শেষ চাষ

সাত সকালে নদীপাড়ের ছোট্ট গ্রামে উঠে পড়ে কৃষক হরিলাল। এ বছর বৃষ্টি হয়নি ঠিকমতো। মাটি ফেটে চৌচির, জমি চুপচাপ। কিন্তু আজও কাঁধে লাঙল তুলে বেরিয়ে পড়ে সে—এক শেষ চেষ্টা।

গ্রামের লোক হাসে, বলে, “এই জমিতে আর ফসল হবে?” হরিলাল চুপ করে শোনে, কিন্তু চোখে আগুন। মা বলেছিল, “মাটি যদি ভরসা পায়, সে কখনো ঋণী রাখে না।” সেই বিশ্বাসই আজ তার সম্বল।

একদিন, দুদিন, সপ্তাহ পেরোয়। সূর্য মাথার ওপরে রুক্ষ আগুন ছোড়ে, কিন্তু হরিলাল থামে না। লাঙলের রেখায় পড়ে তার ঘামের ফোঁটা। মাটির বুক যেন ধীরে ধীরে নরম হতে শুরু করে।

এক রাতে তীব্র ঝড়ে সব উড়ে যায়—চারা, বাঁশের বেড়া, আশা। হরিলাল বসে থাকে জমির পাশে, অন্ধকারে। কাঁদতে চায়, পারেও না। বুকের ভিতর একটা প্রশ্ন—“সব শেষ?”

পরদিন সকালে, মাটির গন্ধে ঘুম ভাঙে। চোখ খুলে দেখে, জমিতে ছোট ছোট সবুজ চারা মাথা তুলেছে! বাতাসে এক অদ্ভুত শান্তি। মাটি যেন নিজের ভাষায় বলছে, “আমি জেগে উঠেছি।”

দিন যায়, ফসল বাড়ে। সোনালি শিষে ঢেকে যায় জমি। গ্রামের লোকেরা এবার হরিলালের পায়ে বসে শিখতে চায়। সে শুধু হাসে—এই হাসি লড়াইয়ের, বিশ্বাসের, আর মাটির সঙ্গে গভীর বন্ধনের।

হরিলাল দাঁড়িয়ে থাকে মাঠের মাঝে, সূর্য ডুবছে ধীরে। সে জানে, এটাই তার ‘শেষ চাষ’ নয়—এ শুধু শুরু। কারণ মাটি কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না, যদি তুমি তাকে ভালোবাসো।

সে কি ফিরবে