"মায়াবী বনভূমি" - একটি আকর্ষণীয় ছোটদের গল্প যা রূপকথার গল্পের মতো জাদু ও শিক্ষার সমন্বয়ে ভরা। এলারার ভালোবাসা ও যত্নে জাগ্রত বনভূমি শিশুদের মনে আনন্দ ও বন্ধুত্বের বার্তা ছড়িয়ে দেবে।

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » মায়াবী বনভূমি

মায়াবী বনভূমি

"মায়াবী বনভূমি" - একটি আকর্ষণীয় ছোটদের গল্প যা রূপকথার গল্পের মতো জাদু ও শিক্ষার সমন্বয়ে ভরা। এলারার ভালোবাসা ও যত্নে জাগ্রত বনভূমি শিশুদের মনে আনন্দ ও বন্ধুত্বের বার্তা ছড়িয়ে দেবে।

একদিনের কথা। রোদ ঝলমলে সকাল, আকাশে একটুও মেঘ নেই। পাখিরা যেন গানের ঝরনা ছোটাচ্ছে চারিদিকে, আর বাতাসে মৃদু মৃদু ফুলের গন্ধ। ছোট্ট এলারা সেই সকালে তার চেনা পথে হাঁটতে বেরিয়ে পড়লো। এলারা ছিলো বয়সে ছোট, কিন্তু মনের দিক দিয়ে অনেক বড়ো। সে এতটাই সাহসী আর কৌতূহলী ছিলো যে, কোনো নতুন কিছু দেখলেই তার মন খুঁতখুঁত করতে থাকতো। বন, গাছপালা, পাখি – এসব ছিলো তার খুব প্রিয়। সে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে খুঁজে পেতো, যেন এই বনই তার নিজের একখানি ছোট্ট রাজ্য।

এলারা আজকে তার প্রিয় বনের পথ ধরে হাঁটছে। তার প্রিয় একটি পথ আছে, যেটা দিয়ে প্রায়ই সে যায় এবং গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো আসতে দেখলে তার মন যেন খুশিতে নেচে ওঠে। গাছের ছায়ায় বসে বসে পাখিদের কথা শুনতে খুব ভালো লাগে তার, আর সেখানে বসে নানা রঙের ফুলের ঘ্রাণ নেওয়া যেন তাকে সবসময় নতুন এক আনন্দ দেয়। আজকেও সে সেই পথেই হাঁটছিলো, কিন্তু হঠাৎ কিছু একটা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।

গাছপালার ফাঁক দিয়ে একটু সরু, লুকানো একটা পথ দেখা যাচ্ছে। আগেও কখনো চোখে পড়েনি এই পথটা, কেমন যেন রহস্যময়। এলারার মনে কৌতূহল জাগলো – কোথায় যায় এই পথ? কী আছে ওখানে? এলারার মনে হলো, সে একবার সেই পথে যেতেই পারে। কিছু একটা তাকে ডাকছে, যেন অদৃশ্য এক হাত তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

পথটা বেশ সরু, দু’পাশে লতাপাতায় ঢাকা। এলারা সাবধানে পা ফেলে সামনে এগোতে লাগলো। চারিদিকে গাছেরা যেন কানে কানে গল্প করছে, হাওয়া মৃদু মৃদু সুরে ফিসফিস করে কিছু বলছে। এলারার ছোট ছোট পদক্ষেপে পাতা মচমচ আওয়াজ তুলছে। আর ধীরে ধীরে, পথটি যেন আরও রহস্যময় হয়ে উঠছে।

এভাবেই চলতে চলতে এলারা হঠাৎ একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ালো। এ যেন আর পাঁচটা সাধারণ জায়গা নয়, যেন রূপকথার রাজ্যের একখানি কোণ। আশেপাশে ঝলমলে রঙের ফুলের চাদর বিছানো, ফুলগুলো যেন তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। প্রজাপতিরা সেই ফুলের উপর বসে বসে নিজেদের রঙে সেজে আছে, আর তাদের ডানা যেন সূর্যের আলোয় হীরের মতো ঝিকিমিকি করছে। এলারার চোখে আশ্চর্যের ঝিলিক ফুটে উঠলো। সে এইরকম সুন্দর একটা জায়গা আগে কখনো দেখেনি।

এখানে দাঁড়িয়েই এলারার মনে হলো যেন সে একটা খাঁটি খুশির রাজ্যে চলে এসেছে। সেই গ্লেডে পা রেখে এলারা যেন কোনো স্বপ্নের দুনিয়ায় প্রবেশ করলো, যেখানে প্রতিটা গাছের পাতায়, প্রতিটা ফুলের পাপড়িতে ছড়ানো আছে এক টুকরো জাদু। চারপাশে এমন এক শান্তি যেন, শুধু পাখির গুঞ্জন আর পাখিদের কিচিরমিচির ছাড়া আর কিছু নেই। কিন্তু সেই শান্তির মধ্যেও কিছু একটা তাকে আশ্চর্যভাবে টানছিলো। 

এলারা গ্লেডের ভেতরে আরও একটু হাঁটতে লাগলো। হঠাৎ সে শুনতে পেলো ছোট্ট একটা কাঁদার শব্দ। খুব মৃদু, কিন্তু তার সজাগ কান ঠিকই শব্দটা শুনতে পেলো। এলারা চমকে গেলো – কে কাঁদছে এই জায়গায়? সে তাড়াতাড়ি শব্দের উৎস খুঁজতে লাগলো।

অনেকটা খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে সে এক ছোট্ট পরীর দেখা পেলো, যার নাম লিলা। লিলা পরীটি খুব ছোট্ট, গায়ে একখানি সুন্দর রুপোলি জামা, কিন্তু তার মুখ মলিন। তার রূপোলি ডানাগুলো একটি কাঁটাঝাড়ে আটকে গেছে, আর সে কাঁদতে কাঁদতে সাহায্য চাইছে। এলারার মন ছুঁয়ে গেলো পরীটির কান্না দেখে।

“তুমি কে?” মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো এলারা। “তুমি কাঁদছো কেন?”

লিলা কেঁদে বললো, “আমি লিলা, জাদুর বনের একজন পরী। কিন্তু আমার ডানাগুলো এই কাঁটাঝাড়ে আটকে গেছে, আমি কিছুতেই বেরোতে পারছি না। অনেক চেষ্টা করেও আমি বেরোতে পারছি না, আর এইখানে একা থেকে আমি খুবই ভয় পাচ্ছি।”

এলারা গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখলো পরীটির ডানাগুলোর অবস্থা। খুবই সাবধানে সে তার হাত দিয়ে কাঁটাগুলো সরিয়ে দিলো, যাতে লিলার ডানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ধীরে ধীরে লিলা মুক্ত হলো। তার মুখে তখন প্রশান্তি ফুটে উঠলো।

“তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, এলারা। তুমি না থাকলে হয়তো আমি আর এই সুন্দর বনে উড়তে পারতাম না।” লিলা হাসিমুখে বললো।

এলারার মুখেও হাসি ফুটলো। সে বললো, “এ তো কিছুই নয়, আমি তো শুধু তোমাকে সাহায্য করতে চেয়েছি।”

কিন্তু লিলা তখন বললো, “তোমার এই সাহস আর সাহায্যের জন্য আমি তোমাকে তিনটি ইচ্ছা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। তুমি যা চাও তাই বলো।”

এলারা প্রথমে তো অবাক হয়ে গেলো। তিনটি ইচ্ছা! সে জীবনে কখনো ভাবেনি এমন কিছু পাওয়া সম্ভব। প্রথম ইচ্ছায় সে ভাবলো, পশুপাখিদের সঙ্গে কথা বলতে পারলে মন্দ হতো না। দ্বিতীয় ইচ্ছা, যেন তার কাছে কখনো মিষ্টি শেষ না হয়। আর তৃতীয় ইচ্ছা, একটি সুন্দর ফুলের বাগান, যা সারা বছর ধরে ফুলে ফুলে ভরা থাকবে।

লিলা সেই তিনটি ইচ্ছা পূরণ করলো। এবং বললো, “তোমার এই ইচ্ছাগুলো তোমার জন্যই থাকবে, কিন্তু মনে রেখো, সত্যিকারের সুখ আসে অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া থেকে।”

এলারা সেই কথাটা তখন বিশেষ বোঝেনি, তবে তার মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। এলারা নিজের বাগানের কথা, পশুপাখির সঙ্গে কথা বলার আনন্দ এবং মিষ্টির ভাণ্ডার নিয়ে ভাবতে ভাবতেই লিলার কাছ থেকে বিদায় নিলো। সে গ্লেডের সেই রঙিন ফুল আর ঝিকিমিকি প্রজাপতিরা পেছনে ফেলে তার গ্রামে ফিরলো।

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - চিরন্তন ছোঁয়া: "চিরন্তন ছোঁয়া" – এক হৃদয়ছোঁয়া রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প। কলকাতার প্রেক্ষাপটে মিয়া ও অ্যালেক্সের সৃজনশীলতা ও প্রেমের গল্পে ভালোবাসার গভীরতা ও স্বপ্নপূরণের আবেগে ভরা একটি অনন্য যাত্রা। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

লিলার উদ্ধার

সেই মোহনীয় গ্লেডের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে এলারা কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি করলো। মনে হচ্ছিলো, তার চারপাশের এই ঝলমলে ফুল আর ঝিকিমিকি করা প্রজাপতিরা যেন তাকে কিছু বলছে, যেন এই মোহময়ী জায়গায় কোনও এক রহস্য লুকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই এলারার চোখ পড়লো সামনের দিকে, একটি ঝোপঝাড়ের মধ্যে। একটা ছোট্ট ঝাঁকড়া কাঁটাঝাড়ের নিচে কেমন যেন একটা আলোর ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। 

কৌতূহলভরা চোখে এলারা ধীরে ধীরে সেই দিকে এগিয়ে গেলো। কাছে গিয়ে দেখলো, এক ক্ষুদে পরী কাঁটাঝাড়ের ভেতর আটকে আছে। পরীটির ডানা গুলো কাঁটায় আটকে গেছে, আর সে যন্ত্রণায় কাঁদছে। ক্ষুদে পরীটির মুখে দুঃখের ছাপ, আর তার মুখ থেকে মৃদু কাঁদার শব্দ বেরোচ্ছে। এলারার মনের ভেতর এক অদ্ভুত মায়া জেগে উঠলো। সে ভাবলো, এই পরীকে সাহায্য করতে হবে।

এলারা আস্তে করে কাছে গিয়ে বললো, “তুমি কে? তোমার নাম কী? তুমি কাঁদছো কেন?”

পরীটি চোখ মুছতে মুছতে বললো, “আমার নাম লিলা। আমি এই জাদুর বনের পরী। কিন্তু আজ সকালে উড়তে গিয়ে ভুল করে এই কাঁটাঝাড়ের ভেতর পড়ে গেছি। আমার ডানাগুলো কাঁটায় আটকে গেছে, আর আমি কিছুতেই বেরোতে পারছি না। আমি এখানে আটকে পড়ে খুবই ভয় পাচ্ছি।”

এলারা মনোযোগ দিয়ে লিলার ডানাগুলো দেখলো। কাঁটাগুলো খুবই ধারালো ছিলো, আর তাতে লিলার কোমল রূপোলি ডানাগুলো আঁকড়ে ধরে আছে। এলারা খুব সাবধানে কাঁটাগুলো সরাতে শুরু করলো। একটুও অসাবধান হলে লিলার ডানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত, তাই সে অনেকটা ধৈর্য ধরে আস্তে আস্তে কাজ করলো।

কাঁটাগুলো সরাতে সরাতে এলারা বললো, “লিলা, তুমি চিন্তা করো না। আমি খুব সাবধানে তোমার ডানাগুলো মুক্ত করার চেষ্টা করছি। তুমি ব্যথা পেয়ো না।”

লিলা মৃদু হাসিতে ভরসা দিলো, “তুমি খুব ভালো মনের মেয়ে, এলারা। আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাই।”

একটু একটু করে কাঁটাগুলো এলারার ছোট ছোট হাতে ধীরে ধীরে মুক্ত হয়ে এল। অবশেষে, শেষ কাঁটাটিও সরিয়ে ফেলতেই লিলার ডানাগুলো আবার মুক্ত হয়ে গেলো। মুক্তির আনন্দে লিলা আনন্দে ছোট্ট ছোট্ট ডানাগুলো ঝাপটাতে লাগলো। এলারার চোখেও আনন্দের ঝিলিক ফুটে উঠলো। সে লিলাকে মুক্ত করতে পেরে যেন অদ্ভুত খুশি অনুভব করলো।

লিলা তখন তার ডানাগুলো মেলে উড়ে উঠে বললো, “এলারা, তুমি না থাকলে আমি হয়তো এই জাদুর বনেই আটকে থেকে যেতাম। তুমি সত্যিই অনেক দয়ালু। তোমার এই উপকারের জন্য আমি তোমাকে তিনটি ইচ্ছা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। তুমি যা চাও তাই বলো, আমি তোমার সেই ইচ্ছাগুলো পূরণ করবো।”

এলারা প্রথমে অবাক হয়ে গেলো। তিনটি ইচ্ছা? তার জীবনে কখনও কেউ এমন কোনও অফার দেয়নি। প্রথমে সে কিছু ভাবতে পারছিলো না, কিন্তু একটু ভাবনা করে মনের মধ্যে অনেকগুলো ইচ্ছে এল। কী চাওয়া যায় এমন একটা সুযোগে?

সে বললো, “লিলা, আমার প্রথম ইচ্ছে হলো, আমি যেন সব পশুপাখিদের ভাষা বুঝতে এবং কথা বলতে পারি। আমি সবসময়ই তাদের কথা বুঝতে চাই, তারা কী ভাবে, কী চায়, সেটা জানতেই আমার বেশি ইচ্ছে।”

লিলা হাসিমুখে বললো, “তোমার এই ইচ্ছা পূর্ণ হলো। এখন থেকে তুমি সব পশুপাখির ভাষা বুঝতে পারবে।”

এলারা আনন্দে খিলখিলিয়ে হাসলো। কতবারই তো সে পাখিদের কিচিরমিচির শুনেছে, কিন্তু কখনো তাদের কথা বুঝতে পারেনি। এবার সেই ইচ্ছে পূর্ণ হলো। এবার এলারা আরও দুটি ইচ্ছার কথা ভাবলো।

“আমার দ্বিতীয় ইচ্ছে হলো, আমার কাছে যেন কখনো মিষ্টি শেষ না হয়। আমি মিষ্টি খুব পছন্দ করি, আর আমার বন্ধুদেরও সেই মিষ্টি দিতে চাই।”

লিলা হাসি দিয়ে মাথা নেড়ে বললো, “এটাও পূর্ণ হলো। এখন থেকে তোমার কাছে কখনো মিষ্টি শেষ হবে না।”

এত খুশি হতে লাগলো এলারা যে সে আর একটুও অপেক্ষা করতে পারলো না। এবার সে তার শেষ ইচ্ছার কথা ভাবলো। একটু ভেবে বললো, “আমার তৃতীয় ইচ্ছে হলো, একটা সুন্দর ফুলের বাগান, যা সারা বছর ধরে ফুলে ফুলে ভরা থাকবে।”

লিলা সেই ইচ্ছাটাও পূর্ণ করলো। “এবার তোমার ইচ্ছাগুলো পূর্ণ হলো, এলারা,” লিলা মিষ্টি করে বললো। “কিন্তু মনে রেখো, ইচ্ছাগুলো বড়ো শক্তিশালী। তুমি এগুলোকে শুধু নিজের খুশির জন্য নয়, অন্যদেরও খুশি করতে ব্যবহার করো।”

এলারা খুশিতে চোখ বড় বড় করে বললো, “ধন্যবাদ, লিলা! আমি কথা দিচ্ছি, আমি এই শক্তিগুলো সবার জন্যই কাজে লাগাবো।”

লিলা তার ডানাগুলো মেলে উড়ে চলে গেলো, আর এলারা সেই মোহনীয় গ্লেডে দাঁড়িয়ে তার নতুন ইচ্ছাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলো। তার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত খুশির অনুভূতি, আর তার সামনে এক নতুন রহস্যের দুনিয়া। 

ইচ্ছাগুলোর আনন্দ

লিলার দেওয়া তিনটি ইচ্ছা নিয়ে এলারার জীবন যেন নতুন রূপ পেলো। প্রতিটি দিনই তার কাছে এক নতুন কল্পনার জগৎ হয়ে উঠলো। পশুপাখিদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষমতা, কখনো শেষ না হওয়া মিষ্টির ভান্ডার, আর চিরকালীন ফুলে ভরা বাগান—এই তিনটি ইচ্ছা তার কাছে সত্যি যেন এক আশীর্বাদ। 

সকালে ঘুম থেকে উঠেই এলারা তার বাড়ির বাগানে চলে যায়। সেখানে ফুলের সুবাসে মোড়া সেই বাগান এক মায়াময় দৃশ্য তৈরি করে, যেন পুরো জগৎটাই রূপকথার মতো সাজানো। প্রতিদিন বাগানের নতুন কোন ফুল ফুটছে, কোন পাখি গান গাইছে—এসব দেখে সে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে।

একদিন সকালে বাগানে হাঁটতে হাঁটতে এলারা খেয়াল করলো, একটি ছোট্ট পাখি—রঙে লাল, সবুজ, নীল মিশিয়ে মখমল আবরণে ঢাকা। পাখিটি এক ডালে বসে কিচিরমিচির করছে। এলারা কাছে গিয়ে বললো, “কী হলো, বন্ধু? তুমি তো কিছু বলতে চাচ্ছো, তাই না?”

পাখিটি অবাক হয়ে তাকালো। মানুষ তার ভাষা বুঝছে! তার চোখে আনন্দের ঝিলিক ফুটে উঠলো। সে খুশির স্বরে বললো, “আমার নাম পিকো। তুমি সত্যিই আমার ভাষা বুঝতে পারো! এটা কীভাবে সম্ভব?”

এলারা মৃদু হাসলো। “আমার এক পরী বন্ধু আছে, তার জাদুর জন্যই আমি তোমাদের ভাষা বুঝতে পারি।”

পিকো তখন তার ছোট্ট ঠোঁটটি খুলে এলারার সঙ্গে গল্প করতে শুরু করলো। সে বললো, “আমি এই বনের অনেক দূরের এক পাহাড়ি পাখি। এখানে এসেছি নতুন খাবার খোঁজার জন্য। কিন্তু আমি জানতাম না, এখানে এমন একজন মানুষ আছে, যে আমার ভাষা বুঝবে!”

এলারা পিকোর গল্প শুনে খুব খুশি হলো। সে ভাবলো, এই ইচ্ছাটি সত্যি তার জীবনে কত আনন্দ এনে দিয়েছে। শুধু পিকো নয়, তার বাগানে প্রতিদিনই অনেক নতুন নতুন পাখি আর প্রাণী আসে। কেউ থাকে চঞ্চল, কেউ আবার নিরব, কিন্তু তাদের সবার গল্পে যেন একেকটা রূপকথা জড়ানো থাকে। এলারা তাদের সঙ্গে প্রতিদিন গল্প করে, আর তার দিনগুলো হয়ে ওঠে আরও রঙিন, আরও আনন্দময়।

এরপর এলারা তার দ্বিতীয় ইচ্ছা নিয়ে ভাবলো—অফুরন্ত মিষ্টির ভান্ডার। সে মিষ্টি খুব ভালোবাসে, আর তার মিষ্টির সংগ্রহ সত্যিই কখনো শেষ হয় না। প্রতিদিন সে বাগানের প্রাণীদের সঙ্গে সেই মিষ্টি ভাগাভাগি করে। ছোট্ট খরগোশ, কাঠবিড়ালী, এমনকি একটি ছোট্ট বাদুড়ও মাঝে মাঝে এসে এলারার হাত থেকে মিষ্টি খায়। 

একদিন এলারা তার বন্ধু পিকোকে বললো, “পিকো, তুমি জানো, এই মিষ্টিগুলো কখনো শেষ হবে না। তুমি চাইলে প্রতিদিন আমার সঙ্গে এসে মিষ্টি খেতে পারো।”

পিকো খুশিতে তার ডানা ঝাপটাতে লাগলো। “তুমি সত্যিই ভালো মনের মেয়ে, এলারা। আমি প্রতিদিন আসব তোমার কাছে!”

এলারা প্রতিদিন পিকো আর অন্য প্রাণীদের সঙ্গে মিষ্টি ভাগ করে খায়, আর তারা সবাই একসঙ্গে খেলা করে, গল্প করে। এই ইচ্ছাটি তাকে তার চারপাশের প্রাণীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। 

কিন্তু সবচেয়ে মজার ইচ্ছা ছিলো তৃতীয়টি—চিরকালীন ফুলে ভরা বাগান। বাগানের রঙিন ফুলগুলো যেন সবসময়েই তাজা থাকে, আর একেকটি ফুল যেন একেকটি গল্প বলে। এলারা প্রতিদিন সেই বাগানে সময় কাটায়, আর সে নতুন নতুন ফুলের নামকরণ করে। কখনো সে একটি লাল ফুলের নাম রাখে “রোজা,” আবার কখনো নীল ফুলটির নাম রাখে “নীলা।”

একদিন বাগানে হাঁটতে হাঁটতে এলারা একটি মস্ত বড়ো পেঁচাকে দেখতে পেলো। পেঁচাটি দেখতে যেমন জাঁকজমক, তেমনি তার চোখে ছিল এক গভীর জ্ঞানের আভাস। এলারা তাকে দেখে একটু ভয় পেলো, কিন্তু তারপর তার সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে গেলো।

পেঁচাটি বললো, “তুমি কি সেই মেয়ে, যে পশুপাখিদের ভাষা বুঝতে পারে?”

এলারা মৃদু হেসে মাথা নাড়লো, “হ্যাঁ, আমি এলারা। তুমি কে?”

পেঁচাটি বললো, “আমার নাম ওলডো। আমি এই বনের প্রাচীন এক অভিভাবক। তোমার ইচ্ছাগুলোর কথা শুনে আমি এখানে এসেছি। তোমার ইচ্ছাগুলো যেভাবে তুমি ব্যবহার করছো, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু মনে রেখো, এগুলো শুধু নিজের আনন্দের জন্য নয়, তোমার আশেপাশের জগৎকে আরও সুন্দর করতে হবে।”

এলারা মাথা নাড়লো, “আমি সেটা জানি, ওলডো। আমি কথা দিচ্ছি, আমি এই ইচ্ছাগুলোকে সবসময় সবার জন্য কাজে লাগাবো।”

ওলডো সন্তুষ্টির হাসি দিয়ে বললো, “তাহলে তোমার এই যাত্রা সুখের হোক। তবে একটি কথা মনে রেখো—তোমার সামনে আরও কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। এই ইচ্ছাগুলো তোমার পরীক্ষায় পড়বে, তখন তুমি নিজেকে প্রমাণ করতে পারবে কি না, সেটা সময় বলবে।”

এলারা একটু বিস্মিত হলো। সে জানে না ওলডো কী বলতে চাচ্ছে। কিন্তু সে একটুও ভয় পেলো না। তার মনে অদ্ভুত এক সাহস জাগলো, আর সে প্রস্তুত হলো যে কোনো চ্যালেঞ্জের জন্য।

এদিকে দিনগুলো কেটে যায়, আর এলারার সঙ্গে তার বাগানের বন্ধুদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। প্রতিদিনই সে নতুন কিছু শেখে, নতুন বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করে। একদিন বিকেলে, এলারা দেখলো আকাশে একঝাঁক মেঘ জমে আছে। হঠাৎ করেই প্রবল বৃষ্টি শুরু হলো। সব প্রাণীরা ছুটে এসে এলারার বাগানের বড় গাছটির নিচে আশ্রয় নিলো।

এলারা তাদের সবাইকে দেখে খুশি হয়ে বললো, “বৃষ্টি থামলে আমরা সবাই একসঙ্গে মিষ্টি খাবো আর বাগানের চারপাশে নাচবো।”

প্রাণীরা খুশিতে চিৎকার করে উঠলো, আর সেই বৃষ্টির মধ্যে সবাই একসঙ্গে গল্প করতে লাগলো। এ যেন এক আনন্দময় মুহূর্ত, যেন এই বাগান এক রূপকথার রাজ্য, আর এলারা সেই রাজ্যের ছোট্ট রাণী। 

কিন্তু এলারার মনে তখনো সেই ওলডোর কথা ঘুরছে—“চ্যালেঞ্জ আসবে, আর সেই চ্যালেঞ্জে তাকে প্রমাণ করতে হবে।” 

অবশেষে বৃষ্টি থামলো, আর সবাই মিলে মিষ্টি খেয়ে আনন্দে নাচতে শুরু করলো। কিন্তু এলারার মনে এক অজানা প্রশ্ন রয়ে গেলো—এই চ্যালেঞ্জটা আসলে কী হতে পারে? 

ছোটদের রূপকথার গল্প - ওলফির জাদু: "ওলফির জাদু" একটি মায়াবী রূপকথার গল্প, যেখানে সাহসী কুকুর ওলফি তার ছোট বোন গ্যাবির রক্ষক হয়ে ওঠে। এই ছোটদের গল্প শিশুদের কল্পনা এবং সাহসিকতার প্রেরণা জোগায়। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

ইচ্ছাগুলোর অপ্রত্যাশিত পরিণতি

কিছুদিন ধরে এলারার জাদুকরী ইচ্ছাগুলো তাকে অদ্ভুত আনন্দে ভরিয়ে তুলেছিল। প্রাণীদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষমতা, অফুরন্ত মিষ্টির ভান্ডার, আর চিরকালীন ফুলে ভরা বাগান—এগুলো এলারার জীবনকে মধুর আর রঙিন করে তুলেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সে খেয়াল করতে লাগলো, কিছু একটা যেন ঠিকঠাক চলছে না।

একদিন সকালে, এলারা তার বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছিল। তখনই সে দেখলো যে ছোট্ট কাঠবিড়ালীর দল আর কয়েকটি খরগোশ মাটিতে বসে উত্তেজিতভাবে কিছু একটা নিয়ে ঝগড়া করছে। সামনে এগিয়ে গিয়ে সে দেখলো, তারা সবাই মিষ্টি নিয়ে টানাটানি করছে। মিষ্টির ভান্ডার যদিও অফুরন্ত, তবুও যে যার মতো করে বেশি করে নিতে চায়। কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছে, কেউ আবার অন্যের হাতে থাকা মিষ্টির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। বাগানে আরও পাখি আর প্রাণী এসে তাদের দেখে মিষ্টি খেতে চায়, কিন্তু মিষ্টির আশায় তারা কেমন যেন বিবাদে মেতে উঠছে।

এলারা একটু চিন্তিত হয়ে বললো, “বন্ধুরা, তোমরা কেন এভাবে ঝগড়া করছো? মিষ্টি তো সবার জন্যই আছে, তোমরা ভাগাভাগি করে খাও না।”

কিন্তু প্রাণীগুলো এলারার কথা শুনেও নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বন্ধ করতে পারলো না। প্রত্যেকেই নিজেদেরটা সবার চেয়ে বেশি চাইছে। এলারার মন খারাপ হলো। সে বুঝতে পারলো, মিষ্টির এই অফুরন্ত ভান্ডার হয়তো তাদের মধ্যে এই লোভ বাড়িয়ে তুলছে, যেটা সে কখনোই ভাবেনি।

এই ঘটনার পর এলারা তার ফুলের বাগানে হাঁটতে শুরু করলো। সেখানে গিয়ে সে আবারও দেখতে পেলো এক অদ্ভুত দৃশ্য। তার চিরকালীন ফুলে ভরা বাগানটিতে এখন এত প্রাণী আর পাখি জড়ো হয়েছে যে, সেখানেও যেন এক ধরনের কোলাহল শুরু হয়েছে। ফুলের উপর বসে পাখিরা গান গাইছে, প্রজাপতিরা চারপাশে উড়ছে, কিন্তু বাগানটি এতই জনাকীর্ণ হয়ে গেছে যে, সেখানে আর আগের মতো শান্তি নেই। সব প্রাণীরা নিজেদের মতো করে ফুলের উপর বসতে, খেলে বেড়াতে চাইছে, কিন্তু জায়গা না থাকায় তাদের মধ্যে ঠেলাঠেলি আর বিরক্তি দেখা দিচ্ছে।

এলারা বুঝতে পারলো, তার ইচ্ছাগুলো আনন্দ দিলেও, কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করছে। সে ভাবলো, “এভাবে তো চলতে পারে না। ইচ্ছাগুলোকে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে সবাই শান্তিতে থাকে।”

তখনই সে মনে মনে তার পরী বন্ধু লিলাকে ডাকার সিদ্ধান্ত নিলো। সে মনের গভীর থেকে লিলাকে ডেকে বললো, “লিলা, তুমি কোথায়? তোমার সাহায্য প্রয়োজন।”

কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ছোট্ট আলোর ঝলকানি দিয়ে লিলা উপস্থিত হলো। তার মুখে মিষ্টি হাসি, কিন্তু এলারার মুখের দুশ্চিন্তা দেখে সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এলারা, তোমার কী হয়েছে? তুমি কি খুশি নও?”

এলারা গভীর শ্বাস নিয়ে বললো, “লিলা, তুমি আমার ইচ্ছাগুলো পূরণ করেছিলে, আর সত্যিই আমি খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমি দেখছি, এই ইচ্ছাগুলো সবাইকে শান্তি দিতে পারছে না। মিষ্টির ভান্ডার নিয়ে সবাই ঝগড়া করছে, আর বাগানে এত ভিড় হয়ে গেছে যে শান্তি নেই। আমি বুঝতে পারছি, আমার ইচ্ছাগুলো কিছুটা অপ্রত্যাশিত সমস্যার সৃষ্টি করছে।”

লিলা মাথা নাড়লো, তার চোখে গভীর মায়ার আভা ফুটে উঠলো। সে বললো, “তুমি খুব ভালো মনের মেয়ে, এলারা। তাই এই সমস্যাগুলো তোমার খারাপ লাগছে। ইচ্ছাগুলোর জন্য এই ধরনের ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটেই থাকে। কিন্তু তুমি চাইলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব।”

এলারা একটু চিন্তিত মুখে জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু কীভাবে? আমি চাই না যে কেউ কষ্ট পাক বা ঝগড়া করুক।”

লিলা মৃদু হাসলো এবং বললো, “তোমার জন্য আমি একটি বিশেষ সমাধান নিয়ে এসেছি। যদি তুমি চাও, তাহলে আমি এই ইচ্ছাগুলোর শক্তি কিছুটা কমিয়ে দিতে পারি, যাতে এই মিষ্টির ভান্ডার শুধু নির্দিষ্ট সময়েই খুলবে, আর বাগানটিও শুধু নির্দিষ্ট প্রাণীর জন্যই বরাদ্দ থাকবে।”

এলারা কিছুক্ষণ ভেবে বললো, “হ্যাঁ, এটা বেশ ভালো সমাধান হতে পারে। তাহলে সবার মধ্যে লোভ কমে যাবে, আর তারা শান্তিতে থাকতে পারবে।”

লিলা তার ছোট্ট জাদুকরী ছড়ি তুলে বললো, “তাহলে প্রস্তুত হও, এলারা। আমি তোমার ইচ্ছাগুলোকে একটু পরিমিতভাবে ঠিক করে দিচ্ছি।”

এলারা চোখ বন্ধ করলো, আর কিছুক্ষণ পরেই সে অনুভব করলো যেন বাগানে এক শান্তির বাতাস বইছে। মিষ্টির ভান্ডার এখন দিনে শুধুমাত্র দু’বার খুলবে, আর বাগানে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট প্রাণীরা আসবে। এই নতুন পরিবর্তনে বাগানটি আবার আগের মতো শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠলো। 

এবার এলারা তার প্রাণী বন্ধুদের কাছে গিয়ে তাদের নতুন নিয়মগুলো জানালো। সে বললো, “বন্ধুরা, এখন থেকে মিষ্টি এবং বাগানে থাকার নিয়মে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমরা সবাই মিলে এই নিয়ম মেনে চললে এখানে আরও ভালো সময় কাটাতে পারবো।”

প্রাণীরা খুশিতে চিৎকার করে উঠলো। তারা বুঝলো যে এলারা তাদের ভালো চায়, আর তারা সবাই মিলেমিশে থাকতে শিখলো।

এলারা আর লিলা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো। এলারা ভাবলো, “আমার ইচ্ছাগুলো আসলে সমস্যাও সমাধান করতে পারে, যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়।”

লিলা এবার বিদায় নিতে প্রস্তুত হলো, কিন্তু বিদায়ের আগে সে বললো, “এলারা, মনে রেখো, ইচ্ছাগুলো আমাদের জীবনকে সুন্দর করতে পারে, কিন্তু তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হয়। আর হ্যাঁ, সামনে তোমার আরেকটি চমক অপেক্ষা করছে।”

এলারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আরও চমক? তা কী?”

লিলা মুচকি হেসে বললো, “সেটা তোমাকে পরে জানাবো। এখন তোমার এই নতুন বাগানে তোমার দিনগুলো যেন সুন্দর কাটে, সেই আশীর্বাদ রইলো।”

এলারা খুশি মন নিয়ে তার বাগানে ফিরে গেলো। সে তার প্রাণী বন্ধুদের সঙ্গে কথা বললো, মিষ্টি ভাগ করে দিলো, আর চিরকালীন ফুলের বাগানে আনন্দে সময় কাটাতে লাগলো। 

কিন্তু তার মনের মধ্যে তখনও একটি কৌতূহল রয়ে গেলো—লিলার সেই “চমক”টা আসলে কী হতে পারে? 

লিলার পরামর্শ

অলৌকিক বাগান এবং অফুরন্ত মিষ্টির ভান্ডার নিয়ে এলারা আপাতত শান্তিতে থাকলেও, কোথাও যেন তার মনে একটা খটকা থেকেই গিয়েছিল। প্রাণীদের নিয়ে নতুন নিয়ম করার পর কিছুটা সমস্যার সমাধান হয়েছিল ঠিকই, তবুও কোথাও যেন পুরোপুরি আনন্দ আসছিল না। বাগানের রঙিন পাখি আর ফুলের সৌন্দর্য থাকলেও, এলারা অনুভব করছিল যে সেই প্রথম দিনগুলোর আনন্দ যেন কমে এসেছে। তার মনে তখন ঘুরপাক খাচ্ছিলো একটাই প্রশ্ন—এমন ইচ্ছাগুলো আদৌ কি তাকে সুখী করছে?

একদিন গভীর রাতে, যখন চারপাশের সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে, এলারা তার বাগানের বড় গাছটার নীচে বসে পড়লো। মৃদু চাঁদের আলোয় বাগানটা মায়াময় হয়ে উঠেছিল। এলারা সেদিকে তাকিয়ে, মনের মধ্যে যেন কোনো গভীর চিন্তার রাজ্যে হারিয়ে গেলো। তখনই তার মনে হলো, আবার একবার লিলার সাথে কথা বলা দরকার। 

মনে মনে লিলাকে ডাকার কিছুক্ষণ পরেই আলো ঝলমলে করে, হালকা বাতাসের সাথে একদমই চুপিসারে এসে হাজির হলো তার ছোট্ট পরী বন্ধু, লিলা। হাসিমুখে সে এলারার পাশে বসে বললো, “কী হলো এলারা? তুমি এত চিন্তিত কেন?”

এলারা গভীরভাবে শ্বাস নিলো এবং বললো, “লিলা, তুমি আমাকে তিনটি অসাধারণ ইচ্ছা পূরণের ক্ষমতা দিয়েছিলে। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এই ইচ্ছাগুলো আমাকে সত্যিকারের সুখ দিচ্ছে না। প্রাণীদের নিয়ে ঝামেলা, মিষ্টি নিয়ে লোভ… সব মিলিয়ে আমার মনে হচ্ছে, আমি কোথাও ভুল করেছি।”

লিলা মৃদু হাসলো, যেন সে আগে থেকেই সব কিছু জানতো। সে বললো, “তুমি ঠিকই বলেছো, এলারা। ইচ্ছা পূরণে আনন্দ পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু সেটা কি দীর্ঘস্থায়ী সুখ এনে দেয়? আসল সুখ তো আসে আমাদের আশেপাশের সকলের প্রতি যত্ন এবং ভালোবাসা থেকে।”

এলারা গভীরভাবে লিলার কথা শুনতে লাগলো। তার মনে হচ্ছিলো, এই কথাগুলো যেন তার হৃদয়ের গভীরে দাগ কেটে যাচ্ছে।

“তুমি যদি সত্যিই সুখী হতে চাও, তবে তোমার আশেপাশের প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা এবং যত্ন দেখাও,” লিলা বললো। “তাদের শুধু মিষ্টি দিয়ে সন্তুষ্ট করতে হবে না, তাদের সঙ্গে সময় কাটাও, তাদের আনন্দ দাও। যেটা একদিন তোমার ইচ্ছার আনন্দ হিসেবে শুরু হয়েছিল, এখন সেটাকে নিজের ভালোবাসার দ্বারা পূর্ণ করে তোলার চেষ্টা করো।”

এলারা ভাবলো, এই কথাগুলো সত্যিই গভীর। তার ইচ্ছাগুলো দিয়ে সে নিজে খুশি থাকলেও, সে যদি সেগুলোকে সবার জন্য ভালোবাসা এবং যত্ন দিয়ে পূর্ণ করতে পারে, তবেই তার বাগান আবার আগের মতো আনন্দে ভরে উঠবে। সে সিদ্ধান্ত নিলো, এবার সে নিজের ইচ্ছাগুলোকে অন্যদের সেবার জন্য কাজে লাগাবে।

পরদিন সকালে এলারা তার বাগানে গিয়ে প্রাণীদের সবাইকে একত্রে ডাকলো। সে বললো, “বন্ধুরা, আমি চাই তোমাদের সঙ্গে সময় কাটাতে এবং আমাদের এই বাগানকে সত্যিকারের সুখের জায়গা বানাতে। আজ থেকে আমরা সবাই মিলে একে অপরের জন্য ভালোবাসা ও যত্ন দিয়ে এই বাগানকে সুন্দর করে তুলবো।”

প্রাণীগুলো এই কথাগুলো শুনে খুশিতে আনন্দে নাচতে শুরু করলো। তারা বুঝলো, এলারার মনে তাদের প্রতি সত্যিকারের যত্ন আছে।

এলারা এরপর তাদের জন্য মিষ্টির ভান্ডার খুললো, কিন্তু এবার সে নিজে হাতে সবাইকে ছোট ছোট ভাগে মিষ্টি দিলো। প্রাণীরাও খুশি মনে তার দেওয়া মিষ্টি নিয়ে খেতে লাগলো, আর কেউই এখন ঝগড়া বা লোভ দেখালো না। এবার সত্যিই মনে হচ্ছিল, এই মিষ্টি ভাগ করে খাওয়া এবং একসঙ্গে থাকার মধুর আনন্দে বাগানটি যেন পূর্ণ হয়ে উঠলো।

তাদের মাঝে সুখ আর শান্তির এই পরিবেশ দেখে এলারার মন অনেকটা হালকা হলো। সে অনুভব করলো যে, তার মনের মধ্যে এক ধরনের ভালোবাসা ফুটে উঠছে, যা আগে কখনো ছিল না। 

তবে এই নতুন উপলব্ধির মাঝে এলারা হঠাৎ খেয়াল করলো যে লিলা কোথাও নেই। তার মনে হল, হয়তো লিলা আবার কোথাও নতুন কোনো মেয়ের ইচ্ছে পূরণ করতে বেরিয়ে গেছে। 

তবুও এলারার মনে ছিল অদ্ভুত এক কৌতূহল। লিলা তাকে আরেকটি বিশেষ চমকের কথা বলেছিল। সেই চমকটা কী হতে পারে?

শেষ ইচ্ছা এবং শান্তির সৃষ্টি

সূর্যের আলো মিষ্টি করে বাগানের প্রতিটি কোণকে ছুঁয়ে ছিলো। হালকা বাতাসে গাছের পাতা দুলছিল, পাখিরা খুশিতে গান গাইছিল, আর চারপাশটা যেন আরও জাদুময় হয়ে উঠেছিল। এলারা জানতো যে তার শেষ ইচ্ছাটির জন্য এখন সময় এসেছে, এবং তার হৃদয় এই শেষ ইচ্ছার জন্য বিশেষ কিছু করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল।

সে আবার একবার লিলার কাছে গেলো, এইবার আরও একান্ত এবং শান্ত মনে। লিলা তার ছোট্ট ডানা নেড়ে এসে উপস্থিত হলো, তার চোখে যেন অদ্ভুত এক ভালোলাগার ঝলক। সে বললো, “এলারা, এই শেষ ইচ্ছাটি কী হতে চলেছে?”

এলারা কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবলো, তারপর বললো, “আমি চাই একটি এমন জায়গা তৈরি করতে, যেখানে সকল প্রাণী, বড় ছোট, রঙিন নির্ধন, সকলেই একসঙ্গে শান্তিতে এবং আনন্দে থাকতে পারে। আমি চাই এমন একটি স্থান, যেখানে সবাই মিলে গল্প বলবে, হাসবে, খেলবে—আর কোনো ঝগড়া থাকবে না।”

লিলা মৃদু হাসলো, যেন তার প্রিয় শিক্ষার্থীর মধ্যে এমন গভীর শুভচিন্তা দেখে সে খুবই আনন্দিত হয়েছে। “তোমার ইচ্ছাটি সত্যিই সুন্দর, এলারা,” সে বললো। “তুমি যদি এতটাই উদার মনোভাব নিয়ে কিছু চাও, তাহলে অবশ্যই আমি তা পূরণ করবো।”

এই বলে লিলা তার ছড়ানো ডানা থেকে এক রঙিন আলো মেলে ধরলো, আর সেই আলো ধীরে ধীরে বাগানের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো। এলারা অবাক হয়ে দেখলো যে, তার চারপাশের সমস্ত স্থান এক অপূর্ব আলোয় ভরে উঠেছে। সেই আলোর ছোঁয়ায় গাছগুলো যেন আরও সবুজ হয়ে উঠলো, ফুলগুলো আরও উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠলো, আর পাখিরা যেন আরও মিষ্টি সুরে গান গাইতে লাগলো।

তারপর হঠাৎ করে, একটা বড় নরম ঘাসের গালিচা বাগানের মাঝখানে তৈরি হয়ে গেলো। ঘাসের উপর ছোট ছোট মঞ্চ, আর রঙিন ফড়িং ও পাখিদের বসার জন্য ছোট ছোট আসনও তৈরি হলো। এক পাশে বাচ্চাদের খেলার জন্য নরম ফুলের গাছ লাগানো হলো, অন্যদিকে বড় বড় গাছের নিচে একটা আরামদায়ক বিশ্রামঘর বানানো হলো, যেখানে সব প্রাণীরা একত্রিত হয়ে গল্প করতে পারে।

এই সমস্ত কিছু দেখে, বাগানের সমস্ত প্রাণীই খুশিতে চিৎকার করে উঠলো। খরগোশ, কাঠবিড়ালি, পাখি, প্রজাপতি, এমনকি ছোট ছোট পোকামাকড়রাও আনন্দে মেতে উঠলো। তারা সবাই এলারার চারপাশে জড়ো হলো, এবং তাকে আনন্দ আর কৃতজ্ঞতায় ভরিয়ে দিলো। তাদের মধ্যে এমন এক আনন্দ ও শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হলো, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

কিছুক্ষণ পর, বাগানের প্রাণীরা একসঙ্গে মিলে খেলা শুরু করলো। তারা নতুন তৈরি সেই মঞ্চে উঠে গান গাইলো, কৌতুক বললো, আর ছোট ছোট প্রজাপতিরা নাচ দেখালো। বাচ্চা পাখিরা গান গাইলো, আর ছোট্ট কাঠবিড়ালির দল সবাইকে একটা গল্প শুনালো। এলারা সেখানেই বসে প্রাণভরে হাসছিলো এবং তার সৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করছিলো।

তবে, সবকিছুর মাঝেও এলারার মনে কিছু প্রশ্ন ছিল। সে ভাবছিলো, এই ইচ্ছার পর লিলা তাকে কি আর দেখা দেবে না? এই বাগানের সঙ্গী হিসেবে কি তাকে আর দেখা যাবে না? এসব ভাবতে ভাবতেই তার মনে হলো, লিলাকে আবার ডেকে কিছু কথা বলে রাখা প্রয়োজন।

এই কথা ভেবেই, এলারা আবার লিলাকে ডাকার চেষ্টা করলো। কিছুক্ষণ পরেই, লিলার ছোট্ট রূপটা আবারও আলোয় ঝলমল করে এলারার সামনে এসে হাজির হলো। 

এবারে এলারা বললো, “লিলা, আমার ইচ্ছাগুলো পূর্ণ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তুমি কি আমায় ছেড়ে চলে যাবে?”

লিলা তার হাতে হালকা স্পর্শ করে মৃদু হাসলো এবং বললো, “তুমি যখনই আমাকে ডাকবে, আমি ঠিক তখনই আসবো, কারণ তোমার ইচ্ছাগুলো আর শুধু তোমার নয়, এগুলো এখন এই বাগানের প্রতিটি প্রাণীর সঙ্গে জড়িত। ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে তুমি এই বাগানটিকে সুন্দর করে তুলেছো, আর এটাই তো আমাদের বন্ধুত্বের সত্যিকার অর্থ।”

এলারা তার কথাগুলো শুনে বুঝলো, আসলেই তাদের বন্ধুত্ব চিরকাল থাকবে, এবং এই বন্ধুত্বের মাঝে নতুন ইচ্ছাগুলোর শক্তি সবসময়ই তাকে আনন্দ ও সাহস যোগাবে। 

এই মধুর বন্ধুত্ব আর শান্তির পরিবেশের মাঝে বাগানের প্রাণীগুলো যেন আরও বেশি মেতে উঠলো, আনন্দের রং যেন এক অদ্ভুত সুখের অনুভূতিতে সবাইকে জড়িয়ে রাখলো।

এলারা জানতো যে, এই গল্পের শেষ এখনও আসেনি। কিন্তু এই শান্তিময় পরিবেশের জন্য সবার মুখে খুশির ছাপ দেখে তার মন ভরে গিয়েছিল। সে বুঝতে পারলো, এই শান্তি আর ভালোবাসার স্রোত বয়ে চলুক এই বাগানে, তার জন্য সে বাকি জীবন চেষ্টা করবে।

অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - আত্মবিশ্বাসের গল্প: "আত্মবিশ্বাসের গল্প" - একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে লিলির শিল্পপ্রীতি ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন পূরণের পথে আত্মবিশ্বাসের উত্থান দেখানো হয়েছে। আশা ও অদম্যতার গল্প। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

বনরক্ষী এলারা

একদিনের মধ্যে বনের পরিবেশটা যেন আরও বেশি জাদুময় হয়ে উঠলো। প্রতিটি গাছের পাতায়, ফুলের গন্ধে, আর বাতাসে যেন এক মিষ্টি সুখের ছোঁয়া মিশে গেলো। পাখিরা যেন আরও সুরেলা সুরে গান গাইতে লাগলো, আর ছোট ছোট প্রাণীগুলো আনন্দে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলো। সবুজ গাছপালার মাঝে বেজে উঠল মৃদু মৃদু সুর, আর সেই সুরের সঙ্গে মিলিয়ে গাছের পাতা নেচে উঠলো।

এলারা এখন বনের নতুন রক্ষক হিসেবে পরিচিত। তার সাহসিকতা, ভালোবাসা, আর যত্নের স্পর্শে বনটি নতুন রূপ পেলো। সবার চোখে তার জন্য ছিল অসীম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। সকলে জানতো, এলারার উপস্থিতিতে তাদের কোনো বিপদ নেই।

বনের প্রাণীরা তাকে একবারও ছাড়তে চাইতো না। প্রতিদিন সকালে তার চারপাশে জড়ো হয়ে তারা তাকে সব ধরনের গল্প শোনাতো। কেউ হাসির গল্প বলতো, কেউ তার মজার অভিজ্ঞতা শোনাতো, আর কেউ বা নতুন কোনো কৌতুক শোনাতো। এলারা হাসিমুখে তাদের সব গল্প শুনতো, আর তার চোখে ভরে উঠতো এক অদ্ভুত আনন্দের ঝিলিক। 

একদিন এলারা একটি বড় গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলো। তখনই তার কাছে এলো তার পুরনো সঙ্গী লিলা, সেই ছোট্ট ফড়িং। লিলা উড়ে এলারার কাঁধে বসলো এবং বললো, “এলারা, তুমি জানো, এই বনের জন্য তুমি কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছো?”

এলারা মৃদু হাসলো এবং বললো, “এটা কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ, লিলা? আমি তো শুধু চেয়েছি সবাই যেন এখানে সুখে থাকে।”

লিলা বললো, “হ্যাঁ, তুমিই এই বনকে রক্ষা করছো আর তার প্রাণীদের আনন্দময় পরিবেশ দিচ্ছো। তোমার ভালোবাসা আর যত্নেই তো বনটি তার আসল রূপ ফিরে পেয়েছে।”

এই কথাগুলো শুনে এলারার মন ভরে উঠলো। সে বুঝতে পারলো যে, প্রকৃত সুখ কেবল নিজের জন্য কিছু করা নয়, বরং অন্যের জন্য কিছু করে তার আনন্দ ভাগাভাগি করাতেই প্রকৃত সুখ খুঁজে পাওয়া যায়। 

এলারা নিজের মনেই প্রতিজ্ঞা করলো, যে জীবনে যত কঠিন পরিস্থিতিই আসুক, সে কখনও এই শিক্ষা ভুলবে না—সবার জন্য ভালোবাসা আর যত্নই প্রকৃত সুখের রহস্য।

এরপর থেকে এলারা আরও বেশি করে বনের যত্ন নিতে লাগলো। সে সকালে ঘুম থেকে উঠেই বনের প্রাণীদের খোঁজ নিতো, দেখতো কারোর কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না। কোনো গাছ যদি অসুস্থ দেখতো, তবে সে তার যত্ন করে তাকে সুস্থ করে তুলতো। পাখির বাসা যদি কোনো কারণে পড়ে যেতো, সে তা আবার ঠিক করে দিতো। তার এই কাজে বনের সকল প্রাণীই খুশি ছিলো, আর সবাই একত্রে এই জাদুময় বনে সুখে বাস করছিলো।

একদিন বনের প্রাণীরা মিলে ঠিক করলো, তারা এলারার জন্য কিছু করবে। সকলে একত্রে মিলে তার জন্য একটি ছোট্ট মঞ্চ তৈরি করলো, যেখানে তারা নাচগান এবং নাটক করে তাকে আনন্দ দেবে। সন্ধ্যায় সবাই মিলে মঞ্চে এসে এক চমৎকার অনুষ্ঠান করলো, যা দেখে এলারার চোখে জল এসে গেলো। সে বুঝতে পারলো, এই বনটাই এখন তার ঘর, আর এই সব প্রাণীরা তার পরিবার।

বনের সমস্ত প্রাণীরা তখন একসঙ্গে বললো, “এলারা, তুমি আমাদের কাছে শুধু রক্ষক নও, তুমি আমাদের মনের কাছের বন্ধু। তোমার ভালোবাসা আর যত্নে এই বন সবসময় সুখে থাকবে। তুমি চিরকাল আমাদের কাছে থাকবে, তাই না?”

এলারা সবার কথা শুনে আবেগে ভেসে গেলো। তার মনে হলো, এটাই তার জীবনের সেরা মুহূর্ত। সে বললো, “হ্যাঁ, আমি চিরকাল এই বনের সঙ্গে থাকবো, তোমাদের সঙ্গে থাকবো। তোমাদের আনন্দই আমার আনন্দ, তোমাদের সুখেই আমার সুখ।”

সেই রাতের অনুষ্ঠান শেষে, সকল প্রাণী যখন ফিরে যাচ্ছিলো, তারা প্রতিজ্ঞা করলো যে, তারা সবাই মিলে এলারার দেখানো পথে এই বনের সুখ এবং শান্তি রক্ষা করবে। তারা জানতো, এলারার ভালোবাসার জন্যই আজ বনটি এত সুন্দর এবং আনন্দময় হয়ে উঠেছে।

এভাবে এলারা বনের রক্ষক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করতে থাকলো। বনের সব গাছপালা, ফুলফল, এবং প্রাণীরাই তাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ভরে রাখলো। বনের রক্ষক হিসেবে সে কখনোই অন্যদের জন্য যত্ন আর ভালোবাসা দিতে ভুললো না, আর সেই ভালোবাসায় সে নিজেও খুঁজে পেলো এক অদ্ভুত শান্তি।

এভাবেই এলারার জীবন বয়ে চললো। সে বনের সব প্রাণীর সঙ্গে হাসি-খুশিতে, আনন্দে দিন কাটালো। 

এভাবেই এলারার সুন্দর ও সুখময় জীবন চলতে থাকলো। তার গল্প এখানেই শেষ হলো, কিন্তু বনের মায়াবী পরিবেশে তার ভালোবাসা আর শান্তির ছোঁয়া চিরকাল রয়ে গেলো।

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

মৃত্যুর হাসি

"মৃত্যুর হাসি" একটি রহস্যময় ভুতের গল্প যেখানে দুই ভাইবোনের সাহস, মায়ের আত্মার আশীর্বাদ, ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই আপনাকে টানবে। পড়ুন এই বাংলা ছোট গল্প, যা ভয় ও আবেগে ভরা।

"মৃত্যুর হাসি" একটি রহস্যময় ভুতের গল্প যেখানে দুই ভাইবোনের সাহস, মায়ের আত্মার আশীর্বাদ, ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই আপনাকে টানবে। পড়ুন এই বাংলা ছোট গল্প, যা ভয় ও আবেগে ভরা।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: মৃত্যুর হাসি

অন্তিম সন্ধ্যা

"অন্তিম সন্ধ্যা" একটি রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প, যেখানে এক তরুণীর মৃত্যু, তার পরিবার, এবং শহরের অন্ধকারে লুকানো সত্যের খোঁজে উত্তেজনা ও মর্মস্পর্শী মুহূর্তের বুনন।

"অন্তিম সন্ধ্যা" একটি রহস্য রোমাঞ্চ বাংলা ছোট গল্প, যেখানে এক তরুণীর মৃত্যু, তার পরিবার, এবং শহরের অন্ধকারে লুকানো সত্যের খোঁজে উত্তেজনা ও মর্মস্পর্শী মুহূর্তের বুনন।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অন্তিম সন্ধ্যা

স্বপ্নের সাথী

"স্বপ্নের সাথী" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে প্রেমের জটিলতা, বিচ্ছেদ ও পুনর্মিলন খুঁজে পাওয়া যায়। হৃদয়স্পর্শী সম্পর্কের গভীরতা ও নতুন সূচনার গল্প।

"স্বপ্নের সাথী" একটি রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প, যেখানে প্রেমের জটিলতা, বিচ্ছেদ ও পুনর্মিলন খুঁজে পাওয়া যায়। হৃদয়স্পর্শী সম্পর্কের গভীরতা ও নতুন সূচনার গল্প।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: স্বপ্নের সাথী

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!