রাতপাখি

পূর্ববঙ্গের এক মেঘলা গ্রামে, ছোট্ট মেয়েটি পাখিদের ভাষা বুঝতে পারত। তার নাম ছিল লীরা। এক রাতে জানালায় বসে হঠাৎ সে শুনল—একটা রাতপাখি ফিসফিস করে বলছে, “চাবিটা আবার চুরি গেছে!”

লীরা নিচে নেমে এল। পুরনো বটগাছের নিচে রাতপাখি বসে আছে। সে বলল, “এই চাবি খুলত রূপকথার দরজা, যেখান থেকে স্বপ্নেরা আসত! এখন তা বন্ধ, শিশুরা আর স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছে না!”

রাতপাখি লীরাকে বলল, “যদি সত্যিই সাহসী হও, চল আমার সঙ্গে। চোর চাবিটা লুকিয়ে রেখেছে ধানক্ষেতের শেষ মাথার ছায়া-ঘরে।” লীরা ভয়ে কাঁপলেও বলল, “আমি যাব।”

ধানের শীষ হাওয়ায় দুলছে। ছায়া-ঘরটা যেন নিঃশব্দে শ্বাস নিচ্ছে। লীরা পা রাখল ভেতরে। হঠাৎ একটা ফিসফাস—“চাবি চাইছো? তাহলে তোমাকেও একটা স্বপ্ন দিতে হবে!”

ঘরের ভিতর বাতাস জমে উঠল। লীরার মনের গোপন ইচ্ছে—একবার মাকে আবার জড়িয়ে ধরা—তা চোখের সামনে ফুটে উঠল! চোরটা কুয়াশার মতো বলল, “তোমার ইচ্ছেটা সুন্দর… চাবিটা পাবে।”

রূপকথার চাবি রাতপাখির ঠোঁটে তুলে দিল চোর। লীরা হাসল—চোখে জল। দরজা খুলতেই আকাশ থেকে রঙিন স্বপ্নেরা ঝরে পড়ল! গ্রামজুড়ে শিশুরা হাসতে লাগল, যেন রাতজুড়ে রঙ খেলছে।

রাতপাখি লীরার কানে ফিসফিস করে বলল, “চোরটি আসলে স্বপ্নের রক্ষক। সে শুধু চায় মানুষ যেন ভুলে না যায় নিজের ইচ্ছে।” লীরা তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে। আজ তার চোখে স্বপ্ন ফিরল।

স্মৃতি