চিঠিটা কে পাঠালো?

কলকাতার এক পুরনো উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া বাড়িতে একা থাকে মৃণালিনী। স্বামী মারা গেছে পাঁচ বছর আগে। হঠাৎ এক বিকেলে তার দরজার নিচে দিয়ে কেউ গুটিয়ে রাখা একটা চিঠি ঢুকিয়ে দেয়। শেষে লেখা: "তোমার সত্যিটা আমি জানি..."

চিঠিতে প্রেরকের নাম নেই। লেখা হাতটা অচেনা। কিন্তু বাক্যগুলো যেন অতীতের কোনো চাপা সত্যিকে আঁচড় কাটছে। মৃণালিনী ভয় পায়। ভাবে, কেউ কি জানে সেই রাতের কথা? আর প্রশ্নটা মাথায় ঘোরে: “কে পাঠালো?”

মৃণালিনী মনে পড়ে—স্বামীর মৃত্যুটা অস্বাভাবিক ছিল। লোকটা অ্যালার্জির কথা জেনেও দুধ খেল, আর তারপর... পুলিশ বলেছিল “অ্যাক্সিডেন্ট।” কিন্তু চিঠি যেন বলছে, কেউ জানে—এটা দুর্ঘটনা ছিল না। সে আতঙ্কে ঘুমাতে পারে না সেদিন।

রাতে দরজায় কড়া নড়ে। মৃণালিনী কাঁপা হাতে দরজার ছিদ্রপথে দেখে—এক অচেনা বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে। মুখ ঢাকা শাড়ির আঁচলে। সে ফিসফিস করে বলে, “চিঠিটা আমি পাঠাইনি... কিন্তু ওর গলায় দুধের গন্ধ ছিল।” মৃণালিনীর শ্বাস আটকে আসে।

বৃদ্ধা চলে যায়। মৃণালিনী বাইরে বেরিয়ে কাউকে দেখতে পায় না। অথচ ঘরে ফিরে দেখে—ডাইনিং টেবিলে আরও একটা চিঠি। লিখা: “শেষ সত্য জানত শুধু আমি... এখন তুমিও জানবে।” কে এই ‘আমি’?

চিঠির মধ্যে একটা ছবি। তার স্বামীর সঙ্গে এক নারীর হাস্যোজ্জ্বল মুহূর্ত। পেছনে হাসপাতালের নাম—যেখানে সে মারা গিয়েছিল। ছবির পেছনে লেখা: “শুধু তুই ছিলি না ওর জীবনে...” মৃণালিনীর চোখ ছলছল করে ওঠে।

মৃণালিনী ফোন করে সেই হাসপাতালে। জেনারেটরের খুঁত নিয়ে তদন্ত চলেছিল সেবার। আজ সে জানে—স্বামীর মৃত্যুর দিনে দুধ তার নয়, হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকে এসেছিল। আর ক্যান্টিন ইনচার্জ? সেই বৃদ্ধা। শেষ চিঠিটা ওর নিজের কাছে লেখা ছিল।

শিউলির ঘ্রাণ