"শেষ আলো" একটি রহস্যময় বাংলা ছোট গল্প যেখানে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন, ধ্বংসের ছায়া ও জীবনের সংগ্রাম ফুটে উঠেছে। ভুতের গল্পের মিশ্রণে গল্পটি পাঠককে ভাবাবে জীবনের নতুন দিশা নিয়ে।

শেষ আলো

"শেষ আলো" একটি রহস্যময় বাংলা ছোট গল্প যেখানে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন, ধ্বংসের ছায়া ও জীবনের সংগ্রাম ফুটে উঠেছে। ভুতের গল্পের মিশ্রণে গল্পটি পাঠককে ভাবাবে জীবনের নতুন দিশা নিয়ে।

আমাদের WA চ্যানেল জয়েন করুন

এই মাসের সেরা ভুতের বাংলা ছোট গল্প পড়ুন ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন – অভিশপ্ত বাগানবাড়ি।

রচনা - সুরজিৎ রায়   ||   গল্পপাঠে - বিশ্বজিৎ বিশ্বাস   ||   শব্দ গ্রহণ, সম্পাদনা এবং আবহ - বিশ্বজিৎ বিশ্বাস   ||   রেকর্ডিং স্টুডিও – কাহানী স্টুডিও'জ

পরিচিতি

বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

বিশ্বের প্রতিটি কোণে অন্ধকার। আকাশে আর তারা নেই, চাঁদও দেখা যায় না। সারা পৃথিবী যেন এক বিশাল কালো চাদরে ঢাকা পড়ে গেছে। আশেপাশের সব কিছু নিস্তব্ধ, স্থির, অথচ ভয়াবহ এক শূন্যতার মধ্যে ঢেকে রয়েছে। এমন পরিস্থিতি কোনোদিনই কল্পনা করা যায়নি। পৃথিবী যেন তার গতিপথ হারিয়ে ফেলেছে। 

জোসেফ, এক বিশ বছর বয়সী যুবক, একটি পুরনো সমাধির দেখাশোনা করে। সে খুবই একাকী, একরকম নিঃসঙ্গ। সমাধির পাশে ছোট একটি বাড়ি, যেখানে সে একা থাকে। আজও সে বাড়ির জানলার কাছে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু আজ যেন আকাশের প্রতি তার আগের প্রেম আর ছিল না। আকাশের সেই অনন্ত নীলের বদলে, আজ সেখানে গভীর কালো, এক গাঢ় অন্ধকার, যা তার মনকে আরও ভারী করে তুলেছিল। চারপাশের দৃশ্যও যেন ম্লান হয়ে গেছে। গাছপালা, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর – সব কিছু হলুদ ধূসর আবরণে ঢেকে গেছে। এই দৃশ্য যেন কোনো দুঃস্বপ্নের মতো, যেখানে পৃথিবী তার শেষ সময়ে পৌঁছে গেছে। 

জোসেফ একা বাড়িতে বসে ছিল। ঘরটা নিঃশব্দ। একে একে বিদ্যুৎ চলে যায়, ফোনের সংযোগ হারিয়ে যায়। তার মনে হচ্ছিল, পৃথিবী আর তার একটুও আশা রেখে যায়নি। তার চারপাশের এই নিস্তব্ধতা, এই স্তব্ধতা, তাকে যেন আরও বেশি করে ভেতরে নিঃশেষিত করে ফেলছিল। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন তার জীবন থেকে আরও কিছু দূরে সরে যাচ্ছিল। সে জানত, কিছু একটা হতে চলেছে, তবে কি তা, সে জানত না। 

তবুও, কিছু না কিছু তার মধ্যে প্রতিরোধের মতো লুকিয়ে ছিল। তার মন, যে অনেক দিন ধরে ক্ষতবিক্ষত, আজ তা যেন কিছুটা শান্তির অনুভূতি পাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, হয়তো এটাই শেষ, হয়তো পৃথিবী আর ফিরে আসবে না। কিন্তু তার মনের মধ্যে একটা অদৃশ্য শক্তি ছিল যা তাকে আবারও ভাবাতে শুরু করল – “যতই অন্ধকার হোক, একদিন সূর্য উঠবেই। একদিন আলো ফিরে আসবে।” 

তার জীবনটা যেমন এক অনিশ্চিত পথে এগিয়ে চলেছে, তেমনি আজকের দিনটাও এক অনিশ্চিত যুদ্ধের মতো লাগছিল। সব কিছু এত ভয়াবহ লাগছিল, অথচ একটা অদৃশ্য আশাও তাকে আশাবাদী করে তুলছিল। হয়তো কিছুটা উজ্জ্বলতা পাওয়ার জন্য এই গভীর অন্ধকারের মধ্য দিয়েই তাকে এগিয়ে যেতে হবে। 

অথচ, এই সময়ই তার সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বটা জেগে উঠল – “কী হবে যদি পৃথিবী আর আগের মতো না থাকে? যদি আমি একা হয়ে পড়ি? যদি…” মনে মনে তার বুকের ভিতর কিছু একটা আঁচড় কাটছিল। “আমি কীভাবে একা থাকব, যদি পৃথিবী আমার পাশে না থাকে?”

জোসেফ জানত, কিছু একটা ভুল হচ্ছে। তার মনের মধ্যে কিছু অস্থিরতা ছিল, যেন সে কোনো কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছিল। তার চারপাশের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি, সেখান থেকে গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা পৃথিবী, তার অনুভূতিতে এক অদ্ভুত অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। যেন কিছু একটা অনিশ্চিত ঘটতে চলেছে, কিন্তু তা কী, সেটা সে বুঝে উঠতে পারছিল না। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল, এটা কি তার কল্পনা? নাকি পৃথিবী সত্যিই এক ভয়াবহ বিপদে পড়েছে?

সে জানতো, তার মানসিক অবস্থা খুবই দুর্বল। শিকড়বিহীন এক রকমের খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল সে। তার অতীতের দুঃখ, যেগুলি সে বহু বছর ধরে নিজের মধ্যে গোপন রেখেছিল, আজ আবার তার সামনে ভেসে উঠছিল। জোসেফের জীবনে একাধিক ত্রাসের সময় এসেছিল—বাবার অকাল মৃত্যু, মায়ের অমীমাংসিত কষ্ট, এবং সেই ছোটবেলার দিনের অবহেলা। এই সমস্ত কিছু তার মনের মধ্যে একসঙ্গে মিলিত হচ্ছিল, যেন পুরনো যন্ত্রণার স্মৃতিগুলো আবার নতুন করে তাকে ঘিরে ধরেছিল। 

“এটাই কি শেষ সময়?” – সে নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগল। চোখের সামনে অন্ধকার, নিঃশব্দ সন্ত্রাস, এবং মানুষের গাঢ় অভ্যন্তরীণ শূন্যতা তাকে আরও বেশি করে আতঙ্কিত করছিল। তার শরীর তীব্রভাবে ক্লান্ত, আর তার মন আরো দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সে জানত না, পৃথিবী কি সত্যিই শেষ হয়ে যাচ্ছে, নাকি এটা শুধু তার নিজের মনের প্রতিচ্ছবি? যেন তার মানসিক অবস্থা, তার অতীতের দুঃখ, তার ভয়—সব কিছু একত্রে তার চোখে পৃথিবীকে এমন অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। 

তার প্রতিটি শ্বাস যেন এক নীরব যুদ্ধের মতো। সে জানত, যদি সে নিজেকে আরও বেশি হারিয়ে ফেলে, তাহলে হয়তো কখনও আর ফিরে আসবে না। তার বুকের মধ্যে ভয় যেন আরও প্রবল হয়ে উঠছিল, আর সে জানত, একা থেকে এই অন্ধকারে থাকার শক্তি তার নেই। “কী হবে আমার? যদি পৃথিবী শেষ হয়ে যায়?” মনে মনে সে বারবার প্রশ্ন করছিল। 

যতটুকু চিন্তা তার মধ্যে ছিল, তা সবই তাকে ঘিরে ফেলে, ভীষণভাবে তাড়িত করে ফেলছিল। একদিকে, তার অতীতের দুঃখের কাঁটা তাকে আরও বেশি কষ্ট দিচ্ছিল, অন্যদিকে, পৃথিবী যখন অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে, তখন তাকে কী করতে হবে, কীভাবে বাঁচতে হবে—সে জানত না। তবে, একটা অনুভূতি তাকে তাড়া করছিল—যতই অন্ধকার হোক, একদিন হয়তো সূর্য উঠবে। জীবন থেমে থাকবে না, কখনোই না। 

কিন্তু তখনই, সেই মুহূর্তে, যখন সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার মতো লাগছিল, তার মাথায় একটি চিন্তা এলো—“যদি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এখনই ঘটতে থাকে?”

বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - শেষ পত্র: স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেমের গল্প! পড়ুন এবং অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করুন এক হৃদয়স্পর্শী রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্প সাথে, যেখানে এক বিবাহিত পুরুষ স্বপ্নে দেখা নীহারিকার প্রেমে অমোঘ টানে জড়িয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

বিষাক্ত গ্যাসের আক্রমণ

বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

হঠাৎ করেই মিলিটারি এসে পৌঁছাল, কামান সহ। তাদের চোখে ভয়, মুখে তীব্র নির্দেশনা ছিল—”সবাই বাড়ির মধ্যে থাকুন।” জোসেফ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, কিছুই বুঝতে পারছিল না। এই পরিস্থিতি, এই আতঙ্ক, তাকে একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছিল। একদিকে আকাশের গা কালো রঙ, যেন পৃথিবী তার আপন অস্তিত্বকে খুঁজে পাচ্ছে না, অন্যদিকে, রাস্তার মধ্যে যে অদ্ভুত হলুদ ধোঁয়া ভাসছিল, তা ছিল আরও বেশি ভয়ানক। যেন পুরো পৃথিবীকে শ্বাসরোধ করে রাখা হচ্ছে, আর সেই শ্বাসরোধের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। 

জোসেফ জানালার পাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে সেই ধোঁয়া দেখতে পেয়ে শিহরিত হয়ে গেল। তার কানে শুধু মিলিটারি অফিসারের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল, “সবাই ঘরের ভিতর চলে যাও!” তবে জোসেফের শরীর যেন স্থির হয়ে গিয়েছিল। তার চোখের সামনে শিশুরা খেলার মাঠে হাসতে-খেলতে ছিল। এমন শান্ত দৃশ্য, এমন সরল আনন্দ, যে দৃশ্যের কথা সে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল, তা এখন কেমন করে এমন তীব্র বিপদে পরিণত হলো? মুহূর্তের মধ্যে সেই শিশুদের খেলার মাঠে পৌঁছে গেল ওই হলুদ গ্যাস। জোসেফ চোখ বন্ধ করে নিয়েছিল, যেন সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য তার মন থেকে মুছে ফেলতে পারে। কিন্তু তা হয়নি।

গ্যাসটি এসে পড়তেই, একে একে শিশুরা মাটিতে পড়ে গেল। তাদের মাংস পোড়া হয়ে গলে গিয়ে, তাদের চিৎকার কানে এসে পৌঁছাচ্ছিল। তারা আর চলতে পারছিল না। তাদের শরীরের ত্বক আর মাংস পুড়ে গিয়েছিল, যেন কোনো আগুনের শিখা একে একে তাদের শেষ করে দিয়েছে। সে চোখের সামনে দেখছিল, কিন্তু তার মনে হচ্ছিল, যেন এটি কোনো ভীষণ দুঃস্বপ্ন। হয়তো সে এখনই জেগে উঠবে। তবে সে বুঝতে পারছিল না, এই বিভৎসতা কি তার চোখের মণির অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার কারণ, না কি পৃথিবী সত্যিই শেষ হয়ে যাচ্ছে?

জোসেফের বুকের মধ্যে এক অদ্ভুত চাপ ছিল। শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তার মাথার মধ্যে সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল—“এটা কি সত্যিই ঘটছে? পৃথিবী কি এখনই শেষ হয়ে যাবে?” তার শরীর অস্থির হয়ে উঠছিল। সে জানত, এটি শুধু তার একক অনুভূতি নয়—এটা পৃথিবীর সমস্ত মানুষের অনুভূতি, যাদের মধ্যে বিভীষিকা সৃষ্টি হয়েছে। যখন শিশুরা এইভাবে মরে যাচ্ছে, যখন সারা পৃথিবী অন্ধকারে ঢাকা পড়ছে, তখন কীভাবে সে নিজেকে রক্ষা করবে? 

তবে তার মধ্যে এক ভয়াবহ শূন্যতা ছিল। সে কিছু করতে পারছিল না, শুধুই দেখছিল। এই নির্বাক পলকেই তার মনে হচ্ছিল, হয়তো কিছুই বাঁচবে না। পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে, আর সে একা, একেবারে একা, সব কিছু হারিয়ে ফেলবে।

গ্যাস ছিল মস্টার্ড গ্যাস, যা যেন পৃথিবীকে শেষ করে দেওয়ার জন্যে তৈরি করা হয়েছিল। সেই ভয়ঙ্কর গ্যাস আকাশ থেকে ঝরে পড়ছিল, আর এর স্পর্শেই একে একে সবার জীবন নিভে যাচ্ছিল। প্রথমে, চোখে তীব্র জ্বালা সৃষ্টি হচ্ছিল, তারপর এক পর্যায়ে অন্ধত্ব এসে আছড়ে পড়ছিল। ত্বক গলে গিয়ে শরীরের মাংস ভস্মে পরিণত হচ্ছিল। এই ধ্বংসের দৃশ্য দেখে, জোসেফের শরীর কেঁপে উঠল। তার সামনে সব কিছু অস্পষ্ট হয়ে উঠছিল, যেন একটি চরম মৃত্যুর মুহূর্তের মধ্য দিয়ে সে নিজে চলে যাচ্ছে। 

রাস্তার পাশের মানুষদের চিৎকার আর মৃত্যুর বিভীষিকা তার মনের মধ্যে শোরগোল সৃষ্টি করছিল। তার সারা শরীরে কাঁপুনি ধরেছিল। যেন পৃথিবী তার শ্বাস আটকে দিয়েছে, আর সে নিঃশব্দে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই শিশুর মৃতদেহগুলো, তাদের গলে যাওয়া ত্বক, যেন এখন তার নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। তার চোখে জল চলে আসে, কষ্টে বুকটা ভেঙে যায়। “এটাই কি শেষ সময়?” – জোসেফের মন যেন এই প্রশ্নের ঘূর্ণিতে ডুবে গিয়েছিল। তার মনে হচ্ছিল, পৃথিবীটা শেষ হয়ে গেছে, তার স্বপ্ন, তার ভালোবাসা, তার পরিবার—সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। 

সে জানত না, তার পরিবার কোথায়, তারা এখন কেমন আছে। তার মনে হচ্ছিল, হয়তো তারা সবাই মারা গেছে। তাদের মুখগুলো, হাসিগুলো, স্মৃতিগুলো যেন একে একে সরে যাচ্ছে। সেই যে ছোটবেলায় মা-বাবার কোল থেকে ঘুমাতে যাওয়া, সেই যে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার সময় বাবা তার হাত ধরে রেখেছিল—সব কিছু যেন ভেসে যাচ্ছে দূর অন্ধকারে। 

জোসেফ এখন একা, একেবারে একা। কাঁপতে কাঁপতে সে নিজের অজান্তেই আলোতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, যেন তার সামনে কোনো রক্ষার পথ ছিল। তবে তার সারা শরীর অবশ হয়ে গিয়েছিল। তাকে মনে হচ্ছিল, কোনো কিছুই আর কাজ করবে না। কি করবে সে? কোনো সাহায্য আসবে না, কোনো আশা নেই। তবে হঠাৎ তার মাথায় এক ভয়ঙ্কর ভাবনা এলো—”এটা কি সত্যিই শেষ সময়?” 

এটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। সে জানত, ভয় তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। তার সমস্ত আত্মবিশ্বাস, সমস্ত শক্তি—এগুলো কোথাও হারিয়ে গেছে। একে একে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল, আর সে কিছুই করতে পারছিল না। এতদিনের পরিশ্রম, তার সংগ্রাম—এসব কিছু কি আর কোনো মূল্য রাখবে? 

এই দুর্দিনে তার মন শুধু একটি কথাই ভেবেছিল—“আমি কি একা পড়েছি?”

মনে আত্মবিশ্বাসের সংকট

বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

মিলিটারি এবং পুলিশদের নির্দেশে জোসেফের বাড়ির জানালাগুলি বন্ধ ছিল, যেন বাইরে শয়তানি শক্তি ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তাকে শিকার করতে। বাড়ির প্রতিটি দিক বন্ধ করে দেয়ার পর, জোসেফ তার সারা বাড়ি আলোকিত করার জন্যে লণ্ঠন জ্বালিয়ে রেখেছিল। ঘর অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল, কিন্তু সেই আলোকের মাঝেও সে নিজের ভেতরে এক ভয়ানক অন্ধকার অনুভব করছিল। তার চারপাশে এক গভীর নিরবতা ছিল, যেন সময় থমকে দাঁড়িয়ে গেছে। অথচ সে জানত, পৃথিবী চুপচাপ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।  

নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করেছিল। জানালাগুলোর গ্রীলগুলো ভাল করে বন্ধ করা, দরজাগুলি লক করা, এবং প্রতিটি কোণায় একটি করে লণ্ঠন রেখে আলো সরবরাহ করা—এই ছিল তার সামান্য চেষ্টা। কিন্তু কিছুতেই তাকে আশ্বস্ত করতে পারছিল না। তার মনে একটাই প্রশ্ন বার বার ঘুরছিল: “আমার পরিবার কোথায়?” 

সে জানত না তার মা-বাবা কোথায়, তার ছোট ভাই, বোন—তারা কি নিরাপদ, নাকি এই ভয়ংকর গ্যাসের শিকার হয়েছে? তার নিজের জীবনে এতগুলো বছর এত কষ্টের মধ্যে কাটানোর পর, সে আর কিছুই ভাবতে পারছিল না। অতীতের সব দুঃখ, সব কষ্ট, সব স্মৃতি যেন একে একে তার সামনে ভেসে আসছিল। সেই দিনের কথা মনে পড়ছিল, যখন তার মা তাকে প্রথম ঢেকে দিয়েছিল শীতের রাতে, তার বাবার সাহসী হাত ধরে একে একে পথ চলতে শেখানো হয়েছিল। কিন্তু এখন কি? তার পরিবারের জন্যে তার কি কিছু করার ছিল? 

তার চোখের সামনে যেন কিছু দৃশ্য একে একে ভেসে উঠছিল। ছোটবেলায় কীভাবে বাবা-মায়ের সঙ্গে খাবারের টেবিলে হাসতে হাসতে গল্প করত, কি আনন্দের দিনগুলো ছিল—সব কিছু যেন হারিয়ে গেছে। সে অনুভব করছিল, তার পরিবার, তার ভালোবাসা—সব কিছুই এই মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে গেছে। আকাশে তখনও অন্ধকার ছড়িয়ে ছিল, এবং প্রতিটি মুহূর্ত যেন তাকে আরও একেবারে একা করে দিচ্ছিল।

সে জানত, কোনো সাহায্য আসবে না, কোনো কিছু আর ঠিক হবে না। যে পৃথিবীটাকে সে জানত, তা আর কখনও একই রকম থাকবে না। কিন্তু তার একটাই ইচ্ছে ছিল, তার পরিবার যদি অন্তত কোথাও নিরাপদ থাকে! সে যখন জানালা বন্ধ করছিল, তার চোখে যেন জল চলে আসে। একসময় সে লণ্ঠনটির দিকে তাকিয়ে অনুভব করল, কেবল সে একাই বেঁচে আছে, তার একার অস্তিত্ব। 

সে ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে, নিজের ভেতর অস্বস্তি অনুভব করছিল, এবং মনেপ্রাণে জানত, এর পরের মুহূর্তে কী হবে—তাকে কে জানে!

একদিকে ভয়, আরেকদিকে ভ্রান্তি—জোসেফের মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছিল। এই পৃথিবী যেন তাকে এক অন্ধকার খাঁজে ঠেলে দিয়েছিল, যেখানে আলো নেই, কোনো আশা নেই। তার মনে বারবার উদিত হচ্ছিল সেই দুঃসহ স্মৃতিগুলো, যা তার জীবনের এক অন্ধকার অধ্যায় হয়ে রয়ে গেছে। পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার এবং সিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক রোগ তাকে আরও অস্থির করে তুলছিল। তার ভেতরে ক্রমশ এক অশান্তি ঘুরছিল, যেন সমস্ত পৃথিবীই তার বিরুদ্ধে। মনে হচ্ছিল, তার চারপাশের পরিবেশ তার অস্তিত্বের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে—এক অদৃশ্য হুমকি যা তাকে ক্রমাগত গ্রাস করে চলেছে। 

দূরের ঘরের কোনায় একাকি দাঁড়িয়ে, রেডিও চালু করল সে, যেন কিছু শোনার জন্যে, কিছু এমন হতে পারে যা তাকে আশ্বস্ত করতে পারে। তার কানে প্রথমে খটখট শব্দ আসছিল, তারপর একটু একটু করে চ্যানেল পরিষ্কার হয়ে গেল। রেডিওতে প্রচারিত সংবাদে তার হৃদয়টা হুহু করে উঠলো। জানানো হল যে, গ্যাসের আক্রমণের কারণে পৃথিবীর অধিকাংশ ফলন ধ্বংস হয়ে গেছে, পশু-পাখি মারা পড়েছে। আকাশের ধোঁয়া, মাটি, সব কিছুতেই বিষাক্ত পাথরের মতো গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হচ্ছে বিষাক্ত—আবারো সেই শব্দ, মিস্টার গ্যাসের কথা। 

এটি শুনে জোসেফের শরীরের প্রতিটি স্নায়ু শিথিল হয়ে আসলো। সে জানত যে, একেবারে সীমানা ছাড়িয়ে গিয়েছে সবকিছু—অতীতের ভয় আর বর্তমানের অসহায়ত্ব একত্রিত হয়ে তাকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ফেলছে। মিস্টার গ্যাসের হামলা আরও তীব্র হয়ে উঠছিল, এবং তার আশেপাশের পরিবেশ ক্রমশ অন্ধকারময় হয়ে উঠছিল। রাস্তার উপর, বাড়ির মধ্যে, আকাশে—সব জায়গায় যেন এক ভয়ংকর মৃত্যুর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল। আর একাকী, অসহায় ভাবে সে অনুভব করছিল—তার চারপাশে কোনো সুরক্ষা নেই, কোনো আশ্রয় নেই। 

জোসেফের চোখে ধীরে ধীরে জল চলে এল। তার মনে হচ্ছিল, এই পৃথিবী তার জন্যে কোনো আশ্রয় নেই, সে একাই এ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছিল। মা-বাবার মুখ ভেসে উঠছিল চোখের সামনে—কীভাবে তারা তাকে হাসিয়ে রাখত, কীভাবে তার জীবনের সব দুঃখ দূর করতে চাইতেন। আজ সে একা। এই অবস্থা তার মানসিক রোগের আরও গভীরে ফেলে দিচ্ছিল। যে সব চিহ্ন সে বুঝতে পারত না, আজ সেগুলোই তার জীবনের গভীর দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। 

“এটাই কি শেষ সময়?”—এ প্রশ্নটা যেন তার মাথায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। যতক্ষণ না সে রেডিওর মাধ্যমে খবর শুনছিল, তার মনে একটা আশা ছিল—কিছু একটা হতে পারে, কিছু একটা বদলে যেতে পারে। কিন্তু, এখন সেই আশা বালি হয়ে উড়ে গেল। পৃথিবী, তার চারপাশ, সমস্ত কিছুই যেন এক অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে। 

সে জানত, কিছুই আর বদলাবে না। এখন সে একা—তার পুরনো স্মৃতির সাথে, এক নিঃসঙ্গ সময়ের সাথে, এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের সাথে।

পৃথিবী ধ্বংসের শুরু

বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

জোসেফ জানালার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে ছিল। তার চোখে ধরা পড়ল এক ভয়াবহ দৃশ্য—আকাশ থেকে মস্টার্ড গ্যাসে ভরা বরফের বড় বড় কণাগুলো তীব্র গতিতে মাটিতে পড়ছিল। প্রতিটি বরফকণা যেন পৃথিবীর বুক চিরে দিয়ে তার ওপর একটি নতুন অভিশাপ বয়ে আনছিল। তার গাড়ি, যেটি তাকে নিরাপত্তা দিতে পারত, ধ্বংস হয়ে গেল বরফের আঘাতে। প্রতিবেশীদের বাড়িগুলোও টিকে থাকতে পারল না। ছাদ ভেঙে পড়ল, জানালার কাঁচ গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল মাটিতে। এই ভয়াবহতা যেন পৃথিবীর শেষ প্রহরকে ঘোষণা করছিল।  

জোসেফের গলা শুকিয়ে গেল। কিন্তু আসল ভয় তখন শুরু হল, যখন সে রাস্তায় ছুটে চলা মানুষদের দেখল। তাদের চেহারাগুলো যেন স্বাভাবিক ছিল না। মস্টার্ড গ্যাস তাদের শরীরকে এমনভাবে বিকৃত করে দিয়েছে যে, তাদের আর মানুষ বলা যায় না। তাদের ত্বক পুড়ে গলে পড়েছে, চোখের সাদা অংশ দগ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু তবুও তারা বেঁচে ছিল, হাঁটছিল, দৌড়াচ্ছিল—যেন জীবিত মৃতরা।  

এই দৃশ্য জোসেফকে এতটাই ভীত করে তুলল যে, তার হাত-পা কাঁপতে শুরু করল। “তারা কি জীবিত? নাকি মৃত? কেন তারা এখনও নড়ছে?” তার মনে প্রশ্নের পর প্রশ্ন উঁকি দিল। এই মানুষগুলো যেন এক এক করে তাদের জীবনের সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে। কেউ হয়তো তার সন্তানকে হারিয়েছে, কেউ তার সঙ্গীকে, আর কেউ হারিয়েছে নিজের স্বাভাবিক রূপ।  

একজন বৃদ্ধা, যিনি তার জ্বলন্ত হাত দুটো বুকের কাছে তুলে ধরেছিলেন, ছুটে চলছিল। তিনি যেন কাউকে খুঁজছিলেন। তার ফাটা গলার আওয়াজ জোসেফের কানে এসে পৌঁছল—“কেউ কি আছে? কেউ কি বাঁচাতে পারবে আমাকে?” জোসেফের গলা শুকিয়ে গেল। তার পা জানালার কাছে স্থির হয়ে গেল, এবং সে ভাবল, “আমি কিছু করতে পারছি না। আমি কীভাবে তাদের সাহায্য করব?”  

মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া এক ছেলেকে দেখে তার চোখ দিয়ে অজান্তে জল গড়িয়ে পড়ল। ছেলেটি সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল, কিন্তু কেউ তার কাছে আসেনি। সেই চিৎকারের শব্দ যেন জোসেফের হৃদয়ে তীরের মতো বিদ্ধ হচ্ছিল। তার মনে হল, এই পৃথিবী থেকে মানবতার শেষ আলোটুকুও মুছে গেছে।  

ভয় আর অপরাধবোধে ভরা জোসেফ নিজেকে দোষ দিতে শুরু করল। “আমি কেন জীবিত? কেন এভাবে সবাইকে মরতে হচ্ছে? এটা কি সত্যি পৃথিবীর শেষ সময়?” তার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ছিল। তার মনে হল, এই জীবিত মৃতরা যেন তার কাছে কোনো এক অজানা বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছে—পৃথিবীর ক্ষয়, মানবতার অবসান।

ভুতের বাংলা ছোট গল্প - কালের কোটর: পূর্বজন্মের পাপ কি এই জীবনে পিছু ছাড়ে না?  বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় ছোট্ট রিংগো। তার বাবা পাগলের মতো খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করে এক রহস্যময় কঠোর—যা সময়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক ভয়ংকর সত্য বহন করছে।  চোখের সামনে ঘটে যেতে থাকে অস্বাভাবিক সব ঘটনা—প্রাচীন ছায়ামূর্তি আর এক বিভীষিকাময় অতীতের স্মৃতি, যা আসলে তার নিজের! সে বুঝতে পারে, এই সবকিছু জড়িয়ে আছে তার পূর্বজন্মের এক অভিশাপের সাথে।  সে কি পারবে এই অতৃপ্ত অতীত থেকে মুক্তি পেতে? নাকি সময়ের নিষ্ঠুর শিকল টেনে নিয়ে যাবে তাকে এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে?  সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

ভয়ের উপরে ভয়ের গতি

বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

জোসেফ আবার জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাল। আকাশে যেন আগুনের ঝলকানি, আর সেই ঝলকানির মাঝে বড় বড় বিস্ফোরণের শব্দ। প্রতিটি শব্দ যেন তার বুকের গভীরে গিয়ে আঘাত করছিল। ইলেকট্রিক পোলগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হচ্ছিল, আর অন্ধকার ক্রমেই আরও গভীর হচ্ছিল। রাস্তার কোনো প্রান্তে আর আলো দেখা যাচ্ছিল না। পুরো শহর যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল।  

পুলিশ এবং জরুরি পরিষেবার গাড়িগুলোর সাইরেনও থেমে গিয়েছিল। সেসব মানুষ, যারা বাইরে বেরিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছিল, তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ যেন এক ভৌতিক নিস্তব্ধতা। জোসেফের মনে হলো, পৃথিবী যেন ধীরে ধীরে তার শেষ শ্বাস টেনে নিচ্ছে।  

গ্যাসের গন্ধ আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল। প্রতিটি শ্বাসে বিষ ঢুকছিল, আর তার ফুসফুস যেন জ্বলে যাচ্ছিল। সে জানত, এই গ্যাসে বেশি সময় বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল, কাঁপন থামছিল না। “এটা কি কোনো শত্রুর আক্রমণ? নাকি প্রকৃতি আমাদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে?” সে একবার নিজেকেই প্রশ্ন করল।  

তার ছোট্ট ঘরটায় বসে জোসেফ চুপচাপ সব শুনছিল। জানালার বাইরে থেকে বিস্ফোরণের শব্দ আর মানুষের আতঙ্কের চিৎকার কানে আসছিল। তার মাথার মধ্যে একটা দৃশ্য বারবার ঘুরছিল—তার মা আর বোন, যারা একসময় তার পাশে ছিল, তারা এখন কোথায়? “তারা কি বেঁচে আছে?” এই চিন্তা তাকে ভেঙে দিচ্ছিল।  

ঘরের কোণায় রাখা ছোট রেডিওটা আবার চালাল জোসেফ। কিন্তু সেখানে কোনো আশার কথা শোনা গেল না। বরং বিজ্ঞানীরা বলছিলেন, “বেশিরভাগ শহর গ্যাসের কারণে অচল। এই অবস্থায় কেউ বাইরে বেরোলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।”  

জোসেফ জানত, তার পক্ষে কিছু করার ক্ষমতা নেই। তার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। আশেপাশের ভীতিকর পরিবেশ তাকে আরো অসহায় করে তুলছিল। সে মাটিতে বসে পড়ল, মাথা নিচু করে একটাই প্রার্থনা করতে লাগল, “হে ঈশ্বর, যদি সত্যিই এই পৃথিবীর শেষ হয়, তবে দয়া করে আমার পরিবারের পাশে আমায় নিয়ে চল।”  

বাইরের বিস্ফোরণ আর গ্যাসের ধোঁয়ার মাঝে একমুহূর্তের জন্য জোসেফ অনুভব করল, তার চারপাশে যেন আর কিছুই নেই। শুধু এক গভীর শূন্যতা, এক মৃত্যুর প্রতীক্ষা।

ধ্বংসের পর 

বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর, আকাশ যেন এক অদ্ভুত সাদা ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে ছিল। চারপাশে কোনো রঙ নেই, কেবল ধূসর এবং সাদা ছাই। জোসেফ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল ধ্বংসস্তূপে পরিণত তার শহরটিকে। প্রতিটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, রাস্তাগুলো ছাইয়ে ঢেকে গেছে, আর গাছপালা সব যেন জীবন্ত লাশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।  

পুলিশ এবং অ্যাম্বুলেন্সগুলো নিস্তেজভাবে চেষ্টা চালাচ্ছিল, আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পরিবেশ এতটাই বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল যে সাহায্যের হাত বাড়াতেও মানুষ ভয় পাচ্ছিল। “কিছুই তো অবশিষ্ট নেই,” জোসেফ মনে মনে বলল। তার চোখের কোণে জল জমছিল, কিন্তু সে চিৎকার করার শক্তিটুকুও পাচ্ছিল না।  

তাকে চারপাশের পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছিল, যোগাযোগের সব মাধ্যম নষ্ট হয়ে গেছে। ফোন নেই, রেডিও তেমন কার্যকর নয়, আর কোনো খবর আসছে না। মানুষের জীবন যেন একাকিত্বের মাঝে থেমে গেছে। বাজারের মতো স্থানগুলো ছাইয়ে পরিণত, কোনো মুদ্রার কাজ নেই। কেউ কিছু কিনতে পারছে না, বিক্রি করতে পারছে না।  

হাসপাতালগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। আহত মানুষগুলো স্ট্রেচারে শুয়ে আছে, কেউ কেউ কাঁদছে, কেউ নিঃশব্দে কষ্ট সহ্য করছে। অন্ধত্ব তাদের চোখ থেকে আলো কেড়ে নিয়েছে, আর ত্বক পুড়ে গেছে গ্যাসের প্রভাবে। চিকিৎসকের সংখ্যা এতই কম যে, অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছিল। রোগীদের চিৎকার আর হাসপাতালের বিশৃঙ্খলা যেন পৃথিবীর ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল।  

জোসেফ মনে করল তার ছোট বোনের কথা, যার বয়স মাত্র আট। সে এখন কোথায়? বেঁচে আছে কি? তার বুকের ভেতর এক চাপা যন্ত্রণা অনুভূত হলো। বাইরে কোথাও থেকে একটা শিশুর কান্নার শব্দ ভেসে এল। জোসেফ দৌড়ে জানালার কাছে গেল। কিন্তু সেখানে কেউ নেই, কেবল ধোঁয়ার ভেতর অস্পষ্ট কিছু ছায়া।  

তার মনের মধ্যে আশা এবং হতাশার এক অদ্ভুত যুদ্ধ চলছিল। “এখন কি করা উচিত? ঈশ্বর কি আমাদের ক্ষমা করবেন? নাকি এই ধ্বংসই আমাদের প্রাপ্য?” তার মাথায় প্রশ্নগুলো একে একে আসছিল।  

জোসেফ ভাবল, এই অন্ধকারের মধ্যেও হয়তো কোথাও একটা আলো জ্বলছে। হয়তো কেউ বেঁচে আছে, হয়তো কেউ প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। “আমাকে থামলে চলবে না,” নিজের মনে বলল জোসেফ। “যদি একটা নতুন দিনের অপেক্ষা করতে হয়, তবে আমাকে সেই আলো খুঁজে বের করতেই হবে।”  

ছোটদের রূপকথার গল্প - দানব মামার বন্ধু: "দানব মামার বন্ধু" একটি মজার ছোটদের গল্প, যেখানে মুন্না ও এক দানবের অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রূপকথার গল্পের আবহে দানব মামা তার ভালো ব্যবহার দিয়ে গ্রামবাসীর মন জয় করে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে ও অডিও স্টোরির স্বাদ উপভোগ করতে এই লিংকটি ক্লিক করুন।

স্বপ্নের শেষে

বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।

জোসেফ হঠাৎ টের পেল, তার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হচ্ছে। বুকের মধ্যে ধড়ফড়ানি থেমে গেছে। একটা অদ্ভুত প্রশান্তি ধীরে ধীরে তাকে গ্রাস করছিল। সে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তার চোখের সামনে যে পৃথিবীটা ছিল, তা যেন একদম বদলে গেছে। কোনো ধোঁয়া নেই, কোনো ছাই নেই। আকাশ পরিষ্কার নীল, আর সূর্যের আলো সোনালি উজ্জ্বলতায় ভরে দিচ্ছে চারপাশ। পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে জোসেফের শরীরটা শিথিল হলো।  

“এটা কীভাবে সম্ভব?” নিজের সঙ্গে নিজেই কথা বলল সে। তার মাথার মধ্যে ভয়ের স্মৃতিগুলো ঝাপসা হয়ে আসছিল। সে চারপাশে তাকাল, তার ঘরটাও ঠিকঠাক। লণ্ঠনের ম্লান আলো আর নেই, বদলে ঘরে উজ্জ্বল দিনের আলো ঢুকে পড়েছে। টেবিলে রাখা তার প্রিয় বইগুলো যেমন ছিল, তেমনই আছে। দেয়ালে ঝুলন্ত পরিবারের ছবিটা যেন নতুন করে হাসছে।  

তার মাথায় ধীরে ধীরে আসল সত্যটা ভেসে উঠল। “এটা তো একটা দুঃস্বপ্ন ছিল!” নিজেকে বিশ্বাস করানোটা সহজ ছিল না। এতদিনের ভয়, এতদিনের অস্থিরতা – সবকিছু কেবল তার কল্পনা?  

কিন্তু এই দুঃস্বপ্ন তাকে একটা বড় শিক্ষা দিয়ে গেছে। জোসেফ জানল, জীবন যত কঠিনই হোক না কেন, একটা সময় সব ঠিক হয়ে যায়। কখনও কখনও, আমাদের সবচেয়ে বড় ভয়গুলোও কেবল সাময়িক।  

সে জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখল, রাস্তার মধ্যে শিশুরা খেলছে। তাদের হাসি আর আনন্দে চারপাশ যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। পাশের বাড়ির বৃদ্ধ দম্পতিটা আবার নিজেদের বাগানে কাজ করছে। পাখিরা উড়ছে, গাছগুলো সবুজ হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।  

জোসেফ গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে ভাবল, “জীবন আমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছে। আমি সেটা নষ্ট করব না। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শেখাল, ভয়কে কাটিয়ে উঠতে হয়, সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।”  

তার চোখে জল চলে এল। তবে সেটা কষ্টের নয়, বরং কৃতজ্ঞতার। পৃথিবী যেমন আগে ছিল, তেমনই ফিরে এসেছে। আর তার নিজের জীবনও নতুন করে শুরু করার সুযোগ পেয়েছে।  

জোসেফ সিদ্ধান্ত নিল, সে নিজের জন্য একটা সুন্দর জীবন তৈরি করবে। শুধু নিজের জন্য নয়, বরং তার চারপাশের মানুষের জন্যও। সে জানত, প্রতিটি অন্ধকারের পরেই আলো আসে। আর সেই আলোয় তার পথ চলা শুরু হলো।  

এই রকম চিত্তাকর্ষক বাংলা ছোট গল্প -এর আপডেট পেতে আমাদের WhatsApp চ্যানেল জয়েন করুন।

আমরা কারা

নতুন বাংলা ছোট গল্প

অগ্নিযুগের ছায়া

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেম ও প্রতিরোধের কাহিনি। যুদ্ধ, বেদনা ও সাহসের মাঝে গড়ে ওঠা সম্পর্কের গল্প। ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্প | বাংলা ছোট গল্প

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া এক প্রেম ও প্রতিরোধের কাহিনি। যুদ্ধ, বেদনা ও সাহসের মাঝে গড়ে ওঠা সম্পর্কের গল্প। ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য গল্প | বাংলা ছোট গল্প

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: অগ্নিযুগের ছায়া

শেষ অধ্যায়

একটি রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে এক বিজ্ঞানীর গবেষণা মুহূর্তেই রূপ নেয় বিভীষিকায়। পড়ুন এই বাংলা ছোট গল্প যেখানে বিজ্ঞান, সংকট ও মানবিকতার টানাপোড়েন একসঙ্গে মিশে গেছে!

একটি রহস্যময় কল্পবিজ্ঞান গল্প, যেখানে এক বিজ্ঞানীর গবেষণা মুহূর্তেই রূপ নেয় বিভীষিকায়। পড়ুন এই বাংলা ছোট গল্প যেখানে বিজ্ঞান, সংকট ও মানবিকতার টানাপোড়েন একসঙ্গে মিশে গেছে!

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: শেষ অধ্যায়

শীতলপুরের যাদুকরী রক্তগোলাপ

একটি হৃদয়স্পর্শী রূপকথার গল্প, যেখানে সত্যিকারের ভালোবাসার শক্তিতে শীতলপুরের অভিশাপ ভেঙে যায়। আকর্ষণীয় ছোটদের গল্প যা যাদু, প্রেম ও ত্যাগের এক অনন্য উপাখ্যান তুলে ধরে।

একটি হৃদয়স্পর্শী রূপকথার গল্প, যেখানে সত্যিকারের ভালোবাসার শক্তিতে শীতলপুরের অভিশাপ ভেঙে যায়। আকর্ষণীয় ছোটদের গল্প যা যাদু, প্রেম ও ত্যাগের এক অনন্য উপাখ্যান তুলে ধরে।

সম্পুর্ন্য গল্পটি পড়ুন: শীতলপুরের যাদুকরী রক্তগোলাপ

Leave a Comment

অনুলিপি নিষিদ্ধ!