পূর্বজন্মের পাপ কি এই জীবনে পিছু ছাড়ে না? বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় ছোট্ট রিংগো। তার বাবা পাগলের মতো খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করে এক রহস্যময় কঠোর—যা সময়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক ভয়ংকর সত্য বহন করছে। চোখের সামনে ঘটে যেতে থাকে অস্বাভাবিক সব ঘটনা—প্রাচীন ছায়ামূর্তি আর এক বিভীষিকাময় অতীতের স্মৃতি, যা আসলে তার নিজের! সে বুঝতে পারে, এই সবকিছু জড়িয়ে আছে তার পূর্বজন্মের এক অভিশাপের সাথে। সে কি পারবে এই অতৃপ্ত অতীত থেকে মুক্তি পেতে? নাকি সময়ের নিষ্ঠুর শিকল টেনে নিয়ে যাবে তাকে এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে?

বাংলা ছোট গল্প

Home » বাংলা ছোট গল্প » কালের কোটর

কালের কোটর

পূর্বজন্মের পাপ কি এই জীবনে পিছু ছাড়ে না? বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় ছোট্ট রিংগো। তার বাবা পাগলের মতো খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করে এক রহস্যময় কঠোর—যা সময়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক ভয়ংকর সত্য বহন করছে। চোখের সামনে ঘটে যেতে থাকে অস্বাভাবিক সব ঘটনা—প্রাচীন ছায়ামূর্তি আর এক বিভীষিকাময় অতীতের স্মৃতি, যা আসলে তার নিজের!…

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা রোমান্টিক ছোট গল্প, পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – পুনঃবিচ্ছেদ

রচনা - দেবলীনা বিশ্বাস   ||   গল্পপাঠে - রিয়ান রায়, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, ঋতুশ্রী চক্রবর্ত্তী, তনয় চৌধুরী   ||   শব্দ গ্রহণ, সম্পাদনা এবং আবহ - বিশ্বজিৎ বিশ্বাস   ||   রেকর্ডিং স্টুডিও – কাহানী স্টুডিও'জ

অধ্যায় – ১: রহস্যময় দৃষ্টি

রহস্য রোমাঞ্চ ভুতের বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

“রিংগো! রিংগো! কোথায় গেল ছেলেটা! এমনি সময় তো ঘরময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, এদিকে কাজের সময় দশবার ডাকলেও কোন সাড়াশব্দ নেই! দোতলায় তো টিকিটি দেখা যাচ্ছে না। এই রিংগো, কোথায় তুই?”

অস্থিরভাবে গজ্গজ্ করতে করতে একতলার দিকে পা বাড়াতে যাবো, তখনই শরীরের খাটনি বাঁচাতেই বোধহয় কয়েকদিনের মেমরি স্ক্যান করে ব্রেন সিগন্যাল পাঠালো…

চিলেকোঠার ঘরে ঢুকে বসে নেই তো? কয়েকদিন ধরেই দেখছি ওই ঘরটায় ঘনঘন আনাগোনা করছে, জিজ্ঞেস করলে আবার বলে,

রিংগো : “প্রাইভেট”। 

আট বছরের ছেলের আবার প্রাইভেসি! মায়ের আস্কারা পেয়ে পেয়েই তো হচ্ছে এসব। দিনের বেলা যা করিস করিস…তাই বলে এই রাত নটার সময়? পড়াশোনা নেই? খাওয়া-ঘুম নেই? বাবা ডাকছে সেটুকুও কানে যায় না? বাড়ির একটা সিস্টেম আছে তো নাকি? ঠিক আছে, মা চোখ বুজে থাকলে বাবাকেই হাল ধরতে হবে। দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা। 

সিঁড়ি দিয়ে গটমট করে উঠে হাল ধরতে চিলেকোঠায় পা রাখলাম। যা ভেবেছি তাই। রিংগো আমার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেওয়ালের কাছে। কিন্তু দেওয়ালে মুখটা ওরকম লাগিয়ে রয়েছে কেন? কী করছে ও? 

“অ্যাই রিংগো! কি করছিস এখানে?”

মেজাজ হারিয়ে গলাটা আমার একটু চড়ে গেল। রিংগো একটুও চমকালো না, আঁতকেও উঠলো না, আস্তে আস্তে আমার দিকে ঘুরলো। রাগে আগুন হয়ে থাকা আমার মাথায় কে যেন এক গামলা বরফ জল ঢেলে দিলো। সেই কনকনে জলের স্রোত শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে এলো নীচের দিকে। সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে, সে কি আমার ছেলে? অবয়বটা একই আছে, কিন্তু চোখদুটো? চোখের দৃষ্টিটা? আমার ছেলের চোখের সাদা অংশটা এতো প্রকট নাকি? চোখের চাহনিটাও কিরকম। আট বছরের বাচ্চা একটা ছেলে কি এইভাবে তাকাতে পারে কখনো? আমি ভয় পেয়ে গেলাম। এ তো আমার ছেলে নয়! চোখ দিয়েই তো মানুষ চেনা যায়। রিংগোর অক্ষিকোটরে যেন সম্পূর্ণ অচেনা একটা ভয়ংকর লোকের দুটো চোখ বসিয়ে দিয়েছে কেউ! 

“কোথায় অচেনা? তবে চোখদুটোর উপর আপনার রাগ আছে জানি!” 

রিংগোর কথা শুনে আমি ছিটকে গেলাম। ও আমার মনের কথা বুঝলো কীকরে? গলার স্বরে তো একফোঁটা ছেলেমানুষি নেই! ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করছে আবার! কে ভর করলো আমার একরত্তি ছেলেটার উপর? অদ্ভুত একটা ভয় আর আতঙ্ক দলা পাকিয়ে শব্দের আকারে গলা দিয়ে বেরিয়ে আসতে যাবে, এমন সময় দোতলা থেকে আমার স্ত্রী, রিমিতা ডেকে উঠলো, 

“রিংগো, রিংগো!”

রিংগো ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল চিলেকোঠা থেকে। আমি জড়ভরতের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। রিমিতাও কি একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে? এক মিনিট কেটে গেল… দু মিনিট…কই না তো! নীচ থেকে স্বাভাবিক কথাবার্তা কানে আসছে, এমনকি হাসির শব্দও। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বাইরে বেরোতে যাবো, হঠাৎ চোখে পড়লো উল্টোদিকের দেওয়ালের গায়ে একটা ছোট্ট গোল গর্ত। আশ্চর্য! গর্ত কে করলো এখানে? এইখানেই কি তখন চোখ লাগিয়ে দেখছিলো রিংগো? কী দেখছিলো? আমার সিক্সথ্ সেন্স বলে উঠলো, সব রহস্য ওখানেই। আমি মরিয়া হয়ে হাঁটু গেড়ে চোখ লাগালাম গর্তে।

এ কী! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। একদম ছবির মতো স্পষ্ট দেখতে পেলাম রাতের অন্ধকার চিরে একটা কুঁড়েঘর জ্বলছে দাউদাউ করে, তার লেলিহান শিখা সাপের জিভের মতো লকলক করে উঠে অতোবড়ো আকাশটাকে যেন ভয় দেখাচ্ছে! লাল লাল আগুনের ফুলকিগুলো ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে, অন্তিমযাত্রার খই ছড়ানোর মতো… আর সে কি বুকফাটা কান্নার আওয়াজ! আমি ছিটকে এলাম ভয়ে, জোরে জোরে শ্বাস ফেলছি। একবার মনে হলো রিমিতার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকি, কিন্তু তার আগেই খানিকটা যন্ত্রচালিতের মতোই আর একবার চোখ রাখলাম গর্তে। এবার কিচ্ছু নেই, সব অন্ধকার…হয়তো আসন্ন ভবিষ্যতের মতো।

ছোটদের রূপকথার গল্প - দানব মামার বন্ধু: "দানব মামার বন্ধু" একটি মজার ছোটদের গল্প, যেখানে মুন্না ও এক দানবের অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রূপকথার গল্পের আবহে দানব মামা তার ভালো ব্যবহার দিয়ে গ্রামবাসীর মন জয় করে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় – ২: অতীতের ছায়া

রহস্য রোমাঞ্চ ভুতের বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

কাল সারারাত ঘুমের মধ্যে ছটফট করেছি। দৃশ‍্যগুলো কিছুতেই মাথা থেকে ডিলিট করতে পারছিলাম না। যদিও কাল চিলেকোঠা থেকে নেমে আসার পর রিংগোর আচরণে বিন্দুমাত্র অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করিনি। তাই মাঝে মাঝে নিজের উপরেই সন্দেহ করে বসছি, দুঃস্বপ্ন দেখিনি তো কোনো? অনেক সকালে আমি  অফিস বেরোই, তাই আর বেশি গবেষণার সময় ছিল না। দুশ্চিন্তাগুলো যতটা সম্ভব বাড়িতে রেখে শুধু একরাশ ঘুম নিয়ে অফিস চলে গেলাম। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসার পরেও ফেলে যাওয়া দুশ্চিন্তাগুলো আর আগের মতো মাথায় চেপে বসতে পারলো না। কারণ সবকিছুই আগের মতো চলছে, স্বাভাবিকভাবে। রিমিতা চা বসিয়েছে, রিংগো বইখাতা নিয়ে পড়তে বসেছে। 

“বাবা এই অঙ্কটা দ্যাখো না, রং আনসার দিয়েছে!”

(মুচকি হেসে, খাতাটা নিয়ে) “যেই উত্তর মিললো না অমনি উত্তর ভুল হয়ে গেল? কতবার বলেছি উত্তর দেখে অঙ্ক করবি না! কোথায় দেখি? এই একটাই…”

রিংগো ঠোঁট ফোলালো

এই একটুতেই ঠোঁট ফুলে গেল? বা…বা.. আয় কাছে আয়। (স্নেহভরে হেঁসে) বাবা খালি তোকে বারণ করে তাই না? 

হু… একটু…

আচ্ছা আর বারণ করবো না। কেমন! 

রিংগো হাসলো, এই হাসিটুকু দেখার জন্যই তো আমার বেঁচে থাকা! এই তো আমার একমাত্র সবেধন নীলমণি। সেই জন্যই তো এতো চিন্তা, এতো ভয়! আমি ওকে আর একটু কাছে টেনে বললাম,

“তবে আমাকে একটা জিনিস প্রমিস কর্! বল করবি?”

“কী ?”

“চিলেকোঠার ঘরে আর যাবি না বল্?”

“আমি যাই নাকি?”

“মানে ! কেন মিথ্যে বলছিস রিংগো?” 

“অন গড বাবা, আমি তো যাই না! মাকে জিজ্ঞেস করো!”

“থাক, তার দরকার নেই। তুই মিথ্যে বললে আমি অনায়াসে ধরতে পারি রিংগো।” 

আমার মন বলছে ও মিথ্যে বলছে না। তাহলে আমি কাকে দেখলাম কাল? আমার ছেলের রূপ ধরে কে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাড়িতে? ভূতপ্রেত আমি বিশেষ মানি না, কিন্তু এই মূহুর্তে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো আমার। আচ্ছা, এমনও তো হতে পারে রিংগোর পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার হচ্ছে, তাই ও নিজেই ভুলে যাচ্ছে ও কখন চিলেকোঠায় যাচ্ছে! সেটাও তো কম ভয়ের বিষয় নয়। ইমিডিয়েটলি সাইক্রিয়াটিস্টের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। তার আগে রিমিতার সবটুকু জানা দরকার। ওকে ডাকার আগেই ও চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আমি অস্থিরভাবে বলে উঠলাম,

“রিমি তুমি দেখেছো তো এই কদিন ধরে রিংগো ঘনঘন চিলেকোঠায় যায়?”

“কোথায়? ও তো সারাদিন এই ঘরেই ফোন নিয়ে পড়ে থাকে!”

আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না।

“কী বলছো কী তুমি? এই তো দুদিন আগেই, তুমি সেই বারবার ডাকছিলে, ও তো এসে আমাদের সামনেই বললো চিলেকোঠায় ছিলো, কারণ জিজ্ঞেস করতে আবার বললো “প্রাইভেট”…মনে নেই?” 

“কী যা তা বলছো তুমি? এসব কখন হলো! দ্যাখ্ রিংগো তোর বাবার মাথাটা গেছে! জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে আজকাল!” রিমিতা হেসে উঠলো। রিংগোও হাসছে।

কী হচ্ছে এসব! আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। পাগলটা কে? এই মা-ছেলে… না আমি? তখন আর কিছু বললাম না। চা-টা কোনমতে খেয়েই ছুটলাম চিলেকোঠার দিকে। দেখি তো, ফুটোটা এখনো আছে কিনা? না থাকলে নাহয় ধরে নেবো পুরোটাই আমার হ্যালুসিনেশন! ভেজানো দ‍রজাটা খুললাম আলতো করে। ওইতো, কালকের সেই ফুটোটা, এক ইঞ্চিও নড়েনি! তবে রে! তরতর করে নেমে একদলা হোয়াইট সিমেন্ট নিয়ে উঠে এলাম। হাঁপ ধরছে অল্প। সিল করে দেবো ওই গর্ত আমি। যত্তসব আপদ!  গর্তটা বোজানোর আগে হঠাৎ মনে হলো, কাল যা দেখেছিলাম ঠিক দেখেছিলাম তো? দেওয়ালের গায়ে ওইটুকু একটা ফুটোর মধ্যে ওরকম বায়োস্কোপের মতো ছবি ফুটে ওঠা সম্ভব? আর একবার চোখ রেখে দেখবো?

ষড়রিপুর লিস্টে জায়গা না পেলেও ‘কৌতূহল’ মানুষের বড় ভয়ংকর প্রবৃত্তি। সাহস করে চোখ রেখেই ফেললাম গর্তে। ব‍্যাস্, আমার চোখ আটকে গেল। শুধু চোখ কেন, গোটা শরীরটাই। আমি হারিয়ে গেলাম…এক সম্মোহিত, নিশ্চল দর্শক হয়ে গেলাম গর্তের ওইপারের পৃথিবীর। সেই রাত্রির আকাশ, সেই দাউদাউ করে জ্বলছে কুঁড়েঘর, সেই বুকফাটা আর্তনাদ। কিন্তু এবার অনেকগুলো মানুষকেও দেখতে পেলাম। একজন জমিদার গোছের লোক…হাতে ছড়ি, পরনে জরির কাজ করা ধুতি-পাঞ্জাবি, পায়ে নাগরা জুতো…নিষ্ঠুরভাবে লাথি মারছে মাটিতে পড়ে থাকা একটা অর্ধনগ্ন অসহায় লোককে, হতভাগ্য লোকটার কাকুতি-মিনতি ও কান্নার দমকের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সেই অত্যাচারী জমিদারের পদাঘাত। কতগুলো লাঠিসোটা হাতে ডাকাতের মতো দেখতে লোক, ওই জমিদারেরই লাঠিয়াল হয়তো, আর্তচিৎকার করতে থাকা এক অসহায় মহিলাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে ঝোপের ধারে। মহিলাটির কোলে একটা শিশু, কিছুতেই সে শিশুটাকে ছাড়ছে না, বাকিরা টানাহ্যাঁচড়া করছে পাগলের মতো, শেষে শিশুটাকে ছিনিয়ে নিয়ে মাটিতে এক আছাড় মারলো…. আমি সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করতে গিয়ে বুঝলাম গলা দিয়ে এক ফোঁটা স্বর বের হলো না। আমি এই নৃশংসতা আর দেখতে পারছি না…আমায় বাঁচাও!! আমার নড়াচড়ার ক্ষমতাও লুপ্ত হয়ে গেছে… কেউ যেন ঘাড় ধরে পড়িয়ে নিচ্ছে অতীতের কোনো পাপের আখ্যান!

জমিদারের কথা শুনতে পাচ্ছি স্পষ্ট। আশ্চর্য, আগের বারও দেখেছি, শুধুমাত্র গর্তে চোখ রাখলেই স্পষ্ট শব্দ শোনা যায়, যেন চোখ দিয়ে শুনছি, কানের কোন ভূমিকাই নেই! মাটিতে পড়ে থাকা আধমরা লোকটাকে পায়ের তলায় পিষতে পিষতে জমিদারবাবু পাগলের মতো চোখমুখ করে বলছেন, 

“শালা, তুই আমার কুকীর্তি ফাঁস করবি? দেবনারায়ণের থেকে টাকা খেয়ে আমার উপর চরবৃত্তি করবি? সেদিন চাকর সেজে বাড়িতে ঢুকেছিলি না? বন্ধ দরজার ওপারে তুই-ই সেদিন লুকিয়ে ছিলি তাই তো? শালা বেজন্মা, চাবির গর্তে চোখ রেখে সব দেখেছিস সেদিন তাই না? আমি বিধবা কমলিনীর সাথে কী কী করেছি সব দেখেছিস্…বল্…বল্ শালা! এখন মুখে কুলুপ কেন?”

বউ ছেলে হারানোর যন্ত্রণায় লোকটা বোধহয় ক্ষমা চাইতেও ভুলে গেছে। মাটিতে পড়ে গোঁঙাচ্ছে শুধু। আমার চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে, ওই অত্যাচারী পিশাচ জমিদারের কন্ঠস্বর শুনেই ঘেন্নায় শিউরে উঠছে গা। 

“অ্যাই, তোল্ ওকে, বসা হাঁটু গেড়ে!”

লাঠিয়ালরা কোন পরিশ্রম ছাড়াই মৃতপ্রায় লোকটাকে বসিয়ে দিলো। জমিদার একটা ছুরি বার ক‍রলো কোমরের কাছ থেকে। আগুনের আলোয় লাল হয়ে আছে চারদিক, মৃত্যু যেন নেচে বেড়াচ্ছে নগ্ন পায়ে। 

“অনেক জিনিস দেখে নিয়েছিস্ ওই দুটো চোখ দিয়ে, আর ওগুলোর কোন কাজ নেই, দে ওগুলো আমায় দে…”

নাআআআআআ…

শেষ একবার আতঙ্কে মরণপণ চিৎকার করে উঠলো লোকটা, লাঠিয়ালরা চেপে ধরলো… আমি আমার পাথর হয়ে যাওয়া চোখের পাতা বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম… আমার চোখের সামনে, ওই নরপশু জমিদার খচ্ খচ্ করে উপড়ে ফেললো সেই সর্বহারা লোকের চোখদুটো…. সে কী চিৎকার! মনে হলো আমি বধির হয়ে যাবো। সে কী রক্তের ধারা! তাকে ছাপিয়ে সেই বিকৃত মস্তিষ্ক জমিদার ও তাঁর লাঠিয়ালদের আকাশ ফাটানো হাসি! আমার প্রস্তরীভূত শরীরটা হঠাৎ মনে হলো হালকা হয়ে গেল… আমি নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেলাম। তাও মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য, তারপরেই জ্ঞান হারিয়ে আবার তলিয়ে গেলাম অচৈতন‍্যের অকূল সমুদ্রে।

অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - সময়ের স্মৃতি: "সময়ের স্মৃতি" একটি মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প, যেখানে দিদিমার ঘড়ির মাধ্যমে জীবনের স্মৃতি, ত্যাগ, ভালোবাসা ও একাত্মতার মর্মার্থ তুলে ধরা হয়েছে। সময়ের টিকটিক গল্প বলে যায়। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় – ৩: বিপদের শুরু

রহস্য রোমাঞ্চ ভুতের বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

আজ অফিস যাইনি। কাল চিলেকোঠায় অজ্ঞান অবস্থায় রিমিতা আমাকে খুঁজে পায়। তারপর থেকেই খুব চিন্তায় আছে ও, অফিস যেতে দেয়নি, প্রেশার মেপেছে, জোর করে ফলের রস খাইয়েছে দুবার। 

ডাক্তারও ডাকতে চেয়েছিল, আমিই বারণ করেছি। আমি তো জানি আমার শারীরিক কোন সমস্যা নেই, যা ঝড় গেছে সব মনের ওপর দিয়ে। চোখ বুজলেই কালকের দৃশ্যগুলো তাড়া করছে, ঘুমের সাগরে ডুব দিলেও স্বপ্নের ডুবোজাহাজে হানা দিচ্ছে বারবার। কীসের ইঙ্গিত এগুলো? এগুলো কি সত্যি ঘটনা? সত্যি কি কোনোদিন কোথাও ঘটেছিলো? কত সালে? এর সাথে আমার বা রিংগোর যোগসূত্র কোথায়? রিংগো কেন চিলেকোঠায় যাওয়ার কথাটা মনে করতে পারছে না? একশোটা প্রশ্ন পাক খাচ্ছে মাথায়।

গর্তের কথাটা রিমিতাকে বলেওছি, কিন্তু সে কিছুই দেখতে পায়নি। উল্টে আমার মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে উঠেছে। বারবার প্রমাণ ছাড়া একই কথা বলে পাগল প্রতিপন্ন হতে কার ভালো লাগে? মাথাটা ঘেঁটে যাচ্ছিলো আমার। কিন্তু আজ অদ্ভুতভাবে লক্ষ্য করলাম রিংগো খুব চুপচাপ। ওর মা-ও বারবার জিজ্ঞেস করছে কী হয়েছে, কোনো উত্তরই দিচ্ছে না। আমারও যেন ওর সাথে কথা বলতে ভয় করছে। আমাদের ছোট্ট সুখী পরিবারটাকে একটা চাপ-চাপ অস্বস্তি ঘিরে ধরেছে চারদিক দিয়ে, কেউই যেন কাউকে বুঝতে পারছে না। দিন গড়িয়ে রাত হলো।

খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে যে যার রহস্য নিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো। আমি ছটফট করে যাচ্ছি ঘুমের মধ্যে, ঘুমটা ছিঁড়ে যাচ্ছে বারবার। বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি। ঘড়ির কাঁটাগুলোও যেন মুহূর্তের বোঝা টানতে টানতে ক্লান্ত, এই থমথমে নিস্তব্ধ বাড়িতে একা একা চলতে ওদেরও আর ভালো লাগছে না। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ঠিক নেই। 

হঠাৎ মাঝরাতে ধড়মড় করে উঠে বসলাম। কী বীভৎস স্বপ্ন! সেই লোকটাকে দেখলাম আমার একদম মুখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, গর্তের ভিতর যাঁর চোখ উপড়ে নিতে দেখেছিলাম…লোকটার চোখের শূন্য কোটরদুটো নিকষ অন্ধকার, যেন দুটো রক্তনদীর উৎসমুখ…লোকটা আরও এগিয়ে এলো আমার দিকে…আমি ওর মাথায় মাথা ঠেকিয়ে একটা অক্ষিকোটরে চোখ রাখলাম… তারপর সেই কোটরটা বড় হতে হতে… আমার মাথাটা গিলতে লাগলো…. উহ্হ্হ্ মাগো!! (আমি হাঁপাচ্ছি) পাশে হাত দিয়ে খেয়াল হলো, রিংগো নেই! ভয়ে আমার সারা শরীরের লোম খাড়া হয়ে উঠলো। 

“রিমি! রিমি!” 

আমি পাগলের মতো ঠেললাম রিমিতাকে, রিমিতার ঘুম ভাঙলো না তাও। 

(চিৎকার) এই রিমিতা। শুনছো ? রিমিতা….

চিৎকার করলাম কতবার, তাও কোন সাড়া নেই। কালঘুমে ধরেছে যেন। 

নাহ্, আমাকেই খুঁজতে হবে! রিংগোতো আমার সন্তান! ওকে এভাবে কোনো প্রেতের কবলে পড়তে দেবো না আমি! 

টলমল করে গিয়ে ঘরের লাইটের সুইচ টিপলাম। আলো জ্বললো না। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করলাম আলো জ্বালানোর, নাঃ। অন্ধকারে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলাম,

(চিৎকার) রিংগো!! তুই কোথায়?”

কোন প্রত‍্যুত্তর নেই। আমি ভয়ে ইঁদুরের মতো ছোটাছুটি শুরু করলাম। প্রত্যেক ঘরের লাইট জ্বালানোর চেষ্টা করছি, একটাও জ্বলছে না! বউ ছেলের নাম ধরে ডেকে যাচ্ছি পাগলের মতো,

(চিৎকার) রিমি… রিংগো… 

নাঃ, কেউ সাড়া দিচ্ছে না। আমি জানি রিংগো কোথায় আছে, কিন্তু আমার যে যেতে ভয় করছে!! কী করবো? পালিয়ে যাবো বাড়ি ছেড়ে? পা দুটো কাঁপছে আমার থরথর করে। নাহ্, উপরে আমায় উঠতে হবেই, যা থাকে কপালে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলাম আস্তে আস্তে। জানলার বাইরে গোল চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আজ কি পূর্ণিমা? বাড়ির ভেতরটা এতো অন্ধকার, অথচ বাইরেটা ভেসে যাচ্ছে জ্যোৎস্নায়। আমার হঠাৎ হাউহাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করলো। ছাদে উঠে এলাম। চিলেকোঠায় তালা দিয়ে এসেছিলাম, যথারীতি এখন তালা নেই, দরজাটা ভেজানো। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে ঠেললাম দরজাটা। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।


চিলেকোঠার ছোট্ট জানলাটা দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ছে মেঝেতে। সেখানে দুটো ছোট্ট ছোট্ট পা ছড়িয়ে বসে আছে আমার রিংগো, দেওয়ালে ঠেস দিয়ে। চোখের তারায় সেই অদ্ভুত তীক্ষ্ণতা, মায়াদয়ার লেশমাত্র নেই। অস্ফুটে বলে উঠলাম,

“এই, কে তুমি?” 

“আমায় চিনতে পারছেন না জমিদারমশাই?

আমার মাথার ভিতর যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটলো। এ তো অবিকল সেই চোখ গেলে নেওয়া হতভাগ্য লোকটার গলার স্বর! জমিদারমশাই! আমি! আমিই সেই নৃশংস জমিদার? আর এই লোকটা যে রিংগোর ভেতর ঢুকে বসে আছে সে তাহলে কি …

“ভুল জমিদারমশাই! আমি আপনার ছেলের ভিতর ঢুকে বসে নেই। আমিই আপনার ছেলে! আপনার ছেলে হয়ে জন্ম নিয়েছি শুধু আপনাকে ছারখার করবো বলে!”

দেওয়ালে এখনও রয়েছে অভিশপ্ত গর্তটা,সেই কালের কোটরের মুখ থেকে দেখলাম রক্ত চুঁইয়ে বেরোতে শুরু করেছে। লোকটা আস্তে আস্তে উঠে ওই  রক্তের ধারায় হাত বোলাতে লাগলো।

“এমন করে চোখটা উপড়ে নিলেন জমিদারবাবু?”

(চিৎকার) “নাআআআআআ!!”, “আমি কিচ্ছু করিনি, কিচ্ছু করিনি আমি, সব মিথ্যে কথা, সব!!”

“কী ভেবেছিলেন? একটা বিধবা মেয়েকে নষ্ট ক‍রবেন, একটা গোটা পরিবার উজাড় করবেন…আর পার পেয়ে যাবেন? জন্ম জন্মের পাপের হিসেব এভাবেই দিতে হয় জমিদারবাবু… ভয় নেই, আপনারও সব মনে পড়বে, তখন নিজেই সব শাস্তি মাথা পেতে নেবেন।”

“অসম্ভব! আমি…আমি ওই মানুষটা হতেই পারি না, ওরকম করতেই পারি না! আমার ছেলেকে এক্ষুনি ফেরত দাও, চলে যাও তুমি!!” 

“আপনার ছেলে আর ফিরবে না জমিদারবাবু! তার মায়া বাড়ানোর কাজ, সে বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তার যাওয়ার সময়। আমার ছেলেকে আছাড় মারার সময় মনে ছিলো না? এখন আপনিও বুঝুন, পুত্রশোক কি জিনিস!”

রিংগোর শরীরটা হাত পা বাঁকিয়ে কেমন দলা পাকাতে শুরু করলো। আমি ভয়ে আর্তচিৎকার করে কেঁদে উঠলাম। 

না আআআআআ, প্লিস ছেড়ে দাও আমার ছেলেকে, প্লিস….. (কাঁদে) 

কেমন এক অদ্ভুত প্রাণীর মতো চারপায়ে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে রিংগোর শরীরের মধ্যে দিয়ে আমার দিকে তেড়ে এলো লোকটা। তারপর খ্যাঁকখ্যাঁক করে হেসে উঠে বললো,

“খুন করার পর এভাবেই দলা পাকিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন না আমার দেহটা?”

আতঙ্কে দেওয়ালের সাথে সেঁটে ছিলাম আমি। মনে হলো এই চাপ আর নিতে পারছি না। নিজের বুক খামচে ধরে হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়লাম। (বাপের কান্না) আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে বললো,

“আমি আপনাকে মারবো না জমিদারবাবু। আপনাকে মারবে আপনার পাপ। পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না।”

তারপর উঠে দাঁড়িয়ে দুপায়ে হেঁটে সে আস্তে আস্তে চলে গেল ছাদের রেলিংয়ের কাছে। রেলিংয়ের ওপর উঠে পড়লো। ঘাড় ঘোরালো একবার। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে বিশ্বচরাচর। সেই আলোয় শেষবারের মতো আমার একমাত্র সন্তান, রিংগোর মুখ দেখলাম। তারপর ধপ করে একটা শব্দ। জ‍্যোৎস্নাভেজা আকাশটা ভেঙে পড়লো আমার মাথার উপর।

“রিংগো….”

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - পুনঃবিচ্ছেদ: রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প 'পুনঃবিচ্ছেদ' হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বিচ্ছেদের মধ্যেও প্রেমের অনুভূতি, নস্টালজিয়া আর জীবনের এক অন্যরকম গল্প। শিখা ও রাহুলের আবেগঘন মুহূর্তে প্রেম নতুন রূপ পায়। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

অধ্যায় – ৪: কর্মফল

রহস্য রোমাঞ্চ ভুতের বাংলা ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

রিংগোর ডেডবডিটা পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে গেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান আত্মহত্যা। কিন্তু আট বছরের একটা হাসিখুশি ছেলে কেন হঠাৎ ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করবে? সেটা শুধু পুলিশ কেন, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, এমনকি রিংগোর মায়েরও অজানা। রিমিতার মুখের দিকে তাকাতে পারছিনা আমি। ও তো কোনো দিশা পাচ্ছে না, ও তো ঘটনাটা বিশ্বাসই করে উঠতে পারছে না! করবেই বা কী করে? ও কি কিছু জানে? ওর সাথে যেহেতু কোনো জন্মের কোনো হিসেব বাকি নেই… তাই, না ও রিংগোর চিলেকোঠায় যাবার ঘটনাটা মনে রাখতে পেরেছে, না কাল সারারাত ওর ঘুম ভেঙেছে।

এইসব বীভৎস স্মৃতি শুধু আমার জন্যই তোলা থাকবে চিরকাল, শাস্তি হিসেবে। সারাদিন পাগলের মতো রিমিতা হেসেছে-কেঁদেছে…রিংগোর নাম ধরে হাওয়ার সাথে বকবক করে গেছে। রিমিতার মা-বোন, আমার দাদা-বৌদি, পাড়া পড়শী সবাই এসে কাল রাতের থমথমে বাড়িটার ভোল পাল্টে দিয়েছে আজ। তাও ভালো, রিমিতাকে তো ওরাই সামলে রেখেছে। আমি যন্ত্রের মতো কাজ করে যাচ্ছি, যদিও বুঝতে পারছি মনের যন্ত্রগুলো বিকল হয়ে আসছে একটু একটু করে। দিন গড়ালো। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বেরিয়ে গেলো, পুরোহিতের দেওয়া অপঘাতে মৃত্যুর বিধান অনুযায়ী শ্রাদ্ধও হয়ে গেল তিনদিনের মাথায় । কাছের লোকজন সব দূরে চলে গেল আস্তে আস্তে… 

দু সপ্তাহ কেটে গেছে। অফিস জয়েন করেছি। এতবড়ো বাড়িটায় এখন শুধু আমি আর আমার স্ত্রী। দিনান্তে দুটো কথাও হয় না। রিমিতার বোধহয় কোনোভাবে ধারণা হয়েছে যে এই সবকিছুর জন্য আমিই দায়ী। তাই আমাকে এড়িয়ে চলে, আমারও আর সেই দূরত্ব কমানোর মতো মানসিক অবস্থা নেই। তাও আজ পর্যন্ত ওকে রিংগোর মৃত্যুর আসল কারণটা বলে উঠতে পারিনি। ভয় হয়, যদি ও আমায় ছেড়ে চলে যায়! এভাবে একসাথে থেকেও কী লাভ হচ্ছে জানি না, তবু যতদিন খড়কুটো আঁকড়ে বাঁচা যায়। 

একদিন অফিস থেকে ফিরলাম যথারীতি ক্লান্ত-বিধ্বস্ত হয়ে। একতলার সোফাটায় ধপ করে বসলাম। কেউ জল এগিয়ে দিলো না। দোতলার সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে ডাকলাম, 

“রিমি? রিমি… এই রিমি? গেলো কোথায়? ছাদে যায়নি তো?”

আমি এক মুহূর্ত দেরী না করে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটলাম, দোতলাতেও দাঁড়ালাম না, ছুটলাম সোজা ছাদের দিকে। উদভ্রান্তের মতো ছাদে ঢুকে দেখলাম, রিমি ছাদের রেলিংয়ে বসে আছে পা ঝুলিয়ে। আমি পা টিপে টিপে গিয়ে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম ওকে।

“মাথাটা কি একেবারে খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোমার? নামো রেলিং থেকে!”

“আমার তো আর নেমে কাজ নেই!”

“বাড়াবাড়ি কোরোনা রিমি, নামো বলছি!”

“কী করবেন? জোর করে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করবেন আবার? উনি কিন্তু এখনও চোখ রেখে আছেন চাবির গর্তে, সব দেখছেন!”

আমি রিমিকে ছেড়ে দিয়ে ধপ করে বসে পড়লাম ছাদের মেঝেতে। এ তো রিমির গলা নয়!! ওকে যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিলাম, হঠাৎ ছেড়ে দিলে ওর ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু পড়লো না। আস্তে আস্তে ঘাড় ঘোরালো আমার দিকে। আমার মাথাটা ঘুরে উঠলো। এরও সেই এক শরীর, কিন্তু চোখের দৃষ্টি আলাদা। 

“চিনতে পারছেন জমিদারমশাই, আমি সেই বিধবা কমলিনী! যাকে নষ্ট করতে গিয়ে আপনি ধরা পড়ে গিয়েছিলেন, আর চাবির গর্তে চোখ রেখে যে এই ঘটনা নিজের চোখে দেখেছিলো, তার চোখদুটো আপনি…”

“নাআআআআআ!! “কেন তোমরা সবাই মিলে আমার সর্বনাশ করতে উঠে পড়ে লেগেছো? আমি তোমাদের কারো কোনো ক্ষতি করিনি, বিশ্বাস করো! আমায় ছেড়ে দাও, আমায় ছেড়ে দাও…”

“ছেড়েই তো দিচ্ছি জমিদারবাবু, আপনাকে একদম মুক্ত করে দিয়ে যাচ্ছি…”

রিমির ঘন কালো চুল, ওর ঠোঁট, ওর হাতের আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে অসম্ভব যন্ত্রণায় আমার বুকটা ছিঁড়ে যাচ্ছিলো। এই তো এখনও রিমি বেঁচে আছে, একটু পরেই কি ও রিংগোর মতো চলে যাবে? অস্ফুটে বলে উঠলাম,

“যেও না রিমি, আমায় বরং মেরে ফ্যালো…”

রিমির ভেতর যে জেগে উঠেছে, সে বড় নিষ্ঠুর। একটা কথাও শুনলো না আমার। রিমিকে নিয়ে পড়ে গেল একদম নীচে। আমার বায়ু স্থির হয়ে গেল সেই মুহূর্তেই। জানতাম আটকাতে পারবো না। ভালো হয়েছে। যা গেছে তা গেছে। একটু পরেই লোক জানাজানি হবে। পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে আমায়। বেশ হবে। যত তাড়াতাড়ি পুলিশ আসে তত ভালো। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে যন্ত্রচালিতের মতো হাঁটতে হাঁটতে চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। আজ কি রিমি খুলেছিলো তালাটা? দেওয়ালের গায়ে দেখলাম এখনও কাজলের টিপের মতো লেগে রয়েছে গর্তটা। হো হো করে হেসে উঠলাম। গর্তটার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললাম,

“অতীতের দেনা মেটাতে বর্তমান তো শেষ হয়ে গেল! এবার ভবিষ্যৎটাও একটু দেখিয়ে দে নাকি?”

কপালে যেন মনে হলো কী একটা ঠেকলো। চোখ তুলে ওপরে তাকাতেই দেখলাম সিলিং থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে হুবহু আমার মতোই দেখতে একটা লোক…আমার প্রতিকৃতি। চোখদুটো পুরো খোবলানো, ঝরঝর করে রক্ত বেরোচ্ছে। একটা অলৌকিক হাসি হেসে ঝুলন্ত মূর্তিটা বলে উঠলো,

“দেখে নে, আমিই তোর ভবিষ্যৎ….”

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

শেষ পত্র

স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেমের গল্প! পড়ুন এবং অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন এক হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প সাথে, যেখানে এক বিবাহিত পুরুষ স্বপ্নে দেখা নীহারিকার প্রেমে অমোঘ টানে জড়িয়ে পড়ে।

স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেমের গল্প! পড়ুন এবং অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন এক হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প সাথে, যেখানে এক বিবাহিত পুরুষ স্বপ্নে দেখা নীহারিকার প্রেমে অমোঘ টানে জড়িয়ে পড়ে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: শেষ পত্র

কালের কোটর

পূর্বজন্মের পাপ কি এই জীবনে পিছু ছাড়ে না? বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় ছোট্ট রিংগো। তার বাবা পাগলের মতো খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করে এক রহস্যময় কঠোর—যা সময়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক ভয়ংকর সত্য বহন করছে। চোখের সামনে ঘটে যেতে থাকে অস্বাভাবিক সব ঘটনা—প্রাচীন ছায়ামূর্তি আর এক বিভীষিকাময় অতীতের স্মৃতি, যা আসলে তার নিজের! সে বুঝতে পারে, এই সবকিছু জড়িয়ে আছে তার পূর্বজন্মের এক অভিশাপের সাথে। সে কি পারবে এই অতৃপ্ত অতীত থেকে মুক্তি পেতে? নাকি সময়ের নিষ্ঠুর শিকল টেনে নিয়ে যাবে তাকে এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে?

পূর্বজন্মের পাপ কি এই জীবনে পিছু ছাড়ে না? বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় ছোট্ট রিংগো। তার বাবা পাগলের মতো খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করে এক রহস্যময় কঠোর—যা সময়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক ভয়ংকর সত্য বহন করছে। চোখের সামনে ঘটে যেতে থাকে অস্বাভাবিক সব ঘটনা—প্রাচীন ছায়ামূর্তি আর এক বিভীষিকাময় অতীতের স্মৃতি, যা আসলে তার নিজের!…

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: কালের কোটর

দানব মামার বন্ধু

"দানব মামার বন্ধু" একটি মজার ছোটদের গল্প, যেখানে মুন্না ও এক দানবের অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রূপকথার গল্পের আবহে দানব মামা তার ভালো ব্যবহার দিয়ে গ্রামবাসীর মন জয় করে।

"দানব মামার বন্ধু" একটি মজার ছোটদের গল্প, যেখানে মুন্না ও এক দানবের অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রূপকথার গল্পের আবহে দানব মামা তার ভালো ব্যবহার দিয়ে গ্রামবাসীর মন জয় করে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: দানব মামার বন্ধু

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!