চোখের জল

বসন্তের নরম হাওয়ায় কলকাতার এক শান্ত গলি, সোহিনী আর আর্যের দেখা। দুজনে মিষ্টি হাসিতে হারিয়ে গেল এক মধুর সম্পর্কের শুরু। তাদের চোখে ছিল এক অদ্ভুত আলোর খেলা, যেন ভালোবাসার প্রথম গান বাজছে নিভৃত পাখির কণ্ঠে।

প্রতিদিন বিকেলে তায় পায়ের ধাপে পায়ের ছাপ রেখে যেত সোহিনী আর আর্যের কথা। বর্ষার বৃষ্টি ঝরছিল, তাদের ছাতা যেন শুধু দুই হৃদয়কে আড়াল করছিল। কিন্তু বৃষ্টির পেছনে লুকিয়ে ছিল কোনো অজানা ব্যথা, যা আস্তে আস্তে ঘিরে ধরছিল তাদের সম্পর্ক।

সোহিনী বুঝতে পারছিল, আর্যের চোখে কিছু একটা মলিন ভাব আসছে। একদিন সন্ধ্যায় আর্য বলে উঠল, “আমাদের পথ হয়তো একসাথে নয়।” সোহিনীর হৃদয় চূর্ণ, সে প্রশ্ন করল, “কেন? আমি তো ভালোবাসি তোমায়।” কিন্তু উত্তর আসেনি, শুধু একটা নীরবতা।

দীর্ঘ রাতের নিস্তব্ধতায় সোহিনী বারবার স্মৃতির ছবি আঁকছিল তার মনে—আলোর খেলা, হাসির ঝলক, ছায়ার মত আর্যের স্পর্শ। কিন্তু বাস্তবতার ছায়া ক্রমশ গভীর হচ্ছিল। একদিন সে বুঝল, প্রেম আর জীবনের মাঝে কত দূরত্ব থাকে, যা কেউ মাপতে পারে না।

বৃষ্টির ভেজা এক সকালে, আর্য চিঠি দিয়ে গিয়েছিল। চিঠিতে ছিল ভুল বুঝাবুঝির কথা, মায়ার আড়ালে থাকা বিষাদের কথা। সে লিখেছিল, “আমাদের ভালোবাসা কেবল মধুর স্মৃতি হয়ে থাকবে।” সোহিনী চোখের জল ঝরিয়ে পড়ল, কেন যেন হৃদয় ভেঙে পড়ল ভীষণ।

সোহিনী একা হয়ে বসেছিল কলকাতার নীরব পার্কের বেঞ্চে, যেখানে আগে দুজনে গল্প করত। আজ শুধুই ছিল সেদিনের ছায়া আর ধুলো, হারানো স্বপ্ন আর অমলিন ভালোবাসার স্মৃতি। কষ্টের মাঝে একটা দারুণ বাস্তবতা জাগছিল, জীবনে সব ভালোবাসা না মিললেও কিছু স্মৃতি থাকে চিরদিন।

সে শুধু বলল, "ভালোবাসলাম শুধু, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুধু চোখের জলটাই আমার নিজের হয়ে রইল।" আর সেই কথাগুলো কানে বাজছিল বাতাসে, যেন কলকাতার একাকী বিকেলে সব হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার গুঞ্জন।

শেষ চাষ