রচনা - সুজাতা বিশ্বাস || গল্পপাঠে - স্বরূপা রায় চৌধুরী, সুমিত বিশ্বাস, সোমেন চ্যাটার্জী, নুপুর রায়, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, দীপান্বিতা বোস, প্রীতম গুহ, প্রেমাংশু দত্ত || শব্দ গ্রহণ, সম্পাদনা এবং আবহ - বিশ্বজিৎ বিশ্বাস || রেকর্ডিং স্টুডিও – কাহানী স্টুডিও'জ
বাংলা ভুতের রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
“গুড মর্নিং স্যার!”
“মর্নিং…”
“রৌনক স্যার… আপনাকে বড় সাহেব খুঁজছিলেন। ওনার কেবিনে গিয়ে একবার দেখা করুন।”
“আচ্ছা। যাচ্ছি একটু পরে…”
আজ অফিসে ঢুকতে না ঢুকতেই বসের ঘরে ডাক পড়ল রৌনকের। সাতসকালে আচমকা তলবে একটু অবাকই হয়ে গেল রৌনক। রৌনক মনে মনে বলতে লাগলো, “গতকাল তো অফিস ছুটির আগে আগামী প্রেজেন্টেশন নিয়ে আলোচনা কমপ্লিট। তাহলে… আজ সকাল সকাল তলব? ব্যাপারটা কি! (দীর্ঘশ্বাস) দেখি গিয়ে কি হল আবার!”
ড্রয়ারে ব্যাগ রেখে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বসের ঘরে গিয়ে ঢুকল রৌনক।
“মে আই কাম ইন স্যার?
“ও ইয়া, প্লিজ সিটডাউন। এই নাও ধর।”
“এই খামে কি আছে স্যার?”
“ট্রান্সফার লেটার। আরে এতো ঘাবড়ানোর কিছু নেই রৌনক। তুমি তো জানোই আমাদের নতুন ব্রাঞ্চ খোলা হচ্ছে লখনৌতে। আর তুমি সেখানে নিউ প্রজেক্ট ইন-চার্জ হিসেবে জয়েন করছ। কংগ্রাচুলেশন্স… নেক্সট উইক –এই তোমাকে রওনা দিতে হবে।”
“কিন্তু স্যার, এতো দূর…. মানে… কাছাকাছি কোথাও দিলে হত না স্যার.”
“তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ রৌনক, এই কোম্পানি তে জয়েন করার সময় একটা এগ্রিমেন্ট সাইন করেছিলে। তাতে অনেকগুলো কন্ডিশন- এর মধ্যে একটা কন্ডিশন-এ লেখা ছিল, “কোম্পানি তোমায় যেখানে পাঠাবে, তুমি সেখানে যেতে বাধ্য। (শান্ত হয়ে) যাই হোক, নেক্সট ২-৩ দিনের মধ্যে তোমার জার্নি-র টিকিট আর পেপার ডিটেলস পেয়ে যাবে। লখনৌতে তোমার জন্য হোটেল বুক করা হয়েছে, তবে সপ্তাহখানেকের জন্য। তার মধ্যে একটা থাকার জায়গা খুঁজে নিও, কোম্পানি তার সমস্ত খরচ বেয়ার করবে। তো…. (ব্যাঙ্গ সুরে) যাও আজ থেকেই ব্যাগ গোছানো শুরু করে দাও।
বাংলা ছোট গল্প - শেষ আলো: "শেষ আলো" একটি রহস্যময় বাংলা ছোট গল্প যেখানে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন, ধ্বংসের ছায়া ও জীবনের সংগ্রাম ফুটে উঠেছে। ভুতের গল্পের মিশ্রণে গল্পটি পাঠককে ভাবাবে জীবনের নতুন দিশা নিয়ে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
রৌনক বিষন্ন মনে ওকে স্যার বলে বেরিয়ে গেল।
রৌনক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। একটি বড় মাপের কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে চাকরি করে। ঝিমলির সঙ্গে মাত্র ছ মাস হল বিয়ে হয়েছে। মা, বাবা আর ঝিমলিকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। রাতে ডিনার টেবিলে বদলির কথা জানাতে স্বভাবতই সবার মন খারাপ হয়। কিন্তু উপায় নেই, যেতে তো তাকে হবেই। ঝিমলি মুখ নীচু করে ডিনার প্লেটে আঁকিবুঁকি কাটতে থাকে। নিজের অবস্থান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। শেষে মুখ ফুটে বলেই ফেলে—
ঝিমলি – তোমার কোম্পানি, ফ্যামিলি অ্যালাও করবে নিশ্চই?
রৌনক – হ্যাঁ? (বাকি কথা বলতে পারে না।)
মা (রৌনক) – আরে অ্যালাও না করলে করিয়ে নিতে হবে। বাবু ওখানে একা কি করে থাকবে? বাবু তুই কথা বল অফিসে। ঝিমলিও যাবে তোর সঙ্গে।
রৌনক – আচ্ছা মা। আমি কালই কথা বলব অফিস – এ। যদি অ্যালাও করে তবে প্রথমে আমি একাই যাব। কোম্পানি তো সপ্তাহখানেকের জন্য হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেছে। তার মধ্যে থাকার জায়গা খুঁজে নিতে হবে। আগে ওখানে গিয়ে পরিস্থিতি বুঝে, বাড়ি খুঁজে তারপর ঝিমলিকে নিয়ে যাব।
মা (রৌনক) – হ্যাঁ, হ্যাঁ সেই ভালো।
সবারই মনে ধরল কথাটা। নতুন শহরে দুজনের সংসার, কল্পনা করে ঝিমলি মনেমনে খুব খুশিই হল।
লখনৌ পৌঁছে কলিগদের পরামর্শমত দালালের মাধ্যমে নিজেদের থাকার জন্য একটি বাড়ি খুঁজে পায় রৌনক। বেশ বড়সড় একটা দোতলা বাড়ি, অনেকটা পুরোনো দিনের হাভেলী টাইপের। লোহার বড় গেট, বাড়িটার সামনের অংশে অনেকখানি খোলা চত্বর। দামী পাথর দিয়ে বাঁধানো। গেট থেকে হাভেলীর সিঁড়ি পর্যন্ত পাথর বাঁধানো রাস্তার ধার দিয়ে রঙিন নুড়ি পাথর বিছানো। চত্বরের ঠিক মাঝখানে ছোট একটি পরিখা। তার মাঝে শ্বেত পাথরের একটা পরী। কোন এককালে হয়ত এখানে ফোয়ারা ছিল। বাড়ির চারিদিকে বেশ উঁচু পাঁচিল ঘেরা। কয়েকধাপ সিঁড়ি দিয়ে উঠে মোটা থামওয়ালা লম্বা করিডোর। করিডরের ডানদিকে সারিবদ্ধ ঘর, করিডরের শেষমাথার দুদিকেই দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। দোতলার বারান্দায় নকশাদার জাফরির কাজ।
রৌনক – “হুম…. বেশ রাজকীয় ব্যাপার আছে বাড়িটায়। আসার সময় দেখছিলাম এইদিকের বেশিরভাগ বাড়িগুলোই এই ধরনের হাভেলী টাইপের। শহরের মধ্যে হলেও কেমন যেন শান্ত, নিঝুম পরিবেশ। আর কেউ এখানে থাকে বলে মনে হয় না। এই দালাল টাকে জিজ্ঞেস করব? না থাক, কি না কি ভাববে। আশা করি এই বাড়িটা ঝিমলির পছন্দ হবে। নাহ, দালাল টাকে একবার জিজ্ঞেস করি।”
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - শেষ পত্র: স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেমের গল্প! পড়ুন এবং অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন এক হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প সাথে, যেখানে এক বিবাহিত পুরুষ স্বপ্নে দেখা নীহারিকার প্রেমে অমোঘ টানে জড়িয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
[ইতস্তত ভাবে] অচ্ছা ভইয়া, ইহা ওর কোই নেহি রহেতা?
দালাল – নেহি সাহাব, জাদা লোগোঁ কো কিরায়ে পে রাখনা মালিককো পসন্দ নেহি। বহুত বেহতরিন হাভেলী হ্যায় সাহাব। ভাবিজীকো লে আইয়ে। উনহে জরুর পসন্দ আয়েগী।
রৌনক – ঠিক হ্যা, ঠিক হ্যা। ইয়ে লিজিয়ে অ্যডভান্সকা পেয়সা।
দালাল – শুক্রিয়া জনাব।
রৌনক আর কথা না বাড়িয়ে ভাড়ার টাকা অ্যডভান্স করে। নীচের তলার দক্ষিণ দিকের একটা অংশ ওকে ভাড়া দেওয়া হয়। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই ঝিমলিকে নিয়ে লখনৌয়ের ট্রেনে উঠে বসল রৌনক।
নবাবী গন্ধমাখা এতবড় একখানা বাড়িতে পা দিতেই একটা ঝিমধরা অনুভূতি টের পায় ঝিমলি। এখানে শুধু নিজেদের দুজনের সংসার পাতবে ভেবে প্রথমে আনন্দ হলেও, রৌনক অফিসে চলে যাবার পর সারাদিন একা থাকতে হবে ভেবে একটু গা ছমছম করে উঠে। পাঁচিলটা এত উঁচু যে পাশের বাড়ির অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। সিঁড়ি দিয়ে উঠে দেখেছে দোতলায় যাওয়ার উপায় নেই। দোতলার বারান্দার গেটে একখানা বড় তালা ঝোলানো। দুদিকের সিঁড়ি টানা উঠে গেছে ছাদে। সেখানের দরজাও তালাবন্ধ। ঘরে একটি মেহগনি কাঠের নকশাদার পালঙ্ক, ড্রেসিং টেবিল, দুটি আলমারি কিছু ছোটখাটো আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো। আসবাবপত্রের শৈল্পিক কারুকাজ নজর কাড়ে। রান্নাঘরটি যদিও আধুনিক সরঞ্জামে সাজানো। বাথরুমে ঢুকে অবাক হয়ে যায় ঝিমলি। শোওয়ার ঘরের মত বিশাল বাথরুম। মার্বেলের কারুকাজ করা একটি বাথটব। দেওয়ালে লম্বা একটা আয়না। যেখানে সম্পূর্ণ প্রতিবিম্ব ধরা পড়ে। কেমন যেন নিজেকে রাণী ভাবতে ইচ্ছে করে ঝিমলির।
ঝিমলি – যাই বলো, বাড়িটায় বেশ একটা রাজকীয় ব্যাপার আছে। চারপাশ ভীষণ নিঝুম ঠিকই, তবে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।
রৌনক – (স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে) যাক বাবা। তাহলে তো সব ঠিক আছে। কিন্তু সারাদিন কি তুমি একা থাকতে পারবে? অচেনা জায়গায় একা ভয় করবে না তো?
ঝিমলি – ইস্… আমি অত ভীতু নই মশাই। (হাসি)
ঝিমলি আসবে বলে রৌনক আগে থেকেই সংসারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে গুছিয়ে রেখেছিল। দালাল মারফতই স্থানীয় একটি হিন্দিভাষী মেয়ে, ঠিকে কাজের জন্য বহাল হল। পরদিন সকালে মেয়েটি এসে ঘরবাড়ি ঝেড়েপুঁছে পরিষ্কার করে রান্নার জোগাড় করে দিলে, তাড়াতাড়ি রান্না সেরে নিল ঝিমলি। কাজ শেষ করে মেয়েটি হঠাৎ বলে উঠল,
কাজের মেয়ে – আপলোগনে ইয়ে কামড়া কিঁউ লিয়া ভাবিজী? ঔর কোই মকান নেহি মিলা ক্যায়া?
ঝিমলি – কিঁউ, আচ্ছা হি তো হ্যায়!’
কাজের মেয়ে – হাঁ…। ভাবিজী, মেরা কাম খতম। যা রহী হুঁ। (থমকে) অউর হাঁ, আপ ইধার উধার মত যানা, অন্দর হি রহেনা। ইতনি বড়ী হাভেলী হ্যায়, অকেলি রহেঙ্গি, ইসি লিয়ে বোল রহী হুঁ।’
ঝিমলি – হাঁ হাঁ ঠিক হ্যায়, তুম চিন্তা মত করো। সেহী সে যানা।
কাজের মেয়ে – ঠিক হ্যা ভাবিজী।
রৌনক অফিসের জন্য রেডি হয়ে ঝিমলিকে কাছে টেনে আদর করে বলে…
রৌনক – শোনো ম্যাডাম, শুনলে তো মেয়েটা কি বলে গেল। ঘর ছেড়ে কোথাও যাবে না। তোমার তো আবার কৌতুহলের শেষ নেই। নতুন জায়গা, একটু সাবধানে থেকো। আমি মাঝেমধ্যে ফোন করব। একা রেখে যাচ্ছি, একটু চিন্তায় থাকবো কিন্তু।
ঝিমলি – (আদুরে গলায়) এই যে মশাই, তুমি কিন্তু আমাকে অযথাই ভয় দেখাচ্ছ। অত চিন্তা করতে হবে না। আমি কচি খুকি নই। তুমি নিশ্চিন্তে কাজে যাও। আমি সাবধানেই থাকব। হুম…।
রৌনক অফিসে বেরিয়ে যায়। সংসারের বাকি কাজটুকু সেরে বাড়ির আশপাশটা ঘুরে দেখতে বেরোয় ঝিমলি। বাড়ির পেছন দিকটা দেখে বেশ অবাক হয়। আগাছা জঙ্গলের মধ্যে বেশ বড় বড় ফলের গাছ। বাড়ির সামনের দিকটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সাজানো গোছানো হলেও এদিকটা অযত্নের ছাপ স্পষ্ট। পোকামাকড়ের ভয়ে জঙ্গলে না ঢুকে আবার বাড়ির সামনে চলে আসে ঝিমলি। এবার কৌতুহলবশত সিঁড়ি ধরে ওপরে যায়। দোতলার গেটে তালা লাগানো। গেটে মুখ লাগিয়ে একটু উঁকিঝুঁকি মেরে সোজা ছাদে উঠে গেল। ছাদের দরজার তালাটা আগের দিনই দেখেছে। তালাটা বেশ পুরোনো, বোঝাই যাচ্ছে অনেকদিন খোলা হয় নি। হাতে ধরে টানাটানি করতেই তালাটা খুলে গেল। একটু ঠেলতেই ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ তুলে দরজাও খুলে গেল। আবিষ্কারের নেশায় মনটা ভালো হয়ে গেল ঝিমলির। আচমকা নতুন অতিথির আগমনে একঝাঁক পায়রা ডানায় শব্দ তুলে উড়ে চলে গেল।
ঝিমলি – ইস…. শুকনো পাতা আর পাখির পালকে ছাদটা বেশ নোংরা হয়ে আছে। কাজের মেয়েটাকে দিয়ে একদিন পরিষ্কার করাতে হবে…
ঝিমলি, ঝরাপাতায় মচমচ শব্দ তুলে ছাদের আলসে ধরে দাঁড়াল। এখান থেকে শহরটাকে বেশ ভালো করে দেখা যায়। পাঁচিলের ওধারে কারুকাজ করা বেশ বড়বড় বাড়ি। বাড়ির গা দিয়ে এঁকেবেঁকে সরুসরু গলি। তবে মানুষের যাতায়াত চোখে পড়ে না। দূরে মসজিদের চূড়া, অতি ক্ষীণ শব্দে ভেসে আসা টাঙার টুং টাং আওয়াজ, কেমন যেন ইতিহাসের গন্ধমাখা একটা শহর। দেখতে দেখতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল ঝিমলি। পেছনে হঠাৎ মচমচ শব্দ শুনে চমকে তাকায়।
ঝিমলি – (আতঙ্কে) কে?
ধুসর রঙের মলিন শেরওয়ানি, মাথায় ফেজ টুপি, সাদা লম্বা দাড়ির এক বৃদ্ধকে দেখে আঁতকে ওঠে ঝিমলি!
ঝিমলি – (আতঙ্কে) এই… কে আপনি!!’
কেয়ার টেকার – (স্থির দৃষ্টিতে জলদগম্ভীর কড়া গলায় বৃদ্ধ) ম্যায় ইঁহাকি কেয়ারটেকার হু। আপ ইঁহা ক্যায়সে আয়ি? ফির কভি ইঁহা মত আইয়েগা। আপনে ইলাকে মে হি রহিয়েগা।
ভয়ে থরথরিয়ে কেঁপে ওঠে ঝিমলি! তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নেমে ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে হাঁপাতে থাকে। বুকের ধুকপুকানি একটু কমলে বিছানায় পড়ে থাকা মোবাইলের দিকে চোখ যায়। ভাবে, রৌনককে একবার ফোন করে বলা দরকার। তারপরেই ভাবে…
ঝিমলি – না থাক্, এখন কাজে ব্যস্ত আছে। বাড়ি ফিরলে না হয় বলবো।
ঝিমলির মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি দানা পাকাতে থাকে। ঠিক এমন সময়ই রৌনকের ফোন আসে।
ঝিমলি – হ্যালো…
রৌনক – এই কি করছ, স্নান খাওয়া শেষ?
ঝিমলি – নাহ্, এ– এই তো এবার স্নানে যাব।
রৌনক – কী হয়েছে ঝিমলি? তোমার গলার আওয়াজ এমন কেন? কিছু হয়েছে? বলো আমাকে।
ঝিমলি – (ধরা পরে যাওয়ার লজ্জায়, আমতা আমতা করে) না… তেমন কিছু না। আমি একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম।
রৌনক – ভয় পেয়েছ! কোথায় ভয় পেলে?
ঝিমলি – আরে তেমন কিছু না…. তুমি ফিরে এসো, তখন সব বলবো।
রৌনক – না তুমি এখনই বলো। এখন একটু ফ্রি আছি।
ঝিমলি – আমি না একটু আগে ওই সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠেছিলাম, এমনি… ঘুরে দেখব বলে। হঠাৎ কোথা থেকে একটা বুড়ো দাড়িওয়ালা লোক চলে আসে। তাতেই না ভয় পেয়ে যাই। বুড়োটার কি বিদঘুটে গলা। আমায় বলল, নিজের এলাকায় থাকতে। ছাদে যেন না যাই। আমি ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে এসছি ঘরে।
রৌনক – উফঃ, ঘরের বাইরে যেতে বারণ করেছিলাম তোমাকে। শুনলে না? এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম আমি। যাক্ গে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কেয়ারটেকার হয়ত এসেছিলেন। যেহেতু সম্পূর্ণ বাড়িটা ব্যবহারযোগ্য নয় তাই তোমাকে ছাদে যেতে বারণ করেছেন। যাও অনেক বেলা হয়েছে। স্নান খাওয়া সেরে রেস্ট নাও। আর আমি না ফেরা পর্যন্ত ঘরের বাইরে যাবে না। কেমন…। এখন রাখছি। বাই।
রৌনকের সঙ্গে কোথা বলে বুকের ধুকপুকানি কমে ঝিমলির। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক বেলা হয়ে গেছে। স্নান করতে বাথরুমে ঢোকে। পোষাক উন্মোচিত করে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে। দেওয়াল জোড়া আয়নায় নিজের নগ্ন শরীর কখনও দেখে নি ঝিমলি। নিজের শরীরের বিভঙ্গে নিজেরই যেন নেশা ধরে যায়। শাওয়ার খুলে তার নীচে দাঁড়ায়। সর্পিল গতিতে শীতল জলের স্পর্শ শরীর ছুঁয়ে নেমে আসে। সহসা এক মায়াবী সুখের স্পর্শ, ভীষণ ভালোলাগার স্পর্শ অনুভব করে সারা শরীর জুড়ে। একটা স্বর্গীয় সুখের আলিঙ্গন… সুগন্ধি জর্দার গন্ধ মেশানো গভীর চুম্বন… আবেশে বুঁদ হতে থাকে ঝিমলি। কে যেন পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নেয় ওকে। ফেনিল বাথটবের বুদবুদে অপার্থিব সুখের আলিঙ্গনে ক্রমশঃ হারিয়ে যেতে থাকে।
ঘুম ভাঙে ঝিমলির। ঘরের মধ্যে বেশ অন্ধকার। বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে মাথাটা টলে যায়। কেমন যেন ঘোরঘোর ভাব, মাথাটা বেশ ভার। অন্ধকার হাতড়ে সুইচ খুঁজে লাইট জ্বালে। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব চোখে পড়ে… সম্পূর্ণ নগ্ন! নিজেকে দেখে চমকে ওঠে! কী ঘটেছিল কিছুই মনে করতে পারে না। ঘোর নেশার আবেশে টলতে টলতেই জামাকাপড় পরে নেয়। আরও ঘণ্টাখানেক পরে রৌনক ফেরে। চা নিয়ে দুজনে বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে। বেশ কিছুক্ষণ পর রৌনক লক্ষ্য করে সে একাই বকে চলেছে, ঝিমলি আজ বড্ড চুপচাপ। রৌনক ভাবে হয়ত ওবেলার ঘটনার জেরে আপসেট হয়ে আছে।
ভুতের বাংলা ছোট গল্প - কালের কোটর: পূর্বজন্মের পাপ কি এই জীবনে পিছু ছাড়ে না? বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় ছোট্ট রিংগো। তার বাবা পাগলের মতো খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করে এক রহস্যময় কঠোর—যা সময়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক ভয়ংকর সত্য বহন করছে। চোখের সামনে ঘটে যেতে থাকে অস্বাভাবিক সব ঘটনা—প্রাচীন ছায়ামূর্তি আর এক বিভীষিকাময় অতীতের স্মৃতি, যা আসলে তার নিজের! সে বুঝতে পারে, এই সবকিছু জড়িয়ে আছে তার পূর্বজন্মের এক অভিশাপের সাথে। সে কি পারবে এই অতৃপ্ত অতীত থেকে মুক্তি পেতে? নাকি সময়ের নিষ্ঠুর শিকল টেনে নিয়ে যাবে তাকে এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে? সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
রৌনক – কিগো? কাম অন ঝিমলি। এইটুকুতেই এত আপসেট হয়ে পড়লে? এই যে নিজেকে এতো সাহসী বলো! কোথায় গেল তোমার সাহস? এই তোমার শরীর ঠিক আছে তো? এই… কিগো?
ঝিমলি কোন উত্তর দেয় না। রাতের খাওয়া শেষ হলে, ক্লান্ত ঝিমলি গভীর ঘুমে ঢলে পড়ে। অদ্ভুত এক অস্বস্তিতে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় ঝিমলির। উঠে জল খায়, জানালা দিয়ে জোৎস্নার আলোয় মাখা পরীটাকে দেখে। যেন হাত নেড়ে ওকে ডাকছে! বাইরে যাওয়ার এক অমোঘ টান অনুভব করে। দরজা খুলে বাইরে আসে। পরীটার কাছে এসে দাঁড়ায়। রাতের হাওয়া যেন ফিসফিস করে কানেকানে বলে যায়,
ভূত – ছতপে আ যাও সুন্দরী, হম তুমহারি ইন্তেজার মে দিল থামকে বৈঠে হুয়ে হ্যায়। আ যাও সুন্দরী… ছতপে আ যাও….
ঘোরলাগা অবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে থাকে। একসময় ছাদে পৌঁছে যায়। শক্তিশালী, এক পুরুষালি হাত কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নেয় ঝিমলিকে। আবার সেই স্বর্গীয় স্পর্শ, সেই সুগন্ধি জর্দার স্বাদ ভরা অনাস্বাদিত চুম্বন। গভীর সুখানুভূতি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ঝিমলি ভালোলাগায় বুঁদ হতে থাকে ক্রমশঃ। ঘুম ভেঙে যায় রৌনকের। পাশ ফিরে ঝিমলিকে বিছানায় দেখতে না পেয়ে বাথরুমে উঁকি মারে। সেখানেও দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে যায়। দেখে ঘরের দরজা হাট করে খোলা।
রৌনক – ঘরের কোথাও নেই। দরজা খোলা! এই অচেনা অজানা জায়গায় এত রাতে ঝিমলি কোথায় যেতে পারে! উফফ…..
ভেবে অস্থির হয়ে পড়ে রৌনক। ফুটফুটে জোৎস্নায় বাড়ির সামনের খোলা চত্বরটা কেমন যেন মায়াবী লাগে। চারিদিকে খুঁজে কোথাও দেখতে পায় না ঝিমলিকে। শেষে ছাদের সিঁড়ি ধরে ওপরে উঠতে থাকে। জোৎস্নার আলোয় ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে যা দেখে, তাতে রাগে আতঙ্কে থরথর করে কাঁপতে থাকে রৌনক! ঝিমলি একজন দীর্ঘদেহী পুরুষের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ, দুজনে গভীর সঙ্গমে রত। চিৎকার করে ওঠে রৌনক।
রৌনক – ঝিমলিলিলিলিলি…….
ভূত – হুয়ায়ায়ায়ায়া………
মুহুর্তেই গগনভেদী চিৎকার করে ওঠে, ওই দীর্ঘকায়, রক্তচক্ষু ভয়ংকর দর্শনের প্রেতাত্মারূপী এক পুরুষ, রৌনকের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। আতঙ্কে রৌনক থরথর করে কাঁপতে থাকে। রৌনককে সজোরে ধাক্কা মেরে ঠেলে ফেলে দেয়। ছাদের পাঁচিলের দেওয়ালে আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারায়।
চোখে জলের ছিঁটে লাগতে জ্ঞান ফিরে পেয়ে ধড়মড়িয়ে উঠে বসে রৌনক। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে। সকাল হয়েছে, তবে আকাশ কালো করে বৃষ্টি নেমেছে। ছাদের ঈশানকোণে আলুথালু অবস্থায় মুখ থুবড়ে ঝিমলিকে পড়ে থাকতে দেখে।
রৌনক – (কান্না মিশ্রিত গলায়) ঝিমলি…..
রৌনক কোনরকমে টলতে টলতে ঝিমলির কাছে গিয়ে টেনে তোলে। আঁতকে ওঠে ঝিমলির মুখ দেখে! সারা মুখ রক্তশূন্য, ফ্যাকাসে, কষ বেয়ে রক্তের ধারা বৃষ্টির জলে গলে পড়ছে। নাকের কাছে হাত দিয়ে বোঝে এখনও প্রাণ আছে। কোনরকমে কোলে তুলে টলতে টলতে ছাদ থেকে নামে রৌনক। অফিসের স্থানীয় কলিগকে ফোন করে ।
লখনৌয়ের হাসপাতালে ঝিমলি আর রৌনকের চিকিৎসা চলছে। রৌনক কিছুটা সুস্থ হলেও ঝিমলির বিপদ কাটেনি, সে এইমুহুর্তে গভীর ট্রমায়। রৌনক ওর সহকর্মীর মুখে শুনেছে, বাড়িটা ভূত বাংলা হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। ওখানে কেউ থাকতে পারে না। বহুবছর আগে বাড়িটা কোন এক নবাবজাদার বংশধরের বাগানবাড়ি ছিল। শাগরেদদের দিয়ে রাতের অন্ধকারে দলিত মেয়েদের তুলে এনে সম্ভোগ করত সারারাত। তারপর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যেত না। একদিন সম্ভোগের সময় একটি দলিত মেয়ের হাতে নবাবদাজার সেই বংশধর খুন হয়। তারপর থেকে বহুকাল তালাবন্ধ হয়ে পড়েছিল এই বাড়ি। সম্প্রতি কিছু দুষ্টু দালাল আর ওই বাড়ির কেয়ারটেকার বাড়িটির কিছু অংশ ভাড়া দিয়ে রোজগারের ধান্দা শুরু করেছিল। রৌনক আর ঝিমলিও ছিল ওদের শিকার।