কলকাতা আর সেই কলকাতা রইল না, ঝলমলে শহরটা এখন এক বিরাট, খাঁ খাঁ জমি। জলবায়ু পরিবর্তনের থাবায় শুধু কলকাতা নয়, পুরো দুনিয়াটাই যেন বিধ্বস্ত। আকাশ কুঁচকুঁচে, ঝলসানো রোদে জমি ফাটল ধরেছে, গাছপালা নিশ্চিহ্ন। এই নিঃস্বাস রোধ করা পরিবেশেও সপ্নের আশা ধরে আছে শাওলির মনে।
ছোটবেলায় গ্রামের বাড়ির আঙিনায় দাদুর সঙ্গে কত গাছ লাগিয়েছিল সে! ফুল, ফল, আর গাছের ছায়ায় আড্ডা – সেই সব স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বলে তার চোখে। সেই সবুজ ফিরিয়ে আনার, পরের প্রজন্মের জন্যে একটা স্বাস্থ্যকর জায়গা গড়ে তোলার স্বপ্ন বুকে লালন করে চলেছে শাওলি।
একদিন বাড়ির পিছনের খাঁড়া জমিতে সে ছেচে গেল একটা ছোট্ট গাছের চারা। প্রতিদিন সকালে জল দেয়, খেয়াল রাখে। কয়েকটা দিনের মধ্যেই অবিশ্বাস্য! গাছটি একটু একটু করে বড় হতে লাগলো। শুকনো জমিতে, এই একটা গাছের সবুজ পাতা যেন আশার আলো জ্বালিয়ে দিল। গাছটা যত বড় হলো, শাওলির স্বপ্নও ততটাই বড় হলো। সে ঠিক করলো, এই সবুজ ছড়িয়ে দেবে চারিদিকে।
কিন্তু, চারিদিকে শুধু হতাশা আর নেতিবাচক মনোভাব। “একটা গাছে কী হবে? সবই তো শেষ!” “আগে নিজের বাঁচাটা দেখ, গাছ লাগানোর কি আর দরকার আছে?” এসব কথায়, শাওলির মনটা ভার হয়ে যেত। তবে, সে হার মানলো না। প্রতিদিন একটা করে গাছ লাগাতে লাগলো – বাড়ির চারপাশে, আশেপাশের ফাঁকা জায়গায়। কখনো একা, কখনো বাচ্চাদের নিয়ে, কখনো আবার পাড়ার কয়েকজন মানুষকে জড়ো করে।
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্প - ঝড়ো প্রেমের গল্প : এই রোমান্টিক বাংলা ছোট গল্পে লেখিকা ঐশী এবং সাংবাদিক অগ্নির প্রেমের অসাধারণ কাহিনী ফুটে উঠেছে। যুদ্ধক্ষেত্রের বীভৎসতা আর লেখিকার শান্ত জীবনের মিলনস্থলে তৈরি হয় এক অসাধারণ বন্ধন। ঝড়ো দিনেও টিকে থাকে তাদের ভালোবাসা, প্রমাণ করে যে সত্যিকারের প্রেম সব বাধা পার করে। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
গাছগুলো যত বড় হতে লাগলো, মানুষের মনেও একটু একটু করে পরিবর্তন আসতে শুরু করলো। শুরুর দিকে কেউ তেমন একটা সাহায্য করতো না, কিন্তু গাছগুলোর ছায়ায় একটু শান্তি পাওয়া, পাখিদের কলতান শোনা – এসব ছোট ছোট সুখগুলোয় মানুষের মন খুলে যেতে লাগলো। শাওলির পাশে এসে দাঁড়ালো আরো কয়েকজন। একসঙ্গে গাছ লাগানো, গাছের যত্ন নেওয়া – এই কাজগুলো তাদের মধ্যে একটা ঐক্য গড়ে তুললো।
কয়েক বছরে শাওলির স্বপ্নের বীজ এক বিশাল বনে রূপ নিল। ঝলসানো রোদের পরিবর্তে এখন ঠান্ডা হাওয়া, পাখিদের কলতান, আর গাছের সোঁদাসোঁদে গানে মুখরিত এই বন শুধু গাছপালার সমাহার ছিল না, এটা ছিল আশার দ্বীপ। আশেপাশের এলাকা থেকে মানুষজন এখানে এসে শান্তি খুঁজতেন। ছেলেরা গাছের ডালে ঝুলত, মেয়েরা ফুল নিয়ে খেলা করত, বয়স্করা গাছের ছায়ায় গল্প করতেন। এই বন দেখে অন্য এলাকার মানুষেরাও উৎসাহিত হলেন। তারাও তাদের এলাকায় গাছ লাগানো শুরু করলেন। শাওলির একটা গাছ, হাজার হাজার গাছে পরিণত হলো, ধীরে ধীরে পুরো শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো সবুজের আলো।
কিন্তু, এই পরিবর্তন সবার কাছেই সুখকর ছিল না। কিছু লোক, যারা অবৈধভাবে গাছ কাটত বা জমি দখল করত, তারা এই সবুজ অভ্যুত্থানে ক্ষিপ্ত হলো। এক আঁধার রাতে, তারা এসে আগুন ধরিয়ে দিল শাওলির লাগানো বনের একটা অংশে। শুকনো পাতা আর গাছগুলো দ্রুত আগুনে গ্রাস হয়ে গেল। সকালে ঘুম থেকে উঠে এই দৃশ্য দেখে শাওলির চোখে জল এসে গেল। কত বছরের পরিশ্রম, এক রাতেই ছাই হয়ে গেল! মনটা ভেঙে যেতে চাইল কিন্তু, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর মুখে সে হতাশার চেয়ে দৃঢ়তা দেখল।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - স্মৃতির তালা খুলে : মোটিভেশনাল বাংলা ছোট গল্প: "স্মৃতির তাল খুলে" শোকের অন্ধকারে মেয়ে খুঁজে পেল বাবার গোপন শিল্পী মন ও নিজের হারিয়ে ফেলা স্বপ্ন। এই গল্পে আছে: স্বপ্ন পুনরুদ্ধার, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, সৃজনশীলতার আহ্বান, পরিবারের ভালোবাসা, জীবনের নতুন শুরু আজই পড়ুন! সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
“এই আগুন আমাদের সবুজ স্বপ্নকে মায়ে দিতে পারবে না,” বললো একজন বয়স্ক লোক। “আমরা আবার গাছ লাগাবো।”
এই কথায় সবার মধ্যে একটা নতুন জোশ জাগলো। সবাই মিলে জ্বলে যাওয়া জায়গাটা পরিষ্কার করল, নতুন করে গাছ লাগালো। শাওলি বুঝলো, একটা গাছ লাগানোর চেয়েও বড় শক্তি হলো মানুষের ঐক্য। সবার মিলিত চেষ্টায় আবার আগুনে পুড়ে যাওয়া জায়গাটা সবুজে ছেয়ে গেল।
এই ঘটনার পরে, শাওলি আরো বেশি করে জোর দিল গাছ লাগানোর পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর। সে গ্রাম থেকে কৃষিবিদ ডেকে এনে, মানুষকে শেখালো কিভাবে গাছ লাগাতে হবে, কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হবে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে সে করলো বৃক্ষরোপন কর্মসূচি। বড়দের বললো, পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে। এই সব ক্লান্তিহীন চেষ্টায় ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসতে লাগলো।
কয়েক দশক পরে, কলকাতা আর সেই কলকাতা রইল না। একসময়ের জলবায়ু দূষণের কালো ছায়া সরে গেছে। এখন এটা এক সবুজ শহর। পাখিদের কলতান, ঝিঁঝিঁপোকার আওয়াজে মুখরিত এই শহর। গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঢুঁ মারা পড়ে সূর্যের আলোয় ঝকঝকে হাজারো হাজারো বাড়ি। শাওলি, এখন আর সেই তরুণী নেই, বয়স হয়েছে। কিন্তু, তার চোখের দৃঢ়তা এখনো আছে। বারান্দায় বসে, সে দূরের সবুজের সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, একটা ছোট্ট স্বপ্ন কীভাবে একটা বিশাল পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে। হঠাৎ, পাশে এসে দাঁড়ালো তার নাতনি।
বাংলা ছোট গল্প - একাকী ভীড়ের গল্প : এই বাংলা ছোট গল্পটি একাকীত্বের চিত্র তুলে ধরে। ভবিষ্যতে সন্তানের অসমর্থতা আর নিজেদের দুঃখের সাথে লড়াই করে বয়স্ক দম্পতির গল্প। সম্পূর্ণ বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
“ঠাম্মি, এই গাছগুলো কে লাগিয়েছে?”
“আমি, তুমি, আর এই শহরের সবাই,” মুচকি হেসে বললো শাওলি।
“তুমি একা লাগিয়েছিলে একটা গাছ, তারপর সবাই মিলে এত গাছ লাগালে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো নাতনি।
“হ্যাঁ,” শাওলি তার নাতনির মাথা স্নেহে আদর করে দিল দিল, “একটা গাছই যদি এতোই শক্তিশালী হয়, তাহলে কতটা শক্তিশালী হতে পারে সবার ঐক্য! মনে রাখিস, স্বপ্ন যত ছোটই হোক, সেটা যদি দৃঢ় হয়, তাহলে তুমি পাহাড়ও সরিয়ে দিতে পারবে।”
নাতনি চুপ করে শাওলির কথা শুনলো। তার চোখেও একটা স্বপ্নের ঝিলিক দেখা দিল। হয়তো, সে এই সবুজ শহরকে আরও সুন্দর করে গড়ে তুলবে, নতুন কিছু নিয়ে আসবে। ঠিক যেমন শাওলি একটা গাছ থেকে শুরু করেছিল, তেমনি তার নাতনিও নিজের স্বপ্নের বীজ বপন করলো এই সবুজ মাটিতে।