চুড়ির শব্দ

চুপচাপ রাত। কলকাতার উপকণ্ঠে এক পুরোনো দোতলা বাড়ি। বৃষ্টির ফোঁটার টিপটিপ আর মাঝে মাঝে বাজ পড়ার শব্দ। অভির বৌমা অনন্যা নতুন এসেছে এ বাড়িতে। কিন্তু প্রতিদিন রাত ১২টা নাগাদ শোনা যায় — কাঁচের চুড়ির টুংটাং আওয়াজ। কার চুড়ির শব্দ? ঘরে তো কেউ নেই...

প্রথমে ভেবেছিল, বাতাসে জানলার কাচ লেগে আওয়াজ হচ্ছে। কিন্তু এক রাতে যখন ঘরের দরজায় আওয়াজ এল— "টোক টোক"—  সে দরজা খুলে দেখল, কেউ নেই। তবু মেঝেতে লাল রঙের এক ভাঙা চুড়ির টুকরো পড়ে ছিল। এটা এল কোথা থেকে?

শাশুড়িমা বলল, “এই ঘরেই আগে তমলীনা থাকত, তোমার ননদ। তিন বছর আগে পুকুরে ডুবে মরেছে।” অনন্যার গলা শুকিয়ে গেল। “তমলীনা চুড়ি পরতে খুব ভালোবাসত… প্রতিরাতে ওই চুড়ি পরে ঘর জুড়ে ঘুরত।” সে কি এখনও ঘোরে?

সেই রাতে ঘুম ভাঙে অনন্যার। আলো নেভানো ঘরে আচমকা দেখা গেল ছায়া... একজন মেয়ে, ভিজে চুল, পরনে লাল শাড়ি, হাতে ঝনঝনে চুড়ি। সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। অনন্যা শ্বাস নিতে ভুলে গেল। কে সে?

ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। চুড়ির শব্দ এবার যেন ঘরের চারপাশে ঘুরতে লাগল।  একটা ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে লাগল, যেন কেউ পাশ দিয়ে হেঁটে গেল। একটা কান্নার আওয়াজ ভেসে এল— “আমার চুড়ি ফেরাও...” কী চায় সে?

অনন্যা সকালে পুকুরঘাটে গিয়ে দাঁড়াল। হঠাৎ পায়ের কাছে মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে এল একটি লাল চুড়ির পুরো সেট। ভেজা কাদায় ঢাকা। সে জড়োসড়ো হয়ে তা তুলে রাখল পুকুরের ধারে, একটি পাথরের ওপর। তমলীনার শান্তি কি তবেই মিলবে?

রাতে আর কোনও চুড়ির শব্দ শোনা গেল না। ঘরটা যেন হালকা হয়ে গেল। অনন্যা আয়নার দিকে তাকালেন— এবার শুধুই তাঁর প্রতিবিম্ব। কিন্তু ঠিক তখনই পেছনে ভেসে এল এক ফিসফাস— “ধন্যবাদ... বৌদি…”

তিয়ারার জাদুর ঝাঁপি