কোলকাতার এক শান্ত ও নিঃশব্দ শহরে শিখা তার মাতার মৃত্যুর পরে শৈশবের বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িটি যেন তার মায়ের স্মৃতি ও অনুতাপের সমাহার—পুরনো বই, ছবির ফ্রেম, এবং ভেঙে পড়া অঙ্গসজ্জা। বাড়ির চতুর্থ তলায় একটুখানি অ্যাটিক ছিল, যেখানে অন্ধকারে ছায়া পড়েছে। শিখা জানে, বাড়িটি তাকে একটি অদৃশ্য শূন্যতার মধ্যে ফেলছে, যেন সেখানে কেবল তার মা’র অভাব নেই, বরং কিছু গোপনীয়তা জড়িয়ে আছে।
মা চলে যাওয়ার পর থেকে শিখার মনে এক অজানা শূন্যতা বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। সে মাঝে মাঝে তার মায়ের কথা মনে করে, মনে পড়ে যায় মায়ের হাসি, তার প্রেমময় আদর। কিন্তু এখন, যখন সে বাড়ির পরিবেশে প্রবেশ করছে, তখন তাকে মনে হচ্ছে যেন কিছু একটা তাকে অনুসরণ করছে। বাড়ির চারপাশে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।
একদিন, বাড়ির পুরনো জিনিসপত্র গুছাতে গিয়ে, শিখা মায়ের আলমারির পিছনে একটি পুরনো জার্নাল খুঁজে পায়। জার্নালটি ধূসর এবং ময়লা। মনে হয় এটি বহুদিন ধরে ব্যবহার হয়নি। শিখার কৌতূহল বেড়ে যায়। সে এটিকে তুলে ধরে এবং আগ্রহ নিয়ে খোলার চেষ্টা করে। প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা ছিল—“এটি আমার ব্যক্তিগত কাহিনী, যা কখনো প্রকাশ করা উচিত নয়।” শিখার মনে একটা কৌতূহল জাগে।
জার্নালটি পড়তে শুরু করে। সেখানে লেখা ছিল কিছু গোপনীয়তা, যা তার মায়ের জীবনের অন্ধকার দিক নিয়ে আলো ফেলছে। প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই শুরু হয় এক ভিন্ন গল্প। “দ্য ওয়াচার” নামক একটি রহস্যময় চরিত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। সে পড়তে থাকে, এবং জানতে পারে যে এই চরিত্রটি তার মায়ের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
কিন্তু যেই সে লেখাগুলি পড়তে থাকে, ততটাই অস্বস্তি অনুভব করে। মনে হয় যেন বাড়ির চারপাশে কিছু চলছে—একটি অদৃশ্য শক্তি, যা তার প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করছে। রাতে শিখা একটি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে—একটি পুরনো বাড়ির পিছনের উঠোনে, যেখানে একটি পুরনো গাছ দাঁড়িয়ে আছে। সেই গাছের নীচে শিখা দেখতে পায় “দ্য ওয়াচার” এর উপস্থিতি। সে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে এবং ঘুম থেকে জেগে ওঠে।
পরের দিন, শিখা শহরের পরিচিতদের সাথে দেখা করতে বের হয়, যারা তার মায়ের সাথে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তাদের মুখে কিছু অস্বস্তি এবং ভয় ছিল। যখনই সে “দ্য ওয়াচার” সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তারা দৃষ্টিকে এড়িয়ে যায়। এটি শিখার মনে আরও একবার সন্দেহ জাগায়। কি হচ্ছে? তার মায়ের অতীতে কি এমন কিছু আছে যা সকলেই চাপা দিতে চাইছে?
এখন শিখা আরও বেশি কৌতূহলী হয়ে ওঠে। সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে এই রহস্যের পেছনে যাবে। সে বাড়িতে ফিরে এসে অ্যাটিকের দিকে যায়, যেখানে সে নতুন করে জার্নালটি পড়তে শুরু করে। লেখাগুলি আরও অন্ধকার হয়ে উঠছে। সেখানে একের পর এক গোপনীয়তা উন্মোচিত হয়—মায়ের জীবনের কাহিনী, দুঃখ এবং “দ্য ওয়াচার”-এর সাথে তার সম্পর্ক।
এখন শিখা বুঝতে পারে, তার মায়ের জীবনের অন্ধকার দিকগুলি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, বরং এর সঙ্গে একটি বৃহত্তর রহস্য জড়িত। এমন কিছু ঘটছে যা তার মাকে প্রভাবিত করেছে এবং শিখা নিজেও তার শিকড়ের দিকে ফিরে যাচ্ছে।
এক রাতে, যখন সে আবার অ্যাটিকের দিকে চলে যায়, সে খুঁজে পায় একটি গোপন স্থান—এটি একটি পুরনো বাক্স, যার ভেতর রয়েছে একটি পুরনো লকেট এবং একটি অদ্ভুত ছবি। ছবিতে একটি পুরুষের মুখ রয়েছে, যার সঙ্গে জার্নালে বর্ণিত “দ্য ওয়াচার” এর চেহারার অসাধারণ সাদৃশ্য।
ক্লারা যেন ভয়ঙ্কর অনুভূতি নিয়ে ভরে যায়। এতগুলো প্রশ্ন মাথায় আসে—এটি কে? তার মায়ের সাথে এর কি সম্পর্ক? কেন সে এত সময় ধরে এটি চাপা রেখেছে? শিখার মন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে, কিন্তু সে হাল ছাড়তে রাজি নয়।
এবং ঠিক তখনই, তার মাথায় এক চিন্তা আসে। সে শহরের আরও কিছু পুরনো মানুষকে খুঁজে বের করবে, যারা সম্ভবত এই রহস্য জানে। কিন্তু সমস্যা হলো, তারা কি সত্যি বলতে পারবে? শহরে দীর্ঘদিন ধরে গোপনীয়তা চাপা পড়ে গেছে।
অথবা, শহরের কিছু লোক হয়তো এখনও “দ্য ওয়াচার” এর ভয় পায়। সেই ভয়ের মাঝে লুকিয়ে আছে সত্য, যা শিখাকে আবিষ্কার করতে হবে।
কিছুক্ষণ পর, শিখা মনে মনে একটি সংকল্প করে—সে এই রহস্যের পেছনে যাবে, কোনোভাবেই সত্য বের করতে হবে। তবে, সুতরাং কি সত্যিই সে প্রস্তুত? সঙ্গীতের মধ্যে, জার্নালের পাতায় একটি নতুন পৃষ্ঠা ফুরিয়ে যায়, এবং শিখা সেখানে একটি মন্তব্য পড়ে—“সত্য কখনও অন্ধকার থেকে পালিয়ে যায় না। এটি প্রায়শই আপনাকে অনুসরণ করে।”
ছোটদের রূপকথার গল্প - মায়াবী বনভূমি: "মায়াবী বনভূমি" - একটি আকর্ষণীয় ছোটদের গল্প যা রূপকথার গল্পের মতো জাদু ও শিক্ষার সমন্বয়ে ভরা। এলারার ভালোবাসা ও যত্নে জাগ্রত বনভূমি শিশুদের মনে আনন্দ ও বন্ধুত্বের বার্তা ছড়িয়ে দেবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
রহস্যময় লেখাগুলি
শিখা সকাল সকাল উঠে পড়ে, তবে রাতের অদ্ভুত স্বপ্নের স্মৃতি তার মনে এখনও ভাসছে। চোখের সামনে ভাসছে একটি অন্ধকারাকীর্ণ পথ, যেখানে “দ্য ওয়াচার” তাকে লক্ষ্য করে আছে। সে নিজের অজান্তেই তার মায়ের পুরনো জার্নালের দিকে ফিরে তাকায়। প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা যে রহস্যময় তথ্য দিয়েছিল, তা তার মনে দাগ কাটতে থাকে। সে মনে মনে ভাবতে থাকে, “আমার মা কি সত্যিই এই অদৃশ্য ব্যক্তিত্বকে জানতেন?”
জার্নালে বর্ণিত “দ্য ওয়াচার” ছিল একজন মানুষ, যিনি মানুষের জীবনের গোপনীয়তা জানতেন। কিন্তু কেন তিনি এতটা গোপনীয় ছিলেন? শিখা অনুভব করতে থাকে যেন লেখাগুলি তাকে সরাসরি উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে। তার মনে হয়, মায়ের কাছে কিছু গোপন ছিল, যা সে জানত না।
দ্রুত প্রাতরাশ সেরে শিখা সঙ্গীত ক্লাবে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। সেখানে তার বন্ধুরা থাকে এবং সে তাদের সাথে আলাপ করতে চায়। শহরের পরিচিতরা তার মায়ের কথা বললে শিখার মনে আরও আগ্রহ জাগে। সে জানতে চায়, কীভাবে “দ্য ওয়াচার” সম্পর্কিত সেই পুরনো রহস্যের সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্ক ছিল।
ক্লাবে পৌঁছানোর পর, শিখা বুঝতে পারে, বন্ধুরা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় মগ্ন। কিন্তু শিখা যেন একা হয়ে পড়ে, তার মনের গোপনীয়তা নিয়ে। সে মেয়েটির নাম হীরামণি। হীরামণি শিখার খুব ভালো বন্ধু এবং সে সবসময় সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকে।
“তুমি কি ঠিক আছো, শিখা? কিছু বলতে চাও?” হীরামণি জিজ্ঞেস করে।
শিখা তার মনের কথা বলতে শুরু করে। “আমি কিছু রহস্য আবিষ্কার করেছি। আমার মা’র জীবনের কিছু অন্ধকার দিক আছে। জার্নালে ‘দ্য ওয়াচার’ নামক এক ব্যক্তিত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমি জানতে চাই, তিনি কে।”
হীরামণির মুখে চিন্তার ছাপ পড়ে। “শিখা, আমার মনে হয় তোমাকে সত্যি কিছু খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু সাবধান! মাঝে মাঝে সত্য এতটা কঠিন হয় যে তা আমাদের ধারণার বাইরে চলে যায়।”
শিখার মনে নতুন একটি সংকল্প জাগে। সে জানে, তাকে এই রহস্যের গভীরে যেতে হবে, কিন্তু ভয়ও আসছে। সুতরাং, সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে শীঘ্রই শহরের পুরনো মানুষের কাছে যাবে, যারা হয়তো “দ্য ওয়াচার” সম্পর্কে কিছু জানেন।
বিকেলে, শিখা শহরের পুরনো অঞ্চলে গিয়ে কিছু স্থানীয় দোকানে ঢোকে। সেখানে কিছু পুরনো মানুষ রয়েছেন, যারা তার মায়ের শৈশবের সময়কার। শিখা একজন বৃদ্ধাকে দেখেই ভয় পায়—বৃদ্ধার চেহারায় অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে।
“আপনার নাম কি, দিদি?” শিখা জিজ্ঞেস করে।
বৃদ্ধা মাথা নেড়ে বলেন, “বিনোদিনী। আমার মেয়ে তোমার মায়ের বন্ধু ছিল। কিন্তু… তোমার মায়ের জীবনটা যে রহস্যময় ছিল, তা তো জানোই। “দ্য ওয়াচার” সম্পর্কে কি জানো?”
শিখার হৃদয় দ্রুত হতে থাকে। “আপনার কাছে কি কিছু তথ্য আছে?”
“অনেক কথা শোনা গিয়েছে। কিন্তু এসব কথা বলতে হলে আগে তোমার মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। আমাদের সমাজে অনেক কিছু গোপন রাখা হয়।” বৃদ্ধা গম্ভীরভাবে বলেন।
শিখা প্রতিশ্রুতি দেয় যে সে প্রস্তুত। বৃদ্ধা তখন বলেন, “বাড়ির পিছনের গাছের নীচে একবার গিয়ে দেখো। আমি শুনেছি সেখানে কিছু অদ্ভুত ঘটনার কথা বলা হয়েছে। হয়তো তুমি কিছু খুঁজে পাবে।”
শিখার মনে একটা জোড়াল আকর্ষণ অনুভব হয়। সে বিকেলের আলোয় বাড়ির দিকে ফিরে যায়। বাড়ির পিছনের গাছটি এতদিন তার দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিল। এখন, গাছের নীচে কিছু আবিষ্কার করার জন্য তার মনে এক নতুন উৎসাহ।
গাছের তলায় পৌঁছালে, শিখা দেখতে পায় কিছু পুরনো জিনিস—একটি পুরনো পাত্র, কিছু শুকনো পাতা এবং একটি ক্ষুদ্র প্লেট। যখন সে পাত্রটি খুলে, সেখানে একটি ছোট্ট চিঠি পাওয়া যায়। চিঠিতে লেখা ছিল—“সত্য কখনও মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকে না। একদিন তা বেরিয়ে আসবে।”
শিখার মনে সন্দেহ জাগে। “এটা কি সত্যিই আমার মায়ের কথা? সে কি জানত এই বিষয়টি?”
এমন সময়, একটি শীতল হাওয়া বয়ে যায়। শিখা তার পেছনে কাউকে দেখে। সে দ্রুত পেছনে তাকিয়ে দেখে একটি অন্ধকারাকীর্ণ ছায়া। সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। “কে আছে?” সে জিজ্ঞেস করে।
কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। তখনই সে মনে করে, “দ্য ওয়াচার” হয়তো এখানেই আছে।
সে গাছের পেছন থেকে পিছন দিকে তাকায় এবং অন্ধকারের গভীরতা থেকে একটি মুখ দেখা যায়—অতীতে যে পুরুষের ছবি দেখেছিল সে। সে অস্থির হয়ে ওঠে এবং মনে মনে ভাবে, “এটি কি সত্যিই সে?”
অবশেষে, সে মনে করে সে আরও গভীরে যাবে। তার মনের মধ্যে একটি প্রেরণা জাগে, যেন সে এক লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শহরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ
শিখার মনে নতুন সংকল্প নিয়ে আবার শহরের দিকে পা বাড়ালো। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, শহরের প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলবে, যারা তার মায়ের শৈশবের বন্ধু ছিলেন। তাকে যদি “দ্য ওয়াচার” সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের সাহায্য লাগবে। কিন্তু শিখা জানে, এটি সহজ হবে না। শহরের মানুষরা কখনও সহজে তাদের মনে মনের কথা প্রকাশ করে না।
সকালে সে প্রথমে এলেন মাইতি, একজন ষাটোর্ধ্ব মহিলা, যিনি তার মায়ের সময়ের বন্ধু ছিলেন। এলেন মাইতি একজন নামকরা গৃহিণী, তার চোখে অতীতের অনেক গল্প লুকিয়ে আছে। শিখা সাহস সঞ্চয় করে তার কাছে যায়।
“আপনি কি আমার মায়ের সম্পর্কে কিছু বলবেন?” শিখা কিছুটা অস্বস্তিতে জিজ্ঞেস করে।
এলেন মাইতির মুখে কিছুটা সঙ্কোচ, “তোমার মা একজন অসাধারণ মেয়ে ছিল, কিন্তু কিছু কথা আছে যা হয়তো শুনতে চাও না।“
“কিন্তু আমাকে জানতে হবে,” শিখা অবিরাম ভাবে। “আমি জানি, কিছু গোপনীয়তা আছে, কিন্তু আমি জানাতে চাই।“
এলেন মাইতির চোখে ভয় এবং উদ্বেগ একত্রিত হয়। “শিখা, শহরের মানুষগুলো অনেক ভয় পায়। তারা জানে, অতীত কখনও কখনও ফিরে আসে।“
এটি শুনে শিখা আরও হতাশ হয়। “কেন তারা এমন করে? আমি তো শুধু জানতে চাইছি।“
“কারণ, কিছু তথ্য তোমার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। আমি শুধুমাত্র তোমার ভাল চাই,” এলেন মাইতি কথা শেষ করে।
শিখা তার চেষ্টায় নিরুৎসাহিত হয়ে ফিরে আসে। সে যখন অন্য প্রবীণদের কাছে যায়, তাদের প্রতিক্রিয়া প্রায় একই রকম হয়। শহরের মানুষগুলো তার প্রশ্নের প্রতি ভীত। তাদের চোখে আতঙ্ক দেখা যায়, যেন তারা কিছু গোপনীয়তা চাপা দিতে চাইছে।
বিকেলের দিকে, শিখা তার মনের মধ্যে অশান্তি নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। মায়ের জার্নাল, “দ্য ওয়াচার” এবং এখন শহরের প্রবীণদের ভয়—সবকিছু তার মনে দ্বন্দ্ব তৈরি করে। সে বুঝতে পারে, কিছু একটা করতে হবে। তাকে আরও গভীরে যেতে হবে।
রাতের অন্ধকারে, সে আবার অ্যাটিকের দিকে ফিরে যায়। সেখানে সে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার আশায় গিয়েছিল। যখন সে অ্যাটিকের সিঁড়ি দিয়ে উঠে যায়, সেখানে পুরানো জিনিসের মাঝে অনেক স্মৃতি ভাসে।
অ্যাটিকের এক কোণে, সে একটি পুরনো ট্রাঙ্ক দেখতে পায়। তার মনে হয়, এই ট্রাঙ্কের মধ্যে হয়তো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লুকিয়ে থাকতে পারে। সে ট্রাঙ্কটি খুলে দেখে পুরানো কাপড় এবং কিছু জীর্ণ পত্রিকা রয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ খুঁজে পাওয়ার পর, তার চোখে পড়ে একটি পুরনো লকেট।
লকেটটি হাতে নিলেই শিখা অনুভব করে, এটি যেন তার মায়ের। তার মন যেন ভেসে যায় অতীতে। সে মনে করে, “এটা আমার মায়ের কিছু মনে পড়িয়ে দেয়।”
লকেটটি খুলতে গিয়ে সে দেখে, ভেতরে একটি পুরনো ছবি রয়েছে। ছবিতে একজন পুরুষের মুখ ছিল। তার মুখের সাদৃশ্য ঠিক জার্নালের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়। শিখার হৃদয় দ্রুত হতে থাকে। “এটা কি ‘দ্য ওয়াচার’?” সে নিজেকে প্রশ্ন করে।
বাড়ির অন্ধকারে, শিখা সেই ছবিটা নিয়ে একটুও হৃষ্টপুষ্ট হতে পারে না। সে আবারও ছবির দিকে তাকিয়ে ভাবে, “কীভাবে আমি এই ব্যক্তিকে চিনি? এর সঙ্গে কি আমার মা কোনোভাবে জড়িত ছিলেন?”
এমন সময়, একটি কণ্ঠ শিখার কানে আসে। “শিখা!”
সে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে, সেখানে তার ছোট বোন দীপা দাঁড়িয়ে আছে। দীপা দুই চোখে ভয় নিয়ে প্রশ্ন করে, “কী করছ তুমি এখানে?”
“আমি কিছু খুঁজছি, দীপা। হয়তো কিছু গুপ্ত তথ্য। তুমি কিছু জানো?”
“দিদি, কেন তুমি আমাদের অতীতে ফিরে যেতে চাইছ?” দীপা দুশ্চিন্তায় বলে। “কিছু জিনিস হয়তো জানলে তোমার ভালো হবে না।”
“তবে আমি জানি, আমাদের মায়ের কিছু গোপনীয়তা আছে। আমাকে জানতেই হবে!” শিখা দৃঢ়ভাবে বলে।
দীপা কিছুটা চুপ করে যায়, তারপর হঠাৎ করে বলে, “তুমি জানো, আমি কিছুদিন আগে একটি ঘটনা শুনেছিলাম। শহরের কাছে একটি পুরনো বাড়ি আছে, যেখানে ‘দ্য ওয়াচার’-এর কথা বলা হয়। সেখানে কেউ গিয়েছে?”
শিখার মনে এক নতুন আশা জাগে। “কোথায়? আমাকে বল!”
“শহরের বাইরের পুরনো জমিদার বাড়ি। কেউ সেখানে গিয়ে ফিরেনি। কিন্তু আমার বন্ধু বলেছিল, সেখানে কিছু ছবি এবং লেখনী রয়েছে।” দীপা যেন মুখ খুলে দেয়।
শিখার মনে যেন একটি জ্বলন্ত আগুন জ্বলে ওঠে। “আমরা সেখানে যাব!”
রাতের অন্ধকার আরও গাढ़ হয়ে আসে। কিন্তু শিখা অনুভব করে, তার যাত্রা এখানেই শেষ হবে না। সে এবং দীপা সেই পুরনো বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তবে সেখানে যাওয়া মানেই বিপদ।
এবং ঠিক তখনই শিখা বুঝতে পারে, তার সামনে এক রহস্যময় পথ খুলে যাচ্ছে। “কী অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য? আমরা কি সত্যি সত্যি ‘দ্য ওয়াচার’কে খুঁজে বের করতে পারব?”
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - চিরন্তন ছোঁয়া: "চিরন্তন ছোঁয়া" – এক হৃদয়ছোঁয়া রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প। কলকাতার প্রেক্ষাপটে মিয়া ও অ্যালেক্সের সৃজনশীলতা ও প্রেমের গল্পে ভালোবাসার গভীরতা ও স্বপ্নপূরণের আবেগে ভরা একটি অনন্য যাত্রা। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অদ্ভুত ঘটনার শুরু
শিখা এবং দীপা পুরনো জমিদার বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করেছিল। শহরের সীমানা ছাড়িয়ে তারা পেছনে ফেলে আসছিল পরিচিত জনপদ। পরিবেশে অদ্ভুত একটা নীরবতা বিরাজ করছে, যেন চারপাশের বাতাসও তাদের অভিযানে অংশগ্রহণ করতে নারাজ। তারা যখন বাড়ির নিকটবর্তী পৌঁছালো, তখন রাতের অন্ধকার আরও গাঢ় হয়ে গেল। এই সময়, শিখার মনে এক অদ্ভুত শঙ্কা কাজ করছিল।
“দিদি, তুমি সত্যিই এই বাড়িতে যেতে চাও?” দীপা একটু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো। “কথাগুলো মনে রেখো—কেউ ফিরে আসে না।”
“হ্যাঁ, দীপা। তবে আমাদের জানতেই হবে। মা আমাদের এ জন্য প্রস্তুত করেছিল,” শিখা দৃঢ়ভাবে বললো।
বাড়ির প্রবেশদ্বারটি যখন তাদের সামনে এলো, তখন শিখা প্রথমে দ্বিধায় পড়ে গেল। পুরনো বাড়িটি ছিল একটি ভুতুড়ে নীরবতা। তার চোখের সামনে সাদা দেওয়ালগুলি, চুনের রঙের চিহ্ন, এবং অব্যবহৃত ঝুড়ি। যতদূর চোখ যায়, কেবল অন্ধকার এবং অদ্ভুত ছায়া। তাদের মনে সন্দেহ আর শঙ্কা একত্রিত হতে থাকে।
বাড়ির দরজাটি খোলার সাথে সাথেই তাদের সামনে এক অদ্ভুত দৃশ্য হাজির হলো। পুরনো আসবাবপত্র সব জায়গায় ছড়ানো, যেন কেউ তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেছে। বাতাসে এক ধরনের জমে থাকা নিস্তব্ধতা। দীপা নরম গলায় বলল, “দিদি, এখানে কি কিছু রয়েছে? আমি মনে হচ্ছে, আমাদের বের হয়ে যাওয়া উচিত।”
কিন্তু শিখা হতাশ হয়ে বললো, “দীপা, আমাদের সত্যটি জানতে হবে। আরেকটু ভেতরে যাই।”
তারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই হঠাৎ করে অদ্ভুত এক ফিসফিস শুরু হলো। মনে হলো, যেন কেউ তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। শিখা পিছনে তাকালো, কিন্তু কিছুই দেখলো না। দীপা চুপ করে কাঁপতে লাগলো।
“দিদি, আমি সত্যিই ভয় পাচ্ছি। আমরা কিছু ভুল করছি না?” দীপা ভয়ে বললো।
“না, আমরা ভুল করছি না। তবে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে,” শিখা বলল।
শিখা এক কোণে গিয়ে একটি পুরনো বইয়ের তাক দেখতে পেল। বইগুলো ছিল ধূলিস্যাৎ এবং জীর্ণ। কিন্তু একটি বই তার নজর কাড়লো—“সত্যের পেছনে”। সে বইটি খুলতেই একটি পুরনো নোটপেপার পড়ে যায়। এতে লেখা ছিল, “সত্য খুঁজতে যেয়ো না।” শিখার মনে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। এই সতর্কীকরণ কীসের?
“দীপা, দেখো! এটা কি?” শিখা নোটটি হাতে তুলে ধরলো।
দীপা নোটটি দেখে অস্থির হয়ে উঠলো। “এটা কি? এটা কি ভুতের সতর্কতা?”
“আমি জানি না। তবে আমাদের এই বাড়িতে থাকতে হবে। এখানে কিছু বড় গোপনীয়তা আছে,” শিখা দৃঢ়ভাবে বললো।
অতঃপর, তারা বাড়ির বিভিন্ন কোণে চলে গেল। হঠাৎ শিখা একটি অদ্ভুত শব্দ শুনতে পায়, মনে হচ্ছে কিছু একটা নড়ছে। সে দীপাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।
“দীপা, শোন! তুমি এটা শুনছো?” শিখা বললো।
“হ্যাঁ, কিন্তু আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না,” দীপা ভয়ে বললো।
সেখানে তারা একেবারে পুরানো একটা ঘর দেখতে পায়। দরজা খুলতেই, ভেতরে অন্ধকার এবং ভয়ংকর এক অনুভূতি সৃষ্টি হলো। শিখা একজন সাহসী নারী, কিন্তু এই অবস্থায় সে ভীত। “আমাদের দেখতে হবে। হয়তো এখানে কিছু আছে যা আমাদের সাহায্য করবে।”
ভিতরে ঢুকে তারা একটি পুরনো আলমারি দেখে। আলমারির মধ্যে কিছু ছাপানো কাগজ ছিল। শিখা এবং দীপা সেগুলো খুলে দেখতে লাগলো। তবে অদ্ভুতভাবে, কাগজগুলো পড়া যাচ্ছিল না। সেখানে শুধুই বিচিত্র অক্ষর, যা মনে হচ্ছিল যেন একটি ভাষার সমষ্টি।
“এটা কি? কিছু বুঝতে পারছো?” দীপা প্রশ্ন করে।
“আমি জানি না। তবে মনে হচ্ছে এটা আমাদের জন্য একটি চিহ্ন। হয়তো আমাদের আরও গভীরে যেতে হবে,” শিখা বলল।
এভাবে কাটতে থাকে রাত। অদ্ভুত ঘটনার মধ্যে তাদের চাঞ্চল্য বাড়ছিল। তারা বের হতে চেষ্টা করলেও, বাইরে ঝড়ের দাপট শুরু হলো। তাদের মনে এক ভয়াবহ চিন্তা। “আমরা এখানে আটকা পড়ে যাবো!” দীপা সঙ্কটের মধ্যে বললো।
“না, আমরা আটকা পড়বো না। আমাদের এই রহস্যের সমাধান করতে হবে,” শিখা বলল। “আমরা পালিয়ে যাবো না, বরং সত্যের মুখোমুখি হবো।”
তারা আবার অন্ধকারে জ্বলে ওঠা একটি আলোর দিকে হাঁটতে শুরু করে। আলোর উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে করতে তারা বাড়ির একটি পুরানো কক্ষে পৌঁছায়। সেখানে একটি রহস্যময় চিত্রকর্ম ঝুলে আছে, যা তাদের নজর কাড়ে। এটি যেন তাদের মায়ের স্মৃতির সাথে সম্পর্কিত।
“এটা কি? মা কি এখানে ছিল?” দীপা জিজ্ঞেস করে।
“মা কিছু একটা জানত। আমাদের এখানে আসার জন্য কেন পাঠানো হয়েছে। আমাদের সত্য খুঁজে বের করতে হবে,” শিখা দৃঢ় ভাবে বলে।
কিন্তু ঠিক তখন, তাদের পিছনে আবারও সেই অদ্ভুত ফিসফিস শুনতে পায়। “যাও, চলে যাও!” শব্দটি যেন তাদের ঘিরে ধরছে।
দীপা ভয়ে পিছন ফিরতে চায়, কিন্তু শিখা তাকে টেনে ধরে। “না, আমরা ছাড়বো না। আমাদের পড়তে হবে এই রহস্যের গভীরে। আমাদের আবার চেষ্টা করতে হবে।”
সেই সন্ধ্যা থেকে তাদের মাথায় নানান চিন্তা ঘুরতে থাকে। “কী এই বাড়ির ইতিহাস? কেন আমাদের মায়ের সাথে এইসব ঘটছে?”
তাদের মধ্যে দ্বিধা এবং ভয় বাড়তে থাকে, কিন্তু শিখা জানে—সত্যের সন্ধানে পিছু হটলে, তা কখনও ভালো ফল দেবে না।
অবশেষে তারা ওই কক্ষে একটি দরজা খুঁজে পায়। দরজা খুলতেই ভেতর থেকে এক ঝলক আলোর দেখা মেলে। কিন্তু শিখা বুঝতে পারে, এটি কোনো সাধারণ স্থান নয়। এর ভেতর থেকে একাধিক ছায়া বেরিয়ে আসছে।
“শিখা!” দীপা সঙ্কটের মধ্যে বলে, “আমি আর আগাতে পারছি না।”
“না, দীপা। তুমি আমাকে একা ছেড়ে যাবে না। আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাবো,” শিখা দৃঢ়তার সাথে বললো।
তারা ধীরে ধীরে ছায়ার দিকে এগোতে থাকে। প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে শিখার মনে হয়, যেন তারা সত্যের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। কিন্তু সেই ছায়াগুলো আরও গভীর অন্ধকারে ঢুকে পড়তে চাচ্ছে।
ঠিক তখন, একটি আকস্মিক কাণ্ড ঘটে। শিখা সোজা দাঁড়িয়ে থাকে এবং দেখলো একটি পুরনো মূর্তি তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। “এটা কি?” সে প্রশ্ন করে।
মূর্তিটির চোখের দিকে তাকিয়ে শিখা অনুভব করে, এটি যেন তাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। “এটা আমাদের যাওয়া উচিত বলে মনে হচ্ছে,” দীপা বলে।
শিখা সেই মূর্তির দিকে তাকিয়ে ভাবে। “আমাদের এখনই বের হতে হবে। কিন্তু আমাদের কি সত্যি বেরিয়ে আসা উচিত?”
এবং ঠিক তখন, তাদের সামনে দেখা দেয় এক রহস্যময় প্রবাহ, যেন তাদের কাছে আসছে নতুন তথ্য। তারা জানতে পারে, তাদের মায়ের অতীত এই মূর্তির সাথে গভীরভাবে জড়িত।
“দীপা, এই বাড়িতে আমাদের জন্য আরও কিছু আছে,” শিখা বললো। “আমাদের আরেকটি অধ্যায় শুরু হচ্ছে।”
রহস্যের গভীরে প্রবেশ
শিখার মনে আরও একবার হঠাৎ বুদ্ধির সঞ্চার হয়। গত কয়েক সপ্তাহে যে সব ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো তাকে একটা গভীর ও অদ্ভুত জগতে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। ছবির মাধ্যমে সে যেন একটা নতুন জীবন পেয়েছে—একদিকে ভয়াবহ এবং অপরদিকে আকর্ষণীয়। কিন্তু এখন সে বুঝতে পারছে যে এই সব ঘটনার পেছনে একটি বড় রহস্য রয়েছে, যা তাকে আরও গভীরে প্রবেশ করতে বাধ্য করছে।
এক রাতে, যখন শিখা ফিরে এসেছে তার পুরনো জার্নালে, তখন তার মনে পড়ে গিয়েছিল যে সেখানে হয়তো কিছু এমন তথ্য থাকতে পারে যা তাকে “দ্য ওয়াচার” সম্পর্কে আরও বেশি জানাতে সাহায্য করবে। তার হৃদয়ে রোমাঞ্চ আর ভয়ের মিলিত অনুভূতি প্রবাহিত হচ্ছিল। সে জার্নালটি খুলতেই সে আবারও সেই অদ্ভুত কথাগুলি পড়তে শুরু করল।
“দ্য ওয়াচার”—এই শব্দটি যেন তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যতবার সে এই নামটি শুনেছে, ততবারই তার মনে একটা অস্পষ্ট ভয় অনুভব করেছে। তার মায়ের পুরনো ডায়েরির পৃষ্ঠাগুলো খুলতে খুলতে তার মনে হচ্ছিল, এই ডায়েরির পেছনে লুকিয়ে আছে একাধিক অজানা ঘটনা।
শিখা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল যে সে “দ্য ওয়াচার” কে জানবে এবং কেন তার পরিবারকে এভাবে ভূত আচ্ছন্ন করেছে। সে তার মায়ের পেছনের অতীতের দিকে নজর দিতে শুরু করল। সেই সময়ে সে আবিষ্কার করল যে তার মা কিছু অদ্ভুত ঘটনার মধ্যে জড়িত ছিলেন, যা শিখার কাছে একেবারেই অজানা ছিল।
বাড়ির মধ্যে যতদিন সে ছিল, ততদিন তার মনে হয়েছে যে সে বাড়িতে একা নয়। সন্ধ্যা নেমে এলে, বাড়ির প্রতিটি কোণায় অদ্ভুত ফিসফিস আওয়াজ শুনতে পেত। একবার, যখন সে ডায়েরির পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছিল, সে মনে করল যে যেন কেউ তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। তবে যখন সে পিছনে তাকাল, কিছুই দেখতে পেল না। এভাবে সময় কাটছিল।
দিন গড়াতে থাকলে শিখা তীব্রভাবে অনুভব করতে শুরু করল যে সে যেন “দ্য ওয়াচার” এর দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাকে চিনতে পারা কি সম্ভব? কি উদ্দেশ্যে তাকে অনুসরণ করছে এই রহস্যময় সত্তা? সে আস্তে আস্তে অনুভব করতে শুরু করল যে তার জীবনের অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর মায়ের অতীতে লুকিয়ে আছে।
এক রাতে, শিখা যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সে একটি হঠাৎ আওয়াজ শুনতে পেল। তার ঘরটি অন্ধকারে ঢাকা ছিল এবং সে ঠিক বুঝতে পারছিল না, কি হয়েছে। সে ভয় পাচ্ছিল, কিন্তু এক অদ্ভুত আকর্ষণ তাকে টানছিল। সে তার ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল এবং আস্তে আস্তে নিচের তলায় গেল। সেখানে, সে দেখতে পেল তার মায়ের পুরনো পেন্টিংগুলো অন্ধকারে ঝলমল করছে।
সেগুলোকে আরও ভালোভাবে দেখতে, সে একটি লাইট জ্বালাল। কিন্তু অদ্ভুতভাবে, ছবিগুলি সেদিন আগের মতো ছিল না। তার মনে হল যেন ছবিগুলোর মধ্যে জীবন্ত কোনো কিছু রয়েছে। শিখা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল এবং ছবি গুলো ভালো করে দেখতে শুরু করল। তখনই সে একে একে ছবিগুলোর মধ্যে পুরনো ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি দেখতে পেল।
হঠাৎ করে, একটি ছবির ফ্রেমের পেছনে সে একটি চিঠি দেখতে পেল। এটি পুরনো, হলুদ হয়ে যাওয়া কাগজে লেখা ছিল। শিখা যখন চিঠিটি খুলল, তখন সে বিস্মিত হলো। চিঠিতে লেখা ছিল, “শিখা, সত্য খুঁজে পেলে তুমি বিপদে পড়বে। ‘দ্য ওয়াচার’ তোমার মায়ের অতীতের একটি অংশ। তুমি যদি জানতে চাও, তাহলে আরও সাবধান হও।”
এই চিঠির প্রতিটি অক্ষর তার হৃদয়কে গভীরভাবে বিঁধল। সে নিশ্চিত ছিল যে এটি তার মা দ্বারা লেখা হয়নি, কিন্তু কেন তার মায়ের নাম ব্যবহার করা হয়েছে? শিখা বুঝতে পারল, সে এই পরিস্থিতির মধ্যে আরও গভীরে প্রবেশ করছে এবং এতে কিছু ভয়ঙ্কর ঘটনা অপেক্ষা করছে।
বহু প্রশ্ন মাথায় আসছিল। “দ্য ওয়াচার” কে? কেন সে তাকে অনুসরণ করছে? তার মায়ের কি ভূমিকা রয়েছে? এসব ভাবতে ভাবতে, শিখার মনে একটি দৃঢ় সংকল্প গড়ে উঠল। সে ঠিক করেছে, সে যেভাবেই হোক, এই রহস্যের সমাধান করবে।
বিকেলে, শিখা নতুন উদ্যমে পুরনো বইয়ের দোকানে গেল। সেখানকার অন্ধকার কোণে একটি অদ্ভুত বই তাকে আকর্ষণ করল। বইটির নাম ছিল “মৃত্যুর শিকড়”। বইটি খুললেই যেন সব রহস্য উন্মোচন হতে শুরু করল। শিখা সিদ্ধান্ত নিল, সে বইটি কিনবে এবং বাড়িতে গিয়ে পড়বে।
বইটি পড়তে পড়তে শিখা আরও অনেক তথ্য জানতে পারল। লেখক রহস্যময়ভাবে উল্লেখ করেছিলেন যে “দ্য ওয়াচার” আসলে একটি পুরানো প্রতিশোধের ভূত। যিনি তার পরিবারের উপর অমানবিক অত্যাচার করেছিলেন, তার আত্মা এখন প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত। শিখা যেন একটা জটিল জালে জড়িয়ে পড়তে শুরু করল।
যতটা সময় চলে, ততটাই শিখার মনে আশঙ্কা বাড়তে লাগল। সে বুঝতে পারল, সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। সে আগামীকাল রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সে “দ্য ওয়াচার” এর মুখোমুখি হবে। কিন্তু এভাবে সে কি সত্যিই বেরিয়ে আসতে পারবে?
এই সময়, তার মন আরো অস্থির হয়ে উঠেছিল। অদ্ভুত অশরীরী উপস্থিতি তার পেছনে যেন ক্রমাগত হাঁটছিল। সে জানত, সামনে এসে পড়া কিছু একটা তার পক্ষে দুর্বিষহ হতে পারে। আর তার ভিতর যেন অদ্ভুত এক আবেগ তৈরী হচ্ছিল—এক ধরনের সংকল্প।
“আমি সত্য খুঁজতে পারব, আমি!” সে মনে মনে বলল। কিন্তু সত্য কী? এটা কি তার মায়ের ইতিহাস, নাকি এটি তার পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে কিছু একটা সম্পর্কিত?
শিখা গভীর চিন্তায় ডুব দিয়ে ছিল। প্রতিটি প্রশ্ন তাকে আরও বেশি আতঙ্কিত করছিল। একদিকে তার মন কাজ করছিল, অন্যদিকে তার মনে সন্দেহের উত্থান হচ্ছিল। সে শেষ পর্যন্ত জানতে চায়, “দ্য ওয়াচার” কে এবং সে কেন তার উপর নজর রেখেছে।
এখন সে নিশ্চিত ছিল যে তার আগামীকাল রাতটি ভিন্ন হতে যাচ্ছে। সে উপলব্ধি করল যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে, যা হয়তো তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। সত্য এবং ভূত—এই দুইয়ের মাঝে শিখা নিজেকে ফেলে দিয়েছিল।
সত্যের মুখোমুখি
শিখা একটি গভীর নিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, যেন তার চারপাশের সব কিছু থমকে গেছে। রাতে তার কাছে এসেছে অদ্ভুত এক আতঙ্ক, যা তাকে দারুণভাবে শিহরিত করছে। আজ রাতে, সে ঠিক করেছে যে সে “দ্য ওয়াচার”-এর সত্যি পরিচয় খুঁজে বের করবে, যেটি তার মায়ের জীবন থেকে লুকিয়ে ছিল।
কিছু দিন আগে, যখন সে বইটি পড়ছিল, সেখানে একটি নাম উঠে এসেছিল—অতুল। এই নামটি তাকে একটা অদ্ভুত অনুভূতি দিয়েছিল, যেন সে তার মায়ের অতীতের এক অংশের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। সে জানত যে এটিই সেই নাম, যা তার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে।
শিখা ঠিক করল, সে পুরনো বাড়ির সেই জায়গায় যাবে, যেখানে তার মা তার প্রথম প্রেমের কথা বলেছিল। রাতের অন্ধকারে, যখন সব কিছু স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন শিখা বাড়ির পিছনের সেই বাগানে পৌঁছাল। তার মনের মধ্যে ভয় এবং কৌতূহলের সংমিশ্রণ তৈরি হচ্ছিল।
যখন সে সেখানে পৌঁছাল, তখন সে দেখতে পেল, বাগানে একটি পুরনো গাছের নিচে কিছুটা অন্ধকার ছিল। তার হৃদয়ের গতি বাড়তে লাগল। সে জানত, এখানেই কিছু একটা অপেক্ষা করছে। কিছু কিছু স্মৃতি, যেগুলো তাকে ভেঙে দিয়েছে, আবার তার সামনে দাঁড়িয়ে। সে গাছের কাছে গিয়ে মাটিতে হাত দিয়ে অনুভব করল।
অন্য একটি পুরনো ছবির মতো, সেখানে একে একে সমস্ত ঘটনা তার মনে আসতে লাগল। ছবির মধ্যে সে তার মায়ের এবং অতুলের সম্পর্কের গল্পগুলো শুনেছিল। তাদের প্রেম ছিল নির্মল, কিন্তু তা ভেঙে পড়েছিল কিছু অন্ধকার রহস্যের কারণে। শিখা অনুভব করল, তার মায়ের সেই ভালবাসা তার জীবনকে প্রভাবিত করেছে, কিন্তু কেন? কেন তাকে এত দীর্ঘ সময় এই সব তথ্য গোপন রাখতে হয়েছিল?
অবশেষে, তার সামনে এসে দাঁড়ালো সেই সত্য। গাছের নিচে কিছু পুরনো সামগ্রী ছিল—একটি সোনালি পেন, একটি প্রেমের চিঠি, এবং একটি ছোট বক্স। শিখা পেনটি তুলে নিল। এটি নিশ্চয়ই অতুলের, কারণ তার মা সব সময় বলতেন যে অতুল তার জন্য একটি বিশেষ পেন কিনেছিল।
সে তাড়াহুড়ো করে চিঠিটি খুলে পড়তে লাগল। চিঠিতে অতুল তার মায়ের প্রতি অগাধ প্রেমের কথা লিখেছিল। কিন্তু চিঠির মধ্যে কিছু জিনিসও ছিল—কিছু অন্ধকার দিক, যা তাদের সম্পর্ককে নষ্ট করে দিয়েছিল। অতুলের জীবনে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং মায়ের পরিবার থেকে তার প্রেমের অস্বীকৃতি ছিল তাদের বিচ্ছেদের কারণ।
“শিখা, তুমি জানো কি? আমি তোমাকে খুব ভালবাসি, কিন্তু আমার জীবন তোমার পরিবারের সঙ্গে মিলছে না। আমি তোমাকে হারাতে চাই না, কিন্তু আমাদের প্রেমে যে দুঃখজনক গল্প লুকিয়ে আছে, সেটি আমি সহ্য করতে পারছি না। আমাদের সম্পর্কের কারণে তোমার পরিবার ভেঙে যেতে পারে। আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই।”—এই লেখাগুলো শিখার মনে দাগ কাটল।
শিখা জানত, “দ্য ওয়াচার” এখন তার মায়ের অতীতের একটা ভয়ানক অধ্যায়। সে গভীরভাবে অনুভব করল, তার মায়ের জীবনের এই সত্য তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে যদি এই সত্যের মুখোমুখি না হয়, তবে কখনোই সে তার মায়ের স্মৃতির সঙ্গে শোকে বা মায়ায় জীবন কাটাতে পারবে না।
কিন্তু এখন শিখা কি করবে? অতুলের বিরুদ্ধে কি কোনো অভিযোগ ছিল? সে কি তার মায়ের জীবনকে ধ্বংস করেছে? এর জন্য সে কি তাকে দোষ দিতে পারে? শিখা এসব ভেবে ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল।
অতুলের নাম মনে পড়তেই তার মনে হলো, যে তাকে এই অন্ধকারে ফেলে রেখে গিয়েছিল, সে আজও কি জীবিত? সে কি এখনও তার মায়ের আশেপাশে আছে? এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে, শিখাকে বুঝতে হবে—সত্য কী?
তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—একবারের জন্য সে সেই অদ্ভুত ভূতটির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে কি না। সে ঠিক করল, আগামীকাল সকালে সে অতুলের সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করবে। হয়তো সে তার পরিচয় পাবে, হয়তো তার পুরনো কিছু বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে সে কিছু তথ্য জানতে পারবে।
শিখা বাগান থেকে বেরিয়ে এসে বাড়িতে ফিরে গেল। রাত গভীর হয়ে এসেছিল, কিন্তু তার মনে সেই অন্ধকার সত্যের সঙ্গে যুদ্ধ করার সংকল্প আরও দৃঢ় হয়েছিল। সে জানত, সত্যের দিকে এগোলে অনেক কষ্ট হবে, কিন্তু এটি তার মায়ের প্রতি দায়িত্ব।
বিকেলের দিকে, শিখা শহরের একটি পুরনো ক্যাফেতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। এটি ছিল পুরনো বন্ধুদের একত্রিত হওয়ার স্থান। সেখানে অতুলের এক বন্ধুকে সে জানত, যিনি তাদের প্রেমের কাহিনীর কথা জানতেন।
ক্যাফেতে পৌঁছে, শিখা মনে মনে প্রস্তুতি নিল। সে জানতো, সে হয়তো ভয়াবহ কিছু জানতে পারবে, কিন্তু সত্য জানার জন্য তার প্রস্তুতি ছিল। ক্যাফের সেই পুরনো পরিবেশে বসে, সে অতুলের বন্ধুকে দেখতে পেল।
“আশুতোষ?” সে ডাক দিল।
আশুতোষ তার দিকে তাকিয়ে বলল, “শিখা! তুমি? অনেকদিন পর দেখলাম। তুমি কেমন আছ?”
শিখা সংক্ষেপে বলল, “ভালো নেই। আমি কিছু জানতে চাই। অতুলের কথা।”
আশুতোষের মুখের রঙ instant বদলে গেল। “অতুল? কেন? সে তো…”
“আমি জানি, তার সঙ্গে আমার মা প্রেম করেছিল। আমি সত্য জানতে চাই। আমি শুনেছি যে তাদের সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল। তুমি কি জানো?”
আশুতোষের মুখে এক ধরনের চিন্তার ছাপ পড়ল। “ওহ! তুমি বুঝতে পারছো, শিখা। অতুলের জীবন এবং তোমার মায়ের জীবন অনেক অন্ধকারে ঢাকা।”
শিখা অনুভব করল, এখন সে সত্যি সত্যি সত্যের মুখোমুখি হতে চলেছে। সে যেভাবেই হোক, অতুলের এবং তার মায়ের সম্পর্কের সমস্ত গোপনীয়তা জানার চেষ্টা করবে।
“আমি শুনেছি, অতুল কিছু সমস্যায় পড়েছিল। সে তোমার মায়ের জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছিল, কিন্তু বাস্তবে সে ছিল এক ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।” আশুতোষ কথাগুলো বলার পর শিখার মনে একটি শঙ্কার রেখা সৃষ্টি হলো।
“ভয়াবহ পরিস্থিতি? কি ধরনের?” শিখা প্রশ্ন করল।
“এটা খুবই জটিল। অতুলের অতীত ছিল আবদ্ধ। সে নিজেকে এক ধরনের বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। তার আত্মা কি এখনও মুক্ত হয়েছে?” আশুতোষের চোখে এক ধরনের উদ্বেগ দেখা গেল।
শিখা বুঝতে পারল, অতুলের জীবন নিয়ে এটি আরও একটি রহস্য। তার মনে হলো, সত্যকে জানতে হলে তাকে অতুলের জীবনের দিকে আরও গভীরভাবে নজর দিতে হবে।
কিন্তু, এই সমস্ত সত্যের পেছনে তার মায়ের জীবনকে কীভাবে নতুন করে তৈরি করবে সে? শিখা অনুভব করল, একদিকে তিনি ছিলেন তার মায়ের প্রতিচ্ছবি, অন্যদিকে অতুলের অন্ধকার দিকের শিকার।
শিখার মনে হলো, তাকে অতুলের সম্পর্কের সমস্ত দিক জানার চেষ্টা করতে হবে, কারণ এই সত্যই তাকে সঠিক পথ দেখাতে পারে।
এখন, শিখা জানে, সত্য এবং অতীতের অন্ধকারে প্রবাহিত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সে সিদ্ধান্ত নিল, আগামিকাল সে অতুলের অন্য বন্ধুদের কাছে যাবে এবং তাদের কাছে সত্য জানার চেষ্টা করবে।
ছোটদের রূপকথার গল্প - ওলফির জাদু: "ওলফির জাদু" একটি মায়াবী রূপকথার গল্প, যেখানে সাহসী কুকুর ওলফি তার ছোট বোন গ্যাবির রক্ষক হয়ে ওঠে। এই ছোটদের গল্প শিশুদের কল্পনা এবং সাহসিকতার প্রেরণা জোগায়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
আলো এবং অন্ধকারের মধ্যে
শিখা যখন পার্কের এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল, তখন সে জানল যে তার জীবনের শেষ যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহের ক্লান্তি ও যন্ত্রণার পর, আজকের দিনটি তার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। মা, বাবা এবং বিশেষ করে সেই অদৃশ্য “দ্য ওয়াচার”-এর রহস্য আবিষ্কারের পথে সে এখন কেবলমাত্র কয়েকটি পদক্ষেপ দূরে।
“আমি এভাবেই থেমে যেতে পারি না। আমাকে সত্যের সম্মুখীন হতে হবে,” শিখা নিজেকে বলল। সেই পুরনো ঘর, যেটি সে তার মায়ের মৃত্যুর পর থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল, আজ সে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে সে পাবে উত্তর, পাবে তার মায়ের প্রথম প্রেমের রহস্য—একই সাথে পাবে অন্ধকারের মুখোমুখি হওয়ার সাহস।
শিখা নিজেকে প্রস্তুত করল এবং শহরের পুরনো আবাসনে প্রবেশ করল। দরজাটি কষ্ট করে খুলতে হলো, কিন্তু ভিতরে ঢুকতেই অনুভব করল যেন সময় থেমে গেছে। সব কিছু একইরকম ছিল—মায়ের পুরনো ছবিগুলি, প্রিয় বইয়ের সংগ্রহ, এবং সেই একই মিষ্টি গন্ধ যা তার শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। তবে, এক আজব অনুভূতি তার ভেতর লুকিয়ে ছিল।
“দ্য ওয়াচার” বলতে যে দুষ্ট শক্তির কথা বলা হচ্ছে, সেটা কি সত্যিই এখানে আছে? শিখা অন্তরে প্রচণ্ড দোলা অনুভব করল। একে অপরের চেয়ে বুদ্ধিমান হতে, তাকে অবশ্যই প্রথম প্রেমের রহস্য উদঘাটন করতে হবে।
শিখা পাশের ঘরে গেল। সেখানে একটি পুরনো বাক্স ছিল। তার মনে হল, এই বাক্সেই তার মায়ের গোপনীয়তা লুকিয়ে রয়েছে। বাক্সটি খুলতেই ধুলো এবং পুরনো কাগজের গন্ধ তাকে ঘিরে ধরল। কাগজগুলির মধ্যে ছিল তার মায়ের লেখা কিছু চিঠি। শিখা প্রথমে একটির দিকে এগিয়ে গেল।
“প্রিয় অর্ণব,” লেখা ছিল চিঠির শুরুর দিকে। সেই নাম শুনে শিখার হৃদয় স্পন্দিত হলো। অর্ণব—সে “দ্য ওয়াচার”!
চিঠিগুলি পড়তে পড়তে শিখা বুঝতে পারল যে অর্ণবের সাথে তার মায়ের সম্পর্ক ছিল একদম ভিন্ন। তারা শুধু প্রেমে পড়েনি, বরং তাদের সম্পর্কের মধ্যে ছিল একটি অন্ধকার দিক। অর্ণবের কাছে ছিল এক ধরণের শক্তি, যা তার মায়ের জীবনের উপর প্রভাব ফেলেছিল।
“আমি তোমাকে ভয় পাই, অর্ণব। তোমার ক্ষমতা আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি,” চিঠির একটি স্থানে লেখা ছিল। শিখা মনে মনে ভাবল, “এই ক্ষমতা কি ছিল? কেন আমার মা এত দুশ্চিন্তায় ছিলেন?”
চিঠি পড়া শেষে শিখা বেশ কিছু পুরনো ছবিও দেখল। তাতে দেখা যাচ্ছিল মা এবং অর্ণবের আনন্দময় মুহূর্তগুলি। তবে, একাধিক ছবিতে অর্ণবের মুখে এক অদ্ভুত দৃষ্টি ছিল—এক প্রকার নিষ্ঠুরতা, যা তার মায়ের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
শিখার বুকের মধ্যে ভয় এবং ক্ষোভ মিশে যেতে লাগল। “আমি কি তোমার কাছ থেকে পালাতে পারি? নাকি আমি আরেকটি শিকার?” সে মনে মনে ভাবতে লাগল।
শিখা যখন ঘর থেকে বের হল, তখন সে অনুভব করল যে এখানে আর সে একা নেই। সেই দুষ্ট শক্তি, যে তাকে এতদিন আক্রমণ করছিল, যেন তার পিছনে রয়েছে। তার হৃদয় দ্রুত কাজ করতে লাগল। তার লক্ষ্য হলো, অর্ণবকে পরাস্ত করা এবং তার মায়ের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।
বিকেলের সূর্য যখন পশ্চিমে হেলে পড়ছিল, তখন শিখা শহরের এক পুরনো মন্দিরের দিকে রওনা হলো। এই মন্দিরের ইতিহাসের সাথে অর্ণবেরও একটি গোপনীয় সম্পর্ক ছিল। শিখা জানত, এখানেই সেই সমস্ত সত্য লুকিয়ে রয়েছে।
মন্দিরের চত্বরে প্রবেশ করতেই সে একটা রহস্যময় অনুভূতি পেল। এখানে যেন সবকিছু একেবারে থমকে গেছে। মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করলে, অর্ণবের উপস্থিতি অনুভব করল সে। কিন্তু সে যে প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত, তা সে ভালো করেই জানতো।
“আমি জানি তুমি এখানে আছ, অর্ণব,” শিখা জোরালোভাবে বলল। “তুমি আমার মায়ের জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছ। আজ আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, সত্যকে জানার জন্য।”
কিছুক্ষণ পরে, এক অন্ধকার ছায়া বেরিয়ে এল। সেটি অর্ণবের ছায়া ছিল। “তুমি আসবে ভাবিনি, শিখা,” সে হাসল। “তোমার মা খুব দুর্বল ছিল। তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তুমি তার জীবনকে নষ্ট করেছ।”
“না, আমি তোমার ভ্রান্তি গ্রহণ করব না! তুমি তাকে ভোগান্তিতে ফেলেছ। আজ আমি তোমার সব অন্ধকার থেকে মুক্তি চাই,” শিখা দৃঢ়তার সাথে বলল।
“মুক্তি?” অর্ণব হাসল। “তুমি কী জানো? তুমি আমার শক্তির এক অংশ। তুমি চাইলেও আমাকে এড়িয়ে যেতে পারবে না।”
শিখার হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার হল। কিন্তু সে ভয়কে কাটিয়ে উঠল। “আমি তোমার শক্তির কাছে নতি স্বীকার করব না। আমি জানি, সত্যের মধ্যে শক্তি রয়েছে।”
অর্ণব শিখাকে এক অন্ধকার জালে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু শিখার মনে হচ্ছিল, তার মা তার সাথে আছে। সে আগের চিঠিগুলোতে লেখা সব কিছু মনে করল। এই শক্তি, এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সে প্রস্তুত ছিল।
“আমি তোমাকে মুক্তি দেব না!” শিখা বলল, শক্তি নিয়ে।
শিখা অর্ণবের দিকে এগিয়ে গেল। তার মনে হচ্ছিল, তার মায়ের স্মৃতি তার সাহস জোগাচ্ছে। সেই মুহূর্তে, সব কিছু যেন থমকে গেল। অর্ণবের অন্ধকার শক্তি শিখাকে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। কিন্তু শিখা একটিই সিদ্ধান্ত নিল—সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।
“আমি আমার পরিবারের জন্য লড়ব। তুমি আমার মা কে ধ্বংস করতে পারবে না!”
এভাবে, শিখা অন্ধকারের বিরুদ্ধে তার আলো ছড়িয়ে দিল। সবকিছু যেন আবার স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল।
এই অধ্যায়ের শেষে, শিখা বুঝতে পারল যে জীবনের এই যুদ্ধে, সে নিজের পরিচয় খুঁজে পেয়েছে। তার মায়ের গৌরব এবং শক্তির প্রতি সম্মান রেখে, সে অন্ধকারের মোকাবিলা করেছে।
শহরের প্রান্তে দাঁড়িয়ে শিখা জানাল যে, আলো এবং অন্ধকারের মধ্যে সে আজ নতুন শক্তি খুঁজে পেয়েছে।
এই গল্পের শেষ অধ্যায়ে, শিখা বুঝল যে সত্যের সম্মুখীন হতে পারলে, সে অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে পারে। শহরটি আর আগের মতো থাকবে না; শিখা আলোতে বেরিয়ে এসে তার পরিচয় খুঁজে পায়।
এখন তার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে।
এবং তার নতুন অভিযানে, সে তার নতুন পরিচয় নিয়ে ফিরবে।