বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
কলকাতার বইমেলা—শীতের মিষ্টি বিকেলে বইয়ের পাতা ওল্টানোর সেই মুগ্ধতাময় গন্ধে মাখা এক অপরূপ পরিবেশ। স্টলের ভিড়ে দাঁড়িয়ে অনিকেত বইয়ের শিরোনামগুলোর দিকে গভীর মনোযোগ দিচ্ছিল। হঠাৎই একটা নরম কণ্ঠস্বর তার ধ্যান ভাঙল, “এই বইটা কি ভালো?”
অনিকেত তাকিয়ে দেখল, চোখে চশমা, গাঢ় সবুজ শালের আড়ালে এক তরুণী দাঁড়িয়ে। মেয়েটির চোখে যেন একরাশ কৌতূহল আর হাসির ঝলকানি। তার মুখে লেগে থাকা এক ধরনের মুগ্ধতার স্পর্শে অনিকেত কিছুক্ষণের জন্য কথাই বলতে পারল না।
“আ… হ্যাঁ, বইটা বেশ ভালো। আপনি কি সাহিত্যের পাঠিকা?”
মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলল, “আপনার কথা বলার ভঙ্গি দেখে তো আপনাকে সাহিত্যিক মনে হচ্ছে।”
এই সংক্ষিপ্ত বাক্যালাপ থেকেই শুরু হল মেঘলা আর অনিকেতের আলাপ। প্রথম দিনেই তারা বুঝতে পারল, তাদের মধ্যে অনেক মিল। সাহিত্য থেকে শুরু করে সঙ্গীত, এমনকি কলকাতার রাস্তার খাবারের ব্যাপারেও তাদের মতামত বেশ মিলে যায়।
মেঘলা ছিল প্রাণবন্ত, মুক্তমনের একটি মেয়ে, যে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। আর অনিকেত ছিল একধরনের অন্তর্মুখী, শান্ত স্বভাবের ছেলে, যে নিজের মনের গভীর ভাবগুলো প্রকাশ করতে একটু সময় নেয়। তবুও, তাদের কথোপকথনে কোনো বাধা এল না।
পরের দিন মেঘলা আর অনিকেত আবার দেখা করল। তারা একসঙ্গে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরল, নতুন বই কিনল, আর কিছুক্ষণ বসে চা আর কচুরি খেতে খেতে কলকাতার সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলল। মেঘলা যখন তার প্রিয় কবিতার লাইনগুলো আবৃত্তি করল, অনিকেত মুগ্ধ হয়ে শুনল। মেঘলার কণ্ঠে যেন কবিতাগুলো জীবন্ত হয়ে উঠছিল।
“তুমি কবিতা লেখো না?” অনিকেত হঠাৎ প্রশ্ন করল।
“না। তবে আমি ছবি আঁকতে ভালোবাসি।। কিন্তু এখন আর সাহস পাই না,” মেঘলা একটু বিষণ্ণ হেসে বলল।
“কেন? তোমার কথা শুনে তো মনে হয়, তোমার চিত্রকলা হবে একেবারে হৃদয়ছোঁয়া।”
মেঘলা একটু হেসে বলল, “হয়তো একদিন আবার চেষ্টা করব।”
তাদের কথায় সময় কোথা দিয়ে গড়িয়ে গেল, তা কেউই বুঝল না। মেলার শেষ দিন এসে পড়ল, কিন্তু তাদের আলাপ আর বন্ধুত্বের মধ্যে এমন গভীরতা তৈরি হল যে তারা ঠিক করল, এই মেলার পরেও যোগাযোগ রাখবে। সন্ধ্যায় একসঙ্গে শহরের আলোয় ভেসে বেড়ানোর সময়, মেঘলা হঠাৎ বলে উঠল, “তুমি জানো, আমাদের এই সংক্ষিপ্ত আলাপটা অনেক বড় গল্পের শুরু হতে পারে।”
বিচ্ছেদের কাল
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
তখন বসন্তকাল, যখন শহরের বাতাসে মিশে থাকে কুঁড়ি ফোটার গন্ধ আর পলাশের লাল রঙ। এই সময়টা মেঘলা আর অনিকেতের জীবনে ছিল একেবারে স্বপ্নের মতো। বইমেলার সেই প্রথম দিনের আলাপ থেকে শুরু করে তাদের এক বছর দীর্ঘ প্রেম, কলকাতার প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে ছিল তাদের স্মৃতি। কিন্তু ভাগ্যের অদৃশ্য রঙতুলি যেন এ ছবিতে কালো ছায়া ফেলতে শুরু করল।
এক সন্ধ্যায়, শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনের এক পুরনো চায়ের দোকানে বসে মেঘলা হঠাৎ বলল, “তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।” অনিকেত তার চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মেঘলার দিকে তাকাল। মেঘলার কণ্ঠে যেন এক ধরনের ভার। অনিকেত বলল, “বলো।”
মেঘলা বলল, “আমরা কলকাতা ছেড়ে অন্য শহরে চলে যাচ্ছে। বাবা সেখানে নতুন চাকরি পেয়েছে। মা চায় আমিও তাদের সঙ্গেই থাকি। আমি কিছু ঠিক করতে পারছি না…”
মেঘলার কথা শেষ হতে না হতেই অনিকেতের মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হল না। কয়েক মুহূর্ত যেন পুরো পৃথিবী থমকে গেল। মেঘলার চোখে তখন একরাশ অপরাধবোধ, আর অনিকেতের চোখে এক অসমাপ্ত স্বপ্নের কষ্ট।
অনিকেত অবশেষে প্রশ্ন করল, “তুমি কি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছ?” যদিও সে জানত, মেঘলা তার পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারবে না। মেঘলা চোখ নামিয়ে বলল, “হ্যাঁ। কিন্তু… আমি জানি না আমি তোমাকে ছাড়া কীভাবে নিজেকে সামলাব।”
তারপরের দিনগুলো যেন তাদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার মতো হয়ে দাঁড়াল। প্রতিদিনের দেখা আর সেই অগাধ আনন্দের মুহূর্তগুলো এক এক করে যেন ফিকে হতে শুরু করল। তাদের কথোপকথনের প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে ছিল এক ধরনের অস্থিরতা, এক অদ্ভুত চুপচাপ যন্ত্রণা।
অবশেষে সেই দিনটা এল। প্ল্যাটফর্মে তখন গুঞ্জন আর চেনা মানুষের ভিড়। কিন্তু অনিকেত আর মেঘলার জন্য সেই মুহূর্তটা যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে ছিল, আর হালকা বৃষ্টি পড়ছিল। অনিকেত আর মেঘলা তার মা বাবার থেকে একটু দূরে আড়ালে দাঁড়িয়েছিল। অনিকেত বলল, “তুমি তো জানো, এটা আমাদের শেষ নয়। আমাদের আবার দেখা হবে। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।” তার কণ্ঠে দৃঢ়তা।
মেঘলা তার হাত ধরল। তার চোখে ছিল এক অনির্বচনীয় বেদনা। সে বেদনার সুরে বলল, “কিন্তু জানো, অনিকেত, সময় অনেক কিছু বদলে দেয়। আমি জানি না সেই দিনটা আসবে কি না।”
ট্রেন ছাড়ার কয়েক মিনিট আগে, মেঘলা তার ব্যাগ সামলে গাড়িতে উঠল। জানালার পাশ থেকে তাকিয়ে, সে একবার শেষবারের মতো অনিকেতকে দেখল। অনিকেত হাত তুলল, কিন্তু তার চোখে ধরা পড়ল এমন এক অভিব্যক্তি, যা চিরকালের জন্য মেঘলার মনে গেঁথে গেল।
ট্রেনের হুইসেল বাজল। চাকা গড়িয়ে চলল। মেঘলার সাথে অনিকেতের প্রেম যেন ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে লাগল।
ছোটদের রূপকথার গল্প - ইঁদুরের রাজত্ব: "ইঁদুরের রাজত্ব" একটি মজার ও শিক্ষামূলক ছোটদের গল্প। পনির ও ইঁদুরের চাহিদার মজার রূপকথার গল্প যা শিশুদের কল্পনার জগতে ভ্রমণ করাবে ও জীবনের ছোট ছোট শিক্ষা দেবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
শূন্যতার দিন
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
কলকাতার শীতকাল, যখন শহরের আকাশে মৃদু কুয়াশা আর রাস্তায় ভাজা পেঁয়াজির গন্ধ মিশে থাকে। কিন্তু অনিকেতের জীবনে তখন কোনো ঋতুরই আলাদা স্বাদ ছিল না। মেঘলার চলে যাওয়ার পর তার জীবন যেন এক গভীর শূন্যতায় ডুবে গেল।
প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে তার মনে পড়ে যেত সেই ট্রেনের বিদায়ের দৃশ্য। মনে হত, প্ল্যাটফর্মের বৃষ্টিভেজা মেঝেতে যেন তার স্বপ্নগুলো গলে গেছে। ঘরটাও যেন তাকে প্রতিদিন মনে করিয়ে দিত মেঘলার উপস্থিতি। তার বইয়ের তাকের এক কোণে রাখা মেঘলার পছন্দের একটি কবিতার বই আর দেওয়ালে মেঘলার তোলা কয়েকটি ছবি যেন একসঙ্গে অতীতকে জীবন্ত করে তুলত।
অনিকেত কলেজে যেতে শুরু করলেও তার আগ্রহ একেবারে হারিয়ে গিয়েছিল। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করত না, কোনো আড্ডায় যোগ দিত না। এমনকি যে লেখালেখি ছিল তার জীবনের প্রধান আনন্দের উৎস, সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। পৃষ্ঠার ওপর কলম চালালেই শুধু মেঘলার মুখটা ভেসে উঠত।
মেঘলার চলে যাওয়ার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অনিকেত একটার পর একটা চিঠি পেতে থাকল। চিঠিগুলোতে মেঘলা লিখত, “আমাদের কথা ভেবে আজও মন ভালো হয়ে যায়,” বা “একদিন নিশ্চয়ই আমরা আবার দেখা করব।” এই চিঠিগুলো পড়ে অনিকেতের মন কিছুটা শান্তি পেত।
কিন্তু মাস দুয়েকের মধ্যে সেই চিঠিগুলো আসা বন্ধ হয়ে গেল। অনিকেত দিনের পর দিন চিঠির অপেক্ষায় বসে থাকত, কিন্তু ডাকবাক্সে নতুন কোনো চিঠি পাওয়া যেত না। একসময় সে বুঝতে পারল, মেঘলা হয়তো তার নতুন জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
একদিন তার পুরোনো বন্ধু তন্ময় দেখা করতে এলো। তন্ময় বলল, “তুই তো এভাবে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছিস। মেঘলার চলে যাওয়া মানে তোর জীবন থেমে যাওয়া নয়।”
কিন্তু অনিকেত কিছুই বলতে পারল না। শুধু জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকল। তার মনে হল, তন্ময় যতই বোঝাক, কেউই মেঘলার শূন্যতাটা বুঝতে পারবে না। এইভাবে কয়েক মাস কাটল। একদিন সকালে, রোদ ঝলমলে আকাশের দিকে তাকিয়ে, অনিকেত হঠাৎ অনুভব করল, সে আর এভাবে চলতে পারে না। মেঘলা হয়তো তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায় ছিল, কিন্তু তার জীবনটা তো এখানেই শেষ নয়।
সে একটা খাতা বের করল এবং লিখতে শুরু করল। প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় করে লিখল, “জীবন যেখানে শেষ হয়নি।”
তবে এই নতুন শক্তি কোথা থেকে এলো, সে নিজেও জানত না। হয়তো নিজের গল্পের মধ্যে দিয়ে মেঘলাকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা ছিল এটাই।
অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প - নতুন দৃষ্টি: "নতুন দৃষ্টি" একটি অনুপ্রেরণামূলক বাংলা ছোট গল্প, যা সংগ্রাম, আত্মবিশ্বাস এবং শান্তির সন্ধানে একজন মহিলার যাত্রা তুলে ধরে। একটি শক্তিশালী মোটিভেশনাল গল্প, যা পাঠকদের অনুপ্রাণিত করবে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
অতীতের মুখোমুখি
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
শীতের ঠান্ডা সন্ধ্যা। চায়ের কাপ হাতে অনিকেত তার টেবিলের ওপর ছড়িয়ে থাকা পুরোনো কাগজপত্র গুছানোর চেষ্টা করছিল। বছর পাঁচেক হয়ে গেছে, মেঘলার চলে যাওয়ার পর তার জীবন এক অদ্ভুত রুটিনে বেঁধে গেছে। সে নতুন চাকরি পেয়েছে, আবার লেখালেখি শুরু করেছে। তবে মনের এক কোণে সবসময় একটা ফাঁকা জায়গা রয়ে গিয়েছিল, যা কখনো পূর্ণ হয়নি।
পেপারের স্তূপ সরাতে গিয়ে হঠাৎ একটা হলুদ খামে চোখ পড়ল। খামটা খুলতেই বেরিয়ে এল মেঘলার লেখা চিঠি। তাড়াহুড়ো করে সে কাগজটা খুলল। চিঠির প্রথম লাইন পড়তেই তার হৃদয়জুড়ে অদ্ভুত এক অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল।
“তুমি ছাড়া আমি পূর্ণ হতে পারব না।”—মেঘলা।
চিঠিটা হাতে নিয়ে সে স্থির বসে রইল। যেন পাঁচ বছর আগের সেই দিনগুলো আবার তার সামনে ফিরে এলো। মেঘলার প্রতিটা কথা, হাসি, আকাশের নিচে তাদের একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো—সবকিছু যেন জীবন্ত হয়ে উঠল।
কিন্তু এই চিঠিটা কি তখনই পাঠানো হয়েছিল? নাকি কোনো কারণে পৌঁছায়নি? এসব ভাবতে ভাবতে অনিকেতের মন জুড়ে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগল—মেঘলা কি আজও তার জন্য অপেক্ষা করছে?
অনেক দিন নিজের মনের কথা শুনে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি অনিকেত। কিন্তু আজ চিঠিটা পড়ার পর তার মনে হলো, সে আর বসে থাকতে পারবে না। মেঘলাকে খুঁজে বের করতেই হবে।
পরদিন সকালে এক কাপ কফি নিয়ে সে নিজের পুরোনো ডায়েরি খুলে বসল। মেঘলার শহরের ঠিকানা, তার পছন্দের জায়গাগুলো সব মনে করার চেষ্টা করল। মনে পড়ল, মেঘলা তাকে বলত, “যদি কোনোদিন হারিয়ে যাই, আমাকে খুঁজে পাবে নদীর পাড়ে।” সেই কথা মনে করেই সে ট্রেনে চেপে মেঘলার শহরের পথে রওনা দিল।
মেঘলার শহরে পৌঁছানোর পর সে একে একে পুরোনো জায়গাগুলোতে যেতে লাগল। ছোট্ট ক্যাফেটা, যার কথা মেঘলা তাকে বলতো; সেই রাস্তাটা, যেখানে মেঘলা প্রথম বৃষ্টিতে ভিজেছিল। প্রতিটা জায়গায় গিয়ে মনে হচ্ছিল, মেঘলা যেন ঠিক তার পাশেই হাঁটছে।
তবে দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে লাগল, আর অনিকেতের মনে হতাশার ছায়া পড়তে শুরু করল। মেঘলাকে খুঁজে পাওয়ার আশা ক্রমশ মলিন হয়ে আসছিল। হতাশ হয়ে অনিকেত নদীর পাড় বরাবর হাঁটতে লাগল। ঠিক তখনই, নদীর ধারে একটা পার্কের বেঞ্চে চোখ পড়ল তার। সেখানে বসে এক মেয়েকে ছবি আঁকতে দেখা গেল। দূর থেকে দেখতে পেল, মেয়েটি মাথা নিচু করে ক্যানভাসে রঙ তুলির আঘাত করছে।
তার মনে হল, এই মুখটা চেনা। পা যেন নিজে থেকেই সেদিকে এগিয়ে গেল। বেঞ্চের কাছে গিয়ে সে দাঁড়াল। মেয়েটি তখনো ব্যস্ত।
“মেঘলা!”
মেয়েটি আঁকা থামিয়ে ধীরে ধীরে মাথা তুলল। তাদের চোখের দৃষ্টি মিলতেই সময় যেন থেমে গেল। মেঘলার চোখে অবিশ্বাস আর আবেগের মিশ্রণ, আর অনিকেতের চোখে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ।
মেঘলা কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগে অনিকেত বলে উঠল, “আমি জানতাম, একদিন তোকে খুঁজে পাবই।” দুজন দুজনকে পরম আনন্দে জড়িয়ে ধরল।
বাংলা ছোট গল্প - একসাথে পথচলা: "একসাথে পথচলা" একটি হৃদয়স্পর্শী বাংলা ছোট গল্প, যেখানে পবন এবং সুজাতার জীবনের পেশাগত সাফল্য ও পারিবারিক ভালোবাসার অনবদ্য যাত্রা তুলে ধরা হয়েছে। সম্পুর্ন্য বাংলা ছোট গল্পটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন।
প্রেমের পরিণতি
বাংলা রোমান্টিক ছোট গল্পটির অডিও স্টোরি শুনতে নিচে প্লে বোতাম টি ক্লিক করুন।
নদীর ধারে সেই সন্ধ্যাটা যেন সময়ের গতি থামিয়ে দিয়েছিল। মেঘলা আর অনিকেত একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল, যেন তারা দুজনেই অতীতের সমস্ত ব্যথা, অপেক্ষা আর অপূর্ণতার ভার থেকে মুক্তি পেয়েছে। তাদের চোখে ছিল ভালোবাসার এক নতুন প্রতিশ্রুতি।
পরের কয়েক দিন অনিকেত আর মেঘলা তাদের পুরোনো শহরে একসঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করল। তারা ছোট্ট ক্যাফেটায় গেল, যেখানে প্রথম দেখা হয়েছিল। পুরোনো স্মৃতিগুলো আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
মেঘলা বলল, “এই পাঁচটা বছর খুব কঠিন ছিল। আমি নিজেকে বারবার বলেছি যে তোমাকে ভুলে যেতে হবে, কিন্তু পারিনি। একেকটা রাত কাটত, তোমাকে মনে করে চোখের জল ফেলতাম।” অনিকেত তার হাত ধরে বলল, “আমিও তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারিনি, মেঘলা। তুই চিঠি লেখা বন্ধ করে দিলে কেন?”
মেঘলা চুপ করে রইল। তারপর ধীরে ধীরে বলল, “আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তার মৃত্যুর পর আমি আর কিছু করতে পারিনি। তবে তোমার প্রতি ভালোবাসা কখনো কমেনি।” অনিকেত মেঘলার কথা শুনে বুঝতে পারল, তারা দুজনেই জীবনের কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছে। কিন্তু এবার তারা আর পেছনে ফিরে তাকাবে না।
একদিন সকালে, নদীর ধারে হাঁটতে হাঁটতে অনিকেত বলল, “তুমি জানো, আমি আবার লেখালেখি শুরু করেছি? তোমার অনুপ্রেরণাতেই। এবার তুমিও তোর আঁকা নিয়ে কিছু কর।”
মেঘলা মৃদু হাসল। “তুমি পাশে থাকলে সব সম্ভব।” তারা দুজনেই বুঝতে পারল, এবার তাদের জীবনে একটা নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। তারা শুধু নিজেদের স্বপ্ন নয়, একে অপরের স্বপ্ন পূরণের জন্যও কাজ করবে।
কয়েক মাস পরে, কলকাতার এক ছোট্ট অনুষ্ঠানে অনিকেত আর মেঘলা বিয়ে করল। তাদের পরিবারের লোকজন, বন্ধুবান্ধব সবাই হাজির ছিল। মেঘলা লাল শাড়ি পরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে ছিল, আর অনিকেত তার পাশে।
অনুষ্ঠানের পর মেঘলা বলল, “অনিকেত, আমি তোমাকে একটা কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমাদের ভালোবাসা শুধু আমাদের নয়, আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করবে।”
অনিকেত তার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমাদের গল্পটা লিখব। জানো, আমি নামটাও ঠিক করে ফেলেছি – “জীবন যেখানে শেষ হয়নি।”।
বিয়ের কয়েক মাস পর তাদের জীবনের বইটি প্রকাশিত হল। অনিকেত লিখেছে, আর মেঘলা বইয়ের কভার ডিজাইন করেছে। বইটি ভালোবাসা আর অপেক্ষার গল্প, যা পাঠকের মনে গভীর দাগ কাটল।
তারা দুজনেই বুঝতে পারল, জীবনের প্রতিটা অধ্যায়ই ভালোবাসা দিয়ে ভরা যায়, যদি পাশে থাকে সেই বিশেষ মানুষটি।
শেষ বিকেলের রোদে, তারা দুজন গঙ্গার ধারে বসে থাকল। তাদের জীবনের গল্পটা হয়তো অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে, কিন্তু তারা জানত, এই গল্পের আসল সৌন্দর্য ছিল তাদের একসঙ্গে থাকার লড়াই।