স্বপ্নের তুলি

গভীর রাতে, কলকাতা শহরের এক নীরব গলিতে, টিমটিম করে জ্বলছিল একটি পুরোনো লণ্ঠন। মলিন আলোয় দেখা যাচ্ছিল একটি ছোট্ট মেয়ের ছায়া, একা দাঁড়িয়ে। তার চোখে অনিশ্চয়তার মেঘ, হাতে ধরা একটি ভাঙা খেলনা। দূরে কোথাও ভেসে আসছিল উৎসবের ক্ষীণ শব্দ। এই অন্ধকারেও কি তার স্বপ্ন দেখার সাহস আছে?

মেয়েটির নাম ছিল রূপা। অভাবের সংসারে তার দিন কাটত কষ্টে। তবুও, তার মনে ছিল এক শিল্পীসত্তা, যা রং তুলির স্পর্শে জীবন খুঁজে পেত। পুরনো কাগজের টুকরোগুলোই ছিল তার ক্যানভাস। একদিন, সে দেখল এক ধনী বাড়ির ছেলে দামি খেলনা নিয়ে হাসছে। রূপার মনে কি ঈর্ষা জাগল?

পরের দিন, রূপা সেই ছেলেটির কাছে গেল, হাতে তার আঁকা একটি ছবি। ছেলেটি প্রথমে অবাক হল, তারপর মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখল রংয়ের জাদু। ছবিতে ফুটে উঠেছিল এক নতুন জগৎ, যেখানে দুঃখ নেই, শুধু আনন্দ আর স্বপ্ন। এই ছোট্ট শিল্পীর মনে কি তবে সত্যিই অন্যরকম কিছু আছে?

ধীরে ধীরে, রূপার আঁকা ছবিগুলি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ল। শহরের মানুষ তার কল্পনাশক্তির প্রশংসা করতে শুরু করল। একদিন, এক বিখ্যাত চিত্রশিল্পী তার কাজের খবর পেলেন। তিনি রূপার বস্তির দরজায় এসে দাঁড়ালেন। এই অপ্রত্যাশিত আগন্তুক কি রূপার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে?

শিল্পী রূপার প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হলেন। তিনি তাকে শহরে নিয়ে গেলেন, দিলেন নতুন সুযোগ আর প্রেরণা। রূপা অক্লান্ত পরিশ্রম করতে লাগল, তার তুলি নতুন নতুন রঙে ভরে উঠল। কিন্তু সাফল্যের এই পথে কি কোনো বাধা আসবে না?

একদিন, এক বিশাল প্রদর্শনীতে রূপার ছবি স্থান পেল। শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তার শিল্পকর্মে মুগ্ধ হলেন। সেই ধনী ছেলেটিও সেখানে এসেছিল, আজ তার চোখে কোনো অহংকার নেই, শুধু বিস্ময় আর শ্রদ্ধা। রূপা কি পারবে তার অতীতের অন্ধকারকে জয় করে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হতে?

হ্যাঁ, রূপা পেরেছিল। তার আঁকা প্রতিটি ছবি হয়ে উঠল অনুপ্রেরণার উৎস, প্রমাণ করল ইচ্ছাশক্তি আর প্রতিভা দারিদ্র্যকে হার মানাতে পারে। সেই অন্ধকার গলির ছোট্ট মেয়েটি আজ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তোমার মনেও কি এমন কোনো স্বপ্ন লুকিয়ে আছে, যা শুধু একটু আলোর অপেক্ষায়?

কালের গর্ভ