শিউলির ঘ্রাণ

পূজোর আগের সন্ধ্যা। শিউলি ফুলে ভরা এক পুরনো গ্রামের পথ ধরে হাঁটছিল মেহুল, সদ্য শহর থেকে ফেরা। বাতাসে মিষ্টি ঘ্রাণ, আর দূরে তালগাছের পাশে এক বুড়ি বসে কাঁদছিল চুপচাপ।

মেহুল কাছে যেতেই বুড়ির মুখ উজ্জ্বল হল—"ফিরলি রে? তোর মা তো কবে মরে গ্যাছে, তুই শুনলি না?" মেহুল থমকে দাঁড়াল। মা তো কাল ফোনে কথা বলেছে তার সাথে!

"তোর জন্য মা রোজ শিউলি ফুল রেখে যেত মন্দিরে," বলল বুড়ি। মেহুল তাকিয়ে দেখে—শিউলি গাছটা নেই! শুধু পোড়া মাটি আর ছাই। কোথায় গেল গাছ? আর এই ফুলের ঘ্রাণ আসছে কোথা থেকে?

রাতে ঘুম ভাঙে এক অদ্ভুত গন্ধে—শিউলির! জানালার বাইরে কারা যেন কাঁদছে। চোখ মেলেই দেখে—মা দাঁড়িয়ে, চোখ ভরা জল, ঠোঁটে নিঃশব্দে ফিসফিস— "তুই ফেরার আগেই আমাকে পুড়িয়ে দিল তারা।"

পরদিন সকালে গ্রামের মন্দিরে যায় মেহুল। পুরোহিত আঁতকে ওঠে, "তুই... তুই তো তোদের বাড়িটা যে রাতে পুড়ে ছাই, সবাই মরেছে!" কিন্তু সে তো ঠিকঠাক আছে! তবে কার শরীর পুড়েছিল আগুনে?

বাড়ি ফিরে দেখে—দেওয়ালে কালো ছাপ, ছাইয়ের গন্ধ, আর দরজার পাশে বসে সেই বুড়ি। এবার মুখটা স্পষ্ট— এক চোখ নেই, চামড়া গলে গিয়েছে। "তুই কি ভেবেছিস, শুধু মা মরবে?" মেহুল কি বাঁচতে পারবে?

রাতে গ্রামের লোক শুনতে পায়—শিউলি গাছের তলায় কাঁদছে দু’জন। একটা কিশোর কণ্ঠ বলছে, “আমি তো শুধু ফিরতে চেয়েছিলাম…” শিউলি গন্ধে ভরে যায় চারপাশ। কিন্তু গন্ধটা এবার পচা মাংসের মতো...

রাতপাখি