অদৃশ্য উপস্থিতি

পূজোর আগের রাতে, গ্রামে ফিরে এসেছিল তৃষা—কলকাতার ব্যস্ততা ফেলে পুরনো ছাদবাড়িতে। দাদুর মৃত্যুর পর সেই বাড়ি খালি পড়ে আছে। চারপাশে শুষ্ক নিঃশব্দতা, শুধু বাতাসে শোনা যায় খসখসে গানের সুর। —সেই গানটা কার?

তৃষা জানালার ধারে দাঁড়িয়ে দেখে—ছাদের ধারে একটা ছায়ামূর্তি বসে আছে। চোখে পড়ে না ঠিকঠাক, কিন্তু তার চুল যেন ভেজা, আর গলা থেকে শোনা যায় ভাঙা সুরে পুরোনো রবীন্দ্রসংগীত। —এভাবে তো মা গাইত… কিন্তু মা তো…!

ভোরের আলোয় বাড়ির ঝাঁপসা আয়নায় তৃষা দেখল—তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে কেউ! পরনে সাদা শাড়ি, মুখ অদৃশ্য। দম বন্ধ হয়ে আসে তার। পেছনে ঘুরে দেখে, কেউ নেই। —এটা কি নিছক কল্পনা?

গ্রামের পুরোনো লোক বলল, “তোমার মা মারা গিয়েছিল এই ছাদেই, তৃষা। ওর শেষ ইচ্ছে ছিল—পুজোর দিন আবার গান গাইবে ছাদে দাঁড়িয়ে।” তৃষার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। —তবে কি মা ফিরেছে... গাইতে?

সেই রাত, দশমীর আগের দিন। ছাদে উঠে তৃষা দেখে—চাঁদের আলোয় ছায়ামূর্তি আবার বসে আছে। এবার সে গান শুরু করে… ধীরে ধীরে তৃষার গলাও মিশে যায় সেই সুরে। —গানের মাঝে কি লুকিয়ে আছে মুক্তি?

আচমকা বাতাস থেমে যায়। ছায়া ঘুরে তাকায় তৃষার দিকে—চোখ নেই, মুখও না। কিন্তু তার ঠোঁট নড়ছে। “তুই আসিস প্রতি বছর... আমার সাথে গান গাইবি, না?” —তৃষার গলা শুকিয়ে যায়... সে উত্তর দিতে পারে না।

পরদিন সকালে ছাদে পাওয়া যায় দুটো আলতা-ছাপ, পাশাপাশি। তৃষা আর নেই। শুধু রেকর্ডারে বাজছে সেই গান, যেখানে দুটি কণ্ঠ মিশে এক হয়েছে। আর কেউ সেই ছাদে ওঠে না... আজও।

মায়ার রাত