সাদা শাড়ি

পূজোর ঠিক আগের রাত। পশ্চিমবঙ্গের এক প্রত্যন্ত গ্রামে হঠাৎই কুয়াশা ঘিরে ধরে চারদিক। রাত্রি দশটা বাজতেই শুরু হয় কানের পাশ দিয়ে ভেসে আসা এক নারীর কান্না। সেই কাঁদা গলা কার?

গ্রামের শেষ প্রান্তে এক পুরনো পুকুর, "চণ্ডী পুকুর" নামে কুখ্যাত। লোকেরা বলে, সেই পুকুরেই বছর কুড়ি আগে ডুবে গিয়েছিল এক কিশোরী—চণ্ডী। সেই রাতেই পুকুর থেকে ওঠে সাদা শাড়ি পরা ছায়া। সে কি ফিরেছে?

রুদ্রর দাদু বলেছিলেন, “অমাবস্যার রাতে চণ্ডী কাউকে ডাকে—কিন্তু তাকালে ভুল হবে।” রুদ্র হেসেছিল। ভুত বিশ্বাস করে না সে। কিন্তু সেই রাতে, তার ঘরের জানালার বাইরে কেউ কাঁপা গলায় ডাকলো, "রু-দ্র..."

ভোরবেলা উঠেই রুদ্র দেখল, ঘরের মেঝেতে ভেজা পায়ের ছাপ—ছোট, মেয়ের মতো। সেগুলো জানালার বাইরে থেকে ঘরে ঢুকেছে, আর… দরজার কাছে থেমে গেছে। কিন্তু দরজাটা তো ভেতর থেকে আটকানো ছিল?

রাত্রে রুদ্রর মা ঘুমের মাঝে কেঁপে উঠে বসে পড়লেন। স্বপ্নে দেখেছেন, এক মেয়ে পুকুরঘাটে দাঁড়িয়ে বলছে, "আমার কঙ্কালটাকে তুলে দাও। আমি শান্তি চাই..." সে কি কোনো ইশারা?

পরদিন সকালেই রুদ্র আর তার বন্ধুরা চণ্ডী পুকুরঘাটে খোঁড়া শুরু করল। তিন ফুট মাটি খুঁড়তেই বের হলো সাদা কাপড়ে মোড়া মানুষের কঙ্কাল! সঙ্গে একজোড়া লাল কাচের চুড়ি—টুক করে ভেঙে গেল...

সেই রাতেই পুকুরের পাশ দিয়ে হেঁটে গেল সাদা শাড়ি পরা মেয়েটি, আর কারো দিকে তাকাল না। পরদিন সকাল, পুকুরটা ছিল নিস্তব্ধ। আর কোনো কান্না নেই। চণ্ডী কি তবে মুক্তি পেল?

নীল পরী