বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
বীরপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এর প্রকৃতির স্নেহময় কোলে ঢাকা একটি গ্রাম, ঠিক যেন বনফুলের মতো শালবনে খিলখিলাচ্ছে। সেই গ্রামেরই মেয়ে রিয়া, গলায় তার সুরের জাদুকরী। গান তার নিঃশ্বাস, সুর তার সঙ্গী। প্রতি বিশ্বকর্মা পূজোয় বীরপুরের উৎসবের মূল আকর্ষণ রিয়া আর তার গান। এবারো সেই একই আলো ঝলমলে রাতে, রিয়ার গানে ম-ম করে উঠলো গ্রাম।
আকাশে তারার ঝাঁকি, চারপাশে ঢাকের তালে গম-গম করে মাঠ, আর মাঝখানে রিয়া, সাদা চুড়িদার পরে, হাতে একটা একতারা। গান গাইছে সে; গানের ভাষায় আছে, প্রেম, বিরহের, আর আশার কথা।
গ্রামের লোকেরা মুগ্ধ হয়ে শুনছে। প্রত্যেকের চোখে স্বপ্নের মতো একটা উজ্জ্বল চাহনি। ঠিক সেই সময়, দূরে একটা বাঁশির সুর ভেসে এলো। মিষ্টি, করুণ, মনের গহীনে ডুব দেওয়ার মতো। সুরের ওই অদ্ভুত মোহে যেন সময় থেমে গেলো। চারপাশের সব শব্দ মুছে গিয়ে সুরের পেছনে হারিয়ে গেলো। সবাই চমকে তাকালো চারপাশে। কে এই অচেন সুরের মালিক? কেউ কিছু বলতে পারল না, শুধু একে অপরের মুখের দিকে চেয়ে রইল।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - স্বর্গের চুম্বন: সূর্য, একজন সাধারণ মানুষ, জাদুঘরে ঘুরতে ঘুরতে এক অদ্ভুত মূর্তির স্পর্শে স্বর্গে চলে যান। সেখানে রিয়া নামের এক রহস্যময়ী নারীর সাথে দেখা হয় তার। রিয়া সূর্যকে দেখায় স্বর্গের অপার সৌন্দর্য, চিরকালের প্রেমের স্বপ্ন। কিন্তু কিছুদিন পর সূর্য বুঝতে পারে, স্বর্গের একঘেয়ে জীবন তার জন্য নয়। সে ফিরে চায় তার পৃথিবীতে, তার পরিবার, বন্ধুদের কাছে। রিয়া কি সূর্যকে ফিরে যেতে দেবে? জানতে হলে পড়ুন এই রোমান্টিক গল্প “স্বর্গের চুম্বন”। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির পরবর্তী অংশের অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রিয়াও চমকে উঠলো। কখনো এই সুর শোনেনি সে। যেন কেউ তার অন্তরের গভীরে অদৃশ্য হাতে স্পর্শ করেছে। বাঁশির সুর তার গানের সাথে মিশে গিয়ে যেন এক অপূর্ব সৃষ্টি করলো। মনে হলো, তার গান আরও গভীর হলো, আরও ছুঁয়ে গেলো মন। এ যেন এক অজানা শক্তি, যা তাকে অপরিচিত এক জগতে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সুরের তালে তার গলা থেকে আরও মধুর, আরও সুরেলা একটি আওয়াজ বেরিয়ে আসলো।
গান শেষ হলে, কিন্তু সেই বাঁশির সুর মনের কোনে একটা সুতোয় টান দিয়ে গেলো রিয়াকে। তার হৃদয় কাঁপছে, সুরের মায়া তাকে বিছিন্ন করে দিয়েছে। সে নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো, এই সুরের রহস্য কী? কে এই বাঁশিওয়ালা? সবার চোখে এখন এক ধরনের শিহরণ। ঐ বাঁশির সুর যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যা হয়তো তাদের গ্রামকে বদলে দেবে, রিয়ার জীবনকে এনে দেবে নতুন এক দিগন্ত।
পরের দিন, নদীর ধারে একটা বটগাছের তলায় বসে ছিল রিয়া। তার মনে অজানা উদ্বেগ, এক অন্যরকম অনুভূতি। হঠাৎ, সেই বাঁশির সুর আবার শোনা গেল। সুরটা যেন তার মনের কথা বলে যাচ্ছে, তার আত্মার গভীরে কিছু স্পর্শ করছে। রিয়া চোখ বুজে শুনতে লাগলো, সুরের মাধুরী তাকে অন্য জগতে নিয়ে যাচ্ছে। চোখ খুলতেই দেখলো, গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে এক ছেলে। তার চোখে এক অদ্ভুত চমক, মুখে গভীর বিষাদের ছায়া। সেই ছেলেই বাঁশি বাজাচ্ছে।
ছেলেটা ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো। তার নাম আয়ান। বীরপুরেরই ছেলে, কিন্তু একটু আলাদা। তার চেহারায় কিছু রহস্যময়তা, মনে এক ধরনের নিরবতা। কারো সাথে মিশে না, সব সময় একা থাকে। কয়েকটা বছর আগে এক দুর্ঘটনায় তার পরিবার হারিয়েছে সে। সেই থেকে তার মধ্যে এক চাপা দুঃখের মেঘ। তবে তার বাঁশির সুরে যেন সেই বিষাদের এক খণ্ড শান্তি, এক অদ্ভুত শোকের সৌন্দর্য। রিয়া তার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো, এই সুরে কিছু গল্প লুকিয়ে আছে, যা একদিন হয়তো তাকে জানাতে হবে।
রিয়া জানতে পারলো, আয়ানের বাঁশি বাজানোর অসাধারণ ক্ষমতা আছে। কিন্তু সে কাউকে বাজিয়ে শোনাবে না। এতদিন নিজের মনের মধ্যেই বন্দী ছিল তার সুর। বাঁশি বাজানোর সময় তার চোখে এক ধরনের রহস্যময় দৃষ্টি, যেন সুরের মধ্যে কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু গতকাল রাতে, রিয়ার গান শুনে, সে যেন নিজের অজান্তেই সুর ছেড়ে ফেলেছিল। সুরের মাধুরীতে রিয়া অনুভব করেছিল, আয়ান তার গভীর ব্যথার কাহিনী নিজে থেকে শেয়ার করতে চায়।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির পরবর্তী অংশের অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রিয়া আর আয়ানের দেখা হতে শুরু হলো। নদীর ধারে, বটগাছের তলায়, এক শান্ত পরিবেশে, সেখানে তাদের বিশ্ব শুধু তাদের নিজেদের। রিয়া গান গাইতো, তার মিষ্টি, মন ছুঁয়ে যাওয়া কণ্ঠের সুরে নদীর জল যেন ঢেউ খেলাতো। আর আয়ান বাঁশি বাজাতো, তার সুরে এক ধরনের মায়া, এক গভীর বিষাদের ছোঁয়া ছিল। তাদের দুজনের সুর মিশে যাচ্ছিল, যেন দুইটা নদী মিশে এক সাগরে মিলিয়ে যাওয়া। সুরের সেই অভিসার কেমন যেন অন্য এক জগতের অনুভূতি এনে দিত।
একদিন আয়ান রিয়াকে বললো তার অতীতের কথা। তার কণ্ঠে ছিল দুঃখ আর কষ্টের চিহ্ন। কীভাবে দুর্ঘটনায় তার বাবা-মা আর ছোট বোনকে হারিয়েছে। সেই শোকের অন্ধকারে সে এক ধরনের মোনোটনি আর একাকিত্বে ডুবে গিয়েছিল। তার বাঁশির সুর সেই কষ্টের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যেন মনের গভীরে আটকে রাখা এক দীর্ঘ চিৎকার। কিন্তু রিয়ার গান, আর তার সাথে সুর মিশিয়ে বাঁশি বাজানো, তাকে যেন একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিল। রিয়া তাকে দেখিয়ে দিলো যে, জীবনের প্রতিটা দুঃখের মধ্যে আশার আলোও থাকে। তারা দুজনেই একে অপরকে অনুপ্রাণিত করতে শুরু করলো। আয়ান এখন বুঝতে পারলো, সুর আর গান একা নয়; তারা একে অপরকে আরও সুন্দর করে তোলে, একে অপরকে সান্ত্বনা দেয়।
রিয়াও আয়ানকে গল্প করলো তার স্বপ্নের কথা। সে বললো, ‘‘আমার স্বপ্ন, একদিন আমি এই ছোট্ট গ্রাম ছেড়ে বড় শহরে গিয়ে গানের দুনিয়ায় নিজের জায়গা খুঁজবো। সেখানে আমি আমার গান দিয়ে মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে চাই।’’ রিয়ার চোখে জ্বলজ্বলে এক আশা, এক দৃঢ় মনোবল। কিন্তু সে জানে, এই স্বপ্নের পথটা সহজ নয়। পরিবারের বাঁধ, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর গ্রামের রীতি-নীতি তাকে আটকে রাখে। তার বাবা-মা চান, রিয়া যেন তাদের মতোই সহজ জীবন কাটায়, গ্রামেই থাকে। আর গ্রামের প্রথা, যেখানে মেয়েদের জন্য স্বপ্নের খোঁজটা অনেকটাই নিষিদ্ধ, তা তাকে আরও বেশি বাধার সম্মুখীন করে। তবে আয়ান তার কথা শুনে তার মুখে এক হাসি ফুটিয়ে দিল। ‘‘স্বপ্ন দেখো, রিয়া। একদিন তুমি তোমার গান দিয়ে এই গ্রামকেও নতুন করে আলোকিত করবে,’’ আয়ান বললো। রিয়ার মনে যেন নতুন করে আশা জেগে উঠলো।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - আমি যেখানে: এই বাংলা গল্পটি শ্রেয়ার জীবনের যাত্রা অনুসরণ করে, যেখানে সে ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, এবং একাকীত্বের অভিজ্ঞতা লাভ করে। অতীতের সাথে মীমাংসা করে, শ্রেয়া বুঝতে পারে যে সে ঠিক জায়গায় আছে, তার স্বামী দেব এবং মেয়ে আনন্দিতার পাশে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির পরবর্তী অংশের অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
একদিন, পূর্ণিমার রাতে, নদীর ধারে বসে ছিল তারা। আকাশজুড়ে তারার ঝাঁকি, আর নদীর বুকে চাঁদের আলোর রেখা। বাতাসে এক অদ্ভুত শান্তি, যেন পৃথিবী তার সমস্ত ক্লান্তি ভুলে গিয়ে একটু সময়ের জন্য থেমে গেছে। রিয়া একটা মন খারাপের গান গাইতে শুরু করলো। তার কণ্ঠে ছিল বিরহের সুর, মনের অস্থিরতা। গানটা যেন তার ভিতরের দুঃখ, তার অব্যক্ত অনুভূতির কথাগুলো বলে দিচ্ছিল। আয়ান চুপ করে শুনছিল, তার চোখে এক গভীর দৃষ্টি ছিল, যেন সুরের সঙ্গে নিজের কষ্টের সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছিল।
হঠাৎ, আয়ান তার বাঁশি তুলে নিয়ে বাজাতে শুরু করলো। বাঁশির সেই সুর ছিল যেন এক অভিশপ্ত মনের মুক্তির আহ্বান। সেই সুরে ছিল বিষাদ, ছিল আশা, আর ছিল এক অবর্ণনীয় আবেগ যা মনকে স্পর্শ করে। রিয়ার গান আর আয়ানের বাঁশির সুর একে অপরকে ছুঁয়ে, মিশে তৈরি করলো এক অমনোরতি সুর। সেই সুর যেন তাদের দুজনের আত্মাকে একে অপরের কাছাকাছি এনে দিল।
গান শেষ হলো। চারপাশে একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নেমে এলো, যেন পৃথিবী তাদের এই মুহূর্তের সৌন্দর্য দেখতে চাইছে। নদীর জলেও এক শান্তির প্রতিচ্ছবি, চাঁদের আলো তাদের মুখের ওপর পড়ে তাদের অনুভূতির গভীরতা আরও বাড়িয়ে দিলো। তারপর, সহসা আয়ান এগিয়ে এসে রিয়ার হাত ধরলো। তার হাতের উষ্ণতা রিয়ার শরীরে এক স্নিগ্ধ অনুভূতি এনে দিলো। চাঁদের আলোয় ঝলমলে তার চোখে রিয়া দেখলো গভীর এক স্নেহ, এক মমতা, যা কখনো সে অনুভব করেনি। আর রিয়াও, সেই চোখে নিজের মনের আকাশ দেখতে পেল, যেখানে ভরা পূর্ণিমার আলো, খুশির চিহ্ন।
এই নিঃশব্দ কথায়, চাঁদের সাক্ষীতে, তাদের প্রেমের সূচনা হলো। প্রথম প্রেমের সঙ্কোচ, দৃষ্টির বিনিময়, হাত ধরা—সবকিছুই যেন নতুন করে উপলব্ধি করছিল তারা। রিয়ার হৃদয় ধড়ফড় করতে লাগলো, যেন তার সমস্ত রূপ, তার সমস্ত গোপন ইচ্ছা আয়ানের কাছে উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। আয়ান, তার এক অচেনা পৃথিবীর অন্ধকারে, রিয়ার আলো খুঁজে পেয়েছে। নদীর পাশের সেই বটগাছের তলে, দুই প্রহরের মধ্যে, তাদের প্রথম প্রেমের শুরুটা যেন একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির পরবর্তী অংশের অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
পরের দিন, গ্রামের সম্মানিত মানুষ, বাবলুদা, রিয়ার বাড়িতে এলেন। রিয়ার বিয়ের কথা নিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু রিয়া মুখ ফিরিয়ে নিল। সে জানতো, গ্রামের ছেলে, মেয়েমানুষের শিল্প চর্চাকে মেনে নেবে না, এমন ছেলের সাথে তার জীবন গড়া সম্ভব নয়। তার স্বপ্নের মুক্তির পথে একটা বাধা যেন দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু বাবলুদা হেসে বললেন, “মেয়ে, তুই ঠিক জানিস না। আজকে যে ছেলের কথা বলছি, সে অজিতের ছেলে, সোমনাথ। সে ঠিক অন্য ছেলেদের মতো না। সে শহরে পড়াশোনা করেছে, আর আর্টের কাজ করে।”
রিয়া অবাক হয়ে গেল। সে জানতোই না, গ্রামে এমন ছেলেও আছে। বাবলুদা আরো বললেন, “তুমি ছেলেটিকে দেখ, তারপর সিদ্ধান্ত নাও।”
রিয়ার মনে প্রশ্ন জাগল। কে এই সোমনাথ? তার কি বাঁশিওয়ালা আয়ানের সাথে কোন সম্পর্ক আছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সে আয়ানের কাছে গেল।
রিয়ার পা চলল বটগাছের দিকে। আজ সে আয়ানকে সব খুলে বলতে চায়। তার মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ঝড়ের মতো উথাল পাথাল করছে। একদিকে আছে তার গানের স্বপ্ন, শহরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে আছে আয়ানের সুর, সেই সুর যা তার মনের গহীনে ঢুকে মনকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে তার মনের দুঃখ, তার অস্থিরতা, সব কিছু যেন একসাথে চাপিয়ে ধরেছে।
আয়ানকে দেখতে পেল সে বটগাছের তলায় বসে। রিয়া আয়ানকে সোমনাথের কথাটা বলতে গিয়ে আয়ানের চোখ দেখে থেমে গেল, আজ তার চোখে সেই আগুন নেই। বরং চোখ দুটো খালি খালি, মুখ থমথমে। রিয়া জানতে চাইল, “কী হয়েছে আয়ান?”
আয়ান মাটির দিকে তাকিয়ে বললো, “রিয়া, তুমি হয়তো জানো না, কিন্তু সোমনাথ আর আমি একই মানুষ।”
রিয়ার হৃদয় টন টন করে উঠলো। আয়ান, যাকে সে জানতো, সেই আয়ান, যে বাঁশি বাজিয়ে তার মনকে স্পর্শ করত, সেই আয়ানই কি সোমনাথ? সে কি পুরোপুরি এক অন্য জীবন বেছে নিয়েছে? রিয়া হাঁপিয়ে উঠল, “তুমি কেন এই পরিবর্তন করেছো, আয়ান?”
আয়ান তার চোখে গভীর বিষাদের ছায়া নিয়ে বলল, “রিয়া, শহরের জীবন আর এই গ্রাম, এই গ্রামের মানুষের মতামত আমাকে বদলে দিয়েছে। আমি জানি, শিল্পের প্রতি ভালোবাসা, সৃজনশীলতা, এইসব এখানে প্রশংসিত হয় না। আমি জানতাম, যদি সোমনাথ হয়ে থাকি, তাহলে হয়তো তোমার স্বপ্নের জায়গায় যেতে পারব। কিন্তু আজ বুঝতে পারছি, আমি শুধু আমার নিজের সত্ত্বাকে ফেলে দিয়েছি।”
রিয়া অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। সে বুঝতে পারল, আয়ান তার নিজের জন্য যন্ত্রণা ভোগ করেছে। সে, যে নিজেকে গ্রামবাসীর চোখে একটা সাধারণ ছেলে হিসেবে রাখতে চেয়েছিল, সেই আয়ান আজ তার সুরের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেতে চেয়েছে।
রিয়া ধীরে ধীরে বলল, “কিন্তু কেন? তোমার সুরে যে প্রেম, যে আবেগ, তা কোনো নামের উপর নির্ভর করে না। তুমি যেমন আছো, তাতেই এক ধরনের সার্থকতা আছে।”
আয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “রিয়া, এই পৃথিবীতে কখনো কখনো এমন কিছু ঘটে যা আমাদের পুরো জীবনটাই বদলে দেয়। আমি জানি, তুমি অনেক কিছু বুঝতে পারো না। কিন্তু আমি জানি, তুমি যখন আমার সুর শোনো, তখন তুমি আমাকে বুঝতে পারো। এই বাঁশি, এই সুর, আমার পুরোনো সত্ত্বাকে ফিরিয়ে এনেছে।”
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - ঈ-মেইলের অসীম প্রান্তরে: এই রোমান্টিক বাংলা গল্পটি দুইজন অধ্যাপক, সোহিনী এবং আদিত্যের প্রেমের গল্প, যাদের পরিচয় ইমেলের মাধ্যমে। সাহিত্য এবং গবেষণা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তাদের বন্ধুত্ব গভীর হয় এবং বটানিক্যাল গার্ডেনের সবুজের মতো তাদের প্রেম ফুটে ওঠে। এই গল্পটি ইমেলের মাধ্যমে প্রেমের সম্ভাবনা এবং বাস্তব জীবনে বন্ধুত্ব ও প্রেমের সম্পর্কের সৌন্দর্য তুলে ধরে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির পরবর্তী অংশের অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
রিয়া ঘরটার মধ্যে মৃদু আলো দেখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে ছিল। তার চোখে কষ্ট আর অনুশোচনার ছাপ। সে জানতো, আয়ান এতটা ভেঙে গিয়েছিল যে, তার পুরোনো নাম, সোমনাথ, এমনকি নিজের অস্তিত্বের স্মৃতি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু তার মধ্যে একটা সাহস ছিল, একটা একান্ত অনুভূতি যে, তার সুরে আবার এক নতুন জীবন ফিরে আসবে।
“তুমি, তুমি তো আবার সুরের সাথে ফিরে এলে,” রিয়া বললো, তার কণ্ঠে মিশে গিয়েছিল কান্নার স্বর। “তাহলে, এখন কী হবে?”
আয়ান মৃদু হাসলো, সেই হাসিতে এক অদ্ভুত স্বাদ ছিল, যেন বহু বছর পর আবার তার হৃদয়ে নতুন আলো ফুটেছে। “রিয়া, আমি জানি, আমাদের পথ সহজ হবে না। কিন্তু আমি চাই, আমরা একসাথে সেই পথ পাড়ি দেব। তুমি তোমার গানের জগতে চলে যাও, আমি তোমার সঙ্গে থাকব। আমি আমার আর্টের মাধ্যমে তোমার গানকে নতুনভাবে সাজাতে চাই।”
রিয়া আয়ানের চোখে তাকিয়ে দেখলো, সেখানে আগুনের দীপ্তি, নতুন আশা এবং ভালোবাসার প্রমাণ। সে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না। তার চোখের কোণ থেকে অশ্রু পড়ে গিয়েছিল। “তুমি সত্যি বলছো, আয়ান?”
“হ্যাঁ, রিয়া। আমি তোমার পাশে, তোমার সুরের পাশে থাকব।”
এই কথাগুলো রিয়ার হৃদয়ে গেঁথে গেল। সে জানলো, এটাই তার সঠিক সিদ্ধান্ত। এই মুহূর্তে, তার সমস্ত দ্বন্দ্ব, সমস্ত ভয় দূর হয়ে গিয়েছিল। সে আয়ানের হাত ধরলো, আর যেন পুরো পৃথিবীটাই বদলে গিয়েছিল।
দিন কয়েক পরে, গ্রামবাসীর মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হল। পঞ্চায়েত বাড়িতে সবাই জমায়েত হল, কারণ রিয়া আর আয়ান তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে এসেছিল। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, গ্রামবাসী সকলেই সেখানে উপস্থিত। বাবলুদা, যিনি গ্রামের প্রধান ব্যক্তি, একটি সোনালী গামছা মাথায় বেঁধে, গম্ভীর মুখে বসেছিলেন।
রিয়া সবার সামনে দাঁড়িয়ে বললো, “সবাইকে আমি আমার মন থেকে শুভেচ্ছা জানাই। আমি জানি, আমার সিদ্ধান্ত সবাইকে অবাক করেছে। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি আর আয়ান, আমাদের গান আর শিল্প নিয়ে শহরে যাব।”
শব্দের মধ্যে একটা নীরবতা নেমে এল। কেউ হতবাক, কেউ বিস্ময়ে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকল। তারপর, বাবলুদা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। তার মুখে একটা গভীর চিন্তার ছাপ। “রিয়া, তোমার গানের জগৎ আর তোমার প্রেমের সুর তোমাদের জীবনের নতুন পথ দেখাবে।”
বাবলুদার এই কথায় গ্রামবাসীর মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা কমে এল। কিছুটা হাসি আর আশীর্বাদ ফুঁটে উঠল। গ্রামবাসী একে অপরকে দেখে হাসি চাপতে পারছিল না।
রিয়া আর আয়ান তাদের সবার আশীর্বাদ নিয়ে, সেই রাতে, নদীর ধারে একবার শেষবারের মতো বসে পড়ল। রাতের আকাশে হাজারো তারা ঝলমল করছিল। রিয়ার মনের মধ্যে এক অজানা আনন্দের ছোঁয়া ছিল। এই রাত, এই চাঁদের আলো, এই সুর, যেন তাদের নতুন জীবনের প্রতীক।
রিয়া তার হৃদয়ের সবটুকু অনুভূতি দিয়ে গান গাইলো। গানটা ছিল তার ভবিষ্যতের জন্য, তাদের সঙ্গী জীবনের জন্য। আয়ান বাঁশি বাজিয়ে তার সুরে মিশিয়ে দিল। সুরে সুরে মিশে গেল তাদের সমস্ত অনুভূতি, তাদের আশা, তাদের স্বপ্ন। এই সুরে ছিল নতুন জীবন, নতুন প্রত্যাশা।
পরের দিন, গ্রামবাসীরা তাদের বিদায় জানাতে এসে আশীর্বাদ করলো। রিয়া আর আয়ান শহরের পথে যাত্রা শুরু করলো। রিয়া জানতো, তাদের পথ সহজ হবে না। নতুন শহরের প্রতিকূলতা, চ্যালেঞ্জ, সব কিছুতেই তাদের পরীক্ষা হবে। কিন্তু তার মনে ছিল আয়ানের সুর, যা তাদের সাহস আর ভালোবাসা যোগাবে।