গ্রামের এক কোণে, কাদামাটির ছোট ঘরে থাকত দীপ্ত। বাবার পুরোনো সেলাই মেশিন, একমাত্র সম্বল। মা বলত, "সেলাই করেই তুই আকাশ ছুঁবি একদিন।" দীপ্ত হেসে বলত, “আশীর্বাদ থাকুক মা…”
স্কুল শেষে সে চুপচাপ মেশিনে বসত। মায়ের ছেঁড়া শাড়ি সেলাই করতে করতে সে শিখে ফেলেছিল জ্যামিতির মতো নিখুঁত কাটিং। কিন্তু বন্ধুদের হাসাহাসি থামত না—“দর্জির ছেলে, দর্জি হবে!”
একদিন গ্রামে আসেন শহরের এক বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার, দুর্ঘটনায় আটকে পড়ে। দীপ্ত সাহস করে তাঁর জামা মেরামত করে দেয়। তাঁর চোখে বিস্ময়—"এত নিখুঁত হাত গ্রামের এক ছেলের?"
ডিজাইনার তাঁকে শহরে নিয়ে যেতে চান, শেখাবেন সবকিছু। মা একবার কাঁদলেন, বললেন, “চলে যা রে… এই সেলাই তোর পাখা হবে।” দীপ্ত সেই রাতে ছাদে শুয়ে তারার দিকে তাকিয়ে থাকল…
শহরের ঝলমলে আলোয় প্রথমদিকে দীপ্ত হাঁপিয়ে উঠত। ইংরেজি বোঝে না, খাবার মানায় না। কিন্তু সেলাইয়ের সূচি যেন তার হৃদয়ের ভাষা। সে রাত জেগে শিখত—রেখা টানত ভবিষ্যতের…
দশ বছর পর, দিল্লির এক নামকরা ফ্যাশন শোতে দীপ্তর ডিজাইন পায় প্রথম পুরস্কার। সবাই অবাক—"এ কে?" দীপ্ত মঞ্চে উঠে বলে, “আমার শুরু একটা সেলাই মেশিন দিয়ে… আর এক মায়ের স্বপ্ন দিয়ে।”
পুরস্কার হাতে সে ফিরে আসে গ্রামে। মায়ের কবরের পাশে বসে রাখে সোনার মেডেল। বলে, “তুই বলেছিলি মা, আমি আকাশ ছুঁবো। দেখ, আমি ফিরেছি—আকাশ ছুঁয়ে… তোকে নিয়ে।”