চন্দনের ছায়া

বর্ষার রাতে গ্রামের মেঠোপথে হেঁটে যাচ্ছিল চন্দন। চারপাশে কুয়াশার চাদর, কেবল ঝিঁঝিঁর ডাক। হঠাৎ, পেছনে কার যেন নিঃশ্বাসের শব্দ। ফিরে তাকাতেই কেউ নেই। কিন্তু সেই নিঃশ্বাসটা থামেনি।

চন্দন ভাবল—ভ্রম! কিন্তু পা চলছিল ধীরে ধীরে। তালপাতার ঘন জঙ্গলে হঠাৎ ঝুপ করে পড়ল একটা গাছের ডাল। তার ছায়ায় দেখা গেল একজোড়া লালচে চোখ। কেউ তাকিয়ে আছে...!

তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এল চন্দন। ঠাকুমা তাকে দেখে ফিসফিস করে বললেন, "আজ অমাবস্যা... কালো পথ এড়িয়ে চলতে বলেছিলাম, মনে আছে?" চন্দনের মুখে কথা নেই। তবু একটা প্রশ্ন তাড়া করে ফিরছে তাকে।

রাত গভীর হলে ঘরের কোণে একটা ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকল। চন্দন দেখল, দরজাটা আধখোলা। আর তার খাটের নিচে... একটা হাঁসফাঁস করা গলা ফিসফিস করে বলল, "আমাকে ভুলেছিস রে?" চেনা গলা, কিন্তু মৃত!

ছয় বছর আগে, এক বন্ধুকে ডোবায় ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল চন্দন। সবাই ভেবেছিল, ডুবে গেছে। কেউ খোঁজও করেনি। চন্দনের বুক ধড়ফড় করতে লাগল। সে ফিরেছে... প্রতিশোধের পিপাসায়।

ঘরের সব দরজা জানালা বন্ধ, তবু দেওয়ালে একজোড়া ভেজা পায়ের ছাপ। ঘাম ভেঙে পড়ছে চন্দনের কপালে। একটা ছায়া ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে তার দিকে। ছায়াটার মুখটা যে চেনা... খুব চেনা!

ভোর হতেই লোকজন এল চন্দনের ঘরে। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ, কিন্তু চন্দনের দেহ মাটিতে নিথর, চোখদুটি বিস্ফারিত। আর দেওয়ালে লেখা — "বন্ধু ফিরে এসেছে। এবার পালানোর পথ নেই।" কে ছিল সে? এখনও কেউ জানে না।

চাঁদের হাঁস