ভোরবেলা, পূর্ব মেদিনীপুরের একটি ছোট্ট গ্রামে, আরিজ নামের এক যুবক হাঁটছিল ধানক্ষেতের ধারে। মাথায় ঝাঁকড়া চুল, চোখে অপূর্ণ স্বপ্নের ছায়া। SSC পরীক্ষায় তিনবার ব্যর্থ—আজ আবার চতুর্থবারের পরীক্ষা।
মা বলেছিলেন, "তুই পারবি, আরিজ!" কিন্তু গ্রামবাসীরা হাসে—"ওই ছেলেটা তো বই মুখস্থ করতেই পারে না!" একমাত্র সম্বল: বাবার পুরনো বই আর নিজের অটুট জেদ। তবুও, বুকের ভেতরে কাঁপন।
পরীক্ষার দিন সকাল। পুরোনো সাইকেল নিয়ে ১৫ কিমি পাড়ি দিতে হবে। হঠাৎ রাস্তায় চেইন খুলে গেল। পিছনে কালো মেঘ, সামনের পথে নির্জনতা। সময় পেরোচ্ছে। পা কাঁপছে, মন বলছে—"হাল ছেড়ো না!"
সাইকেল ফেলে, সে দৌড়াতে শুরু করল। পায়ে কাঁটা, চোখে জল, মুখে শুধুই উচ্চারণ—"মা, আমি পারব!" গ্রামের শেষ প্রান্তে পৌঁছেই এক ভদ্রলোক বাইকে তুললেন। চোখে ছিল মায়া, গলায় শান্তি।
কেন্দ্রে পৌঁছল ঠিক ১০ মিনিট আগে। গেটের সামনে হাঁপাচ্ছে আরিজ, বুক ধুকপুক করছে। পরীক্ষার প্রশ্নে চোখ পড়তেই, হঠাৎ সব শান্ত লাগল। প্রতিটি লাইন যেন আগে থেকেই পরিচিত।
দু’মাস পর, ফল প্রকাশ। গ্রামের মোড়ে ছোট দোকানের টিভিতে ফলাফল দেখানো হচ্ছে। হঠাৎ দোকানি চেঁচিয়ে উঠল—“আরিজ প্রথম দশে আছে!” মা চুপচাপ দাঁড়িয়ে, চোখের কোণ ভিজে।
আরিজ সামনে এসে বলল, “আপনারা যারা আমায় ছোট করেছিলেন, তাঁদের জন্যই আজ নিজেকে প্রমাণ করতে পারলাম।” সবাই স্তব্ধ। মা কাছে এসে কাঁধে হাত রাখলেন—“তোর জয় মানেই আমার আশীর্বাদ।”