শিউলির জন্মের সময় ডাক্তাররা বলেছিল, একটা পা নিয়ে সে হাঁটতে পারবে না, দৌড়াতে পারবে না, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে না। শিউলির বাবা-মা, দুজনেই যেন ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু, শিউলি নিজেই জেনেটিক অসুখ নিয়ে জন্মালেও, সে ভেঙে পড়েনি। তার চোখ দুটো ছিল সূর্যকিরণের মতো উজ্জ্বল, তার মনে ছিল অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
ছোটবেলায় অন্য ছেলেমেয়েদের মতো খেলাফুটো করতে না পারলেও, সে হামাগুড়ি দিত, হাতের উপর ভর দিয়ে ঘুরে বেড়াত। প্রতিটা পতনের পর সে আবার উঠে দাঁড়াত। মাঝে মাঝে, পড়ে গিয়ে খুব জোরে আঘাত লাগত, কষ্টে কাঁদত, কিন্তু কখনো হাল ছেড়ে দেয়নি। একদিন, খেলার মাঠে দেখল ছেলেমেয়েরা স্কিপিং করছে। সেও একটা লাঠি নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নাচতে শুরু করল। তার মাথায় ছিল, সেও তো স্কিপিং করতে পারবে!
কয়েক বছরের অনবরত চেষ্টায় শিউলি একটি কৃত্রিম পা পেয়েছিল। প্রথমে পা লাগানোটা খুব কষ্টের ছিল। পা দুটোয় ভারসাম্য রক্ষা করা, সোজা হয়ে হাঁটা – সবকিছুই শেখা। প্রতিদিন ফিজিওথেরাপির পরে, সে নিজের ঘরেও চেষ্টা চালিয়ে যেত। পড়ে যেত, আবার উঠে দাঁড়াত। বারবার চেষ্টার ফলে, একদিন সে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারল। তারপর ধীরে ধীরে, এক পা এগিয়ে, আরেক পা এগিয়ে, সে হাঁটা শুরু করল। পৃথিবীটা যেন নতুন করে খুলে গেল তার কাছে।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - দুই হৃদয়: অদিতি, এক ধনী পরিবারের মেয়ে, তার স্বপ্নের প্রেম খুঁজে পায় রোহন নামক এক তরুণের মধ্যে। কিন্তু, সামাজিক রীতিনীতি আর অর্থনৈতিক বৈষম্য তাদের প্রেমের পথে বাধা সৃষ্টি করে। অপেক্ষা, ত্যাগ আর বিশ্বাসের মাধ্যমে তারা কি তাদের ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে? সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
কিন্তু, জীবনে সব কিছু সহজ ছিল না। স্কুলে অন্য ছেলেমেয়েদের মতো সে খেলাধুলায় অংশ নিতে পারত না। মাঝে মাঝে কিছু ছেলেমেয়েরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করত। “এক পা নিয়ে কি হবে!” অথবা, “চল, তোকে হাঁটতে শেখাই!” শিউলি মনে মনে কষ্ট পেত, কিন্তু জবাব দিত না। সে জানত, তার প্রতিটি পদক্ষেপই একটা জবাব।
একদিন, স্কুলে স্পোর্টস ডে চলছিল। শিউলি দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল, হঠাৎ করেই একটা ছেলে পড়ে গেল। রেসের মাঝপথে ট্রিপ হয়ে সে উঠতে পারছিল না। শিউলির মনে একটা জোর লাগল। সে লাফিয়ে মাঠের দিকে ছুটে গেল। তার চেষ্টায় ছেলেটিকে তুলে ধরা গেল। মিস শ্রীমতি, শিউলির ক্লাস টিচার, এই ঘটনা দেখলেন। তিনি শিউলির কাছে এলেন, “শিউলি, তুমি খুব সাহস দেখিয়েছ। তুমি তো দৌড়াতে পারো!”
শিউলি অবাক হয়ে গেল। সে কিছু বলতে পারল না।
মিস শ্রীমতির কথাগুলো শিউলির মনে ঘুরপাক খেতে লাগল। “তুমি তো দৌড়াতে পারো!” – এই কথাগুলো ছিল সেদিনের সবচেয়ে বড়ো প্রশংসা। সেইদিনের পর থেকে মিস শ্রীমতির উৎসাহে শিউলি স্কুলের পরে প্রতিদিন স্টেডিয়ামে দৌড়ঝাঁপের অনুশীলন শুরু করল। প্রথম দিকে, একটানা দৌড়ানো খুব কঠিন হয়ে পড়ত। কিন্তু, সে হাল ছেড়ে দেয়নি। প্রতিদিনের অনুশীলনে তার গতি আরো বেড়ে গেল, আর তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে লাগলো তার আত্মবিশ্বাস।
একদিন, স্কুলে প্যারা-অলিম্পিক গেমসের খবর এল। শিউলি জানতে পারল, তার বয়সী কিছু ছেলেমেয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। সে মিস শ্রীমতির কাছে গিয়ে বলল, “আমিও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চাই!” মিস শ্রীমতি তার উৎসাহ দেখে খুশি হলেন। তিনি শিউলিকে প্রশিক্ষণের জন্য একজন প্যারা-অ্যাথলেট কোচের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - ঊষাশ্রীর স্বপ্ন: এই অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্পটি ঊষাশ্রী নামে এক তরুণী লেখিকার লন্ডনে আসার পর লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের কাহিনী বর্ণনা করে। গল্পটি লেখালেখির পথে আসা বাধা, হতাশা এবং ঊষাশ্রীর অদম্য সাহস ও ধৈর্যের উপর আলোকপাত করে। ঊষাশ্রীর গল্প অন্য স্বপ্নবাজদের অনুপ্রেরণা জোগাবে এবং তাদের স্বপ্নের পিছনে ছুটতে উৎসাহিত করবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
কোচের কাছে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করল শিউলি। নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হল সে। বিভিন্ন ধরনের অক্ষমতা নিয়ে থাকা আরো কিছু প্রতিযোগী সেখানে দেখতে পেল। কেউ হুইলচেয়ারে বসে দৌড়ঝাঁপ করছিল, কেউবা ছিল একটা হাত ছাড়া। শিউলির মনে হল, তার অসুখ তো আর তেমন কিছু না। এই মানুষগুলোর লড়াই দেখে তার নিজের মধ্যে আরো বেশি জোর জাগল।
কয়েক মাসের কঠোর পরিশ্রমের পর, শিউলির নাম প্যারা-অলিম্পিক গেমসের জন্য নির্বাচিত হল। প্রতিযোগিতার দিন, স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শকের উচ্ছ্বাসে গমগম করছিল। শিউলি একটু নার্ভাস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, মিস শ্রীমতির উৎসাহের কথা আর কোচের দেওয়া প্রেরণা মনে রেখে সে নিজেকে সামলে নিল।
শুরুর সঙ্কেত পড়ল। শিউলি লাফিয়ে ছুটে চলল। তার পা দুটো যেন মাঠ পেরিয়ে যেতে চাইছিল। সে নিজের সবকটা জোর দিয়ে দৌড়চ্ছিল। দর্শকদের উচ্ছ্বাস আর তার নিজের দৃঢ় মনোবল তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ফিনিশ লাইনে পৌঁছনোর ঠিক আগে, অন্য একজন প্রতিযোগী তার কাছাকাছি এসে গেল। শেষ মুহূর্তে, শিউলি সর্বশক্তি দিয়ে এক ঝাঁপ দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করল।
বাংলা ছোট গল্প - চাঁদের আলোয় পাগলামি: চাঁদের আলোয় বিচ্ছেদ ও নতুন সূচনার গল্প! দেশভাগের জেরে স্বপ্ন হারানো নায়িকা নতুন জীবন খুঁজে পায় গ্রামের সাদাসিধা ছেলের সাথে। এক পুরনো প্রেমের স্মৃতি আর নতুন বন্ধনের টানাকষিতে জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংগ্রাম। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে উঠলো দর্শকদের চিৎকারে। শিউলির চোখে জল এসে গেল। সে মিস শ্রীমতির দিকে তাকাল। তার ক্লাস টিচার তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। শিউলি দৌড়িয়ে গিয়ে মিস শ্রীমতির কোলে গিয়ে শিউলি কেঁদে ফেলল। এ ছিল খুশির কান্না, স্বপ্নপূরণের কান্না। এই জয় শুধু তার নিজের জয় নয়, এই জয় সমস্ত বাধাকে জিয়িয়ে যাওয়া মানুষের জয়। স্টেডিয়ামের লাউডস্পিকারে ঘোষণা হল, “শিউলি রায়, ১০০ মিটার দৌড় বিজয়ী!”
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে, রজত পদকপ্রাপ্ত মেয়েটি শিউলির কাছে এল। “আমার নাম আয়না। আমি তোমাকে আগে থেকেই চিনতাম। তুমি সত্যিই খুব ভালো দৌড়িয়েছ।” শিউলি হাসল। “কীভাবে চিনতে?” আয়না বলল, “আমি টিভিতে তোমার গল্প দেখেছিলাম। তুমি এক পা নিয়েও হাঁটতে শিখেছ, দৌড়াতে শিখেছ। তোমাকে দেখে আমার অনেক অনুপ্রেরণা জেগেছে।”
শিউলির মনে আনন্দে ভর ছেয়ে গেল। তার লড়াই, তার জয় কেবল সে নিজের না, অন্যের জীবনেও স্পর্শ ফেলেছে। এরপর শিউলি আরো বেশি প্রতিযোগিতায় অংশ নিল, আরো বেশি পদক জিতল। কিন্তু, সবচেয়ে বড় জয় ছিল মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া। সে হয়ে উঠল এক অনুপ্রেরণার মূর্তি, এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।
একদিন, একটা স্কুলে সামাজিক কার্যক্রমের অনুষ্ঠানে শিউলি স্পীচ দিতে গেল। সে ছোট্ট ছেলেমেয়েদের বলল, “জীবনে বাধ থাকতে পারে, কিন্তু স্বপ্ন থাকা লাগবে। চেষ্টা থাকা লাগবে। পড়ে গেলে আবার উঠে দাঁড়াতে হবে। কারণ, সূর্য সবসময়ই আকাশে থাকে, আমাদের মনের মধ্যেও স্বপ্নের সূর্যকিরণ থাকুক।”
শিউলির কথা শুনে স্কুলের সবাই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। শিউলি জানত, ওর লড়াই অনুপ্রেরণা জোগাবে, অন্যদের স্বপ্নের পথে আলোক দেবে। সে জানত, এই পথ চলতে থাকবে, চলতে থাকবে সূর্যকিরণের মতো উজ্জ্বল স্বপ্ন নিয়ে।