পরীর বাঁশি

দূরের এক গ্রামে, সোনালী ধানের ক্ষেতের পাশে, ছোট্ট রিয়া একা দাঁড়িয়ে ছিল। সন্ধ্যা নেমে আসছে, আকাশ জুড়ে আবিরের ছোঁয়া। হঠাৎ, পুরনো বটগাছের তলা থেকে ভেসে এল মিষ্টি সুর, যেন কেউ ফিসফিস করে কথা বলছে। রিয়ার বুক ধুকপুক করতে লাগলো। এমন মায়াবী ডাক সে আগে কখনো শোনেনি। কে ডাকে তাকে এমন করে?

ধীরে ধীরে রিয়ার পা বাড়লো সেই রহস্যময় সুরের দিকে। অন্ধকার আরও ঘন হচ্ছিল, জোনাকিরা মিটিমিটি জ্বলছিল পথের পাশে। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ছিল রিয়ার মুখে। সুরটা যেন আরও কাছে আসছে, আরও স্পষ্ট হচ্ছে। রিয়ার মনে এক অদ্ভুত ভয় আর কৌতূহল একসঙ্গে খেলা করতে লাগলো। সুরের উৎস কি লুকিয়ে আছে ওই আঁধারে?

বটগাছের কাছে এসে রিয়া দেখলো এক ছোট্ট পরী বসে আছে, তার ডানায় অজস্র তারা ঝিলমিল করছে। পরীর চোখে বিষাদের ছায়া। সে কাঁদছে, তার চোখের জল মুক্তোর মতো ঝরছে মাটিতে। রিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এমন সুন্দর পরী সে শুধু রূপকথার বইয়েই দেখেছে। পরীর দুঃখের কারণ জানতে রিয়ার মন ব্যাকুল হয়ে উঠলো। কেন কাঁদছে এই ছোট্ট পরী?

পরী ফিসফিস করে বললো, তার সোনার বাঁশি হারিয়ে গেছে। সেই বাঁশির সুরেই নাকি রাতের আকাশ ভরে ওঠে স্বপ্নে, আর দিনের আলোয় ফোটে রংধনু। বাঁশি ছাড়া তার জগৎ অন্ধকার। রিয়ার ছোট্ট মনটি কষ্টে ভরে গেল। সে পরীর বাঁশি খুঁজে দিতে চাইলো। কিন্তু কোথায় লুকানো আছে সেই মূল্যবান বাঁশি?

সাহসী রিয়া পরীর হাত ধরে বললো, "আমি তোমার বাঁশি খুঁজে দেবো, পরী।" দুজনে মিলে শুরু করলো বাঁশি খোঁজার অভিযান। তারা মাঠের পথে, ঝোপের আড়ালে তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ, রিয়ার নজরে পড়লো ঝোপের পাশে চিকচিক করা একটা জিনিস। ওটা কি পরীর হারানো বাঁশি?

কাছে গিয়ে রিয়া দেখলো, ওটা সত্যিই সেই সোনার বাঁশি! বাঁশি হাতে পেয়ে পরীর মুখে হাসি ফুটলো, যেন এক হাজার তারা একসঙ্গে আলো ছড়াল। পরী আনন্দে রিয়ার হাতে এক মুঠো রূপালী ধুলো দিলো। সেই ধুলো ছোঁয়ায় রিয়ার চারপাশ ঝলমল করে উঠলো। কিন্তু এরপর কী ঘটলো?

পরীর দেওয়া রূপালী ধুলো রিয়ার সব দুঃখ ভুলিয়ে দিলো। সে দেখলো, তার ঘরের আকাশ তারায় ভরে গেছে, আর জানালার বাইরে মিষ্টি সুর ভেসে আসছে। রিয়া বুঝলো, পরীর বাঁশির সুর তার মনেও শান্তি এনে দিয়েছে। এরপর থেকে রিয়া রোজ রাতে সেই সুর শোনে আর স্বপ্নে দেখে এক নতুন, মায়াবী জগৎ। ঘুমিয়ে পড়ো, ছোট্ট বন্ধু, মিষ্টি স্বপ্নে ভরে যাক তোমার রাত।

বৃষ্টিভেজা বিদায়