পলাশ আর যমুনার গ্রাম দুটোকে আলাদা করে রেখেছে এক বিশাল খরস্রোতা নদী। বার্ষিক মেলায় প্রথম দেখা, উৎসবের ভিড়ে এক চিলতে শান্তি খুঁজে পেয়েছিল তারা… কিন্তু সেই শান্তির পেছনে ঘন অন্ধকার এক ইতিহাস লুকিয়ে ছিল।
যমুনা এক চঞ্চল তাঁতিনী, আঁচলে স্বপ্ন বোনে। পলাশ একজন মাটির গন্ধমাখা কৃষক, ঘামে জলে ফসল ফলায়। তাদের প্রেম নদীর দু'ধারে জন্ম নেয়, অথচ নদীটা বরাবরই বাধা। তবুও সন্ধ্যায় তারা দেখা করে, নদীর কিনারে।
"তুই না আসলে, আমি তাঁত চালাতেই পারি না," ফিসফিস করে যমুনা। পলাশের চোখে পড়ে থাকে স্বপ্নের ছবি। তবে এই প্রেম ছিল চোরাগোপ্তা — কারণ দুই পরিবারে রক্তে মিশে আছে শত্রুতা।
একদিন পলাশ বলে, “নদী কিছু না, শুধু জল। ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, পার হবো।” তারা স্বপ্ন দেখে— একসাথে ঘর, মাঠ, তাঁতের আওয়াজে ভরা সকাল। কিন্তু তখনও আকাশ কালো হতে শুরু করেছে…
মনসুনের রাতে নদী রূপ নেয় রাক্ষসে। ব্রিজ ভেঙে গেছে, যোগাযোগ বন্ধ। যমুনা চিৎকার করে: “যাস না, এখন নয়!” কিন্তু পলাশ বলেছিল, “ভালোবাসা তো শুধু কথা না— প্রমাণও দিতে হয়।”
পলাশ নদীতে নামে, ঢেউ আঁকড়ে ধরে এগোয়। যমুনা দাঁড়িয়ে থাকে ওপার থেকে, হাত জোড় করে প্রার্থনা করে। হঠাৎ এক চিৎকার — পলাশ হারিয়ে যায় জলের গভীরে। নদী নিলো, ফেরত দিলো না।
যমুনা আজো তাঁত বোনে, কিন্তু প্রতিটি সুতো যেন একটা দীর্ঘশ্বাস। সে বলে, “যে হাতটা ধরে স্বপ্ন দেখতাম, সেই হাতটাই আজ অন্য কারো হাত ধরে হাঁটে।” নদী এখনো বইছে— প্রেমের সাক্ষী, বিচ্ছেদেরও।