হলে এই লিংকটি ক্লিক করে সম্পুর্ন্য রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্পটি পড়ুন।
এক রাতে, বাড়িটি নজরদারি করার সময়, অনন্যা একটি গোপন বৈঠকের সাক্ষী হন। সে দেখতে পায় সংগঠনের নেতা, সম্মানিত ইতিহাসবিদ ডঃ অরিত্র মুখোপাধ্যায়, তাদের কার্যকলাপ আরো বিস্তৃত করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন। অনন্যা সেই সব কার্য্যকলাপের প্রমাণ রেকর্ড করার চেষ্টা করে, কিন্তু ধরা পরে যায়। জমিদার বাড়ির গোপন কারাগারে রাখা হয় তাকে। সেখানে অন্য বন্দীদের সঙ্গে দেখা হয় তার। অনন্যা জানতে পারেন যে তাদের এই সংগঠনের গোপনীয়তা ফাঁস করে দেওয়া অথবা তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে নিশানা করা হয়েছিল সেই সব বন্ধিরা।
কয়েকজন সহবন্দীকে দেখে অনন্যার সাহস আরো বেড়ে যায়। তাদের মধ্যে ছিলেন একজন প্রবীণ পুরাণতত্ত্ববিদ, যিনি এই বাড়ির সংস্কারের জন্য সরকারি অনুমতির বিরোধিতা করেছিলেন, এবং একজন যুব সাংবাদিক, যিনি এই এলাকার নিখোঁজ হওয়া লোকদের নিয়ে প্রতিবেদন করার চেষ্টা করেছিলেন। অন্যদের গল্প শুনে অনন্যা বুঝতে পারে, সে একা নয়, আর তার সঙ্গে থাকা লোকেরাও সত্য উদঘাটনে একান্ত আগ্রহী।
রাতে, বন্দীশালাটি নিস্তব্ধ হয়ে গেলে, অনন্যা একটা পরিকল্পনা ঠিক করে। সে লক্ষ্য করে যে, কারাগারের দেওয়ালে ইটের ফাঁকগুলি রয়েছে, যা দিয়ে হয়তো পাশের কক্ষে কথা শোনা যায়। কয়েকবার চেষ্টা করার পর, অনন্যা বুঝতে পারে যে পাশের কক্ষটি হলো ওই গোপন বৈঠকের জায়গা। মন দিয়ে শোনার পর, সে জানতে পারে যে, ডঃ মুখোপাধ্যায় পরের রাতেই কোনো মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এই তথ্য ছিল পাল্টা হামলার মতো।
বাংলা ছোট গল্প - ফাঁকা ঘরের গল্প : ছেলের ফাঁকা ঘরটা যেন জাদুঘর, অতীতের সাক্ষী। এই মা কিভাবে মেনে নেবেন ছেলের বিচ্ছেদ? আর ছেলের স্বপ্নের পথে তিনি কীভাবে হবেন তার সহায়? জানতে হলে পড়ুন বাংলা ছোট গল্প, "ফাঁকা ঘরের গল্প"।
পরের দিন, অন্য বন্দীদের সঙ্গে আলোচনা করে অনন্যা তাদেরকে তার পালানোর পরিকল্পনা জানায়। পরিকল্পনা অনুসারে, দুর্বল অভিনয় করে অন্য বন্দীরা কয়েকজন রক্ষাকর্তার মনোযোগ আকর্ষণ করবে। এই সুযোগে অনন্যা ইটের ফাঁকগুলি দিয়ে পাশের কক্ষ থেকে একটি লোহার রড চুরি করবে। রডটি দিয়ে সে পরে তার হাতকড়া খুলবে এবং তাঁর সঙ্গীদেরও মুক্ত হতে সাহায্য করবে।
পরিকল্পনাটি কার্যকর হয়। রক্ষাকর্তারা যখন অন্য বন্দীদের দিকে মনোযোগ দিচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময় অনন্যা পাশের কক্ষ থেকে রডটি টেনে আনে। কয়েক মিনিটের চেষ্টার পর, সে তার হাতকড়া খুলে ফেলে এবং অন্যদেরও তা খুলে দেয়। এবার পালানোর পালা। কিন্তু ঠিক সেই সময়, তারা একটি চমকপ্রদ বিষয় লক্ষ্য করে।
একটি গোপন দরজা, যা আগে পর্যন্ত দেওয়ালের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল, এখন খোলা রয়েছে। দ্বিধা না করে, অনন্যা সবার আগে দিয়ে সেই দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ে। অন্ধকার, আঁধারের পথ ধরে তারা এগিয়ে যেতে থাকে। কখনও কখনও, পুরনো পাইপের ফোঁপানো শব্দ বা ইঁদুরের দৌড়ঝাপের ক্ষীপ্র শব্দ তাদের চমকে দেয়। কিন্তু, পালানোর আকুলে, তারা থামে না।
একাধিক ঘুরের পর, অবশেষে তারা একটা মৃদু আলো দেখতে পায়। আলোর দিকে এগিয়ে যেতেই, তারা নিজেদেরকে একটা জরাজীর্ণ ডক এর সামনে উপস্থিত হয়।
ডকের কালো জলে নৌকা ভাসছিল। নিস্তব্ধতা ভাঙলো ইঞ্জিনের শব্দে। কেউ একজন নৌকা চালু করছিল। বুঝতে পারা গেল, পালানোর একমাত্র সুযোগ এটিই। কিন্তু, ঠিক কি করবেন, তা ঠিক করার আগেই, একটি চেঁচামেচি তাদের কানে আসে।
পাশের ঘুর থেকে কয়েকজন রক্ষাকর্তা বেরিয়ে এলো। তাদের হাতে মশাল জ্বলছিল, অনন্যা ও তার সঙ্গীদের দেখতে পেয়ে তারা চিৎকার করে উঠল। ফাঁস আর নেই, বন্দীদের ধরার জন্য রক্ষাকর্তারা দৌড়ে এলো।
অনন্যা জানত তাদের পালানোর সময় কম। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে, সে তার সঙ্গীদেরকে নির্দেশ দিল নৌকায় উঠে পড়তে। নিজেও দ্বিধা না করে উঠে পড়ল কাঠের তৈরি সেতু পার হয়ে নৌকায়।
কেউ একজন, সম্ভবত প্রবীণ পুরাতত্ত্ববিদ, সেতু নষ্ট করার দায়িত্ব নিল। অন্যরা ইতিমধ্যেই নৌকায় ঢুকে পড়েছিল। অনন্যা চেয়ে দেখল, রক্ষাকর্তারা সেতুর কাছে পৌঁছে গেছে। একটা বিকট শব্দ হলো, সেতুটি ভেঙে পড়ল। রক্ষাকর্তারা ক্ষিপ্ত স্বরে চিৎকার করলো, কিন্তু ততক্ষণে অনন্যা ও তার সঙ্গীরা নিরাপদ দূরত্বে চলে গিয়েছিল।
আঁধার নদীর মাঝখানে, ছোট্ট নৌকায় ভরসা করে পালানোর অভিজ্ঞতা অস্বস্তিকর ছিল। কিন্তু মুক্তির আশ্বাসে তাদের মনের উত্তেজনা ঢাকিয়ে গেল। অন্যদের কাছে জানতে পারল, এই নৌকাটি সম্ভবত কয়লা চোরাচালকদের ব্যবহার করা একটি গোপন পথ।
কয়েক ঘণ্টা অবিরাম নৌকা চালানোর পর, তারা দূরে শহরের আলো দেখতে পেল। আশা জাগল তাদের মনে। সকাল হওয়ার আগেই তারা একটা নির্জন জেটিতে নৌকা ভিড়াল।
কিন্তু মুক্তি এখনো অনেক দূরে। অন্যদের নিরাপদে কোথাও রেখে আসার পর, অনন্যা জানতেন তাকে দ্রুত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এই রহস্য উদঘাটন করতে হবে পুরোপুরি। কিন্তু কিভাবে? কোথায় যাবে সে?
ঠিক সেই সময়, অনন্যার মনে একটা চমকপ্রদ আইডিয়া এলো। সে তার পকেট থেকে একটি মোবাইল ফোন বের করল, যা বন্দী থাকাকালীন এক অসাবধানতার মুহূর্তে একজন রক্ষাকর্তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। ফোনটিতে চার্জ ছিল! এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে?
চোখ জ্বলজ্বলিয়ে অনন্যা ফোনটি চালু করল। কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। ফোনটিতে একটা কম স্ট্রিপ ছিল, যা দিয়ে জরুরী পরিস্থিতিতে কাজ চলানো যায়। দ্রুত নিজের অফিসের নম্বরে ফোন করল সে। কয়েকটি রিং এর পরই অপর দিক থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো লাইনে। উত্তেজনা চাপিয়ে নিচু গলায় নিজের পরিচয় দিল অনন্যা এবং তাকে সরাসরি তার সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলল।
অপর দিক থেকে এলো অনন্যার পরিচিত গম্ভীর কিন্তু আশ্বাসদায়ক কণ্ঠস্বর। দ্রুত নিজের অবস্থা এবং অবস্থানের বর্ণনা করল অনন্যা। সাথে সাথে ডঃ মুখোপাধ্যায় এবং “অতীতের রক্ষক”দের অপকর্মের কথাও জানাল সে। তার কথা শুনে সম্পাদক স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। কিন্তু অবাক হওয়ার সময় ছিল না।
নিজের অবস্থানের বিবরণ দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন সম্পাদক। অন্যদিকে, তিনি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই অনন্যার অবস্থানের কাছেই একটি পুলিশের গাড়ি এসে পৌঁছলো।
পুলিশকে সব কিছু বিস্তারিত জানাল অনন্যা। তার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে পুলিশ দল “অতীতের রক্ষক”দের জমিদার বাড়িতে অভিযান চালাল। অনন্যা তাদের সঙ্গে ছিল, পথ দেখানোর জন্য। বাড়িটি ঘিরে ফেলা হলো, পুলিশের সাইরেনের শব্দ ভেদ করে দিল নিস্তব্ধ রাত।
ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য বাংলা ছোট গল্প - নিশীথের নিশান : ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্প: "নিশীথের নিশান" - ১৮৭৫ সালের যশোরের বিদ্রোহের এক অমর কাহিনী। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বাড়ির ভিতরে ঢুকে পুলিশ কাউকে পেল না। ডঃ মুখোপাধ্যায় সহ তার সহযোগীরা পালিয়ে গিয়েছিল, সম্ভবত অনন্যা পালানোর সময়ই তারা পালিয়ে গেছে। বাড়িটি তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ প্রচুর অস্ত্র, মূল্যবান জিনিসপত্র এবং অপরাধের নথিপত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এই প্রমাণের ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত গতিবিধি নেয়।
অন্যদিকে, অনন্যা নিজের অফিসে ফিরে আসেন। তার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে, সম্পাদক খবরের কাগজের প্রথম পাতায় “অতীতের রক্ষক”দের কুৎকর্মের এক্সপোজ করে একটি বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশ কর।
রাতারাতি কলকাতা শহর সম্ভিত হয়ে যায়। এই সম্মানিত সংগঠনের আসল রূপ উঠে আসে জনসম্মুখে। মানুষ জানতে পারে, যে সংগঠনটি ঐতিহ্যকে রক্ষা করার দোহাই দিচ্ছিল, তারা শুধু অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত ছিল।
এই ঘটনার পর অনন্যা সারা দেশে খ্যাত হয়ে ওঠেন। তার সাহসিকতার কথা, সত্য উদঘাটনের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অনন্যার মনে একটা অশান্তি থেকেই যায়। ডঃ মুখোপাধ্যায় এবং তার সহযোগীরা এখনো পলাতক। কলকাতার অন্ধকার গলিগুলিতে তারা লুকিয়ে রয়েছে, পুলিশের গ্রাস থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।
অনন্যা জানতেন, তার লড়াই শেষ হয়নি। তিনি পুলিশের সাহায্যে ডঃ মুখোপাধ্যায়কে ধরার জন্য কাজ করতে থাকলেন। কয়েক মাস পর, পুলিশের অদম্য প্রচেষ্টায় ডঃ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। এই কলকাতার অন্ধকার গলিতে লুকিয়ে থাকা একটা অধ্যায় শেষ হলো।
কিন্তু, এই শহরে, ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে, রহস্যের গল্প কখনো শেষ হয় না। অন্য কোনো অন্ধকার গলির কোনো বাঁকে লুকিয়ে থাকছে কোনো অজানা রহস্য, অনুসন্ধানের জন্য সঙ্গে থাকছে অনন্যা সেন।