কুয়াশা

গভীর রাতে ঝড় উঠেছিল রূপপুর গ্রামে। বাতাসে কাঁপছিল বটগাছের ডাল। গ্রামের প্রাচীন পুকুরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল একটা ছায়ামূর্তি—হাঁটু জলে, মাথায় লাল শাড়ি… মুখ দেখা যাচ্ছিল না।

মিনতি, সবে শহর থেকে ফিরেছে। মায়ের অসুস্থতার খবরে গ্রামে আসা। কিন্তু বটতলায় সেই অচেনা নারীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে, হঠাৎ একটা ঠান্ডা হাওয়া এসে ওর ঘাড় ছুঁয়ে গেল।

মা বলল, “ওদিকে যাস না, মিতু। ওখানে রাতের পর কেউ যায় না।” ছোটবেলায় শোনা দিদার গল্পটা মনে পড়ল—“পুকুরবৌ থাকে সেখানে, যাকে ডাকে, সে ফেরে না।”

কিন্তু রাত বাড়তেই মিনতির মনে হলো কেউ ওকে ডাকছে—নাম ধরে। জানালার বাইরে, ঘোলা আলোয় একজোড়া চোখ। লাল শাড়ি… আগের সেই মেয়েটা? না কি শুধুই কল্পনা?

পরদিন সকালে গ্রামের লোকজন বলল, “পুকুরে আবার জল কমে গেছে। কেউ যেন নামিয়ে দিচ্ছে জলে দাঁড়িয়ে।” সেই জায়গায় মিনতি খুঁজে পেল একটা হার—দিদার হার, যেটা বহু বছর আগে হারিয়েছিল।

হারটা ছুঁতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল এক দৃশ্য—দিদা জলে নামছে, পেছন থেকে কেউ টানছে। মিনতির গলা শুকিয়ে গেল। সেই মুখ… তার নিজের মুখের মতো!

রাতে মিনতি পুকুরপাড়ে গেল, হারটা ফেলে দিল জলে। ছায়ামূর্তিটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল কুয়াশার ভেতর। কিন্তু চলে যাওয়ার আগে, মৃদু স্বরে বলল—“তুই ঠিক করলি, মিতু… এবার আমি শান্তি পাব।”

চাঁদের পুতুলকথা