প্রতিশ্রুতি

উত্তর কলকাতার সরু গলি, পুরনো বটগাছের নিচে কচিকাঁচার হাসির সুর। অরুণিমা আর সৌরভ—একসাথে বড় হওয়া, খেলার মাঝে চুপিচুপি বলা স্বপ্নের গল্প। সেই বন্ধুত্বই একদিন প্রেম হয়ে উঠল।

অরুণিমার তুলি আঁকে স্বপ্ন, আর সৌরভ বাজায় সুর। এক বিকেলে, হাতে গিটার নিয়ে সৌরভ বলেছিল—"ফিরে এসে তোদের জন্য একটা জগৎ গড়ব, কথা দিলাম!" —প্রতিশ্রুতি, যা হৃদয়ে গেঁথে যায়...

মুম্বাই চলে যায় সৌরভ, স্বপ্নের টানে। অরুণিমা রোজ ছবি আঁকে, প্রতিটি ক্যানভাসে সৌরভের মুখ। ফোন আসে, চিঠি আসে—কিন্তু মাঝে মাঝে, ক্রমশ দূরে সরে যায় তার শব্দ। —কখনও কি প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়?

সৌরভের গান বাজে রেডিওতে, সবাই গায় তার লেখা। কিন্তু অরুণিমার ঘর নিঃশব্দ—শুধু রঙে ঢাকা হাহাকার। সে অপেক্ষা করে, ক্যালেন্ডারে দিন কেটে যায়। —কোনও দিন কি সে ফিরবে?

এক দুপুরে ডাক আসে। উজ্জ্বল সোনালি খামে লেখা—"সৌরভ ও রিয়া'র বিবাহে আপনার উপস্থিতি কাম্য।" অরুণিমার আঙুল কাঁপে, চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। —এটাই তবে শেষ কথা?

ছেঁড়া খামটা হাতে নিয়ে সে ফিসফিস করে, "ভালোবাসা পেয়েছিলাম, কিন্তু পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি কখনও পাইনি।" তার চারপাশে ভেঙে পড়ে সব রঙ। —ভাঙা প্রতিশ্রুতি কি ভুলে যাওয়া যায়?

অরুণিমার শেষ চিত্র—এক পুরনো বটগাছ, নীচে দুই ছায়াময় মুখ। এক আশ্রয়, যা কখনও তৈরি হয়নি। ভালোবাসার গল্প শেষ হয় না, শুধু রং বদলে যায়। —প্রতিশ্রুতি রয়ে যায় ক্যানভাসে... চিরকাল।

স্বপ্নের তুলি