ছায়ার ভেতর আলো

কলকাতার এক পুরনো গলির ভেতর দাঁড়িয়ে ছিল অনিন্দিতা—মুখে ধুলো, চোখে দুশ্চিন্তা। বাবার শেষ চায়ের দোকানটা আজ নিলামে উঠবে। ঠাকুরঘরের প্রদীপটা নিভে গিয়েছিল সকালে। সেটা কি কোনো ইশারা?

ছোটোবেলায় মা বলত, “যে আলো নিজের ভেতর আছে, সেটাই সবথেকে শক্তিশালী।” কিন্তু আজ, মনে হচ্ছিল চারদিকটাই অন্ধকার। কেবল ওই একখানা রুন্ধু গলা—"তুই পারবি, মা!"—প্রতিধ্বনি হচ্ছিল মনজুড়ে।

দোকানটার দরজায় ঝুলছে লাল কাগজ। অনিন্দিতা হাত বাড়াল খুলে নিতে, ঠিক তখনই একজন বলল, “আপনার বাবা আমাকে অনেকবার বিনা পয়সায় চা খাইয়েছেন। এবার আমার পালা। দোকানটা আমি কিনে আপনাকে চালাতে দেব।”

চোখ ঝাপসা হয়ে এল। লোকটা বলল, “আমার নাম শুভেন্দু। একসময় রাস্তায় থাকতাম। আপনার বাবার দেওয়া এক কাপ চা আর সাহস, আমায় মানুষ করেছিল।” গলার স্বরটা এতটাই ভরাট, যেন কোথাও চেনা মনে হচ্ছে।

শুভেন্দুর চোখে ছিল কৃতজ্ঞতার আলো, আর অনিন্দিতার মনে ফিরল পুরনো ছবি—বাবার হাসিমুখ, চায়ের স্টলে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা, যার হাতে প্রতিদিন বাবার বানানো বিস্কুট পৌঁছত। ওটাই তো ছিল জীবন বদলে দেওয়া ছোট্ট সূর্যকণা!

সেই দিন থেকে অনিন্দিতা নতুনভাবে শুরু করল—“বাবার চা,” নামে নতুন দোকান। পুরনো মেঝে, কাঠের টেবিল আর চা-এর ভেতর মিশে থাকল ভালোবাসার গল্প। প্রতিদিন বহু মানুষ আসত, শুধু চা খেতে না, সাহস নিতে।

কখনও কখনও, এক কাপ চা, একটুখানি সদয় মন আর হার না মানা সাহসই জীবন বদলে দেয়। অন্ধকার যতই গভীর হোক, একজন আলো হয়ে দাঁড়ায়—ঠিক যেমন শুভেন্দু দাঁড়িয়েছিল। তুমি কবে আলো হতে চাও?

ছায়ার ভেতর আলো